২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শুক্রবার

মার্ক্সই কি প্রথম রোবটের উত্থানের কথা বলেছিলেন?

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০২:২৮ অপরাহ্ণ, ২২ মে ২০১৮

চুল কাটার জন্য ব্রিটেনের একটি সেলুনে বুকিং চলছে। কাস্টমারের পক্ষ হয়ে সেলুনে ফোন করেছে একটি রোবট।

সেলুনে যে ফোন রিসিভ করছে সেটিও একটি রোবট। দুই রোবটের মধ্যে কথা হচ্ছে। তারা ঠিক করে নিচ্ছে কোনদিন কখন লোকটি চুল কাটাতে আসবেন। এই যন্ত্রটির নাম গুগল ডুপ্লেক্স। ঠিক মানুষের মতো করেই কথা চালিয়ে যেতে পারে যন্ত্রটি। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এখন পৌঁছেছে এই পর্যায়ে।

সেলুনে কয়েকদিন আগেও এই বুকিং নেওয়ার কাজটি করতো একজন অফিস সহকারী। কিন্তু ওই সেলুনে তার চাকরি চলে গেছে এই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার দখলে। কমিউনিস্ট দার্শনিক কার্ল মার্ক্স, এ মাসেই যার ২০০তম জন্মবার্ষিকী পালিত হচ্ছে, তিনি বলেছিলেন যে একদিন এ ধরনের যন্ত্রপাতির ব্যবহার বাড়বে।

‘উৎপাদন ব্যবস্থায় যখন যন্ত্রপাতি যুক্ত হবে তখন শ্রমের ধরনেও নানা ধরনের পরিবর্তন ঘটবে। যন্ত্রপাতির এই স্বয়ংক্রিয় হয়ে ওঠার চূড়ান্ত রূপ হচ্ছে যন্ত্রের গতি যার মাধ্যমে সে নিজেকেই চালিত করতে পারে এবং তার সঙ্গে বুদ্ধিমত্তাও। শ্রমিকরা এখানে শুধু একটি যন্ত্রের সঙ্গে আরেকটির সংযোগ স্থাপন করছে।’

ব্রিটেনে হাটফোর্ডশায়ার বিশ্ববিদ্যালয়ে শ্রমিক ও বিশ্বায়ন বিভাগের অধ্যাপক আরশেলা হিউজ বলেন, ‘কার্ল মার্ক্স বিষয়টিকে খুব ভালোভাবেই উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন। ‘যন্ত্রপাতি এমন একটা বাড়তি বিষয় যোগ করে যে তখন আর শ্রমিকের প্রয়োজন পড়ে না। আবার যদি কোনো শ্রমিক না থাকে তখন সেটা কোনো বাড়তি মূল্যও যোগ করে না। কারণ, কার্ল মার্কস বলেছেন, এই শ্রমিক শোষণের মধ্য দিয়েই মুনাফা অর্জিত হয়।’

এখন প্রত্যেকটি কম্পানি যদি তাদের শ্রমিকদের হটিয়ে এসব যন্ত্রপাতির ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে তাহলে প্রতিযোগিতার জন্য তাদেরকে সবসময় আধুনিক যন্ত্রটি কিনতে হবে। ১৯৩০ এর দশকে আরেক ব্রিটিশ অর্থনীতিবিদ জন মেনার্ড কেইন্স বলেছিলেন, ‘মানুষ তার বেশিরভাগ কাজই যন্ত্রের কাছে হস্তান্তর করে সপ্তাহে হয়তো ১৫ ঘণ্টার মতো কাজ করবে।’

কিন্তু ব্রিটেনে বামপন্থী একটি মিডিয়া গ্রুপের গবেষক এলানা পেনি বলেন, ‘যন্ত্রপাতির ব্যবহার এত বেড়ে যাওয়ার পরও বেশিরভাগ মানুষেরই অবসর কেন বাড়েনি।’ তিনি বলেন, ‘কথা হচ্ছে- এই অবসর সময় কীভাবে ভাগাভাগি হচ্ছে। কৃষি ব্যবস্থার উন্নয়নের শুরু থেকেই মানুষের অবসর ছিল। তারপর শিল্পকলা, বিজ্ঞান এবং মানব সভ্যতার বিকাশ ঘটেছে। অন্যদিকে রয়েছে শ্রেণি ব্যবস্থা। এক শ্রেণির মানুষ অন্য শ্রেণির মানুষের জন্য কাজ করছে।’

‘প্রযুক্তি কি করছে সেটা এখানে গুরুত্বপূর্ণ নয়, গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে এই প্রযুক্তির মালিকানা কার হাতে। কার্ল মার্ক্সও বলেছিলেন, গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে উৎপাদন পদ্ধতির মালিকানা’,বলেন তিনি।

অনেকে মনে করেন, রোবট যখন সবকিছুর নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করবে তখন বেকারত্বের হার গিয়ে পৌঁছাবে ৭০ শতাংশে। কিন্তু কিংস কলেজের অধ্যাপক জনাথন পোর্টার এ নিয়ে মোটেও চিন্তিত নন। তিনি বলেন, ‘গত তিন শ বছর ধরেই প্রযুক্তির উন্নয়ন ঘটেছে। লোকজন সবসময়ই বলে এসেছে যে এর ফলে বেকারত্ব সৃষ্টি হবে কিন্তু সেরকম কিছু হয়নি।’

অধ্যাপক জনাথন আরো বলেন, ‘তবে আমার দুশ্চিন্তা হচ্ছে- খুবই ক্ষুদ্র একটি অংশ এসব ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি তৈরি করছে আর বৃহৎ অংশটি জড়িত অদক্ষ কাজের সঙ্গে। এসব কাজের চাহিদা কম হওয়ায় তাদের মজুরিও কম। সেকারণে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে, এই প্রযুক্তি কারা নিয়ন্ত্রণ করছে সেটা।’

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সম্প্রতি ফেসবুকের মতো সোশ্যাল মিডিয়া থেকে মানুষের ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁস হয়ে যাওয়ার কেলেঙ্কারি থেকে বোঝা যাচ্ছে, উনবিংশ শতকে কার্ল মার্ক্সের শ্রেণিভিত্তিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা নিয়ে আলোচনা একবিংশ শতাব্দিতেও কতটা প্রাসঙ্গিক।

6 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন