২রা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, বৃহস্পতিবার

বাউফলে নাম স্বর্বস্ব প্রতিষ্ঠান দিয়ে স্বাক্ষরতা প্রকল্প!

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০৮:৫১ অপরাহ্ণ, ১৭ জুলাই ২০১৭

পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলায় ‘শ্রাবণ’ নামের নাম সর্বস্ব একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান পেয়েছে সরকারের মৌলিক সাক্ষরতা প্রকল্প। অভিযোগ রয়েছে, জালিয়াতির মাধ্যমে গড়ে ওঠা ওই প্রতিষ্ঠানটি মোটা অংকের ঘুষ বাণিজ্যের মাধ্যমে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে প্রকল্পটি হাতিয়ে নেয়। সরকার দেশকে নিরক্ষর মুক্ত করতে ১৫ থেকে ৪৫ বছরের সকল নারী ও পুরুষদের অক্ষর দিয়ে স্বাক্ষর জ্ঞান দেওয়ার একটি প্রকল্প গ্রহণ করে। ৬ মাস মেয়াদী ওই প্রকল্পে ব্যয় বরাদ্দ হয়েছে প্রায় ১ কোটি ৩২ লক্ষ টাকা।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ওই প্রকল্পের জন্য আরডিএস, এসডিএ, শ্রাবণ ও পিডিও নামের চারটি প্রতিষ্ঠানের নাম জেলা প্রশাসকের অফিস থেকে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। সেখান থেকে ‘শ্রাবণ’কে নির্বাচন করা হয়। স্থানীয়ভাবে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করছেন এমন কয়েকজন অভিযোগ করে বলেন, একটি নাম সর্বস্ব প্রতিষ্ঠান দিয়ে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প বাস্তবায়ন কতটা সার্থক হবে তা পূনরায় ভেবে দেখা জরুরি।

উপজেলা সমাজসেবা অফিসে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাউফল উপজেলার দাশপাড়া ইউনিয়নের খেঁজুরবাড়িয়া গ্রামের কাঠেরপুল এলাকায় ওই প্রতিষ্ঠানটির একটি কার্যালয় আছে। কাঠেরপুল এলাকায় গিয়ে স্থানীয়দের কাছে শ্রাবণ নামের প্রতিষ্ঠানের নাম জিজ্ঞেস করলে তারা জানান, এ ধরনের কোনো প্রতিষ্ঠানের নাম তারা জানে না। পরে আবু মিয়া নামের এক ব্যক্তি জানান, স্থানীয় কালাম গাজীর বাড়িতে একটি এনজিওর অফিস হবে বলে শুনছি। পরে কালাম গাজীর বাড়ি গিয়ে দেখা যায় একটি টিনশেড ঘরের দরজায় একটি কাগজে লেখা রয়েছে ‘শ্রাবণ’।

ঘরটি তখন তালাবদ্ধ অবস্থায় ছিল। পরে ওই ঘরের ভিতর উঁকি দিয়ে দেখা যায়, অগোছালোভাবে কয়েকটি চেয়ার এবং একটি টেবিল পড়ে রয়েছে। আশেপাশে ওই অফিসের কাউকে পাওয়া যায়নি। বাড়ির মালিক মো. কালাম গাজীর ছেলে মো. মামুনের কাছে ওই প্রতিষ্ঠানটির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, চলতি মাসে স্থানীয় আশরাফ নামে এক ব্যক্তি আমাদের কাছে ওই ঘরের সামনের অংশের একটি কক্ষ অফিস করার জন্য ভাড়া নেয়।

কিন্তু তারা এখন পর্যন্ত কোনো কার্যক্রম শুরু করেনি। এ দিকে এ প্রতিষ্ঠানটির সম্পর্কে খোঁজ নিতে গিয়ে পাওয়া যায় চাঞ্চল্যকর তথ্য। ১৯৮৭ সালে বাউফল উপজেলার দাশপাড়া ইউনিয়নের খেজুরবাড়িয়া গ্রামে ‘দাশপাড়া গ্রাম উন্নয়ন সংস্থা (ডিভিডিসি)’ নামে একটি সমাজসেবামূলক প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেন আবুল হাসেম নামের এক ব্যক্তি। এরপর ১৯৯০ সনে প্রতিষ্ঠানটির কর্মকান্ড মূল্যায়ন করে সমাজ সেবা অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠানটিকে নিবন্ধন দেয়। যার নিবন্ধ নম্বর পটু-২৬৭/৯০। এরপর ২০০৩ সালের দিকে প্রতিষ্ঠানটির কর্মকান্ডে কিছুটা শিথিলতা আসে।

এ সুযোগে সাকিব আহম্মেদ বশার নামে এক ব্যক্তি ‘দাশপাড়া গ্রাম উন্নয়ণ সংস্থার (ডিভিডিসি) সভাপতি আবুল হাসেম ও তার পিতা প্রতিষ্ঠানের জমিদাতা আবদুল কাদেরসহ অন্যান্য সদস্যদের স্বাক্ষর জাল করে প্রতিষ্ঠানটির নতুন একটি কমিটি সমাজসেবা থেকে অনুমোদন করিয়ে নেয়। এরপর আবার নতুন রেজুলেশন করে ডিভিডিসি এর নাম নাম পরিবর্তন করে ‘শ্রাবণ’ রাখেন। ডিভিডিসির প্রতিষ্ঠিাতা সভাপতি আবুল হাসেমের ছেলে মো. ওমর ফারুক বলেন, আমি ডিভিডিসির বৈধ সাধারণ সম্পাদক হওয়া সত্ত্বেও সাকিব আহম্মেদ বশার আমার বাবা ও ডিভিডিসির অন্যান্য সদস্যদের স্বাক্ষর জাল করে ভুয়া রেজুলেশন করে প্রতিষ্ঠানটির কমিটি এবং নাম পরিবর্তন করে প্রতিষ্ঠানটি ছিনতাই করে।

এ বিষয়ে উপজেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরসহ সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে একাধিকবার ধর্না দিলেও এর কোনো প্রতিকার পাইনি। এ বিষয়ে শ্রাবণের নির্বাহি পরিচালক সাকিব আহম্মেদ বশারের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি সকল অভিযোগ অস্বীকার করে সাংবাদিকদের বলেন, ২০০৪ সালে প্রতিষ্ঠানটি আবুল হাসেম তার কাছে হস্তান্তর করেছেন। যার প্রমাণাদি তার কাছে রয়েছে বলে তিনি দাবি করেন।

এ বিষয়ে জানতে উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. শাহজাদা বলেন, এমন একটি অভিযোগ তিনি পেয়েছেন। কিন্তু ডিভিডিসির নাম ও কমিটি পরিবর্তন করে যখন নতুন করে অনুমোদন নেওয়া হয় তখন আমি এখানে কর্মরত ছিলাম না। মোটা অংকের ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগ অস্বীকার করে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. গিয়াসউদ্দিন বলেন, ডিসি অফিস থেকে যেসকল প্রতিষ্ঠানের তালিকা পাঠানো হয়েছে সেখান থেকেই ওই প্রতিষ্ঠানটিকে নির্বাচন করা হয়েছে। ঘুষের অভিযোগ ভিত্তিহীন।”

 

7 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন