https://joinnavy.navy.mil.bd/

বরিশাল

ওরে তুষার অকালেই চলে গেলি, ভুলি কি করে সেই অম্লান স্মৃতি?

শাকিব বিপ্লব

শাকিব বিপ্লব

০৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ ২১:১০

প্রিন্ট এন্ড সেভ

ওরে তুষার অকালেই চলে গেলি, ভুলি কি করে সেই অম্লান স্মৃতি?

প্রেম-বিচ্ছেদে থাকে বিরহ বা বিষাদের ছায়া। কিন্তু যে কোন মৃত্যুর সংবাদ ঘিরে ধরে সাদা কাপড়ে শোকের বেড়াজালে। যদিও এই ধরাধামে জন্মিলে মৃত্যু হয়- একথা অবধারিত সত্য। কিন্তু সব মৃত্যু একমাত্র নিকট স্বজন ব্যতিত অন্যদের মনকে নাড়া দেয় না। যেমন বরিশাল মিডিয়ায় অনেক দিন পর শোকে ধুমড়ে-মুচড়ে দিয়েছে যুব বয়সি সাংবাদিক আরিফিন তুষারের না ফেরার দেশে যাত্রার খবর। গত ০৮ সেপ্টেম্বর সোমবার রাত সাড়ে ১০ টায় বরিশাল সদর রোডস্থ হাবিব ভবনের নিজ অফিস কক্ষে বুকের ব্যথায় ঢলে পড়ার পর শেবাচিম হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসকরা নিশ্চিত করেন, যে সৃষ্টি করেছে সেই কর্তাই তাঁর হৃদপিণ্ড থামিয়ে দিয়েছে চিরতরে। কেনো বিধাতা এই অল্পবয়সি তরুণের জীবনের প্রাদপ্রদীপ নিভিয়ে দিয়ে পরপারে ডাক দিয়ে নিয়ে গেলেন তার রহস্য একমাত্র তিনিই যানেন।

কিন্তু আমরা সহকর্মী এবং তাঁর নিকট স্বজনরা জেনেছিলাম- ভেবেছিলাম এই যুবকের সংবাদপত্রের পথ-পক্রিমায় যাত্রা পথ অনেক দীর্ঘ হবে। একমাত্র সন্তান আরহাব ও স্ত্রী শানজিদাকে নিয়ে জীবন সংগ্রামের কঠিনতর দিন পার হয়ে সুদিন ছিল অনাগত। হয়েছিলও তাই। দেশের প্রথম সারির দৈনিক পত্রিকা কালবেলায় বরিশাল ব্যুরো চিফের দায়িত্ব পাওয়ার পর ছন্নছাড়া এই যুবকের জীবনের গতিপথ পাল্টে যায়, সেই সাথে নিজের ব্যক্তিত্ব প্রস্ফূটিত হয়েছিল। কিন্তু এই সুখ যে বেশিদিন সইবে না তা কে জেনেছিল? আমার যতুটুকু মনে পরে ২০০৮ সালের দিকে যখন আমি তৎসময়কার জনপ্রিয় এবং সাহসি পত্রিকা হিসেবে অল্প দিনে পাঠক মহলে আলোড়িত দৈনিক বাংলার বনে এক ঝাঁক তরুণের সমন্বয়ে আত্মপ্রকাশ করে, ঠিক তখন প্রায়ত সাংবাদিক দৈনিক ইত্তেফাকের ব্যুরো প্রধান লিটন বাশারের খালাতো ভাই হিসেবে এই তরুণ আমার কাছে আসতো এবং নানা আলাপচারিতায় নিজ জীবনের পরিকল্পনার নানাদিক তুলে ধরতো। কখনো কখনো ভাইয়া সম্মোধন করে বায়না ধরতো, সাংবাদিকতার আধুনিকায়নের ছোঁয়া কিভাবে পাওয়া যায়, সেই কৌশল জানার। সেই সাথে আমার লেখা ও সাহসের প্রশংসায় আমাকে এতটাই তুষ্ট করত যে, আমি ওকে নিজ ছোট ভাইয়ের মত দেখতে শুরু করি। নিজে নিজে কখন একান্তে ভাবি এই তরুণ হয়তো একদিন ভালো মিডিয়াকর্মী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত হবে।

জীবনে চলার পথে প্রত্যেক মানুষেরই ভুলত্রুটি থাকে, কেউই ফেরেস্তা নয়। ওর চলন-বলনে কিছু ভুল চোখে পড়ে, যা পরে নিজেই শুধরে নেয়। সাংবাদিকতার এই কঠিন জীবনে পোড়খাওয়া কিছু ঘটনাবলীর কিছু তিক্ত অভিজ্ঞতা থেকে। একটা সময় নিজ খালাতো ভাই লিটন বাশারের সাথে ওর দূরত্ব তৈরি হলেও পর্যয়ক্রমে তারা আবার দুইজনে এক মোহনায় মিলিত হয়। কিন্তু আঁচ করতে পারি ভাই লিটন বাশার বড়মাপের সাংবাদিক হলেও আরিফিন তুষারকে ভালো একটা যায়গায় পৌছে দিতে সহায়ক ভূমিকায় না রাখায় চাপা আফসোস বয়ে বেড়াতেন। ভাই বলেতো কথা, রক্তের বাঁধন কি ছিন্ন হয়? আরিফিন তুষারকে একটি জায়গা করে দিতে লিটন বাশার সম্পাদিত আঞ্চলিক দৈনিক দখিনের মুখ পত্রিকায় একটি পদে বসিয়ে ভালো রিপোর্ট করার তাগিদ দিতে শুরু করেন। দুরন্তপনায় অব্যস্ত এই যুবককে কি সামাল দেয়া যায়। ইচ্ছা আছে কিন্তু সারাদিন হৈ-হুল্লায় মেতে থাকায় ভালো রিপোর্টিংয়ে পিছিয়ে পরতো তাঁর নিজ পত্রিকার সহকর্মীদের থেকে। নিয়তির কি খেলা দুই ভাইয়ের সম্পর্ক যখন মধুময় হয়ে উঠে, তখনি লিটন বাশার হঠাৎ নিজ গ্রাম চরমোনাইয়ের আবাসভূমির বাঁশবাগানের নিচে ঠাঁই নেয় হৃদযন্ত্র বন্ধ হয়ে মৃত্যুর স্বাদ নিয়ে।

বরিশাল মিডিয়ার উজ্জ¦ল নক্ষত্র লিটন বাশারের মৃত্যুও ছিল এক বড় অঘটন অন্তত বরিশাল মিডিয়া জগতে। শেষমেশ দেখা গেল দুই ভাইয়ের মৃত্যুযাত্রা যেন একই পথের পথিক হয়ে দাঁড়ালো। লিটন বাশারও মৃত্যুকালে এক শিশু পুত্র সন্তান রেখে যান। মারা যান হৃদক্রিয়া বন্ধ হয়ে সেই শেবাচিমে। আরিফিন তুষারের মৃত্যুও ঘটলো একই রকম। রেখে গেলেন দেড় বছরের এক শিশু পুত্র। কিন্তু জীবন চলার বাঁকে ব্যতিক্রমতা এখানেই আরিফিন তুষারের জীবনে হঠাৎ পরিবর্তন ঘটলেও লেখালেখিতে বেশিমাত্রায় মনযোগ এবং প্রেসক্লাব নিয়ে সাংবাদিকতার রাজনীতিতে সক্রিয় হয়ে উঠায়। পরিচিত হয়েও উঠেছি বেশ অল্পদিনেই। অবশ্য এ ক্ষেত্রে বরিশাল প্রেসক্লাবের কয়েক দফা দায়িত্বে থাকা সাধারণ সম্পাদক ও দৈনিক মতবাদ পত্রিকার সম্পাদক এসএম জাকির হোসেন স্নেহ দিয়ে আগলে ধরে রাখায় দুজনের সম্পর্ক দুই ভাইয়ে রূপ নেওয়ায় লিটন বাশারের শূন্যতা কিছুটা পূরণ করে এই যুবকের যেন নতুন উত্থান ঘটেছিল।

২০২৪ সালের শেষের দিকে দৈনিক কালবেলায় আরিফিন তুষার যোগদানের পর বেশকিছু সংবাদ প্রকাশ করে আলোচনায় আসে, সেই সাথে প্রেসক্লাবের বিভিন্ন পদে বারবার নির্বাচিত হয়ে আলোচনার টেবিলে নিজের নামের জায়গা তৈরি করতে সক্ষম হয়। পাশাপাশি স্ত্রী শানজিদাকে নিয়ে সাংসারিক জীবন শুরু করলে এই দম্পত্তির ঘরে আলোকিত করে আসে পুত্র সন্তান আরহাব। এরপরই আরিফিন তুষার কিছুটা ব্যতিত্বময় ও কর্মজীবনের গুরুত্ব অনুধাবন করে আগামীর দিনগুলো সুখকর করে তোলার কঠিনতর এক লড়াইয়ে বেশ ভালোভাবেই এগিয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু বিধিবাম। সবকিছুই ওল্টো-পাল্ট হয়ে গেল গত ০৮ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা রাতে। যেন মেঘবিহীন আকাশ থেকে বজ্রপাতের মত সংবাদ ছড়িয়ে পরলো আরিফিন তুষার আর নেই। সঙ্গত কারণে এই আধুনিক যুগে মুহূর্তের মধ্যে এ খবর ভাইরাল হয়ে যায় স্যোশাল মিডিয়ায়। সেই সাথে শোকের সাগরে ভাসতে থাকে ‘শত্রু থেকে মিত্র পর্যন্ত’। সকলে ভেদাভেদ ভুলে গেল, চোখ যেন অশ্রুসজল হয়ে টপটপিয়ে পানি পড়ছিল। না বল্লেই নয় মৃত্যুকালে তাঁর সাথে থাকা যুগান্তরের বরিশাল ব্যুরোর স্টাফ রিপোর্টার অনিকেত মাসুদ যেন বাকরুদ্ধ হয়ে পাথরে রূপ নিয়েছিল। সময়ের প্রেক্ষাপটে আফসোস হচ্ছিল বা প্রতিধ্বনিত হতে শোনা যায় এক অকল্পনিয় শব্দ, হারে অকালে ঝরে গেল সদ্য ফুটান্ত গোলাপের পাপড়ির মত এই যুবক সাংবাদিক।

আরিফিন তুষারের ঘরে কান্নার রোল এতটাই উচ্চতর হয়ে উঠেছিল যে অনেকই নিজেকে সংবরণ করতে পারছিলেন না। আরিফিন তুষারের লাশ রাতেই শেবাচিম হাসপাতাল থেকে নগরীর কলেজ এভিনিউ ভাড়া বাসায় নিয়ে আসার পর তার সহকর্মীরা যে যেখানে ছিল ছুটে যান। তার শবদাহের চারপাশে দাঁড়িয়ে যেন স্মৃতি হাতরাছিল আরিফিন তুষারের সাথে ফেলে আসা সেই দিনগুলো সামনে চলে আসায়। কেউ কেউ যেন অপলোক সৃষ্টিতে তাঁর নিথর দেহের দিকে তাকিয়ে ভাবছিল সকাল বেলাওতো দেখা হল তুষারের সাথে (!)।

এই তুষার কি সেই তুষার? কিন্তু বাস্তবতা তো মানতেই হবে। সইতেই যে হবে শোক। কারণ এই নশ্বর পৃথীবিতে একবার কেউ আসলে পরপারে যাবার জন্য প্রস্তুত হতে হবে ধর্মনিবিশেষ সকলকেই। তুষারের এই অকাল মৃত্যু সেই বাস্তবতাকে অনেকেই মানতে পারছিল না। এরপর রাতভর যা হবার তাই হচ্ছিল। একদিকে কান্নার শব্দ, অন্যদিকে তুষারের শবদাহ কিভাবে নিজ গ্রাম মেহেন্দিগঞ্জের আন্দারমানিকে নিয়ে যাওয়া এবং কোন বাঁশ বাগানের নিচে সমাধিস্থ করে বিদায় জানানো হবে তার সব আয়োজন চলছিল।

গতকাল ৯ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার সকালে প্রথমে নগরের আগরপুর রোডস্থ প্রেসক্লাব চত্বরে তার শবদাহ নিয়ে আসার পর শ্রদ্ধাঞ্জলী জানানো শেষে অশ্বিনী কুমার হল সম্মুখে জানাজা নামাজে ঢল নামে সর্বস্তরের মানুষের। এরপর এই নগরকে বিদায় জানিয়ে নিথর তুষার গাড়ির ভিতরে পিছনের অংশে শায়িত আর সামনে তাঁর পিতা অর্থাৎ দাদার কোলে শিশু পুত্র আরহাব এবং শবদাহবাহী গাড়ির বহরে সাংবাদিক নেতা এসএম জাকির হোসেন ও কাজী আল মামুনের নেতৃত্বে অশ্রুসজল সহকর্মীরা ছুটে চলে জন্মভূমি মেহেন্দিগঞ্জের দিকে।

ঠিক সকাল ১১ টার দিকে এ বিদায় যে শেষ বিদায় তা কি দৃশ্যপট দেখে ভাবা যায়? তবুও শোকাতর মনকে সান্ত্বনা তো দিতেই হচ্ছে কোন না কোন যুক্তির ছলাকলে। দুপুরে মেহেন্দিগঞ্জের আন্ধারমানিক ইউনিয়নের নিজ গ্রামের পারিবারিক কবরস্থানে সমাধিস্থ করার পর নিথর আরিফিন তুষার মুখে কিছু না বললেও সাদা পোষকে আবৃত তার মুখবয় যেন বলছিল তোমরা আমাকে ভুলো না।

তেমাকে ভোলাতো যাবেই না, কারণ তুমি যে স্মৃতি রেখে গেছো তাতো অনন্তকাল বয়ে বেড়াতে হবে স্বজন-সহকর্মীদের। কিন্তু শোক আর বেদনা একাকিত্ব হয়ে হৃদয়ে যে ক্ষত তৈরি হয়েছে, সে ব্যথাও কম কাতরাতে হবে না, তা জেনেও আমাদের শোকাতুর মনকে শক্ত করে থাকতে হবে তোমার কাছে অর্থাৎ না ফেরার দেশে যাওয়ার আগমুহূর্ত পর্যন্ত। কায়েমনে প্রার্থনা করি পরপারে তুমি যেখানেই থাকো ভালো থেকো। সম্ভবত যেমনটি রয়েছে, চরমোনাইয়ের বাশ বাগানের নিচে শায়িত তোমারই অগ্রজ লিটন বাশার।

আমরা অন্তত সংবাদকর্মীরা তোমার স্মৃতি স্মরণ করে ভাববো তুমি হয়তো বা বাসায় আছো, নয়তো বা কিছুক্ষণ পরেই কোথা থেকে আগন্তকের ন্যায় হঠাৎ উপস্থিত হবে কোন খবরের তথ্য-উপাত্ত্ব নিয়ে। এই তো জীবন। এভাবেই উত্থান, এভাবেই বিদায় যা পৃথিবীর বাস্তবতা। এমন বাস্তবতা মেনেইতো তোমার ভাই লিটন বাশারে মৃত্যুর শোক আজও বয়ে বেড়াতে হচ্ছে সৃষ্টি কর্তার কাছে কাঙ্গাল বিশেষ করে সংবাদকর্মীরা। পৃথিবি থেকে তোমরা দুই ভাই এবং সদ্য প্রয়াত দৈনিক আজকের বার্তার সম্পাদক কাজী নাসির উদ্দিন বাবুল চলে চাওয়ায় বরিশাল মিডিয়ায় যে ক্ষতি হয়েছে তা পোষাবে কে? এমন প্রশ্নের উত্তরের অপেক্ষার মাঝে হতো বা আবার কোন শোকের পাথর বুকে চেপে ধরবে কখন কে জানে। বাস্তবিক অর্থে এমন সময়কাল সমগত থাকলেও তোমরা দু’ভাই আমাদের মাঝে অনন্তকাল স্মৃতি হয়ে বেঁচে থাকবে। এরূপ বরিশাল মিডিয়ায় অনেককে হারিয়ে অম্লান স্মৃতি আজও কাঁদায় আমাদের।’

লেখক: শাকিব বিপ্লব, সম্পাদক বরিশালটাইমস।

আরও পড়ুন:

আইনজীবীদের নিয়ে বেফাঁস মন্তব্য করে বিপাকে মনোনয়নবঞ্চিত বিএনপি নেতা!

হাসিবুল ইসলাম, বরিশাল

হাসিবুল ইসলাম, বরিশাল

০৭ নভেম্বর, ২০২৫ ১৯:১৬

প্রিন্ট এন্ড সেভ

আইনজীবীদের নিয়ে বেফাঁস মন্তব্য করে বিপাকে মনোনয়নবঞ্চিত বিএনপি নেতা!

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ও জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের নোটিস। চাপের মুখে সংবাদ সম্মেলন করে ক্ষমা প্রার্থনা।

আইনজীবীদের নিয়ে বেফাঁস মন্তব্য করে বিপাকে পড়েছেন বরিশাল বিএনপি নেতা সাবেক এমপি মেজবাহ উদ্দিন ফরহাদ। আসন্ন ত্রয়োদশ নির্বাচনে বরিশাল-৪ (মেহেন্দিগঞ্জ-হিজলা) আসনে বিএনপির মনোনয়নবঞ্চিত এই নেতা গত ৫ নভেম্বর পার্শ্ববর্তী বাবুগঞ্জে বিএনপির একাংশ আয়োজিত বৈঠকে বক্তব্য রাখতে গিয়ে আইনজীবীদের টাউট-বাটপার বলে অভিহিত করেন। এনিয়ে পত্র-পত্রিকায় নেতিবাচক লেখালেখিসহ বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মেজবাহ উদ্দিন ফরহাদের সেই বক্তব্যের ভিডিওটি সমাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে শুরু হয় বিতর্ক। আইনজীবীদের নিয়ে এমন বক্তব্য দেওয়ার ঘটনায় নিন্দা-প্রতিবাদ জানিয়ে ০৬ নভেম্বর তাকে চিঠি দিয়ে তাকে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান রাখে বাংলাদেশ বার কাউন্সিল, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ও জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম। এতে চাপের মুখে পড়ে গিয়ে বিএনপি নেতা মেজবাহ উদ্দিন ফরহাদ শুক্রবার (০৭ নভেম্বর) সকালে বরিশালে আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলন করে তার বক্তব্য প্রত্যাহার করাসহ আইনজীবী সমাজের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে পরিস্থিতি সামাল দেন।

বরিশাল-০৪ আসনের সাবেক এমপি মেজবাহ উদ্দিন ফরহাদ আসছে ত্রয়োদশ নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন। কিন্তু এই আসনে এবার বিএনপি স্বেচ্ছাসেবক দল কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ রাজিব আহসানকে ধানের শীষ নিয়ে নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত দিয়েছে। দলীয় মনোনয়নবঞ্চিত মেজবাহ উদ্দিন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমানের অনুসারী।

বিএনপি সূত্র জানিয়েছে, বরিশাল ৩ আসনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান এবং বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন ধানের শীষের মনোনয়নপ্রত্যাশী। এই আসনে বিএনপি এখন পর্যন্ত কাউকে মনোনীত না করলেও উভয় নেতার কর্মী-সমর্থকেরা পাল্টাপাল্টি সভা-সমাবেশ করে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়ের মাধ্যমে রাজনীতির মাঠ সরগরম করে রেখেছে। এমন বাস্তবতায় গত ৫ নভেম্বর বাবুগঞ্জের কেদারপুরে স্থানীয় বিএনপির একাংশ আয়োজিত সমাবেশে কেন্দ্রীয় নেতা সেলিমা রহমানের সাথে সেখানে অংশ নেন বরিশাল ৪ আসনে দলীয় মনোনয়নবঞ্চিত মেজবাহ উদ্দিন ফরহাদ।

প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় একাধিক সূত্রে জানা গেছে, বৈঠকে সেলিমা রহমানের আগে কর্মী-সমর্থকদের উদ্দেশে বক্তব্য রাখেন বরিশাল ৪ আসনের সাবেক এমপি মেজবাহ উদ্দিন ফরহাদ। বক্তব্যে রাখতে গিয়ে একপর্যায়ে তিনি বাবুগঞ্জ-মুলাদী আসনে বিএনপির অপর মনোনয়নপ্রত্যাশী সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীনকে ইঙ্গিত করে বলেন, আইনজীবীরা টাউট-বাটপার! আইনজীবীদের নিয়ে বিএনপি নেতার এই বেফাঁস মন্তব্যের ভিডিও দলীয় ঘরনার প্রতিপক্ষ অর্থাৎ জয়নুল আবেদীনের কর্মী-সমর্থকেরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে দেওয়ার পাশাপাশি কমেন্টে বিস্ফোরক মন্তব্য করে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে নিয়ে আসেন।

সূত্র জানিয়েছে, সাবেক এমপি ফরহাদের এই বেসামাল মন্তব্যের ভিডিওটিকে মোক্ষম হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে চাইছেন বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক জয়নুল আবেদীন। এক্ষেত্রে তিনি সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ও জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের নেতাদের দিয়ে মেজবাহ উদ্দিন ফরহাদকে চাপে ফেলে দিয়েছেন।

বৃহস্পতিবার সাবেক এমপি ফরহাদের ভিডিওটি ভাইরাল এবং তাকে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ও জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম নোটিস করে ক্ষমা প্রার্থনা করতে হুঁশিয়ারি দেওয়ার পরে তিনি মনস্তাত্বিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েন। এবং একদিন বাদে শুক্রবার বরিশাল প্রেসক্লাবে তিনি আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলন করে আইনজীবীদের নিয়ে বেফাঁস মন্তব্য করা ব্যাখ্যা খন্ডন করার পাশাপাশি ক্ষমা প্রার্থনা করেন। এসময় বিএনপি নেতাকে কিছুটা বিমর্ষ দেখা যায়।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে মেজবাহ উদ্দিন ফরহাদ বলেন, ‘গত ৫ নভেম্বর বাবুগঞ্জ উপজেলার কেদারপুর ইউনিয়নের একটি অনুষ্ঠানে তিনি অংশগ্রহণ করেন। এবং সেই অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে অনিচ্ছাকৃতভাবে শব্দচয়নে ভুলের কারণে তিনি আইনজীবী সম্প্রদায় সম্পর্কে একটি মন্তব্য করে ফেলেন, যা পরবর্তীতে তার কাছেও অনুতাপের কারণ হয়। এবং তিনি উপলব্ধি করেন, এটি তার পক্ষ থেকে একটি ভুল ছিল।

আইনজীবী পেশাকে গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে দেখেন জানিয়ে বিএনপি নেতা বলেন, বাংলাদেশের আইন-আদালত ব্যবস্থা ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় আইনজীবীদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্ববহ এবং মর্যাদাপূর্ণ। তার বক্তব্যে কারও মনে কষ্ট বা ভুল বোঝাবুঝি সৃষ্টি হয়ে থাকলে, তিনি সমস্ত আইনজীবী সমাজের কাছে আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশসহ ক্ষমা প্রার্থনা করেন। বরিশাল প্রেসক্লাবে আয়োজিত ওই সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি, আইনজীবী ও গণমাধ্যম প্রতিনিধিসহ বিভিন্নস্তরের ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।

মেজবাহ উদ্দিন ফরহাদের আনুষ্ঠানিক এই ক্ষমা প্রার্থনার ভিডিও শুক্রবার দুপুরের পর থেকে সেলিমা রহমানকে শত্রুভাবাপন্ন জয়নুল আবেদীনের কর্মী-সমর্থকেরা তাদের ফেসবুকে ছেড়ে দেওয়ার পাশাপাশি ট্রল করে যাচ্ছেন। এনিয়ে মেজবাহ উদ্দিন ফরহাদের কোনো বক্তব্য না পাওয়া গেলেও তার কর্মী-সমর্থকেরা বিষয়টিকে ইতিবাচক হিসেবে গ্রহণ করছেন না।

সাবেক এমপি মেজবাহর সমর্থক মেহেন্দিগঞ্জ-হিজলার বাসিন্দা একাধিক বিএনপি নেতা অভিযোগ করেন, জয়নুল আবেদীনের লোকজন বিষয়টি নিয়ে বেশি মাত্রায় বাড়াবাড়ি করছেন। তাদের ভাষায়, মেজবাহ উদ্দিন ফরহাদ বিএনপির একজন ত্যাগি নেতা, তিনি ওয়ান ইলেভেনের শাসনামলে নবম জাতীয় সংবাদ নির্বাচনে বরিশাল-৪ আসন থেকে ধানের শীষ নিয়ে ভোট করে জয়ী হয়েছিলেন। গত ১৬ বছর আওয়ামী লীগের শাসনামলে তিনি একাধিক মামলা, এমনকি হামলার শিকারও হয়েছিলেন।’

বরিশালে ডেঙ্গুর মৃত্যুর মিছিলে ৪২ জন

বরিশালটাইমস রিপোর্ট

বরিশালটাইমস রিপোর্ট

০৭ নভেম্বর, ২০২৫ ১৭:০৯

প্রিন্ট এন্ড সেভ

বরিশালে ডেঙ্গুর মৃত্যুর মিছিলে ৪২ জন

অক্টোবর মাসে প্রায় ৪ হাজার ডেঙ্গু রোগী বরিশালের সরকারি হাসপাতালে ভর্তির পরে, চলতি মাসের প্রথম ৭ দিনে আরও প্রায় ১ হাজার রোগী ভর্তি হয়েছেন। এ সময়ে মারা গেছেন আরও ১ জন। সরকারি হাসপাতালগুলোতে গত মাসে ৮ জনসহ এ পর্যন্ত ডেঙ্গুর মৃত্যুর মিছিলে যোগ হয়েছে ৪২ জনের নাম। শুক্রবারও দুপুর পর্যন্ত বরিশালের সরকারি হাসপাতালগুলোতে প্রায় সাড়ে ৪শ ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসাধীন ছিলেন। এ নিয়ে গত কয়েক মাসে শুধু সরকারি হাসপাতালেই ভর্তি হয়েছেন সাড়ে ১৮ হাজার ডেঙ্গু রোগী।

অথচ নভেম্বর শুরু হলেও বরিশালে ডেঙ্গু পরিস্থিতির উন্নতির পরিবর্তে আরও অবনতি ঘটছে। হাসপাতালের বাইরে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা কত, তা নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না কেউ। তবে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মতে, “মানুষ তার শরীর ও মনের অত্যন্ত দুর্বলতম ও নাজুক পর্যায় ছাড়া সরকারি হাসপাতালের কাছে যান না।” ফলে সরকারি হাসপাতালসমূহে ভর্তির অন্তত ১০ গুণ রোগী এ সময়ে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

অক্টোবরের মধ্যভাগ থেকেই বরিশাল অঞ্চলের সরকারি হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গু রোগীর ভিড় নতুন করে বাড়তে শুরু করে। অক্টোবর মাসজুড়ে ভর্তিকৃত ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যাটা প্রায় ৪ হাজারে পৌঁছে। সেপ্টেম্বর মাসেও ভর্তিকৃত রোগীর সংখ্যা প্রায় একই ছিল। কিন্তু নভেম্বরের প্রথম ৭ দিনের পরিসংখ্যানও পরিস্থিতির উন্নতির কোনো লক্ষণ দেখাচ্ছে না।

শুক্রবার (৭ নভেম্বর) দুপুরের পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় ৬৭ জন রোগীকে ঘরে ফেরত পাঠানোর পরেও হাসপাতালসমূহে ভর্তিকৃত রোগীর সংখ্যা ছিল ৪৩১ জন। এর মধ্যে বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালেই ৮০ জন ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসাধীন ছিলেন। বরিশালের জেনারেল হাসপাতালসহ জেলার অন্য হাসপাতালগুলোতেও আরও ৫৪ জন ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসাধীন ছিলেন।

ফলে চলতি মাসে বরিশাল অঞ্চলে শুধু সরকারি হাসপাতালেই ভর্তিকৃত ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যাটা বিগত মাসগুলোর তুলনায় বাড়ার ইঙ্গিত দিচ্ছে বলে মনে করছেন চিকিৎসকগণ। অথচ বিগত বছরগুলোতে আগস্টের পরে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যাটা কমতে দেখা গেছে।

গত সেপ্টেম্বর মাসে চলতি বছরের সর্বাধিক সংখ্যক, প্রায় ৪ হাজার ডেঙ্গু রোগী সরকারি হাসপাতালগুলোতে ভর্তি হলেও অক্টোবর শুরু থেকে পরিস্থিতি আরও নাজুক হতে শুরু করে। যা মধ্য অক্টোবরেই আরও নাজুক আকার ধারণ করে এবং এখনো অব্যাহত রয়েছে। সেপ্টেম্বর পেরিয়ে অক্টোবরেও অধিকসংখ্যক ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে আসার পরে নভেম্বরেও পরিস্থিতির কোনো পরিবর্তন লক্ষ্য করছেন না চিকিৎসকগণ।

তবে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মতে, সরকারি হাসপাতালের আরও কয়েক গুণ ডেঙ্গু রোগী বিভিন্ন চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র নিয়ে ঘরে বসেই চিকিৎসা গ্রহণ করে থাকেন। ফলে প্রকৃত ডেঙ্গু রোগীর পরিসংখ্যান জানার কোনো সুযোগ নেই।

স্বাস্থ্য বিভাগের দায়িত্বশীল মহল বারবারই বরিশাল সিটি করপোরেশন এবং বিভিন্ন পৌরসভাসহ সব স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোকে এডিস মশা নিধনের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখার তাগিদ দিলেও সেপ্টেম্বর পেরিয়ে অক্টোবরের পরে নভেম্বরেও বরিশাল অঞ্চলে ডেঙ্গু পরিস্থিতির অবনতি অব্যাহত রয়েছে।

বাকেরগঞ্জ পৌরসভায় অসুস্থ বেওয়ারিশ কুকুরের উপদ্রব, রোগ জীবাণু ছড়ানোর আশঙ্কা

বরিশালটাইমস রিপোর্ট

বরিশালটাইমস রিপোর্ট

০৭ নভেম্বর, ২০২৫ ১৪:৫৭

প্রিন্ট এন্ড সেভ

বাকেরগঞ্জ পৌরসভায় অসুস্থ বেওয়ারিশ কুকুরের উপদ্রব, রোগ জীবাণু ছড়ানোর আশঙ্কা

বাকেরগঞ্জ পৌরসভার বিভিন্ন অলিগলি হোটেল রেস্তোরার সামনে অসুস্থ রোগাক্রান্ত কুকুরের উপদ্রব বেড়েছে। যা জনজীবনে রোগ জীবাণু রোগ জীবাণু ছড়ানোর আশঙ্কা রয়েছে। এসব কুকুর দমনের পৌর কর্তৃপক্ষের নেই কোন তৎপরতা।

বাকেরগঞ্জ পৌরসভার বন্দর, বাস স্ট্যান্ড, চৌমাথা, কালিগঞ্জ বাজার, বোয়ালিয়া এলাকায় এসব অসুস্থ কুকুরের আনাগোনা চোখে পড়ার মত। বিশেষ করে রেস্টুরেন্ট এবং খাবার হোটেলের সামনে এদের বিচারণ লক্ষ্য করা যায়।

অসুস্থ ও রোগাক্রান্ত এসব কুকুরের মাধ্যমে জনজীবনে রোগ ছড়ানো সহ স্বাস্থ্যগত ঝুঁকির আশঙ্কা রয়েছে, কারণ এদের সংস্পর্শ বা কামড়ে জলাতঙ্কসহ বিভিন্ন ঘাতক ব্যধিতে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। রাস্তাঘাটে দল বেঁধে এসব কুকুর চলাফেরা করার ফলে মানুষের ব্যবহার যোগ্য কোন জিনিসে অনায়াসে সংস্পর্শ হতে পারে। ফলে সংক্রমিত হতে পারে রোগ জীবাণু।

বর্তমানে বাকেরগঞ্জ পৌরসভার বাসস্ট্যান্ড এলাকায় বেশ কয়েকটি অসুস্থ কুকুর লক্ষ্য করা গেছে, যাদের শরীরে বিভিন্ন অংশে আঘাতের স্পটে ঘায়ের সৃষ্টি হয়েছে, যার বিশ্রী গন্ধে হাঁটাচলা দুর্বিষহ হয়ে পড়েছে। তাছাড়া এসব অসুস্থ কুকুর হোটেল রেস্তোরাঁ র সামনে অবস্থান করে খাবারের পরিবেশকে মানহীন করে তুলছে।

বাকেরগঞ্জ পৌর এলাকার সুশীল সমাজের দাবি জনগণের স্বাস্থ্যগত সমস্যা বিবেচনা করে বেওয়ারিশ কুকুর দমনে পৌর কর্তৃপক্ষের এগিয়ে আসা।

এসব রোগাক্রান্ত কুকুরের শরীরের বিভিন্ন অংশে পচন ধরে ঘায়ের সৃষ্টি হয়েছে যার দুর্গন্ধে পরিবেশ ভারী হয়ে যাচ্ছে। গন্ধে তাদের পাশ দিয়ে হেটে যাওয়া দুষ্কর। এসব কুকুর দমনে পৌর কর্তৃপক্ষের নেই কোন তৎপরতা।

custom sidebar ads

Google AdSense
This is a demo ad. Your live ads will be displayed here once AdSense is properly configured.

জনপ্রিয়

Google AdSense
This is a demo ad. Your live ads will be displayed here once AdSense is properly configured.