https://jamunabankbd.com/

বরিশাল

ঢাকা–বরিশাল নৌপথ: শতবর্ষী স্টিমারে কীভাবে চড়বেন, খরচ কত

নিজস্ব প্রতিবেদন

১৪ নভেম্বর, ২০২৫ ১৪:২৮

প্রিন্ট এন্ড সেভ

ঢাকা–বরিশাল নৌপথ: শতবর্ষী স্টিমারে কীভাবে চড়বেন, খরচ কত

অপেক্ষার পালা শেষ। প্রায় তিন বছর পর আবার জলে ভাসবে পি এস মাহসুদ। ঢাকা–বরিশাল নৌপথে চলার জন্য শতবর্ষী এই স্টিমারটি সংস্কার করা হয়েছে। ১৫ নভেম্বর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের পর ২১ নভেম্বর শুরু হবে চলাচল।

এক সময় ঢাকার সদরঘাট থেকে বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ পর্যন্ত স্টিমার চলাচল করত। কিন্তু পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর যাত্রীর অভাবে ২০২২ সালে স্টিমার চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এরপর তিন বছর ধরে অচল থাকা মাহসুদকে নতুন রূপে সাজায় বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি)।

বিআইডব্লিউটিসি সূত্রে জানা গেছে, প্রাথমিকভাবে সপ্তাহে এক দিন ঢাকা থেকে বরিশাল যাবে স্টিমারটি। প্রতি শুক্রবার সকাল ৮টায় ঢাকার সদরঘাট থেকে ছাড়বে, বরিশাল পৌঁছবে রাতে। আগে স্টিমার চলাচল করত রাতে। কিন্তু এবার দিনে স্টিমার চালু করায় নদী ও তীরের দৃশ্য উপভোগে মানুষ আগ্রহী হবে বলে আশা করছেন বিআইডব্লিউটিসির কর্মকর্তারা।

সম্প্রতি স্টিমারটির ঢাকা থেকে মুন্সিগঞ্জে পরীক্ষামূলক যাত্রা শেষে নৌপরিবহন উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) সাখাওয়াত হোসেন বলেছিলেন, ‘পি এস মাহসুদ কেবল একটি নৌযান নয়, এটি বাংলাদেশের নদীজ সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের জীবন্ত প্রতীক। আমরা চাই, নতুন প্রজন্ম কাছ থেকে দেখুক, একসময় নদীপথই ছিল যোগাযোগ ও সংস্কৃতির প্রাণ।’

স্টিমার চলা তো শুরু হচ্ছে, কিন্তু এতে একসঙ্গে কত যাত্রী ভ্রমণ করতে পারবে, ভাড়া কেমন পড়বে, টিকিট কীভাবে পাওয়া যাবে, তা নিয়ে রয়েছে অনেকের কৌতূহল। এই প্রতিবেদন তাদেরই জন্য।

কতজন যেতে পারবে

বর্তমানে ঢাকা-বরিশাল রুটে অনেক বিলাসবহুল লঞ্চ চলালচল করে। লঞ্চগুলো তিন-চারতলা হয়ে থাকে। তবে শতবর্ষী স্টিমার দোতলা। এ কারণে বেশি যাত্রী একসঙ্গে স্টিমারে ভ্রমণ করতে পারবেন না। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, প্রতিবার ১০০ থেকে ১৫০ যাত্রী স্টিমারে ভ্রমণ করতে পারবেন।

স্টিমারে ভ্রমণপিপাসুদের জন্য তিনটি ক্যাটাগরি থাকবে। প্রথম ক্যাটাগরিতে রয়েছে শীতাতপনিয়ন্ত্রিত প্রথম শ্রেণির কেবিন। এই কেবিনে দুটি শয্যা থাকবে। সেখানে দুজন অনায়াসে ভ্রমণ করা যাবে। প্রতিটি কেবিনের বাইরে চেয়ার পাতা থাকে। সেখানে বসে নদীপথের সৌন্দর্য উপভোগ করা যাবে।

দ্বিতীয় ক্যাটাগরিতেও কেবিন সুবিধা রয়েছে। তবে সেটি দ্বিতীয় শ্রেণির। এটি অবশ্য শীতাতপনিয়ন্ত্রিত নয়। এখানেও দুটি করে শয্যা থাকবে।

প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির ২২টি কেবিন রয়েছে স্টিমারে। প্রতিটি কেবিনে দুজন করে যাত্রী থাকলে মোট ৪৪ জন যাত্রী কেবিনে ভ্রমণ করতে পারবেন।

এ ছাড়া স্টিমারের দোতলার মাঝখানের জায়গা তৃতীয় ক্যাটাগরির জন্য বরাদ্দ দেওয়া হবে। এখানে যাত্রীদের বসার জন্য চেয়ার থাকবে। তবে শীতাতপনিয়ন্ত্রিত যন্ত্র থাকবে না। এখানে ৫০ জনের মতো যাত্রী ভ্রমণ করতে পারবেন।

ভাড়া কেমন

শীতাতপনিয়ন্ত্রিত প্রথম শ্রেণির কেবিন ভাড়া সবচেয়ে বেশি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিআইডব্লিউটিসির একজন কর্মকর্তা বলেন, কেবিনের ভাড়া এখনো চূড়ান্ত করা হয়নি। তবে প্রাথমিকভাবে প্রথম শ্রেণির কেবিনের ভাড়া ৬ হাজার টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। অর্থাৎ দুজন গেলে মাথাপিছু ৩ হাজার টাকা খরচ হবে সারা দিনের জন্য।

দ্বিতীয় শ্রেণির জন্য প্রস্তাব করা হয়েছে সাড়ে ৪ হাজার টাকা। অর্থাৎ এই কেবিনের যাত্রীকে মাথাপিছু ২২০০ টাকার কিছু বেশি খরচ করতে হবে।

আর চেয়ারে বসে যেতে চাইলে প্রতি যাত্রীকে ২ হাজার টাকা খরচ করা লাগতে পারে।

বিআইডব্লিউটিসির ওই কর্মকর্তা বলেন, ভ্রমণের খরচের মধ্যে যাত্রীদের জন্য কমপ্লিমেন্টারি নাশতার ব্যবস্থা রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। সে ক্ষেত্রে ঢাকা থেকে যাত্রা শুরুর পরপরই শুরু হবে নাশতা পর্ব।

বুকিং কীভাবে

বিআইডব্লিউটিসির পরিচালক (বাণিজ্য) এস এম আশিকুজ্জামান বলেন, স্টিমার পরিচালনার জন্য বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্ব দেওয়া হবে। সে ক্ষেত্রে নৌ-পর্যটনে অভিজ্ঞতা আছে এমন কাউকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। তবে টিকিট বুকিং ও খাবারের ব্যবস্থাপনার দায়িত্বও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে দেওয়া হতে পারে। এ ক্ষেত্রে নৌ-পর্যটনে অভিজ্ঞতা রয়েছে এমন ট্যুর অপারেটরদের প্রাধান্য দেওয়া হবে। চূড়ান্ত হলে তারাই টিকিট বুকিং ও যাত্রী পরিষেবার দায়িত্ব পালন করবে।

ঢাকা, বরিশাল ও চাঁদপুরের বিআইডব্লিউসি অফিস থেকে যাত্রীরা টিকিট বুকিং দিতে পারবেন। এ ছাড়া সহজ ডটকম থেকে অনলাইনে টিকিট কাটার ব্যবস্থা থাকবে।

খাবারদাবার

পি এস মাহসুদে ঢাকা থেকে বরিশাল পর্যন্ত ভ্রমণের সময় আরোহীরা উপভোগ করতে পারবেন ঐতিহ্যবাহী খাবার—ফিশ কাটলেট, স্মোকড হিলশা ও ফিশ ফ্রাই। বিআইডব্লিউটিসির কর্মকর্তারা বলছেন, তাঁদের মূল লক্ষ্য হচ্ছে ইতিহাস ও ঐতিহ্যকে ফিরিয়ে আনা। খাবার খেতে খেতে মন ঘুরে আসতে পারে পুরোনো সেই দিনগুলোয়।

এ ছাড়া যাত্রীদের জন্য নিচতলায় থাকবে একটি জুসবার। সেখানে বসে পছন্দের জুস কিংবা কোমল পানীয়তে চুমুক দিয়ে নদীভ্রমণ উপভোগ করা যাবে।

বিনোদন

অনেকেই পরিবার–পরিজন নিয়ে ভ্রমণ করেন। সেই কথা মাথায় রেখে স্টিমারের অন্দর মহলের সাজসজ্জায়ও আনা হয়েছে পরিবর্তন। দীর্ঘ যাত্রায় শিশুরা যেন বিরক্তি বোধ না করে সে জন্য নিচতলায় তাদের জন্য জায়গা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। নদীতে ভেসে ভেসে বরিশাল যাওয়ার সময় শিশুরা ‘কিডস জোন’–এ সময় কাটাতে পারবে। সেখানে কিছু রাইড রাখা হয়েছে। সেখানে হইহুল্লোড়ে মেতে উঠতে পারবে তারা।

এ ছাড়া নিচতলায় ছোট একটি মঞ্চ রাখা হয়েছে। যেখানে লাইভ মিউজিক শোনার ব্যবস্থা থাকবে। চাইলে কেউ নিজেও মঞ্চে মাইক হাতে গান গেয়ে শোনাতে পারবেন।

রাতে থাকার ব্যবস্থা

ঢাকা থেকে ছেড়ে বরিশাল পৌঁছাতে পৌঁছাতে সন্ধ্যা হয়ে যাবে। পরদিন সকালে আবার ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে আসবে। কেউ স্টিমারে রাত কাটাতে চাইলে সে ব্যবস্থাও করা হচ্ছে। তবে এ জন্য খরচ কত হবে, তা চূড়ান্ত হয়নি।

যাত্রীরা চাইলে কেবিন ভাড়া করে বিশ্রাম নিতে পারবেন। এরপর রাতে বরিশাল শহর ও এর আশপাশের দর্শনীয় স্থান ভ্রমণ করে স্টিমারে থাকতে পারবেন। পরদিন সকালে আবার ঢাকার উদ্দেশে রওনা দিতে পারবেন।

থাকবে ইতিহাস-ঐতিহ্যের ছোঁয়া

স্টিমারের সঙ্গে ইতিহাস-ঐতিহ্যের সম্পর্ক রয়েছে। জড়িয়ে আছে কয়েক প্রজন্মের গল্প। ব্রিটিশ আমল, ১৯৪৭ সালের দেশ ভাগ, এরপর পাকিস্তান আমল, তারপর মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশ।

ভ্রমণের সময় যাত্রীদের সেই ইতিহাসের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ জন্য স্টিমারের নিচতলায় যুক্ত করা হয়েছে ‘হেরিটেজ কর্নার’। সেখানে দেখা যাবে শতবর্ষে প্যাডেল স্টিমারে ভ্রমণ করা বিশ্ববরেণ্য ব্যক্তিদের স্মৃতি, পুরোনো নেভিগেশন যন্ত্রপাতি, প্রাচীন নকশা ও ঐতিহাসিক নিদর্শন। যেন একসঙ্গে ইতিহাস, স্মৃতি ও নদীভ্রমণের আনন্দ।

একসময় বাঙালির চলাচলের প্রধান পথ ছিল নদী। এখন সড়ক, রেল আর আকাশপথে দ্রুতগতির চলাচলে অভ্যস্ত হয়েছে মানুষ। সেখানে পি এস মাহসুদ যেন সেই হারিয়ে যাওয়া নৌ চলাচলের স্মৃতি জাগিয়ে তোলার সুযোগ করে দিচ্ছে।

কালের সাক্ষী পি এস মাহসুদ

ব্রিটিশ আমলে ১৯২২ সালে কলকাতার গার্ডেন রিচ ওয়ার্কশপে নির্মিত হয় পি এস মাহসুদ। বেলজিয়ামের আর্থিক ও কারিগরি সহায়তায় ১৯৮৩ সালে নারায়ণগঞ্জের ডকইয়ার্ড অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপ লিমিটেডের মাধ্যমে স্টিমারটির স্টিম ইঞ্জিনকে ডিজেল ইঞ্জিনে রূপান্তর করা হয়। ১৯৯৫ সালে এটিকে মেকানিক্যাল গিয়ার সিস্টেমে রূপান্তর করা হয়।

২০২২ সালে চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর ৭০ লাখ টাকা ব্যয়ে একে আবার চলাচল উপযোগী করা হয়েছে বলে বিআইডব্লিউটিসি জানায়।

আরও পড়ুন:

খালেদা ওহাবের মৃত্যুতে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, সুজন ও হাঙ্গার প্রজেক্টের শোকবার্তা

আরিফ আহমেদ মুন্না

আরিফ আহমেদ মুন্না

২৭ নভেম্বর, ২০২৫ ২৩:৫৭

প্রিন্ট এন্ড সেভ

খালেদা ওহাবের মৃত্যুতে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, সুজন ও হাঙ্গার প্রজেক্টের শোকবার্তা

বাবুগঞ্জের প্রথম উপজেলা চেয়ারম্যান ও যুদ্ধকালীন বেইজ কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ আব্দুল ওহাব খানের সহধর্মিণী বাংলাদেশ প্রথম নারী উপজেলা চেয়ারম্যান খালেদা ওহাবের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করে শোকবার্তা দিয়েছেন বাবুগঞ্জ উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) বাবুগঞ্জ উপজেলা শাখা এবং দি হাঙ্গার প্রজেক্ট বাংলাদেশের বরিশাল আঞ্চলিক কার্যালয়। এসব সংগঠন ও সংস্থার পক্ষ থেকে প্রেরিত পৃথক শোকবার্তায় তারা খালেদা ওহাবের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা এবং তাঁর শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা প্রকাশ করেছেন।

শোকবার্তায় বাবুগঞ্জ উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের পক্ষ থেকে সাবেক ডেপুটি কমান্ডার আব্দুল করিম হাওলাদার বলেন, 'খালেদা ওহাব দলমত নির্বিশেষে সকল মানুষের কাছে একজন জনপ্রিয় নেত্রী ছিলেন। তিনি ছিলেন মুক্তিযোদ্ধাদের অতি আপনজন। তাঁর স্বামী শহীদ আব্দুল ওহাব খান ছিলেন একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং যুদ্ধকালীন বেইজ কমান্ডার। ১৯৮৯ সালে আততায়ীর গুলিতে আব্দুল ওহাব খান নিহত হওয়ার পরে খালেদা ওহাব একজন গৃহবধূ থেকে নিজের মেধা যোগ্যতা ও পরিশ্রমের মাধ্যমে জনপ্রতিনিধি থেকে জনগণের নেত্রী হয়ে ওঠেন। জীবদ্দশায় তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যাণে বিভিন্ন কাজ করে গেছেন এবং মুক্তিযোদ্ধাদের অধিকার রক্ষায় সর্বদা সোচ্চার ছিলেন। তাঁর মৃত্যুতে বাবুগঞ্জ উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ তাদের একজন স্বজন হারিয়েছে।'

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) বাবুগঞ্জ উপজেলা কমিটির পক্ষ থেকে দেওয়া শোকবার্তায় সম্পাদক আরিফ আহমেদ মুন্না বলেন, 'খালেদা ওহাব শুধু একজন জনপ্রতিনিধি কিংবা রাজনীতিবিদ ছিলেন না, তিনি ছিলেন নিবেদিতপ্রাণ একজন মানবাধিকার কর্মী। তিনি আমৃত্যু গণতন্ত্র ও সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য লড়াই করে গেছেন। ১৯৮৯ সালে স্বামী শহীদ আব্দুল ওহাব খানের মৃত্যুর পরে তিনি তাঁর স্বামীর অসমাপ্ত কাজের দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নেন। পুরো একটা জীবন তিনি অবলীলায় খরচ করেছেন মানুষ ও মানবতার কল্যাণে। তিনি ছিলেন নারীদের জন্য এক অনুপ্রেরণার বাতিঘর। তিনি শিখিয়ে গেছেন কীভাবে একজন সাধারণ গৃহবধূ নারীকে সমাজের সকল প্রতিকূলতা অতিক্রম করে জীবনযুদ্ধে জয়ী এবং সফল হতে হয়। তিনি অদম্য ও জীবন সংগ্রামী নারীদের কাছে একজন আলোকবর্তিকা হয়ে থাকবেন।'

দি হাঙ্গার প্রজেক্ট বাংলাদেশের বরিশাল আঞ্চলিক কার্যালয়ের পক্ষ থেকে বিভাগীয় সমন্বয়কারী মেহের আফরোজ মিতা বলেন, 'বাবুগঞ্জে নারীর অগ্রযাত্রা এবং নারীর ক্ষমতায়নের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত ছিলেন খালেদা ওহাব। জীবদ্দশায় তিনি বাল্যবিবাহ, নারী নির্যাতন, নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধ এবং সর্বোপরি নারীদের জীবনমান উন্নয়নে কাজ করে গেছেন। তিনি আমৃত্যু বিকশিত নারী নেটওয়ার্কের সভানেত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন। তাঁর সাংগঠনিক দক্ষতা ছিল অসাধারণ। বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন, রান্নাবান্না এবং অতিথি আপ্যায়নে ক্ষেত্রেও তিনি ছিলেন অনন্য। তাঁর শূন্যতা কখনো পূরণ হওয়ার নয়। একজন কীর্তিমতী নারী হিসেবে তিনি ইতিহাসের পাতায় অমর হয়ে থাকবেন।'

উল্লেখ্য, বর্ণাঢ্য জীবনের অধিকারিণী খালেদা ওহাব ১৯৮৯ সালের উপ-নির্বাচনে বাবুগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয় পরবর্তী এরশাদ সরকারের উপজেলা পদ্ধতি প্রবর্তনের পরে তিনিই বাংলাদেশের প্রথম নারী উপজেলা চেয়ারম্যান হওয়ার গৌরব অর্জন করেন। ১৯৮৯ সালের ১৫ আগস্ট তাঁর স্বামী বাবুগঞ্জ উপজেলা পরিষদের নির্বাচিত প্রথম চেয়ারম্যান আব্দুল ওহাব খান আততায়ীর গুলিতে নিহত হলে ওই বছরই অনুষ্ঠিত উপ-নির্বাচনে বিপুল ভোটে বিজয়ী হন তিনি। যে সময়ে নারীরা ঠিকভাবে ঘর থেকেই বের হতে পারতেন না সেই সময়ে একজন নারী উপজেলা চেয়ারম্যান ছিল অকল্পনীয় একটা ঘটনা। দেশের প্রথম নারী উপজেলা চেয়ারম্যান ছাড়াও তিনি একাধিকবার বিআরডিবি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন। রাজনৈতিক জীবনে তিনি প্রথমে জাতীয় পার্টির বাবুগঞ্জ উপজেলা শাখার আহবায়ক ছিলেন। পরবর্তীতে আওয়ামী লীগে যোগদান করে তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সদস্য নির্বাচিত হন।

রাজনীতির পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠনের সাথেও আমৃত্যু যুক্ত ছিলেন খালেদা ওহাব। তিনি সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) কমিটির বাবুগঞ্জ উপজেলা সভাপতি ছাড়াও পিস ফ্যাসিলিটেটর গ্রুপের (পিএফজি) কো-অর্ডিনেটর এবং দি হাঙ্গার প্রজেক্ট পরিচালিত বিকশিত নারী নেটওয়ার্কের সভাপতি এবং জাতীয় মহিলা সংস্থার বাবুগঞ্জ উপজেলা সভানেত্রী হিসেবে দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করেন। তাঁর বাড়ি বাবুগঞ্জ উপজেলার চাঁদপাশা ইউনিয়নের দরিয়াবাদ গ্রামে।

গত মঙ্গলবার খালেদা ওহাব পিস ফ্যাসিলিটেটর গ্রুপের (পিএফজি) কো-অর্ডিনেটর হিসেবে বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে শান্তি সহায়ক সম্মেলনে যোগ দিতে বরিশাল থেকে ঢাকায় যান। সম্মেলন শেষে তিনি রামপুরা এলাকায় তার ছোটবোনের বাসায় বেড়াতে গেলে বুধবার রাতে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন। এসময় তাকে নিকটস্থ ফরাজি জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হলে রাত ৪টার দিকে সেখানেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। চিকিৎসকরা জানান, খালেদা ওহাব স্ট্রোকজনিত কারণে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণে মারা যান। তিনি উচ্চ রক্তচাপ এবং ডায়াবেটিস রোগে ভুগছিলেন। বৃহস্পতিবার বাদ জোহর বাবুগঞ্জ ডিগ্রি কলেজ মাঠে প্রথম নামাজে জানাজা এবং বাদ আছর চাঁদপাশা হাইস্কুল ও কলেজ মাঠে তাঁর দ্বিতীয় জানাজা শেষে বাবার বাড়ির পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। #

আমরা ৫৩ বছর ধোঁকা খেয়েছি আর নয় - চরমোনাই পীর

বরিশালটাইমস রিপোর্ট

বরিশালটাইমস রিপোর্ট

২৭ নভেম্বর, ২০২৫ ২১:৩১

প্রিন্ট এন্ড সেভ

আমরা ৫৩ বছর ধোঁকা খেয়েছি আর নয় - চরমোনাই পীর

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির ও চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম বলেছেন, ‘আমরা বুঝে ফেলেছি, পুরোনো বউকে নতুন শাড়ি দিয়ে ঘোমটা দিয়ে ধোঁকা দেওয়া যাবে না। এ ধোঁকায় বাংলাদেশের মানুষ আর পড়বে না। আমরা ৫৩ বছর ধোঁকা খেয়েছি, আর নয়। দেশকে মুক্ত করতে হবে।’

চরমোনাইয়ের ঐতিহাসিক অগ্রহায়ণের মাহফিলের দ্বিতীয় দিন বৃহস্পতিবার (২৭ নভেম্বর) দুপুরে অনুষ্ঠিত উলামা-মাশায়েখ ও দ্বীনদার বুদ্ধিজীবী সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন সৈয়দ রেজাউল করীম।

সম্মেলনে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন অন্তর্বর্তী সরকারের ধর্মবিষয়ক উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন। মাহফিলে দেশের বিভিন্ন পর্যায়ের আলেম-ওলমারা উপস্থিত ছিলেন। সম্মেলনে জাতীয় উলামা-মাশায়েখ আইম্মা পরিষদের নতুন সভাপতি হিসেবে দেশের শীর্ষ আলেম মুফতি মিজানুর রহমান সাঈদের নাম ঘোষণা করেন চরমোনাই পীর।

আগামীর নির্বাচনে পরিবর্তন আসতেই হবে জানিয়ে মুফতি রেজাউল করিম বলেন, ‘৫৩ বছর দেশ যারা পরিচালনা করেছে, যেই নীতি-আদর্শের মাধ্যমে চলছে। এ নীতি-আদর্শে চোরের দিক থেকে আমরা চ্যাম্পিয়ান হয়েছি। হাজার হাজার মা সন্তান হারা হয়েছে। এখন নতুনভাবে দেশ পরিচালনার জন্য তারা পাগলের মতো হয়ে গেছে। কখন ক্ষমতায় যাবে, আবার সেই চরিত্র বাস্তবায়ন করবে।’

এ সময় চরমোনাই পীর বলেন, ‘আমি কিন্তু কোথাও প্রার্থী হইনি। কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তে হবও না। সারা দেশে আমার সফর করতে হবে।’ তিনি বলেন, দিন-রাত নিজের পকটের টাকা খরচ করে পাগলের মতো ঘুরছি। এর পেছনে একটি লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য আছে। সেটা হলো—আমরা এ দেশকে ভালোবাসি। আমরা ইসলামকে ভালোবাসি, মানুষকে ভালোবাসি।’

আট দফা দাবি আদায়ে বরিশালে নার্স বিক্ষোভ

বরিশালটাইমস রিপোর্ট

বরিশালটাইমস রিপোর্ট

২৭ নভেম্বর, ২০২৫ ১৯:০৬

প্রিন্ট এন্ড সেভ

আট দফা দাবি আদায়ে বরিশালে নার্স বিক্ষোভ

ভিন্ন অধিদপ্তরের অধীনে স্বতন্ত্র নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তর অন্তর্ভুক্ত করার প্রতিবাদ এবং জাতীয় নার্সিং কমিশন গঠনসহ আট দফা দাবিতে বরিশালে কালো ব্যাজ ধারণ করে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন নার্সরা।

বাংলাদেশ নার্সেস অ্যাসোসিয়েশন (বিএনএ) বরিশাল জেলা শাখার উদ্যোগে বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রশাসনিক ভবনের সামনে এ কর্মসূচি পালিত হয়।

কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া নার্স ও মিডওয়াইফরা ব্যানার, ফেস্টুন ও বিভিন্ন স্লোগানে হাসপাতাল ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিলও করেন।

অবস্থান কর্মসূচিতে বক্তারা বলেন, নার্সিং ও মিডওয়াইফারি খাত দেশের স্বাস্থ্যসেবার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ। অথচ দীর্ঘদিন ধরে এই খাত চরম অবহেলায় রয়েছে। স্বতন্ত্র নার্সিং অধিদপ্তর বাতিলের সিদ্ধান্ত পেশাগত মর্যাদা, দক্ষতা উন্নয়ন ও কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতির পথে বড় অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ সিদ্ধান্ত কোনোভাবেই মেনে নেওয়া হবে না।

কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন- বিএনএ বরিশাল জেলা শাখার সভাপতি আলী আজগর, সহ-সভাপতি মো. শাহআলম, সাধারণ সম্পাদক নূরে আলম তালুকদার, কোষাধ্যক্ষ শামীমা ইয়াসমিন, আনোয়ারা খানম, হাফিজা আক্তার প্রমুখ।

বরিশাল নার্সিং কলেজ ও শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কর্মরত নার্স ও মিডওয়াইফরা এতে উপস্থিত ছিলেন।

custom sidebar ads

Google AdSense
This is a demo ad. Your live ads will be displayed here once AdSense is properly configured.

জনপ্রিয়

Google AdSense
This is a demo ad. Your live ads will be displayed here once AdSense is properly configured.