২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শুক্রবার

ভারতে তীব্র তাপদাহে ২০০ মানুষের মৃত্যু

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০৯:৫০ অপরাহ্ণ, ১৭ মে ২০১৮

তীব্র তাপদাহে পুড়ছে ভারতের দিল্লি, হায়দরাবাদ, লক্ষ্ণৌ ও আহমেদাবাদ। এ মাসে প্রচন্ড গরমে মারা গেছে প্রায় দুইশো মানুষ। জুন পর্যন্ত গরমের তীব্রতা স্থায়ী হবে বলে পূর্বাভাস রয়েছে। এসব রাজ্যের মানুষকে সতর্ক করেছে প্রশাসন।

সম্প্রতি ভারতের উত্তর প্রদেশ, রাজস্থানসহ বেশ কয়েকটি রাজ্যে ধূলিঝড় আর বজ্রবৃষ্টিতে মারা গেছে দেড়শো মানুষ।

এবার উত্তরাঞ্চলে শুরু হয়েছে তাপদাহ। কয়েকটি রাজ্যে ৪০ থেকে ৪৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা বিরাজ করছে। আদ্রতার পরিমাণ বেশি হওয়ায় বিপর্যস্ত জনজীবন। তাপদাহে পুড়ে যাচ্ছে ক্ষেতের ফসল, মারা যাচ্ছে বন্যপ্রাণীও। প্রচণ্ড গরমে ব্যাঙ্গালুরুতে দেখা দিয়েছে পানির সংকট।

গরমে পানি শূন্যতা, আমাশয়, ডায়রিয়া ও হিটস্ট্রোকসহ নানা কারণে মহামারী দেখা দেওয়ার আশংকা করছেন চিকিৎসকরা। এ পরিস্থিতিতে নানা পদক্ষেপ নিয়েছে ভারতের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংস্থা। সুপেয় পানি ও হাসপাতালে জরুরি ব্যবস্থা করা এবং জনগণকে সচেতন করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

এরই মধ্যে ৩০টি ডপলার রাডার বসিয়েছে ভারতের আবহাওয়া বিভাগ। যেগুলো দুর্যোগের দুই থেকে তিন ঘণ্টা আগে সতর্কবার্তা দেবে।

প্রসঙ্গত, গত বছর থেকেই বিজ্ঞানীরা হুঁশিয়ারি দিয়ে আসছেন জলবায়ু পরিবর্তন ও বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলে দক্ষিণ এশিয়ায় ২১০০ সালের মধ্যে কোটি কোটি মানুষ মারা যাবে। তারই প্রাথমিক নমুনা হয়তো এই তাপদাহ ও মৃত্যুর ঘটনা। ২০১৩ সাল থেকেই ভারতে তীব্র তাপদাহে হাজার হাজার মানুষের মৃত্যুর ঘটনা শুরু হয়েছে। ২০১৫ সালে সবচেয়ে বেশি মানুষ মারা গেছে।

গত মাসে পাকিস্তানের সিন্ধু প্রদেশের নবাবশা শহরে তাপমাত্রা ৫০ ডিগ্রি ছাড়িয়ে গিয়েছিল। বিজ্ঞানীদের ধারণা বিশ্বের ইতিহাসে এপ্রিল মাসে পৃথিবীর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা হতে পারে এটা।

৪ আগস্ট ২০১৭ তারিখে,‘সায়েন্স অ্যাডভান্সেস’ সাময়িকীতে প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে বিজ্ঞানীরা আশঙ্কা ব্যক্ত করেছেন ৮০ বছর পর দক্ষিণ এশিয়ায় যে গরম পড়বে তা মানুষের বেঁচে থাকার সহ্যসীমা অতিক্রম করতে পারে। তাতে লাখ লাখ মানুষ মারা যেতে পারে কিংবা এলাকাছাড়া হতে পারে। বৈশ্বিক উষ্ণতা বাড়ার সঙ্গে ওই সময় আর্দ্রতার মাত্রা বেড়ে এমনটা ঘটবে।

ওই সময় সারা বিশ্বেই এই পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার আশঙ্কা থাকলেও দক্ষিণ এশিয়ার ৩০ শতাংশ মানুষের জন্য এ হুমকি প্রবল। বিশেষ করে বাংলাদেশ, ভারতের উত্তরাঞ্চল ও পাকিস্তানের দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ এই ঝুঁকির মধ্যে থাকবে।

গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, কার্বন নিঃসরণের হার না কমানো হলে দক্ষিণ এশিয়ার অধিকাংশ অঞ্চলে ওয়েট বাল্ব তাপমাত্রার সীমা ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছে যেতে পারে। বিশেষ করে গঙ্গা অববাহিকা, ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল, বাংলাদেশ, চীনের পূর্ব উপকূল, শ্রীলঙ্কার উত্তরাঞ্চল এবং পাকিস্তানের সিন্ধু অববাহিকায় ওয়েট বাল্বে তাপমাত্রার সীমা চরমে পৌঁছাতে পারে।

মানবজাতির জন্য এই ‘ওয়েট বাল্ব’ রিডিং খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ মানুষের শরীরের ভেতরের স্বাভাবিক তাপমাত্রা হলো ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর শরীরের ত্বকের তাপমাত্রা থাকে ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এতে দেখা যায়, ত্বকের বাইরের তাপমাত্রা কম। এটি কম হওয়ার কারণ শরীরের ভেতরের ‘বিপাকক্রিয়াজনিত তাপ’ (মেটাবলিক হিট) ঘামের মাধ্যমে বাষ্প হয়ে বের হয়ে যায়। কিন্তু বাতাসে যদি ওয়েট বাল্ব টেম্পারেচার বা আর্দ্রতাজনিত তাপমাত্রা ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা এর বেশি হয়ে যায়, তাহলে শরীর থেকে তাপ বের হওয়ার হার দ্রুত কমতে থাকবে। কারণ ত্বকের তাপমাত্রা ও আর্দ্রতাজনিত তাপমাত্রা তখন সমপরিমাণ হয়ে যাবে। এমনটি ঘটলে ছয় ঘণ্টার মধ্যে একজন সুস্থ মানুষও মারা যেতে পারে, যেটিকে হিটস্ট্রোক বলে। এর কারণ আর্দ্রতাজনিত তাপমাত্রা ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছার অর্থ হলো মানুষের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার সর্বোচ্চ সীমা। এ ছাড়া আর্দ্রতাজনিত তাপমাত্রার ক্ষেত্রে ৩১ ডিগ্রি সেলসিয়াসকেই বিপজ্জনক মাত্রা বলে মনে করা হয়।

এ যাবৎকালে বিশ্বে তাপমাত্রার রেকর্ডের ইতিহাসে ওয়েট বাল্ব বা আর্দ্রতাজনিত তাপমাত্রার সীমা ৩১ ডিগ্রি সেলসিয়াস অতিক্রম করার ঘটনা খুবই বিরল। ২০১৫ সালে ইরানে তা ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছাকাছি পৌঁছেছিল। আর ওই বছরের গ্রীষ্মকালে ভারত ও পাকিস্তানে তীব্র দাবদাহে সাড়ে তিন হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছিল।

বিজ্ঞানীরা মনে করেন, এই আশঙ্কা দূর করতে হলে প্যারিস জলাবায়ু চুক্তি মেনে চলতে হবে, যাতে কার্বন নিঃসরণ কমিয়ে বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির পরিমাণ ২ ডিগ্রির নিচে রাখার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।

7 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন