২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শুক্রবার

গ্রীষ্মের উত্তাপে ফোটা কৃষ্ণচূড়ার রক্তিম রঙে সেজেছে প্রকৃতি

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০৬:১৩ অপরাহ্ণ, ০৩ মে ২০১৮

প্রখর রৌদ্দুরের উত্তাপ গায়ে মেখে চোখ ধাঁধানো রক্তিম টুকটুকে লাল কৃষ্ণচূড়া ফুলে ফুলে সেজেছে বরিশালের উজিরপুর উপজেলার গ্রীষ্মের প্রকৃতি। টুকটুকে এই লাল ফুলে ফুলে সু-সজ্জিত হয়ে প্রকৃতি যেন সেজেছে আরেক নতুন সাজে।

এই সময়টায় উপজেলার বিভিন্নস্থানের পথে প্রান্তরে ফুটেছে কৃষ্ণচূড়া। দূর থেকে দেখলে মনে হয়, গ্রীষ্মের রৌদ্দুরের সবটুকু উত্তাপ গায়ে মেখে নিয়েছে ফুটেছে সবুজ চিরল পাতার মাঝে এই রক্তিম পুষ্পরাজি, যেন আগুন জ্বলছে।

গ্রীষ্মের ঘামঝরা দুপুরে প্রচন্ড তাপদাহে ওষ্ঠাগত পথিকের মনে কৃষ্ণচূড়ার ছায়া যেন প্রশান্তি এনে দেয়। পথচারীরা অবাক বিস্ময়ে, পুলকিত নয়নে উপভোগ করেন কৃষ্ণচূড়ার এই অপরুপ সৌন্দর্য্য।

কৃষ্ণচূড়াকে সাধারণত আমরা এসব অঞ্চলে লাল রঙেই দেখতে খুব বেশি অভ্যস্ত। তবে উদ্ভিদ বিজ্ঞানীদের মতে, কৃষ্ণচূড়া তিন রঙের হয়। লাল, হলুদ ও সাদা। কম হলেও হলদে রঙের কৃষ্ণচূড়া চোখে পড়ে। তবে সাদা রঙের কৃষ্ণচূড়ার দেখা মেলে না বললেই চলে। তিন রঙের কৃষ্ণচূড়া গাছই উঁচু এবং অনেকটা জায়গা জুড়ে এরা বিস্তার ঘটায়। বসন্ত শেষে ও গ্রীষ্মের রৌদ্রের দাহের মধ্যে প্রায় একই সময়ে তিন রঙেরই কৃষ্ণচূড়া ফুল ফোটে প্রকৃতিকে নতুন রুপ দেয়।

সূত্রে জানা গেছে, কৃষ্ণচূড়ার আদি নিবাস পূর্ব আফ্রিকার মাদাগাস্কার। শুষ্ক ও লবণাক্ত অবস্থা এই বৃক্ষ সহ্য করতে পারে। ক্যারাবিয়ান অঞ্চল, আফ্রিকা, হংকং, তাইওয়ান, দক্ষিণ চীন, বাংলাদেশ, ভারতসহ বিশ্বের অনেক দেশে এটি প্রাকৃতিকভাবেই জন্মে থাকে। এই গাছের বৈজ্ঞানিক নাম Delonix regia। এটি Fabaceae পরিবারের অন্তর্গত একটি বৃক্ষ।

এই গাছ বিষয়ক বিভিন্ন জার্নালের তথ্য-উপাত্ত সূত্রে জানা যায়, সৌন্দর্য বর্ধক গুণ ছাড়াও কৃষ্ণচূড়া গাছ উষ্ণ আবহাওয়ায় ছায়া দিতে বিশেষভাবে উপযুক্ত। কৃষ্ণচূড়া উদ্ভিদ উচ্চতায় কম (সর্বোচ্চ ১২ মিটার) হলেও শাখা-পল্লবে এটির ব্যাপ্তি বেশ প্রশস্ত। এর ফুলগুলো সাধারনত বড় চারটি পাপড়ি যুক্ত।

মুকুল ধরার কিছু দিনের মধ্যে পুরো গাছ ফুলে ফুলে ভরে যায়। কৃষ্ণচূড়ার ফুলগুলো বড় ৭/৮টি পাপড়িযুক্ত গাঢ় রক্তিম লাল হয়। ফুলের ভেতরের অংশ হালকা হলুদ ও রক্তিম হয়ে থাকে। পাপড়িগুলো প্রায় ৮ সেন্টিমিটারের মত লম্বা হতে পারে। এর প্রতিটি পাতা ৩০-৫০ সেন্টিমিটার লম্বা এবং ২০-৪০ টি উপপত্র বিশিষ্ট।

বাংলাদেশে কৃষ্ণচূড়া ফুল ফোটে সাধারনত এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত। তবে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে কৃষ্ণচূড়ার ফুল ফোটার সময় বিভিন্ন। যেমন, দক্ষিণ ফ্লোরিডায় – জুনে, আরব আমিরাতে – সেপ্টেম্বরে, ক্যারাবিয়ানে – মে থেকে সেপ্টেম্বর, অস্ট্রেলিয়ায় – ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি।

সরেজমিন দেখা গেছে, উজিরপুর উপজেলার প্রায় প্রতিটি সড়কেই কৃষ্ণচূড়া ফুলের দেখা মিলছে। তার মধ্যে উপজেলা সদর, শিকারপুর, মুন্ডাপাশা, জয়শ্রী, বামরাইল বাসস্ট্যান্ডসহ প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চল হারতা, সাতলা, রাজাপুর, কালবিলা, জল্লা, কুড়লিয়া, মুন্সিরতাল্লুক, মশাং, ওটরা, শিবপুর এলাকায় কৃষ্ণচূড়ার শাখায় শাখায় এখন রক্তাক্ত লাল হয়ে ফুটে আছে এই ফুল।

শোভা বর্ধনকারী এ বৃক্ষটি দেশের গ্রামীণ জনপদের পাশাপাশি শহরের মানুষের কাছেও সমান গুরত্ব বহন করে। এর কাঠ তুলনামূলক দামী না হওয়া এবং ভালো কোন ব্যবহারে না আসায় বাণিজ্যিকভাবে এ গাছ বপনে আগ্রহ অনেক কম। তবে শখের বেলায় এর কদর রয়েছে বেশ।

বর্তমানে বৃক্ষনিধনের শিকার হয়ে কমে যাচ্ছে রঙিন এই গাছ। এক সময় এ গাছ হারিয়ে যাবে এ শংকায় স্থানীয় প্রকৃতি প্রেমীরা। তবে এই গাছ রক্ষণাবেক্ষণ করা হলে এ সৌন্দর্য চিরস্থায়ী হয়ে থাকবে। এতে করে স্থানীয়রা যেমন প্রশান্তি পাবেন, তেমনি পথচারীরা মুগ্ধ হবেন।

এর বড় খ্যাতি হলো গ্রীষ্মের প্রচ- তাপদাহে যখন এই ফুল ফুটে তখন এর রূপে মুগ্ধ হয়ে যে কোন পথচারী থমকে তাকাতে বাধ্য হয়। কৃষ্ণচূড়ার রুপের জালে ফেঁসে যাওয়া থেকে এই প্রতিবেদকও বাদ পড়েনি ।

10 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন