
০১ নভেম্বর, ২০২৫ ১৭:১২
ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশের শ্রীকাকুলামে নবনির্মিত একটি মন্দিরে পদদলিত হয় ১২ জন নিহত হয়েছেন। এদের বেশিরভাগ নারী ও শিশু। শনিবার (১ নভেম্বর) সকালে এ মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটে।
হিন্দু সম্প্রদায়ের পবিত্র দিন একাদশী উপলক্ষ্যে কাশিবুগ্গার শ্রী ভেঙ্কটেশ্বর স্বামী মন্দিরে গিয়েছিলেন সাধারণ মানুষ। অতিরিক্ত ভিড়ে সেখানে পদদলনের ঘটনা ঘটে। খবর এনডিটিভির।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এ ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করে জানিয়েছেন, প্রত্যেক নিহতের পরিবারকে দুই লাখ রুপি সহায়তা দেওয়া হবে। এছাড়া আহতরা চিকিৎসার জন্য ৫০ হাজার রুপি পাবেন।
সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশিত ভিডিওতে দেখা গেছে, হাজার হাজার মানুষে ভিড়ে মন্দিরটিতে দম বন্ধ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। তখন নিজেদের বাঁচানোর চেষ্টা করেন নারীরা। এ সময় তাদের হাতে পূজার ঝুড়ি ছিল।
পরবর্তীতে ভিড় কমার পর দেখা যায় অনেকের মরদেহ পড়ে আছে। এ ঘটনায় অনেক মানুষ আহত হয়েছেন। তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।
পরিস্থিতি এতটাই খারাপ ছিল যে কেউ কাউকে উদ্ধার করতে পারছিলেন না। পরবর্তীতে সেখানে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
‘মিনি ত্রিরুপাতি’ নামে পরিচিত এ মন্দিরটি সরকারি ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত হয় না বলে জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি।
একাদশী উপলক্ষ্যে হাজার হাজার মানুষের সমাগম হবে জানা সত্ত্বেও মন্দির কর্তৃপক্ষ প্রশাসনকে কিছু জানায়নি। যেখানে দুর্ঘটনা ঘটেছে সেখানে নির্মাণ কাজ চলছিল।
অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রবাবু নাইড়ু আহতদের যথাযথ চিকিৎসা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। উপমুখ্যমন্ত্রী পবন কল্যাণ জানিয়েছেন, এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করা হবে।
ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশের শ্রীকাকুলামে নবনির্মিত একটি মন্দিরে পদদলিত হয় ১২ জন নিহত হয়েছেন। এদের বেশিরভাগ নারী ও শিশু। শনিবার (১ নভেম্বর) সকালে এ মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটে।
হিন্দু সম্প্রদায়ের পবিত্র দিন একাদশী উপলক্ষ্যে কাশিবুগ্গার শ্রী ভেঙ্কটেশ্বর স্বামী মন্দিরে গিয়েছিলেন সাধারণ মানুষ। অতিরিক্ত ভিড়ে সেখানে পদদলনের ঘটনা ঘটে। খবর এনডিটিভির।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এ ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করে জানিয়েছেন, প্রত্যেক নিহতের পরিবারকে দুই লাখ রুপি সহায়তা দেওয়া হবে। এছাড়া আহতরা চিকিৎসার জন্য ৫০ হাজার রুপি পাবেন।
সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশিত ভিডিওতে দেখা গেছে, হাজার হাজার মানুষে ভিড়ে মন্দিরটিতে দম বন্ধ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। তখন নিজেদের বাঁচানোর চেষ্টা করেন নারীরা। এ সময় তাদের হাতে পূজার ঝুড়ি ছিল।
পরবর্তীতে ভিড় কমার পর দেখা যায় অনেকের মরদেহ পড়ে আছে। এ ঘটনায় অনেক মানুষ আহত হয়েছেন। তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।
পরিস্থিতি এতটাই খারাপ ছিল যে কেউ কাউকে উদ্ধার করতে পারছিলেন না। পরবর্তীতে সেখানে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
‘মিনি ত্রিরুপাতি’ নামে পরিচিত এ মন্দিরটি সরকারি ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত হয় না বলে জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি।
একাদশী উপলক্ষ্যে হাজার হাজার মানুষের সমাগম হবে জানা সত্ত্বেও মন্দির কর্তৃপক্ষ প্রশাসনকে কিছু জানায়নি। যেখানে দুর্ঘটনা ঘটেছে সেখানে নির্মাণ কাজ চলছিল।
অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রবাবু নাইড়ু আহতদের যথাযথ চিকিৎসা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। উপমুখ্যমন্ত্রী পবন কল্যাণ জানিয়েছেন, এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করা হবে।

০৫ নভেম্বর, ২০২৫ ২২:১৬
ঢাকার বাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম ১০০ টাকা ছাড়িয়েছে উল্লেখ করে বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির (বাংলাদেশ ন্যাপ) চেয়ারম্যান জেবেল রহমান গানি ও মহাসচিব এম. গোলাম মোস্তফা ভুইয়া বলেছেন, চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কমে যাওয়ায় বাজারে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে যা খুবই উদ্বেগজনক।
গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তারা পেঁয়াজের বাজারে অস্থিরতা নিয়ন্ত্রণে জরুরি কার্যকর পদক্ষেপ নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। তারা বলেন, ‘পেঁয়াজের মূল্য হঠাৎ বৃদ্ধি পাওয়ায় ভোক্তাদের দুশ্চিন্তা কমছে না। কৃষক ও জেলা পর্যায়ের আড়ত থেকে যথেষ্ট সরবরাহ আসছে না। ফলে বাজারে প্রতিদিনের চাহিদা মেটাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। ভারত থেকে আমদানি কমে যাওয়ার পর স্থানীয় বাজারের ওপর চাপ বেড়েছে, অথচ কৃষকের ঘরে যে পরিমাণ মজুত আছে তা বাজারের চাহিদা মেটানোর মতো নয়। এই ঘাটতির কারণে পাইকারি পর্যায়ে মূল্য বৃদ্ধি পাচ্ছে, স্বাভাবিকভাবেই খুচরা বাজারেও অস্থিরতা তৈরি করছে।’
দলটির শীর্ষ এই দুই নেতা বলেন, জনগণ চায় স্থিতিশীল বাজার। কিন্তু বাজারে পণ্যই যদি পর্যাপ্ত না থাকে, তাহলে দাম কীভাবে স্থিতিশীল থাকবে? এর দায় শুধু পাইকার বা খুচরা ব্যবসায়ীদের নয়, মূল সমস্যা সরবরাহে।
তারা বলেন, ‘সরবরাহ কম থাকার সুযোগ নিয়ে বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে আমদানির পাঁয়তারা করছে বাজার সিন্ডিকেট। আড়তদার, কমিশন এজেন্ট ও দাদন ব্যবসায়ীদের কারসাজিতেই মূল্য বৃদ্ধি করা হচ্ছে। সরকার যদি বাজার নিয়ন্ত্রণে না নামে, সাধারণ মানুষের কষ্ট আরও বৃদ্ধি পাবে।’
ঢাকার বাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম ১০০ টাকা ছাড়িয়েছে উল্লেখ করে বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির (বাংলাদেশ ন্যাপ) চেয়ারম্যান জেবেল রহমান গানি ও মহাসচিব এম. গোলাম মোস্তফা ভুইয়া বলেছেন, চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কমে যাওয়ায় বাজারে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে যা খুবই উদ্বেগজনক।
গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তারা পেঁয়াজের বাজারে অস্থিরতা নিয়ন্ত্রণে জরুরি কার্যকর পদক্ষেপ নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। তারা বলেন, ‘পেঁয়াজের মূল্য হঠাৎ বৃদ্ধি পাওয়ায় ভোক্তাদের দুশ্চিন্তা কমছে না। কৃষক ও জেলা পর্যায়ের আড়ত থেকে যথেষ্ট সরবরাহ আসছে না। ফলে বাজারে প্রতিদিনের চাহিদা মেটাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। ভারত থেকে আমদানি কমে যাওয়ার পর স্থানীয় বাজারের ওপর চাপ বেড়েছে, অথচ কৃষকের ঘরে যে পরিমাণ মজুত আছে তা বাজারের চাহিদা মেটানোর মতো নয়। এই ঘাটতির কারণে পাইকারি পর্যায়ে মূল্য বৃদ্ধি পাচ্ছে, স্বাভাবিকভাবেই খুচরা বাজারেও অস্থিরতা তৈরি করছে।’
দলটির শীর্ষ এই দুই নেতা বলেন, জনগণ চায় স্থিতিশীল বাজার। কিন্তু বাজারে পণ্যই যদি পর্যাপ্ত না থাকে, তাহলে দাম কীভাবে স্থিতিশীল থাকবে? এর দায় শুধু পাইকার বা খুচরা ব্যবসায়ীদের নয়, মূল সমস্যা সরবরাহে।
তারা বলেন, ‘সরবরাহ কম থাকার সুযোগ নিয়ে বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে আমদানির পাঁয়তারা করছে বাজার সিন্ডিকেট। আড়তদার, কমিশন এজেন্ট ও দাদন ব্যবসায়ীদের কারসাজিতেই মূল্য বৃদ্ধি করা হচ্ছে। সরকার যদি বাজার নিয়ন্ত্রণে না নামে, সাধারণ মানুষের কষ্ট আরও বৃদ্ধি পাবে।’

৩১ অক্টোবর, ২০২৫ ১৭:২৮
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত ফ্যাসিস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দপ্তরের সাবেক পিয়ন জাহাঙ্গীর আলম ওরফে পানি জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে ১০০ কোটি টাকার অর্থপাচারের অভিযোগে মামলা করেছে সিআইডি। শুক্রবার সিআইডি থেকে এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সিআইডির ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিটের প্রাথমিক অনুসন্ধানে উল্লেখযোগ্য প্রমাণাদি পাওয়ায় মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ (সংশোধনী ২০১৫)-এর ধারা ৪(২)(৪) অনুযায়ী নোয়াখালীর চাটখিল থানায় মামলাটি দায়ের করা হয়।
অনুসন্ধানে জানা যায়, নোয়াখালীর চাটখিল উপজেলার এক নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান জাহাঙ্গীর আলম জাতীয় সংসদ সচিবালয়ে দৈনিক মজুরিভিত্তিক কর্মচারী হিসেবে কাজ করতেন। পরে ২০০৯ সালে আওয়ামী সরকার গঠনের পর তিনি অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে স্বল্প সময়ের জন্য ‘ব্যক্তিগত সহকারী’ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এই দায়িত্বই তাকে আর্থিকভাবে লাভবান করেছে মর্মে প্রাথমিক অনুসন্ধানে উঠে এসেছে।
২০১০ সালে তিনি ‘স্কাই রি অ্যারেঞ্জ লিমিটেড’ নামে একটি কোম্পানি গঠন করে বিকাশের ডিস্ট্রিবিউশন ব্যবসা নেন। কিন্তু এর আড়ালে তিনি অসংখ্য সন্দেহজনক ব্যাংকিং কার্যক্রম করেন। কোম্পানির নামে একাধিক ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অস্বাভাবিক অঙ্কের টাকা জমা হয়, যার বৈধ উৎস পাওয়া যায়নি ও ব্যবসার সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানটির অ্যাকাউন্টগুলোতে ২০১০ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে বিভিন্ন ব্যাংকে মোট ৫৬৫ কোটিরও বেশি টাকা লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য অংশ নগদে জমা হয়েছে দেশের নানা স্থান থেকে। এসব অর্থের উৎস অজানা এবং হুন্ডি ও মানিলন্ডারিং কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত বলে প্রাথমিক প্রমাণ মেলে।
অনুসন্ধানে আরও উঠে আসে, জাহাঙ্গীর আলম তার স্ত্রী কামরুন নাহার ও ভাই মনির হোসেনের সহায়তায় দীর্ঘদিন ধরে অবৈধ অর্থ লেনদেন করতেন। জাহাঙ্গীর আলম ও তার স্ত্রী ২০২৪ সালের জুন মাসে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান এবং বর্তমানে ভার্জিনিয়ায় অবস্থান করছেন। বিদেশে তাদের বিনিয়োগ বা সম্পদ ক্রয়ের কোনো সরকারি অনুমোদন না পাওয়া গেলেও তারা যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমিয়েছেন বলে প্রাথমিক অনুসন্ধানে প্রমাণ মেলে।
অনুসন্ধানে প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে- জাহাঙ্গীর আলম, তার স্ত্রী কামরুন নাহার, ভাই মনির হোসেন এবং প্রতিষ্ঠান স্কাই রি অ্যারেঞ্জ লিমিটেড যৌথভাবে ২০১০ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে প্রায় ১০০ কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছেন।
অপরাধের পূর্ণাঙ্গ তথ্য উদঘাটন, অপরাপর সদস্যদের শনাক্ত ও গ্রেফতার করার স্বার্থে সিআইডির তদন্ত ও অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে জানানো হয় বিজ্ঞপ্তিতে।’
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত ফ্যাসিস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দপ্তরের সাবেক পিয়ন জাহাঙ্গীর আলম ওরফে পানি জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে ১০০ কোটি টাকার অর্থপাচারের অভিযোগে মামলা করেছে সিআইডি। শুক্রবার সিআইডি থেকে এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সিআইডির ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিটের প্রাথমিক অনুসন্ধানে উল্লেখযোগ্য প্রমাণাদি পাওয়ায় মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ (সংশোধনী ২০১৫)-এর ধারা ৪(২)(৪) অনুযায়ী নোয়াখালীর চাটখিল থানায় মামলাটি দায়ের করা হয়।
অনুসন্ধানে জানা যায়, নোয়াখালীর চাটখিল উপজেলার এক নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান জাহাঙ্গীর আলম জাতীয় সংসদ সচিবালয়ে দৈনিক মজুরিভিত্তিক কর্মচারী হিসেবে কাজ করতেন। পরে ২০০৯ সালে আওয়ামী সরকার গঠনের পর তিনি অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে স্বল্প সময়ের জন্য ‘ব্যক্তিগত সহকারী’ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এই দায়িত্বই তাকে আর্থিকভাবে লাভবান করেছে মর্মে প্রাথমিক অনুসন্ধানে উঠে এসেছে।
২০১০ সালে তিনি ‘স্কাই রি অ্যারেঞ্জ লিমিটেড’ নামে একটি কোম্পানি গঠন করে বিকাশের ডিস্ট্রিবিউশন ব্যবসা নেন। কিন্তু এর আড়ালে তিনি অসংখ্য সন্দেহজনক ব্যাংকিং কার্যক্রম করেন। কোম্পানির নামে একাধিক ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অস্বাভাবিক অঙ্কের টাকা জমা হয়, যার বৈধ উৎস পাওয়া যায়নি ও ব্যবসার সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানটির অ্যাকাউন্টগুলোতে ২০১০ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে বিভিন্ন ব্যাংকে মোট ৫৬৫ কোটিরও বেশি টাকা লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য অংশ নগদে জমা হয়েছে দেশের নানা স্থান থেকে। এসব অর্থের উৎস অজানা এবং হুন্ডি ও মানিলন্ডারিং কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত বলে প্রাথমিক প্রমাণ মেলে।
অনুসন্ধানে আরও উঠে আসে, জাহাঙ্গীর আলম তার স্ত্রী কামরুন নাহার ও ভাই মনির হোসেনের সহায়তায় দীর্ঘদিন ধরে অবৈধ অর্থ লেনদেন করতেন। জাহাঙ্গীর আলম ও তার স্ত্রী ২০২৪ সালের জুন মাসে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান এবং বর্তমানে ভার্জিনিয়ায় অবস্থান করছেন। বিদেশে তাদের বিনিয়োগ বা সম্পদ ক্রয়ের কোনো সরকারি অনুমোদন না পাওয়া গেলেও তারা যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমিয়েছেন বলে প্রাথমিক অনুসন্ধানে প্রমাণ মেলে।
অনুসন্ধানে প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে- জাহাঙ্গীর আলম, তার স্ত্রী কামরুন নাহার, ভাই মনির হোসেন এবং প্রতিষ্ঠান স্কাই রি অ্যারেঞ্জ লিমিটেড যৌথভাবে ২০১০ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে প্রায় ১০০ কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছেন।
অপরাধের পূর্ণাঙ্গ তথ্য উদঘাটন, অপরাপর সদস্যদের শনাক্ত ও গ্রেফতার করার স্বার্থে সিআইডির তদন্ত ও অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে জানানো হয় বিজ্ঞপ্তিতে।’

২৪ অক্টোবর, ২০২৫ ২২:২৯
কবি কাজী নজরুল ইসলামের ডাক নাম ছিল দুখু মিয়া। জাতীয় কবি দুখু মিয়ার শৈশবের দুঃখকষ্টের গল্পটা সবার কমবেশি জানা। তবে বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার আরেক দুখু মিয়ার গল্পটা তেমন কেউ জানে না। উপজেলার মানিককাঠী গ্রামের এই দুখু মিয়ার হৃদয়বিদারক করুণ কাহিনী যেন সিনেমার গল্পকেও হার মানায়। দুঃখ আর দুর্ভাগ্য নিয়ে জন্ম হয়েছিল বলেই নানা তার নাম রেখেছিলেন দুখু মিয়া। মায়ের গর্ভে থাকতেই দুখু মিয়াকে অস্বীকার করে তার বাবা। ধর্ষণের ফলে জন্ম নেওয়া দুখু মিয়াকে মায়ের গর্ভেই হত্যা করতে বসেছিল গ্রাম্য সালিশ। তবে গ্রাম থেকে পালিয়ে এসে দুখু মিয়াকে প্রাণে বাঁচান মা। পিতৃপরিচয়হীন, ঠিকানাহীন অবস্থায় জন্ম নেওয়া দুখু মিয়ার পিতৃত্ব নির্ধারণে আদালতে চলে দীর্ঘ আইনি লড়াই। ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে পিতৃত্ব নিশ্চিত করে দুখু মিয়ার জন্মদাতা পিতাকে আদালত যাবজ্জীবন সাজা দিলেও দুখু মিয়া পায়নি সন্তানের অধিকার কিংবা সমাজের স্বীকৃতি। আদালতে জয়ী হলেও সমাজের লাঞ্ছনা আর দারিদ্র্যের কষাঘাতে চিরতরে গ্রামছাড়া হতে হয় দুখু মিয়া এবং তার জনমদুখিনী মাকে। একপর্যায়ে মা-ছেলের কারণে পুরো পরিবারকেই হতে হয় গ্রামছাড়া। নদীর কচুরিপানার মতো ভাসমান জীবন বরণ করতে হয় ৯ সদস্যের একটি পরিবারকে।
সমাজের প্রতি পদে পদে লাঞ্ছনা-গঞ্জনা নিয়ে দারিদ্র্যের সাথে প্রতি মুহূর্তে লড়াই করা দুখু মিয়া এবং তার যোদ্ধা মা সালমা আক্তারকে স্থায়ী ঠিকানা দিতে অবশেষে উদ্যোগ নেন বরিশাল জেলা প্রশাসক। তিনি বাবুগঞ্জের ইউএনওকে সাথে নিয়ে দুখু মিয়ার জন্য যৌথভাবে কেনেন একখন্ড জমি। অতঃপর সমাজসেবা অধিদপ্তরের অনুদানে সেখানে নির্মাণ করা হয় একটি বসতঘর। সেই বসতঘরের নাম রাখা হয় শান্তির নীড়। বৃহস্পতিবার (২৩ অক্টোবর) বিকেলে উপজেলার রহমতপুর ইউনিয়নের বরিশাল বিমানবন্দর মোড় এলাকায় সালমা ও তার দুখু মিয়ার স্বপ্নের ঠিকানা সেই শান্তির নীড়ের চাবি আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর করেন বরিশাল জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন। একইসাথে সালমাকে দেওয়া হয় দুখু মিয়ার ভরনপোষণে সরকারি ১৬ লাখ টাকা অনুদানের শেষ কিস্তির ১ লাখ ৮২ হাজার টাকার চেক। এসময় সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক এ.কে.এম আক্তারুজ্জামান তালুকদার, সহকারী পরিচালক সাজ্জাদ পারভেজ, সেইন্ট বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক কাজী জাহাঙ্গীর কবির, বাবুগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) ফারুক আহমেদ, উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মোঃ মিজানুর রহমান, মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা শামীমা ইয়াসমিন ডলি, প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা সোহেল হোসেন, বিমানবন্দর প্রেসক্লাব সভাপতি ও সুজন সম্পাদক আরিফ আহমেদ মুন্না প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, বিগত ২০০৩ সালের ৯ আগস্ট মানিককাঠী গ্রামের সালাম সরদারের ছেলে গিয়াস উদ্দিন প্রতিবেশি চাচার বাড়িতে গিয়ে চাচাতো বোন চতুর্দশী সালমা আক্তারকে একা পেয়ে জোরপূর্বক ধর্ষণ করেন। এরপরে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে একাধিকবার শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করেন তিনি। এতে গর্ভবতী হয়ে পড়েন সালমা। ঘটনা জানাজানি হলে সরাসরি অস্বীকার করেন অভিযুক্ত গিয়াস উদ্দিন। বিষয়টি পারিবারিক হওয়ায় স্থানীয়ভাবে মীমাংসার চেষ্টা করেন তৎকালীন রহমতপুর ইউপি চেয়ারম্যান মোস্তফা কামাল সিকদার। তিনি গর্ভবতী সালমাকে মেনে নিয়ে গিয়াসকে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার রায় দিয়ে সালিশ রোয়েদাদ দেন। এদিকে ওই সালিশ অগ্রাহ্য এবং সন্তানের পিতৃত্ব অস্বীকার করে সালমাকে গর্ভপাতের জন্য চাপ সৃষ্টি করেন গিয়াস উদ্দিন ও তার পরিবার। সালমাকে দুশ্চরিত্রা আখ্যা দিয়ে স্থানীয় সমাজপতিদের নির্দেশে গর্ভপাত করানোর জন্য সালমা ও তার মাকে বেধড়ক মারপিট করা হয়। একপর্যায়ে সালমা আক্তার এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন। এসব ঘটনা নিয়ে পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হলে নড়েচড়ে ওঠে প্রশাসন। পরে প্রশাসনের সহায়তায় আদালতের মাধ্যমে বাবুগঞ্জ থানায় একটি নারী নির্যাতনের মামলা দায়ের করেন সালমা আক্তার।
মামলা দায়েরের পরে পুলিশ গ্রেপ্তার করে অভিযুক্ত গিয়াস উদ্দিনকে। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে গিয়াসের প্রভাবশালী মামারা মারপিট করে ৭ ভাইবোনসহ সালমার পরিবারকেও মানিককাঠী গ্রাম থেকে বিতাড়িত করেন। পরে গর্ভবতী সালমাকে নিয়ে তার ৯ সদস্যের পরিবার এসে আশ্রয় নেয় উত্তর রহমতপুর গ্রামের আলী হোসেনের ইটভাটায়। সেখানে মাটি কাটার কাজ নেন সালমা ও তার মা রেনু রেগম। ইটভাটা মালিক আলী হোসেনের দয়াকরে থাকতে দেওয়া একটি খুপরি ঘরে মানবেতর জীবনযাপন করে সালমার পরিবার। এমন পরিস্থিতিতে ২০০৪ সালের ৯ জুন ভাগ্যবিড়ম্বিত সালমার কোলে জন্ম নেয় ফুটফুটে শিশু দুখু মিয়া। জন্মই যার আজন্ম পাপ; সেই হতভাগ্য নিষ্পাপ শিশুটির নাম রাখা হয় দুখু মিয়া। এক সাগর দুঃখ বুকে নিয়ে নাতির নাম দুখু মিয়া রাখেন সালমার বাবা কালাম সরদার। এদিকে দুখু মিয়া জন্মের ৪ মাস পরে ২০০৪ সালের ৭ অক্টোবর জামিনে ছাড়া পান অভিযুক্ত জন্মদাতা গিয়াস উদ্দিন। জামিনে এসে নিজের ঔরসজাত সন্তানকে অন্যের জারজ সন্তান আখ্যা দিয়ে হত্যার চেষ্টা চালান তিনি। পরে সালমা ও দুখু মিয়ার নিরাপত্তার বিবেচনায় তাদের সেইভ হোমে পাঠানোর নির্দেশ দেন আদালত।
এদিকে মামলার একমাত্র অভিযুক্ত গিয়াস উদ্দিন তার সন্তানের পিতৃত্ব নিয়ে চ্যালেঞ্জ করলে আদালতের নির্দেশে সালমার সন্তান দুখু মিয়া এবং গিয়াস উদ্দিনের রক্ত এবং মুখের লালার নমুনা সংগ্রহ করে ডিএনএ পরীক্ষার জন্য ঢাকার ফরেনসিক ল্যাবে পাঠান মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বাবুগঞ্জ থানার এসআই আলতাফ হোসেন। পরবর্তীতে ডিএনএ পরীক্ষার রিপোর্টে গিয়াস এবং দুখু মিয়ার ডিএনএ প্রোফাইল ম্যাচ করায় গিয়াস উদ্দিনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন তদন্ত কর্মকর্তা। এরপরে অভিযুক্ত গিয়াসের বিরুদ্ধে চার্জ গঠনের পরে বিচারের জন্য ২০০৮ সালে আলোচিত এই মামলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করা হয়। এদিকে প্রায় ২ বছর সেইভ হোমের সরকারি নিরাপত্তা হেফাজতে থাকার পরে রহমতপুর বিমানবন্দর মোড়ে দুলাল সরদারের বাড়ির একটি পরিত্যক্ত ঘরে দুখু মিয়াকে নিয়ে আশ্রয় পান সালমা আক্তার।
এদিকে সালমার ট্রলি চালক দরিদ্র পিতা কালাম সরদার স্ট্রোকজনিত কারণে পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে বিছানায় পড়লে অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটতে থাকে তাদের পরিবারের। নিরুপায় হয়ে আড়াই বছরের দুখু মিয়াকে সালমা তার মায়ের কাছে রেখে ২০০৬ সালে কাজের সন্ধানে পাড়ি জমান ঢাকায়। সেখানে রানা প্লাজার পাশের একটি গার্মেন্টসে মাসিক ২ হাজার টাকা বেতনে চাকরি নেন সালমা। দুই শিফট ডিউটি আর দিনরাত ওভারটাইম করে ৬ হাজার টাকা বেতন পেয়ে ৫ হাজার টাকাই পাঠিয়ে দিতেন মায়ের কাছে। ওই সামান্য টাকা দিয়েই সালমার ছোট ৬ ভাইবোন আর দুখু মিয়ার খরচ চলতো। সংসার চালাতে হিমশিম খেয়ে বিভিন্ন বাড়িতে বুয়ার কাজ নেন সালমার মা রেনু বেগম। এদিকে পক্ষাঘাতগ্রস্ত সালমার বাবার মৃত্যু হলে দুখু মিয়াসহ ৯ সদস্যের পরিবার নিয়ে অথৈ সাগরে পড়েন রেনু বেগম। তবুও দুই মা-মেয়ে মিলে বেঁচে থাকার যুদ্ধে হার না মানা যোদ্ধা হয়ে লড়াই চালিয়ে যেতে থাকেন।
সালমার দায়ের করা মামলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তরের পরে রাষ্ট্রপক্ষের ১৩ জন সাক্ষীর মধ্যে ১২ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে ২০১১ সালের ২৪ মার্চ রায় ঘোষণা করেন দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক আনিছুর রহমান খান। রায়ে মামলার একমাত্র আসামি গিয়াস উদ্দিনের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে ধর্ষণ এবং ধর্ষণের কারণেই সন্তান জন্মদানের অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রদান করেন বিচারক। একইসঙ্গে দুখু মিয়ার বয়স ২১ বছর পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত তার ভরনপোষণের যাবতীয় ব্যয় রাষ্ট্রকে বহন করার আদেশ জারি করেন। আদালতের ওই রায়ের পরে মহিলা ও শিশু বিষয়ক অধিদপ্তর থেকে দুখু মিয়ার ভরনপোষণের জন্য প্রতিবছর গড়ে প্রায় ১ লাখ টাকা করে এ পর্যন্ত ১৬ লাখ টাকা দেওয়া হয়। এই টাকা দিয়েই দুখু মিয়াকে লেখাপড়া করান তার মা সালমা আক্তার। বর্তমানে দুখু মিয়া সরকারি আবুল কালাম কলেজের দ্বাদশ শ্রেণিতে অধ্যয়নরত।
এদিকে সালমার ৫ ভাইয়ের মধ্যে ৩ ভাই বিয়ে করে বাড়িতে বউ আনলে সালমার সাথে তাদের মতবিরোধ তৈরি হয়। ভাইয়ের বউরা সালমার জন্য সমাজে মুখ দেখাতে পারে না, ইত্যাদি নানান অজুহাতে তাকে বাড়িছাড়া করার পায়তারা শুরু করে। ভাইদের সাথে একই সংসারে থাকার কারণে দুখু মিয়ার ভরনপোষণের জন্য সরকার থেকে দেওয়া অনুদানের টাকাও ভোগ করতে পারছিলেন না হতভাগিনী সালমা আক্তার। অনুদানের শেষ কিস্তির টাকার চেক আনতে গেলে কথা প্রসঙ্গে এসব হৃদয়বিদারক ঘটনা জানতে পারেন বরিশাল জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন। সালমার কাছে তার জীবনের গত ২২ বছরের বিভীষিকাময় ঘটনার আদ্যোপান্ত শুনে তিনি বিস্মিত এবং বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েন।
এরপরেই সালমা ও তার দুখু মিয়ার জন্য একটি স্থায়ী ঠিকানা নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করেন জেলা প্রশাসক। সালমার বর্তমান ঠিকানার আশেপাশে একখণ্ড জমি খুঁজে বের করার নির্দেশ দেন বাবুগঞ্জের ইউএনওকে। পরে বরিশাল বিমানবন্দর মোড় এলাকার রহমতপুর মৌজায় ২ শতক খাসজমির সাথে স্থানীয় দীপক মজুমদারের কাছ থেকে ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকায় ১ শতক জমি কেনা হয়। জেলা প্রশাসকের সাথে জমি কেনায় যৌথভাবে অংশগ্রহণ করেন বাবুগঞ্জের ইউএনও ফারুক আহমেদ। এছাড়াও এনজিওর পক্ষ থেকে ১ লাখ টাকা অনুদান দেন সেইন্ট বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক কাজী জাহাঙ্গীর কবির। পরবর্তীতে সালমার নামে দলিল করা প্রায় ৩ শতাংশ জমির ওপরে বসতঘর নির্মাণের জন্য সমাজসেবা অধিদপ্তর থেকে ৩ লাখ টাকা বরাদ্দ আনেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন।
নদীভাঙনে ভিটামাটিহীন/ক্ষতিগ্রস্ত এবং বস্তিবাসীদের জন্য গৃহনির্মাণ প্রকল্পের আওতায় ওই ৩ লাখ টাকার সাথে বসতঘরের জমিতে ইউএনওর সৌজন্যে বালু ভরাটসহ প্রায় ৫ লাখ টাকা ব্যয়ে সালমা এবং তার দুখু মিয়ার জন্য নির্মিত হয় স্বপ্নের ঠিকানা শান্তির নীড়। বৃহস্পতিবার বিকেলে শান্তির নীড়ের চাবি আনুষ্ঠানিকভাবে সালমার হাতে হস্তান্তর করেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন। এসময় তিনি সালমার হাতে দুখু মিয়ার ভরনপোষণে সরকারি অনুদানের শেষ কিস্তির ১ লাখ ৮২ হাজার টাকার চেক তুলে দেন। ফিতা কাটার মাধ্যমে বসতঘরের উদ্বোধন ও চাবি হস্তান্তরকালে সেখানে দোয়া-মোনাজাত এবং মিষ্টি বিতরণ করা হয়। দোয়া-মোনাজাত পরিচালনা করেন উপজেলা পরিষদ জামে মসজিদের ইমাম ও খানপুরা আলীম মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা আ.জ.ম সামসুল আলম।
প্রায় ২০ লাখ টাকা মূল্যের ৩ শতাংশ জমিসহ বসতঘর পেয়ে আনন্দে কেঁদে ফেলেন সালমা আক্তার। নিজের প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে তিনি বলেন, 'আমি ধর্ষিতা হয়ে বিচার চাইতে গিয়ে সমাজচ্যুত হয়েছি। গ্রামছাড়া হয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরেছি। আমাকে চরিত্রহীনা অপবাদ দিয়ে আত্মীয়-স্বজনসহ সবাই দূর দূর করে তাড়িয়ে দিয়েছে। মামলা চালাতে গিয়ে নিঃস্ব হয়েছি। না খেয়ে মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে কাজ করেছি। দুমুঠো ভাতের জন্য যখন যে কাজ পেয়েছি তাই করেছি। দুখু মিয়াকে সাথে নিয়ে গত ২২টি বছর জীবনের অবর্ণনীয় কষ্ট দুর্ভোগ সহ্য করেছি। অবশেষে আল্লাহ আমাদের দিকে মুখ তুলে তাকিয়েছেন। ডিসি এবং ইউএনও স্যারের মাধ্যমে আজ আমি একটা স্থায়ী ঠিকানা পেলাম। আমার দুখু মিয়াকে নিয়ে মাথা গোঁজার একটা ঠাঁই পেলাম। এই ঘর আমার কাছে স্বপ্নের ঠিকানা বলে ডুকরে কেঁদে ওঠেন সালমা আক্তার।'
বাবুগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) ফারুক আহমেদ বলেন, 'নির্যাতিতা সালমাকে একটি স্থায়ী ঠিকানা গড়ে দেওয়ার মহতী কাজে সম্পৃক্ত হতে পেরে আনন্দ লাগছে। জেলা প্রশাসক মহোদয় এই কাজে আমাকে সম্পৃক্ত করেছেন এবং কিছু অবদান রাখার সুযোগ করে দিয়েছেন এজন্য তার প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। সালমা আক্তার এবং তার দুখু মিয়া সমাজে মাথা উঁচু করে বাঁচবে। তাদের সহযোগিতা করার জন্য বাবুগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন সবসময় পাশে থাকবে।'
বরিশাল জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন বলেন, 'ভাগ্যবিড়ম্বিত অসহায় সালমা আক্তার আজ মাথা গোঁজার একটা ঠাঁই পেয়েছে। তার সন্তান দুখু মিয়ার লেখাপড়ার দায়িত্ব নিয়েছে একটা এনজিও। মহিলা ও শিশু বিষয়ক অধিদপ্তর থেকে এ পর্যন্ত দুখু মিয়ার ভরনপোষণে ১৬ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে। ভবিষ্যতে তার চাকরির বিষয়টা আমাদের সবার বিবেচনায় থাকবে। আমাদের সমাজে পিছিয়ে পড়া দুঃস্থ-অসহায় নির্যাতিত মানুষদের এগিয়ে যেতে সাহায্য করা আমাদের সকলের নৈতিক এবং সামাজিক দায়িত্ব। এই কাজটি যখন সম্মিলিতভাবে করা হয় তখন সমাজে একটা ভালো উদাহরণ তৈরি হয়। আমরা যদি দায়িত্ব নিয়ে সবাই কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে অসহায় মানুষের জন্য কাজ করতে পারি তাহলে ভবিষ্যতে আমরা একটা সুন্দর সমাজ বিনির্মাণ করতে পারবো।' #
কবি কাজী নজরুল ইসলামের ডাক নাম ছিল দুখু মিয়া। জাতীয় কবি দুখু মিয়ার শৈশবের দুঃখকষ্টের গল্পটা সবার কমবেশি জানা। তবে বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার আরেক দুখু মিয়ার গল্পটা তেমন কেউ জানে না। উপজেলার মানিককাঠী গ্রামের এই দুখু মিয়ার হৃদয়বিদারক করুণ কাহিনী যেন সিনেমার গল্পকেও হার মানায়। দুঃখ আর দুর্ভাগ্য নিয়ে জন্ম হয়েছিল বলেই নানা তার নাম রেখেছিলেন দুখু মিয়া। মায়ের গর্ভে থাকতেই দুখু মিয়াকে অস্বীকার করে তার বাবা। ধর্ষণের ফলে জন্ম নেওয়া দুখু মিয়াকে মায়ের গর্ভেই হত্যা করতে বসেছিল গ্রাম্য সালিশ। তবে গ্রাম থেকে পালিয়ে এসে দুখু মিয়াকে প্রাণে বাঁচান মা। পিতৃপরিচয়হীন, ঠিকানাহীন অবস্থায় জন্ম নেওয়া দুখু মিয়ার পিতৃত্ব নির্ধারণে আদালতে চলে দীর্ঘ আইনি লড়াই। ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে পিতৃত্ব নিশ্চিত করে দুখু মিয়ার জন্মদাতা পিতাকে আদালত যাবজ্জীবন সাজা দিলেও দুখু মিয়া পায়নি সন্তানের অধিকার কিংবা সমাজের স্বীকৃতি। আদালতে জয়ী হলেও সমাজের লাঞ্ছনা আর দারিদ্র্যের কষাঘাতে চিরতরে গ্রামছাড়া হতে হয় দুখু মিয়া এবং তার জনমদুখিনী মাকে। একপর্যায়ে মা-ছেলের কারণে পুরো পরিবারকেই হতে হয় গ্রামছাড়া। নদীর কচুরিপানার মতো ভাসমান জীবন বরণ করতে হয় ৯ সদস্যের একটি পরিবারকে।
সমাজের প্রতি পদে পদে লাঞ্ছনা-গঞ্জনা নিয়ে দারিদ্র্যের সাথে প্রতি মুহূর্তে লড়াই করা দুখু মিয়া এবং তার যোদ্ধা মা সালমা আক্তারকে স্থায়ী ঠিকানা দিতে অবশেষে উদ্যোগ নেন বরিশাল জেলা প্রশাসক। তিনি বাবুগঞ্জের ইউএনওকে সাথে নিয়ে দুখু মিয়ার জন্য যৌথভাবে কেনেন একখন্ড জমি। অতঃপর সমাজসেবা অধিদপ্তরের অনুদানে সেখানে নির্মাণ করা হয় একটি বসতঘর। সেই বসতঘরের নাম রাখা হয় শান্তির নীড়। বৃহস্পতিবার (২৩ অক্টোবর) বিকেলে উপজেলার রহমতপুর ইউনিয়নের বরিশাল বিমানবন্দর মোড় এলাকায় সালমা ও তার দুখু মিয়ার স্বপ্নের ঠিকানা সেই শান্তির নীড়ের চাবি আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর করেন বরিশাল জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন। একইসাথে সালমাকে দেওয়া হয় দুখু মিয়ার ভরনপোষণে সরকারি ১৬ লাখ টাকা অনুদানের শেষ কিস্তির ১ লাখ ৮২ হাজার টাকার চেক। এসময় সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক এ.কে.এম আক্তারুজ্জামান তালুকদার, সহকারী পরিচালক সাজ্জাদ পারভেজ, সেইন্ট বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক কাজী জাহাঙ্গীর কবির, বাবুগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) ফারুক আহমেদ, উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মোঃ মিজানুর রহমান, মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা শামীমা ইয়াসমিন ডলি, প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা সোহেল হোসেন, বিমানবন্দর প্রেসক্লাব সভাপতি ও সুজন সম্পাদক আরিফ আহমেদ মুন্না প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, বিগত ২০০৩ সালের ৯ আগস্ট মানিককাঠী গ্রামের সালাম সরদারের ছেলে গিয়াস উদ্দিন প্রতিবেশি চাচার বাড়িতে গিয়ে চাচাতো বোন চতুর্দশী সালমা আক্তারকে একা পেয়ে জোরপূর্বক ধর্ষণ করেন। এরপরে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে একাধিকবার শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করেন তিনি। এতে গর্ভবতী হয়ে পড়েন সালমা। ঘটনা জানাজানি হলে সরাসরি অস্বীকার করেন অভিযুক্ত গিয়াস উদ্দিন। বিষয়টি পারিবারিক হওয়ায় স্থানীয়ভাবে মীমাংসার চেষ্টা করেন তৎকালীন রহমতপুর ইউপি চেয়ারম্যান মোস্তফা কামাল সিকদার। তিনি গর্ভবতী সালমাকে মেনে নিয়ে গিয়াসকে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার রায় দিয়ে সালিশ রোয়েদাদ দেন। এদিকে ওই সালিশ অগ্রাহ্য এবং সন্তানের পিতৃত্ব অস্বীকার করে সালমাকে গর্ভপাতের জন্য চাপ সৃষ্টি করেন গিয়াস উদ্দিন ও তার পরিবার। সালমাকে দুশ্চরিত্রা আখ্যা দিয়ে স্থানীয় সমাজপতিদের নির্দেশে গর্ভপাত করানোর জন্য সালমা ও তার মাকে বেধড়ক মারপিট করা হয়। একপর্যায়ে সালমা আক্তার এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন। এসব ঘটনা নিয়ে পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হলে নড়েচড়ে ওঠে প্রশাসন। পরে প্রশাসনের সহায়তায় আদালতের মাধ্যমে বাবুগঞ্জ থানায় একটি নারী নির্যাতনের মামলা দায়ের করেন সালমা আক্তার।
মামলা দায়েরের পরে পুলিশ গ্রেপ্তার করে অভিযুক্ত গিয়াস উদ্দিনকে। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে গিয়াসের প্রভাবশালী মামারা মারপিট করে ৭ ভাইবোনসহ সালমার পরিবারকেও মানিককাঠী গ্রাম থেকে বিতাড়িত করেন। পরে গর্ভবতী সালমাকে নিয়ে তার ৯ সদস্যের পরিবার এসে আশ্রয় নেয় উত্তর রহমতপুর গ্রামের আলী হোসেনের ইটভাটায়। সেখানে মাটি কাটার কাজ নেন সালমা ও তার মা রেনু রেগম। ইটভাটা মালিক আলী হোসেনের দয়াকরে থাকতে দেওয়া একটি খুপরি ঘরে মানবেতর জীবনযাপন করে সালমার পরিবার। এমন পরিস্থিতিতে ২০০৪ সালের ৯ জুন ভাগ্যবিড়ম্বিত সালমার কোলে জন্ম নেয় ফুটফুটে শিশু দুখু মিয়া। জন্মই যার আজন্ম পাপ; সেই হতভাগ্য নিষ্পাপ শিশুটির নাম রাখা হয় দুখু মিয়া। এক সাগর দুঃখ বুকে নিয়ে নাতির নাম দুখু মিয়া রাখেন সালমার বাবা কালাম সরদার। এদিকে দুখু মিয়া জন্মের ৪ মাস পরে ২০০৪ সালের ৭ অক্টোবর জামিনে ছাড়া পান অভিযুক্ত জন্মদাতা গিয়াস উদ্দিন। জামিনে এসে নিজের ঔরসজাত সন্তানকে অন্যের জারজ সন্তান আখ্যা দিয়ে হত্যার চেষ্টা চালান তিনি। পরে সালমা ও দুখু মিয়ার নিরাপত্তার বিবেচনায় তাদের সেইভ হোমে পাঠানোর নির্দেশ দেন আদালত।
এদিকে মামলার একমাত্র অভিযুক্ত গিয়াস উদ্দিন তার সন্তানের পিতৃত্ব নিয়ে চ্যালেঞ্জ করলে আদালতের নির্দেশে সালমার সন্তান দুখু মিয়া এবং গিয়াস উদ্দিনের রক্ত এবং মুখের লালার নমুনা সংগ্রহ করে ডিএনএ পরীক্ষার জন্য ঢাকার ফরেনসিক ল্যাবে পাঠান মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বাবুগঞ্জ থানার এসআই আলতাফ হোসেন। পরবর্তীতে ডিএনএ পরীক্ষার রিপোর্টে গিয়াস এবং দুখু মিয়ার ডিএনএ প্রোফাইল ম্যাচ করায় গিয়াস উদ্দিনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন তদন্ত কর্মকর্তা। এরপরে অভিযুক্ত গিয়াসের বিরুদ্ধে চার্জ গঠনের পরে বিচারের জন্য ২০০৮ সালে আলোচিত এই মামলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করা হয়। এদিকে প্রায় ২ বছর সেইভ হোমের সরকারি নিরাপত্তা হেফাজতে থাকার পরে রহমতপুর বিমানবন্দর মোড়ে দুলাল সরদারের বাড়ির একটি পরিত্যক্ত ঘরে দুখু মিয়াকে নিয়ে আশ্রয় পান সালমা আক্তার।
এদিকে সালমার ট্রলি চালক দরিদ্র পিতা কালাম সরদার স্ট্রোকজনিত কারণে পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে বিছানায় পড়লে অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটতে থাকে তাদের পরিবারের। নিরুপায় হয়ে আড়াই বছরের দুখু মিয়াকে সালমা তার মায়ের কাছে রেখে ২০০৬ সালে কাজের সন্ধানে পাড়ি জমান ঢাকায়। সেখানে রানা প্লাজার পাশের একটি গার্মেন্টসে মাসিক ২ হাজার টাকা বেতনে চাকরি নেন সালমা। দুই শিফট ডিউটি আর দিনরাত ওভারটাইম করে ৬ হাজার টাকা বেতন পেয়ে ৫ হাজার টাকাই পাঠিয়ে দিতেন মায়ের কাছে। ওই সামান্য টাকা দিয়েই সালমার ছোট ৬ ভাইবোন আর দুখু মিয়ার খরচ চলতো। সংসার চালাতে হিমশিম খেয়ে বিভিন্ন বাড়িতে বুয়ার কাজ নেন সালমার মা রেনু বেগম। এদিকে পক্ষাঘাতগ্রস্ত সালমার বাবার মৃত্যু হলে দুখু মিয়াসহ ৯ সদস্যের পরিবার নিয়ে অথৈ সাগরে পড়েন রেনু বেগম। তবুও দুই মা-মেয়ে মিলে বেঁচে থাকার যুদ্ধে হার না মানা যোদ্ধা হয়ে লড়াই চালিয়ে যেতে থাকেন।
সালমার দায়ের করা মামলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তরের পরে রাষ্ট্রপক্ষের ১৩ জন সাক্ষীর মধ্যে ১২ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে ২০১১ সালের ২৪ মার্চ রায় ঘোষণা করেন দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক আনিছুর রহমান খান। রায়ে মামলার একমাত্র আসামি গিয়াস উদ্দিনের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে ধর্ষণ এবং ধর্ষণের কারণেই সন্তান জন্মদানের অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রদান করেন বিচারক। একইসঙ্গে দুখু মিয়ার বয়স ২১ বছর পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত তার ভরনপোষণের যাবতীয় ব্যয় রাষ্ট্রকে বহন করার আদেশ জারি করেন। আদালতের ওই রায়ের পরে মহিলা ও শিশু বিষয়ক অধিদপ্তর থেকে দুখু মিয়ার ভরনপোষণের জন্য প্রতিবছর গড়ে প্রায় ১ লাখ টাকা করে এ পর্যন্ত ১৬ লাখ টাকা দেওয়া হয়। এই টাকা দিয়েই দুখু মিয়াকে লেখাপড়া করান তার মা সালমা আক্তার। বর্তমানে দুখু মিয়া সরকারি আবুল কালাম কলেজের দ্বাদশ শ্রেণিতে অধ্যয়নরত।
এদিকে সালমার ৫ ভাইয়ের মধ্যে ৩ ভাই বিয়ে করে বাড়িতে বউ আনলে সালমার সাথে তাদের মতবিরোধ তৈরি হয়। ভাইয়ের বউরা সালমার জন্য সমাজে মুখ দেখাতে পারে না, ইত্যাদি নানান অজুহাতে তাকে বাড়িছাড়া করার পায়তারা শুরু করে। ভাইদের সাথে একই সংসারে থাকার কারণে দুখু মিয়ার ভরনপোষণের জন্য সরকার থেকে দেওয়া অনুদানের টাকাও ভোগ করতে পারছিলেন না হতভাগিনী সালমা আক্তার। অনুদানের শেষ কিস্তির টাকার চেক আনতে গেলে কথা প্রসঙ্গে এসব হৃদয়বিদারক ঘটনা জানতে পারেন বরিশাল জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন। সালমার কাছে তার জীবনের গত ২২ বছরের বিভীষিকাময় ঘটনার আদ্যোপান্ত শুনে তিনি বিস্মিত এবং বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েন।
এরপরেই সালমা ও তার দুখু মিয়ার জন্য একটি স্থায়ী ঠিকানা নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করেন জেলা প্রশাসক। সালমার বর্তমান ঠিকানার আশেপাশে একখণ্ড জমি খুঁজে বের করার নির্দেশ দেন বাবুগঞ্জের ইউএনওকে। পরে বরিশাল বিমানবন্দর মোড় এলাকার রহমতপুর মৌজায় ২ শতক খাসজমির সাথে স্থানীয় দীপক মজুমদারের কাছ থেকে ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকায় ১ শতক জমি কেনা হয়। জেলা প্রশাসকের সাথে জমি কেনায় যৌথভাবে অংশগ্রহণ করেন বাবুগঞ্জের ইউএনও ফারুক আহমেদ। এছাড়াও এনজিওর পক্ষ থেকে ১ লাখ টাকা অনুদান দেন সেইন্ট বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক কাজী জাহাঙ্গীর কবির। পরবর্তীতে সালমার নামে দলিল করা প্রায় ৩ শতাংশ জমির ওপরে বসতঘর নির্মাণের জন্য সমাজসেবা অধিদপ্তর থেকে ৩ লাখ টাকা বরাদ্দ আনেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন।
নদীভাঙনে ভিটামাটিহীন/ক্ষতিগ্রস্ত এবং বস্তিবাসীদের জন্য গৃহনির্মাণ প্রকল্পের আওতায় ওই ৩ লাখ টাকার সাথে বসতঘরের জমিতে ইউএনওর সৌজন্যে বালু ভরাটসহ প্রায় ৫ লাখ টাকা ব্যয়ে সালমা এবং তার দুখু মিয়ার জন্য নির্মিত হয় স্বপ্নের ঠিকানা শান্তির নীড়। বৃহস্পতিবার বিকেলে শান্তির নীড়ের চাবি আনুষ্ঠানিকভাবে সালমার হাতে হস্তান্তর করেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন। এসময় তিনি সালমার হাতে দুখু মিয়ার ভরনপোষণে সরকারি অনুদানের শেষ কিস্তির ১ লাখ ৮২ হাজার টাকার চেক তুলে দেন। ফিতা কাটার মাধ্যমে বসতঘরের উদ্বোধন ও চাবি হস্তান্তরকালে সেখানে দোয়া-মোনাজাত এবং মিষ্টি বিতরণ করা হয়। দোয়া-মোনাজাত পরিচালনা করেন উপজেলা পরিষদ জামে মসজিদের ইমাম ও খানপুরা আলীম মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা আ.জ.ম সামসুল আলম।
প্রায় ২০ লাখ টাকা মূল্যের ৩ শতাংশ জমিসহ বসতঘর পেয়ে আনন্দে কেঁদে ফেলেন সালমা আক্তার। নিজের প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে তিনি বলেন, 'আমি ধর্ষিতা হয়ে বিচার চাইতে গিয়ে সমাজচ্যুত হয়েছি। গ্রামছাড়া হয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরেছি। আমাকে চরিত্রহীনা অপবাদ দিয়ে আত্মীয়-স্বজনসহ সবাই দূর দূর করে তাড়িয়ে দিয়েছে। মামলা চালাতে গিয়ে নিঃস্ব হয়েছি। না খেয়ে মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে কাজ করেছি। দুমুঠো ভাতের জন্য যখন যে কাজ পেয়েছি তাই করেছি। দুখু মিয়াকে সাথে নিয়ে গত ২২টি বছর জীবনের অবর্ণনীয় কষ্ট দুর্ভোগ সহ্য করেছি। অবশেষে আল্লাহ আমাদের দিকে মুখ তুলে তাকিয়েছেন। ডিসি এবং ইউএনও স্যারের মাধ্যমে আজ আমি একটা স্থায়ী ঠিকানা পেলাম। আমার দুখু মিয়াকে নিয়ে মাথা গোঁজার একটা ঠাঁই পেলাম। এই ঘর আমার কাছে স্বপ্নের ঠিকানা বলে ডুকরে কেঁদে ওঠেন সালমা আক্তার।'
বাবুগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) ফারুক আহমেদ বলেন, 'নির্যাতিতা সালমাকে একটি স্থায়ী ঠিকানা গড়ে দেওয়ার মহতী কাজে সম্পৃক্ত হতে পেরে আনন্দ লাগছে। জেলা প্রশাসক মহোদয় এই কাজে আমাকে সম্পৃক্ত করেছেন এবং কিছু অবদান রাখার সুযোগ করে দিয়েছেন এজন্য তার প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। সালমা আক্তার এবং তার দুখু মিয়া সমাজে মাথা উঁচু করে বাঁচবে। তাদের সহযোগিতা করার জন্য বাবুগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন সবসময় পাশে থাকবে।'
বরিশাল জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন বলেন, 'ভাগ্যবিড়ম্বিত অসহায় সালমা আক্তার আজ মাথা গোঁজার একটা ঠাঁই পেয়েছে। তার সন্তান দুখু মিয়ার লেখাপড়ার দায়িত্ব নিয়েছে একটা এনজিও। মহিলা ও শিশু বিষয়ক অধিদপ্তর থেকে এ পর্যন্ত দুখু মিয়ার ভরনপোষণে ১৬ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে। ভবিষ্যতে তার চাকরির বিষয়টা আমাদের সবার বিবেচনায় থাকবে। আমাদের সমাজে পিছিয়ে পড়া দুঃস্থ-অসহায় নির্যাতিত মানুষদের এগিয়ে যেতে সাহায্য করা আমাদের সকলের নৈতিক এবং সামাজিক দায়িত্ব। এই কাজটি যখন সম্মিলিতভাবে করা হয় তখন সমাজে একটা ভালো উদাহরণ তৈরি হয়। আমরা যদি দায়িত্ব নিয়ে সবাই কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে অসহায় মানুষের জন্য কাজ করতে পারি তাহলে ভবিষ্যতে আমরা একটা সুন্দর সমাজ বিনির্মাণ করতে পারবো।' #

Google AdSense
This is a demo ad. Your live ads will be displayed here once AdSense is properly configured.
Google AdSense
This is a demo ad. Your live ads will be displayed here once AdSense is properly configured.