
Google AdSense
This is a demo ad. Your live ads will be displayed here once AdSense is properly configured.
Google AdSense
This is a demo ad. Your live ads will be displayed here once AdSense is properly configured.

১৬ জুন, ২০২৫ ১৭:৫২
দক্ষিণাঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী বরিশালের গৌরনদী পৌর এলাকার টরকী বন্দরের এক ব্যবসায়ীর কাছে দুই লাখ টাকা চাঁদা দাবির অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনার প্রতিবাদে সোমবার (১৬ জুন) দুপুরে বন্দরের সহস্রাধিক ব্যবসায়ীক প্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখে ব্যবসায়ীরা ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের টরকী বন্দর এলাকা অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন। খবর পেয়ে থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারের আশ্বাস দেওয়ার পর মহাসড়ক অবরোধ প্রত্যাহার করা হয়।
ওই বন্দরের চাল ব্যবসায়ী কালাচাঁন মন্ডল অভিযোগ করে বলেন, টরকী বন্দরের বাসিন্দা ও সরকারি গৌরনদী কলেজ ছাত্র সংসদের সাবেক জিএস সিকদার শফিকুর রহমান রেজাউল গত কয়েকদিন থেকে তার কাছে দুই লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে।
সোমবার সকাল সাড়ে দশটার দিকে পূনরায় রেজাউল তার দুই সহযোগীকে নিয়ে তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে এসে দাবিকৃত চাঁদার টাকা চায়। এসময় চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে তাকে (কালাচাঁন) হত্যার হুমকি দেয়।
কালাচাঁন মন্ডল আরও জানান, বিষয়টি তাৎক্ষনিক বন্দরের ব্যবসায়ীদের জানানো হয়। পরবর্তীতে সব ব্যবসায়ীরা একজোট হয়ে তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখে টরকী বন্দর বণিক সমিতির কার্যালয়ের সামনে জড়ো হয়। পরবর্তীতে বেলা সাড়ে বারোটার দিকে চাঁদাবাজকে গ্রেপ্তারের দাবিতে ব্যবসায়ীরা বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। বিক্ষোভ মিছিলটি টরকী বাসষ্ট্যান্ডে এসে মহাসড়ক অবরোধ করে। প্রায় আধাঘণ্টাব্যাপী মহাসড়ক অবরোধের ফলে উভয়পাশে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়।
খবর পেয়ে গৌরনদী মডেল থানার ওসি মো. ইউনুস মিয়া ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে অভিযুক্ত রেজাউল সিকদারকে গ্রেপ্তারের আশ্বাস দেওয়ার পর অবরোধ তুলে নেওয়া হয়।
টরকী বন্দরের একাধিক ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেন, টরকী বন্দরে দীর্ঘদিন থেকে একটি অসাধু চক্র ব্যবসায়ীদের নানাভাবে হুমকি দিয়ে চাঁদা দাবি করে আসছে। ব্যবসায়ীরা অবিলম্বে এ ধরনের কর্মকান্ড বন্ধে প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
সরেজমিনে অভিযুক্ত সিকদার শফিকুর রহমান রেজাউলের বাসার সামনে গিয়ে দেখা গেছে, নতুন বাংলাদেশ পার্টি (এনবিপি)'র গৌরনদী উপজেলা শাখার প্রধান কার্যালয়ের একটি ব্যানার ঝুলানো রয়েছে।
চাঁদা দাবির অভিযোগের ব্যাপারে অভিযুক্ত রেজাউল সিকদার সাংবাদিকদের জানান, জমিজমা সংক্রান্ত একটি বিষয় নিয়ে তার ওপর মিথ্যে অপবাদ দেওয়া হয়েছে। চাঁদা দাবির কোন ঘটনা ঘটেনি।
গৌরনদী মডেল থানার ওসি মো. ইউনুস মিয়া বলেন, চাঁদা দাবি ও প্রাণনাশের হুমকির ঘটনায় ব্যবসায়ী কালাচাঁন মন্ডলকে থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। অভিযোগ পেলে পুরো ঘটনার তদন্ত করে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
দক্ষিণাঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী বরিশালের গৌরনদী পৌর এলাকার টরকী বন্দরের এক ব্যবসায়ীর কাছে দুই লাখ টাকা চাঁদা দাবির অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনার প্রতিবাদে সোমবার (১৬ জুন) দুপুরে বন্দরের সহস্রাধিক ব্যবসায়ীক প্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখে ব্যবসায়ীরা ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের টরকী বন্দর এলাকা অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন। খবর পেয়ে থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারের আশ্বাস দেওয়ার পর মহাসড়ক অবরোধ প্রত্যাহার করা হয়।
ওই বন্দরের চাল ব্যবসায়ী কালাচাঁন মন্ডল অভিযোগ করে বলেন, টরকী বন্দরের বাসিন্দা ও সরকারি গৌরনদী কলেজ ছাত্র সংসদের সাবেক জিএস সিকদার শফিকুর রহমান রেজাউল গত কয়েকদিন থেকে তার কাছে দুই লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে।
সোমবার সকাল সাড়ে দশটার দিকে পূনরায় রেজাউল তার দুই সহযোগীকে নিয়ে তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে এসে দাবিকৃত চাঁদার টাকা চায়। এসময় চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে তাকে (কালাচাঁন) হত্যার হুমকি দেয়।
কালাচাঁন মন্ডল আরও জানান, বিষয়টি তাৎক্ষনিক বন্দরের ব্যবসায়ীদের জানানো হয়। পরবর্তীতে সব ব্যবসায়ীরা একজোট হয়ে তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখে টরকী বন্দর বণিক সমিতির কার্যালয়ের সামনে জড়ো হয়। পরবর্তীতে বেলা সাড়ে বারোটার দিকে চাঁদাবাজকে গ্রেপ্তারের দাবিতে ব্যবসায়ীরা বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। বিক্ষোভ মিছিলটি টরকী বাসষ্ট্যান্ডে এসে মহাসড়ক অবরোধ করে। প্রায় আধাঘণ্টাব্যাপী মহাসড়ক অবরোধের ফলে উভয়পাশে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়।
খবর পেয়ে গৌরনদী মডেল থানার ওসি মো. ইউনুস মিয়া ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে অভিযুক্ত রেজাউল সিকদারকে গ্রেপ্তারের আশ্বাস দেওয়ার পর অবরোধ তুলে নেওয়া হয়।
টরকী বন্দরের একাধিক ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেন, টরকী বন্দরে দীর্ঘদিন থেকে একটি অসাধু চক্র ব্যবসায়ীদের নানাভাবে হুমকি দিয়ে চাঁদা দাবি করে আসছে। ব্যবসায়ীরা অবিলম্বে এ ধরনের কর্মকান্ড বন্ধে প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
সরেজমিনে অভিযুক্ত সিকদার শফিকুর রহমান রেজাউলের বাসার সামনে গিয়ে দেখা গেছে, নতুন বাংলাদেশ পার্টি (এনবিপি)'র গৌরনদী উপজেলা শাখার প্রধান কার্যালয়ের একটি ব্যানার ঝুলানো রয়েছে।
চাঁদা দাবির অভিযোগের ব্যাপারে অভিযুক্ত রেজাউল সিকদার সাংবাদিকদের জানান, জমিজমা সংক্রান্ত একটি বিষয় নিয়ে তার ওপর মিথ্যে অপবাদ দেওয়া হয়েছে। চাঁদা দাবির কোন ঘটনা ঘটেনি।
গৌরনদী মডেল থানার ওসি মো. ইউনুস মিয়া বলেন, চাঁদা দাবি ও প্রাণনাশের হুমকির ঘটনায় ব্যবসায়ী কালাচাঁন মন্ডলকে থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। অভিযোগ পেলে পুরো ঘটনার তদন্ত করে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ০৪:১৩

১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ২১:২৫

১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১৩:১৭
বরিশালে নিউমোনিয়াসহ ঠান্ডাজনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে নানা বয়সী মানুষ। শিশু ওয়ার্ডে রোগীর চাপ সবচেয়ে বেশি। দেখা দিয়েছে শয্যা সংকট। এক বেডে তিন থেকে চারজনকে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে বেশিরভাগ শিশুই নিউমোনিয়া, জ্বর, ঠান্ডা ও শ্বাসকষ্টজনিত রোগে আক্রান্ত। কয়েক সপ্তাহ ধরে প্রতিনিয়তই বাড়ছে রোগীর সংখ্যা। স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় অন্তত তিনগুণ।
মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলার আরজু বেগম নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত ছেলেকে ভর্তি করেছেন শের ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। কোনোমতে একটি বেড পেলেও সেখানে রয়েছে আরও দুই রোগী। একই অবস্থা ওয়ার্ডের প্রতিটি বেডের। এতে ভোগান্তিতে রোগীরা।
রোগীর স্বজনরা জানান, তিনজন রোগী এক বেডে। রোগীদের নিয়ে ভোগান্তিতে আছেন তারা। ঠান্ডাজনিত রোগের সংক্রমণ থেকে বাঁচতে বাড়তি সতর্কতার পরামর্শ চিকিৎসকদের।
বরিশাল শের ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল আবাসিক চিকিৎসক ডা. মো. নুরুল আলম বলেন, ‘বাসায় বাচ্চার মা-বাবাকে সচেতন হতে হবে। এদের গরম রাখতে হবে। ধুলাবালি অ্যাভোয়েড করতে হবে। পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে। গরম পানি খাওয়ানো যায়, গরম পানি দিয়ে গোছল করানো যায়। এভাবে বাসাতে থেকেই চিকিৎসা দেয়া সম্ভব।’
বাড়তি রোগীর চাপ সামাল দিতে কিছুটা হিমশিম অবস্থা হলেও চিকিৎসা সেবায় কোনো কমতি নেই বলে জানিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল উপ-পরিচালক এ কে এম নজমুল আহসান বলেন, ‘এ ধরনের রোগী হাসপাতালে এত বেশি আসে যে আমরা রোগীদের সেবা দেবো, এতে আমাদের সংকটও আছে। তবে এর মধ্যেই আমরা সবাইকে চিকিৎসা দিচ্ছি। যেগুলো একটু কিট্রিক্যাল তাদের স্পেশাল কেয়ার নিচ্ছি।’
শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে ৪১টি শয্যার বিপরীতে প্রতিদিন ভর্তি থাকছে শতাধিক শিশু। বেশির ভাগই শিশু এবং শীতজনিত রোগে আক্রান্ত। বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিচ্ছে প্রায় পাঁচ শতাধিক শিশু।
‘সে এক বিষম জানকবুল জনযুদ্ধ/ ওরা প্রাণপণ যুদ্ধ করেছিল/ ওরা কিন্তু বিজয় দেখে যেতে পারেনি!/...যারা বিজয় দেখে যায়নি/ যাদের জীবন বিজয় বলে কিছু আসেনি/ যারা এ বাংলার জন্য যুদ্ধ করেছিল/ জয় বাংলা বলে/ তাদের এসো আমরা স্মরণ করি/ এই বিজয় দিবসে।’
সেই ১৭৫৭ সালে পলাশীর আম্রকাননে স্বাধীনতার যে সূর্য অস্তমিত হয়েছিল, সেটির উদয় ঘটে একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বরে। বহু শতাব্দীর স্বপ্ন-স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের মাধ্যমে। বাঙালির আঘাত খেয়েছে বারবার, কিন্তু কখনো আহত পাখির মতো আর্তনাদ করেনি। ভেঙে পড়েনি ব্যর্থতার ক্রন্দনে। সমস্ত আঘাত সে বুক পেতে সহ্য করেছে. সর্বাঙ্গ রুধির মেখে অবিচারের বিরুদ্ধে মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে। অবর্ণনীয় দুর্যোগে ল-ভ- হওয়া বাংলাদেশের বঞ্চিত ও শোষিত মানুষ রুখে দাঁড়ায় সর্বশক্তি দিয়ে। আত্মবিস্মৃত বাঙালি আত্মপরিচয় অনুসন্ধানে উৎসর্গ করে নিজ ও স্বজনকে। ছিনিয়ে আনে বিজয়, লাল-সবুজ পতাকা সংবলিত স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ।
রক্তনদী পেরিয়ে আসা আনন্দ-বেদনায় মিশ্র মহান বিজয় দিবস আজ। বাঙালি জাতির হাজার বছরের শৌর্যবীর্য এবং বীরত্বের এক অবিস্মরণীয় দিবস। বিজয়ের গৌরবের বাঁধভাঙা আনন্দের দিন। একই সঙ্গে লাখো স্বজন হারানোর শোকে ব্যথাতুর-বিহ্বল হওয়ারও দিন। তীব্র শোষণের কুহেলী জাল ভেদ করে একাত্তরের এই দিনটিতে প্রভাতী সূর্যের আলোয় ঝিকিমিকিয়ে উঠেছিল বাংলার শিশির ভেজা মাটি, অবসান হয়েছিল পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর সাড়ে তেইশ বছরের নির্বিচার শোষণ, বঞ্চনা আর নির্যাতনের কালো অধ্যায়।
নয় মাসের জঠর-যন্ত্রণা শেষে এদিন জন্ম নেয় একটি নতুন দেশ স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ। ঝড়ের ভেতরে বিকশিত অটল বৃক্ষের জীবন্ত প্রতীক স্বাধীনতা নামের অগ্নিস্ফুলিঙ্গ আজও প্রচ- ঝাঁকি দেয় রক্তে, শাণিত করে চেতনা। ঝড়ের ভেতরে বিকশিত অটল বৃক্ষের জীবন্ত প্রতীক স্বাধীনতা নামের অগ্নিস্ফুলিঙ্গ আজও প্রচ- ঝাঁকি দেয় রক্তে, শাণিত করে চেতনা।
পূর্বাচলে আজ উদিত যে-সূর্য, প্রতিদিনের হয়েও সে প্রতিদিনের নয়; তার রক্তিমতায় তিরিশ লাখ শহীদের রক্ত আমাদের মনে পড়বে; আকাশ যে-কোমলতায় আজ উদ্ভাসিত, একাত্তরের সম্ভ্রমহারা দশ লাখ মা-বোন-জায়ার ক্রন্দনধোয়া সে-উদ্ভাস। দেন-দরবার নয়, কারও দয়ার দানে নয়, সাগর-সমান রক্তের দামে বাংলাদেশ অর্জন করেছে স্বাধীনতা, রক্ত-সাগর পেরিয়ে বাঙালি জাতি পৌঁছেছে তার বিজয়ের সোনালি তোরণে। বিজয়ের চুয়ান্ন বছর পূর্তিতে তোমাকে অভিবাদন, বাংলাদেশ।
৫৫ হাজার বর্গমাইলের এই সবুজ দেশে ৫৪ বছর আগে আজকের এই দিনে উদয় হয়েছিল হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ সূর্য। সেদিনের সেই সূর্যের আলোয় ছিল নতুন দিনের স্বপ্ন, যে স্বপ্ন অকাতরে প্রাণ দিয়েছিল এ দেশের ৩০ লাখ মানুষ। ৫৪ বছর পরও সেই স্বপ্ন বাস্তবে রূপ পায়নি, শেষ হয়নি মুক্তিকামী মানুষের সংগ্রাম। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর কুয়াশায় জড়ানো হাল্কা শীতের বিকেলে রমনার রেসকোর্স ময়দানে দাম্ভিক পাকিস্তানি সেনারা যে অস্ত্র দিয়ে নির্বিচারে গুলি চালিয়েছে বাঙালির বুকে, হাতের সেই অস্ত্র পায়ের কাছে নামিয়ে রেখে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে ছিল মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনীর নেতাদের সামনে।
১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর ছিল বৃহস্পতিবার। এদিনের সকালে জাতিসংঘ শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনের কর্মকর্তা জন আর কেলি পৌঁছান সেনানিবাসের কমান্ড বাঙ্কারে। সেখানে নিয়াজী নেই, ফরমান আলীকে পাওয়া গেল বিবর্ণ ও বিধ্বস্ত অবস্থায়। নিচু কণ্ঠে ফরমান আলী জানান, আত্মসমর্পণ সংক্রান্ত ভারতীয় বাহিনীর প্রস্তাব তারা মেনে নিয়েছেন। কিন্তু তাদের যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় ভারতে সেই সংবাদ পাঠাতে পারছেন না। কেলি প্রস্তাব দিলেন, জাতিসংঘের বেতার সংকেত ব্যবহার করে তিনি বার্তা পৌঁছে দিতে পারেন।
আত্মসমর্পণের জন্য বেঁধে দেওয়া সময় সকাল সাড়ে নয়টা থেকে আরও ছয় ঘণ্টা বাড়ানো ছাড়া ভারতীয় বাহিনীর সব প্রস্তাব মেনে নিয়ে আত্মসমর্পণের বার্তা পৌঁছানো হয় জাতিসংঘের বেতার সংকেত ব্যবহার করে। ভারতে তখন সকাল নয়টা ২০ মিনিট। কলকাতার ৮ নম্বর থিয়েটার রোডের (বর্তমান শেক্সপিয়ার সরণি) একটি দোতালা বাড়ি। বাংলাদেশ সরকারের প্রথম সচিবালয় আর প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর সকাল। বরাবরের মতো সেদিনও প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের কক্ষের দরজা একটু খোলা। উদ্বিগ্ন প্রধানমন্ত্রী অভ্যাসবশে ডান হাতের আঙ্গুল কামড়াচ্ছেন।
আনুমানিক সকাল ১০টায় তাজউদ্দীন আহমদের ফোনটি বেজে উঠল। ওই ফোনে গুরুত্বপূর্ণ কেউ ছাড়া ফোন করতে পারে না। কী কথা হলো বোঝা গেল না। কিন্তু ফোন রেখে, চোখেমুখে সব পাওয়ার আনন্দ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী জানালেনÑ ‘সবাইকে জানিয়ে দাও, আজ আমরা স্বাধীন। বিকেল চারটায় আত্মসমর্পণ।’ প্রধানমন্ত্রী নিজেই অবশ্য খবরটি সবাইকে শোনালেন। আর বললেন, কাজের প্রথম পর্যায় শেষ হলো কেবল। এবার দ্বিতীয় পর্যায় দেশ গড়ার কাজ এগিয়ে আসতে সবাইকে।
এদিকে ঢাকায় পাকা খবর এসে পৌঁছেছে কিছুক্ষণ আগে। আত্মসমর্পণ হবে বিকেল সাড়ে চারটায়। ঢাকাবাসী কী করবে আর কী করবে না বুঝে উঠতে পারছে না। সকাল ১০টা ৪০ মিনিটে মিত্রবাহিনী ঢাকায় প্রবেশ করল। এর আগেই মিরপুর ব্রিজ দিয়ে ঢাকায় ঢুকে পড়েছে কাদের সিদ্দিকীর বাহিনী। পৌষের এক পড়ন্ত বিকেলে ঢাকা রেসকোর্স ময়দান (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) প্রস্তুত হলো ঐতিহাসিক এক বিজয়ের মুহূর্তের জন্য। ঠিক যেখান থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একাত্তরের সাতই মার্চ বজ্রকণ্ঠে স্বাধীনতার ডাক দিয়েছিলেন।
বেলা একটা নাগাদ কলকাতা থেকে ঢাকা এসে পৌঁছান ইস্টার্ন কমান্ডের যৌথ বাহিনীর প্রধান জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরা, চিফ অব স্টাফ মেজর জেনারেল জ্যাকব, মুক্তিবাহিনীর উপ-অধিনায়ক গ্রুপ ক্যাপ্টেন এ কে খোন্দকার (সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী)। দুপুর একটার পর জেনারেল হেড কোয়ার্টারে বসে আত্মসমর্পণের দলিল তৈরির বৈঠক হয়। এক পক্ষে নিয়াজী, রাও ফরমান আলী ও জামশেদ। অপর পক্ষে জ্যাকব, নাগরা ও কাদের সিদ্দিকী।
সিদ্ধান্ত হয়, দলিলের স্বাক্ষর করবেন বিজয়ী বাহিনীর পক্ষে ভারতের ইস্টার্ন কমান্ড ও বাংলাদেশ মুক্তিবাহিনীর জয়েন্ট কমান্ডিং ইন চিফ লে. জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরা এবং পরাজিত বাহিনীর পক্ষে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডার লে. জেনারেল এ এ কে নিয়াজি। ঘন্টা খানেকের মধ্যেই জেনারেল অরোরা আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে যোগদানের জন্য বিমান ও নৌবাহিনীর চিফ অব স্টাফসহ কলকাতা থেকে ঢাকায় পৌঁছান। নিয়াজী অভ্যর্থনা জানান যৌথ বাহিনীর কমান্ডারকে। এরপর আসে সেই মাহেদ্রক্ষণ। পরাজিত পাকিস্তান সেনাবাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডার লে. জেনারেল এ এ কে নিয়াজি রেসকোর্স ময়দানে এলেন। সামরিক বিধি অনুসারে বিজয়ী ও বিজিত সৈনিকরা শেষবারের মত জেনারেল নিয়াজীকে গার্ড অব অনার জানায়।
বিকেল চারটায় নিয়াজী ও অরোরা এগিয়ে গেলেন ময়দানে রাখা একটি টেবিলের দিকে। জেনারেল অরোরা বসলেন টেবিলের ডান দিকের চেয়ারে। বাঁ পাশে বসলেন জেনারেল নিয়াজী। দলিল আগে থেকেই তৈরি ছিল। জেনারেল অরোরা স্বাক্ষর করার জন্য দলিল এগিয়ে দেন নিয়াজীর দিকে। তখন বিকেল ৪টা ৩১ মিনিট। অবনত মস্তকে জেনারেল নিয়াজি দলিলে স্বাক্ষর করে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকার করে নিলেন স্বাধীন সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশকে। মুজিবনগর সরকারের পক্ষে এ সময় উপস্থিত ছিলেন গ্রুপ ক্যাপ্টেন এ কে খন্দকার।
দীর্ঘ ৯ মাসের দুঃস্বপ্নের অবসান ঘটিয়ে বাঙালি জাতির জীবনে এলো নতুন প্রভাত। এলো হাজার বছরের কাক্সিক্ষত স্বাধীনতা। পাক হানাদারদের আত্মসমর্পণের মাধ্যমে বাঙালি জাতি অর্জন করে তাদের সর্বশ্রেষ্ঠ প্রাপ্তি, লাল-সবুজের অহঙ্কৃত পতাকা, বিশ্ব মানচিত্রে স্বাধীন সার্বভৌম জাতি হিসেবে নিজেদের গর্বিত পরিচয়। বিজয়ের মুক্তির নিশান ওড়ে বাংলার সর্বত্র। রক্ত লাল পতাকায় সিঞ্চিত হয় বাঙালির চেতনা।
রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর ভিন্ন প্রেক্ষাপটে উদ্যাপিত হতে যাচ্ছে এবারের বিজয় দিবস। যথাযোগ্য মর্যাদায় রাষ্ট্রীয়ভাবে দিবসটি উদ্যাপনে দেশের সাধারণ মানুষকে সম্পৃক্ত করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। সেই লক্ষ্যে নানাবিধ কর্মসূচিও হাতে নিয়েছে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়। যথাযোগ্য মর্যাদায় মহান বিজয় দিবস উদ্যাপনে এবার জাতীয় পর্যায়ে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। দেশের সব জেলা ও উপজেলায় দিনব্যাপী চারু, কারু ও স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত শিল্প পণ্যের প্রদর্শনীসহ হবে বিজয়মেলা।
আজ মঙ্গলবার সূর্যোদয়ের সময় ঢাকায় ৩১ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে দিবসটি শুরু হবে। সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। এরপর মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার নেতৃত্বে উপস্থিত বীরশ্রেষ্ঠ পরিবার, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও বীর মুক্তিযোদ্ধাগণ পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। বাংলাদেশে অবস্থিত বিদেশি কূটনৈতিকরা এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনসহ সর্বস্তরের জনগণ পুষ্পস্তবক অর্পণ করে মহান মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবেন।
মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে আজ সরকারি ছুটির দিন। সব সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি ভবনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে। গুরুত্বপূর্ণ ভবন ও স্থাপনাগুলো আলোকসজ্জায় সজ্জিত করা হবে। ঢাকা ও দেশের বিভিন্ন শহরের প্রধান সড়ক ও স্থাপনাগুলো জাতীয় পতাকা ও রঙিন নিশানে সাজানো হবে।
দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টা পৃথক বাণী দিয়েছেন। দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে সংবাদপত্রগুলো বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করেছে। ইলেকট্রনিক মিডিয়াগুলো মাসব্যাপী মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক বিভিন্ন অনুষ্ঠানমালা প্রচার করছে। দিবসটি উপলক্ষে সকল সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি ভবন এবং বিদেশে বাংলাদেশ দূতাবাস ও মিশনসমূহে জাতীয় পতাকা উত্তোলন এবং গুরুত্বপূর্ণ ভবন ও স্থাপনাসমূহ আলোকসজ্জিত করা হবে। ঢাকা ও দেশের বিভিন্ন শহরের প্রধান সড়ক ও সড়কদ্বীপসমূহ জাতীয় পতাকাসহ বিভিন্ন ব্যানার ফেস্টুন ও রঙিন নিশান দ্বারা সজ্জিত করা হয়েছে।
‘সে এক বিষম জানকবুল জনযুদ্ধ/ ওরা প্রাণপণ যুদ্ধ করেছিল/ ওরা কিন্তু বিজয় দেখে যেতে পারেনি!/...যারা বিজয় দেখে যায়নি/ যাদের জীবন বিজয় বলে কিছু আসেনি/ যারা এ বাংলার জন্য যুদ্ধ করেছিল/ জয় বাংলা বলে/ তাদের এসো আমরা স্মরণ করি/ এই বিজয় দিবসে।’
সেই ১৭৫৭ সালে পলাশীর আম্রকাননে স্বাধীনতার যে সূর্য অস্তমিত হয়েছিল, সেটির উদয় ঘটে একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বরে। বহু শতাব্দীর স্বপ্ন-স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের মাধ্যমে। বাঙালির আঘাত খেয়েছে বারবার, কিন্তু কখনো আহত পাখির মতো আর্তনাদ করেনি। ভেঙে পড়েনি ব্যর্থতার ক্রন্দনে। সমস্ত আঘাত সে বুক পেতে সহ্য করেছে. সর্বাঙ্গ রুধির মেখে অবিচারের বিরুদ্ধে মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে। অবর্ণনীয় দুর্যোগে ল-ভ- হওয়া বাংলাদেশের বঞ্চিত ও শোষিত মানুষ রুখে দাঁড়ায় সর্বশক্তি দিয়ে। আত্মবিস্মৃত বাঙালি আত্মপরিচয় অনুসন্ধানে উৎসর্গ করে নিজ ও স্বজনকে। ছিনিয়ে আনে বিজয়, লাল-সবুজ পতাকা সংবলিত স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ।
রক্তনদী পেরিয়ে আসা আনন্দ-বেদনায় মিশ্র মহান বিজয় দিবস আজ। বাঙালি জাতির হাজার বছরের শৌর্যবীর্য এবং বীরত্বের এক অবিস্মরণীয় দিবস। বিজয়ের গৌরবের বাঁধভাঙা আনন্দের দিন। একই সঙ্গে লাখো স্বজন হারানোর শোকে ব্যথাতুর-বিহ্বল হওয়ারও দিন। তীব্র শোষণের কুহেলী জাল ভেদ করে একাত্তরের এই দিনটিতে প্রভাতী সূর্যের আলোয় ঝিকিমিকিয়ে উঠেছিল বাংলার শিশির ভেজা মাটি, অবসান হয়েছিল পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর সাড়ে তেইশ বছরের নির্বিচার শোষণ, বঞ্চনা আর নির্যাতনের কালো অধ্যায়।
নয় মাসের জঠর-যন্ত্রণা শেষে এদিন জন্ম নেয় একটি নতুন দেশ স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ। ঝড়ের ভেতরে বিকশিত অটল বৃক্ষের জীবন্ত প্রতীক স্বাধীনতা নামের অগ্নিস্ফুলিঙ্গ আজও প্রচ- ঝাঁকি দেয় রক্তে, শাণিত করে চেতনা। ঝড়ের ভেতরে বিকশিত অটল বৃক্ষের জীবন্ত প্রতীক স্বাধীনতা নামের অগ্নিস্ফুলিঙ্গ আজও প্রচ- ঝাঁকি দেয় রক্তে, শাণিত করে চেতনা।
পূর্বাচলে আজ উদিত যে-সূর্য, প্রতিদিনের হয়েও সে প্রতিদিনের নয়; তার রক্তিমতায় তিরিশ লাখ শহীদের রক্ত আমাদের মনে পড়বে; আকাশ যে-কোমলতায় আজ উদ্ভাসিত, একাত্তরের সম্ভ্রমহারা দশ লাখ মা-বোন-জায়ার ক্রন্দনধোয়া সে-উদ্ভাস। দেন-দরবার নয়, কারও দয়ার দানে নয়, সাগর-সমান রক্তের দামে বাংলাদেশ অর্জন করেছে স্বাধীনতা, রক্ত-সাগর পেরিয়ে বাঙালি জাতি পৌঁছেছে তার বিজয়ের সোনালি তোরণে। বিজয়ের চুয়ান্ন বছর পূর্তিতে তোমাকে অভিবাদন, বাংলাদেশ।
৫৫ হাজার বর্গমাইলের এই সবুজ দেশে ৫৪ বছর আগে আজকের এই দিনে উদয় হয়েছিল হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ সূর্য। সেদিনের সেই সূর্যের আলোয় ছিল নতুন দিনের স্বপ্ন, যে স্বপ্ন অকাতরে প্রাণ দিয়েছিল এ দেশের ৩০ লাখ মানুষ। ৫৪ বছর পরও সেই স্বপ্ন বাস্তবে রূপ পায়নি, শেষ হয়নি মুক্তিকামী মানুষের সংগ্রাম। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর কুয়াশায় জড়ানো হাল্কা শীতের বিকেলে রমনার রেসকোর্স ময়দানে দাম্ভিক পাকিস্তানি সেনারা যে অস্ত্র দিয়ে নির্বিচারে গুলি চালিয়েছে বাঙালির বুকে, হাতের সেই অস্ত্র পায়ের কাছে নামিয়ে রেখে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে ছিল মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনীর নেতাদের সামনে।
১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর ছিল বৃহস্পতিবার। এদিনের সকালে জাতিসংঘ শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনের কর্মকর্তা জন আর কেলি পৌঁছান সেনানিবাসের কমান্ড বাঙ্কারে। সেখানে নিয়াজী নেই, ফরমান আলীকে পাওয়া গেল বিবর্ণ ও বিধ্বস্ত অবস্থায়। নিচু কণ্ঠে ফরমান আলী জানান, আত্মসমর্পণ সংক্রান্ত ভারতীয় বাহিনীর প্রস্তাব তারা মেনে নিয়েছেন। কিন্তু তাদের যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় ভারতে সেই সংবাদ পাঠাতে পারছেন না। কেলি প্রস্তাব দিলেন, জাতিসংঘের বেতার সংকেত ব্যবহার করে তিনি বার্তা পৌঁছে দিতে পারেন।
আত্মসমর্পণের জন্য বেঁধে দেওয়া সময় সকাল সাড়ে নয়টা থেকে আরও ছয় ঘণ্টা বাড়ানো ছাড়া ভারতীয় বাহিনীর সব প্রস্তাব মেনে নিয়ে আত্মসমর্পণের বার্তা পৌঁছানো হয় জাতিসংঘের বেতার সংকেত ব্যবহার করে। ভারতে তখন সকাল নয়টা ২০ মিনিট। কলকাতার ৮ নম্বর থিয়েটার রোডের (বর্তমান শেক্সপিয়ার সরণি) একটি দোতালা বাড়ি। বাংলাদেশ সরকারের প্রথম সচিবালয় আর প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর সকাল। বরাবরের মতো সেদিনও প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের কক্ষের দরজা একটু খোলা। উদ্বিগ্ন প্রধানমন্ত্রী অভ্যাসবশে ডান হাতের আঙ্গুল কামড়াচ্ছেন।
আনুমানিক সকাল ১০টায় তাজউদ্দীন আহমদের ফোনটি বেজে উঠল। ওই ফোনে গুরুত্বপূর্ণ কেউ ছাড়া ফোন করতে পারে না। কী কথা হলো বোঝা গেল না। কিন্তু ফোন রেখে, চোখেমুখে সব পাওয়ার আনন্দ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী জানালেনÑ ‘সবাইকে জানিয়ে দাও, আজ আমরা স্বাধীন। বিকেল চারটায় আত্মসমর্পণ।’ প্রধানমন্ত্রী নিজেই অবশ্য খবরটি সবাইকে শোনালেন। আর বললেন, কাজের প্রথম পর্যায় শেষ হলো কেবল। এবার দ্বিতীয় পর্যায় দেশ গড়ার কাজ এগিয়ে আসতে সবাইকে।
এদিকে ঢাকায় পাকা খবর এসে পৌঁছেছে কিছুক্ষণ আগে। আত্মসমর্পণ হবে বিকেল সাড়ে চারটায়। ঢাকাবাসী কী করবে আর কী করবে না বুঝে উঠতে পারছে না। সকাল ১০টা ৪০ মিনিটে মিত্রবাহিনী ঢাকায় প্রবেশ করল। এর আগেই মিরপুর ব্রিজ দিয়ে ঢাকায় ঢুকে পড়েছে কাদের সিদ্দিকীর বাহিনী। পৌষের এক পড়ন্ত বিকেলে ঢাকা রেসকোর্স ময়দান (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) প্রস্তুত হলো ঐতিহাসিক এক বিজয়ের মুহূর্তের জন্য। ঠিক যেখান থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একাত্তরের সাতই মার্চ বজ্রকণ্ঠে স্বাধীনতার ডাক দিয়েছিলেন।
বেলা একটা নাগাদ কলকাতা থেকে ঢাকা এসে পৌঁছান ইস্টার্ন কমান্ডের যৌথ বাহিনীর প্রধান জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরা, চিফ অব স্টাফ মেজর জেনারেল জ্যাকব, মুক্তিবাহিনীর উপ-অধিনায়ক গ্রুপ ক্যাপ্টেন এ কে খোন্দকার (সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী)। দুপুর একটার পর জেনারেল হেড কোয়ার্টারে বসে আত্মসমর্পণের দলিল তৈরির বৈঠক হয়। এক পক্ষে নিয়াজী, রাও ফরমান আলী ও জামশেদ। অপর পক্ষে জ্যাকব, নাগরা ও কাদের সিদ্দিকী।
সিদ্ধান্ত হয়, দলিলের স্বাক্ষর করবেন বিজয়ী বাহিনীর পক্ষে ভারতের ইস্টার্ন কমান্ড ও বাংলাদেশ মুক্তিবাহিনীর জয়েন্ট কমান্ডিং ইন চিফ লে. জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরা এবং পরাজিত বাহিনীর পক্ষে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডার লে. জেনারেল এ এ কে নিয়াজি। ঘন্টা খানেকের মধ্যেই জেনারেল অরোরা আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে যোগদানের জন্য বিমান ও নৌবাহিনীর চিফ অব স্টাফসহ কলকাতা থেকে ঢাকায় পৌঁছান। নিয়াজী অভ্যর্থনা জানান যৌথ বাহিনীর কমান্ডারকে। এরপর আসে সেই মাহেদ্রক্ষণ। পরাজিত পাকিস্তান সেনাবাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডার লে. জেনারেল এ এ কে নিয়াজি রেসকোর্স ময়দানে এলেন। সামরিক বিধি অনুসারে বিজয়ী ও বিজিত সৈনিকরা শেষবারের মত জেনারেল নিয়াজীকে গার্ড অব অনার জানায়।
বিকেল চারটায় নিয়াজী ও অরোরা এগিয়ে গেলেন ময়দানে রাখা একটি টেবিলের দিকে। জেনারেল অরোরা বসলেন টেবিলের ডান দিকের চেয়ারে। বাঁ পাশে বসলেন জেনারেল নিয়াজী। দলিল আগে থেকেই তৈরি ছিল। জেনারেল অরোরা স্বাক্ষর করার জন্য দলিল এগিয়ে দেন নিয়াজীর দিকে। তখন বিকেল ৪টা ৩১ মিনিট। অবনত মস্তকে জেনারেল নিয়াজি দলিলে স্বাক্ষর করে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকার করে নিলেন স্বাধীন সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশকে। মুজিবনগর সরকারের পক্ষে এ সময় উপস্থিত ছিলেন গ্রুপ ক্যাপ্টেন এ কে খন্দকার।
দীর্ঘ ৯ মাসের দুঃস্বপ্নের অবসান ঘটিয়ে বাঙালি জাতির জীবনে এলো নতুন প্রভাত। এলো হাজার বছরের কাক্সিক্ষত স্বাধীনতা। পাক হানাদারদের আত্মসমর্পণের মাধ্যমে বাঙালি জাতি অর্জন করে তাদের সর্বশ্রেষ্ঠ প্রাপ্তি, লাল-সবুজের অহঙ্কৃত পতাকা, বিশ্ব মানচিত্রে স্বাধীন সার্বভৌম জাতি হিসেবে নিজেদের গর্বিত পরিচয়। বিজয়ের মুক্তির নিশান ওড়ে বাংলার সর্বত্র। রক্ত লাল পতাকায় সিঞ্চিত হয় বাঙালির চেতনা।
রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর ভিন্ন প্রেক্ষাপটে উদ্যাপিত হতে যাচ্ছে এবারের বিজয় দিবস। যথাযোগ্য মর্যাদায় রাষ্ট্রীয়ভাবে দিবসটি উদ্যাপনে দেশের সাধারণ মানুষকে সম্পৃক্ত করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। সেই লক্ষ্যে নানাবিধ কর্মসূচিও হাতে নিয়েছে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়। যথাযোগ্য মর্যাদায় মহান বিজয় দিবস উদ্যাপনে এবার জাতীয় পর্যায়ে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। দেশের সব জেলা ও উপজেলায় দিনব্যাপী চারু, কারু ও স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত শিল্প পণ্যের প্রদর্শনীসহ হবে বিজয়মেলা।
আজ মঙ্গলবার সূর্যোদয়ের সময় ঢাকায় ৩১ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে দিবসটি শুরু হবে। সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। এরপর মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার নেতৃত্বে উপস্থিত বীরশ্রেষ্ঠ পরিবার, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও বীর মুক্তিযোদ্ধাগণ পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। বাংলাদেশে অবস্থিত বিদেশি কূটনৈতিকরা এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনসহ সর্বস্তরের জনগণ পুষ্পস্তবক অর্পণ করে মহান মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবেন।
মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে আজ সরকারি ছুটির দিন। সব সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি ভবনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে। গুরুত্বপূর্ণ ভবন ও স্থাপনাগুলো আলোকসজ্জায় সজ্জিত করা হবে। ঢাকা ও দেশের বিভিন্ন শহরের প্রধান সড়ক ও স্থাপনাগুলো জাতীয় পতাকা ও রঙিন নিশানে সাজানো হবে।
দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টা পৃথক বাণী দিয়েছেন। দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে সংবাদপত্রগুলো বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করেছে। ইলেকট্রনিক মিডিয়াগুলো মাসব্যাপী মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক বিভিন্ন অনুষ্ঠানমালা প্রচার করছে। দিবসটি উপলক্ষে সকল সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি ভবন এবং বিদেশে বাংলাদেশ দূতাবাস ও মিশনসমূহে জাতীয় পতাকা উত্তোলন এবং গুরুত্বপূর্ণ ভবন ও স্থাপনাসমূহ আলোকসজ্জিত করা হবে। ঢাকা ও দেশের বিভিন্ন শহরের প্রধান সড়ক ও সড়কদ্বীপসমূহ জাতীয় পতাকাসহ বিভিন্ন ব্যানার ফেস্টুন ও রঙিন নিশান দ্বারা সজ্জিত করা হয়েছে।
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) শেরেবাংলা হলে গভীর রাতে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন (বৈছাআ) সমন্বয়কসহ দুই আবাসিক শিক্ষার্থীকে হলরুম থেকে জোরপূর্বক ধরে নিয়ে শারীরিক হেনস্তা, মানসিক নির্যাতন এবং এমনকি হত্যার হুমকি দেওয়ার গুরুতর অভিযোগ উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের একাধিক নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে।
ভুক্তভোগী দুই শিক্ষার্থী সোমবার (১৫ নভেম্বর) পৃথকভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, প্রক্টর এবং হল প্রভোস্ট বরাবর তিনটি আলাদা লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
লিখিত অভিযোগ পত্রে বলা হয়েছে, গত ১২ ডিসেম্বর দিবাগত রাত আনুমানিক ১টা থেকে ১টা ৩০ মিনিটের মধ্যে শেরেবাংলা হলের আবাসিক শিক্ষার্থী ও বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আইন বিভাগের এস. এম. ওয়াহিদুর রহমান এবং উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ফয়সাল বাদশাকে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা হল থেকে ডেকে ও জোরপূর্বক ধরে নিচে নিয়ে শারীরিক হেনস্তা, মানসিক নির্যাতনসহ হত্যার হুমকি দেয়।
বৈছাআ সমন্বয়ক এস. এম. ওয়াহিদুর রহমান তার অভিযোগ পত্রে লিখেছেন, তাকে হলের মূল ফটকের সামনে নিয়ে ছাত্রদলের নবনির্বাচিত সভাপতি মো. মোশাররফ হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক মো. মিজানুর রহমান, আহসান উল্লাহ্, আকিবুর রহমান, সোহানুর রহমান সিফাত, রবিন মিয়াসহ কয়েকজন অজ্ঞাতনামা নেতাকর্মী ঘিরে ধরেন। তার দেহ তল্লাশি করা হয় এবং হলে বৈধভাবে থাকার বিষয় নিয়ে প্রশ্ন তুলে তাকে ‘ছাত্রলীগ ট্যাগ’ দিয়ে আওয়ামী লীগের আমলে অবৈধ প্রভাব খাটিয়ে হলে থাকার অভিযোগ আনা হয়। পূর্বের একটি ব্যক্তিগত বিরোধের জের ধরে রবিন মিয়া তাকে হত্যার হুমকি দেন এবং ভবিষ্যতে “বাঁচতে দেওয়া হবে না” বলে ভয় দেখান। এ সময় তাকে অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ এবং সংঘবদ্ধভাবে মানসিকভাবে হেয় করা হয়।
ফয়সাল বাদশার অভিযোগ পত্রে লিখেছেন, একই রাতে মুক্তমঞ্চে উচ্চশব্দে কনসার্টের প্রতিবাদ করা হলে ফেরার পর রাত ১ টার দিকে তাকে রুমের সামনে থেকে জোরপূর্বক ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। তাকে লুঙ্গি ছাড়া অন্য কোনো পোশাক পরার সুযোগ দেওয়া হয়নি। খালি গায়েই শীতের মধ্যে টেনে-হিঁচড়ে হলের নিচে নেওয়া হয়। তাকে প্রায় এক ঘণ্টা যাবত হলের নিচের বেঞ্চ ও গেস্টরুমে বসিয়ে শারীরিক ও মানসিকভাবে হেনস্তা করা হয়। “অবৈধ শিক্ষার্থী” এবং “শিবির সংশ্লিষ্টতার” অভিযোগ তুলে তাকে জোরপূর্বক ক্ষমা চাইতে বাধ্য করা হয়। অভিযোগে আরও উল্লেখ করা হয় যে, তাকে খালি গায়ের ভিডিও ধারণ করে পা ধরে ক্ষমা চাইতে বাধ্য করে।
দুই শিক্ষার্থীই অভিযোগে উল্লেখ করেছেন, চারুকলা সংসদ আয়োজিত ‘মাঘমল্লার’ অনুষ্ঠানে গভীর রাত পর্যন্ত শব্দদূষণ নিয়ে শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদের ক্ষোভের দায় তাদের ওপর চাপানো হয়। তাদের হুমকি দেওয়া হয় যে ভবিষ্যতে ছাত্রদলের নির্দেশ না মানলে “চরম পরিণতি” ভোগ করতে হবে।
ভুক্তভোগীরা জানান, এই ঘটনার পর তারা চরম আতঙ্ক ও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন এবং হলে স্বাভাবিকভাবে বসবাস ও পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন। তারা দ্রুত তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ এবং নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন।
এবিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত ছাত্রদল নেতাকর্মী সোহানুর রহমান সিফাত ঘটনা অস্বীকার করে বলেন, “এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি। এ ঘটনার তো কোনো প্রাসঙ্গিকতা নাই। হল কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ করেছে কিন্তু তারাও তো আমাদের এখনো কিছু জানাননি।”
অপর অভিযুক্ত ববি ছাত্রদল সভাপতি মোশাররফ হোসেন বলেন, “এবিষয়ে আমি প্রথম শুনলাম। এমন কোনো ঘটনার কথা জানি না। আমি কিংবা মিজান কেউ সেখানে ছিলাম না। তবে ছাত্রদলের অন্য কেউ ছিল কিনা সেটা জানি না।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. রাহাত হোসেন ফয়সাল (ভারপ্রাপ্ত) বলেন, “এ বিষয়টি আমি শুনেছি। ঘটনার সত্যতা পেলে প্রশাসন এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিবে।”
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) শেরেবাংলা হলে গভীর রাতে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন (বৈছাআ) সমন্বয়কসহ দুই আবাসিক শিক্ষার্থীকে হলরুম থেকে জোরপূর্বক ধরে নিয়ে শারীরিক হেনস্তা, মানসিক নির্যাতন এবং এমনকি হত্যার হুমকি দেওয়ার গুরুতর অভিযোগ উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের একাধিক নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে।
ভুক্তভোগী দুই শিক্ষার্থী সোমবার (১৫ নভেম্বর) পৃথকভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, প্রক্টর এবং হল প্রভোস্ট বরাবর তিনটি আলাদা লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
লিখিত অভিযোগ পত্রে বলা হয়েছে, গত ১২ ডিসেম্বর দিবাগত রাত আনুমানিক ১টা থেকে ১টা ৩০ মিনিটের মধ্যে শেরেবাংলা হলের আবাসিক শিক্ষার্থী ও বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আইন বিভাগের এস. এম. ওয়াহিদুর রহমান এবং উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ফয়সাল বাদশাকে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা হল থেকে ডেকে ও জোরপূর্বক ধরে নিচে নিয়ে শারীরিক হেনস্তা, মানসিক নির্যাতনসহ হত্যার হুমকি দেয়।
বৈছাআ সমন্বয়ক এস. এম. ওয়াহিদুর রহমান তার অভিযোগ পত্রে লিখেছেন, তাকে হলের মূল ফটকের সামনে নিয়ে ছাত্রদলের নবনির্বাচিত সভাপতি মো. মোশাররফ হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক মো. মিজানুর রহমান, আহসান উল্লাহ্, আকিবুর রহমান, সোহানুর রহমান সিফাত, রবিন মিয়াসহ কয়েকজন অজ্ঞাতনামা নেতাকর্মী ঘিরে ধরেন। তার দেহ তল্লাশি করা হয় এবং হলে বৈধভাবে থাকার বিষয় নিয়ে প্রশ্ন তুলে তাকে ‘ছাত্রলীগ ট্যাগ’ দিয়ে আওয়ামী লীগের আমলে অবৈধ প্রভাব খাটিয়ে হলে থাকার অভিযোগ আনা হয়। পূর্বের একটি ব্যক্তিগত বিরোধের জের ধরে রবিন মিয়া তাকে হত্যার হুমকি দেন এবং ভবিষ্যতে “বাঁচতে দেওয়া হবে না” বলে ভয় দেখান। এ সময় তাকে অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ এবং সংঘবদ্ধভাবে মানসিকভাবে হেয় করা হয়।
ফয়সাল বাদশার অভিযোগ পত্রে লিখেছেন, একই রাতে মুক্তমঞ্চে উচ্চশব্দে কনসার্টের প্রতিবাদ করা হলে ফেরার পর রাত ১ টার দিকে তাকে রুমের সামনে থেকে জোরপূর্বক ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। তাকে লুঙ্গি ছাড়া অন্য কোনো পোশাক পরার সুযোগ দেওয়া হয়নি। খালি গায়েই শীতের মধ্যে টেনে-হিঁচড়ে হলের নিচে নেওয়া হয়। তাকে প্রায় এক ঘণ্টা যাবত হলের নিচের বেঞ্চ ও গেস্টরুমে বসিয়ে শারীরিক ও মানসিকভাবে হেনস্তা করা হয়। “অবৈধ শিক্ষার্থী” এবং “শিবির সংশ্লিষ্টতার” অভিযোগ তুলে তাকে জোরপূর্বক ক্ষমা চাইতে বাধ্য করা হয়। অভিযোগে আরও উল্লেখ করা হয় যে, তাকে খালি গায়ের ভিডিও ধারণ করে পা ধরে ক্ষমা চাইতে বাধ্য করে।
দুই শিক্ষার্থীই অভিযোগে উল্লেখ করেছেন, চারুকলা সংসদ আয়োজিত ‘মাঘমল্লার’ অনুষ্ঠানে গভীর রাত পর্যন্ত শব্দদূষণ নিয়ে শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদের ক্ষোভের দায় তাদের ওপর চাপানো হয়। তাদের হুমকি দেওয়া হয় যে ভবিষ্যতে ছাত্রদলের নির্দেশ না মানলে “চরম পরিণতি” ভোগ করতে হবে।
ভুক্তভোগীরা জানান, এই ঘটনার পর তারা চরম আতঙ্ক ও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন এবং হলে স্বাভাবিকভাবে বসবাস ও পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন। তারা দ্রুত তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ এবং নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন।
এবিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত ছাত্রদল নেতাকর্মী সোহানুর রহমান সিফাত ঘটনা অস্বীকার করে বলেন, “এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি। এ ঘটনার তো কোনো প্রাসঙ্গিকতা নাই। হল কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ করেছে কিন্তু তারাও তো আমাদের এখনো কিছু জানাননি।”
অপর অভিযুক্ত ববি ছাত্রদল সভাপতি মোশাররফ হোসেন বলেন, “এবিষয়ে আমি প্রথম শুনলাম। এমন কোনো ঘটনার কথা জানি না। আমি কিংবা মিজান কেউ সেখানে ছিলাম না। তবে ছাত্রদলের অন্য কেউ ছিল কিনা সেটা জানি না।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. রাহাত হোসেন ফয়সাল (ভারপ্রাপ্ত) বলেন, “এ বিষয়টি আমি শুনেছি। ঘটনার সত্যতা পেলে প্রশাসন এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিবে।”
বরিশালে নিউমোনিয়াসহ ঠান্ডাজনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে নানা বয়সী মানুষ। শিশু ওয়ার্ডে রোগীর চাপ সবচেয়ে বেশি। দেখা দিয়েছে শয্যা সংকট। এক বেডে তিন থেকে চারজনকে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে বেশিরভাগ শিশুই নিউমোনিয়া, জ্বর, ঠান্ডা ও শ্বাসকষ্টজনিত রোগে আক্রান্ত। কয়েক সপ্তাহ ধরে প্রতিনিয়তই বাড়ছে রোগীর সংখ্যা। স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় অন্তত তিনগুণ।
মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলার আরজু বেগম নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত ছেলেকে ভর্তি করেছেন শের ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। কোনোমতে একটি বেড পেলেও সেখানে রয়েছে আরও দুই রোগী। একই অবস্থা ওয়ার্ডের প্রতিটি বেডের। এতে ভোগান্তিতে রোগীরা।
রোগীর স্বজনরা জানান, তিনজন রোগী এক বেডে। রোগীদের নিয়ে ভোগান্তিতে আছেন তারা। ঠান্ডাজনিত রোগের সংক্রমণ থেকে বাঁচতে বাড়তি সতর্কতার পরামর্শ চিকিৎসকদের।
বরিশাল শের ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল আবাসিক চিকিৎসক ডা. মো. নুরুল আলম বলেন, ‘বাসায় বাচ্চার মা-বাবাকে সচেতন হতে হবে। এদের গরম রাখতে হবে। ধুলাবালি অ্যাভোয়েড করতে হবে। পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে। গরম পানি খাওয়ানো যায়, গরম পানি দিয়ে গোছল করানো যায়। এভাবে বাসাতে থেকেই চিকিৎসা দেয়া সম্ভব।’
বাড়তি রোগীর চাপ সামাল দিতে কিছুটা হিমশিম অবস্থা হলেও চিকিৎসা সেবায় কোনো কমতি নেই বলে জানিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল উপ-পরিচালক এ কে এম নজমুল আহসান বলেন, ‘এ ধরনের রোগী হাসপাতালে এত বেশি আসে যে আমরা রোগীদের সেবা দেবো, এতে আমাদের সংকটও আছে। তবে এর মধ্যেই আমরা সবাইকে চিকিৎসা দিচ্ছি। যেগুলো একটু কিট্রিক্যাল তাদের স্পেশাল কেয়ার নিচ্ছি।’
শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে ৪১টি শয্যার বিপরীতে প্রতিদিন ভর্তি থাকছে শতাধিক শিশু। বেশির ভাগই শিশু এবং শীতজনিত রোগে আক্রান্ত। বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিচ্ছে প্রায় পাঁচ শতাধিক শিশু।