০৫ আগস্ট, ২০২৫ ১৮:১৮
২০২৪-এর ছাত্র-গণঅভ্যুত্থান রাষ্ট্রীয় ও সাংবিধানিক স্বীকৃতি পাবে জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, পরবর্তী নির্বাচনে নির্বাচিত সরকারের সংস্কারকৃত সংবিধানের তফসিলে জুলাই ঘোষণাপত্র সন্নিবেশিত থাকবে। তিনি আরও বলেন, ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে শহিদদের জাতীয় বীর হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার (৫ আগস্ট) বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে প্রধান উপদেষ্টা ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ পাঠে এ কথা বলেন। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা।
প্রধান উপদেষ্টা জুলাই ঘোষণাপত্র পাঠে বলেন, যেহেতু উপনিবেশ বিরোধী লড়াইয়ের সুদীর্ঘকালের ধারাবাহিকতায় এই ভূখণ্ডের মানুষ দীর্ঘ ২৩ বছর পাকিস্তানের স্বৈরশাসকদের বঞ্চনা ও শোষণের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিল এবং নির্বিচার গণহত্যার বিরুদ্ধে গণপ্রতিরোধ গড়ে ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ স্বাধীনতা ঘোষণা করে জাতীয় মুক্তির লক্ষ্যে রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেছিল; এবং
যেহেতু, বাংলাদেশের আপামর জনগণ দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে এই ভূখণ্ডে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে বিবৃত সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচারের ভিত্তিতে উদার গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র বিনির্মাণের আকাঙ্ক্ষাকে বাস্তবায়নের জন্য সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করেছে; এবং
যেহেতু স্বাধীন বাংলাদেশের ১৯৭২ সালের সংবিধান প্রনয়ন পদ্ধতি, এর কাঠামোগত দুর্বলতা ও অপপ্রয়োগের ফলে স্বাধীনতা-পরবর্তী আওয়ামী লীগ সরকার মুক্তিযুদ্ধের জনআকাঙ্ক্ষা পূরণে ব্যর্থ হয়েছিল এবং গণতন্ত্র ও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যকারিতা ক্ষুণ্ণ করেছিল; এবং
যেহেতু স্বাধীনতা-পরবর্তী আওয়ামী লীগ সরকার স্বাধীনতার মূলমন্ত্র গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার বিপরীতে বাকশালের নামে সাংবিধানিকভাবে একদলীয় শাসনব্যবস্থা কায়েম করে এবং মতপ্রকাশ ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতা হরণ করে, যার প্রতিক্রিয়ায় ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর দেশে সিপাহী-জনতার ঐক্যবদ্ধ বিপ্লব সংঘটিত হয় এবং পরবর্তী সময়ে একদলীয় বাকশাল পদ্ধতির পরিবর্তে বহুদলীয় গণতন্ত্র, মতপ্রকাশ ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতা পুনঃপ্রবর্তনের পথ সুগম হয়, এবং
যেহেতু আশির দশকে সামরিক স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে দীর্ঘ নয় বছর ছাত্র-জনতার অবিরাম সংগ্রামের মধ্য দিয়ে ১৯৯০ সালের গণঅভ্যুত্থান সংঘটিত হয় এবং ১৯৯১ইং সনে পুনরায় সংসদীয় গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হয়; এবং
যেহেতু দেশী-বিদেশী চক্রান্তে সরকার পরিবর্তনের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ব্যাহত হওয়ায় ১/১১ -এর ষড়যন্ত্রমূলক ব্যবস্থার মাধ্যমে বাংলাদেশে শেখ হাসিনার একচ্ছত্র ক্ষমতা, আধিপত্য ও ফ্যাসিবাদের পথ সুগম করা হয়; এবং
যেহেতু গত দীর্ঘ ষোল বছরের ফ্যাসিবাদী, অগণতান্ত্রিক এবং গণবিরোধী শাসনব্যবস্থা কায়েমের লক্ষ্যে এবং একদলীয় রাষ্ট্র ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার অতি উগ্র বাসনা চরিতার্থ করার অভিপ্রায়ে সংবিধানের অবৈধ ও অগণতান্ত্রিক পরিবর্তন করা হয় এবং যার ফলে একদলীয় একচ্ছত্র ক্ষমতা ও আধিপত্য প্রতিষ্ঠার পথ সুগম হয়; এবং
যেহেতু শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ সরকারের দুঃশাসন, গুম-খুন, আইন-বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা হরণ এবং একদলীয় স্বার্থে সংবিধান সংশোধন ও পরিবর্তন বাংলাদেশের সকল রাষ্ট্রীয় ও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানসমূহকে ধ্বংস করে; এবং
যেহেতু, হাসিনা সরকারের আমলে তারই নেতৃত্বে একটি চরম গণবিরোধী, একনায়কতান্ত্রিক, ও মানবাধিকার হরণকারী শক্তি বাংলাদেশকে একটি ফ্যাসিবাদী, মাফিয়া এবং ব্যর্থ রাষ্ট্রের রূপ দিয়ে আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করে; এবং
যেহেতু, তথাকথিত উন্নয়নের নামে শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদী নেতৃত্বে সীমাহীন দুর্নীতি, ব্যাংক লুট, অর্থ পাচার ও অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলো ধ্বংসের মধ্য দিয়ে বিগত পতিত দুর্নীতিবাজ আওয়ামী লীগ সরকার বাংলাদেশ ও এর অমিত অর্থনৈতিক সম্ভাবনাকে বিপর্যস্ত করে তোলে এবং এর পরিবেশ, প্রাণবৈচিত্র্য ও জলবায়ুকে বিপন্ন করে; এবং
যেহেতু শেখ হাসিনার ফ্যাসিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক দল, ছাত্র ও শ্রমিক সংগঠনসহ সমাজের সর্বস্তরের জনগণ গত প্রায় ষোল বছর যাবত নিরন্তর গণতান্ত্রিক সংগ্রাম করে জেল-জুলুম, হামলা-মামলা, গুম-খুন ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়; এবং
যেহেতু বাংলাদেশে বিদেশী রাষ্ট্রের অন্যায় প্রভুত্ব, শোষণ ও খবরদারিত্বের বিরুদ্ধে এদেশের মানুষের ন্যায়সংগত আন্দোলনকে বহিঃশক্তির তাবেদার আওয়ামী লীগ সরকার নিষ্ঠুর শক্তিপ্রয়োগের মাধ্যমে দমন করে; এবং
যেহেতু অবৈধভাবে ক্ষমতা অব্যাহত রাখতে আওয়ামী লীগ সরকার তিনটি প্রহসনের নির্বাচনে (২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ এর জাতীয় সংসদ নির্বাচন) এদেশের মানুষকে ভোটাধিকার ও প্রতিনিধিত্ব থেকে বঞ্চিত করে; এবং
যেহেতু, আওয়ামী লীগ আমলে ভিন্নমতের রাজনৈতিক নেতা-কর্মী, শিক্ষার্থী ও তরুণদের নিষ্ঠুরভাবে নির্যাতন করা হয় এবং সরকারী চাকুরীতে একচেটিয়া দলীয় নিয়োগ ও কোটাভিত্তিক বৈষম্যের কারণে ছাত্র, চাকুরী প্রত্যাশী ও নাগরিকদের মধ্যে চরম ক্ষোভের জন্ম হয়; এবং
যেহেতু বিরোধী রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের ওপর চরম নিপীড়নের ফলে দীর্ঘদিন ধরে জনরোষের সৃষ্টি হয় এবং জনগণ সকল বৈধ প্রক্রিয়া অবলম্বন করে ফ্যাসিবাদবিরোধী লড়াই চালিয়ে যায়; এবং
যেহেতু, সরকারি চাকরিতে বৈষম্যমূলক কোটাব্যবস্থার বিলোপ ও দুর্নীতি প্রতিরোধে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে আওয়ামী লীগ সরকার কর্তৃক ব্যাপক দমন-পীড়ন, বর্বর অত্যাচার ও মানবতাবিরোধী হত্যাকাণ্ড চালানো হয়, যার ফলে সারা দেশে দল-মত নির্বিশেষে ছাত্র-জনতার উত্তাল গণবিক্ষোভ গণঅভ্যুত্থানে রূপ নেয়; এবং
যেহেতু ফ্যাসিস্ট শক্তির বিরুদ্ধে অদম্য ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে রাজনৈতিক দল, ধর্মীয়, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, পেশাজীবী, শ্রমিক সংগঠনসহ সমাজের সকল স্তরের মানুষ যোগদান করে এবং আওয়ামী ফ্যাসিবাদী বাহিনী রাজপথে নারী-শিশুসহ প্রায় এক হাজার মানুষকে নির্বিচারে হত্যা করে, অগনিত মানুষ পঙ্গুত্ব ও অন্ধত্ব বরণ করে এবং আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্যায়ে সামরিক বাহিনীর সদস্যগণ জনগণের গণতান্ত্রিক লড়াইকে সমর্থন প্রদান করে; এবং
যেহেতু, অবৈধ শেখ হাসিনা সরকারের পতন, ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিলোপ ও নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের লক্ষ্যে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে জনগণ অসহযোগ আন্দোলন শুরু করে, পরবর্তী সময়ে ৫ আগস্ট ঢাকা অভিমুখে লংমার্চ পরিচালনা করে এবং ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনরত সকল রাজনৈতিক দল, ছাত্র-জনতা তথা সর্বস্তরের সকল শ্রেণী, পেশার আপামর জনসাধারণের তীব্র আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্যায়ে গণভবনমুখী জনতার উত্তাল যাত্রার মুখে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা ৫ আগস্ট ২০২৪ তারিখে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়; এবং
যেহেতু বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও সাংবিধানিক সংকট মোকাবেলায় গণঅভ্যূত্থানের মধ্য দিয়ে ব্যক্ত জনগণের সার্বভৌমত্বের প্রত্যয় ও প্রয়োগ রাজনৈতিক ও আইনি উভয় দিক থেকে যুক্তিসঙ্গত, বৈধ ও আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত; এবং
যেহেতু জনগণের দাবি অনুযায়ী এরপর অবৈধ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ ভেঙে দেওয়া হয় এবং সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদ অনুসারে সুপ্রীম কোর্টের মতামতের আলোকে সাংবিধানিকভাবে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে ৮ আগস্ট ২০২৪ তারিখে একটি অন্তর্বতীকালীন সরকার গঠন করা হয়; এবং
যেহেতু, বাংলাদেশের সর্বস্তরের জনগণের ফ্যাসিবাদবিরোধী তীব্র আকাঙ্ক্ষা এবং ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ফ্যাসিবাদ, বৈষম্য ও দুর্নীতিমুক্ত সমাজ ও রাষ্ট্র বিনির্মাণের অভিপ্রায় প্রকাশিত হয়; এবং
সেহেতু, বাংলাদেশের জনগণ সুশাসন ও সুষ্ঠু নির্বাচন, ফ্যাসিবাদী শাসনের পুনরাবৃত্তি রোধ, আইনের শাসন এবং অর্থনৈতিক ও সামাজিক ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে বিদ্যমান সংবিধান ও সকল রাষ্ট্রীয় ও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের গণতান্ত্রিক সংস্কার সাধনের অভিপ্রায় ব্যক্ত করছে; এবং
সেহেতু, বাংলাদেশের জনগণ বিগত ষোল বছরের দীর্ঘ ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলন-সংগ্রাম কালে এবং ২০২৪ সালের জুলাই গণ-অভ্যুত্থানকালীন সময়ে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকার কর্তৃক সংঘটিত গুম-খুন, হত্যা, গণহত্যা, মানবতা বিরোধী অপরাধ ও সকল ধরনের নির্যাতন, নিপীড়ন এবং রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি লুণ্ঠনের অপরাধসমূহের দ্রুত উপযুক্ত বিচারের দৃঢ় অভিপ্রায় ব্যক্ত করছে; এবং
সেহেতু, বাংলাদেশের জনগণ জুলাই গনঅভ্যুত্থানের সকল শহিদদের জাতীয় বীর হিসেবে ঘোষণা করে শহিদদের পরিবার, আহত যোদ্ধা এবং আন্দোলনকারী ছাত্রজনতাকে প্রয়োজনীয় সকল আইনি সুরক্ষা দেওয়ার অভিপ্রায় ব্যক্ত করছে; এবং
সেহেতু, বাংলাদেশের জনগণ যুক্তিসঙ্গত সময়ে আয়োজিতব্য অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ একটি নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত জাতীয় সংসদে প্রতিশ্রুত প্রয়োজনীয় সাংবিধানিক সংস্কারের মাধ্যমে দেশের মানুষের প্রত্যাশা, বিশেষত তরুণ প্রজন্মের আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী আইনের শাসন ও মানবাধিকার, দুর্নীতি, শোষণমুক্ত, বৈষম্যহীন ও মূল্যবোধসম্পন্ন সমাজ এবং গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার অভিপ্রায় ব্যক্ত করছে; এবং
সেহেতু বাংলাদেশের জনগণ এই প্রত্যাশা ব্যক্ত করছে যে একটি পরিবেশ ও জলবায়ু সহিষ্ণু অন্তর্ভুক্তিমূলক ও টেকসই উন্নয়ন কৌশলের মাধ্যমে বর্তমান ও ভবিষ্যত প্রজন্মের অধিকার সংরক্ষিত হবে; এবং
বাংলাদেশের জনগণ এই অভিপ্রায় ব্যক্ত করছে যে, ছাত্র-গণঅভ্যুত্থান ২০২৪-এর উপযুক্ত রাষ্ট্রীয় ও সাংবিধানিক স্বীকৃতি প্রদান করা হবে এবং পরবর্তী নির্বাচনে নির্বাচিত সরকারের সংস্কারকৃত সংবিধানের তফসিলে এ ঘোষণাপত্র সন্নিবেশিত থাকবে।
৫ আগস্ট ২০২৪ সালে গণঅভ্যুত্থানে বিজয়ী বাংলাদেশের জনগণের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন হিসেবে এই ঘোষণাপত্র প্রনয়ণ করা হলো বলে উল্লেখ করেন প্রধান উপদেষ্টা।
২০২৪-এর ছাত্র-গণঅভ্যুত্থান রাষ্ট্রীয় ও সাংবিধানিক স্বীকৃতি পাবে জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, পরবর্তী নির্বাচনে নির্বাচিত সরকারের সংস্কারকৃত সংবিধানের তফসিলে জুলাই ঘোষণাপত্র সন্নিবেশিত থাকবে। তিনি আরও বলেন, ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে শহিদদের জাতীয় বীর হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার (৫ আগস্ট) বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে প্রধান উপদেষ্টা ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ পাঠে এ কথা বলেন। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা।
প্রধান উপদেষ্টা জুলাই ঘোষণাপত্র পাঠে বলেন, যেহেতু উপনিবেশ বিরোধী লড়াইয়ের সুদীর্ঘকালের ধারাবাহিকতায় এই ভূখণ্ডের মানুষ দীর্ঘ ২৩ বছর পাকিস্তানের স্বৈরশাসকদের বঞ্চনা ও শোষণের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিল এবং নির্বিচার গণহত্যার বিরুদ্ধে গণপ্রতিরোধ গড়ে ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ স্বাধীনতা ঘোষণা করে জাতীয় মুক্তির লক্ষ্যে রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেছিল; এবং
যেহেতু, বাংলাদেশের আপামর জনগণ দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে এই ভূখণ্ডে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে বিবৃত সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচারের ভিত্তিতে উদার গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র বিনির্মাণের আকাঙ্ক্ষাকে বাস্তবায়নের জন্য সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করেছে; এবং
যেহেতু স্বাধীন বাংলাদেশের ১৯৭২ সালের সংবিধান প্রনয়ন পদ্ধতি, এর কাঠামোগত দুর্বলতা ও অপপ্রয়োগের ফলে স্বাধীনতা-পরবর্তী আওয়ামী লীগ সরকার মুক্তিযুদ্ধের জনআকাঙ্ক্ষা পূরণে ব্যর্থ হয়েছিল এবং গণতন্ত্র ও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যকারিতা ক্ষুণ্ণ করেছিল; এবং
যেহেতু স্বাধীনতা-পরবর্তী আওয়ামী লীগ সরকার স্বাধীনতার মূলমন্ত্র গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার বিপরীতে বাকশালের নামে সাংবিধানিকভাবে একদলীয় শাসনব্যবস্থা কায়েম করে এবং মতপ্রকাশ ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতা হরণ করে, যার প্রতিক্রিয়ায় ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর দেশে সিপাহী-জনতার ঐক্যবদ্ধ বিপ্লব সংঘটিত হয় এবং পরবর্তী সময়ে একদলীয় বাকশাল পদ্ধতির পরিবর্তে বহুদলীয় গণতন্ত্র, মতপ্রকাশ ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতা পুনঃপ্রবর্তনের পথ সুগম হয়, এবং
যেহেতু আশির দশকে সামরিক স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে দীর্ঘ নয় বছর ছাত্র-জনতার অবিরাম সংগ্রামের মধ্য দিয়ে ১৯৯০ সালের গণঅভ্যুত্থান সংঘটিত হয় এবং ১৯৯১ইং সনে পুনরায় সংসদীয় গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হয়; এবং
যেহেতু দেশী-বিদেশী চক্রান্তে সরকার পরিবর্তনের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ব্যাহত হওয়ায় ১/১১ -এর ষড়যন্ত্রমূলক ব্যবস্থার মাধ্যমে বাংলাদেশে শেখ হাসিনার একচ্ছত্র ক্ষমতা, আধিপত্য ও ফ্যাসিবাদের পথ সুগম করা হয়; এবং
যেহেতু গত দীর্ঘ ষোল বছরের ফ্যাসিবাদী, অগণতান্ত্রিক এবং গণবিরোধী শাসনব্যবস্থা কায়েমের লক্ষ্যে এবং একদলীয় রাষ্ট্র ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার অতি উগ্র বাসনা চরিতার্থ করার অভিপ্রায়ে সংবিধানের অবৈধ ও অগণতান্ত্রিক পরিবর্তন করা হয় এবং যার ফলে একদলীয় একচ্ছত্র ক্ষমতা ও আধিপত্য প্রতিষ্ঠার পথ সুগম হয়; এবং
যেহেতু শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ সরকারের দুঃশাসন, গুম-খুন, আইন-বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা হরণ এবং একদলীয় স্বার্থে সংবিধান সংশোধন ও পরিবর্তন বাংলাদেশের সকল রাষ্ট্রীয় ও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানসমূহকে ধ্বংস করে; এবং
যেহেতু, হাসিনা সরকারের আমলে তারই নেতৃত্বে একটি চরম গণবিরোধী, একনায়কতান্ত্রিক, ও মানবাধিকার হরণকারী শক্তি বাংলাদেশকে একটি ফ্যাসিবাদী, মাফিয়া এবং ব্যর্থ রাষ্ট্রের রূপ দিয়ে আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করে; এবং
যেহেতু, তথাকথিত উন্নয়নের নামে শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদী নেতৃত্বে সীমাহীন দুর্নীতি, ব্যাংক লুট, অর্থ পাচার ও অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলো ধ্বংসের মধ্য দিয়ে বিগত পতিত দুর্নীতিবাজ আওয়ামী লীগ সরকার বাংলাদেশ ও এর অমিত অর্থনৈতিক সম্ভাবনাকে বিপর্যস্ত করে তোলে এবং এর পরিবেশ, প্রাণবৈচিত্র্য ও জলবায়ুকে বিপন্ন করে; এবং
যেহেতু শেখ হাসিনার ফ্যাসিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক দল, ছাত্র ও শ্রমিক সংগঠনসহ সমাজের সর্বস্তরের জনগণ গত প্রায় ষোল বছর যাবত নিরন্তর গণতান্ত্রিক সংগ্রাম করে জেল-জুলুম, হামলা-মামলা, গুম-খুন ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়; এবং
যেহেতু বাংলাদেশে বিদেশী রাষ্ট্রের অন্যায় প্রভুত্ব, শোষণ ও খবরদারিত্বের বিরুদ্ধে এদেশের মানুষের ন্যায়সংগত আন্দোলনকে বহিঃশক্তির তাবেদার আওয়ামী লীগ সরকার নিষ্ঠুর শক্তিপ্রয়োগের মাধ্যমে দমন করে; এবং
যেহেতু অবৈধভাবে ক্ষমতা অব্যাহত রাখতে আওয়ামী লীগ সরকার তিনটি প্রহসনের নির্বাচনে (২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ এর জাতীয় সংসদ নির্বাচন) এদেশের মানুষকে ভোটাধিকার ও প্রতিনিধিত্ব থেকে বঞ্চিত করে; এবং
যেহেতু, আওয়ামী লীগ আমলে ভিন্নমতের রাজনৈতিক নেতা-কর্মী, শিক্ষার্থী ও তরুণদের নিষ্ঠুরভাবে নির্যাতন করা হয় এবং সরকারী চাকুরীতে একচেটিয়া দলীয় নিয়োগ ও কোটাভিত্তিক বৈষম্যের কারণে ছাত্র, চাকুরী প্রত্যাশী ও নাগরিকদের মধ্যে চরম ক্ষোভের জন্ম হয়; এবং
যেহেতু বিরোধী রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের ওপর চরম নিপীড়নের ফলে দীর্ঘদিন ধরে জনরোষের সৃষ্টি হয় এবং জনগণ সকল বৈধ প্রক্রিয়া অবলম্বন করে ফ্যাসিবাদবিরোধী লড়াই চালিয়ে যায়; এবং
যেহেতু, সরকারি চাকরিতে বৈষম্যমূলক কোটাব্যবস্থার বিলোপ ও দুর্নীতি প্রতিরোধে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে আওয়ামী লীগ সরকার কর্তৃক ব্যাপক দমন-পীড়ন, বর্বর অত্যাচার ও মানবতাবিরোধী হত্যাকাণ্ড চালানো হয়, যার ফলে সারা দেশে দল-মত নির্বিশেষে ছাত্র-জনতার উত্তাল গণবিক্ষোভ গণঅভ্যুত্থানে রূপ নেয়; এবং
যেহেতু ফ্যাসিস্ট শক্তির বিরুদ্ধে অদম্য ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে রাজনৈতিক দল, ধর্মীয়, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, পেশাজীবী, শ্রমিক সংগঠনসহ সমাজের সকল স্তরের মানুষ যোগদান করে এবং আওয়ামী ফ্যাসিবাদী বাহিনী রাজপথে নারী-শিশুসহ প্রায় এক হাজার মানুষকে নির্বিচারে হত্যা করে, অগনিত মানুষ পঙ্গুত্ব ও অন্ধত্ব বরণ করে এবং আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্যায়ে সামরিক বাহিনীর সদস্যগণ জনগণের গণতান্ত্রিক লড়াইকে সমর্থন প্রদান করে; এবং
যেহেতু, অবৈধ শেখ হাসিনা সরকারের পতন, ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিলোপ ও নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের লক্ষ্যে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে জনগণ অসহযোগ আন্দোলন শুরু করে, পরবর্তী সময়ে ৫ আগস্ট ঢাকা অভিমুখে লংমার্চ পরিচালনা করে এবং ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনরত সকল রাজনৈতিক দল, ছাত্র-জনতা তথা সর্বস্তরের সকল শ্রেণী, পেশার আপামর জনসাধারণের তীব্র আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্যায়ে গণভবনমুখী জনতার উত্তাল যাত্রার মুখে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা ৫ আগস্ট ২০২৪ তারিখে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়; এবং
যেহেতু বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও সাংবিধানিক সংকট মোকাবেলায় গণঅভ্যূত্থানের মধ্য দিয়ে ব্যক্ত জনগণের সার্বভৌমত্বের প্রত্যয় ও প্রয়োগ রাজনৈতিক ও আইনি উভয় দিক থেকে যুক্তিসঙ্গত, বৈধ ও আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত; এবং
যেহেতু জনগণের দাবি অনুযায়ী এরপর অবৈধ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ ভেঙে দেওয়া হয় এবং সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদ অনুসারে সুপ্রীম কোর্টের মতামতের আলোকে সাংবিধানিকভাবে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে ৮ আগস্ট ২০২৪ তারিখে একটি অন্তর্বতীকালীন সরকার গঠন করা হয়; এবং
যেহেতু, বাংলাদেশের সর্বস্তরের জনগণের ফ্যাসিবাদবিরোধী তীব্র আকাঙ্ক্ষা এবং ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ফ্যাসিবাদ, বৈষম্য ও দুর্নীতিমুক্ত সমাজ ও রাষ্ট্র বিনির্মাণের অভিপ্রায় প্রকাশিত হয়; এবং
সেহেতু, বাংলাদেশের জনগণ সুশাসন ও সুষ্ঠু নির্বাচন, ফ্যাসিবাদী শাসনের পুনরাবৃত্তি রোধ, আইনের শাসন এবং অর্থনৈতিক ও সামাজিক ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে বিদ্যমান সংবিধান ও সকল রাষ্ট্রীয় ও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের গণতান্ত্রিক সংস্কার সাধনের অভিপ্রায় ব্যক্ত করছে; এবং
সেহেতু, বাংলাদেশের জনগণ বিগত ষোল বছরের দীর্ঘ ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলন-সংগ্রাম কালে এবং ২০২৪ সালের জুলাই গণ-অভ্যুত্থানকালীন সময়ে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকার কর্তৃক সংঘটিত গুম-খুন, হত্যা, গণহত্যা, মানবতা বিরোধী অপরাধ ও সকল ধরনের নির্যাতন, নিপীড়ন এবং রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি লুণ্ঠনের অপরাধসমূহের দ্রুত উপযুক্ত বিচারের দৃঢ় অভিপ্রায় ব্যক্ত করছে; এবং
সেহেতু, বাংলাদেশের জনগণ জুলাই গনঅভ্যুত্থানের সকল শহিদদের জাতীয় বীর হিসেবে ঘোষণা করে শহিদদের পরিবার, আহত যোদ্ধা এবং আন্দোলনকারী ছাত্রজনতাকে প্রয়োজনীয় সকল আইনি সুরক্ষা দেওয়ার অভিপ্রায় ব্যক্ত করছে; এবং
সেহেতু, বাংলাদেশের জনগণ যুক্তিসঙ্গত সময়ে আয়োজিতব্য অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ একটি নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত জাতীয় সংসদে প্রতিশ্রুত প্রয়োজনীয় সাংবিধানিক সংস্কারের মাধ্যমে দেশের মানুষের প্রত্যাশা, বিশেষত তরুণ প্রজন্মের আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী আইনের শাসন ও মানবাধিকার, দুর্নীতি, শোষণমুক্ত, বৈষম্যহীন ও মূল্যবোধসম্পন্ন সমাজ এবং গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার অভিপ্রায় ব্যক্ত করছে; এবং
সেহেতু বাংলাদেশের জনগণ এই প্রত্যাশা ব্যক্ত করছে যে একটি পরিবেশ ও জলবায়ু সহিষ্ণু অন্তর্ভুক্তিমূলক ও টেকসই উন্নয়ন কৌশলের মাধ্যমে বর্তমান ও ভবিষ্যত প্রজন্মের অধিকার সংরক্ষিত হবে; এবং
বাংলাদেশের জনগণ এই অভিপ্রায় ব্যক্ত করছে যে, ছাত্র-গণঅভ্যুত্থান ২০২৪-এর উপযুক্ত রাষ্ট্রীয় ও সাংবিধানিক স্বীকৃতি প্রদান করা হবে এবং পরবর্তী নির্বাচনে নির্বাচিত সরকারের সংস্কারকৃত সংবিধানের তফসিলে এ ঘোষণাপত্র সন্নিবেশিত থাকবে।
৫ আগস্ট ২০২৪ সালে গণঅভ্যুত্থানে বিজয়ী বাংলাদেশের জনগণের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন হিসেবে এই ঘোষণাপত্র প্রনয়ণ করা হলো বলে উল্লেখ করেন প্রধান উপদেষ্টা।
১৭ আগস্ট, ২০২৫ ১৭:৫৪
১৭ আগস্ট, ২০২৫ ১৭:৫২
১৭ আগস্ট, ২০২৫ ১৭:৪৯
১৭ আগস্ট, ২০২৫ ১৭:৪০
১৭ আগস্ট, ২০২৫ ১৪:০১
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস জানিয়েছেন, নিজের ইচ্ছায় নয়, বরং জনগণের চাহিদায় তিনি সরকারপ্রধানের দায়িত্ব নিয়েছেন। সম্প্রতি মালয়েশিয়া সফরকালে দেশটির রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা বারনামাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা বলেন।
ড. ইউনূস বলেন, “এটা আমার নয়, এটা সেইসব মানুষের চাওয়া, যারা পরিবর্তন চেয়েছেন। আমি শুধু তাদের সহায়তা করছি।” প্রধান উপদেষ্টা জানান, দায়িত্ব পালনে অসুবিধা রয়েছে এবং অনেক পক্ষ তা ব্যাহত করার চেষ্টা করছে। তাঁর ভাষায়, “বাংলাদেশ থেকে বিতাড়িত রাজনৈতিক উপাদানগুলো পুরো ব্যবস্থাকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে।”
ভোটের অপেক্ষায় থাকা তরুণ প্রজন্মের প্রসঙ্গ টেনে ড. ইউনূস বলেন, “গত দেড় দশকে অনেক তরুণ ভোটার হয়েছেন। কিন্তু কেউ ১০ বছর ধরে, কেউবা ১৫ বছর ধরে অপেক্ষা করছেন ভোট দেওয়ার জন্য। এবার তাঁরা প্রথমবারের মতো ভোট দিতে পারবেন।”
সাক্ষাৎকারে ড. ইউনূস রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলায় মালয়েশিয়ার প্রভাব কাজে লাগানোর আহ্বান জানান। তিনি বলেন, আসিয়ানের সভাপতি হিসেবে দেশটির নেতৃত্ব এ সমস্যা সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
প্রধান উপদেষ্টা জানান, গত ১৮ মাসে নতুন করে দেড় লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। এর সঙ্গে আগেই থাকা ১২ লাখ শরণার্থী যুক্ত হওয়ায় সংকট আরও জটিল হয়েছে। তিনি জানান, যুক্তরাষ্ট্র তহবিল বন্ধ করে দেওয়ায় পরিস্থিতি আরও কঠিন হয়ে উঠেছে।
ড. ইউনূস আরও বলেন, এ সংকটের স্থায়ী সমাধানের জন্য আগামী কয়েক মাসে তিনটি আন্তর্জাতিক সম্মেলন হবে—আগস্টে কক্সবাজারে, সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনের ফাঁকে এবং বছরের শেষে কাতারের দোহায়।
মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমের আমন্ত্রণে ১১ আগস্ট সফরে যান ড. ইউনূস। লালগালিচা সংবর্ধনা, গার্ড অব অনার ও গান স্যালুটের মাধ্যমে তাঁকে স্বাগত জানানো হয়।
তিন দিনের সফরে তিনি দ্বিপাক্ষিক বৈঠকসহ একাধিক আলোচনায় অংশ নেন। এ সময় বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার মধ্যে প্রতিরক্ষা, জ্বালানি, ব্যবসা-বাণিজ্য ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান নিয়ে পাঁচটি সমঝোতা স্মারক ও তিনটি নোট বিনিময় হয়। সফরের দ্বিতীয় দিনে মালয়েশিয়ার ন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি পান ড. ইউনূস। ১৪ আগস্ট রাতে তিনি দেশে ফেরেন।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস জানিয়েছেন, নিজের ইচ্ছায় নয়, বরং জনগণের চাহিদায় তিনি সরকারপ্রধানের দায়িত্ব নিয়েছেন। সম্প্রতি মালয়েশিয়া সফরকালে দেশটির রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা বারনামাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা বলেন।
ড. ইউনূস বলেন, “এটা আমার নয়, এটা সেইসব মানুষের চাওয়া, যারা পরিবর্তন চেয়েছেন। আমি শুধু তাদের সহায়তা করছি।” প্রধান উপদেষ্টা জানান, দায়িত্ব পালনে অসুবিধা রয়েছে এবং অনেক পক্ষ তা ব্যাহত করার চেষ্টা করছে। তাঁর ভাষায়, “বাংলাদেশ থেকে বিতাড়িত রাজনৈতিক উপাদানগুলো পুরো ব্যবস্থাকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে।”
ভোটের অপেক্ষায় থাকা তরুণ প্রজন্মের প্রসঙ্গ টেনে ড. ইউনূস বলেন, “গত দেড় দশকে অনেক তরুণ ভোটার হয়েছেন। কিন্তু কেউ ১০ বছর ধরে, কেউবা ১৫ বছর ধরে অপেক্ষা করছেন ভোট দেওয়ার জন্য। এবার তাঁরা প্রথমবারের মতো ভোট দিতে পারবেন।”
সাক্ষাৎকারে ড. ইউনূস রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলায় মালয়েশিয়ার প্রভাব কাজে লাগানোর আহ্বান জানান। তিনি বলেন, আসিয়ানের সভাপতি হিসেবে দেশটির নেতৃত্ব এ সমস্যা সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
প্রধান উপদেষ্টা জানান, গত ১৮ মাসে নতুন করে দেড় লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। এর সঙ্গে আগেই থাকা ১২ লাখ শরণার্থী যুক্ত হওয়ায় সংকট আরও জটিল হয়েছে। তিনি জানান, যুক্তরাষ্ট্র তহবিল বন্ধ করে দেওয়ায় পরিস্থিতি আরও কঠিন হয়ে উঠেছে।
ড. ইউনূস আরও বলেন, এ সংকটের স্থায়ী সমাধানের জন্য আগামী কয়েক মাসে তিনটি আন্তর্জাতিক সম্মেলন হবে—আগস্টে কক্সবাজারে, সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনের ফাঁকে এবং বছরের শেষে কাতারের দোহায়।
মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমের আমন্ত্রণে ১১ আগস্ট সফরে যান ড. ইউনূস। লালগালিচা সংবর্ধনা, গার্ড অব অনার ও গান স্যালুটের মাধ্যমে তাঁকে স্বাগত জানানো হয়।
তিন দিনের সফরে তিনি দ্বিপাক্ষিক বৈঠকসহ একাধিক আলোচনায় অংশ নেন। এ সময় বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার মধ্যে প্রতিরক্ষা, জ্বালানি, ব্যবসা-বাণিজ্য ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান নিয়ে পাঁচটি সমঝোতা স্মারক ও তিনটি নোট বিনিময় হয়। সফরের দ্বিতীয় দিনে মালয়েশিয়ার ন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি পান ড. ইউনূস। ১৪ আগস্ট রাতে তিনি দেশে ফেরেন।
১৭ আগস্ট, ২০২৫ ১১:৪৮
বহুল আলোচিত ও প্রত্যাশিত জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন পদ্ধতি ও আইনি ভিত্তির কৌশল খুঁজছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। এ বিষয়ে সংলাপে অংশগ্রহণকারী অধিকাংশ দলের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বিশেষজ্ঞদের মতামত নিচ্ছে কমিশন। এরই মধ্যে একটি বিশেষজ্ঞ দলসহ অনানুষ্ঠানিকভাবে অভিজ্ঞজনের মতামত নেওয়া হয়েছে। এ সপ্তাহে আরও কয়েকজন বিশেষজ্ঞের সঙ্গে বসে বিস্তারিত আলোচনা করে তাদের মতামত নেবে কমিশন।
এদিকে গতকাল শনিবার রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে জুলাই সনদের একটি সমন্বিত চূড়ান্ত খসড়া পাঠিয়েছে ঐকমত্য কমিশন। সনদে মোট ৮৪টি বিষয়ে ঐকমত্যের কথা জানানো হয়েছে। পাশাপাশি ৮ দফা অঙ্গীকারনামায় প্রথমেই বলা হয়েছে, ‘দীর্ঘ ধারাবাহিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে প্রণীত ও ঐকমত্যের ভিত্তিতে গৃহীত ‘নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত’-এর দলিল হিসেবে ‘জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫’-এর পরিপূর্ণ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করব। সনদ সংক্রান্ত যে কোনো প্রশ্নের চূড়ান্ত মীমাংসার এখতিয়ার বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের ওপর ন্যস্ত থাকবে।’
অঙ্গীকারনামার শেষ দফায় বলা হয়েছে, ‘জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫-এর যেসব প্রস্তাব/সুপারিশ অবিলম্বে বাস্তবায়নযোগ্য বলে বিবেচিত হবে সেগুলো কোনো প্রকার কালক্ষেপণ না করেই পরবর্তী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে সরকার ও অন্যান্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সম্পূর্ণরূপে বাস্তবায়ন করবে।’
এ বিষয়ে আগামী বুধবারের মধ্যে দলগুলোকে মতামত পাঠাতে বলা হয়েছে। সেইসঙ্গে চলতি সপ্তাহের শেষে বা আগামী সপ্তাহে ঐকমত্য কমিশন রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে তৃতীয় দফায় বৈঠকে বসতে পারে। তার পরই জুলাই সনদ চূড়ান্ত রূপ পাবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
জানা যায়, সনদের ভাষ্যের কোনো শব্দ, বাক্য গঠন বা এতদসংশ্লিষ্ট বিষয়ে কোনো মন্তব্য থাকলে তা আগামী বুধবার (২০ আগস্ট) বিকেল ৪টার মধ্যে কমিশনের কার্যালয়ে পাঠাতে অনুরোধ করা হয়েছে। অবশ্য জুলাই সনদের এই সমন্বিত পূর্ণাঙ্গ খসড়া তৈরির আগে কমিশনের অগ্রগতির বিষয়ে অবহিত করে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসেরও মতামত নেওয়া হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টার মতামতের ভিত্তিতে কিছু শব্দ ও ভাষাগত সংযোজন-বিয়োজন করে সনদের খসড়া চূড়ান্ত করা হয়েছে। এরপর তা রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে পাঠানো হয়।
সনদের পটভূমিতে বলা হয়েছে, স্বৈরাচারী শাসক পালিয়ে যাওয়ার পর ‘জনগণের মননে রাষ্ট্র-কাঠামো পুনর্গঠনের এক প্রবল অভিপ্রায় সৃষ্টি হয়েছে। রাষ্ট্র সংস্কার, বিশেষ করে সংবিধানের মৌলিক সংস্কার, ধসে পড়া নির্বাচনি ব্যবস্থার পুনর্গঠন, গণতান্ত্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আইন ও বিধি-বিধানের সংস্কার, স্বাধীন বিচার বিভাগ প্রতিষ্ঠা এবং সুশাসিত জবাবদিহিমূলক ও দুর্নীতিমুক্ত সরকার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার যে ঐতিহাসিক সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে, তার সদ্ব্যবহার করা আমাদের সকলের নৈতিক দায়িত্ব।
অবশ্য জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি ও বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া এবং নোট অব ডিসেন্টের মতো বিষয়গুলো নিয়ে যে সমন্বিত খসড়া চূড়ান্ত করা হয়েছে, তাতে দলগুলোর পক্ষ থেকে কী ধরনের মতামত আসে, সেটিই এখন দেখার অপেক্ষা। বিশেষ করে বিএনপি এসব বিষয়ে কী অবস্থান নেবে, সেদিকেই নজর বেশি। যদিও বৃহত্তর স্বার্থে বিএনপিকে জুলাই সনদের আরও ছাড় দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে মিত্র দলগুলো।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্য ড. বদিউল আলম মজুমদার গতকাল বলেন, ‘আমরা আশা করি রাজনৈতিক দলগুলো জুলাই সনদের সমন্বিত পূর্ণাঙ্গ খসড়ায় সম্মত হবে। কয়েকটি দল ৯-১০টি বিষয়ে নোট অব ডিসেন্ট দিলেও বেশিরভাগ দলই একমত পোষণ করেছে। এখন নোট অব ডিসেন্ট দেওয়া দলগুলো গণতন্ত্র এবং জাতির বৃহত্তর স্বার্থে জুলাই সনদের সমন্বিত পূর্ণাঙ্গ খসড়া মেনে নেবে বলে বিশ্বাস করি।’
সনদ কবে নাগাদ ঘোষণা হবে- এমন প্রশ্নের উত্তরে ড. মজুমদার বলেন, ‘আমরা তো এক পায়ে দাঁড়িয়ে আছি। দলগুলো যত দ্রুত সাড়া দেবে তত দ্রুত আমরা এগোতে পারব।’ তিনি বলেন, ‘আমরা জুলাই সনদের সমন্বিত পূর্ণাঙ্গ খসড়া বাস্তবায়ন ও আইনি ভিত্তির কৌশল খুঁজছি। এ লক্ষ্যে বিশিষ্ট ও বিশেষজ্ঞদের মতামত নেওয়া হচ্ছে। তা ছাড়া রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা ও মতামতের ভিত্তিতে দ্রুত সময়ের মধ্যে জুলাই জাতীয় সনদ-২০২৫ ঘোষণা করা হবে।’
জানা গেছে, সংস্কার প্রশ্নে রাজনৈতিক দলগুলোর সংলাপে নেওয়া সিদ্ধান্ত যাতে পরবর্তী সরকারের সময়ও বাস্তবায়ন করা হয়, তা নিশ্চিত করতে আইনি সুরক্ষার ব্যবস্থা রেখে জুলাই জাতীয় সনদের ‘সমন্বিত চূড়ান্ত খসড়া’ প্রস্তুত করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, এই সনদ নিয়ে আদালতে প্রশ্ন তোলা যাবে না। সনদের কোনো শব্দ, বাক্য ও নীতিমালা সংবিধান বা অন্য কোনো আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হলে এই সনদের প্রাধান্য থাকবে। এই সনদের যেসব সুপারিশ অবিলম্বে বাস্তবায়নযোগ্য, দেরি না করে সেগুলো পরবর্তী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই বাস্তবায়নের পদক্ষেপ নেবে সরকার।
জুলাই সনদের সমন্বিত পূর্ণাঙ্গ খসড়ায় আরও বলা হয়েছে, চলতি বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে ছয়টি কমিশনের প্রতিবেদনের ছাপানো অনুলিপি সব রাজনৈতিক দলের কাছে প্রেরণ করা হয়। এরপর ৫ মার্চ পুলিশ সংস্কার কমিশন ছাড়া অন্য পাঁচটি কমিশনের প্রতিবেদনের গুরুত্বপূর্ণ ১৬৬টি সুপারিশ স্প্রেডশিট আকারে ৩৮টি রাজনৈতিক দল ও জোটের কাছে মতামতের জন্য পাঠানো হয়। এর মধ্যে সংবিধান সংস্কারবিষয়ক ৭০টি, নির্বাচন সংস্কারবিষয়ক ২৭টি, বিচার বিভাগ সংক্রান্ত ২৩টি, জনপ্রশাসন সংক্রান্ত ২৬টি ও দুর্নীতি দমনবিষয়ক ২৭টি সুপারিশ ছিল। পুলিশ সংস্কার কমিশনের সুপারিশগুলো সরাসরি প্রশাসনিক সিদ্ধান্তে বাস্তবায়নযোগ্য হওয়ায় সেগুলো স্প্রেডশিটে রাখা হয়নি। অন্যদিকে, সংবিধান সংস্কার কমিশন ছাড়া অন্য পাঁচটি কমিশনের দ্রুত বাস্তবায়নযোগ্য সুপারিশগুলোর তালিকা সরকারের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
এতে আরও উল্লেখ করা হয়, মোট ৩৫টি রাজনৈতিক দল ও জোট তাদের মতামত কমিশনের কাছে প্রেরণ করে। অনেকে বিস্তারিত ব্যাখ্যা বিশ্লেষণও প্রদান করে। মতামত গ্রহণের পাশাপাশি প্রথম পর্যায়ে ২০ মার্চ থেকে ১৯ মে পর্যন্ত ৩২টি দল ও জোটের সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের মোট ৪৭টি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনা ফলপ্রসূ করতে কিছু দলের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক হয়। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে প্রথম পর্যায়ের আলোচনা শেষ করে কমিশন অগ্রাধিকার ও গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনায় মোট ২০টি বিষয় নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দ্বিতীয় দফা আলোচনায় মিলিত হয়। ৩ জুন থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত ৩০টি দল ও জোটের সঙ্গে মোট ২৩টি সেশনে আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
ঐকমত্য হওয়া সংস্কার প্রস্তাবের ওপর ভিত্তি করে ‘জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫’ ঘোষণা করার কথা জানিয়েছে সরকার। গত ২৯ জুলাই দলগুলোকে জুলাই সনদের একটি খসড়া দিয়েছিল জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। খসড়া নিয়ে দলগুলো মতামতও দিয়েছিল। তার ভিত্তিতে সমন্বিত খসড়া তৈরি করা হয়েছে। প্রয়োজনে সমন্বিত খসড়া নিয়ে দলগুলোর মতামতও আমলে নেবে কমিশন।
অন্যদিকে জুলাই সনদের বাস্তবায়ন পদ্ধতি নিয়ে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে ঐকমত্য কমিশন। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা হবে। এরপর সনদ চূড়ান্ত রূপ পাবে।
জানা যায়, ঐকমত্য কমিশন দ্বিতীয় দফায় ১৯টি বিষয়ে একমত হওয়ার কথা জানালেও বেশকিছু ইস্যুতে কয়েকটি রাজনৈতিক দল নোট অব ডিসেন্ট দিয়েছে। ফলে এ নিয়ে ‘না সূচক’ মনোভাবের কথাই জানিয়েছে দলগুলো। বিশেষ করে সংসদের উচ্চকক্ষে একশ আসন পিআর পদ্ধতি বা সংখ্যানুপাতিক হারে নির্বাচন করার বিষয়ে ঘোর আপত্তি জানিয়েছে বিএনপি। নোট অব ডিসেন্ট সত্ত্বেও ১৯টি বিষয়ে একমত হওয়ার কথা জানায় ঐকমত্য কমিশন।
রাজনৈতিক দল ও ঐকমত্য কমিশন সূত্র বলছে, সংস্কারের বিষয়গুলো ‘জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫’-এ সংযুক্ত করা হবে। এরপরই সব দলগুলো চূড়ান্তভাবে স্বাক্ষর করে সেটির স্বীকৃতি দেবে। তবে তার আগেই জুলাই সনদ বাস্তবায়নে আইনি ভিত্তির দাবি তোলে বেশকিছু দল। পরবর্তী সময়ে এ বিষয়ে সরকার ও কমিশনের পক্ষে উদ্যোগ নেওয়া হয়।
জুলাই জাতীয় সনদের সমন্বিত চূড়ান্ত খসড়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু গতকাল বলেন, ‘আমরা সনদের খসড়া পেয়েছি। যেহেতু বেশ বড় সেটি পড়ে দলীয় ফোরামে আলোচনা করেই আমরা দ্রুত মতামত দেবে।’
বাংলাদেশ এলডিপির চেয়ারম্যান ও ১২ দলীয় জোটের মুখপাত্র শাহাদাত হোসেন সেলিম বলেন, ‘আমরা তো অতীতের জুলাই সনদের খসড়ায় মতামত দিয়েছি। এখন চূড়ান্ত সমন্বিত খসড়া পেয়েছি। জোটের ফোরামে আলোচনা করে এ বিষয়ে মতামত দেওয়া হবে।’
এ প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ গতকাল রাতে বলেন, ‘জুলাই সনদের সমন্বিত চূড়ান্ত খসড়ার একটি কপি সন্ধ্যায় হাতে পেয়েছি। এখন সেটি পড়ে দেখব লেখা ঠিকভাবে আছে কি না? এরপর দলীয় ফোরামে আলোচনা করে মতামত জানানো হবে।’
বহুল আলোচিত ও প্রত্যাশিত জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন পদ্ধতি ও আইনি ভিত্তির কৌশল খুঁজছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। এ বিষয়ে সংলাপে অংশগ্রহণকারী অধিকাংশ দলের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বিশেষজ্ঞদের মতামত নিচ্ছে কমিশন। এরই মধ্যে একটি বিশেষজ্ঞ দলসহ অনানুষ্ঠানিকভাবে অভিজ্ঞজনের মতামত নেওয়া হয়েছে। এ সপ্তাহে আরও কয়েকজন বিশেষজ্ঞের সঙ্গে বসে বিস্তারিত আলোচনা করে তাদের মতামত নেবে কমিশন।
এদিকে গতকাল শনিবার রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে জুলাই সনদের একটি সমন্বিত চূড়ান্ত খসড়া পাঠিয়েছে ঐকমত্য কমিশন। সনদে মোট ৮৪টি বিষয়ে ঐকমত্যের কথা জানানো হয়েছে। পাশাপাশি ৮ দফা অঙ্গীকারনামায় প্রথমেই বলা হয়েছে, ‘দীর্ঘ ধারাবাহিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে প্রণীত ও ঐকমত্যের ভিত্তিতে গৃহীত ‘নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত’-এর দলিল হিসেবে ‘জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫’-এর পরিপূর্ণ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করব। সনদ সংক্রান্ত যে কোনো প্রশ্নের চূড়ান্ত মীমাংসার এখতিয়ার বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের ওপর ন্যস্ত থাকবে।’
অঙ্গীকারনামার শেষ দফায় বলা হয়েছে, ‘জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫-এর যেসব প্রস্তাব/সুপারিশ অবিলম্বে বাস্তবায়নযোগ্য বলে বিবেচিত হবে সেগুলো কোনো প্রকার কালক্ষেপণ না করেই পরবর্তী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে সরকার ও অন্যান্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সম্পূর্ণরূপে বাস্তবায়ন করবে।’
এ বিষয়ে আগামী বুধবারের মধ্যে দলগুলোকে মতামত পাঠাতে বলা হয়েছে। সেইসঙ্গে চলতি সপ্তাহের শেষে বা আগামী সপ্তাহে ঐকমত্য কমিশন রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে তৃতীয় দফায় বৈঠকে বসতে পারে। তার পরই জুলাই সনদ চূড়ান্ত রূপ পাবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
জানা যায়, সনদের ভাষ্যের কোনো শব্দ, বাক্য গঠন বা এতদসংশ্লিষ্ট বিষয়ে কোনো মন্তব্য থাকলে তা আগামী বুধবার (২০ আগস্ট) বিকেল ৪টার মধ্যে কমিশনের কার্যালয়ে পাঠাতে অনুরোধ করা হয়েছে। অবশ্য জুলাই সনদের এই সমন্বিত পূর্ণাঙ্গ খসড়া তৈরির আগে কমিশনের অগ্রগতির বিষয়ে অবহিত করে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসেরও মতামত নেওয়া হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টার মতামতের ভিত্তিতে কিছু শব্দ ও ভাষাগত সংযোজন-বিয়োজন করে সনদের খসড়া চূড়ান্ত করা হয়েছে। এরপর তা রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে পাঠানো হয়।
সনদের পটভূমিতে বলা হয়েছে, স্বৈরাচারী শাসক পালিয়ে যাওয়ার পর ‘জনগণের মননে রাষ্ট্র-কাঠামো পুনর্গঠনের এক প্রবল অভিপ্রায় সৃষ্টি হয়েছে। রাষ্ট্র সংস্কার, বিশেষ করে সংবিধানের মৌলিক সংস্কার, ধসে পড়া নির্বাচনি ব্যবস্থার পুনর্গঠন, গণতান্ত্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আইন ও বিধি-বিধানের সংস্কার, স্বাধীন বিচার বিভাগ প্রতিষ্ঠা এবং সুশাসিত জবাবদিহিমূলক ও দুর্নীতিমুক্ত সরকার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার যে ঐতিহাসিক সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে, তার সদ্ব্যবহার করা আমাদের সকলের নৈতিক দায়িত্ব।
অবশ্য জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি ও বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া এবং নোট অব ডিসেন্টের মতো বিষয়গুলো নিয়ে যে সমন্বিত খসড়া চূড়ান্ত করা হয়েছে, তাতে দলগুলোর পক্ষ থেকে কী ধরনের মতামত আসে, সেটিই এখন দেখার অপেক্ষা। বিশেষ করে বিএনপি এসব বিষয়ে কী অবস্থান নেবে, সেদিকেই নজর বেশি। যদিও বৃহত্তর স্বার্থে বিএনপিকে জুলাই সনদের আরও ছাড় দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে মিত্র দলগুলো।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্য ড. বদিউল আলম মজুমদার গতকাল বলেন, ‘আমরা আশা করি রাজনৈতিক দলগুলো জুলাই সনদের সমন্বিত পূর্ণাঙ্গ খসড়ায় সম্মত হবে। কয়েকটি দল ৯-১০টি বিষয়ে নোট অব ডিসেন্ট দিলেও বেশিরভাগ দলই একমত পোষণ করেছে। এখন নোট অব ডিসেন্ট দেওয়া দলগুলো গণতন্ত্র এবং জাতির বৃহত্তর স্বার্থে জুলাই সনদের সমন্বিত পূর্ণাঙ্গ খসড়া মেনে নেবে বলে বিশ্বাস করি।’
সনদ কবে নাগাদ ঘোষণা হবে- এমন প্রশ্নের উত্তরে ড. মজুমদার বলেন, ‘আমরা তো এক পায়ে দাঁড়িয়ে আছি। দলগুলো যত দ্রুত সাড়া দেবে তত দ্রুত আমরা এগোতে পারব।’ তিনি বলেন, ‘আমরা জুলাই সনদের সমন্বিত পূর্ণাঙ্গ খসড়া বাস্তবায়ন ও আইনি ভিত্তির কৌশল খুঁজছি। এ লক্ষ্যে বিশিষ্ট ও বিশেষজ্ঞদের মতামত নেওয়া হচ্ছে। তা ছাড়া রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা ও মতামতের ভিত্তিতে দ্রুত সময়ের মধ্যে জুলাই জাতীয় সনদ-২০২৫ ঘোষণা করা হবে।’
জানা গেছে, সংস্কার প্রশ্নে রাজনৈতিক দলগুলোর সংলাপে নেওয়া সিদ্ধান্ত যাতে পরবর্তী সরকারের সময়ও বাস্তবায়ন করা হয়, তা নিশ্চিত করতে আইনি সুরক্ষার ব্যবস্থা রেখে জুলাই জাতীয় সনদের ‘সমন্বিত চূড়ান্ত খসড়া’ প্রস্তুত করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, এই সনদ নিয়ে আদালতে প্রশ্ন তোলা যাবে না। সনদের কোনো শব্দ, বাক্য ও নীতিমালা সংবিধান বা অন্য কোনো আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হলে এই সনদের প্রাধান্য থাকবে। এই সনদের যেসব সুপারিশ অবিলম্বে বাস্তবায়নযোগ্য, দেরি না করে সেগুলো পরবর্তী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই বাস্তবায়নের পদক্ষেপ নেবে সরকার।
জুলাই সনদের সমন্বিত পূর্ণাঙ্গ খসড়ায় আরও বলা হয়েছে, চলতি বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে ছয়টি কমিশনের প্রতিবেদনের ছাপানো অনুলিপি সব রাজনৈতিক দলের কাছে প্রেরণ করা হয়। এরপর ৫ মার্চ পুলিশ সংস্কার কমিশন ছাড়া অন্য পাঁচটি কমিশনের প্রতিবেদনের গুরুত্বপূর্ণ ১৬৬টি সুপারিশ স্প্রেডশিট আকারে ৩৮টি রাজনৈতিক দল ও জোটের কাছে মতামতের জন্য পাঠানো হয়। এর মধ্যে সংবিধান সংস্কারবিষয়ক ৭০টি, নির্বাচন সংস্কারবিষয়ক ২৭টি, বিচার বিভাগ সংক্রান্ত ২৩টি, জনপ্রশাসন সংক্রান্ত ২৬টি ও দুর্নীতি দমনবিষয়ক ২৭টি সুপারিশ ছিল। পুলিশ সংস্কার কমিশনের সুপারিশগুলো সরাসরি প্রশাসনিক সিদ্ধান্তে বাস্তবায়নযোগ্য হওয়ায় সেগুলো স্প্রেডশিটে রাখা হয়নি। অন্যদিকে, সংবিধান সংস্কার কমিশন ছাড়া অন্য পাঁচটি কমিশনের দ্রুত বাস্তবায়নযোগ্য সুপারিশগুলোর তালিকা সরকারের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
এতে আরও উল্লেখ করা হয়, মোট ৩৫টি রাজনৈতিক দল ও জোট তাদের মতামত কমিশনের কাছে প্রেরণ করে। অনেকে বিস্তারিত ব্যাখ্যা বিশ্লেষণও প্রদান করে। মতামত গ্রহণের পাশাপাশি প্রথম পর্যায়ে ২০ মার্চ থেকে ১৯ মে পর্যন্ত ৩২টি দল ও জোটের সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের মোট ৪৭টি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনা ফলপ্রসূ করতে কিছু দলের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক হয়। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে প্রথম পর্যায়ের আলোচনা শেষ করে কমিশন অগ্রাধিকার ও গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনায় মোট ২০টি বিষয় নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দ্বিতীয় দফা আলোচনায় মিলিত হয়। ৩ জুন থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত ৩০টি দল ও জোটের সঙ্গে মোট ২৩টি সেশনে আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
ঐকমত্য হওয়া সংস্কার প্রস্তাবের ওপর ভিত্তি করে ‘জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫’ ঘোষণা করার কথা জানিয়েছে সরকার। গত ২৯ জুলাই দলগুলোকে জুলাই সনদের একটি খসড়া দিয়েছিল জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। খসড়া নিয়ে দলগুলো মতামতও দিয়েছিল। তার ভিত্তিতে সমন্বিত খসড়া তৈরি করা হয়েছে। প্রয়োজনে সমন্বিত খসড়া নিয়ে দলগুলোর মতামতও আমলে নেবে কমিশন।
অন্যদিকে জুলাই সনদের বাস্তবায়ন পদ্ধতি নিয়ে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে ঐকমত্য কমিশন। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা হবে। এরপর সনদ চূড়ান্ত রূপ পাবে।
জানা যায়, ঐকমত্য কমিশন দ্বিতীয় দফায় ১৯টি বিষয়ে একমত হওয়ার কথা জানালেও বেশকিছু ইস্যুতে কয়েকটি রাজনৈতিক দল নোট অব ডিসেন্ট দিয়েছে। ফলে এ নিয়ে ‘না সূচক’ মনোভাবের কথাই জানিয়েছে দলগুলো। বিশেষ করে সংসদের উচ্চকক্ষে একশ আসন পিআর পদ্ধতি বা সংখ্যানুপাতিক হারে নির্বাচন করার বিষয়ে ঘোর আপত্তি জানিয়েছে বিএনপি। নোট অব ডিসেন্ট সত্ত্বেও ১৯টি বিষয়ে একমত হওয়ার কথা জানায় ঐকমত্য কমিশন।
রাজনৈতিক দল ও ঐকমত্য কমিশন সূত্র বলছে, সংস্কারের বিষয়গুলো ‘জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫’-এ সংযুক্ত করা হবে। এরপরই সব দলগুলো চূড়ান্তভাবে স্বাক্ষর করে সেটির স্বীকৃতি দেবে। তবে তার আগেই জুলাই সনদ বাস্তবায়নে আইনি ভিত্তির দাবি তোলে বেশকিছু দল। পরবর্তী সময়ে এ বিষয়ে সরকার ও কমিশনের পক্ষে উদ্যোগ নেওয়া হয়।
জুলাই জাতীয় সনদের সমন্বিত চূড়ান্ত খসড়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু গতকাল বলেন, ‘আমরা সনদের খসড়া পেয়েছি। যেহেতু বেশ বড় সেটি পড়ে দলীয় ফোরামে আলোচনা করেই আমরা দ্রুত মতামত দেবে।’
বাংলাদেশ এলডিপির চেয়ারম্যান ও ১২ দলীয় জোটের মুখপাত্র শাহাদাত হোসেন সেলিম বলেন, ‘আমরা তো অতীতের জুলাই সনদের খসড়ায় মতামত দিয়েছি। এখন চূড়ান্ত সমন্বিত খসড়া পেয়েছি। জোটের ফোরামে আলোচনা করে এ বিষয়ে মতামত দেওয়া হবে।’
এ প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ গতকাল রাতে বলেন, ‘জুলাই সনদের সমন্বিত চূড়ান্ত খসড়ার একটি কপি সন্ধ্যায় হাতে পেয়েছি। এখন সেটি পড়ে দেখব লেখা ঠিকভাবে আছে কি না? এরপর দলীয় ফোরামে আলোচনা করে মতামত জানানো হবে।’
১৬ আগস্ট, ২০২৫ ১৯:৩৩
সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বলেছেন, বাংলাদেশে সবার অধিকার সমান। এই দেশে ধর্ম ও বর্ণের কোনো ভেদাভেদ থাকবে না। আমরা সবাই সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্য বজায় রেখে চলছি, ভবিষ্যতেও চলব। শনিবার (১৬ আগস্ট) বিকেলে ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে জন্মাষ্টমীর শোভাযাত্রা উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
বাংলাদেশ একটি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ উল্লেখ করে সেনাপ্রধান বলেন, এই দেশে শত শত বছর ধরে হিন্দু-মুসলমান-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান, পাহাড়ি বাঙালি, উপজাতি—সবাই মিলে আমরা অত্যন্ত শান্তিতে সম্প্রীতির সঙ্গে বসবাস করে যাচ্ছি।
তিনি আরও বলেন, আজকের এই দিনে আমাদের অঙ্গীকার হবে সম্প্রীতির এই সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশ আমরা সবসময় বজায় রাখব এবং একসঙ্গে সবাই শান্তিতে সুন্দরভাবে বসবাস করব। এখানে কোনো ধর্ম-জাতি, বর্ণ-গোত্রের মধ্যে কোনো ভেদাভেদ থাকবে না। এই দেশ সবার। সবাই আমরা এই দেশের নাগরিক। প্রতিটা অধিকার আমাদের, সবার সমান অধিকার এবং সেভাবেই আমাদের সামনের সোনালি দিনগুলো দেখতে চাই।
সেনাপ্রধান বলেন, এখানে নৌবাহিনীর প্রধান ও বিমানবাহিনীর প্রধান আছেন। সারাদেশে সশস্ত্র বাহিনী মোতায়েন আছে। আমরা সবাই মিলে আপনাদের পাশে থাকব। এক হয়ে আপনাদের সঙ্গে কাজ করে যাব।
তিনি আরও বলেন, ভগবান শ্রীকৃষ্ণের আদর্শ সব জায়গায় ছড়িয়ে পড়ুক। এই আদর্শের ভিত্তিতে আমরা সুন্দরভাবে এই দেশে একসঙ্গে বসবাস করব। অনুষ্ঠানে বিমানবাহিনীর প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খান বলেন, শ্রীকৃষ্ণের শিক্ষা শুধু অসত্য ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে সাহসই জোগায় না, ন্যায়ের পথেও চলতে শেখায়।
এই বাংলাদেশ আমাদের সবার। স্বাধীনতাকে রক্ষা করা আমাদের সবার পবিত্র দায়িত্ব। সবাই মিলে কাজ করলে বিশ্বের মানচিত্রে এই বাংলাদেশকে একটি মর্যাদাশীল রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে পারব- যোগ করেন বিমানবাহিনীর প্রধান।
নৌবাহিনীপ্রধান অ্যাডমিরাল এম নাজমুল হাসান বলেন, আসুন, পারস্পরিক সহনশীলতার মাধ্যমে দেশকে আরো শক্তিশালী করি। শ্রীকৃষ্ণ যেন সমাজে ন্যায় ও আলোর সত্য প্রজ্জ্বলিত করেন।
পরে প্রদীপ প্রজ্বালনের মধ্য দিয়ে তিন বাহিনীর প্রধান জন্মাষ্টমীর শোভাযাত্রার শুভ উদ্বোধন ঘোষণা করেন। পলাশীর মোড় থেকে শুরু হয় জন্মাষ্টমীর বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা। শোভাযাত্রাটি রাজধানীর বাহাদুর শাহ পার্কে গিয়ে শেষ হবে।
সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বলেছেন, বাংলাদেশে সবার অধিকার সমান। এই দেশে ধর্ম ও বর্ণের কোনো ভেদাভেদ থাকবে না। আমরা সবাই সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্য বজায় রেখে চলছি, ভবিষ্যতেও চলব। শনিবার (১৬ আগস্ট) বিকেলে ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে জন্মাষ্টমীর শোভাযাত্রা উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
বাংলাদেশ একটি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ উল্লেখ করে সেনাপ্রধান বলেন, এই দেশে শত শত বছর ধরে হিন্দু-মুসলমান-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান, পাহাড়ি বাঙালি, উপজাতি—সবাই মিলে আমরা অত্যন্ত শান্তিতে সম্প্রীতির সঙ্গে বসবাস করে যাচ্ছি।
তিনি আরও বলেন, আজকের এই দিনে আমাদের অঙ্গীকার হবে সম্প্রীতির এই সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশ আমরা সবসময় বজায় রাখব এবং একসঙ্গে সবাই শান্তিতে সুন্দরভাবে বসবাস করব। এখানে কোনো ধর্ম-জাতি, বর্ণ-গোত্রের মধ্যে কোনো ভেদাভেদ থাকবে না। এই দেশ সবার। সবাই আমরা এই দেশের নাগরিক। প্রতিটা অধিকার আমাদের, সবার সমান অধিকার এবং সেভাবেই আমাদের সামনের সোনালি দিনগুলো দেখতে চাই।
সেনাপ্রধান বলেন, এখানে নৌবাহিনীর প্রধান ও বিমানবাহিনীর প্রধান আছেন। সারাদেশে সশস্ত্র বাহিনী মোতায়েন আছে। আমরা সবাই মিলে আপনাদের পাশে থাকব। এক হয়ে আপনাদের সঙ্গে কাজ করে যাব।
তিনি আরও বলেন, ভগবান শ্রীকৃষ্ণের আদর্শ সব জায়গায় ছড়িয়ে পড়ুক। এই আদর্শের ভিত্তিতে আমরা সুন্দরভাবে এই দেশে একসঙ্গে বসবাস করব। অনুষ্ঠানে বিমানবাহিনীর প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খান বলেন, শ্রীকৃষ্ণের শিক্ষা শুধু অসত্য ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে সাহসই জোগায় না, ন্যায়ের পথেও চলতে শেখায়।
এই বাংলাদেশ আমাদের সবার। স্বাধীনতাকে রক্ষা করা আমাদের সবার পবিত্র দায়িত্ব। সবাই মিলে কাজ করলে বিশ্বের মানচিত্রে এই বাংলাদেশকে একটি মর্যাদাশীল রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে পারব- যোগ করেন বিমানবাহিনীর প্রধান।
নৌবাহিনীপ্রধান অ্যাডমিরাল এম নাজমুল হাসান বলেন, আসুন, পারস্পরিক সহনশীলতার মাধ্যমে দেশকে আরো শক্তিশালী করি। শ্রীকৃষ্ণ যেন সমাজে ন্যায় ও আলোর সত্য প্রজ্জ্বলিত করেন।
পরে প্রদীপ প্রজ্বালনের মধ্য দিয়ে তিন বাহিনীর প্রধান জন্মাষ্টমীর শোভাযাত্রার শুভ উদ্বোধন ঘোষণা করেন। পলাশীর মোড় থেকে শুরু হয় জন্মাষ্টমীর বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা। শোভাযাত্রাটি রাজধানীর বাহাদুর শাহ পার্কে গিয়ে শেষ হবে।
Google AdSense
This is a demo ad. Your live ads will be displayed here once AdSense is properly configured.
Google AdSense
This is a demo ad. Your live ads will be displayed here once AdSense is properly configured.