dreamliferupatolibarisal

বরিশাল

ঐতিহ্য ধরে রাখতে গেলে গুনতে হবে লোকসান!

হাসিবুল ইসলাম, বরিশাল

হাসিবুল ইসলাম, বরিশাল

১১ অক্টোবর, ২০২৫ ২২:৫০

প্রিন্ট এন্ড সেভ

ঐতিহ্য ধরে রাখতে গেলে গুনতে হবে লোকসান!

দেশবাসীর স্বপ্নের ‘পদ্মা সেতু’ চালুর পরে বরিশাল-ঢাকা নৌপথে যাত্রী ভাটা দেখা দেয় এবং ক্রমাগত লোকসানের মুখে বেশ কয়েকজন মালিক তাদের লঞ্চ বন্ধ রাখেন। বর্তমানে প্রতিদিন দুই প্রান্ত থেকে রোটেশন করে দুটি বিলাসবহুল নৌযান সেবায় নিয়োজিত থাকলেও সংখ্যাগত দিক থেকে যাত্রী কম হওয়ায় লঞ্চের স্টাফ বিল-জ্বালানি খরচ পোষানো যাচ্ছে না। একাধিক মালিক যাত্রীসংকটে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে তাদের নৌযান ভাঙারি হিসেবে বিক্রি করে দিয়েছেন। বিস্ময়কর বিষয় হচ্ছে, বরিশাল-ঢাকা নৌপথে যাত্রী নেই এবং যেখানে বিলাসবহুল পরিবহনের সত্ত্বাধিকারীরা প্রতিদিন লোকসান গুণছেন জেনেও এই রুটে ১৫০ বছরের পুরানো স্টিমার ‘পিএস মাহসুদ’ চলতি মাসে চালুর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ব্রিটিশ আমলের এই ঐতিহ্য ধরে রাখতে গিয়ে সরকারকে যাত্রীসাধারণকে ভোগানোর পাশাপাশি অতীতের ন্যায় লোকসানে একটি নতুন ক্ষেত্রে তৈরি করতে যাচ্ছে কী না তা নিয়ে লঞ্চ মালিকদের মধ্যে কানাঘুষা চলছে।

লঞ্চ মালিকেরা বলছেন, পদ্মা সেতু উদ্বোধনের আগে প্রতিদিন গড়ে ৬/৭ টি লঞ্চ যাত্রীসেবায় নিয়োজিত ছিল, এমনকি দুটি ঈদের আগে পরে বেশকিছু দিন ১০/১২ টি করেও চলেছে। এই সময়ে দুপুরের পর থেকে নৌবন্দর যাত্রীদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠত। ২০২২ সালের ২৬ জুন সেতুটি যান চলাচলে উন্মুক্ত করে দেওয়া হলে সপ্তাহখানের মধ্যে বরিশাল-ঢাকা নৌপথে যাত্রীসংখ্যা হ্রাস পেতে থাকে। লোকসান কমাতে গত বছর রোটেশন করে ২/৩ টি লঞ্চ চালানোর সিদ্ধান্ত গৃহিত হলেও কোনো অবস্থায় মালিকদের আর্থিক উন্নতি হচ্ছে না। ফলে একে একে বেশ কয়েকটি লঞ্চ আর্থিক দৈন্যতার মুখে যাত্রীসেবা বন্ধ করে দেয়।

বর্তমানে সম্ভব্য লোকশানের বিষয়টি সম্পর্কে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় ওয়াকিবহাল থাকলেও শক্তিহীন স্টিমার মাহসুদকে বরিশাল-ঢাকা নৌরুটে যাত্রীসেবায় যুক্ত করা বড় ধরনের বোকামি মনে করা হচ্ছে। পরিবহনসংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঐতিহ্য ধরে রাখতে গিয়ে সরকারকে লোকসানতো গুণতে হবে! পাশাপাশি যাত্রী সাধারণকেও ভুগতে হবে। কারণ, ব্রিটিশ আমলে ১৮৮৪ সালে যাত্রা শুরু করা স্টিমারটি বর্তমানে একদম বলহীন। তাছাড়া এই নৌযানটি অতীতে অসংখ্যবার মাঝনদীতে বিকল হয়ে যাত্রীদের বিড়ম্বনায় ফেলার একাধিক উদাহরণ রয়েছে, যা নিয়ে অনেকে তিক্ত-বিরক্ত।

লক্কর-ঝক্কর নৌযান মাহসুদ বর্তমানে রঙচঙে এসে অতীত ঐতিহ্য বহন করলেও ব্যক্তি মালিকানাধীন বিলাসবহুল লঞ্চগুলোর সাথে প্রতিযোগিতায় টিকতে পারবে কী না তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। বিশেষ করে যাত্রাপথে স্টিমারটির ধীরগতিতে চলা এবং লঞ্চগুলোর তুলনায় বিলম্বে গন্তব্যে পৌছানো নিয়ে আগে যাত্রীদের মধ্যে ক্ষোভও দেখা যেতো। তবে নতুন আঙ্গিকে আসার আগেই ব্যয় ও যাত্রী বিবেচনায় স্টিমারটিকে পর্যটক সার্ভিস হিসেবে সপ্তাহে একদিন শুক্রবার ঢাকা-বরিশাল নৌপথে চালানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এছাড়া ঢাকার আশপাশে প্রমোদভ্রমণের জন্য ভাড়া নেওয়ার সুযোগ রাখা হয়।

আওয়ামী লীগ শাসনামলে ২০২২ সালের ২২ সেপ্টেম্বর দেড়শ বছরের রোগাক্রান্ত মাহসুদ আকস্মিক বন্ধ হয়ে যায়। এর আগে সেবা দিতে গিয়ে ঐতিহ্যবাহী স্টিমারটি বিভিন্ন সময়ে মাঝনদীতে বহুবার বিকল হয়ে যাত্রীদের সীমাহীন দুর্ভোগে ফেলে দেয়। গত মে মাসে বরিশাল সফরকালে সেই ইতিহাস আবার ফিরিয়ে আনার ঘোষণা দেন নৌপরিবহন উপদেষ্টা সাখাওয়াত হোসেন। এর পর থেকে বরিশালবাসী অধীর আগ্রহে ঐতিহ্যবাহী এই জলযান চালুর অপেক্ষা করছেন।

বিভিন্ন সূত্রে প্রাপ্ত কয়লাচালিত প্যাডেল স্টিমার প্রথমে নারায়ণগঞ্জ ও পরে ঢাকা থেকে খুলনার নৌপথে চলাচল করত। পথে চাঁদপুর, বরিশাল, ঝালকাঠি, মোরেলগঞ্জ, হুলারহাট, সন্ন্যাসী, কাউখালী ঘাটে যাত্রাবিরতি দিত। ঔপনিবেশিক সময়ে খুলনার সঙ্গে ভারতের রেল যোগাযোগ শুরু হলে নৌপথে যাত্রী পরিবহন গুরুত্ব পায়। তখন বহরে ছিল ফ্লোটিলা কোম্পানির ১৪টি স্টিমার। পরে পিএস গাজী, পিএস অস্ট্রিচ, পিএস মাহসুদ, পিএস লেপচা, পিএস টার্ন, পিএস সেলার মতো ঐতিহ্যবাহী স্টিমারের সংযোজিত হয়।

বিআইডব্লিউটিসি সূত্রে জানা গেছে, যাত্রী ও নাব্যতাসংকটে ২০১৯ সাল থেকে স্টিমার চলাচল সীমিত হয়ে যায়। খুলনার বদলে যাত্রা থেমে যায় মোরেলগঞ্জে। সর্বশেষ এমভি মধুমতি ও এমভি বাঙালী সপ্তাহে চার দিন ঢাকা-মোরেলগঞ্জ নৌপথে চলাচল করলেও শেষ যাত্রাটি ছিল ২০২২ সালের ২২ সেপ্টেম্বর। স্টিমারগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে তৎসময়ে লোকসান উল্লেখ করা হয়েছিল। এখন নতুন করে সপ্তাহে একদিন স্টিমার চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সরকারের এই উদ্যোগকে বরিশালবাসী সাধুবাদ জানানোর পাশাপাশি জলযানটি প্রতিদিন যাত্রীসেবায় নিয়োজিত রাখার দাবি তুলেছে, যা পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্পোরেশনের (বিআইডব্লিউটিসি) কর্মকর্তাদের ভাবিয়ে তুলেছে।

সংস্থাটির কর্মকর্তারা বলছেন, শত বছরের পুরোনো স্টিমারগুলো এখন অনেকটা শক্তিহীন, মেরামত করে পরিচালনার উদ্যোগ নিলেও আগের শক্তিতে ফিরতে পারবে না। তাছাড়া এসব স্টিমারে যাত্রা সময়সাপেক্ষ। যাত্রীদের অবারিত সময় না থাকলে স্টিমারে উঠতে চাইবেন না। ফলশ্রুতিতে ব্যয় পোষানোও অসম্ভব হয়ে পড়বে, সরকারকে লোকসান গুণতে হবে। সুতরাং ক্ষেত্রে আবেগ নয়, বাস্তবতাকে প্রাধান্য দিতে হবে।

অনুরূপ আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন বিআইডব্লিউটিসি পরিচালক (বাণিজ্য) এসএম আশিকুজ্জামান। এই কর্মকর্তা বলেন, চট্টগ্রামের ওয়েস্টার্ন মেরিনে দুটি স্টিমারের পুনর্বাসনকাজ শেষ হয়েছে, ইতিমধ্যে পরীক্ষামূলকভাবে পানিতে চালানো হয়েছে। সাজসজ্জার কিছু কাজ বাকি, এখন সেগুলো চলছে। এরপর সার্ভেসহ অন্যান্য আইনগত প্রক্রিয়া শেষ করে চলতি মাসের শেষের দিকে একটি স্টিমার ঢাকা-বরিশাল নৌপথে যুক্ত হবে। এবং আপাতত একটি স্টিমার সপ্তাহে এক দিন শুক্রবার যাত্রী পরিবহন করবে। এছাড়া ঢাকার আশপাশে কেউ ভাড়া নিয়ে ভ্রমণ করতে চাইলে সেই সুযোগ রাখা হবে।

বরিশাল-ঢাকা নৌরুটে যেখানে বিলাসবহুল লঞ্চগুলো যাত্রীসংকটে ধুকছে সেখানে স্টিমারের ঐতিহ্য ধরে রাখতে গিয়ে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় জনগণের অর্থ নদীতে ঢালতে যাচ্ছে কী না তা নিয়েও পরিবহনসংশ্লিষ্টদের মধ্যে নানান আলোচনায় শোনা যায়। এনিয়ে বিআইডব্লিউটিসির কর্মকর্তারা কোনো মন্তব্য না করলেও লঞ্চ মালিকেরা বলছেন, বরিশাল-ঢাকা নৌরুটে সপ্তাহে দুদিন শুক্র-শনিবার কিছু যাত্রী হয়। যাত্রীরা সাধারণত সেবার মান বিবেচনা করেন এবং নিরাপদ ভ্রমণ করতে বিলাসবহুল লঞ্চগুলোকে বেচে নেন। এই চ্যালেঞ্জিং সময়ে দুর্বলগতির স্টিমার মাহসুদ নতুন আঙ্গিকে এসে বিলাসবহুল এমভি এম খান, সুরভী, সুন্দরবনের সাথে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পারবে কী না সেটা দেখার বিষয়।’

বরিশালে ডেঙ্গু আক্রান্ত বৃদ্ধের মৃত্যু

বরিশালটাইমস রিপোর্ট

বরিশালটাইমস রিপোর্ট

১৮ অক্টোবর, ২০২৫ ১৫:৪১

প্রিন্ট এন্ড সেভ

বরিশালে ডেঙ্গু আক্রান্ত বৃদ্ধের মৃত্যু

বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে সুলতান খান (৬৫) নামে এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়াও গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আরও ১২৬ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। শনিবার (১৮ অক্টোবর) দুপুরে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. শ্যামল কৃষ্ণ মণ্ডল। মৃত সুলতান খান পটুয়াখালী জেলার দুমকী উপজেলার বাসিন্দা।

বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে বিভাগের বিভিন্ন হাসপাতালে ১২৬ জন ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বরগুনা হাসপাতালে ৫৪ জন, বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১৫ জন, বরিশাল জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে ৪ জন, পটুয়াখালীতে ২৯ জন, ভোলায় ৫ জন, পিরোজপুরে ১৭ জন ও ঝালকাঠিতে ২ জন। বর্তমানে বিভাগের বিভিন্ন হাসপাতালে ৪৪০ জন চিকিৎসাধীন রয়েছে।

স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত বিভাগের দুই মেডিকেল কলেজসহ বিভিন্ন হাসপাতালে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ১৫ হাজার ৮৯২ রোগী ভর্তি হয়েছেন। আর সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ১৫ হাজার ৪১৬ জন।

এছাড়া চলতি বছর গোটা বিভাগে ৩৬ জন ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যু হয়েছে। তাদের মধ্যে বরিশাল শের ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২১ জন, বরগুনায় ১৪ ও পটুয়াখালীকে ১ জন।

মেঘনায় অভিযানে আটক ১১ জেলের জেল-জরিমানা

বরিশালটাইমস রিপোর্ট

বরিশালটাইমস রিপোর্ট

১৮ অক্টোবর, ২০২৫ ১৩:০২

প্রিন্ট এন্ড সেভ

মেঘনায় অভিযানে আটক ১১ জেলের জেল-জরিমানা

বরিশালের হিজলার মেঘনা নদীতে যৌথ অভিযান চালিয়ে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ইলিশ শিকারের সময় ১১ জেলেকে আটক করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

শনিবার (১৮ অক্টোবর) হিজলার মেঘনা নদীতে কোস্ট গার্ড সদস্যদের সহযোগিতায় উপজেলা মৎস্য অধিদপ্তর এ অভিযান পরিচালনা করে। সিনিয়র উপজেলা মৎস্য অফিসার মোহাম্মদ আলম জানান, অভিযানে আটক ১১ জনের মধ্যে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. ইলিয়াস সিকদার ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে পাঁচজনকে আট দিন করে কারাদণ্ড দেন।

এছাড়া বাকিদের মধ্যে একজনকে ২০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড ও চারজনকে পাঁচ হাজার টাকা অর্থদণ্ড দেওয়া হয়। সেই সঙ্গে বয়স কম থাকায় এক কিশোরকে মুচলেকার মাধ্যমে অভিভাবকদের জিম্মায় ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

বরিশালের সেই ৩৪টি ঝুঁকিপূর্ণ ভবন ভাঙার কাজ শুরু

বরিশালটাইমস রিপোর্ট

বরিশালটাইমস রিপোর্ট

১৭ অক্টোবর, ২০২৫ ১৮:২২

প্রিন্ট এন্ড সেভ

বরিশালের সেই ৩৪টি ঝুঁকিপূর্ণ ভবন ভাঙার কাজ শুরু

বরিশাল শহরের ঝুঁকিপূর্ণ সেই ৩৪টি ভবন ভাঙার কাজ শুরু করেছে সিটি কর্পোরেশন। শুক্রবার সকালে শহরের সদর রোডের তিনতলা দুটি ঝুঁকিপূর্ণ ভবন ভাঙার মধ্যে দিয়ে আনুষ্ঠানিকতা সূচনা হয়। দীর্ঘ ১০ বছর পূর্বে এই ভবনসমূহকে ঝুঁকিপূর্ণ এবং এতে বসবাসরতদের প্রাণহানির শঙ্কা রয়েছে বলে সিটি প্রশাসন ঘোষণা করে। কিন্তু রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারের কারণে ভবনগুলো অপসারণ করা সম্ভব হচ্ছিল না। গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের আগেপরে এনিয়ে দৈনির রূপালী বাংলাদেশসহ একাধিক পত্র-পত্রিকায় লেখালেখিও হয়।

সূত্র জানায়, কীর্তনখোলার তীরের শহর বরিশালের ৫৮ বর্গকিলোমিটার এলাকায় ৩৫টি ভবনকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করে বিসিসি। ২০১৩ সালের জরিপে এসব ভবনকে বেহাল ও ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে ঘোষণা করে। এই ভবনের বেশিরভাগ তৎকালীন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের নিয়ন্ত্রণে থাকায় বেশ কয়েকবার ভাঙার উদ্যোগ নিয়েও ব্যর্থ হয় সিটি কর্পোরেশন। এবং ভবনগুলো যে আইনগতভাবে ভাঙতে না পারে তার জন্য আদালতে মামলাও করা হয়। পরবর্তীতে আইনি জটিলতা এড়াতে বিষয়টি নিয়ে সিটি কর্পোরেশন তৎপরতা দেখায়নি বা নিশ্চুপ হয়ে যায়।

জানা গেছে, সদর রোডসংলগ্ন বহুতল ভবন দুটি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেয়াই কাজী মফিজুল ইসলাম কামাল অবৈধভাকে দখল করে রেখেছিলেন। এই কাজী কামলা বরিশাল-১ আসনের সাবেক এমপি আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ শ্যালক। তিনি আওয়ামী লীগের শাসনামলে ক্ষমতার প্রভাব বিস্তার করে বরিশালে ব্যাপক সন্ত্রাস করেছেন। সদর রোডে ভবন দুটির নিচের দোকান দীর্ঘ ১০ বছরের বেশি সময় ধরে নিজে দখল করে রাখেন। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পরে তিনি একাধিক রাজনৈতিক মামলায় জড়িয়ে গ্রেপ্তার হয়ে দীর্ঘদিন কারাবন্দি থাকলেও জামিনে মুক্ত হয়ে আত্মগোপনে আছেন।

একটি ভবনের মালিক নজরুল ইসলাম রূপালী বাংলাদেশকে জানান, তাঁর চাচা উলফাত হাজি এবং শুককুর হাজি ১৯৬০ সালে একটি ভবন ও ৩০ বছর আগে আরেকটি ভবন সদর রোডে নির্মাণ করেন। ২০১৩ সালে একটি পাকা ভবনে ফাটল দেখা দেয় এবং পাশের ভবন ঘেঁষে হেলে পড়ে। এর পরিপ্রেক্ষিতে বরিশাল সিটি করপোরেশন ২০১৩ সালে ভবনটিকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করে। কিন্তু প্রভাবশালী ভাড়াটেরা জোর করে দখলে রাখায় ওই সময় ভাঙার ভবন ভাঙা সম্ভব হয়নি। আওয়ামী লীগ সরকার পরিবর্তনের পরে ভবন ভাঙার জন্য ৩ লাখ ৯০ হাজার টাকা সিটি করপোরেশনে জমা দেন নজরুল ইসলাম। তারপর ভবনটি শুক্রবার সকাল থেকে ভবনটি অপসারণে কাজ শুরু হয়।

বিষয়টি নিশ্চিত করেন বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসনিক কর্মকর্তা স্বপন কুমার দাস। এই কর্মকর্তা বলেন, ‘উলফাত এবং শাকুর ম্যানশন নামের ওই দুটি ভবন ইতিপূর্বে ভাঙার নোটিস দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ভাড়াটেরা আদালতে গেছেন। আমরা কোর্টের অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে রায় পেয়েছি। এর আগে ঝুঁকিপূর্ণ ভবন হিসেবে সেখানে নোটিস দিয়েছিলাম, কিন্তু তারপরও ভাড়াটেরা দখল ছাড়েননি। শুক্রবার সকালে তাদের চূড়ান্তভাবে চলে যাওয়ার নোটিস দিয়ে ভবন ভাঙা শুরু হয়। আশা করছি, সাত দিনের মধ্যে ভবন দুটি ভেঙে ফেলা সম্ভব।

বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের নির্বাহী কর্মকর্তা রেজাউল বারী জানান, নগরের কাউনিয়া এলাকার জানুকি সিংহ রোডের মতি লস্করের বাড়ি, পূর্ব বগুড়া রোড কাজি অফিসের পেছনে রবীন্দ্রনাথ সেনের ভবন, আগরপুর রোডে মহিলা কলেজসংলগ্ন মনু মিয়ার ভবন এবং সদর রোডসংলগ্ন ফজলুল হক অ্যাভিনিউর হোটেল বাহাদুর ভবনসহ ৩৪টি ভবনই পর্যায়ক্রমে ভেঙে ফেলা হবে। তবে এর মধ্যে কিছু অনুমোদনহীন এমন কিছু ভবনও রয়েছে।’

custom sidebar ads

Google AdSense
This is a demo ad. Your live ads will be displayed here once AdSense is properly configured.

জনপ্রিয়

Google AdSense
This is a demo ad. Your live ads will be displayed here once AdSense is properly configured.