
১১ নভেম্বর, ২০২৫ ১১:১০
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগেই বরিশালের ভোটের রাজনীতিতে নতুন সমীকরণ তৈরি হয়েছে। আগেভাগেই ইসলামপন্থী দুই দল জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ জেলার ছয়টি আসনেই প্রার্থী দিয়ে মাঠে নেমে প্রচার চালিয়ে আসছে। এবার দলীয় প্রার্থী ঘোষণার পর সক্রিয় হয়ে উঠেছে বিএনপিও। ফলে ছয়টি আসনেই ত্রিমুখী নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বিতার আভাস পাওয়া যাচ্ছে।
জামায়াতে ইসলামী গত ফেব্রুয়ারিতেই প্রার্থী ঘোষণা করে নির্বাচনী প্রস্তুতি শুরু করে। একই সময় ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশও প্রার্থী ঘোষণা দিয়ে মাঠে নামে। দুই দলের প্রার্থীরা নিয়মিত গণসংযোগ, সভা-সমাবেশ এবং সংগঠনের কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়িয়ে নির্বাচনী মাঠ গুছিয়ে নিচ্ছেন। জেলায় চরমোনাই পীরের দল ইসলামী আন্দোলনের আলাদা একটি ভোটব্যাংক আছে। সে ক্ষেত্রে এই দলটি এখানে বিএনপির সঙ্গে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আসার জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। বসে নেই জামায়াতে ইসলামীও। এই দলটিও সাংগঠনিক শক্তি বাড়াতে নানামুখী তৎপরতা চালাচ্ছে। যদিও জাতীয় রাজনীতিতে ইসলামপন্থী দলগুলোর জোট গঠনের আলোচনা রয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জামায়াতের কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি মুয়াযযম হোসাইন বলেন, এখনো নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হয়নি। আলাপ-আলোচনা অব্যাহত আছে। সময়ই বলে দেবে কী হবে। তিনি বলেন, দেশবাসী পরিবর্তন চায়। দেশবাসী আজ এককাট্টা হয়ে নতুন শক্তি জামায়াতকে পছন্দ করছে।
প্রার্থীজটের কারণে বিএনপিতে মাঠের আমেজ তেমন ছিল না। তবে ৩ নভেম্বর বরিশালের ছয়টি আসনের মধ্যে পাঁচটিতে দলীয় প্রার্থী ঘোষণার পর পরিস্থিতি পাল্টেছে। প্রার্থীরা অনানুষ্ঠানিকভাবে গণসংযোগ শুরু করায় নির্বাচনী যাত্রায় নতুন মাত্রা পেয়েছে।
বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রার্থীদের নির্বাচনকেন্দ্রিক তৎপরতায় দলীয় নেতা-কর্মীরা সক্রিয় হলেও সাধারণ ভোটারদের অনেকের মধ্যে এখনো নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তা। এদিকে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) নির্বাচনী প্রস্তুতির কথা বললেও এখনো তাদের তেমন দৃশ্যমান কার্যক্রম নেই। বাম দলগুলোর প্রার্থীরাও এখনো মাঠে নামেননি।
ঐতিহাসিকভাবে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের মধ্যে পালাবদলের আসন হিসেবে পরিচিত বরিশাল–১ আসন। এখানে দলীয় মনোনয়ন নিশ্চিত হওয়ার পর ৭ নভেম্বর জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবসে বিশাল জনসভা করে অনানুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনী যাত্রা শুরু করেছেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক সংসদ সদস্য জহির উদ্দিন স্বপন। এক বছর ধরেই তিনি এলাকায় নিয়মিত সামাজিক অনুষ্ঠান, ধর্মীয় উৎসব ও দলীয় কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে নিজের অবস্থান সুসংহত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
এই আসনে জামায়াতে ইসলামী প্রার্থী দিয়েছে মাওলানা কামরুল ইসলামকে। তিনি ইতিমধ্যে দলীয় নেতা–কর্মীদের নিয়ে গণসংযোগ ও সভা–সমাবেশে সক্রিয় হয়েছেন। অন্যদিকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী দলের আগৈলঝাড়া উপজেলা সভাপতি রাসেল সরদার মেহেদীও বিভিন্ন ধর্মীয় ও সামাজিক সভা আয়োজনের মাধ্যমে নির্বাচনী তৎপরতা চালাচ্ছেন।
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন দেশের মানুষের কাছে বহুল প্রত্যাশিত উল্লেখ করে দুবারের সাবেক সংসদ সদস্য জহির উদ্দিন বলেন, বিগত নির্বাচনকে পতিত ফ্যাসিবাদ কলুষিত ও প্রহসনে পরিণত করেছিল। ফলে দেশের ৪৮ শতাংশ তরুণ ভোটার এবার প্রথম ভোটাধিকার প্রয়োগ করার জন্য উন্মুখ। অন্তর্বর্তী সরকার একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন করতে পারবে বলে তাঁরা আশাবাদী।
উপজেলা নিয়ে গঠিত বরিশাল–২ আসনে তৃতীয়বারের মতো বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছেন এস সরফুদ্দিন আহমেদ (সান্টু)। তিনি বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য। জামায়াতে ইসলামী এখানে প্রার্থী করেছে আবদুল মান্নানকে। ইসলামী আন্দোলন এই আসনে প্রার্থী করেছে ইসলামী যুব আন্দোলন বাংলাদেশের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি মাওলানা মুহাম্মাদ নেছার উদ্দীনকে। তিনজনই এলাকায় ব্যাপক গণসংযোগ চালাচ্ছেন।
এস সরফুদ্দিন আহমেদ ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মনিরুল ইসলামের কাছে পরাজিত হন। পরে ২০১৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী তালুকদার মো. ইউনুসের কাছেও পরাজিত হন তিনি।
এই আসনে সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম ফারুক অভির সম্ভাব্য প্রার্থিতা নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে জল্পনা চলছে। এক সময়ের ছাত্রদল নেতা গোলাম ফারুক ৯০–এর দশকের শেষভাগে ছাত্রদল ছেড়ে জাতীয় পার্টির ছাত্রসংগঠন ছাত্রসমাজে যোগ দেন। পরে ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে আনোয়ার হোসেন মঞ্জু জাতীয় পার্টির (জেপি) প্রার্থী হিসেবে বরিশাল–২ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি। আলোচিত মডেল সৈয়দা তানিয়া মাহবুব তিন্নি হত্যাসহ একাধিক মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হলে ২০০২ সালে তিনি দেশ ছাড়েন। চলতি বছরের ১৪ জানুয়ারি তিন্নি হত্যা মামলা থেকে খালাস পাওয়ার পর তাঁর দেশে ফেরার গুঞ্জন জোরালো হয়।
দুজন প্রভাবশালী কেন্দ্রীয় নেতাসহ তিনজন বরিশাল–৩ আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে এলাকায় তৎপরতা চালাচ্ছেন। এই আসনে এখনো কোনো প্রার্থী দেয়নি দলটি। তবে জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ আগেই প্রার্থী চূড়ান্ত করে নানা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন।
বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী তিন নেতা হলেন স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমান, কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান ও সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়নুল আবেদীন এবং জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের কেন্দ্রীয় সহসাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান আসাদ। সেলিমা রহমান এবং জয়নুল আবেদীন এলাকায় গিয়ে বিভিন্ন সামাজিক আয়োজন ও গণসংযোগে অংশ নিচ্ছেন।
২০০৮ সালের নির্বাচনে এই আসনে বিএনপির প্রার্থী ছিলেন সেলিমা রহমান। জয়নুল আবেদীন ছিলেন স্বতন্ত্র প্রার্থী। দলীয় প্রার্থী ঘোষণা না হওয়া প্রসঙ্গে সেলিমা রহমান বলেন, ‘দল যাঁকে চূড়ান্ত করবে, আমরা তাঁকেই মেনে নেব। হয়তো তাঁরা চিন্তাভাবনা করছেন। আমরা দুজনই সিনিয়র, তাই একটু সময় নিচ্ছেন।’
এদিকে এই আসনে আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান ফুয়াদও নির্বাচনী তৎপরতা চালাচ্ছেন। জামায়াতের প্রার্থী হিসেবে তৎপর আছেন মহানগরের আমির জহির উদ্দিন মুহাম্মদ বাবর। ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী দলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক (বরিশাল বিভাগ) মাওলানা মুহাম্মদ সিরাজুল ইসলামও এলাকায় সক্রিয়ভাবে সভা-সমাবেশ করছেন।
নিজের আসনে জয়ের বিষয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করে নগর জামায়াতের আমির জহির উদ্দিন মুহাম্মদ বাবর বলেন, জামায়াত প্রার্থীরা বরিশালের ছয়টি আসনেই ভালো অবস্থানে আছেন। ডাকসুসহ বড় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ইসলামী ছাত্রশিবির যে ভূমিধস বিজয় পেয়েছে, তার প্রতিফলন আগামী জাতীয় নির্বাচনে পড়বে এবং বরিশালেও এর প্রভাব দেখা যাবে। তাঁরা জনগণের কাছ থেকে তেমনই সাড়া পাচ্ছেন।
স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক রাজীব আহসানকে বরিশাল–৪ আসনে দলীয় প্রার্থী করেছে বিএনপি। এর আগে ২০০৮ সালে এখানে বিএনপির মনোনয়ন নিয়ে বিজয়ী হয়েছিলেন কেন্দ্রীয় সদস্য মেজবাহ উদ্দিন ফরহাদ। এবার তিনি মনোনয়ন না পাওয়ায় দলের একাংশের মধ্যে অসন্তোষ আছে।
এখানে জামায়াতের প্রার্থী হয়েছেন বরিশাল জেলা আমির মাওলানা আবদুর জব্বার। তিনি অনেক দিন ধরেই এখানে গণসংযোগ চালিয়ে আসছেন। অপর দিকে ইসলামী আন্দোলন প্রার্থী দলটির কেন্দ্রীয় সহকারী মহাসচিব মুফতি সৈয়দ এছহাক মুহাম্মাদ আবুল খায়ের এলাকায় নির্বাচনী কার্যক্রমে অনেক আগে থেকেই সক্রিয় রয়েছেন। তিনি চরমোনাই পীরের ছোট ভাই।
বিভাগীয় সদরের আসন হওয়ায় রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ বরিশাল–৫ আসন। এবারও এখানে বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছেন চারবারের সংসদ সদস্য মজিবর রহমান সরোয়ার। বিএনপি চেয়ারপারসনের এই উপদেষ্টা বরিশাল সিটি করপোরেশনের প্রথম নির্বাচিত মেয়রও ছিলেন। প্রায় ২০ বছর সভাপতি হিসেবে নগর বিএনপির নেতৃত্ব দিয়েছেন। নেতৃত্বের দ্বন্দ্ব নিয়ে গত কয়েক বছর তিনি দলীয় রাজনীততে কোণঠাসা থাকলেও মনোনয়ন পাওয়ার পর সবাই তাঁর পক্ষে এককাট্টা হয়েছেন।
নগর বিএনপির সাবেক সহসাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুল হক বলেন, ‘বরিশাল বিএনপিতে আর কোনো বিভেদ বা দ্বন্দ্ব নেই। এখন সবাই ঐক্যবদ্ধ। আমাদের সবার লক্ষ্য একটাই, ধানের শীষকে বিজয়ী করা।’
এমনিতেই আসনটি বিএনপির শক্তিশালী ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত হলেও এবার আওয়ামী লীগ নির্বাচনে না থাকায় ইসলামী আন্দোলন বড় ‘ফ্যাক্টর’ হিসেবে আবির্ভূত হতে পারে। একই সঙ্গে জামায়াতও সাংগঠনিকভাবে আগের চেয়ে অনেকটা এগিয়েছে।
ইসলামী আন্দোলন এই আসনে দলের জ্যেষ্ঠ নায়েবে আমির মুফতি মুহাম্মদ ফয়জুল করীমকে প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দিয়েছে। তিনি এরই মধ্যে নানাভাবে নির্বাচনী প্রচারে নেমেছেন। এখানে জামায়াতের প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি মুয়াযযম হোসাইনকে। তিনিও দীর্ঘদিন ধরেই নানাভাবে নির্বাচনী প্রচার চালাচ্ছেন। সব মিলিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে এই আসনের আগামী নির্বাচন।
মজিবর রহমান বলেন, ‘ঐতিহাসিকভাবে বরিশাল বিএনপির ঘাঁটি, এটা সবাই জানেন। তা ছাড়া এখানে জাতীয়তাবাদী শক্তির প্রতি সাধারণ মানুষের সমর্থন, আস্থা আগের চেয়ে আরও অনেক বেড়েছে। তাই আগামী নির্বাচনে জাতীয়তাবাদী শক্তি অভূতপূর্ব সমর্থন পাবে।’
ইসলামী আন্দোলন এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী বলে মনে করেন সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম। তিনি বলেন, পুরোনো নির্বাচনের হিসাব দিয়ে আগামী নির্বাচনের হিসাব মেলানো যাবে না। দেশের মানুষ আর পুরোনো বন্দোবস্ত চায় না। তাঁর ধারণা, দেশের যুবসমাজ, শান্তিপ্রিয় মানুষ এখন ইসলামি রাজনীতির পক্ষে। তারা গুন্ডাতন্ত্র, মাস্তানতন্ত্র চায় না। তবে বর্তমান প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ঢেলে সাজানো ছাড়া নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করা যাবে না বলেও মনে করেন তিনি।
এই আসনে এবার দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন সাবেক সংসদ সদস্য ও দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবুল হোসেন খান। ইসলামী আন্দোলন প্রার্থী করেছে দলটির কেন্দ্রীয় জ্যেষ্ঠ নায়েবে আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীমকে। এ ছাড়া জামায়াতে ইসলামী মাওলানা মাহমুদুন্নবীকে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা দিয়েছে। তবে এই আসনে জাতীয় পার্টির নেতা এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদারের প্রার্থী হওয়ার গুঞ্জন আছে। তিনি ও তাঁর স্ত্রী এই আসনে একাধিকবার সংসদ সদস্য ছিলেন।
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগেই বরিশালের ভোটের রাজনীতিতে নতুন সমীকরণ তৈরি হয়েছে। আগেভাগেই ইসলামপন্থী দুই দল জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ জেলার ছয়টি আসনেই প্রার্থী দিয়ে মাঠে নেমে প্রচার চালিয়ে আসছে। এবার দলীয় প্রার্থী ঘোষণার পর সক্রিয় হয়ে উঠেছে বিএনপিও। ফলে ছয়টি আসনেই ত্রিমুখী নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বিতার আভাস পাওয়া যাচ্ছে।
জামায়াতে ইসলামী গত ফেব্রুয়ারিতেই প্রার্থী ঘোষণা করে নির্বাচনী প্রস্তুতি শুরু করে। একই সময় ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশও প্রার্থী ঘোষণা দিয়ে মাঠে নামে। দুই দলের প্রার্থীরা নিয়মিত গণসংযোগ, সভা-সমাবেশ এবং সংগঠনের কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়িয়ে নির্বাচনী মাঠ গুছিয়ে নিচ্ছেন। জেলায় চরমোনাই পীরের দল ইসলামী আন্দোলনের আলাদা একটি ভোটব্যাংক আছে। সে ক্ষেত্রে এই দলটি এখানে বিএনপির সঙ্গে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আসার জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। বসে নেই জামায়াতে ইসলামীও। এই দলটিও সাংগঠনিক শক্তি বাড়াতে নানামুখী তৎপরতা চালাচ্ছে। যদিও জাতীয় রাজনীতিতে ইসলামপন্থী দলগুলোর জোট গঠনের আলোচনা রয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জামায়াতের কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি মুয়াযযম হোসাইন বলেন, এখনো নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হয়নি। আলাপ-আলোচনা অব্যাহত আছে। সময়ই বলে দেবে কী হবে। তিনি বলেন, দেশবাসী পরিবর্তন চায়। দেশবাসী আজ এককাট্টা হয়ে নতুন শক্তি জামায়াতকে পছন্দ করছে।
প্রার্থীজটের কারণে বিএনপিতে মাঠের আমেজ তেমন ছিল না। তবে ৩ নভেম্বর বরিশালের ছয়টি আসনের মধ্যে পাঁচটিতে দলীয় প্রার্থী ঘোষণার পর পরিস্থিতি পাল্টেছে। প্রার্থীরা অনানুষ্ঠানিকভাবে গণসংযোগ শুরু করায় নির্বাচনী যাত্রায় নতুন মাত্রা পেয়েছে।
বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রার্থীদের নির্বাচনকেন্দ্রিক তৎপরতায় দলীয় নেতা-কর্মীরা সক্রিয় হলেও সাধারণ ভোটারদের অনেকের মধ্যে এখনো নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তা। এদিকে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) নির্বাচনী প্রস্তুতির কথা বললেও এখনো তাদের তেমন দৃশ্যমান কার্যক্রম নেই। বাম দলগুলোর প্রার্থীরাও এখনো মাঠে নামেননি।
ঐতিহাসিকভাবে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের মধ্যে পালাবদলের আসন হিসেবে পরিচিত বরিশাল–১ আসন। এখানে দলীয় মনোনয়ন নিশ্চিত হওয়ার পর ৭ নভেম্বর জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবসে বিশাল জনসভা করে অনানুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনী যাত্রা শুরু করেছেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক সংসদ সদস্য জহির উদ্দিন স্বপন। এক বছর ধরেই তিনি এলাকায় নিয়মিত সামাজিক অনুষ্ঠান, ধর্মীয় উৎসব ও দলীয় কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে নিজের অবস্থান সুসংহত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
এই আসনে জামায়াতে ইসলামী প্রার্থী দিয়েছে মাওলানা কামরুল ইসলামকে। তিনি ইতিমধ্যে দলীয় নেতা–কর্মীদের নিয়ে গণসংযোগ ও সভা–সমাবেশে সক্রিয় হয়েছেন। অন্যদিকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী দলের আগৈলঝাড়া উপজেলা সভাপতি রাসেল সরদার মেহেদীও বিভিন্ন ধর্মীয় ও সামাজিক সভা আয়োজনের মাধ্যমে নির্বাচনী তৎপরতা চালাচ্ছেন।
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন দেশের মানুষের কাছে বহুল প্রত্যাশিত উল্লেখ করে দুবারের সাবেক সংসদ সদস্য জহির উদ্দিন বলেন, বিগত নির্বাচনকে পতিত ফ্যাসিবাদ কলুষিত ও প্রহসনে পরিণত করেছিল। ফলে দেশের ৪৮ শতাংশ তরুণ ভোটার এবার প্রথম ভোটাধিকার প্রয়োগ করার জন্য উন্মুখ। অন্তর্বর্তী সরকার একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন করতে পারবে বলে তাঁরা আশাবাদী।
উপজেলা নিয়ে গঠিত বরিশাল–২ আসনে তৃতীয়বারের মতো বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছেন এস সরফুদ্দিন আহমেদ (সান্টু)। তিনি বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য। জামায়াতে ইসলামী এখানে প্রার্থী করেছে আবদুল মান্নানকে। ইসলামী আন্দোলন এই আসনে প্রার্থী করেছে ইসলামী যুব আন্দোলন বাংলাদেশের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি মাওলানা মুহাম্মাদ নেছার উদ্দীনকে। তিনজনই এলাকায় ব্যাপক গণসংযোগ চালাচ্ছেন।
এস সরফুদ্দিন আহমেদ ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মনিরুল ইসলামের কাছে পরাজিত হন। পরে ২০১৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী তালুকদার মো. ইউনুসের কাছেও পরাজিত হন তিনি।
এই আসনে সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম ফারুক অভির সম্ভাব্য প্রার্থিতা নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে জল্পনা চলছে। এক সময়ের ছাত্রদল নেতা গোলাম ফারুক ৯০–এর দশকের শেষভাগে ছাত্রদল ছেড়ে জাতীয় পার্টির ছাত্রসংগঠন ছাত্রসমাজে যোগ দেন। পরে ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে আনোয়ার হোসেন মঞ্জু জাতীয় পার্টির (জেপি) প্রার্থী হিসেবে বরিশাল–২ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি। আলোচিত মডেল সৈয়দা তানিয়া মাহবুব তিন্নি হত্যাসহ একাধিক মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হলে ২০০২ সালে তিনি দেশ ছাড়েন। চলতি বছরের ১৪ জানুয়ারি তিন্নি হত্যা মামলা থেকে খালাস পাওয়ার পর তাঁর দেশে ফেরার গুঞ্জন জোরালো হয়।
দুজন প্রভাবশালী কেন্দ্রীয় নেতাসহ তিনজন বরিশাল–৩ আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে এলাকায় তৎপরতা চালাচ্ছেন। এই আসনে এখনো কোনো প্রার্থী দেয়নি দলটি। তবে জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ আগেই প্রার্থী চূড়ান্ত করে নানা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন।
বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী তিন নেতা হলেন স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমান, কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান ও সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়নুল আবেদীন এবং জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের কেন্দ্রীয় সহসাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান আসাদ। সেলিমা রহমান এবং জয়নুল আবেদীন এলাকায় গিয়ে বিভিন্ন সামাজিক আয়োজন ও গণসংযোগে অংশ নিচ্ছেন।
২০০৮ সালের নির্বাচনে এই আসনে বিএনপির প্রার্থী ছিলেন সেলিমা রহমান। জয়নুল আবেদীন ছিলেন স্বতন্ত্র প্রার্থী। দলীয় প্রার্থী ঘোষণা না হওয়া প্রসঙ্গে সেলিমা রহমান বলেন, ‘দল যাঁকে চূড়ান্ত করবে, আমরা তাঁকেই মেনে নেব। হয়তো তাঁরা চিন্তাভাবনা করছেন। আমরা দুজনই সিনিয়র, তাই একটু সময় নিচ্ছেন।’
এদিকে এই আসনে আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান ফুয়াদও নির্বাচনী তৎপরতা চালাচ্ছেন। জামায়াতের প্রার্থী হিসেবে তৎপর আছেন মহানগরের আমির জহির উদ্দিন মুহাম্মদ বাবর। ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী দলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক (বরিশাল বিভাগ) মাওলানা মুহাম্মদ সিরাজুল ইসলামও এলাকায় সক্রিয়ভাবে সভা-সমাবেশ করছেন।
নিজের আসনে জয়ের বিষয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করে নগর জামায়াতের আমির জহির উদ্দিন মুহাম্মদ বাবর বলেন, জামায়াত প্রার্থীরা বরিশালের ছয়টি আসনেই ভালো অবস্থানে আছেন। ডাকসুসহ বড় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ইসলামী ছাত্রশিবির যে ভূমিধস বিজয় পেয়েছে, তার প্রতিফলন আগামী জাতীয় নির্বাচনে পড়বে এবং বরিশালেও এর প্রভাব দেখা যাবে। তাঁরা জনগণের কাছ থেকে তেমনই সাড়া পাচ্ছেন।
স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক রাজীব আহসানকে বরিশাল–৪ আসনে দলীয় প্রার্থী করেছে বিএনপি। এর আগে ২০০৮ সালে এখানে বিএনপির মনোনয়ন নিয়ে বিজয়ী হয়েছিলেন কেন্দ্রীয় সদস্য মেজবাহ উদ্দিন ফরহাদ। এবার তিনি মনোনয়ন না পাওয়ায় দলের একাংশের মধ্যে অসন্তোষ আছে।
এখানে জামায়াতের প্রার্থী হয়েছেন বরিশাল জেলা আমির মাওলানা আবদুর জব্বার। তিনি অনেক দিন ধরেই এখানে গণসংযোগ চালিয়ে আসছেন। অপর দিকে ইসলামী আন্দোলন প্রার্থী দলটির কেন্দ্রীয় সহকারী মহাসচিব মুফতি সৈয়দ এছহাক মুহাম্মাদ আবুল খায়ের এলাকায় নির্বাচনী কার্যক্রমে অনেক আগে থেকেই সক্রিয় রয়েছেন। তিনি চরমোনাই পীরের ছোট ভাই।
বিভাগীয় সদরের আসন হওয়ায় রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ বরিশাল–৫ আসন। এবারও এখানে বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছেন চারবারের সংসদ সদস্য মজিবর রহমান সরোয়ার। বিএনপি চেয়ারপারসনের এই উপদেষ্টা বরিশাল সিটি করপোরেশনের প্রথম নির্বাচিত মেয়রও ছিলেন। প্রায় ২০ বছর সভাপতি হিসেবে নগর বিএনপির নেতৃত্ব দিয়েছেন। নেতৃত্বের দ্বন্দ্ব নিয়ে গত কয়েক বছর তিনি দলীয় রাজনীততে কোণঠাসা থাকলেও মনোনয়ন পাওয়ার পর সবাই তাঁর পক্ষে এককাট্টা হয়েছেন।
নগর বিএনপির সাবেক সহসাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুল হক বলেন, ‘বরিশাল বিএনপিতে আর কোনো বিভেদ বা দ্বন্দ্ব নেই। এখন সবাই ঐক্যবদ্ধ। আমাদের সবার লক্ষ্য একটাই, ধানের শীষকে বিজয়ী করা।’
এমনিতেই আসনটি বিএনপির শক্তিশালী ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত হলেও এবার আওয়ামী লীগ নির্বাচনে না থাকায় ইসলামী আন্দোলন বড় ‘ফ্যাক্টর’ হিসেবে আবির্ভূত হতে পারে। একই সঙ্গে জামায়াতও সাংগঠনিকভাবে আগের চেয়ে অনেকটা এগিয়েছে।
ইসলামী আন্দোলন এই আসনে দলের জ্যেষ্ঠ নায়েবে আমির মুফতি মুহাম্মদ ফয়জুল করীমকে প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দিয়েছে। তিনি এরই মধ্যে নানাভাবে নির্বাচনী প্রচারে নেমেছেন। এখানে জামায়াতের প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি মুয়াযযম হোসাইনকে। তিনিও দীর্ঘদিন ধরেই নানাভাবে নির্বাচনী প্রচার চালাচ্ছেন। সব মিলিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে এই আসনের আগামী নির্বাচন।
মজিবর রহমান বলেন, ‘ঐতিহাসিকভাবে বরিশাল বিএনপির ঘাঁটি, এটা সবাই জানেন। তা ছাড়া এখানে জাতীয়তাবাদী শক্তির প্রতি সাধারণ মানুষের সমর্থন, আস্থা আগের চেয়ে আরও অনেক বেড়েছে। তাই আগামী নির্বাচনে জাতীয়তাবাদী শক্তি অভূতপূর্ব সমর্থন পাবে।’
ইসলামী আন্দোলন এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী বলে মনে করেন সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম। তিনি বলেন, পুরোনো নির্বাচনের হিসাব দিয়ে আগামী নির্বাচনের হিসাব মেলানো যাবে না। দেশের মানুষ আর পুরোনো বন্দোবস্ত চায় না। তাঁর ধারণা, দেশের যুবসমাজ, শান্তিপ্রিয় মানুষ এখন ইসলামি রাজনীতির পক্ষে। তারা গুন্ডাতন্ত্র, মাস্তানতন্ত্র চায় না। তবে বর্তমান প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ঢেলে সাজানো ছাড়া নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করা যাবে না বলেও মনে করেন তিনি।
এই আসনে এবার দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন সাবেক সংসদ সদস্য ও দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবুল হোসেন খান। ইসলামী আন্দোলন প্রার্থী করেছে দলটির কেন্দ্রীয় জ্যেষ্ঠ নায়েবে আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীমকে। এ ছাড়া জামায়াতে ইসলামী মাওলানা মাহমুদুন্নবীকে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা দিয়েছে। তবে এই আসনে জাতীয় পার্টির নেতা এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদারের প্রার্থী হওয়ার গুঞ্জন আছে। তিনি ও তাঁর স্ত্রী এই আসনে একাধিকবার সংসদ সদস্য ছিলেন।
২৮ নভেম্বর, ২০২৫ ১১:১৫
২৮ নভেম্বর, ২০২৫ ১১:০৫
২৭ নভেম্বর, ২০২৫ ২৩:৫৭
২৭ নভেম্বর, ২০২৫ ২৩:২৪

২৮ নভেম্বর, ২০২৫ ১১:১৫
বরিশালে অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ চোরাই কয়লা ও পাচারকাজে ব্যবহৃত একটি লাইটার ভেসেলসহ ১২ চোরাকারবারিকে আটক করেছে কোস্ট গার্ডের একটি দল। শুক্রবার (২৮ নভেম্বর) সকালে কোস্ট গার্ড সদর দপ্তরের মিডিয়া কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কমান্ডার সিয়াম-উল-হক এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
লেফটেন্যান্ট কমান্ডার সিয়াম-উল-হক জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গতকাল বৃহস্পতিবার ভোর ৫টার দিকে কোস্ট গার্ড স্টেশন বরিশাল কোতোয়ালি থানাধীন চরমোনাই আনন্দ ঘাট-সংলগ্ন এলাকায় একটি বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে।
অভিযান চলাকালে একটি সন্দেহজনক লাইটার ভেসেল তল্লাশি করা হয়। তল্লাশির পর ভেসেলটি থেকে ১ হাজার ১০০ টন চোরাই কয়লা জব্দ করা হয়, যার আনুমানিক মূল্য ১ কোটি ১০ লাখ টাকা। এ সময় চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে ১২ ব্যক্তিকে আটক করা হয়।
আটক ব্যক্তিদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, মোংলা হিরণ পয়েন্টে অবস্থানরত একটি বিদেশি জাহাজ থেকে এই কয়লা অসদুপায় অবলম্বন করে অবৈধভাবে পাচার করা হচ্ছিল।
জব্দ করা কয়লা, পাচারকাজে ব্যবহৃত লাইটার ভেসেল এবং আটক ১২ চোরাকারবারিকে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য কোতোয়ালি থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন কোস্ট গার্ডের মিডিয়া কর্মকর্তা।
বরিশালে অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ চোরাই কয়লা ও পাচারকাজে ব্যবহৃত একটি লাইটার ভেসেলসহ ১২ চোরাকারবারিকে আটক করেছে কোস্ট গার্ডের একটি দল। শুক্রবার (২৮ নভেম্বর) সকালে কোস্ট গার্ড সদর দপ্তরের মিডিয়া কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কমান্ডার সিয়াম-উল-হক এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
লেফটেন্যান্ট কমান্ডার সিয়াম-উল-হক জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গতকাল বৃহস্পতিবার ভোর ৫টার দিকে কোস্ট গার্ড স্টেশন বরিশাল কোতোয়ালি থানাধীন চরমোনাই আনন্দ ঘাট-সংলগ্ন এলাকায় একটি বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে।
অভিযান চলাকালে একটি সন্দেহজনক লাইটার ভেসেল তল্লাশি করা হয়। তল্লাশির পর ভেসেলটি থেকে ১ হাজার ১০০ টন চোরাই কয়লা জব্দ করা হয়, যার আনুমানিক মূল্য ১ কোটি ১০ লাখ টাকা। এ সময় চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে ১২ ব্যক্তিকে আটক করা হয়।
আটক ব্যক্তিদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, মোংলা হিরণ পয়েন্টে অবস্থানরত একটি বিদেশি জাহাজ থেকে এই কয়লা অসদুপায় অবলম্বন করে অবৈধভাবে পাচার করা হচ্ছিল।
জব্দ করা কয়লা, পাচারকাজে ব্যবহৃত লাইটার ভেসেল এবং আটক ১২ চোরাকারবারিকে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য কোতোয়ালি থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন কোস্ট গার্ডের মিডিয়া কর্মকর্তা।

২৮ নভেম্বর, ২০২৫ ১১:০৫
শয়তানের নিঃশ্বাসের খপ্পরে পড়ে ২৭ বছরের গৃহবধু ধর্ষণের শিকার হয়েছে। এ ব্যাপারে বৃহস্পতিবার মামলা হলে বিচারক মামলাটি আমলে নিয়ে বরিশাল কোতয়ালি থানার ওসিকে আসামির বিরুদ্ধে এজাহার করার নির্দেশ দেন। বৃহস্পতিবার বরিশালের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালতে মামলা করলে বিচারক মামলাটি আমলে নিয়ে উপরোক্ত নির্দেশ দেন।
নগরের ২৬ নং ওয়ার্ডের হরিনাফুলিয়া এলাকার আসমা আক্তার বাদী হয়ে ঢাকার মোহাম্মদপুরের রাসেলের বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলার অভিযোগ এনে মামলা দায়ের করেন। বাদি মামলায় উল্লেখ করেন তার সাথে টেলিফোনে যোগাযোগ হয় আসামীর।
বাদির আইডি কার্ড সংশোধন করে দেওয়ার কথা বলে নথুল্লাবাদ বাসস্ট্যান্ডে আসতে বলে। গত ১২ নভেম্বর বাদি বাস স্ট্যান্ড আসলে শয়তানের নিঃশ্বাস দিয়া বাদিসহ তার নবজাত শিশু সন্তানকে ঢাকা নিয়ে যায়। এরপর ১২ ই নভেম্বর থেকে ১৯ নভেম্বর পর্যন্ত বাঁদিকে খুনের ভয় দেখিয়ে ধর্ষণ করতে থাকে। এক পর্যায়ে বাদি স্বামীকে জানালে স্বামী ১৯ নভেম্বর ঢাকা গিয়ে বাদিকে উদ্ধার করে বরিশাল নিয়ে আসে।
এ ব্যাপারে ২৭বছরের ওই গৃহবধূ বৃহস্পতিবার বরিশাল আদালতে হাজির হয়ে মামলা করলে বিচারক মামলাটি আমলে নিয়ে আসামির বিরুদ্ধে এফআইআর করার নির্দেশ দেন।
শয়তানের নিঃশ্বাসের খপ্পরে পড়ে ২৭ বছরের গৃহবধু ধর্ষণের শিকার হয়েছে। এ ব্যাপারে বৃহস্পতিবার মামলা হলে বিচারক মামলাটি আমলে নিয়ে বরিশাল কোতয়ালি থানার ওসিকে আসামির বিরুদ্ধে এজাহার করার নির্দেশ দেন। বৃহস্পতিবার বরিশালের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালতে মামলা করলে বিচারক মামলাটি আমলে নিয়ে উপরোক্ত নির্দেশ দেন।
নগরের ২৬ নং ওয়ার্ডের হরিনাফুলিয়া এলাকার আসমা আক্তার বাদী হয়ে ঢাকার মোহাম্মদপুরের রাসেলের বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলার অভিযোগ এনে মামলা দায়ের করেন। বাদি মামলায় উল্লেখ করেন তার সাথে টেলিফোনে যোগাযোগ হয় আসামীর।
বাদির আইডি কার্ড সংশোধন করে দেওয়ার কথা বলে নথুল্লাবাদ বাসস্ট্যান্ডে আসতে বলে। গত ১২ নভেম্বর বাদি বাস স্ট্যান্ড আসলে শয়তানের নিঃশ্বাস দিয়া বাদিসহ তার নবজাত শিশু সন্তানকে ঢাকা নিয়ে যায়। এরপর ১২ ই নভেম্বর থেকে ১৯ নভেম্বর পর্যন্ত বাঁদিকে খুনের ভয় দেখিয়ে ধর্ষণ করতে থাকে। এক পর্যায়ে বাদি স্বামীকে জানালে স্বামী ১৯ নভেম্বর ঢাকা গিয়ে বাদিকে উদ্ধার করে বরিশাল নিয়ে আসে।
এ ব্যাপারে ২৭বছরের ওই গৃহবধূ বৃহস্পতিবার বরিশাল আদালতে হাজির হয়ে মামলা করলে বিচারক মামলাটি আমলে নিয়ে আসামির বিরুদ্ধে এফআইআর করার নির্দেশ দেন।

২৭ নভেম্বর, ২০২৫ ২৩:৫৭
বাবুগঞ্জের প্রথম উপজেলা চেয়ারম্যান ও যুদ্ধকালীন বেইজ কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ আব্দুল ওহাব খানের সহধর্মিণী বাংলাদেশ প্রথম নারী উপজেলা চেয়ারম্যান খালেদা ওহাবের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করে শোকবার্তা দিয়েছেন বাবুগঞ্জ উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) বাবুগঞ্জ উপজেলা শাখা এবং দি হাঙ্গার প্রজেক্ট বাংলাদেশের বরিশাল আঞ্চলিক কার্যালয়। এসব সংগঠন ও সংস্থার পক্ষ থেকে প্রেরিত পৃথক শোকবার্তায় তারা খালেদা ওহাবের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা এবং তাঁর শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা প্রকাশ করেছেন।
শোকবার্তায় বাবুগঞ্জ উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের পক্ষ থেকে সাবেক ডেপুটি কমান্ডার আব্দুল করিম হাওলাদার বলেন, 'খালেদা ওহাব দলমত নির্বিশেষে সকল মানুষের কাছে একজন জনপ্রিয় নেত্রী ছিলেন। তিনি ছিলেন মুক্তিযোদ্ধাদের অতি আপনজন। তাঁর স্বামী শহীদ আব্দুল ওহাব খান ছিলেন একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং যুদ্ধকালীন বেইজ কমান্ডার। ১৯৮৯ সালে আততায়ীর গুলিতে আব্দুল ওহাব খান নিহত হওয়ার পরে খালেদা ওহাব একজন গৃহবধূ থেকে নিজের মেধা যোগ্যতা ও পরিশ্রমের মাধ্যমে জনপ্রতিনিধি থেকে জনগণের নেত্রী হয়ে ওঠেন। জীবদ্দশায় তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যাণে বিভিন্ন কাজ করে গেছেন এবং মুক্তিযোদ্ধাদের অধিকার রক্ষায় সর্বদা সোচ্চার ছিলেন। তাঁর মৃত্যুতে বাবুগঞ্জ উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ তাদের একজন স্বজন হারিয়েছে।'
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) বাবুগঞ্জ উপজেলা কমিটির পক্ষ থেকে দেওয়া শোকবার্তায় সম্পাদক আরিফ আহমেদ মুন্না বলেন, 'খালেদা ওহাব শুধু একজন জনপ্রতিনিধি কিংবা রাজনীতিবিদ ছিলেন না, তিনি ছিলেন নিবেদিতপ্রাণ একজন মানবাধিকার কর্মী। তিনি আমৃত্যু গণতন্ত্র ও সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য লড়াই করে গেছেন। ১৯৮৯ সালে স্বামী শহীদ আব্দুল ওহাব খানের মৃত্যুর পরে তিনি তাঁর স্বামীর অসমাপ্ত কাজের দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নেন। পুরো একটা জীবন তিনি অবলীলায় খরচ করেছেন মানুষ ও মানবতার কল্যাণে। তিনি ছিলেন নারীদের জন্য এক অনুপ্রেরণার বাতিঘর। তিনি শিখিয়ে গেছেন কীভাবে একজন সাধারণ গৃহবধূ নারীকে সমাজের সকল প্রতিকূলতা অতিক্রম করে জীবনযুদ্ধে জয়ী এবং সফল হতে হয়। তিনি অদম্য ও জীবন সংগ্রামী নারীদের কাছে একজন আলোকবর্তিকা হয়ে থাকবেন।'
দি হাঙ্গার প্রজেক্ট বাংলাদেশের বরিশাল আঞ্চলিক কার্যালয়ের পক্ষ থেকে বিভাগীয় সমন্বয়কারী মেহের আফরোজ মিতা বলেন, 'বাবুগঞ্জে নারীর অগ্রযাত্রা এবং নারীর ক্ষমতায়নের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত ছিলেন খালেদা ওহাব। জীবদ্দশায় তিনি বাল্যবিবাহ, নারী নির্যাতন, নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধ এবং সর্বোপরি নারীদের জীবনমান উন্নয়নে কাজ করে গেছেন। তিনি আমৃত্যু বিকশিত নারী নেটওয়ার্কের সভানেত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন। তাঁর সাংগঠনিক দক্ষতা ছিল অসাধারণ। বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন, রান্নাবান্না এবং অতিথি আপ্যায়নে ক্ষেত্রেও তিনি ছিলেন অনন্য। তাঁর শূন্যতা কখনো পূরণ হওয়ার নয়। একজন কীর্তিমতী নারী হিসেবে তিনি ইতিহাসের পাতায় অমর হয়ে থাকবেন।'
উল্লেখ্য, বর্ণাঢ্য জীবনের অধিকারিণী খালেদা ওহাব ১৯৮৯ সালের উপ-নির্বাচনে বাবুগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয় পরবর্তী এরশাদ সরকারের উপজেলা পদ্ধতি প্রবর্তনের পরে তিনিই বাংলাদেশের প্রথম নারী উপজেলা চেয়ারম্যান হওয়ার গৌরব অর্জন করেন। ১৯৮৯ সালের ১৫ আগস্ট তাঁর স্বামী বাবুগঞ্জ উপজেলা পরিষদের নির্বাচিত প্রথম চেয়ারম্যান আব্দুল ওহাব খান আততায়ীর গুলিতে নিহত হলে ওই বছরই অনুষ্ঠিত উপ-নির্বাচনে বিপুল ভোটে বিজয়ী হন তিনি। যে সময়ে নারীরা ঠিকভাবে ঘর থেকেই বের হতে পারতেন না সেই সময়ে একজন নারী উপজেলা চেয়ারম্যান ছিল অকল্পনীয় একটা ঘটনা। দেশের প্রথম নারী উপজেলা চেয়ারম্যান ছাড়াও তিনি একাধিকবার বিআরডিবি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন। রাজনৈতিক জীবনে তিনি প্রথমে জাতীয় পার্টির বাবুগঞ্জ উপজেলা শাখার আহবায়ক ছিলেন। পরবর্তীতে আওয়ামী লীগে যোগদান করে তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সদস্য নির্বাচিত হন।
রাজনীতির পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠনের সাথেও আমৃত্যু যুক্ত ছিলেন খালেদা ওহাব। তিনি সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) কমিটির বাবুগঞ্জ উপজেলা সভাপতি ছাড়াও পিস ফ্যাসিলিটেটর গ্রুপের (পিএফজি) কো-অর্ডিনেটর এবং দি হাঙ্গার প্রজেক্ট পরিচালিত বিকশিত নারী নেটওয়ার্কের সভাপতি এবং জাতীয় মহিলা সংস্থার বাবুগঞ্জ উপজেলা সভানেত্রী হিসেবে দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করেন। তাঁর বাড়ি বাবুগঞ্জ উপজেলার চাঁদপাশা ইউনিয়নের দরিয়াবাদ গ্রামে।
গত মঙ্গলবার খালেদা ওহাব পিস ফ্যাসিলিটেটর গ্রুপের (পিএফজি) কো-অর্ডিনেটর হিসেবে বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে শান্তি সহায়ক সম্মেলনে যোগ দিতে বরিশাল থেকে ঢাকায় যান। সম্মেলন শেষে তিনি রামপুরা এলাকায় তার ছোটবোনের বাসায় বেড়াতে গেলে বুধবার রাতে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন। এসময় তাকে নিকটস্থ ফরাজি জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হলে রাত ৪টার দিকে সেখানেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। চিকিৎসকরা জানান, খালেদা ওহাব স্ট্রোকজনিত কারণে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণে মারা যান। তিনি উচ্চ রক্তচাপ এবং ডায়াবেটিস রোগে ভুগছিলেন। বৃহস্পতিবার বাদ জোহর বাবুগঞ্জ ডিগ্রি কলেজ মাঠে প্রথম নামাজে জানাজা এবং বাদ আছর চাঁদপাশা হাইস্কুল ও কলেজ মাঠে তাঁর দ্বিতীয় জানাজা শেষে বাবার বাড়ির পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। #
বাবুগঞ্জের প্রথম উপজেলা চেয়ারম্যান ও যুদ্ধকালীন বেইজ কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ আব্দুল ওহাব খানের সহধর্মিণী বাংলাদেশ প্রথম নারী উপজেলা চেয়ারম্যান খালেদা ওহাবের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করে শোকবার্তা দিয়েছেন বাবুগঞ্জ উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) বাবুগঞ্জ উপজেলা শাখা এবং দি হাঙ্গার প্রজেক্ট বাংলাদেশের বরিশাল আঞ্চলিক কার্যালয়। এসব সংগঠন ও সংস্থার পক্ষ থেকে প্রেরিত পৃথক শোকবার্তায় তারা খালেদা ওহাবের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা এবং তাঁর শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা প্রকাশ করেছেন।
শোকবার্তায় বাবুগঞ্জ উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের পক্ষ থেকে সাবেক ডেপুটি কমান্ডার আব্দুল করিম হাওলাদার বলেন, 'খালেদা ওহাব দলমত নির্বিশেষে সকল মানুষের কাছে একজন জনপ্রিয় নেত্রী ছিলেন। তিনি ছিলেন মুক্তিযোদ্ধাদের অতি আপনজন। তাঁর স্বামী শহীদ আব্দুল ওহাব খান ছিলেন একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং যুদ্ধকালীন বেইজ কমান্ডার। ১৯৮৯ সালে আততায়ীর গুলিতে আব্দুল ওহাব খান নিহত হওয়ার পরে খালেদা ওহাব একজন গৃহবধূ থেকে নিজের মেধা যোগ্যতা ও পরিশ্রমের মাধ্যমে জনপ্রতিনিধি থেকে জনগণের নেত্রী হয়ে ওঠেন। জীবদ্দশায় তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যাণে বিভিন্ন কাজ করে গেছেন এবং মুক্তিযোদ্ধাদের অধিকার রক্ষায় সর্বদা সোচ্চার ছিলেন। তাঁর মৃত্যুতে বাবুগঞ্জ উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ তাদের একজন স্বজন হারিয়েছে।'
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) বাবুগঞ্জ উপজেলা কমিটির পক্ষ থেকে দেওয়া শোকবার্তায় সম্পাদক আরিফ আহমেদ মুন্না বলেন, 'খালেদা ওহাব শুধু একজন জনপ্রতিনিধি কিংবা রাজনীতিবিদ ছিলেন না, তিনি ছিলেন নিবেদিতপ্রাণ একজন মানবাধিকার কর্মী। তিনি আমৃত্যু গণতন্ত্র ও সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য লড়াই করে গেছেন। ১৯৮৯ সালে স্বামী শহীদ আব্দুল ওহাব খানের মৃত্যুর পরে তিনি তাঁর স্বামীর অসমাপ্ত কাজের দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নেন। পুরো একটা জীবন তিনি অবলীলায় খরচ করেছেন মানুষ ও মানবতার কল্যাণে। তিনি ছিলেন নারীদের জন্য এক অনুপ্রেরণার বাতিঘর। তিনি শিখিয়ে গেছেন কীভাবে একজন সাধারণ গৃহবধূ নারীকে সমাজের সকল প্রতিকূলতা অতিক্রম করে জীবনযুদ্ধে জয়ী এবং সফল হতে হয়। তিনি অদম্য ও জীবন সংগ্রামী নারীদের কাছে একজন আলোকবর্তিকা হয়ে থাকবেন।'
দি হাঙ্গার প্রজেক্ট বাংলাদেশের বরিশাল আঞ্চলিক কার্যালয়ের পক্ষ থেকে বিভাগীয় সমন্বয়কারী মেহের আফরোজ মিতা বলেন, 'বাবুগঞ্জে নারীর অগ্রযাত্রা এবং নারীর ক্ষমতায়নের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত ছিলেন খালেদা ওহাব। জীবদ্দশায় তিনি বাল্যবিবাহ, নারী নির্যাতন, নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধ এবং সর্বোপরি নারীদের জীবনমান উন্নয়নে কাজ করে গেছেন। তিনি আমৃত্যু বিকশিত নারী নেটওয়ার্কের সভানেত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন। তাঁর সাংগঠনিক দক্ষতা ছিল অসাধারণ। বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন, রান্নাবান্না এবং অতিথি আপ্যায়নে ক্ষেত্রেও তিনি ছিলেন অনন্য। তাঁর শূন্যতা কখনো পূরণ হওয়ার নয়। একজন কীর্তিমতী নারী হিসেবে তিনি ইতিহাসের পাতায় অমর হয়ে থাকবেন।'
উল্লেখ্য, বর্ণাঢ্য জীবনের অধিকারিণী খালেদা ওহাব ১৯৮৯ সালের উপ-নির্বাচনে বাবুগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয় পরবর্তী এরশাদ সরকারের উপজেলা পদ্ধতি প্রবর্তনের পরে তিনিই বাংলাদেশের প্রথম নারী উপজেলা চেয়ারম্যান হওয়ার গৌরব অর্জন করেন। ১৯৮৯ সালের ১৫ আগস্ট তাঁর স্বামী বাবুগঞ্জ উপজেলা পরিষদের নির্বাচিত প্রথম চেয়ারম্যান আব্দুল ওহাব খান আততায়ীর গুলিতে নিহত হলে ওই বছরই অনুষ্ঠিত উপ-নির্বাচনে বিপুল ভোটে বিজয়ী হন তিনি। যে সময়ে নারীরা ঠিকভাবে ঘর থেকেই বের হতে পারতেন না সেই সময়ে একজন নারী উপজেলা চেয়ারম্যান ছিল অকল্পনীয় একটা ঘটনা। দেশের প্রথম নারী উপজেলা চেয়ারম্যান ছাড়াও তিনি একাধিকবার বিআরডিবি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন। রাজনৈতিক জীবনে তিনি প্রথমে জাতীয় পার্টির বাবুগঞ্জ উপজেলা শাখার আহবায়ক ছিলেন। পরবর্তীতে আওয়ামী লীগে যোগদান করে তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সদস্য নির্বাচিত হন।
রাজনীতির পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠনের সাথেও আমৃত্যু যুক্ত ছিলেন খালেদা ওহাব। তিনি সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) কমিটির বাবুগঞ্জ উপজেলা সভাপতি ছাড়াও পিস ফ্যাসিলিটেটর গ্রুপের (পিএফজি) কো-অর্ডিনেটর এবং দি হাঙ্গার প্রজেক্ট পরিচালিত বিকশিত নারী নেটওয়ার্কের সভাপতি এবং জাতীয় মহিলা সংস্থার বাবুগঞ্জ উপজেলা সভানেত্রী হিসেবে দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করেন। তাঁর বাড়ি বাবুগঞ্জ উপজেলার চাঁদপাশা ইউনিয়নের দরিয়াবাদ গ্রামে।
গত মঙ্গলবার খালেদা ওহাব পিস ফ্যাসিলিটেটর গ্রুপের (পিএফজি) কো-অর্ডিনেটর হিসেবে বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে শান্তি সহায়ক সম্মেলনে যোগ দিতে বরিশাল থেকে ঢাকায় যান। সম্মেলন শেষে তিনি রামপুরা এলাকায় তার ছোটবোনের বাসায় বেড়াতে গেলে বুধবার রাতে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন। এসময় তাকে নিকটস্থ ফরাজি জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হলে রাত ৪টার দিকে সেখানেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। চিকিৎসকরা জানান, খালেদা ওহাব স্ট্রোকজনিত কারণে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণে মারা যান। তিনি উচ্চ রক্তচাপ এবং ডায়াবেটিস রোগে ভুগছিলেন। বৃহস্পতিবার বাদ জোহর বাবুগঞ্জ ডিগ্রি কলেজ মাঠে প্রথম নামাজে জানাজা এবং বাদ আছর চাঁদপাশা হাইস্কুল ও কলেজ মাঠে তাঁর দ্বিতীয় জানাজা শেষে বাবার বাড়ির পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। #

Google AdSense
This is a demo ad. Your live ads will be displayed here once AdSense is properly configured.
Google AdSense
This is a demo ad. Your live ads will be displayed here once AdSense is properly configured.