https://jamunabankbd.com/

সারাদেশ

রক্ত পরিসঞ্চালনের নিরাপদ পদ্ধতিই এখন অনিরাপদ

বরিশালটাইমস

বরিশালটাইমস

০৮ নভেম্বর, ২০২৫ ১৪:১০

প্রিন্ট এন্ড সেভ

রক্ত পরিসঞ্চালনের নিরাপদ পদ্ধতিই এখন অনিরাপদ

চলতি বছরের ১০ জুলাই। রাজধানী ঢাকায় একটি আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের ব্লাড ব্যাংক থেকে তিন ব্যাগ রক্ত সংগ্রহ করেন এক রোগীর স্বজন। যা নেওয়া হয় মহাখালীর একটি সরকারি ইনস্টিটিউট হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মুমূর্ষু রোগীর চিকিৎসায়। কিন্তু স্ক্রিনিং (রক্তের নমুনা বিশ্লেষণ করে বিভিন্ন রোগ ও স্বাস্থ্যগত সমস্যা প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত) করা রক্ত ফের স্ক্রিনিং করে রক্তদাতা এইচআইভি পজিটিভ (এইডস সংক্রমিত) শনাক্ত হন। এ নিয়ে দুই প্রতিষ্ঠানের বিবাদ চলমান রয়েছে, যা গোটা দেশের রক্ত পরিসঞ্চালন সেবার চিত্র তুলে ধরে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশের সরকারি হাসপাতালগুলোতে নিরাপদ রক্ত পরিসঞ্চালনের মতো অতিস্পর্শকাতর স্বাস্থ্যসেবা চলছে অনিরাপদ পদ্ধতিতে। নিরাপদ রক্ত পরিসঞ্চালন আইন অনুযায়ী কোনো রোগীর রক্ত পরিসঞ্চালনের আগে নির্ধারিত পাঁচটি সংক্রামক রোগের পরীক্ষা বাধ্যতামূলক। কিন্তু ওপি (অপারেশনাল প্ল্যান) বাতিল হওয়া এবং আইনি জটিলতায় হাসপাতালগুলোর পক্ষে এই পাঁচটি পরীক্ষার ব্যয় বহন সম্ভব হচ্ছে না। ফলে কোনো হাসপাতালে দুটি, আবার কোনো কোনো হাসপাতালে তিনটি পরীক্ষা করে কাজ চালিয়ে নেওয়া হচ্ছে। পরিসঞ্চালন বিশেষজ্ঞরা বিষয়টি একাধিকবার মন্ত্রণালয়ের দৃষ্টিতে আনার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছেন। এমন পরিস্থিতিতে সারা দেশে সংক্রামক রোগগুলো ছড়িয়ে পড়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, দেশে বছরে প্রায় সাড়ে নয় লাখ ব্যাগ রক্ত পরিসঞ্চালন হয়। সেই হিসাবে দিনে পরিসঞ্চালন হয় প্রায় দুই হাজার ৬০০ ব্যাগ। অর্থাৎ প্রতিদিন আড়াই হাজারের বেশি মানুষ রক্ত গ্রহণ করে। যদি সেই রক্তে হেপাটাইটিস বা এইচআইভির মতো সংক্রামক রোগের জীবাণু থাকে তাহলে ওই রোগী সুস্থ হওয়ার পরিবর্তে নতুন রোগে আক্রান্ত হবেন এবং মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাবেন। একই সঙ্গে নিয়ন্ত্রিত এসব সংক্রামক রোগ যদি বাড়তে শুরু করে তাহলে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জন অসম্ভব হয়ে পড়বে।

আইন অনুযায়ী রক্ত পরিসঞ্চালনের জন্য পাঁচটি সংক্রামক রোগের স্ক্রিনিংয়ের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এগুলো হলো—ম্যালেরিয়া, সিফিলিস, হেপাটাইটিস-বি, হেপাটাইটিস-সি এবং এইচআইভি। বর্তমানে স্ক্রিনিং বাবদ সরকারি হাসপাতালের নির্ধারিত ফি ৩৫০ টাকা। একজন রক্তদাতার পাঁচটি সংক্রামক রোগের পরীক্ষায় রি-এজেন্ট ও আনুষঙ্গিক বাবদ প্রয়োজন ২২২ টাকা। কিন্তু আইন অনুযায়ী আদায়কৃত অর্থের ৪৫ শতাংশ অর্থাৎ ১৭৫ টাকা রি-এজেন্ট ও অন্যান্য কেনাকাটা বাবদ ব্যয় করা যাবে। এর মধ্যে আবার সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের ভ্যাট ও ট্যাক্স (১০ + ৫) ১৫ শতাংশ। ফলে এই টাকার মধ্যে তিনটির বেশি পরীক্ষা করা সম্ভব নয়। তাই হাসপাতালগুলোতে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ম্যালেরিয়া এবং হেপাটাইটিস-সি পরীক্ষা করা হচ্ছে না। সবচেয়ে ভয়াবহ বিষয় হলো, পরীক্ষা না করার বিষয়টি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ প্রকাশ না করে উল্টো পরীক্ষা করা হয়েছে এবং সংক্রমণ পাওয়া যায়নি উল্লেখ করে রিপোর্ট দিচ্ছে।

পরিসঞ্চালন বিশেষজ্ঞরা বলেন, আগে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে সব হাসপাতালে প্রয়োজনীয় কিটস ও রি-এজেন্ট সরবরাহ করা হতো। ফলে কখনো এ ধরনের সমস্যায় পড়তে হয়নি; কিন্তু গত আগস্টের পর থেকে সংকট শুরু হয়, যা বর্তমানে ভয়াবহ পর্যায়ে পৌঁছেছে। তারা আরও বলেন, বিএমইউ বা ডিএমসিএইচের মতো বড় প্রতিষ্ঠানে এই বিভাগে অনেক পরীক্ষা হয়, ফলে সেখানে আয় বেশি। তাই তারা সামলে নিতে পারত; কিন্তু অপেক্ষাকৃত ছোট মেডিকেল কলেজগুলো বা জেলা হাসপাতালের পক্ষে বিভাগের আয়ের টাকায় এই ব্যয় বহন করা সম্ভব নয়। সম্প্রতি সিফিলিস রোগী পাওয়া যাচ্ছে, যা এতদিন ছিল না বলেও জানান পরিসঞ্চালন বিশেষজ্ঞরা।

রক্ত পরিসঞ্চালন আইন-২০০৮-এর ২৪ ধারা অনুযায়ী, হাসপাতালের রক্ত পরিসঞ্চালন কেন্দ্রে রক্ত পরিসঞ্চালন সেবার মাধ্যমে এবং ব্লাড গ্রুপিং, ক্রসম্যাচিং, স্ক্রিনিং ও অন্যান্য পরীক্ষা-নিরীক্ষার ক্ষেত্রে কেবিন, পেয়িং বেড, জেনারেল ওয়ার্ড ও প্রাইভেট রোগী থেকে প্রাপ্ত অর্থ নিম্নরূপে প্রাপ্ত হবেন—স্থানীয় রক্ত পরিসঞ্চালন কেন্দ্রের রক্ত পরিসঞ্চালন তহবিল ৪৫ শতাংশ। জাতীয় নিরাপদ রক্ত পরিসঞ্চালন বিশেষজ্ঞ কমিটির তহবিল ৫ শতাংশ। রক্ত পরিসঞ্চালন কেন্দ্রের কর্মকর্তারা অধ্যাপক, ইনচার্জ বা সমপর্যায়ের কর্মকর্তারা সমভাবে ১২ শতাংশ। সহযোগী অধ্যাপক, সহকারী অধ্যাপক বা সমমানের কর্মকর্তারা সমভাবে ১০ শতাংশ। মেডিকেল অফিসার বা সমমানের কর্মকর্তারা সমভাবে ০৮ শতাংশ। ৩য় শ্রেণির কর্মচারীরা সমভাবে ১৪ শতাংশ এবং ৪র্থ শ্রেণির কর্মচারীরা সমভাবে ৬ শতাংশ।

রক্ত পরিসঞ্চালন আইন-২০০৮-এর ২৬-এর (৮) ধারায় বলা হয়েছে, রক্তবাহিত রোগ নির্ণয়, রক্তের অন্যান্য পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও রক্ত সংরক্ষণ ইত্যাদি কাজের জন্য প্রয়োজনীয় পর্যাপ্ত রি-এজেন্ট, কিটস ও রক্তব্যাগ ইত্যাদির সরবরাহ সরকার বা যথাযথ কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করবে। তবে জরুরি ক্ষেত্রে রি-এজেন্ট, কিটস, রক্তের ব্যাগ ও ট্রান্সফিউশন সেট, ডিসপোজেবল সিরিঞ্জ, নিডল ও অন্যান্য সামগ্রী কেনার জন্য মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল বা ইনস্টিটিউট হাসপাতাল সর্বাধিক ১০ হাজার টাকা, জেলা হাসপাতাল সাত হাজার টাকা ও অন্যান্য হাসপাতাল পাঁচ হাজার টাকা রাখতে পারবে এবং জরুরি প্রয়োজনে এসব সামগ্রী কেনা যাবে।

উপধারা (১১)-তে বলা হয়েছে, কমিটির সদস্য সচিব রক্ত পরিসঞ্চালন কেন্দ্রের জন্য জরুরি প্রয়োজনে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো রি-এজেন্ট, যন্ত্রপাতি কেনা বা অন্য প্রয়োজনীয় খাতে রক্ত পরিসঞ্চালন তহবিল থেকে ব্যয় করতে পারবেন।

এক পরিসঞ্চালন বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘পরিসঞ্চালনের জন্য রোগীদের কাছ থেকে ৩৫০ টাকা নিতে পারি। রক্তপরিসঞ্চালন আইন ও বিধি ২০০৮ অনুসারে এর ৪৫ শতাংশ ফের ডিভাইস কিনতে ব্যবহার করা যাবে। সেই হিসাবে আমাকে ভ্যাট ও ট্যাক্সসহ ১৫০ টাকায় সব কেনাকাটা করতে হয়। কারণ ব্লাড গ্রুপ রি-এজেন্ট, টেস্টটিউব, সিরিঞ্জসহ যাবতীয়র জন্য বরাদ্দ থাকে মাত্র ২৫ টাকা। তালিকায় অনেক পরীক্ষা আছে, তবে সেটা বাংলাদেশ মেডিকেল ইউনির্ভাসিটি ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ছাড়া অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোতে হয় না। তাই বাকিদের আয় ৩৫০ টাকাই। পরিসঞ্চালনের সব পরীক্ষার কিট আগে সরকার কিনে দিত। তখন এই টাকায় অন্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী কেনা সম্ভব ছিল। এখন আমরা পরীক্ষার কিট কিনেছি; কিন্তু ব্যবহার করছি না। এক মাসের ম্যালেরিয়া, এইসসিভি কিট ছয় মাস ধরে ব্যবহার করব।’

জ্যেষ্ঠ জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ড. আবু জামিল ফয়সাল বলেন, ‘নিরাপদ রক্তপরিসঞ্চালনে নির্ধারিত পাঁচটি সংক্রামক রোগের পরীক্ষা অবশ্যই করতে হবে। সেটা যদি না হয় তাহলে দেশ ভয়াবহ পরিণতির দিকে যাবে, যা কল্পনাতীত। এসব সংক্রামক রোগ সারা দেশে ছড়িয়ে পড়বে। অপ্রতুল চিকিৎসা ব্যবস্থায় যা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে না। আইন অনুযায়ী এটা সরকারের নিশ্চিত করার কথা। সরকারের সংশ্লিষ্ট যাদের অবহেলায় নিরাপদ রক্ত পরিসঞ্চালন ব্যাহত হচ্ছে তাদের শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানান তিনি।’

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, বাতিল হওয়া এইচএসএম অপারেশনাল প্লানে একটি অনুষঙ্গ ছিল নিরাপদ রক্ত পরিসঞ্চালন, যেখান থেকে সারা দেশের ২০৭টি ব্লাড সেন্টারের ওপর নজরদারি করা হতো, সেন্টারগুলোর মাসিক তথ্য যাচাই-বাছাই করা হতো। এ ছাড়া এসব সেন্টারে নিয়মিত ব্লাডব্যাগ, কিট ও রি-এজেন্ট সরবরাহ করা হতো; কিন্তু গত বছরের আগস্টের পর থেকে সরকারিভাবে কোনো হাসপাতালে পরিসঞ্চালন সামগ্রী দেওয়া সম্ভব হয়নি।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে নিরাপদ রক্ত পরিসঞ্চালন কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ডা. আসাদুল ইসলাম বলেন, ‘সরকার ওপি বন্ধ করার মধ্য দিয়ে সেইফ ব্লাড কর্মসূচি বন্ধ করে দিয়েছে। এমনকি সিএমএসডিতে (কেন্দ্রীয় ঔষধাগার) কিট, রি-এজেন্ট বা ব্লাডব্যাগ মজুত নেই। ফলে সারা দেশে সংকট তৈরি হয়েছে। এরই মধ্যে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও মন্ত্রণালয়ে জানালেও সেখান থেকে এ বিষয়ে গুরুত্বারোপ করা হয়নি।’

তিনি আরও বলেন, ‘স্ক্রিনিংয়ের পরীক্ষাগুলো করা না হলে সারা দেশে হেপাটাইটিস-বি/সি ও এইচআইভির মতো মারাত্মক সব রোগের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়বে।’ এই সমস্যার সমাধানে একটি ন্যাশনাল ব্লাড সেন্টার করার প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করেন আসাদুল ইসলাম।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. আবু জাফর বলেন, বিষয়টি তার জানা নেই। তিনি খোঁজ নিয়ে দেখবেন।

এ বিষয়ে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. সাইদুর রহমান বলেন, ‘এ মুহূর্তে দেশের বড় মেডিকেল কলেজ হাসপাতালগুলো রক্ত পরিসঞ্চালন-পূর্ববর্তী স্ক্রিনিং কিট ও রি-এজেন্টের সংকট নেই। পরিচালক ও বিভাগীয় প্রধান ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, বরিশাল মেডিকেল কলেজে আগামী পাঁচ-ছয় মাসের রি-এজেন্ট অগ্রিম মজুত আছে। হৃদরোগ হাসপাতালেও কোনো সংকট নেই। তার পরও অন্যান্য হাসপাতালে যাতে ভবিষ্যতে কোনো সংকট না হয়, সে ব্যাপারে জরুরি নির্দেশনা দেওয়া হবে।’

যদিও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এসব মেডিকেল কলেজের একটির পরিচালক নিজেই কমিশন নিয়ে থাকেন। তাই তিনি বিভাগের আয় ও এমএসআর-এর টাকা থেকে কিট ও রি-এজেন্ট কিনছেন। কারণ পরিসঞ্চালন বন্ধ থাকলে বা কম হলে মাস শেষে কমিশন অনেক কম হয়। বাকি প্রতিষ্ঠানগুলোর কোনোটিতেই ছয় মাস তো দূরের কথা, দুই মাসেরও মজুত নেই।

আরও পড়ুন:

দেশে ফিরলো ভারতে উদ্ধার হওয়া ৪ বাংলাদেশি তরুণী

বরিশালটাইমস

বরিশালটাইমস

২৭ নভেম্বর, ২০২৫ ১৪:৫৯

প্রিন্ট এন্ড সেভ

দেশে ফিরলো ভারতে উদ্ধার হওয়া ৪ বাংলাদেশি তরুণী

দালালের খপ্পরে পরে সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে যাওয়া চার তরুণীকে আটক করার পর বাংলাদেশে ফিরিয়ে দিয়েছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)। বুধবার (২৬ ন‌ভেম্বর) বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে নাগেশ্বরী উপজেলার কচাকাটার কেদার সীমান্তে পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে তাদেরকে বিজিবির কাছে হস্তান্তর করে বিএসএফ।

এই চার তরুণী হলেন— পাবনা সদর থানার মালিগাছা গ্রামের আব্দুল আউয়াল মিয়ার মেয়ের আঁখি খাতুন (২০), ব্রাহ্মনবাড়িয়ার মিরপুর থানার বাঞ্চারামপুর গ্রামের হাবিব মিয়ার মেয়ে আদিবা আকতার (২৩),নেত্রকোনার দূর্গাপুর থানার বাওয়ই পাড়ার নাছির উদ্দিনের মেয়ে শিরিনা আকতার (২৬), শরিয়তপুরের নড়িয়া থানার লুংসিং গ্রামের হিরু সরদারের মেয়ে তাসমিয়া আকতার (১৮)।

পতাকা বৈঠক এবং তরুণীদের হস্তান্তরের তথ্য ঢাকা পোস্টকে নিশ্চিত করেছেন কুড়িগ্রাম ২২ ব্যাটালিয়ন এর কেদার কোম্পানির হাবিলদার শাহজাহান আলী।

এই চার তরুণী ঢাকার বাড্ডা থানার নুতুন বাজার এলাকায় একটি বাসায় ভারা থাকতেন। তাদের তিনজন একটি বিউটি পার্লারে এবং অপর একজন একটি তৈরি পোশাকের কারখানায় কাজ করতেন।

আঁখি আকতার জানান, তাদের পূর্বপরিচিত জান্নাত নামের এক নারীর প্রলোভনে তারা কাউকে কিছু না জানিয়ে ২২ নভেম্বর সিলেটের জাফলং সীমান্ত পার হন। সীমান্তের ওপারে তাদের জন্য একটি প্রাইভেট কার অপেক্ষা করছিলো। সেই কারে উঠে তারা আসামের রাজধানী গুয়াহাটি পৌছান। ২৩ নভেম্বর পুলিশ তাদের আটক করে।

আঁখি বলেন, “আমরা উন্নত জীবন আর ভালো কাজ লোভে পড়ে ভারতে পাড়ি জমিয়েছিলাম। আমরা ভুল করেছিলাম।”

পরে বুধবার (২৬ নভেম্বর) কচাকাটা সীমান্তের মেইন পিলার ১০১৫-এর কাছে অনুষ্ঠিত পতাকা বৈঠকে বিজিবির পক্ষ থেকে নেতৃত্ব দেন হাবিলদার শাহজাহান আলী, আর বিএসএফের পক্ষ থেকে ছিলেন ইনস্পেক্টর ধীরেন্দ্র কুমার।

এ বিষয়ে কুড়িগ্রাম ২২ ব্যাটালিয়ন এর কেদার কোম্পানির হাবিলদার শাহজাহান আলী জানান, পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে চার যুবতীকে বিজিবির জিম্মায় নেয়া হয়। পরে সন্ধ্যায় তাদেরকে কচাকাটা থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।

কচাকাটা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ও‌সি) লুৎফর রহমান বলেন, “চারজন বাংলাদেশি নারী ভারতে আটক হওয়ার পর ভারতীয় বিএসএফ সদস্যরা কেদার বিওপির বিজিবি সদস্যদের সঙ্গে পতাকা বৈঠক করে তাদের ফেরত পাঠায়। পরে বিজিবি সদস্যরা আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের থানায় হস্তান্তর করেছেন। আমরা তাদের অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলেছি। স্বজনরা এসে নিয়ম মেনে জিম্মায় নিয়ে যাবেন।”

প্রাথমিকে লাগাতার কর্মবিরতি শুরু, বার্ষিক পরীক্ষা ঘিরে সংশয়

বরিশালটাইমস

বরিশালটাইমস

২৭ নভেম্বর, ২০২৫ ১১:২৫

প্রিন্ট এন্ড সেভ

প্রাথমিকে লাগাতার কর্মবিরতি শুরু, বার্ষিক পরীক্ষা ঘিরে সংশয়

প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী সরকার ১১তম গ্রেডসহ তিন দফা দাবি বাস্তবায়ন না করায় এবার ‘লাগাতার’ কর্মবিরতির শুরু করেছেন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরা।

বৃহস্পতিবার (২৭ নভেম্বর) থেকে সারাদেশের সব প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এ কর্মসূচি শুরু করেন তারা। দাবি পূরণ না করা পর্যন্ত তারা কর্মবিরতি চালিয়ে যাবেন। প্রয়োজনে বার্ষিক পরীক্ষাও বর্জন করার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন শিক্ষকরা।

‘প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদ’ লাগাতার এ কর্মবিরতির ডাক দিয়েছেন। বুধবার (২৬ নভেম্বর) রাতে সংগঠনটির পাঁচজন আহ্বায়কের সই করা বিজ্ঞপ্তিতে এ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। আহ্বায়করা হলেন- মো. আবুল কাশেম, মোহাম্মদ শামছুদ্দীন মাসুদ, খাইরুন নাহার লিপি, মু. মাহবুবুর রহমান, মো. আনোয়ার উল্যা।

পরিষদের অন্যতম আহ্বায়ক মু. মাহবুবর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, আজ থেকে আমাদের পূর্ণদিবস কর্মবিরতি শুরু হয়েছে। দাবি আদায় না করে শিক্ষকরা কেউ কাজে যোগ দেবেন না। আমরা মনে করি, এ আন্দোলন প্রাথমিক শিক্ষকদের মর্যাদার লড়াই। আমরা চাই, সরকার গত ১২ নভেম্বর যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, তা দ্রুত প্রজ্ঞাপন আকারে প্রকাশ করা হোক।

দাবির বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা দশম গ্রেডসহ তিন দফা দাবিতে আন্দোলন করছি। কিন্তু সরকার আপাতত আমাদের ১১তম গ্রেডে উন্নীত করার আশ্বাস দিয়েছে৷ পরবর্তীতে তা দশম গ্রেডে উন্নীত করা হবে। এছাড়া পদোন্নতি ও স্কেল বিষয়ে আমাদের দুটি দাবি রয়েছে। সেগুলোও পূরণ করতেই হবে।

এর আগে গত ২৫ নভেম্বর থেকে তিনদিনের কর্মবিরতির ডাক দেয় ‘প্রাথমিক শিক্ষক সংগঠন ঐক্য পরিষদ’। তাদের ডাকা কর্মবিরতি চলছে। এর মধ্যেই প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদ লাগাতার কর্মবিরতির ডাক দিলো।

এদিকে, আগামী ৮ ডিসেম্বর থেকে দেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বার্ষিক পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা। শিক্ষকদের এ কর্মবিরতিতে বার্ষিক পরীক্ষা ঘিরে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর সূত্র জানায়, বর্তমানে দেশে ৬৫ হাজার ৫৬৯টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এসব বিদ্যালয়ে প্রায় ১ কোটি শিশুশিক্ষার্থী পড়ালেখা করছে। আর শিক্ষক রয়েছেন ৩ লাখ ৮৪ হাজারের বেশি। এর মধ্যে প্রধান শিক্ষকদের সম্প্রতি দশম গ্রেডে উন্নীত করা হয়েছে। আর সহকারী শিক্ষকরা ১৩তম গ্রেড পাচ্ছেন। এ নিয়ে অসন্তুষ্ট সহকারী শিক্ষকরা।

বাজারে মিলছে কাঁচা আম, কেজি ৫০০

বরিশালটাইমস রিপোর্ট

বরিশালটাইমস রিপোর্ট

২৬ নভেম্বর, ২০২৫ ১৭:৩৯

প্রিন্ট এন্ড সেভ

বাজারে মিলছে কাঁচা আম, কেজি ৫০০

বছরের গ্রীষ্ম শুরু হলেই সাধারণত বাজারে কাঁচা আমের দেখা মেলে। তবে এবারে ব্যতিক্রম। শীতের শুরুতেই কক্সবাজারের টেকনাফের বিভিন্ন বাজারে বিক্রি শুরু হয়েছে কাঁচা আম। বাজারে নতুন মৌসুমি ফলের প্রতি ক্রেতাদের বাড়তি আকর্ষণের কারণে দামও চড়া।

মানভেদে কাঁচা আমের কেজি ৪০০ থেকে ৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

ব্যবসায়ীরা জানান, সাধারণত জুন মাসের শুরুতে টেকনাফে কাঁচা আম বাজারে আসে। কিন্তু এবার কয়েক মাস আগেই বাজারে আম পাওয়া যাচ্ছে। সরবরাহ কম ও আগাম মৌসুম হওয়ায় দামে কিছুটা বৃদ্ধি দেখা গেছে।

তাদের মতে, নতুন কোনো ফল বা পণ্য বাজারে এলে ক্রেতাদের আগ্রহ বেশি থাকে। কাঁচা আমের ক্ষেত্রেও তেমনটাই দেখা যাচ্ছে। চাহিদা বেশি থাকলেও সরবরাহ কম হওয়ায় দাম স্বাভাবিকভাবেই বেশি।

টেকনাফের আম ব্যবসায়ী আব্দুল মোনাফ বলেন, বিভিন্ন গ্রাম থেকে আনা এসব আম আগাম জাতের।

বাড়তি দাম পাওয়ার আশায় আঁটি হওয়ার আগেই আম পাড়ছেন চাষিরা। তিনি বলেন, বৈশাখের পর সরবরাহ বাড়লে দাম কমে আসবে।

বুধবার (২৬ নভেম্বর) টেকনাফ পৌরসভার বাজারে দেখা যায়, ব্যবসায়ীরা কাঁচা আম কেজিপ্রতি ৫০০ টাকায় বিক্রি করছেন। দরদাম করলে কিছু দোকানে ৪৫০ টাকাতেও বিক্রি হচ্ছে।

কাঁচা আম বিক্রেতা আব্দুল মান্নান বলেন, ‘এখন যে আম বাজারে আছে, তা সবার জন্য নয়। এক শ্রেণির ক্রেতা শখ করে কিনছেন। বেশির ভাগই মেয়েদের জন্য নিচ্ছেন কেউ স্ত্রী, কেউ বোন বা বান্ধবীর জন্য। এখন বাজারে যে আম এসেছে তা বিশেষভাবে কাঁচা বিক্রির জন্যই চাষ করা হয়েছে। শিগগিরই সব ধরনের কাঁচা আম আসবে এবং দামও কমবে।’

ক্রেতা আব্দুল রায়হান শখ করে আম কিনতে এসেছেন। তিনি বলেন, ‘এত আগে কাঁচা আম দেখে অবাক হয়েছি, তাই ছবি তুলে স্ত্রীকে পাঠালাম। সঙ্গে সঙ্গে সে বলল, দাম যা-ই হোক নিয়ে আসতে। আসলে মেয়েদের আমের প্রতি আকর্ষণ একটু আলাদা।’

তবে সবার পক্ষে এখন এই দাম বহন করা সম্ভব নয়। এনজিওকর্মী রাফিয়া সোলতানা মিম বলেন, ‘আগাম আম দেখে ভালো লাগল। কিন্তু দাম এত বেশি যে এখন কিনে খাওয়া সম্ভব নয়। যাদের সামর্থ্য আছে তারাই কিনছে। কয়েক দিন পর দাম কমলে খাব।’

কৃষিবিদদের মতে, দেশের মধ্যে টেকনাফই একমাত্র এলাকা যেখানে বিশেষ আবহাওয়া ও মাটির গুণাগুণের কারণে আগাম আম আসে। তারা জানান, টেকনাফের কয়েকটি গ্রামে এমন জলবায়ু আছে, যা শীতের শুরুতেই আম আসতে সহায়তা করে। তাদের গবেষণায় দেখা যায়, একই জাতের বীজ গাজীপুরে রোপণ করার পরও একই ফলন পাওয়া যায়নি। গাজীপুরে আম স্বাভাবিক মৌসুমেই ধরেছে, তবে টেকনাফে এসেছে আগাম।

টেকনাফ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হুমায়ূন কবির বলেন, ‘দুই বছর আগে আগাম আম ফলন নিয়ে গবেষণা হয়েছে। সেখানে দেখা গেছে, টেকনাফের কিছু এলাকার আবহাওয়ার কারণেই আম আগেভাগে ফল দিতে পারে। অন্যত্র একই ফলন পাওয়া যায় না।’

আগাম কাঁচা আমের আগমনে টেকনাফের বাজারে এখন উৎসবের আমেজ, তবে দাম বেশি হওয়ায় অনেক ক্রেতাই অপেক্ষায় রয়েছেন সরবরাহ বাড়লেই তারা উপভোগ করবেন মৌসুমের প্রথম আমের স্বাদ।

custom sidebar ads

Google AdSense
This is a demo ad. Your live ads will be displayed here once AdSense is properly configured.

জনপ্রিয়

Google AdSense
This is a demo ad. Your live ads will be displayed here once AdSense is properly configured.