https://joinnavy.navy.mil.bd/

বরিশাল

লুটের টাকায় ভারতে নানকের বিলাসী জীবন

বরিশালটাইমস রিপোর্ট

বরিশালটাইমস রিপোর্ট

৩১ আগস্ট, ২০২৫ ১৮:০২

প্রিন্ট এন্ড সেভ

লুটের টাকায় ভারতে নানকের বিলাসী জীবন

বরিশাল থেকে ঢাকা আসেন লঞ্চে এক কাপড়ে। ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হন। চলার মতো অর্থ ছিল না। ছিল না খাবার টাকা। শেখ সেলিমের ‘বাংলার বাণী’ পত্রিকায় চাকরি নেন বিজ্ঞাপন ম্যানেজারের। রাতে ঘুমাতেন বাংলার বাণী অফিসেই নিউজ প্রিন্ট বিছিয়ে। বাংলার বাণীতে যে বেতন পেতেন, তা দিয়েই চলতেন কোনো রকমে। বেতনও ঠিকঠাক মতো হতো না। অভাব-অনটনে কাটত জীবন। কাগজে কলমে আইনের ডিগ্রি থাকলেও কোনো দিন আইন পেশায় যুক্ত থাকেননি। কিন্তু গত ৫০ বছরে গড়েছেন হাজার কোটি টাকার সম্পদ। স্ত্রী ব্যাংকে চাকরি করতেন। সেই চাকরি পান রাজনৈতিক বিবেচনায়। প্রয়াত আখতারুজ্জামান বাবুকে ধরে ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকে চাকরি নেন। সেই টাকায় চলত সংসার। নিজের কোনো বৈধ উপার্জন ছিল না। কিন্তু রাজনীতিই তার কাছে ছিল দুর্নীতি এবং অবৈধ অর্থ উপার্জনের প্রধান উপায়। রাজনীতি করেই অবৈধ সম্পদের পাহাড় গড়েছেন জাহাঙ্গীর কবির নানক। নিষিদ্ধ ঘোষিত আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য। বর্তমানে পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন। লুটের টাকায় কাটাচ্ছেন বিলাসী জীবন। বৈধ কোনো উপার্জন ছাড়াই তিনি হাজার কোটি টাকার মালিক। আওয়ামী লীগের ১৫ বছরের শাসনামলে দুর্নীতি, লুটপাট করেছেন ব্যাপকভাবে। দলের ভিতর কমিটি বাণিজ্য এবং মনোনয়ন বাণিজ্য করেছেন লাগামহীন। দুর্নীতির দাম কমিশনের প্রাথমিক হিসাব মতে, গত ১৫ বছরে জাহাঙ্গীর কবির নানকের সম্পদের পরিমাণ বেড়েছে ৩০ গুণ। তবে তার ঘনিষ্ঠজনরা মনে করেন যে, এই হিসাবটি খুবই তুচ্ছ এবং হাস্যকর। বাস্তবে তার সম্পদের পরিমাণ আরও কয়েকশ গুণ বেশি। ২০০৮ সালে নির্বাচন কমিশনে জমা দেওয়া হলফনামা অনুযায়ী নানক ও তার স্ত্রীর যৌথ সম্পদের পরিমাণ ছিল ৬৩ লাখ ৭৫ হাজার ৬৫১ টাকা। ২০২৪ সালের জানুয়ারির ডামি নির্বাচনের সময় হলফনামায় নানক সম্পদের যে বৈধ হিসাব দিয়েছিলেন তার পরিমাণ ১৮ কোটি ৮৭ লাখ ১৫ হাজার ৯৫১ টাকা। শুধু দেখানো হিসাবেই তার সম্পদ বেড়েছে ৩০ গুণ। আওয়ামী লীগের এই নেতার কোনো বৈধ আয় নেই। তাহলে সম্পদ বাড়ল কীভাবে? একমাত্র উপায় রাজনীতি। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর জাহাঙ্গীর কবির নানক প্রথমে মন্ত্রী হতে পারেননি। কয়েক দিন পরে তিনি স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। স্থানীয় সরকার মন্ত্রী ছিলেন সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। সৈয়দ আশরাফ মন্ত্রণালয়ে যেতেন না। মন্ত্রণালয়ের কাজেও তার মনোযোগ ছিল না। আর এই সুযোগ নেন জাহাঙ্গীর কবির নানক। বিভিন্ন টেন্ডার এবং বিভিন্ন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে অবৈধ লেনদেনের মাধ্যমে গড়ে তোলেন সম্পদের পাহাড়। ২০০৯ সালে বিডিআর বিদ্রোহের পর নানক আরও ক্ষমতা কেন্দ্রের ঘনিষ্ঠ হয়ে যান, হয়ে পড়েন বেপরোয়া। অনেকেই অভিযোগ করেন যে, বিডিআর বিদ্রোহের পিছনে তার সম্পৃক্ততা ছিল। সেটি তদন্ত সাপেক্ষ বিষয়। কিন্তু বিডিআর বিদ্রোহের পর জাহাঙ্গীর কবির নানক আওয়ামী লীগের অন্যতম নীতিনির্ধারকে পরিণত হন। এরপর থেকেই তিনি একের পর এক সম্পদ গড়তে থাকেন। নিঃস্ব রিক্ত থেকে তিনি হয়ে যান হাজার কোটি টাকার মালিক। ২০০৯ সালে প্রতিমন্ত্রী হওয়ার পর জাহাঙ্গীর কবির নানকের প্রথম বড় দুর্নীতি আসে ডেসটিনির ঘটনায়। ডেসটিনির কাছ থেকে তিনি মোটা অঙ্কের টাকা নেন। কিন্তু পরবর্তীতে তাদেরকে কোনো সহায়তা করেননি নানক। ডেসটিনির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।

বিভিন্ন সূত্রগুলো বলছে, ডেসটিনি নিজেদেরকে বাঁচানোর জন্য নানককে প্রায় দুই শ কোটি টাকা উৎকোচ দিয়েছিল। সেই সময় জাহাঙ্গীর কবির নানক এবং পল্লী উন্নয়ন সচিব মিহির কান্তি মজুমদার যৌথভাবে এই টাকা আত্মসাৎ করেছিলেন বলে একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করেছে। ডেসটিনি ছাড়াও এই সময় নানক এরকম আরও কয়েকটি কোঅপারেটিভ সোসাইটির কাছ থেকে বিপুল অর্থ গ্রহণ করে। তাদের মধ্যে অন্যতম হলো ‘যুবক’। ‘যুবক’ সমবায় সারা দেশে প্রচুর জমি-জমা এবং সম্পদ করেছিল। ঢাকা শহরেও তাদের বিপুল সম্পদ ছিল। যুবকের ধানমন্ডির জমিটি জাহাঙ্গীর কবির নানক দেন তার ঘনিষ্ঠ সহচর মির্জা আজমকে। নামমাত্র মূল্যে ধানমন্ডির এক বিঘা জমি মির্জা আজম গ্রহণ করেন। যেখানে তিনি এখন বহুতল ভবন করেছেন এবং একটি ফ্ল্যাটে নিজে থাকতেন। এ ছাড়া মোহাম্মদপুর, বসিলা, কেরানীগঞ্জে যুবকের বিভিন্ন সম্পদ দখল করে নেন জাহাঙ্গীর কবির নানক। যুবকের লাইসেন্স নবায়ন করে দেওয়া হবে, যুবককে নতুন করে কাজ করতে দেওয়া হবে- এরকম আশ্বাস দিয়েও নানক বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করেছেন। এ সময় জাহাঙ্গীর কবির নানকের আরেকটা টার্গেট ছিল আর্থ ফাউন্ডেশন। আর্থ ফাউন্ডেশনেও কোঅপারেটিভ সোসাইটি ছিল, যারা জনগণকে উচ্চ মুনাফার লোভ দেখিয়ে টাকা গ্রহণ করত। আর্থ ফাউন্ডেশনের কাছ থেকেও মোটা অঙ্কের টাকা নেন। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো যাদের কাছ থেকে তিনি অর্থ নিয়েছেন, তাদেরকেই তিনি ফাঁসিয়ে দিয়েছেন। কারও কোনো উপকার করেননি। এটি ছিল নানকের অভিনব একটি কৌশল। এ সময় জাহাঙ্গীর কবির নানক ‘একটি বাড়ি একটি খামার’ নামে সেই প্রকল্পটির দিকে নজর দেন। শেখ হাসিনার অন্যতম প্রিয় এই প্রকল্প ছিল, যেখানে গরিব মানুষের ভাগ্য উন্নয়নের জন্য তাদেরকে একখণ্ড জমি এবং সেই জমির ওপর বাড়ি এবং একটি খামার করে দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এই পুরো টাকাই লুটপাট করা হয়। ‘একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পে’র নথিপত্র পর্যালোচনা করে দেখা যায় যে, জাহাঙ্গীর কবির নানকের পাঁচ বছরের মন্ত্রিত্বকালের সময় সেখানে মোট ৪ হাজার ৮৮৫ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছিল। অথচ কোনো গরু বা বাড়িঘর দেওয়ার কোনো ঘটনাই ঘটেনি। পুরো টাকাই প্রায় লুটপাট হয়ে গেছে। এ সময় ‘একটি বাড়ি একটি খামারে’র নাম হয় ‘অর্ধেক তোমার, অর্ধেক আমার’।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে যে, প্রশান্ত কুমার হালদার নামে একজন প্রকল্প পরিচালকের যোগসাজশে জাহাঙ্গীর কবির নানক এবং আরও কতিপয় ব্যক্তি মিলে এই প্রকল্প লুণ্ঠন করেন। এ ছাড়াও মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী থাকা অবস্থায় মিল্কভিটা সমবায় সমিতি ছিল জাহাঙ্গীর কবির নানকের অর্থ উপার্জনের একটি অন্যতম জায়গা। মিল্কভিটাতে হস্তক্ষেপ করে, মিল্কভিটার বিভিন্ন বিষয় তদারকি করে বানিয়ে ফেলেন বিপুল পরিমাণ টাকা। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অন্যতম বিভাগ স্থানীয় প্রকৌশল অধিদপ্তর। স্থানীয় প্রকৌশল অধিদপ্তরে সবচেয়ে বেশি অবকাঠামো উন্নয়নের কাজ হয়। এই প্রতিষ্ঠানটি আন্তর্জাতিক সহায়তা পায় প্রচুর। জাহাঙ্গীর কবির নানক এখানে নিয়োগ বাণিজ্য শুরু করেন। স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী হিসেবে তিনি কে প্রধান প্রকৌশলী হবেন এবং গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পগুলোতে কারা প্রকল্প পরিচালকের দায়িত্ব পালন করবেন সে বিষয়ে তদারকি শুরু করেন। বিনিময়ে হাতিয়ে নেন কোটি কোটি টাকা।

২০০৯ থেকে ২০১৫ সালে নানকের অন্যতম বড় কেলেঙ্কারি ছিল যাত্রাবাড়ী ফ্লাইওভার প্রকল্প। সৈয়দ আশরাফ এই প্রকল্প দুর্নীতিপূর্ণ এবং অযৌক্তিক হিসেবে ফাইল আটকে দেন। সৈয়দ আশরাফ এই প্রকল্পকে অনুমতি না দেওয়ার জন্য একটি দীর্ঘ নোট লিখেছিলেন। জাহাঙ্গীর কবির নানক এই প্রকল্পটি যেন পাস হয় সেজন্য শেখ হাসিনার কাছে যান এবং তার সঙ্গে এক দিন দেনদরবার করেন। জানা যায়, এই প্রকল্প পাস করানোর জন্য নানককে মোটা অঙ্কের টাকা দেওয়া হয়। এই টাকার বিনিময়ে জাহাঙ্গীর কবির নানক, শেখ হাসিনাকে প্রকল্পের প্রয়োজনীয়তা বোঝাতে সক্ষম হন। পরবর্তীতে সৈয়দ আশরাফকে ডেকে নিয়ে যান শেখ হাসিনা এবং এই ফ্লাইওভারের ফাইলে স্বাক্ষর করেন। এটি ছিল বাংলাদেশের একটি বড় দুর্নীতির ঘটনা। যাত্রাবাড়ী ফ্লাইওভার এখন একটি বিষফোঁড়া হিসেবে জাতির সামনে এসেছে। নানকের এসব দুর্নীতি, অনিয়ম এবং মন্ত্রণালয়ের স্বেচ্ছাচারিতার কথা সবাই জানত। এ কারণেই ২০১৪ সালের নির্বাচনের পর জাহাঙ্গীর কবির নানককে মন্ত্রী হিসেবে রাখা হয়নি। কিন্তু মন্ত্রী না হলে কী হবে? জাহাঙ্গীর কবির নানক তার দুর্নীতি এবং লুটপাট অব্যাহত রাখেন। হিসাব করে দেখা গেছে যে, পাঁচ বছর প্রতিমন্ত্রী থাকা অবস্থায় জাহাঙ্গীর কবির নানক স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। যে টাকা দিয়ে তিনি বেনামে দেশেবিদেশে সম্পদ করেছেন। এসব অধিকাংশ সম্পদের হিসাব তিনি গোপন করেছেন। তার ব্যক্তি চাকর-বাকর, দেহরক্ষীর নামে ফ্ল্যাট, জমি কিনে তিনি নিজেকে নিরাপদে রেখেছেন। এভাবেই আওয়ামী লীগ শাসনামলে প্রথম পাঁচ বছরেই নানক হয়ে যান অন্যতম ধনী। যিনি এক সময় দুবেলা খেতে পারতেন না, তিনি পাঁচ বছরের মধ্যেই হয়ে ওঠেন এক ধনাঢ্য হাজার কোটি টাকার মালিক।

সংবাদসূত্র: বাংলাদেশ প্রতিদিন।

আরও পড়ুন:

আইনজীবীদের নিয়ে বেফাঁস মন্তব্য করে বিপাকে মনোনয়নবঞ্চিত বিএনপি নেতা!

হাসিবুল ইসলাম, বরিশাল

হাসিবুল ইসলাম, বরিশাল

০৭ নভেম্বর, ২০২৫ ১৯:১৬

প্রিন্ট এন্ড সেভ

আইনজীবীদের নিয়ে বেফাঁস মন্তব্য করে বিপাকে মনোনয়নবঞ্চিত বিএনপি নেতা!

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ও জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের নোটিস। চাপের মুখে সংবাদ সম্মেলন করে ক্ষমা প্রার্থনা।

আইনজীবীদের নিয়ে বেফাঁস মন্তব্য করে বিপাকে পড়েছেন বরিশাল বিএনপি নেতা সাবেক এমপি মেজবাহ উদ্দিন ফরহাদ। আসন্ন ত্রয়োদশ নির্বাচনে বরিশাল-৪ (মেহেন্দিগঞ্জ-হিজলা) আসনে বিএনপির মনোনয়নবঞ্চিত এই নেতা গত ৫ নভেম্বর পার্শ্ববর্তী বাবুগঞ্জে বিএনপির একাংশ আয়োজিত বৈঠকে বক্তব্য রাখতে গিয়ে আইনজীবীদের টাউট-বাটপার বলে অভিহিত করেন। এনিয়ে পত্র-পত্রিকায় নেতিবাচক লেখালেখিসহ বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মেজবাহ উদ্দিন ফরহাদের সেই বক্তব্যের ভিডিওটি সমাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে শুরু হয় বিতর্ক। আইনজীবীদের নিয়ে এমন বক্তব্য দেওয়ার ঘটনায় নিন্দা-প্রতিবাদ জানিয়ে ০৬ নভেম্বর তাকে চিঠি দিয়ে তাকে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান রাখে বাংলাদেশ বার কাউন্সিল, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ও জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম। এতে চাপের মুখে পড়ে গিয়ে বিএনপি নেতা মেজবাহ উদ্দিন ফরহাদ শুক্রবার (০৭ নভেম্বর) সকালে বরিশালে আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলন করে তার বক্তব্য প্রত্যাহার করাসহ আইনজীবী সমাজের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে পরিস্থিতি সামাল দেন।

বরিশাল-০৪ আসনের সাবেক এমপি মেজবাহ উদ্দিন ফরহাদ আসছে ত্রয়োদশ নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন। কিন্তু এই আসনে এবার বিএনপি স্বেচ্ছাসেবক দল কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ রাজিব আহসানকে ধানের শীষ নিয়ে নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত দিয়েছে। দলীয় মনোনয়নবঞ্চিত মেজবাহ উদ্দিন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমানের অনুসারী।

বিএনপি সূত্র জানিয়েছে, বরিশাল ৩ আসনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান এবং বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন ধানের শীষের মনোনয়নপ্রত্যাশী। এই আসনে বিএনপি এখন পর্যন্ত কাউকে মনোনীত না করলেও উভয় নেতার কর্মী-সমর্থকেরা পাল্টাপাল্টি সভা-সমাবেশ করে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়ের মাধ্যমে রাজনীতির মাঠ সরগরম করে রেখেছে। এমন বাস্তবতায় গত ৫ নভেম্বর বাবুগঞ্জের কেদারপুরে স্থানীয় বিএনপির একাংশ আয়োজিত সমাবেশে কেন্দ্রীয় নেতা সেলিমা রহমানের সাথে সেখানে অংশ নেন বরিশাল ৪ আসনে দলীয় মনোনয়নবঞ্চিত মেজবাহ উদ্দিন ফরহাদ।

প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় একাধিক সূত্রে জানা গেছে, বৈঠকে সেলিমা রহমানের আগে কর্মী-সমর্থকদের উদ্দেশে বক্তব্য রাখেন বরিশাল ৪ আসনের সাবেক এমপি মেজবাহ উদ্দিন ফরহাদ। বক্তব্যে রাখতে গিয়ে একপর্যায়ে তিনি বাবুগঞ্জ-মুলাদী আসনে বিএনপির অপর মনোনয়নপ্রত্যাশী সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীনকে ইঙ্গিত করে বলেন, আইনজীবীরা টাউট-বাটপার! আইনজীবীদের নিয়ে বিএনপি নেতার এই বেফাঁস মন্তব্যের ভিডিও দলীয় ঘরনার প্রতিপক্ষ অর্থাৎ জয়নুল আবেদীনের কর্মী-সমর্থকেরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে দেওয়ার পাশাপাশি কমেন্টে বিস্ফোরক মন্তব্য করে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে নিয়ে আসেন।

সূত্র জানিয়েছে, সাবেক এমপি ফরহাদের এই বেসামাল মন্তব্যের ভিডিওটিকে মোক্ষম হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে চাইছেন বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক জয়নুল আবেদীন। এক্ষেত্রে তিনি সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ও জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের নেতাদের দিয়ে মেজবাহ উদ্দিন ফরহাদকে চাপে ফেলে দিয়েছেন।

বৃহস্পতিবার সাবেক এমপি ফরহাদের ভিডিওটি ভাইরাল এবং তাকে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ও জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম নোটিস করে ক্ষমা প্রার্থনা করতে হুঁশিয়ারি দেওয়ার পরে তিনি মনস্তাত্বিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েন। এবং একদিন বাদে শুক্রবার বরিশাল প্রেসক্লাবে তিনি আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলন করে আইনজীবীদের নিয়ে বেফাঁস মন্তব্য করা ব্যাখ্যা খন্ডন করার পাশাপাশি ক্ষমা প্রার্থনা করেন। এসময় বিএনপি নেতাকে কিছুটা বিমর্ষ দেখা যায়।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে মেজবাহ উদ্দিন ফরহাদ বলেন, ‘গত ৫ নভেম্বর বাবুগঞ্জ উপজেলার কেদারপুর ইউনিয়নের একটি অনুষ্ঠানে তিনি অংশগ্রহণ করেন। এবং সেই অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে অনিচ্ছাকৃতভাবে শব্দচয়নে ভুলের কারণে তিনি আইনজীবী সম্প্রদায় সম্পর্কে একটি মন্তব্য করে ফেলেন, যা পরবর্তীতে তার কাছেও অনুতাপের কারণ হয়। এবং তিনি উপলব্ধি করেন, এটি তার পক্ষ থেকে একটি ভুল ছিল।

আইনজীবী পেশাকে গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে দেখেন জানিয়ে বিএনপি নেতা বলেন, বাংলাদেশের আইন-আদালত ব্যবস্থা ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় আইনজীবীদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্ববহ এবং মর্যাদাপূর্ণ। তার বক্তব্যে কারও মনে কষ্ট বা ভুল বোঝাবুঝি সৃষ্টি হয়ে থাকলে, তিনি সমস্ত আইনজীবী সমাজের কাছে আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশসহ ক্ষমা প্রার্থনা করেন। বরিশাল প্রেসক্লাবে আয়োজিত ওই সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি, আইনজীবী ও গণমাধ্যম প্রতিনিধিসহ বিভিন্নস্তরের ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।

মেজবাহ উদ্দিন ফরহাদের আনুষ্ঠানিক এই ক্ষমা প্রার্থনার ভিডিও শুক্রবার দুপুরের পর থেকে সেলিমা রহমানকে শত্রুভাবাপন্ন জয়নুল আবেদীনের কর্মী-সমর্থকেরা তাদের ফেসবুকে ছেড়ে দেওয়ার পাশাপাশি ট্রল করে যাচ্ছেন। এনিয়ে মেজবাহ উদ্দিন ফরহাদের কোনো বক্তব্য না পাওয়া গেলেও তার কর্মী-সমর্থকেরা বিষয়টিকে ইতিবাচক হিসেবে গ্রহণ করছেন না।

সাবেক এমপি মেজবাহর সমর্থক মেহেন্দিগঞ্জ-হিজলার বাসিন্দা একাধিক বিএনপি নেতা অভিযোগ করেন, জয়নুল আবেদীনের লোকজন বিষয়টি নিয়ে বেশি মাত্রায় বাড়াবাড়ি করছেন। তাদের ভাষায়, মেজবাহ উদ্দিন ফরহাদ বিএনপির একজন ত্যাগি নেতা, তিনি ওয়ান ইলেভেনের শাসনামলে নবম জাতীয় সংবাদ নির্বাচনে বরিশাল-৪ আসন থেকে ধানের শীষ নিয়ে ভোট করে জয়ী হয়েছিলেন। গত ১৬ বছর আওয়ামী লীগের শাসনামলে তিনি একাধিক মামলা, এমনকি হামলার শিকারও হয়েছিলেন।’

বরিশালে ডেঙ্গুর মৃত্যুর মিছিলে ৪২ জন

বরিশালটাইমস রিপোর্ট

বরিশালটাইমস রিপোর্ট

০৭ নভেম্বর, ২০২৫ ১৭:০৯

প্রিন্ট এন্ড সেভ

বরিশালে ডেঙ্গুর মৃত্যুর মিছিলে ৪২ জন

অক্টোবর মাসে প্রায় ৪ হাজার ডেঙ্গু রোগী বরিশালের সরকারি হাসপাতালে ভর্তির পরে, চলতি মাসের প্রথম ৭ দিনে আরও প্রায় ১ হাজার রোগী ভর্তি হয়েছেন। এ সময়ে মারা গেছেন আরও ১ জন। সরকারি হাসপাতালগুলোতে গত মাসে ৮ জনসহ এ পর্যন্ত ডেঙ্গুর মৃত্যুর মিছিলে যোগ হয়েছে ৪২ জনের নাম। শুক্রবারও দুপুর পর্যন্ত বরিশালের সরকারি হাসপাতালগুলোতে প্রায় সাড়ে ৪শ ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসাধীন ছিলেন। এ নিয়ে গত কয়েক মাসে শুধু সরকারি হাসপাতালেই ভর্তি হয়েছেন সাড়ে ১৮ হাজার ডেঙ্গু রোগী।

অথচ নভেম্বর শুরু হলেও বরিশালে ডেঙ্গু পরিস্থিতির উন্নতির পরিবর্তে আরও অবনতি ঘটছে। হাসপাতালের বাইরে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা কত, তা নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না কেউ। তবে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মতে, “মানুষ তার শরীর ও মনের অত্যন্ত দুর্বলতম ও নাজুক পর্যায় ছাড়া সরকারি হাসপাতালের কাছে যান না।” ফলে সরকারি হাসপাতালসমূহে ভর্তির অন্তত ১০ গুণ রোগী এ সময়ে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

অক্টোবরের মধ্যভাগ থেকেই বরিশাল অঞ্চলের সরকারি হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গু রোগীর ভিড় নতুন করে বাড়তে শুরু করে। অক্টোবর মাসজুড়ে ভর্তিকৃত ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যাটা প্রায় ৪ হাজারে পৌঁছে। সেপ্টেম্বর মাসেও ভর্তিকৃত রোগীর সংখ্যা প্রায় একই ছিল। কিন্তু নভেম্বরের প্রথম ৭ দিনের পরিসংখ্যানও পরিস্থিতির উন্নতির কোনো লক্ষণ দেখাচ্ছে না।

শুক্রবার (৭ নভেম্বর) দুপুরের পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় ৬৭ জন রোগীকে ঘরে ফেরত পাঠানোর পরেও হাসপাতালসমূহে ভর্তিকৃত রোগীর সংখ্যা ছিল ৪৩১ জন। এর মধ্যে বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালেই ৮০ জন ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসাধীন ছিলেন। বরিশালের জেনারেল হাসপাতালসহ জেলার অন্য হাসপাতালগুলোতেও আরও ৫৪ জন ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসাধীন ছিলেন।

ফলে চলতি মাসে বরিশাল অঞ্চলে শুধু সরকারি হাসপাতালেই ভর্তিকৃত ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যাটা বিগত মাসগুলোর তুলনায় বাড়ার ইঙ্গিত দিচ্ছে বলে মনে করছেন চিকিৎসকগণ। অথচ বিগত বছরগুলোতে আগস্টের পরে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যাটা কমতে দেখা গেছে।

গত সেপ্টেম্বর মাসে চলতি বছরের সর্বাধিক সংখ্যক, প্রায় ৪ হাজার ডেঙ্গু রোগী সরকারি হাসপাতালগুলোতে ভর্তি হলেও অক্টোবর শুরু থেকে পরিস্থিতি আরও নাজুক হতে শুরু করে। যা মধ্য অক্টোবরেই আরও নাজুক আকার ধারণ করে এবং এখনো অব্যাহত রয়েছে। সেপ্টেম্বর পেরিয়ে অক্টোবরেও অধিকসংখ্যক ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে আসার পরে নভেম্বরেও পরিস্থিতির কোনো পরিবর্তন লক্ষ্য করছেন না চিকিৎসকগণ।

তবে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মতে, সরকারি হাসপাতালের আরও কয়েক গুণ ডেঙ্গু রোগী বিভিন্ন চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র নিয়ে ঘরে বসেই চিকিৎসা গ্রহণ করে থাকেন। ফলে প্রকৃত ডেঙ্গু রোগীর পরিসংখ্যান জানার কোনো সুযোগ নেই।

স্বাস্থ্য বিভাগের দায়িত্বশীল মহল বারবারই বরিশাল সিটি করপোরেশন এবং বিভিন্ন পৌরসভাসহ সব স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোকে এডিস মশা নিধনের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখার তাগিদ দিলেও সেপ্টেম্বর পেরিয়ে অক্টোবরের পরে নভেম্বরেও বরিশাল অঞ্চলে ডেঙ্গু পরিস্থিতির অবনতি অব্যাহত রয়েছে।

বাকেরগঞ্জ পৌরসভায় অসুস্থ বেওয়ারিশ কুকুরের উপদ্রব, রোগ জীবাণু ছড়ানোর আশঙ্কা

বরিশালটাইমস রিপোর্ট

বরিশালটাইমস রিপোর্ট

০৭ নভেম্বর, ২০২৫ ১৪:৫৭

প্রিন্ট এন্ড সেভ

বাকেরগঞ্জ পৌরসভায় অসুস্থ বেওয়ারিশ কুকুরের উপদ্রব, রোগ জীবাণু ছড়ানোর আশঙ্কা

বাকেরগঞ্জ পৌরসভার বিভিন্ন অলিগলি হোটেল রেস্তোরার সামনে অসুস্থ রোগাক্রান্ত কুকুরের উপদ্রব বেড়েছে। যা জনজীবনে রোগ জীবাণু রোগ জীবাণু ছড়ানোর আশঙ্কা রয়েছে। এসব কুকুর দমনের পৌর কর্তৃপক্ষের নেই কোন তৎপরতা।

বাকেরগঞ্জ পৌরসভার বন্দর, বাস স্ট্যান্ড, চৌমাথা, কালিগঞ্জ বাজার, বোয়ালিয়া এলাকায় এসব অসুস্থ কুকুরের আনাগোনা চোখে পড়ার মত। বিশেষ করে রেস্টুরেন্ট এবং খাবার হোটেলের সামনে এদের বিচারণ লক্ষ্য করা যায়।

অসুস্থ ও রোগাক্রান্ত এসব কুকুরের মাধ্যমে জনজীবনে রোগ ছড়ানো সহ স্বাস্থ্যগত ঝুঁকির আশঙ্কা রয়েছে, কারণ এদের সংস্পর্শ বা কামড়ে জলাতঙ্কসহ বিভিন্ন ঘাতক ব্যধিতে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। রাস্তাঘাটে দল বেঁধে এসব কুকুর চলাফেরা করার ফলে মানুষের ব্যবহার যোগ্য কোন জিনিসে অনায়াসে সংস্পর্শ হতে পারে। ফলে সংক্রমিত হতে পারে রোগ জীবাণু।

বর্তমানে বাকেরগঞ্জ পৌরসভার বাসস্ট্যান্ড এলাকায় বেশ কয়েকটি অসুস্থ কুকুর লক্ষ্য করা গেছে, যাদের শরীরে বিভিন্ন অংশে আঘাতের স্পটে ঘায়ের সৃষ্টি হয়েছে, যার বিশ্রী গন্ধে হাঁটাচলা দুর্বিষহ হয়ে পড়েছে। তাছাড়া এসব অসুস্থ কুকুর হোটেল রেস্তোরাঁ র সামনে অবস্থান করে খাবারের পরিবেশকে মানহীন করে তুলছে।

বাকেরগঞ্জ পৌর এলাকার সুশীল সমাজের দাবি জনগণের স্বাস্থ্যগত সমস্যা বিবেচনা করে বেওয়ারিশ কুকুর দমনে পৌর কর্তৃপক্ষের এগিয়ে আসা।

এসব রোগাক্রান্ত কুকুরের শরীরের বিভিন্ন অংশে পচন ধরে ঘায়ের সৃষ্টি হয়েছে যার দুর্গন্ধে পরিবেশ ভারী হয়ে যাচ্ছে। গন্ধে তাদের পাশ দিয়ে হেটে যাওয়া দুষ্কর। এসব কুকুর দমনে পৌর কর্তৃপক্ষের নেই কোন তৎপরতা।

custom sidebar ads

Google AdSense
This is a demo ad. Your live ads will be displayed here once AdSense is properly configured.

জনপ্রিয়

Google AdSense
This is a demo ad. Your live ads will be displayed here once AdSense is properly configured.