২৭শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শনিবার

বিজ্ঞান বিভাগের ডিন লাঞ্ছিতের ঘটনায় বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে তোলপাড়!

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১০:৫৬ অপরাহ্ণ, ২১ এপ্রিল ২০১৮

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান ও প্রকৌশল অনুষদের ডিন ড. হাসিনুর রহমানকে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। গত বৃহস্পতিবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ ও হিসাব শাখার সহকারী পরিচালক বরুন কুমার দে’র সাথে ওই শিক্ষকের কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে তাকে লাঞ্ছিত করা হয়। এ ঘটনার ওই শিক্ষকের বিচার চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও শিক্ষক সমিতি বরাবর একটি আবেদন করেছেন হাসিনুর রহমান। এর পরপরই বৃহস্পতিবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ ও হিসাব শাখার অপর এক সহকারী পরিচালক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে তার নিজের ভেরিফাইড একাউন্ট থেকে শিক্ষকদের নিয়ে চরম অবমাননাকর ও আপত্তিকর মন্তব্য করায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল শিক্ষকদের মাঝে চরম অসন্তোষ দেখা দেয়।

এ ঘটনার নিন্দা ও বিচার দাবি কওে শিক্ষক সমিতির পক্ষ থেকে শুক্রবার রাতে বিবৃতি দেয়া হয়। তবে বিষয়টি নিয়ে এর আগে শিক্ষক সমিতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তারা পৃথক কয়েক দফা বৈঠক করেছেন।

শনিবার অনুষ্ঠিত হওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় আলোচনা করার কথা থাকলেও তা না হওয়ায় রোববার (২২ এপ্রিল) সাধারণ সভা আহবান করেছে শিক্ষকরা। সেখান থেকে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণার কথা রয়েছে। ঘটনার শিকার বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান ও প্রকৌশল অনুষদের ডিন, মৃত্তিকা ও পরিবেশ বিজ্ঞানের চেয়ারম্যান, ছাত্র নির্দেশনা ও পরামর্শ কেন্দ্রের পরিচালক এবং সিন্ডকেট সদস্য ড. হাসিনুর রহমানের সাথে কথা বলে এবং তার দেয়া অভিযোগের ভিত্তিতে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার দুপুরে তিনি অর্থ ও হিসাব শাখার সহকরী পরিচালক বরুন কুমার দে’র সেল ফোনে অফিসের কাজের জন্য বেশ কয়েক বার ফোন দেন। কিন্তু তিনি তা রিসিভ করেননি এবং পরবর্তীতে ফোনও করেননি।

এ কারণে তিনি দুপুর তিনটায় তার দপ্তরে যান। সেখানে যাওয়ার পরে বরুন কুমার দে তার কক্ষে গিয়ে কথা বলার কথা বলেন। বরুন কুমার দে এক ঘণ্টা পরে ড. হাসিনুর রহমানের কক্ষে গেলে তার কাছে ফোন রিসিভ না করা এবং পরবর্তীতে ফোন না করার কারণ জানতে চাওয়া হলে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে যান। শিক্ষকের অধিনস্থ নয় এমনটি দাবি করে বরুন কুমার দে অশ্লীল ব্যাবহার করতে থাকেন।

তিনি বিষয়টি উপাচার্যকে অবহিত করার কথা বললে বরুন কুমার দে ওই শিক্ষককে লাঞ্ছিত করেন। এ সময় ওই শিক্ষকের কক্ষে অবস্থান নেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের চেয়ারম্যান ড. মো. আলাউদ্দিন, কোস্টাল স্টাডিজ এন্ড ডিজেস্টার ম্যানেজমেন্ট বিভাগের চেয়ারম্যান ড. হাফিজ আশরাফুল হক ও পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. খোর্শেদ আলম ওই কর্মকর্তাকে শান্ত করেন।

ওই দিন রাত ৮ টা ৫৮ মিনিটে বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ ও হিসাব শাখার সহকারি পরিচালক জনাব আতিকুর রহমান তার মাসুম আতিকুর নামের ফেসবুক আইডিতে শিক্ষকদের নিয়ে একটি পোস্ট করেন। তাতে উল্লেখ করেন ”শিক্ষককরা কি আমাদের সকলকে তাদের ছাত্র মনে করেন? এাঁ কি তাদের বোঝার ভুল না কি জ্ঞানের অভাব”।

ওই পোস্টটিতে বিশ্ববিদ্যলয়ের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা শিক্ষকদের নিয়ে আপত্তিকর, অবমাননাকর ও বিরুপ মন্তব্য করেন। এতে মারাত্মকভাবে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন শিক্ষকরা। সেই ঘটনার প্রতিবাদে শুক্রবার তাৎক্ষণিক এসকল বিষয় নিয়ে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির কার্যনির্বাহী কমিটি একটি জরুরি সভায় মিলিত হন।

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাধরণ সম্পাদক আবু জাফর মিয়া বরিশালটাইমসকে বলেন, বিজ্ঞান ও প্রকৌশল অনুষদের ডিন ড. হাসিনুর রহমান একজন জেষ্ঠ্য ও সর্বজন শ্রদ্ধেয় শিক্ষক। তাকে লাঞ্ছিত করেছেন অর্থ ও হিসাব দপ্তরের সহকারি পরিচালক বরুন কুমার দে। একই সাথে ওই শিক্ষককে হুমকি প্রদান করেন। ড. হাসিনুর রহমান আমাদের কাছে এ ঘটনা বর্ণনা করে সুষ্ঠু বিচার দাবি করে একটি লিখিত আবেদন দিয়েছেন। অভিযোগ পাবার পরে শুক্রবার বিকালে কার্যনির্বাহী কমিটির সভা করেছি। এরপর ওই অভিযোগপত্র আমরা উপাচার্যকে দিয়েছি।

সিন্ডিকেটে বিষয়টি নিয়ে সিদ্ধান্তের কথা থাকলেও তা হয়নি। তাই আজ রোববার শিক্ষক সমিতির সাধারণ সভা আহবান করা হয়েছে। সেখানে সাধারণ শিক্ষকদের মতামতের ভিত্তিতে পরবর্তী কর্মসূচি দেয়া হবে।

আবু জাফর মিয়া আরও বলেন- অর্থ ও হিসাব দপ্তরের কর্মকর্তারা প্রায়ই শিক্ষকদের অসম্মান করে কথা বলেন। সামজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শিক্ষকদের নিয়ে বিভিন্ন সময়ে কুরুচিপূর্ণ পোস্ট দেন। আমরা এ বিষয় গুলোকেও উপাচার্য মহোদয়কে জানিয়েছি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন শিক্ষক বলেন, অর্থ দপ্তরের কর্মকর্তারা ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারের ছত্রছায়ায় এই ধরণের কর্মকান্ড ঘটিয়ে চলছেন। আমরা এর দ্রুত প্রতিকার চাই।

এ বিষয়ে বরুন কুমার দে’র সঙ্গে বারবার ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি।

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্টার মো. মনিরুল ইসলাম প্রথমে বিষয়টি জানেন না বললেও পরবর্তীতে বলেন, এটা নিজেদের অভ্যন্তরীণ বিষয়। সকলে মিলে মিমাংসা করে নিলেই হয়। তবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিষয় নিয়ে কোন মন্তব্য করাটা চাকুরিবিধী পরিপন্থী। যদি এটা কেউ করে থাকেন তবে প্রমাণ সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এসএম ইমামুল হক বলেন, আমি অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি তদন্ত করা হবে। এর পরে ব্যাবস্থা নেয়া হবে। তবে এ ঘটনাটি সিন্ডিকেটে তোলার বিষয় ছিলো না তাই আলোচনা হয়নি বলে জানান তিনি।”

4 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন