বার্তা পরিবেশক, অনলাইন:: লক্ষ্মীপুরে চুরির অপবাদে ঝাড়ু ও জুতার মালা গলায় পরিয়ে বিদ্যুতের খুঁটির সঙ্গে বেঁধে নিরব হোসেন নামে (১৬) এক কিশোরকে নির্যাতন করা হয়েছে। বর্তমানে দোকান কর্মচারী ওই কিশোরকে সদর হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। শ্রমের টাকা না দিয়ে তাকে উল্টো নির্যাতন করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন ভুক্তভোগীসহ পরিবার।
সোমবার (২০ জানুয়ারি) ভুক্তভোগীর নানী বাদী হয়ে সদর থানায় অভিযোগ করলেও পুলিশ এখনো পর্যন্ত কাউকে আটক করতে পারেনি। ঘটনাটি ঘটেছে পৌর শহরের ২ নং ওয়ার্ডের জালালিয়া মাদ্রাসা সংলগ্ন এলাকায়।
এদিকে ঝাড়ু ও জুতার মালা গলায় পরিয়ে কিশোরকে এলাকায় ঘুরানোর ছবি এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল। নিরব হোসেন একই এলাকার মৃত কিরন হোসেনের ছেলে।
গত শনিবার বিকালে কর্মরত দোকান থেকে টাকা চুরির অপবাদ দিয়ে বিদ্যুতের খুঁটির সঙ্গে বেঁধে মারধর করা হয় ১৬ বছর বয়সি কিশোর নিরবকে। শুধু তাই নয় তার গলায় ঝাড়ু ও জুতার মালা পরিয়ে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন করা হয়। সেই নির্যাতনের ছবি ও ভিডিও তুলে ছেড়ে দেয়া হয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে।
এখানেই শেষ নয়, নির্যাতনের পর তাকে থানা পুলিশেও সোপর্দ করা হয়। পরে পুলিশের কাছ থেকে তাকে ছাড়িয়ে এনে দোকান (চামড়ার দোকান) মালিক শালিসি বৈঠকের আয়োজন করেন। এতে স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলরসহ মাতব্বররা ওই কিশোরকে দোষী করে তার (কিশোরের) জরিমানা করেন ৩০ হাজার টাকা। কিন্তু এতিম ওই কিশোরের দায়িত্ব নিতে রাজি হননি নানা ও নানী। এতেই আবারো মারধর করা হয় তাকে।
রোববার রাত ৯টায় স্থানীয়দের সহযোগিতায় লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি করানো হয় ভুক্তভোগী কিশোরকে। সোমবার সকালে ভুক্তভোগীর নানী আলেয়া বেগম থানায় অভিযোগ করেন।
ভুক্তভোগী কিশোর নিরব জানান, ৬ মাস ধরে স্থানীয় রাশেদের চামড়ার দোকানে কাজ করতেন। এরই মধ্যে তার মাকেও হারান সে। দোকানে মাসিক শ্রমের টাকা পান না বলে অভিযোগ তার। দোকান মালিক রাশেদের কাছ থেকে মেলে না পারিশ্রমিক। তাই বাধ্য হয়ে মালিকের অগোচরে নিজের পাওনা টাকাই নেন বলে দাবি করেন ওই কিশোর।
দোকান মালিক মো. রাশেদ বলছেন, চুরি করে তার মূলধন আত্মসাৎ করায় নিজেসহ এলাকাবাসী তাকে শাস্তি হিসেবে ঝাড়ু ও জুতার মালা পরিয়ে দেন। পরে শালিসি বৈঠকে স্থানীয় কাউন্সিলর ও মাতাব্বররা তার ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করেন।
এদিকে কাউন্সিলর শিপন ও সালিশদার ইসমাইল ঝাড়ু ও জুতার মালা পরিয়ে দেয়ার ঘটনা সম্পর্কে অবহিত নন বলে দায় এড়াতে চান।
এ ব্যাপারে সদর থানার ওসি (তদন্ত) সাংবাদিকদের জানান, নির্যাতনের অভিযোগ পেয়েছি। ঘটনার তদন্ত চলছে।