dreamliferupatolibarisal

বরিশাল

দুর্নীতির টাকায় ক্রোড়পতি বিআরটিএ’র সৌরভের মিডিয়া ম্যানেজে দৌঁড়ঝাপ

বরিশালটাইমস রিপোর্ট

বরিশালটাইমস রিপোর্ট

১২ অক্টোবর, ২০২৫ ২২:১৪

প্রিন্ট এন্ড সেভ

দুর্নীতির টাকায় ক্রোড়পতি বিআরটিএ’র সৌরভের মিডিয়া ম্যানেজে দৌঁড়ঝাপ

অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে ক্রোড়পতি বনে যাওয়া সৌরভ কুমার সাহা নিজেকে রক্ষায় মিডিয়াপাড়ায় দৌঁড়ঝাপ শুরু করেছেন। একটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকা তার দুর্নীতির আদ্যপান্ত তুলে ধরলে তিনি চাকরি বাঁচাতে স্থানীয় সংবাদপত্রকে ব্যবহার করতে চাইছেন। অর্থের বিনিময়ে পত্রিকায় সংবাদসংক্রান্ত প্রতিবাদ ছাপিয়ে পরিস্থিতি সামাল দিতে তোড়জোড় চালিয়ে যাচ্ছেন। বিআরটিএর মেকানিক্যাল অ্যাসিস্ট্যান্ট সৌরভ কুমার সাহার বড়সড় দুর্নীতি প্রকাশ এবং টাকার বান্ডিল নিয়ে মিডিয়াপাড়ায় তার দৌঁড়াদৌঁড়ি নিয়ে বরিশাল জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে নানা কানাঘুষা হচ্ছে।

বরিশালের স্থানীয় একাধিক পত্রিকার সাংবাদিক জানান, শনিবার সৌরভ সাহার সংবাদটি জাতীয় দৈনিকে আসার পরে তিনি বিভিন্ন মাধ্যম থেকে যোগাযোগ করেন। এবং টাকা নিয়ে ওই সংবাদসংক্রান্ত একটি প্রতিবাদ দেওয়ার আর্জি রাখেন। এমন একটি আবদার বরিশালটাইমস কর্তৃপক্ষের কাছে এসেছে। সুতরাং তিনি যে নিজেকে রক্ষায় টাকার বান্ডিল নিয়ে মিডিয়া মিশনে নেমেছেন তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।

স্থানীয় মিডিয়া ম্যানেজে দৌঁড়ঝাপ সম্পর্কে জানতে সৌরভের ব্যবহৃত মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি তা রিসিভ করেননি।

সৌরভ কুমার সাহা চাকরিতে যোগদানের পরে প্রথম কর্মস্থল ছিল নোয়াখালী। এবং সেখানে খুলে যায় তার ভাগ্য। এরপর আর তাকে পেছনে তাকাতে হয়নি। অবৈধপথে উপার্জন করেছেন দুহাত ভরে। তিনি নামে-বেনামে অর্ধশত কোটি টাকার সম্পদ গড়েছেন।

ফরিদপুর সদর উপজেলার বাসিন্দা সৌরভের বাবা ছিলেন পত্রিকার হকার। তার সামান্য আয়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে টানাটানির মধ্যে চলত সংসার। আওয়ামী পরিবারের সদস্য হওয়ায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হসিনার বেয়াই সাবেক মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেনের সুপারিশে ২০১৪ সালে বিআরটিএ অফিসে চাকরি পান সৌরভ । গত ১১ বছরে তিনি বাবা, শ্বশুর, শ্যালকসহ বিভিন্নজনের নামে-বেনামে অর্ধশত কোটি টাকার সম্পদ গড়েছেন। কিনেছেন ১০টি বাস, চারটি প্রাইভেট কার। আছে বেশ কয়েকটি সিএনজিচালিত অটোরিকশাও। ফরিদপুরে সৌরভের ভগ্নিপতি এসব অটোরিকশা দেখাশোনা করেন। এছাড়া নিজের চলাচলের জন্য কিনেছেন অর্ধকোটি টাকা মূল্যের বিলাসবহুল পাজেরো গাড়ি।

সূত্রের বরাত দিয়ে পত্রিকাটি আরও জানায়, আওয়ামী পরিবারের সন্তান ও ফরিদপুরের বাসিন্দা হওয়ায় অল্পদিনেই পদোন্নতি পান সৌরভ। মেকানিক্যাল অ্যাসিস্ট্যান্ট থেকে বিআরটিএর পরিদর্শক হয়ে ঢাকার উত্তরা, গোপালগঞ্জ, চাঁদপুর, মাদারীপুরসহ বিভিন্ন জেলায় চাকরি করেন। সর্বশেষ মাদারীপুর থেকে ২০২৩ সালের শুরুতে বরিশাল বিআরটিএর ইন্সপেক্টর পদে যোগ দেন। গত ১১ বছরে ড্রাইভিং লাইসেন্স, ফিটনেস ও রেজিস্ট্রেশন থেকে ঘুস-বাণিজ্যের মাধ্যমে দুহাত ভরে কামিয়েছেন অঢেল অর্থ। আর অবৈধ এ অর্থ দিয়ে নিজের নামে কিছুই করেননি সুচতুর সৌরভ। আত্মীয়স্বজনসহ নামে-বেনামে কিনেছেন ১০টি বাস, প্রাইভেট কার, সিএনজি, জমিসহ অর্ধশত কোটি টাকার সম্পদ। শুধু তাই নয়, বিপুল অঙ্কের টাকা খরচ করে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে মা কৃষ্ণা রানী সাহাকে বানিয়েছিলেন ফরিদপুর পৌরসভার কাউন্সিলর। পরে সৌরভের পিতা বিজয় কৃষ্ণ সাহা ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের নেতাদের আর্থিক সহায়তা করা শুরু করেন।

পত্রিকাটির অনুসন্ধানে জানা গেছে, সৌরভের বেতন ২৬-২৭ হাজার টাকা হলেও মাসে অবৈধভাবে কামান ৩০ থেকে ৩৫ লাখ টাকা। বরিশাল বিআরটিএর অধীনে প্রতি মাসে লাইসেন্স দিতে ছয় থেকে আটটি বোর্ড বসে। প্রতি বোর্ডে লিখিত, ভাইভা ও ফিল্ড টেস্ট পরীক্ষায় ১৮০-২০০ জন অংশ নেন। বোর্ডে হাতেগোনা কয়েকজনকে পাস করানো হয়। পরে বিআরটিএর চিহ্নিত দালাল ও সৌরভের ব্যক্তিগত ড্রাইভার রিয়াজ খান, আলাউদ্দীন, জাকির, আসাদুল, হৃদয়সহ ২০-২৫ জন পরীক্ষায় ফেল করা ব্যক্তিদের সঙ্গে যোগাযোগ করে। তারা পাস করানোর জন্য তিন-চার হাজার টাকার চুক্তি করেন। এর মধ্যে লাইসেন্সপ্রতি সৌরভকে দিতে হয় আড়াই হাজার টাকা। বাকি টাকা পান দালালরা।

সূত্র জানায়, ওই পরীক্ষায় একজন ম্যাজিস্ট্রেট উপস্থিত থাকার কথা। কোনো কোনো সময় ম্যাজিস্ট্রেট উপস্থিত না থেকে প্রতিনিধি পাঠিয়ে পরীক্ষার কাজ শেষ করেন। ফলে বিআরটিএ কর্মকর্তা সৌরভ খুব সহজেই নিজের করা তালিকায় ম্যাজিস্ট্রেটের সই করিয়ে নেন। এ পাস বাণিজ্যে বিআরটিএর পরিদর্শক সৌরভ সাহা ও ট্রাফিক পরিদর্শকের যোগসাজশের অভিযোগ রয়েছে।

অভিযোগ রয়েছে, অন্যদের ম্যানেজ করে প্রতি বোর্ড থেকে পাঁচ-ছয় লাখ টাকা অবৈধভাবে আয় করেন সৌরভ। এভাবে মাসে তার অবৈধ আয় দাঁড়ায় ৩০-৩৫ লাখ টাকা।

সূত্র জানায়, সিএনজি অটোরিকশা রেজিস্ট্রেশনের জন্য ফাইলপ্রতি ৪০-৫০ হাজার টাকা নেন সৌরভ। প্রতিটি ট্রাকের রেজিস্ট্রেশনের জন্য ঘুস নেন পাঁচ থেকে ১০ হাজার টাকা এবং বিভিন্ন শোরুমের মোটরসাইকেলের ফাইলপ্রতি নেন এক হাজার থেকে দেড় হাজার টাকা। এছাড়া বাস, ট্রাক, প্রাইভেট কার ও সিএনজির ফিটনেস থেকে পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত আদায় করেন। সৌরভের এমন ঘুসবাণিজ্যের বিষয়টি সম্প্রতি ধরা পড়ে।

সূত্র জানায়, গত বছর বিআরটিএর প্রধান কার্যালয় থেকে সিএনজির টাইপ অনুমোদনের আগেই ১৯১টি সিএনজির রেজিস্ট্রেশন করেন সৌরভ। অভিযোগ রয়েছে, প্রতিটি সিএনজি থেকে তিনি ৫০ হাজার টাকা করে ঘুস নিয়েছেন । বিষয়টি প্রকাশ্যে আসতেই চলতি বছরের জানুয়ারিতে বরিশালের দুদক কর্মকর্তা রাজকুমার সাহা বাদী হয়ে সৌরভকে প্রধান আসামি করে মামলা করেন। মামলায় বিআরটিএর সহকারী পরিচালক রোকনুজ্জামান, ঢাকার তেজগাঁও এলাকার ‘রানার অটো’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক নজরুল ইসলামকে আসামি করা হয়। মামলায় বলা হয়, পরস্পরের যোগসাজশে ক্ষমতার অপব্যবহার করে লাভবান হওয়ার জন্য অসৎ উদ্দেশে প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছেন তারা। ওই মামলায় সৌরভ গ্রেপ্তার হলেও রহস্যজনক কারণে জামিন হয়।

সূত্র জানায়, বরিশালের নতুনবাজার এলাকায় আধুনিক এক ভবনে ২৭ হাজার টাকার ভাড়া বাসায় থাকেন তিনি। অফিসে যাওয়ার জন্য রয়েছে দামি প্রাইভেট কার। এ গাড়ির রেজিস্ট্রেশন তার পিতা বিজয় সাহার নামে। তবে গাড়ির কাগজে রয়েছে সৌরভের ফোন নম্বর। নগরীর নথুল্লাবাদ এলাকায় রয়েছে সৌরভের ‘হাওলাদার পরিবহন’-এর বাস কাউন্টার। মাদারীপুরের টেকেরহাটের হিরো হাওলাদার ও মনির হাওলাদারের কাছ থেকে চার বছর আগে ‘হাওলাদার পরিবহন’-এর ব্যানার (রুট) কিনে নেন সৌরভ । তিনি এটি তার বাবা ও শ্বশুরের নামে কিনেছেন বলে জানান হিরো হাওলাদার। টাকা-পয়সা লেনদেন থেকে শুরু করে সবকিছুই সৌরভ করেন বলেও জানান হিরো হাওলাদার।

হাওলাদার পরিবহনের মাদারীপুরের মোস্তফাপুর স্ট্যান্ডের চেকার জাহাঙ্গীর জানান, চার বছর আগে সৌরভ সাহা হাওলাদার পরিবহন কিনেছেন বাবা এবং শ্বশুরের নামে। হাওলাদার পরিবহনে সৌরভের পাঁচটি, আশিক পরিবহনের ব্যানারে চারটি এবং ফরিদপুর বাস মালিক সমিতিতে একটি বাস রয়েছে। এ বাসগুলোর মধ্যে ঢাকা রুটে চারটি এবং বরিশাল-ফরিদপুর-ভাঙ্গা-খুলনা-গোপালগঞ্জ রুটে ১০টি বাস রয়েছে তার। এর মধ্যে ছয়মাস আগে দুটি নতুন বাস কিনেছেন বলে জানা গেছে।

হাওলাদার পরিবহনের সহকারী ম্যানেজার প্রদীপ কুমার বাড়ৈ জানান, হাওলাদার পরিবহনের মালিক বরিশাল বিআরটিএর ইন্সপেক্টর সৌরভ সাহা। হাওলাদার কাউন্টারটি মূলত রিয়াজ খান দেখাশোনা করে থাকেন। হাওলাদার পরিবহনে রিয়াজের নামে রেজিস্ট্রেশন করা একটি বাস রয়েছে। বরিশাল ইফাদ মটরস থেকে কিস্তিতে গাড়িটি নামানো হয়। তবে নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, গাড়িটির প্রকৃত মালিক সৌরভ। ব্যক্তিগত গাড়িচালক ও বিআরটিএ অফিসের দালাল রিয়াজের মাধ্যমেই তিনি অধিকাংশ ঘুষ বাণিজ্য করে থাকেন। অধিক বিশ্বস্ত হওয়ায় এ গাড়িটি তার নামেই রেজিস্ট্রেশন করেন সৌরভ। একইভাবে সৌরভ বরিশাল ইফাদ মোটরস থেকে তিনটি গাড়ি কিনেছেন বলে জানা গেছে। এ গাড়িগুলোর রেজিস্ট্রেশন ইফাদ মটরসের নামে। কিস্তিতে গাড়ি কেনায় কোম্পানির নামেই এগুলোর রেজিস্ট্রেশন করা হয়েছে বলে জানান ইফাদ মটরসের বিআরটিএ প্রতিনিধি মো. সাইফুল গাজী। এমনকি এসব গাড়ির রেজিস্ট্রেশনে সাইফুল গাজীর মোবাইল নম্বর ব্যবহার করা হয়েছে। এ গাড়িগুলোর কিস্তি রিয়াজ খানের মাধ্যমে সৌরভ পরিশোধ করেন বলে নির্ভরযোগ্য সূত্র নিশ্চিত করেছে। তবে গাড়ির মালিকানার বিষয়টি জানার জন্য ইফাদ মটরসে একাধিকবার যোগযোগ করা হলেও বরিশাল অফিসে মালিকানার কোনো তথ্য নেই বলে বারবার জানিয়ে দেওয়া হয় এ প্রতিবেদককে। সৌরভ সম্প্রতি দুটি পুরোনো গাড়ি বিক্রি করে নতুন তিনটি গাড়ির চেচিস, ইঞ্জিন কিনেছেন । শিগগিরই নতুন তিনটি বাস তার গাড়িবহরে যোগ হবে।

গাড়িভাড়া নেওয়ার কথা জানিয়ে এ প্রতিবেদক যোগাযোগ করেন সৌরভের ম্যানেজার রিয়াজ খানের সঙ্গে। এ সময় রিয়াজ খান এ প্রতিবেদকের কাছে সৌরভের ১০টি বাস থাকার কথা এবং নতুন তিনটি চেচিস ইঞ্জিন কেনার কথা অকপটে স্বীকার করেন। তিনি বলেন, বাসের মালিক বিজয় সাহা ও তার ছেলে সৌরভ সাহা কখনোই ভাড়ার বিষয়ে কারো সঙ্গে কথা বলেন না। বলেন, ‘সবকিছুই আমিই দেখাশুনা করি’।

এদিকে ঘুসবাণিজ্যের অন্যতম মাধ্যম লাইসেন্সের জন্য মাঠ পরীক্ষার নামে কী হচ্ছে, তা দেখার জন্য ২৯ সেপ্টেম্বর দুপুর ১২টার নথুল্লাবাদ বিআরটিসি বাস কাউন্টারে উপস্থিত হন এ প্রতিবেদক। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে মাঠের পরীক্ষা শুরু হয়। সেখানে সরাসরি ৬১ জনকে অংশগ্রহণ করতে দেখা যায়। এদের মধ্যে তিনজনকে মাঠের পরীক্ষায় কৃতকার্য দেখানো হয়। এ সময় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট থাকার কথা থাকলেও ব্যস্ততার জন্য তিনি থাকতে পারেননি। কেবল ট্রাফিক ইন্সপেক্টর কেএম রহমান এবং বিআরটিএর ইন্সপেক্টর সৌরভ সাহা নিচ্ছিলেন মোটরসাইকেল লাইসেন্স-প্রত্যাশীদের পরীক্ষা। মোটরসাইকেলের মাঠের পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর চার চাকার যানবাহনের মাঠের পরীক্ষা শুরু হয় বেলা ৩টার দিকে। এ সময় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট (সহকারী কমিশনার) আব্দুল্লাহ হেল মাফি বিআরটিসি কাউন্টারের পরীক্ষার মাঠে প্রবেশ করেন। তবে হাতেগোনা ছয়-সাতজন লাইসেন্সপ্রত্যাশী মাঠের পরীক্ষায় অংশ নেন।

এ বিষয়ে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সহকারী কমিশনার আব্দুল্লাহ হেল মাফি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমার কাছে যেগুলো পাসের যোগ্য মনে হয়েছে, তাদের পাস করানো হয়েছে।’ তবে কত জন পাস করেছে, তা তিনি জানাতে পারেননি। একই সঙ্গে মোটরসাইকেলের পরীক্ষা চলাকালে তার না থাকার বিষয়ে বলেন, ব্যস্ত ছিলেন, তাই আসতে দেরি হয়েছে।

সৌরভ কুমার সাহার অনিয়ম-দুর্নীতি, ১০টি গাড়ি ও চারটি প্রাইভেট কার থাকার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি পত্রিকাটিকে বলেন, তার বাবার নামে একটি বাস আছে। এটি ফরিদপুর বাস মালিক সমিতির অধীনে চলাচল করছে। এছাড়া তার পিতার রেন্ট-এ কার ব্যবসা রয়েছে। তিনি যে প্রাইভেটকার ব্যবহার করেন, সেটি তার বাবার নামে। হাওলাদার পরিবহন তাদের নয় এবং এ পরিবহনে তার কোনো বাস নেই। এমনকি আশিক পরিবহনেও বাস থাকার কথা অস্বীকার করেন। এছাড়া তার নামে অন্য কোনো বাস বা প্রাইভেট কার থাকার কথা অস্বীকার করেন তিনি। আর আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুবান্ধবের নামে-বেনামে গাড়ি কেনা বা সম্পদ গড়ার বিষয়টিও অস্বীকার করেন তিনি।

বরিশালে ডেঙ্গু আক্রান্ত বৃদ্ধের মৃত্যু

বরিশালটাইমস রিপোর্ট

বরিশালটাইমস রিপোর্ট

১৮ অক্টোবর, ২০২৫ ১৫:৪১

প্রিন্ট এন্ড সেভ

বরিশালে ডেঙ্গু আক্রান্ত বৃদ্ধের মৃত্যু

বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে সুলতান খান (৬৫) নামে এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়াও গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আরও ১২৬ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। শনিবার (১৮ অক্টোবর) দুপুরে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. শ্যামল কৃষ্ণ মণ্ডল। মৃত সুলতান খান পটুয়াখালী জেলার দুমকী উপজেলার বাসিন্দা।

বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে বিভাগের বিভিন্ন হাসপাতালে ১২৬ জন ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বরগুনা হাসপাতালে ৫৪ জন, বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১৫ জন, বরিশাল জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে ৪ জন, পটুয়াখালীতে ২৯ জন, ভোলায় ৫ জন, পিরোজপুরে ১৭ জন ও ঝালকাঠিতে ২ জন। বর্তমানে বিভাগের বিভিন্ন হাসপাতালে ৪৪০ জন চিকিৎসাধীন রয়েছে।

স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত বিভাগের দুই মেডিকেল কলেজসহ বিভিন্ন হাসপাতালে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ১৫ হাজার ৮৯২ রোগী ভর্তি হয়েছেন। আর সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ১৫ হাজার ৪১৬ জন।

এছাড়া চলতি বছর গোটা বিভাগে ৩৬ জন ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যু হয়েছে। তাদের মধ্যে বরিশাল শের ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২১ জন, বরগুনায় ১৪ ও পটুয়াখালীকে ১ জন।

মেঘনায় অভিযানে আটক ১১ জেলের জেল-জরিমানা

বরিশালটাইমস রিপোর্ট

বরিশালটাইমস রিপোর্ট

১৮ অক্টোবর, ২০২৫ ১৩:০২

প্রিন্ট এন্ড সেভ

মেঘনায় অভিযানে আটক ১১ জেলের জেল-জরিমানা

বরিশালের হিজলার মেঘনা নদীতে যৌথ অভিযান চালিয়ে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ইলিশ শিকারের সময় ১১ জেলেকে আটক করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

শনিবার (১৮ অক্টোবর) হিজলার মেঘনা নদীতে কোস্ট গার্ড সদস্যদের সহযোগিতায় উপজেলা মৎস্য অধিদপ্তর এ অভিযান পরিচালনা করে। সিনিয়র উপজেলা মৎস্য অফিসার মোহাম্মদ আলম জানান, অভিযানে আটক ১১ জনের মধ্যে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. ইলিয়াস সিকদার ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে পাঁচজনকে আট দিন করে কারাদণ্ড দেন।

এছাড়া বাকিদের মধ্যে একজনকে ২০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড ও চারজনকে পাঁচ হাজার টাকা অর্থদণ্ড দেওয়া হয়। সেই সঙ্গে বয়স কম থাকায় এক কিশোরকে মুচলেকার মাধ্যমে অভিভাবকদের জিম্মায় ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

বরিশালের সেই ৩৪টি ঝুঁকিপূর্ণ ভবন ভাঙার কাজ শুরু

বরিশালটাইমস রিপোর্ট

বরিশালটাইমস রিপোর্ট

১৭ অক্টোবর, ২০২৫ ১৮:২২

প্রিন্ট এন্ড সেভ

বরিশালের সেই ৩৪টি ঝুঁকিপূর্ণ ভবন ভাঙার কাজ শুরু

বরিশাল শহরের ঝুঁকিপূর্ণ সেই ৩৪টি ভবন ভাঙার কাজ শুরু করেছে সিটি কর্পোরেশন। শুক্রবার সকালে শহরের সদর রোডের তিনতলা দুটি ঝুঁকিপূর্ণ ভবন ভাঙার মধ্যে দিয়ে আনুষ্ঠানিকতা সূচনা হয়। দীর্ঘ ১০ বছর পূর্বে এই ভবনসমূহকে ঝুঁকিপূর্ণ এবং এতে বসবাসরতদের প্রাণহানির শঙ্কা রয়েছে বলে সিটি প্রশাসন ঘোষণা করে। কিন্তু রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারের কারণে ভবনগুলো অপসারণ করা সম্ভব হচ্ছিল না। গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের আগেপরে এনিয়ে দৈনির রূপালী বাংলাদেশসহ একাধিক পত্র-পত্রিকায় লেখালেখিও হয়।

সূত্র জানায়, কীর্তনখোলার তীরের শহর বরিশালের ৫৮ বর্গকিলোমিটার এলাকায় ৩৫টি ভবনকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করে বিসিসি। ২০১৩ সালের জরিপে এসব ভবনকে বেহাল ও ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে ঘোষণা করে। এই ভবনের বেশিরভাগ তৎকালীন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের নিয়ন্ত্রণে থাকায় বেশ কয়েকবার ভাঙার উদ্যোগ নিয়েও ব্যর্থ হয় সিটি কর্পোরেশন। এবং ভবনগুলো যে আইনগতভাবে ভাঙতে না পারে তার জন্য আদালতে মামলাও করা হয়। পরবর্তীতে আইনি জটিলতা এড়াতে বিষয়টি নিয়ে সিটি কর্পোরেশন তৎপরতা দেখায়নি বা নিশ্চুপ হয়ে যায়।

জানা গেছে, সদর রোডসংলগ্ন বহুতল ভবন দুটি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেয়াই কাজী মফিজুল ইসলাম কামাল অবৈধভাকে দখল করে রেখেছিলেন। এই কাজী কামলা বরিশাল-১ আসনের সাবেক এমপি আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ শ্যালক। তিনি আওয়ামী লীগের শাসনামলে ক্ষমতার প্রভাব বিস্তার করে বরিশালে ব্যাপক সন্ত্রাস করেছেন। সদর রোডে ভবন দুটির নিচের দোকান দীর্ঘ ১০ বছরের বেশি সময় ধরে নিজে দখল করে রাখেন। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পরে তিনি একাধিক রাজনৈতিক মামলায় জড়িয়ে গ্রেপ্তার হয়ে দীর্ঘদিন কারাবন্দি থাকলেও জামিনে মুক্ত হয়ে আত্মগোপনে আছেন।

একটি ভবনের মালিক নজরুল ইসলাম রূপালী বাংলাদেশকে জানান, তাঁর চাচা উলফাত হাজি এবং শুককুর হাজি ১৯৬০ সালে একটি ভবন ও ৩০ বছর আগে আরেকটি ভবন সদর রোডে নির্মাণ করেন। ২০১৩ সালে একটি পাকা ভবনে ফাটল দেখা দেয় এবং পাশের ভবন ঘেঁষে হেলে পড়ে। এর পরিপ্রেক্ষিতে বরিশাল সিটি করপোরেশন ২০১৩ সালে ভবনটিকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করে। কিন্তু প্রভাবশালী ভাড়াটেরা জোর করে দখলে রাখায় ওই সময় ভাঙার ভবন ভাঙা সম্ভব হয়নি। আওয়ামী লীগ সরকার পরিবর্তনের পরে ভবন ভাঙার জন্য ৩ লাখ ৯০ হাজার টাকা সিটি করপোরেশনে জমা দেন নজরুল ইসলাম। তারপর ভবনটি শুক্রবার সকাল থেকে ভবনটি অপসারণে কাজ শুরু হয়।

বিষয়টি নিশ্চিত করেন বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসনিক কর্মকর্তা স্বপন কুমার দাস। এই কর্মকর্তা বলেন, ‘উলফাত এবং শাকুর ম্যানশন নামের ওই দুটি ভবন ইতিপূর্বে ভাঙার নোটিস দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ভাড়াটেরা আদালতে গেছেন। আমরা কোর্টের অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে রায় পেয়েছি। এর আগে ঝুঁকিপূর্ণ ভবন হিসেবে সেখানে নোটিস দিয়েছিলাম, কিন্তু তারপরও ভাড়াটেরা দখল ছাড়েননি। শুক্রবার সকালে তাদের চূড়ান্তভাবে চলে যাওয়ার নোটিস দিয়ে ভবন ভাঙা শুরু হয়। আশা করছি, সাত দিনের মধ্যে ভবন দুটি ভেঙে ফেলা সম্ভব।

বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের নির্বাহী কর্মকর্তা রেজাউল বারী জানান, নগরের কাউনিয়া এলাকার জানুকি সিংহ রোডের মতি লস্করের বাড়ি, পূর্ব বগুড়া রোড কাজি অফিসের পেছনে রবীন্দ্রনাথ সেনের ভবন, আগরপুর রোডে মহিলা কলেজসংলগ্ন মনু মিয়ার ভবন এবং সদর রোডসংলগ্ন ফজলুল হক অ্যাভিনিউর হোটেল বাহাদুর ভবনসহ ৩৪টি ভবনই পর্যায়ক্রমে ভেঙে ফেলা হবে। তবে এর মধ্যে কিছু অনুমোদনহীন এমন কিছু ভবনও রয়েছে।’

custom sidebar ads

Google AdSense
This is a demo ad. Your live ads will be displayed here once AdSense is properly configured.

জনপ্রিয়

Google AdSense
This is a demo ad. Your live ads will be displayed here once AdSense is properly configured.