২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শুক্রবার

ঝালকাঠিতে শিল্পমন্ত্রীর নাম ভাঙিয়ে চাঁদাবাজি, এসআই ক্লোজড

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১০:১৫ অপরাহ্ণ, ২২ এপ্রিল ২০১৮

ঝালকাঠিতে শিল্পমন্ত্রীর নাম ভাঙিয়ে পুলিশ কর্মকর্তার সহযোগিতায় শহরের ইয়াসিন ভূঁইয়া নামে এক সাবেক ছাত্রদল নেতা মেঘনা পেট্রোলিয়াম লিমিটেডের ঝালকাঠি ডিপো সুপারের কাছে দুই লাখ টাকা চাঁদা দাবি করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় এসআই বশিরকে পুলিশ ফাড়ির দায়িত্ব থেকে অব্যহতি দেওয়া হয়েছে।

ঝালকাঠি মেঘনা ডিপোর কর্মচারীরা জানান- শহরের ডাক্তারপট্টি এলাকার বাসিন্দা সাবেক ছাত্রদল নেতা মো. ইয়াসিন মেঘনা পেট্রোলিয়াম লিমিটিডের জেলা ডিপো ব্যবস্থাপক মো. মাহবুবর রহমানের কাছে শনিবার দুপুরে মোবাইল ফোনে কল দেয়। ডিপো ব্যবস্থাপক কল গ্রহণ করলে অপরপ্রান্ত থেকে শিল্পমন্ত্রীর লোক পরিচয় দিয়ে তাঁর অবস্থান জানতে চান ইয়াসিন। ডিপো ব্যবস্থাপক বাইরে আছেন জানালে ইয়াসিন রবিবার দুপুরে তাঁর কার্যালয়ে আসার কথা বলেন।

রোববার (২২ এপ্রিল) দুপুর ১২টায় ইয়াসিন শহরের ফায়ার সার্ভিস মোড়ের পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. বশির উদ্দিন ও এক পুলিশ কনস্টেবলকে (দুইজনই পোষাকে ছিল) নিয়ে একটি কাল রঙের প্রাইভেট কারে মেঘনা ডিপোতে যায়। ডিপো ব্যবস্থাপকের কক্ষে ঢুকে বসেন তিনজন। ডিপো ব্যবস্থাপককে একটি শপিংব্যাগে উপহার সামগ্রী তুলে দেন ইয়াসিন। এই উপহার শিল্পমন্ত্রী তাঁর জন্য পাঠিয়েছেন বলে জানানো হয়। এসময় মুঠোফোনে ইয়াসিন একজনের কাছে কল দিয়ে ডিপো ব্যবস্থাপককে শিল্পমন্ত্রী কথা বলবেন বলে ধরিয়ে দেন। ফোনে অপরপ্রান্ত থেকে ডিপো ব্যবস্থাপককে বলা হয়, ‘ওরা আমার লোক, যা বলে সে অনুযায়ী কাজ করুন।’

এর পর ফোন কেটে দিলে ইয়াসিন শিল্পমন্ত্রীর কথা বলে ডিপো সুপারের কাছে দুই লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। ডিপো সুপার তাদের কথা শুনে হতবাক হয়ে যান। তিনি দুই লাখ টাকা পাবেন কোথায় ? এমন কথা জানালে ইয়াসিন তাকে বলেন, যা পারেন তাই দেন। বিষয়টি সন্দেহ হলে কক্ষের ভেতরে ইয়াসিন ও পুলিশের উপ-পরিদর্শক মো. বশির উদ্দিনকে বসিয়ে রেখে তিনি বাইরে বের হন। অফিসের অন্য স্টাফদের সঙ্গে বিষয়টি আলোচনা করে থানায় ফোন দেন। থানা থেকে উপ-পরিদর্শক মিঠুনকে মেঘনা ডিপোতে পাঠানো হয়। উপ-পরিদর্শক মিঠুন এসআই বশিরকে দেখে বিভ্রান্ত হন। আর এ সুযোগে ইয়াসিন ও তাঁর সঙ্গীরা কৌশলে বের হয়ে গাড়িতে করে পালিয়ে যায়। সম্পূর্ণ বিষয়টি ডিপোর সিসি ক্যামেরায় রেকর্ড হয়।

সিসি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা যায়, একটি শপিংব্যাগের মধ্যে কসমেটিক সামগ্রী নিয়ে ইয়াসিন ডিপো সুপারের কক্ষে প্রবেশ করেন। তাঁকে গার্ডের মত অনুসরন করেন উপপরিদর্শক মো. বশির উদ্দিন ও কনস্টেবল সমির।

ডিপো সুপার (অপারেশন) মো. মাহবুবর রহমান বরিশালটাইমসকে বলেন, আমার কক্ষে এসেই তাঁরা সিসি ক্যামেরা বন্ধ করে রাখেন। পরে মোবাইল ফোনে শিল্পমন্ত্রী কথা বলবেন বলে আমাকে ফোন ধরিয়ে দেন ইয়াসিন ভূঁইয়া। আমিতো শিল্পমন্ত্রী ভেবে তাকে সম্মান করে কথা বলেছি। কিন্তু এটা শিল্পমন্ত্রীর গলা নয়, তা আমি নিশ্চিত হয়েছি। পরে তাদের কক্ষের মধ্যে রেখে আমি বাইরে গিয়ে থানায় ফোন করে পুলিশ খবর দিই। পুলিশ আসলেও তাদের উদাসিনতার সুযোগে ইয়াসিন কৌশলে পালিয়ে যায়। আমি ফোনে ঝালকাঠির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, ঝালকাঠি থানার ওসি এবং আমার ঊর্ধতন কর্মকর্তার কাছে জানাই। আমি শিল্পমন্ত্রীকেও মুঠোফোনে বিষয়টি জানিয়েছি। আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার পরামর্শ অনুযায়ী আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এ ব্যাপারে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ উপ-পরিদর্শক মো. বশির উদ্দিন বরিশালটাইমসকে বলেন, আমাকে ভুল বুঝিয়ে ডিপোতে নিয়ে যায় ইয়াসিন। আমি শুধু ডিপো ব্যবস্থাপকের কক্ষে ঢুকে বসেছিলাম, কোন কথা বলিনি। আমি প্রতারণার শিকার হয়েছি। আমাকে ক্ষমা করে দেন। দুপরের পর বিষয়টি ঝালকাঠি শহরে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হলে ইয়াসিন ভূঁইয়া গাঢাকা দিয়েছেন। তাঁর ব্যবহৃত মুঠোফোনটিও বন্ধ পাওয়া যায়।

ঝালকাঠি থানার ওসি আবু তাহের বরিশালটাইমসকে বলেন- খবর পেয়ে আমরা পুলিশ পাঠিয়েছি। কিন্তু পুলিশ গিয়ে ইয়াসিনকে পায়নি। ঘটনার সঙ্গে এক পুলিশ কর্মকর্তার নাম জড়িয়ে পড়েছে, কিন্তু আমরা জেনেছি ওনি প্রতারণার শিকার হয়েছেন।

ঝালকাঠির পুলিশ সুপার মো. জোবায়েদুর রহমান বরিশালটাইমসকে বলেন- আমাদের কাছে এখনো কোন অভিযোগ আসেনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। আপাতত পুলিশ ফাঁড়ির দায়িত্ব থেকে এসআই বশিরকে অব্যহতি দেওয়া হয়েছে। ইয়াসিন ভুইয়া পুলিশের সাবেক হাবিলদার আব্দুর রশীদ ভুঁইয়ার ছেলে।

7 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন