২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শুক্রবার

নির্যাতনকারী সেই চেয়ারম্যান অধরা

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০৯:১৮ অপরাহ্ণ, ২৯ মার্চ ২০১৬

পরকীয়ার অভিযোগে গলাচিপায় গৃহবধূ ও তার দেবরপুত্রকে নির্যাতন ও মাথা ন্যাড়ার ঘটনায় মামলা হলেও নির্যাতনকারীর হোতা চেয়ারম্যান খালেদুল ইসলাম স্বপন গ্রেপ্তার হননি। তাছাড়া, ঘটনাকে অন্যদিকে প্রবাহিত করতে এলাকাবাসীকে অব্যাহতভাবে হুমকি দেয়া হচ্ছে। সেই সঙ্গে ঘটনার দিনে শালিস বৈঠকে উপস্থিত থাকা প্রত্যক্ষদর্শীদের অনেকেই গেছেন আত্মগোপনে।

 

আর ঝামেলা এড়াতে মামলার বাদী ও সাক্ষীদের পরিবারের সদস্যরা এলাকা ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছেন। মঙ্গলবার তাদের বাড়িতে গিয়ে কাউকেই খুঁজে পাওয়া যায়নি। স্থানীয়রা জানান ওই ঘটনার পর থেকেই ইছাদি গ্রাম পুরুষশূন্য হয়ে পড়েছে। গত ২৭ মার্চ ওই ঘটনায় মামলা করার পর ওইদিনই ৩ নম্বর আসামি গজালিয়া ইউনিয়ন কৃষকলীগের আহ্বায়ক সামশুল হক ডাকুয়াকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরদিন (২৮ মার্চ) দুপুরে তাকে গলাচিপা সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করলে বিচারক তাকে জেল হাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

 

এর আগে ঘটনার মূল হোতা গলাচিপা উপজেলা যুবলীগের সভাপতি ও গজালিয়া ইউনিয়ন পরিষদের নব-নির্বাচিত চেয়ারম্যান খালেদুল ইসলাম স্বপনসহ ১৯ জনকে আসামি করে গত ২৭ মার্চ থানায় মামলা করার পরে নির্যাতিতা রাবেয়াকে স্বামীর জিম্মায় দেয়া হয়। তার আগে ২২ ধারায় তার জবানবন্দি নেয়া হয়। ওইদিনই মামলা আমলে নিয়ে বিচারক ঘটনার তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য গলাচিপা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) নির্দেশ দেন।

 
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ২৬ মার্চ রাতেই পুলিশ নির্যাতিতা গৃহবধূ দুই সন্তানের জননী রাবেয়া বেগমকে নিরাপত্তা হেফাজতে নেয়ার পর থেকেই তাদের বসতঘর তালাবদ্ধ অবস্থায় রয়েছে। তাদের দুই সন্তান কোথায় তাও জানে না এলাকাবাসী। আদালতের মাধ্যমে স্বামী হাবিবের জিম্মায় রাবেয়াকে পুলিশ হস্তান্তর করার পরও তারা গ্রামে ফিরে যায়নি। ঘটনার মূল হোতা নব-নির্বাচিত চেয়ারম্যানের প্রভাব, লোকলজ্জা আর আতঙ্গে রাবেয়া তার নিজ বাড়িতে আসতে সাহস পায় না বলে জানায় এলাকার একাধিক সূত্র।

 

ঘটনার পর থেকেই রাবেয়ার দেবরের ছেলে পাঁচ সন্তানের জনক নির্যাতিত মিজানুর রহমান রাঢ়ী নিজ ঘরে তালাবদ্ধ করে আত্মগোপনে রয়েছে। খোঁজ নেই মিজানের স্ত্রী ও পাঁচ সন্তানেরও। এলাকাবাসী জানায়, ঘটনার রাতে রাবেয়া ও তার স্বামী হাবিবকে পুলিশ হেফাজতে নেয়ার সময় মামলায় ১ নম্বর সাক্ষী মিজানকেও থানায় নিয়ে যায় পুলিশ।

 

ঘটনার রাত থেকেই মিজান ও রাবেয়ার গ্রামের বাড়িতে স্বজনদের অন্তত ৬টি বসত ঘরে তালা ঝুলিয়ে আতঙ্কে গা-ঢাকা দিয়েছে ওই পরিবারগুলোর সদস্যরা। উল্লেখ্য, গত ২৬ মার্চ রাত ৮টার দিকে গলাচিপার গজালিয়া ইউনিয়নের ইছাদি গ্রামের হাবিবুর রহমান রাঢ়ীর স্ত্রী রাবেয়া বেগম ও তার স্বামীর চাচাতো ভাতিজা মিজানুর রহমানকে কথিত পরকীয়ার অজুহাতে ইউনিয়ন পরিষদে শালিস বৈঠকের মারধর ও মাঠে নামিয়ে প্রকাশ্যে নির্যাতনের পর মাথা ন্যাড়া করে দেয়া হয়।

 

এ ঘটনার মূল হোতা গজালিয়া ইউনিয়নের নব-নির্বাচিত চেয়ারম্যান ও স্থানীয় সংসদ সদস্য আ.খ.ম জাহাঙ্গীর হোসেনের ছোট ভাই খালিদুল ইসলাম স্বপন। এসময় মিজানকে জরিমানা করা হয় ৩০ হাজার টাকা, যা দিয়ে ইউনিয়ন পরিষদের উন্নয়নমূলক কাজ করারও ঘোষণা দেন স্বপন। শালিসে উপস্থিত ওই ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান আলহাজ এমএ কুদ্দুসসহ ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান ও সাবেক সাধারণ সদস্য, সংরক্ষিত নারী সদস্য, গ্রাম পুলিশ, চৌকিদার, দফাদারসহ শত শত লোকের উপস্থিতিতে বর্বরতার ঘটনা ঘটলেও প্রতিবাদ করেনি কেউই। গলাচিপা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর রাজ্জাক জানান, একজন আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

6 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন