২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শুক্রবার

বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের প্রকৌশলী লাঞ্ছিত, প্রতিবাদে মানববন্ধন

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১০:০৬ অপরাহ্ণ, ২৩ এপ্রিল ২০১৮

বরিশাল সিটি করপোরেশনের (বিসিসি) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আনিসুজ্জামানকে তার দপ্তরে লাঞ্ছিত ও গুলি করে হত্যার হুমকি দিয়েছেন ঠিকাদার ও যুবদল নেতা মোমেন সিকদার। কাজ না করেই আগাম বিল চেয়ে না পেয়ে সোমবার (২৩ এপ্রিল) বেলা ১২টার দিকে নির্বাহী প্রকৌশলীকে তার দপ্তরে লাঞ্ছিত করা হয়। এক পর্যায়ে বিসিসির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রতিরোধের মুখে ঠিকাদার মোমেন সিকদার পালিয়ে যান।

এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে নগর ভবনে অসন্তোষের সৃষ্টি হয়েছে। মোমেন সিকদারের বিচার চেয়ে সোমবার বেলা ৩টায় নগর ভবনে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জরুরি সভা এবং বিকাল ৪টায় নগর ভবনের সামনে মানববন্ধন করেছেন। উপযুক্ত বিচার না পেলে তারা কঠোর আন্দোলন করার কথাও জানিয়েছেন।

লাঞ্ছনার শিকার নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আনিসুজ্জামান বরিশালটাইমসকে বলেন, সিটি কর্পোরেশনের সেবক কলোনি প্রকল্পের আওতায় ৪ নম্বর প্যাকেজ রয়েছে। যার আওতায় আমির কুটির সেবক কলোনি ও জানুকি সিংহ রোড সেবক কলোনির মধ্যে তিনটি ঘাটলা, ডিপ টিউবয়েল, ওয়াক ওয়েসহ নানান কার্যক্রম রয়েছে। এই কাজ ১ বছর ৩ মাস আগে শুরু হয়। মিতুসি এন্টারপ্রাইজের নামে কাজ নিয়ে মোমিন সিকদার নামে ঠিকাদার একটি ঘাটলা করে ৪ লাখের মতো টাকা তুলে নেয়। তখন ঠিকাদার মোমিন সিকদার অনেক টাকা বিল নেয়ার চেষ্টা করলে আমরা তা হতে দেয়নি, এরপর থেকেই সে ক্ষিপ্ত ছিলেন। এরপর ১ বছর কাজ ফেলে রেখে মাসখানেক তিনি কাজ আবার শুরু করেন এবং এখন যেহেতু কর্পোরেশনে টাকা এসেছে তাই তিনি বিলের পাঁয়তারা করছিলেন। বর্তমানে ২০ থেকে ২৫ লাখ টাকার কাজ হয়ে থাকলেও গত তিনদিন আগে তিনি সহকারী প্রকৌশলীর উপস্থিতিতে এক কোটি টাকার বিল চান। তখন আমরা এটা সম্ভব নয় বলে জানাই। এর ধারাবাহিকতায় তিনি সোমবার দুপুরে আমার কক্ষে যান এবং বাড়তি বিল নেয়ার নামে পরিস্থিতি ঘোলাটে করেন। এসময় তিনি অকথ্য ভাষায় আমাকে গালাগালি করেন, দেখে নেয়া, প্রাণ নাশ ও টাকা দিয়ে ধরিয়ে দেয়ার হুমকিসহ নানান ধরনের কথা বলেন। এরপর সহকর্মীদের আমি ডাকলে তাদের সামনেই আমাকে লাঞ্ছিত করেন।

প্রকৌশলী আনিসুজ্জামান আরও বরিশালটাইমসকে বলেন, নগরীর আমির কুটির ও কাউনিয়া জানুকিসিংহ রোডে হরিজন কলোনিতে ২ কোটি ৬০ লাখ টাকায় পুকুরের ঘাটলা, প্রাচীর ও সিসি সড়কের নির্মাণ কাজের ঠিকাদার হলেন মোমেন সিকদার। ওই কাজের ২০ ভাগও এখন পর্যন্ত সম্পন্ন হয়নি। এমতাবস্থায় মোমেন সিকদার ১ কোটি টাকা বিল দাবি করেন। তবে আমি যতটুকু কাজ হয়েছে ততটুকু বিল দিতে রাজি হই।

এই অবস্থায় উপস্থিত অন্যান্য কর্মকর্তারা তাকে নির্বৃত্ত করার চেষ্টা চালান। প্রায় আধাঘণ্টা সেখানে হট্টগোল পরিস্থিতি চলার পর অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এসে উত্তেজিত হলে মোমেন সিকদার দ্রুত সেখান থেকে সটকে পড়েন।

সহকারী প্রকৌশলী মামুনুর রশিদ বরিশালটাইমসকে বলেন, ৩ কোটি ৬২ লাখ টাকার দরপত্র আহ্বান করা হলেও মোমেন সিকদার ৩৩ ভাগ লেস দিয়ে ২ কোটি ৬০ লাখ টাকায় উন্নয়ন কাজটি নিয়েছেন। ফলে এই কাজে নিশ্চিত লোকসান হবে বুঝতে পেরে তিনি আগাম বিল তুলে নিতে তৎপর হন।

সম্প্রতি বিসিসিতে সোয়া ৫ কোটি টাকা বরাদ্দ এসেছে জানতে পেরে মোমেন সিকদার হরিজন পল্লীর কাজের বিপরীতে ১ কোটি টাকা বিল দেয়ার জন্য প্রকৌশল বিভাগে চাপ প্রয়োগ করতে থাকেন।

বিসিসির নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ওয়াহেদুজ্জামান বলেন, ঘটনার সময় তিনি নগর ভবনে ছিলেন না। তার দপ্তরের কোন কর্মকর্তা-কর্মচারীর সঙ্গে ঠিকাদার অশালীন আচরণ করে থাকলে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এদিকে বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের নির্বাহী প্রকৌশলী আনিসুজ্জামানকে ঠিকাদার কর্তৃক লাঞ্ছিত করা ও প্রাণনাশের হুমকি দেয়ার প্রতিবাদে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। এই ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষকে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দেয়া হয়েছে মানববন্ধন থেকে। সোমবার বিকাল ৪টায় নগর ভবনের সামনে বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীর ব্যানারে এ মানববন্ধন কর্মসূচির আয়োজন করা হয়।

মানববন্ধনে সিটি কর্পোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. আব্দুল মতিন, নির্বাহী প্রকৌশলী মনিরুল ইসলাম স্বপন, বঙ্গবন্ধু পেশাজীবী পরিষদের নগর ভবন শাখার সম্পাদক ও পরিচ্ছন্নতা শাখার কর্মকর্তা দীপক লাল মৃধাসহ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন।

7 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন