২৭শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শনিবার

মঠবাড়িয়ায় অজ্ঞাত নারীর করুন মৃত্যু!

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০৮:০২ অপরাহ্ণ, ০৪ মে ২০১৬

নিভৃত গ্রামের এক স্কুলের বারান্ধায় গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় পড়ে ছিলো চল্লিশ উর্ধো এক অজ্ঞাত নারী। পড়নে ময়লা নোংরা জির্ণ শাড়ি। মুখে ছিলো অসুস্থতার কয়েকটি ক্ষত। ক্ষতস্থান জুড়ে পোকা কিলবিল করছিল জীবনের এমন সংকটে স্বজনেরা কেউ তার পাশে নেই। হয়তো ফেলে রেখে আর্থিক সমস্যা ও ঝামেলা থেকে বাঁচার ব্যর্থ চেষ্টা করছে। জীবনের এমন সংকটে স্বজনেরা কেউ তার পাশে নেই।
এ অবস্থায় তিনদিন ধরে স্কুলের বারান্ধায় কাতরাচ্ছিলো হতাভাগা এই নারী। পাশের কমিউনিটি ক্লিনিকের হেলথ প্রোভাইডারে নজরে আসলে তিনি নারীকে উদ্ধার করে স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় আশংকাজনক অবস্থায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠায়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ওই অজ্ঞাত নারীকে ভর্তি না নিয়ে বাহিরে ফেলে রাখে। স্থানীয় তুষখালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শাহজাহান হাওলাদার ঘটনাটি উপজেলা চেয়ারম্যান আশরাফুর রহমানকে অবহিত করেন। তাদের সুপারিশে পরবর্তীতে ওই নারীর স্থান হয় হাসপাতালের বারান্ধায়। সেখানে একপ্রকার বিনা চিকিৎসায় ৬ঘন্টা পর মঙ্গলবার (০৩ মে) বিকেলে ওই দুর্ভাগা নারীর মর্মান্তিক মৃত্যু ঘটে। মঠবাড়িয়া থানা পুলিশ বুধবার ওই নারীর লাশের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করে। তবে ওই নারীর পরিচয় উদঘাটন করেতে পারেনি পুলিশ।

 
থানা ও স্থানীয়দের সূত্রে জানাগেছে, গত তিনদিন আগে অজ্ঞাত পরিচয়ের ওই নারী মঠবাড়িয়া উপজেলার বান্ধাঘাটা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বারান্ধায় মুমূর্ষু অবস্থায় কাতরাচ্ছিলো। স্থানীয়দের ধারনা স্বজনরা চিকিৎসার ঝামেলা থেকে বাঁচতে ওই নারীকে স্কুলের বারান্ধায় ফেলে রেখে যায়। এরপর খাদ্য ও চিকিৎসাহীন অবস্থায় ওই নারীর অবস্থা আরো সংকটময় হয়ে পড়ে। স্থানীয় কমিউনিটি ক্লিনিকের হেলথ প্রোভাইডার গোপাল চন্দ্র তালুকদার জানতে পেরে ওই নারীকে উদ্ধার করে ভ্যানযোগে চিকিৎসার জন্য মঠবাড়িয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠিয়ে দেন। কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ওই নারীকে বেডে ভর্তি না নেওয়ায় হতভাগ্য ওই নারী হাসপতালের বারান্ধায় পড়ে থাকে। পরে স্থানীয় কয়েকজন সাংবাদিকদের উদ্যোগে তুষখালী ইউপি চেয়ারম্যান শাহজাহান হাওলাদার, ডা. বশির আহম্মেদ সহ কিছু ব্যক্তির আর্থিক সহযোগিতায় ওই নারীকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানোর উদ্যোগ নেয়। পরে স্থানীয় কয়েকজন এম্বুলেন্সে উঠানোর সাথে সাথে মঙ্গলবার বিকেলে তিনি মারা যান।

 
স্থানীয়দের অভিযোগ হাসপাতালের সামনে ৬ ঘন্টা মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অবহেলায় বিনা চিকিৎসায় ওই নারীর মৃত্যু হয়। পরে পুলিশ খবর পেয়ে অজ্ঞাত নারীর লাশ উদ্ধার করে।
এবিষয়ে কমিউনিটি ক্লিনিকের হেলথ প্রোভাইডার গোপাল চন্দ্র তালুকদার জানান, পরিচয়হীন ওই নারী মুমূর্ষু অবস্থায় স্কুলের বারান্ধায় পড়ে ছিলো। তার মুখে পচন ধরে ছিলো এবং পোকা কিলবিল করছিল। তিনি কথা বলতে পারতেন না এবং যে ধরনের অসুস্থ ছিলো তা কমিউনিটি ক্লিনিকে চিকিৎসা দেয়া সম্ভব ছিলনা। তবে সে খুব বাঁচার আকুতি জানিয়েছিল। পরে তাঁকে ভ্যানযোগে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠানো হয়।

 

অজ্ঞাত ওই নারীকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি না নেওয়া ও তার যথাযথ চিকিৎসা সেবা না দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পঃ পঃ কর্মকর্তা মাসুমুল হক জানান, ওই নারী ক্যান্সারে আক্রান্ত ও সংকটজনক অবস্থা  ছিলো। খবর পেয়ে আমি বিকেলে গিয়ে তাকে মৃত দেখতে পাই। চিকিৎসার বিষয়ে কর্তব্যরত চিকিৎসক বিস্তারিত বলতে পারবেন।

 
এব্যাপারে কর্তব্যরত চিকিৎসক আলী আহসানের মুঠোফোনে বারবার ফোন দিলেও তিনি তা রিসিভ না করায় তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
মঠবাড়িয়া থানার অফিসার ইনচার্জ খন্দকার মোস্তাফিজুর রহমান জানান, এব্যাপারে থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা হয়েছে। অজ্ঞাত নারীর লাশ ময়নাতদন্ত শেষে বেওয়ারিশ হিসেবে জেলা আঞ্জুমান মফিদুলে হস্তান্তর করা হয়েছে।

9 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন