বিশেষ সংবাদ

বরিশাল সিটি মেয়রের ক্ষমতা খর্ব- উড়ো খবরে শহরজুড়ে জোর গুঞ্জন (?)

নিজস্ব প্রতিবেদন

২৯ মে, ২০২৫ ১০:৫৮

প্রিন্ট এন্ড সেভ

বরিশাল সিটি মেয়রের ক্ষমতা খর্ব- উড়ো খবরে শহরজুড়ে জোর গুঞ্জন (?)

বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহকে মেয়র পদের দায়িত্ব থেকে সাময়িক অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। সেই সাথে সাংগঠনিক কর্মকান্ড থেকে আপাতত বিরত থাকার বিধি-নিষেধ আরোপ করা হয়েছে। সিটি কর্পোরেশন সংশ্লিষ্ট এলজিইডি মন্ত্রণালয় ও দলের হাইকমান্ড থেকে গত এক সপ্তাহকাল আগে পৃথক দুটি নির্দেশনা এসেছে- এধরনের খবর বরিশাল নগরজুড়ে জোর আলোচনায় রূপ নিয়েছে। বিশেষ করে গত দুদিন ধরে এই আলোচনা বাতাসের দ্রুততার সাথে ছড়িয়ে পড়ায় উৎসুক প্রশ্নের সৃষ্টি করেছে- আসলে এখবরের সত্যতা কতটুকু, নাকি মহল বিশেষ গুজব রটিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে গোলকধাঁধার সৃষ্টির কৌশল নিয়েছে? যদিও মেয়রকে কেন্দ্র করে এরূপ সিদ্ধান্তের অকট্য প্রমাণ কোনো মহল বা দায়িত্বশীল সূত্র দিতে পারেনি। এমনকি সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে এনিয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো ব্যখ্যা-বিবৃতি দেওয়া হয়নি বা হচ্ছেনা।

ফলে আকস্মিক উদ্ভাবিত এই উড়ো খবরের সত্য- মিথ্যা নিয়ে পক্ষ-বিপক্ষের মধ্যে চলমান আলোচনার অবসান ঘটছে না, বরং উৎসুক প্রশ্নের আরও ডালপালা বিস্তৃতি ঘটছে। অবশ্য সিটি কর্পোরেশনের গণসংযোগ কর্মকর্তা স্বপন কুমার বিষয়টিকে স্রেফ গুজব বলে বরিশালটাইমসকে নিশ্চিত করেছেন। কোথা থেকে এই গুজবের সৃষ্টি সে ধারনা না পাওয়া গেলেও এই কর্মকর্তার বক্তব্য হচ্ছে, দলের মধ্যেকার প্রতিপক্ষ একটি গ্রুপ রাজনৈতিক ফায়দা লোটার সন্ধানী সুযোগ এবং মেয়র সাদিক আব্দুল্লাহকে সামাজিকভাবে বিতর্কের মাঝে ঘুরপাক খাওয়াতেই এই কৌশল নেওয়া হয়েছে।

তবে এই গুজব বা খবরের সত্যতা অনুসন্ধানে ধারণা মেলে নগর উন্নয়ন অর্থাৎ মূল শহর অভ্যন্তরে রাস্তাঘাট চলাচলের অযোগ্য হলেও সংস্কার উদ্যোগ সাময়িক কিছুদিন স্থগিত থাকার কারণেই এই গুজব রটাতে সহায়ক হয়। তার ওপর সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার পদ গত একমাসকাল শূন্য থাকার পরও নতুন কর্মকর্তার যোগদান প্রক্রিয়ার কালবিলম্ব ঘটাও অন্যতম কারণ। আবার কারও দাবি, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে তিন দফা আসা তদন্ত টিমের কাছে সিটি কর্পোরেশনের ৬ কোটি টাকার ব্যয় নিয়ে অনিয়ম ধরা পড়ায় মেয়রের ব্যর্থতা থেকেও এমন সিদ্ধান্ত আসতে পারে। সর্বশেষ বরিশাল বিসিকের ৭২ কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্পের কাজের নিয়ন্ত্রণ নিতে একজন শিল্প উদ্যোক্তার সাথে বিরোধ থেকে তার অনুসারীদরে অব্যাহত সন্ত্রাস এবং বরিশাল অচল করে একজন যুবলীগ কর্মীকে ছাড়িয়ে আনতে থানা ঘেরাও করায় দলীয় হাইকমান্ড মহানগর রাজনীতির ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা মেয়র সাদিক আব্দুল্লাহর ওপর নাখোশ হওয়ায় তার ক্ষমতা খর্ব করতেই এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

প্রাসঙ্গিক এই বিষয় নিয়ে নানা মন্তব্য আলোচনায় আসলেও যদি ঘটনা সত্যিই হয়ে থাকে, তবে কবে-কখন মেয়রকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়ার চিঠি দেওয়া হয়েছে, এবিষয়ে কেউ কোনো নিশ্চিত তথ্য দিতে পারছে না। সবই ধারণাপ্রসূত তথ্য যা গুজবে আকারে এক কান থেকে দুইকানে পৌছে গোটা নগরীতে ছড়িয়ে পড়ে। আবার বেশকিছু সূত্র বলছে , বেশ কয়েকজন দায়িত্বশীল আ’লীগ নেতা নাম প্রকাশে অপারগতার শর্তে এই খবরকেও সত্য বলে দাবি করায় বিষয়টি সন্দেহ আরও প্রকট আকার ধারণ করে। মেয়রকে অব্যাহতি দেয়ার প্রসঙ্গে এসকল নেতৃবৃন্দ যুক্তি হিসেবে ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে খবরের বাস্তবতার আলামত হিসেবে উপস্থাপন করেন, গত দুইমাস ধরে সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তা কর্মচারীদের বেতন ভাতাদি বন্ধের বিষয়টি।

তাছাড়া উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য অন্যান্য সিটি কর্পোরেশনে বিশাল অঙ্কের অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হলেও বরিশালের ক্ষেত্রে তা উপেক্ষিত কেনো? এমন প্রশ্নের সাথে নতুন নির্বাহী কর্মকর্তা কর্মস্থলে যোগদানে অনিহা প্রকাশ করায় কালক্ষেপনের বিষয়টিও মূল্যায়নে তালিকায় উপস্থাপন করে তাদের কাছে প্রাপ্ত খবরের সত্যতা নিশ্চিত করতে চায়।

অপর একটি সূত্র খোদ দলীয় নেতৃবৃন্দের এই অভিমতকে উড়িয়ে না দিয়ে সহমত পোষণ করে বলছে, একটি শক্তিশালী গোয়েন্দা সংস্থা মেয়র সাদিক আব্দুল্লাহ ও তার দলীয় অনুসারীদের বিষয়ে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায়ে নেতিবাচক প্রতিবেদন দিয়ে বরিশাল পরিস্থিতি নাজুক বলে উল্লেখ করায় সেখানে উদীয়মান এই নেতার ব্যর্থতার প্রসঙ্গ দলীয় হাইকমান্ড মূল্যায়ন করে তার ক্ষমতা খর্ব করার সিদ্ধান্ত নেওয়াটা অসম্ভব কিছু নয়। সঙ্গত কারণে বরিশাল আ’লীগ দুই ভাগে বিভক্ত একাংশের অনুসারীরা এমন অনুমাননির্ভর তথ্যের সংমিশ্রণে কথার মালা গেঁথে এই গুজব সহসায় ছড়িয়ে দিতে সহায়ক হয়েছে, এমনটি মনে করছেন মেয়র সাদিক সমর্থিতরা।

এই নেতার অনুসারীদের মন্তব্য হচ্ছে, ‘হঠাৎ সৃষ্টি খবরটি’ সমূলেই গুজব। এবং রাজনৈতিক পরিবেশ ঘোলাটে করে অপর একটি অংশ নিজেদের বলয় বৃদ্ধির যেমন কৌশল নিয়েছে। পাশাপশি মেয়রকে বিতর্কের মাঝে ফেলায় সর্বশেষ পন্থা হিসেবে এমন গুজব দীর্ঘদিন ধরেই প্রতিষ্ঠা করার ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া অব্যাহত রেখে চলেছে। এই গুজব নতুন নয়, মেয়র সাদিক আব্দুল্লাহ সিটি কর্পোরেশনের দায়িত্ব নেয়ার পর নগর আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক পদে মনোনীত হলে অপর সেই অংশটি নাখোশ হওয়াসহ মাঠের রাজনীতি থেকে ছিটকে পড়ায়ে সময়বিশেষ এমন গুজব প্রতিষ্ঠায় জোর বাতাস বইয়ে দেয়ার অপচেষ্টায় লিপ্ত থাকার সর্বশেষ বর্তমান সময়ে আবার তৎপর হয়ে উঠায় এবার শহরবাসীর মধ্যে গোলকধাাঁধা সৃষ্টি করতে অনেকটাই সক্ষম হয়েছে। সেক্ষেত্রে বরিশাল বিসিকে উন্নয়ন কাজ নিয়ে মেয়র সমর্থিতদের সাথে সেখানকার ব্যবসায়ীদের টানপোড়নে কিছুটা অশান্ত হয়ে ওঠা বরিশাল পরিবেশকে মোক্ষম সময়ে সহায়ক হিসেবে লুফে নিয়েছে।
কিন্তু এই গুজব যতই জোর রুপ নিচ্ছে, মেয়র সাদিক ততোই নিরব থাকাসহ পূর্বেকার মতো মাঠের রাজনীতিতে সরব না থাকায় এই খবরের অন্তরালে সত্যতা খুঁজতে সাধারন মানুষ নানা মহলে যোগাযোগ করছে। স্থানীয় মিডিয়াকর্মীরাও এই গুজবের রহস্যভেদে ছুটছে দায়িত্বশীল নানা মহলের দরজায়। কিন্তু কেউই এবিষয়ে পরিস্কার ধারনা না দিয়ে অপেক্ষায় থাকার কথায় রহস্য আরও উস্কে দিচ্ছে। তবে সার্বিক প্রেক্ষাপট বলছে ভিন্ন কথা। যদি মেয়রের ক্ষমতা খর্ব করা হয়েই থাকে, তাহলে বর্তমানে নগর উন্নয়ন তথা ভাঙাচোরা রাস্তাঘাট নতুন আদলে তৈরীতে সাদিক আব্দুল্লাহ ব্যস্ত কেন? এমন প্রশ্নের সাথে উড়ো খবরের মিল খুঁজে না পাওয়া যাওয়ায় ধারণা করা হচ্ছে আসলেই বিষয়টি গুজব।

এতকথা তবুও কেন মেয়র সাদিক নিরব? সেক্ষেত্রে তার পক্ষ থেকে একটি বিবৃতি দিয়ে ঘোলাটে পরিবেশ পরিস্কার করা বাঞ্ছনীয় বলে মনে করছেন সচেতন মহল। এবিষয়ে দ্বিমত পোষণ করে সিটি কর্পোরেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তার ভাষ্য হচ্ছে- কোন প্রতিষ্ঠানিক বা বিষয়বস্তু নিয়ে বিতর্ক দেখা দিলে মেয়রের আনুষ্ঠানিক ব্যাখ্যা দেয়ার রেওয়াজ রয়েছে। কিন্তু ব্যক্তিকেন্দ্রিক এই গুজব নিয়ে আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা নেই, বিধায় মেয়র সাদিক আব্দুল্লাহ কিছুটা বিস্মিতি এবং সঙ্গত কারণেই নিশ্চুপ।

প্রাসঙ্গিক এই বিষয় নিয়ে মেয়র সাদিক আব্দুল্লাহর সাথে আজ অপরাহ্নে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করে ব্যর্থতায় তার কোন প্রতিক্রিয়া জানা সম্ভব হয়নি।

আর এ কারণেই এখবর ধীরালয়ে গুজব আকারে প্রতিষ্ঠার পর এখন জোরালো রুপ পাচ্ছে বলে অনেকেই মনে করছেন।’

পুলিশ ম্যানেজ করে বরিশাল থেকে বছরে শত কোটি টাকার জাটকা পাচার (!)

বরিশালটাইমস রিপোর্ট

২৯ মে, ২০২৫ ১৭:০০

প্রিন্ট এন্ড সেভ

পুলিশ ম্যানেজ করে বরিশাল থেকে বছরে শত কোটি টাকার জাটকা পাচার (!)

বাহিনীপ্রধান টুটুল ৫ আগস্টের পরে পালিয়ে গেলেও বাণিজ্য ধরে রাখতে মরিয়া তার অনুসারীরা। অর্থের বিনিময়ে আওয়ামী লীগ সন্ত্রাসীদের শেল্টার দিচ্ছে ওয়ার্ডপর্যায়ের দুই বিএনপি নেতা।

বরিশালের তালতলী বাজারের আধিপত্য ধরে রাখতে আওয়ামী সন্ত্রাসী টুটুল বাহিনী ফের বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। প্রতিবছরের ন্যায় এবারও এই বাহিনী সদর উপজেলার চরবাড়িয়া ইউনিয়নের বাজার থেকে মৎস্য সম্পদ রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে পাচারের তোড়জোড় চালিয়ে যাচ্ছে। ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর আত্মরক্ষর্থে বাহিনীপ্রধান নিরব হোসেন টুটুল পালিয়ে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে আশ্রয় নিলেও তার লালিত সন্ত্রাসী মোশারেফ সিকদার, মিরাজ সিকদার, কালু সিকদার, সাকিন সিকদার, সেলিম এবং সবুজরা এখন উত্তর আমানগঞ্জ টু শায়েস্তবাদ পর্যন্ত দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন। আলোচিত টুটুল পলাতক থাকায় তার এই বাহিনীকে অর্থের বিনিময়ে শেল্টার দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে বরিশাল মহানগরের ওয়ার্ডপর্যায়ের দুই বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, বরিশালের তালতলী বাজার থেকে প্রতি বছর শত কোটি টাকার জাটকাসহ মাছ পাচার করে আসছিল বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক নিরব হোসেন টুটুলের বাহিনী। তৎসময়ে সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ সিটির মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হওয়ায় নাজিরের পোলের টুটুল এক ধরনের এক ধরনের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন। মূলত তার কাঁদে ভর করে আওয়ামী লীগের শাসনামলে প্রতিবছর শত কোটি টাকার জাটকা, রেণুপোনাসহ অবৈধ মাছ পাচার করে আসছে সাকিন-কালু-মিরাজেরা।

পুলিশসহ বিভিন্ন সূত্র নিশ্চিত করেছে, অবৈধভাবে মাছ পাচারের সাথে সম্পৃক্ত এবং জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে হামলা চালানোর অভিযোগে বাহিনীপ্রধান টুটুলসহ বেশ কয়েকজনের বিরুদ্ধে মামলাও হয়েছে। তাদের মধ্যে টুটুল ভারতে এবং মিরাজ সিকদার দেশে কোথায় আত্মগোপনে থাকলেও বাকিরা ভোল পাল্টে নিজেদের মস্তবড় বিএনপি নেতাকর্মী দাবি করছেন। এবং টুটুলের অবর্তমানে তারা অবৈধ ব্যবসার শেল্টারদাতা হিসেবে বরিশাল নগরীর ৪ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা, এমন দুজন বিএনপি নেতার সাথে সন্ধিচুক্তিও করে নিয়েছে। মাসান্তর তাদের মোটা অংকের উৎকোচ দেওয়াসহ পূর্বের ন্যায় কাউনিয়া থানা পুলিশকে ম্যানেজ করে অবৈধ মাছ তালতলী বাজার থেকে পাচারের ফন্দি আঁটছে।

আওয়ামী লীগ সন্ত্রাসীদের মৎস্য সম্পদ পাচারের এই পূর্বপরিকল্পনা আগেভাগেই আঁচ করতে পেরে মৎস্য অধিদপ্তরও নড়েচড়ে বসেছে। দপ্তরের শীর্ষ কর্মকর্তা রিপন কান্তি এবং মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তা জামাল হোসেন জানিয়েছেন, যে কোনো মূল্যে এবার অবৈধ বাণিজ্য রুখে দেওয়া হবে। যেমন কথা তেমন কাজ, যার প্রমাণ মেলে শনিবার গভীর রাতে। মাঠ কর্মকর্তা জামালের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সন্ত্রাসীদের অবৈধ একটি মাছের চালান শনিবার রাতে আটকে দেওয়া হয়। তিনটি অটোরিকশাভর্তি জাটকা (শিকার নিষিদ্ধ) তালতলী বাজার থেকে এই কর্মকর্তার নেতৃত্বে জব্দ করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

সূত্রে জানা গেছে, আওয়ামী লীগের শাসনামলের পুরো সময় ধরে মৎস্য বিভাগের মাঠ কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন বিমল চন্দ্র দাস, তার বিরুদ্ধে টুটুল বাহিনীর কাছ থেকে উৎকোচগ্রহণ করাসহ বহুমুখী দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। সবশেষ বিতর্কিত ওই কর্মকর্তাকে নওগাঁ জেলায় শাস্তিমূলক বদলি করেছে সরকার।

মৎস্য অফিস সূত্র জানিয়েছে, সদর উপজেলার তালতলীতে একটি পাচারকারী সিন্ডিকেট রয়েছে, বিমল বাবুর বদলির পরে তারা ওয়ার্ড বিএনপির এক নেতার সুপারিশ নিয়ে আসতে চেয়েছিলেন সন্ধিচুক্তি করতে। কিন্তু জেলা মৎস্য কর্মকর্তা রিপন কান্তি এবং সদর উপজেলার কর্মকর্তা জামাল হোসেন সাফ জানিয়ে দিয়েছেন মৎস্য সম্পদ ধ্বংসকারীদের সাথে কোনো আপস নয়, বরং তাদের ঠিকানা হবে জেল!

মৎস্য অধিদপ্তরের এমন হুঁশিয়ারির পরেও থেমে নেই আওয়ামী সন্ত্রাসী টুটুল বাহিনী। তারা প্রশাসনকে চ্যালেঞ্জ করে অবৈধভাবে মাছ শিকার এবং পাচারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে, কিন্তু তা কোনো দিনও হতে দেওয়া হবে না মন্তব্য করেন মৎস্য কর্মকর্তা।

তালতালীর একাধিক সূত্র জানিয়েছে, সিটির ওয়ার্ড বিএনপির দুই নেতার সদর উপজেলার অবৈধ বাণিজ্যে শেল্টার দেওয়ার বিষয়টি ইতিবাচক হিসেবে গ্রহণ করেনি স্থানীয় বিএনপি এবং অঙ্গ-সংগঠনের নেতাকর্মীরা। তাদের অভিযোগ, টুটুল বাহিনী গত ১৫ বছর তালতলী বাজার থেকে শত কোটি টাকা কামিয়ে নিয়েছে এবং সেই টাকা দিয়ে সাকিন, কালু, সবজুরা একাধিক বিয়ে করাসহ গড়ে তুলেছেন আলিশান বাড়িও। জানা গেছে, অবৈধ পন্থায় আয় করা টাকা দিয়ে টুটুলের খাস চামচা সাকিন একটি ট্রাকও কিনিয়েছেন, মূলত সেই ট্রাক ব্যবহার করেই রাতে জাটকা পাচার করে।

ইউনিয়ন বিএনপি নেতাকর্মীদের অভিযোগ, আওয়ামী লীগের শাসনামলে কাউনিয়া থানা পুলিশসহ টুটুলকে মাসিক মোটা অংকের অর্থ দিয়ে মাছ পাচার করে মোশারেফ, সাকিন, কালু এবং নিজাম-সবুজেরা। স্বৈরাচার হাসিনার পতনের পরে টুটুল পালিয়ে ভারতে গেলে তার সাগরেদ মিরাজ সিকদারও মামলার আসামি হয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। তবে মামলার আসামি হয়েও বিএনপি নেতাদের শেল্টারে এলাকায় প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছেন নিজাম সিকদারসহ বাহিনীর একাধিক সন্ত্রাসী। তবে আগামীতে তাদের কোনো প্রকার সন্ত্রাসী কার্যকলাপ বা অবৈধভাবে মাছ পাচার করতে দেওয়া হবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন স্থানীয় সুশীল মহলসহ তরুণসমাজ।

তালতলী বাজারের সাধারণ ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেছেন, আওয়ামী লীগ সন্ত্রাসীরা শুধু মৎস্য সম্পদ ধ্বংসই করছে না, পাচারের মাধ্যমে বছরে কোটি কোটি টাকাও হাতিয়ে নিচ্ছে। অতীতে নির্বিকার পুলিশকে দেখা গেছে, বান্ডিল গুণে গুণে টাকা নিতে। বিশেষ করে এই গুরুতর অভিযোগ রয়েছে, কাউনিয়া থানা পুলিশের সাবেক ওসি মো. আসাদুজ্জামান এবং মোস্তাফিজুর রহমানের বিরুদ্ধে। সূত্র নিশ্চিত করেছে, এই দুই পুলিশ কর্মকর্তা কাউনিয়া থানায় দায়িত্ব পালনকালে অন্তত ২ কোটি টাকার বেশি নিয়ে গেছেন আওয়ামী লীগ সন্ত্রাসীদের সহযোগিতা করে।

এমনও অভিযোগ আছে, ভোর রাত বা সকালে ওসি আসাদুজ্জামান পুলিশের একটি টিম তালতলী বাজারে পাঠিয়ে দিলে তাদের উপস্থিতিতেই জাটকা ট্রাকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়, যা নিয়ে তৎকালীন সময়ে সংবাদপত্রে ব্যাপক লেখালেখি হয়েছিল। কিন্তু খোদ পুলিশই যখন ব্যবসায় জড়িত, তখন ব্যবস্থা আর নেয় কে? এমন প্রশ্নে বরিশালের রাজনৈতিক অঙ্গন তখন সরগরম হয়ে উঠেছিল।

আওয়ামী লীগের সেই সন্ত্রাসী আমল বা নীতি বিবর্জিত পুলিশ কর্মকর্তা এখন আর থানাগুলোর দায়িত্ব না থাকলেও টুটুল বাহিনীর আধিপত্য মোটেও কমেনি। জানা গেছে, টুটুল বাহিনীর এই অবৈধ বাণিজ্যের প্রতিবাদ করতে গিয়ে গত বছর তরিকুল ইসলাম নামের এক সংবাদকর্মীকে কুপিয়ে জখম করে সন্ত্রাসী মিরাজ, সবুজ এবং সাকিনেরা, ওই ঘটনায় আ’লীগের আমলে একটি মামলাও হয়েছিল।

সূত্রের খবর হচ্ছে, সন্ত্রাসী হামলা চালানোর পর টুটুল তার বাহিনীর সদস্যদের রক্ষায় তৎসময়ে আপসরফার প্রস্তাব দেওয়াসহ থানা পুলিশকে মামলা নিতে বারণও করেছিলেন। কিন্তু মূর্তিমাণ সেই সন্ত্রাসের খবর স্থানীয় সংবাদমাধ্যমসহ জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় ফলাও করে প্রকাশ পেলে চাপে পড়ে যায় থানা পুলিশ। এবং উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে অনিচ্ছা সত্ত্বেও মামলা গ্রহণেও বাধ্য হয়।

৫ আগস্ট আওয়ামী দুশাসনের অবসান ঘটলে বাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা হলে তারা কিছুদিন আত্মগোপনে ছিল। তবে ফাল্গুন মাস শুরু হতেই তারা এখন বিএনপি নেতাদের শেল্টার নিয়ে অবৈধ বাণিজ্য চালিয়ে যাওয়ার সাহস দেখাচ্ছে, যা দেখে ইউনিয়ন বিএনপি নেতাকর্মীরাও হতবাক-বাকরুদ্ধ।

রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকেরা বলছেন, মৎস্য সম্পদ ধ্বংসের এই বাণিজ্য যে কোনো মূল্যে রুখে দিতে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তারা যেমন হুমকি-হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, কাউনিয়া থানা পুলিশকেও সেই পদাঙ্ক অবলম্বলন করা জরুরি। অবশ্য কাউনিয়া থানা পুলিশের ওসি নাজমুল নিশাতও সত্যের সঙ্গে থেকে তালতলী থেকে অবৈধভাবে মাছ পাচার বন্ধ করার ঘোষণা দিয়েছেন।

পুলিশ জানিয়েছে, অতীতের ন্যায় অবৈধ বাণিজ্য কিংবা অপরাধকে কাউনিয়া থানা পুলিশ আর প্রশ্রয় দেবে না। এক্ষেত্রে জনস্বার্থে মামলা করার সুযোগ রয়েছে। সমাজে প্রতিষ্ঠিত এমন ব্যক্তি যদি মাছ পাচারকারীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দেয়, তদন্ত করে ব্যবস্থাগ্রহণ করা হবে। সেক্ষেত্রে অপরাধারীর পরিচয় যা-ই হোক না কেনো তা দেখার সুযোগ থাকবে না।

আওয়ামী লীগের দোসরদের নিয়ে বরিশালের তালতলীতে দুই বিএনপি নেতার অবৈধ বাণিজ্যের খবর মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মনিজরুজ্জামান ফারুকও অবগত হয়েছেন। তিনি জানান, টুটুল বাহিনীর লোকদের সাথে দুই কর্মীর একজোট হওয়ার বিষয়টি আগেই জানতে পেরেছেন এবং তিনি তাদের ডেকে নিয়ে সাবধান করে দিয়েছেন। এরপরেও যদি তারা অনৈতিক কাজে জড়িত থাকে সাংগঠনিকভাবে ব্যবস্থাগ্রহণ করা হবে এবং তাদের অবৈধ মাছ পুলিশ-প্রশাসনকে ধরতে আহ্বান রাখেন শীর্ষস্থানীয় বিএনপি নেতা।’

পুলিশ ম্যানেজ করে বরিশাল থেকে বছরে শত কোটি টাকার জাটকা পাচার (!)

বরিশালটাইমস রিপোর্ট

২৯ মে, ২০২৫ ১৬:৫৭

প্রিন্ট এন্ড সেভ

বিএনপি নেতা মিরাজ বাহিনীর সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে সাদিক আব্দুল্লাহ’র বদনাম! হ্রাস পাচ্ছে জনপ্রিয়তাও

উত্তর আমানতগঞ্জের বিএনপি নেতা মিরাজ, সেলিম এবং নয়ন-সবুজসহ গুটিকয়েক সন্ত্রাসে তটস্থ এলাকাবাসী ঘুরে বসতে শুরু করেছে। বরিশালের সিনিয়র সাংবাদিক হাসিবুল ইসলামের ভাইদের ওপর হামলাসহ কুপিয়ে হত্যাচেষ্টা পরে এলাকাবাসী এখন আর আগের মতো মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ এবং তার সেকেন্ড ইন কামান্ড নিরব হোসেন টুটুলের ওপর আস্থা বা ভরসা রাখতে পারছে না। ফলে অনেকেই সাদিক-টুটুল বলয় ছেড়ে বর্তমান মেয়র আবুল খায়ের ওরফে খোকন সেরনিয়াবাতের রাজনীতিতে সক্রিয় হয়েছেন, হচ্ছেন। বিশেষ করে সাংবাদিক স্বজন তারেকের ওপর হামলার প্রেক্ষাপটে মামলা এবং টুটুলের কাছের লোক হিসেবে পরিচিত মিরাজসহ সকলে গ্রেপ্তার এড়াতে আত্মগোপনে যাওয়ার পরে এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। জানা গেছে, উত্তর আমানতগঞ্জে সরাসরি রাজনীতিতে সম্পৃক্ত নেই এমন মানুষের সংখ্যা অধিকা, এই অংশ এতদিন নিবর হোসেন টুটুলের সাথে থাকলেও মিরাজ বাহিনীর নিপীড়িন এবং সন্ত্রাসের চিত্র দেখে তাদের রাজনৈতিক আশ্রয়-প্রশ্রয়দাতাদের দোষারপ করছেন। ফলশ্রুতিতে বলাই যায়, মিরাজসহ এই কয়েকজন ব্যক্তির কারণে সাবেক সিটি মেয়র সাদিক আব্দুল্লাহ এবং নিরব হোসেন টুটুলের বদনাম হয়েছে, হচ্ছে, সেক্ষেত্রে তাদের জনপ্রিয়তাও হ্রাস পাচ্ছে।

স্থানীয় সূত্র জানায়, মহানগর আওয়ামী লীগ শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক নিরব হোসেন টুটুলের আশ্রয়-প্রশ্রয় মিরাজ এবং সেলিমসহ ৯/১০ জনের একটি বাহিনী সাদিক আব্দুল্লাহ মেয়র থাকাকালীন উত্তর আমানতগঞ্জে দেদার ত্রাস চালিয়েছে। সদর উপজেলার তালতলী বন্দর থেকে জাটকা, চাপিলা এবং রেণুপোনার মতো জাতীয় সম্পদ পাচার করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়েছে। পাশাপাশি বেলতলা টু শায়েস্তবাদ পর্যন্ত সমান্তরাল চালিয়ে ভূমিদস্যু, চাঁদাবাজিসহ সশস্ত্র ত্রাস। সর্বশেষ যার শিকার হয়েলে সাংবাদিক স্বজন তারিকুল ইসলাম, চল্লিশোর্ধ্ব এই যুবকও সংবাদকর্মী হিসেবে কাজ করেন।

ঈদের দুদিন আগে এই বাহিনীর অনুরুপ হামলার শিকার হয়েছেন ওই এলাকার বাসিন্দা সাংবাদিক মাহাবুব সিকদার। জানা গেছে, তাকেসহ তার বাবা ভাইদের মারধরের পর ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। পরে কাউনিয়া পুলিশ গিয়ে দোকানটি খুলে দেয়। সেই ঘটনার সপ্তাহখানেকের মাথায় সাংবাদিক স্বজন তারেক এবং তার ভাইদের ওপর সশস্ত্র হামলা চালিয়ে কুপিয়ে হত্যাচেষ্টা করেছে মিরাজ বাহিনী।

স্থানীয় বাসিন্দা নাছির, কবির, সোহেল অভিযোগ করেন, গোটা উত্তর আমানতগঞ্জবাসী সাদিক আব্দুল্লাহ এবং নিরব হোসেন টুটুলের বন্দনা করতো। কিন্তু বিএনপি নেতা মিরাজ, সেলিম, নয়ন, সবুজসহ ৯/১০ জনের বাহিনী যাকে তাকে মারধর করে ক্রমাগত সন্ত্রাস সৃষ্টি করায় মহানগরের শীর্ষ নেতা সাদিকের বদনাম করেছে। এমনকি টুটুলকে বিষয়টি এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে বারংবার অভিযোগ করা হলেও কোনো ব্যবস্থাগ্রহণ করা হয়নি, যার প্রভাব পড়েছে সাদিক আব্দুল্লাহ’র রাজনীতিতে। দেখা গেছে, টুটুলের এই বাহিনী মিছিল মিটিংয়ে যে কজন লোক সমাবেত করছে, তাদের অপেক্ষা বিরোধী অংশটি অর্থাৎ স্থানীয় ৪ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর সৈয়দ সামসুদ্দোহা আবিদ এবং মৎস্যজীবী লীগ নেতা খান হাবিব জনসমর্থনে এগিয়ে যাচ্ছেন পর্যায়ক্রমে।

এলাকাবাসী জানিয়েছে, মিরাজসহ কয়েকজন বিএনপি নেতা সাদিক আব্দুল্লাহ এবং নিরব হোসেন টুটুলের নাম ভাঙিয়ে দীর্ঘদিন ধরে এই ধরনের ত্রাস চালিয়ে আসায় তাদের ওপর স্থানীয়রা সংক্ষুব্ধ, অনেকেই বিকল্প রাজনৈতিক হিসেবে আবিদ ও খান হাবিবকে বেশি মাত্রায় গুরুত্ব দিতে শুরু করেছেন। সেক্ষেত্রে নিরব হোসেন টুটুলের জনপ্রিয়তা হ্রাস পাওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়, মন্তব্য পাওয়া গেছে।

তবে মিরাজসহ তার বাহিনীর সন্ত্রাসের কারণে এলাকাবাসী কাউনিয়া থানা পুলিশের ওসি মো. আসাদুজ্জামানকেও দুষছেন। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ তিনি, মিরাজ, কালু এবং নিজামসহ এই বাহিনীর সদস্যদের চোরাকারবারি করার সুযোগ করে দিয়ে মাসোহারা গ্রহণ করে থাকেন। সাংবাদিক তারিকুল ইসলাম যে বিষয়টি গত শনিবার শেবাচিমে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় উর্ধ্বতন পুলিশ কর্তাদের সামনেই প্রকাশ করে দিয়েছেন। এছাড়া সন্ত্রাসী বাহিনীটির সাথে যে ওসি আসাদের গভীর সংখ্যতা রয়েছে, তা থানা পুলিশের আচারণেও প্রকাশ পেয়েছে, পাচ্ছে।

থানা পুলিশের একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, এই বাহিনীর সদস্যদের অনেকেই প্রতিদিন ওসির রুমে যাতায়াত করেন। এমনকি তাদের একজন বিএনপি নেতা নিজাম সিকদারকে ওসি রুমে বসে সিগারেট খেতেও দেখা যায়। এবং এগুলো তারা দম্ভোক্তির সুরে এলাকার ঘুরে মানুষের কাছে বলে বেড়ায়। ফলে কাউনিয়া থানা পুলিশের ওপরও উত্তর আমানতগঞ্জবাসী ভরসা না রাখতে পেরে প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক শামীম, সিটি মেয়র খোকন সেরনিয়াবাত এবং পুলিশ কমিশনার মো. জিহাদুল কবির ও র‌্যাবপ্রধানের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

মেয়রের চেয়ার হারানোর পরে রাজনৈদিকভাবে দুর্বল থাকা সাদিক আব্দুল্লাহ’র এই দুসময়ে তার নাম ভাঙিয়ে বিএনপি নেতা মিরাজরা যে ত্রাস অব্যাহত রেখেছে, তাতে স্থানীয়ভাবে আরও সমর্থন হ্রাস পাওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। বিপরিতে তার ঘোর শক্র আপন চাচা খোকন সেরনিয়াবাত এবং সদর আসনের এমপি পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুকের বলয়-বৃদ্ধি ঘটাবে স্থানীয় জনতা।

এই বিষয়ে সাদিক আব্দুল্লাহ’র বক্তব্য না পাওয়া গেলেও নিরব হোসেন টুটুলের ভাষ্য হচ্ছে, তার নাম ভাঙিয়ে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড করলে কোনো ছাড় নয়। উত্তর আমানতগঞ্জে যা হয়েছে, হচ্ছে তার জন্য তিনি দায়ী নন জানিয়ে বলেন, মামলা হয়েছে, পুলিশ ব্যবস্থাগ্রহণ করবে। আর এই মামলায় যারা অভিযুক্ত তারা আওয়ামী লীগের কেউ না, দলীয়ভাবে তাদের কোনো পদপদবিও নেই।

জানা গেছে, গত শনিবার স্থানীয় বাসিন্দা তারেকের ওপর হামলার ঘটনায় মামলাটি থানায় যাতে নথিভুক্ত না হয়, বিএনপি নেতা মিরাজ বিভিন্ন মহল থেকে সুপারিশ রেখেছিল। কিন্তু কোনো কাজে আসেনি, কারণ যাকে রক্তাক্ত করা হয়েছে, সেই তারেক বরিশালের সিনিয়র সাংবাদিক ও সংগঠক হাসিবুল ইসলামের ভাই। এই কারণে বিষয়টি অধিক গুরুত্ব দিয়ে দেখেছে মেট্রোপলিটন পুলিশ প্রশাসন।

এই সন্ত্রাস দমন করা এখন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জন্য গুরুদায়িত্ব বলে মনে করছে এলাকাবাসী। পাশাপাশি যাদের নাম ভাঙিয়ে ত্রাস চালাচ্ছে, তাদেরও বিষয়টি সম্পর্কে সতর্ক থাকা জরুরি। নতুবা কিছুদিন পরে উত্তর আমানতগঞ্জে সাদিক সমর্থক খুঁজে পাওয়া যাবে না, বরং রাজনৈতিক গুরু পরিবর্তন করে মেয়র খোকন সেরনিয়বাতের অনুকূলে যাবে।

নিজের রাজনৈতিক স্বার্থে হলেও সাদিক আব্দুল্লাহ এবং নিরব হোসেন টুটুলকে বিএনপি নেতা মিরাজসহ ৯/১০ জনকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দেওয়া বন্ধ করা উচিৎ। এর ব্যত্তয় ঘটলে উত্তর আমানতগঞ্জে আগামীতে সাদিক সমর্থক খুঁজে পাওয়া দুস্কর হবে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বোদ্ধরা।’

নিরব হোসেন টুটুলে বদনাম সাদিকের! পুড়তে পারে কপাল

বরিশালটাইমস রিপোর্ট

২৯ মে, ২০২৫ ১১:৪৫

প্রিন্ট এন্ড সেভ

নিরব হোসেন টুটুলে বদনাম সাদিকের! পুড়তে পারে কপাল

চলতি বছরের শেষদিকে দেশের সাত সিটি করপোরেশন নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করেছে আওয়ামী লীগ। সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থী মনোনয়নের কাজও এগিয়ে নিয়েছে দলটি।

বরিশাল সিটিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থীও প্রায় চূড়ান্ত হয়ে গেছে। হাইকমান্ডের পছন্দের তালিকায় শীর্ষে রয়েছেন ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে নিহত তার ভগ্নিপতি আব্দুর রব সেরনিয়াবাতের ছোট ছেলে এবং আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ’র ছোট ভাই আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ ওরফে খোকন সেরনিয়াবাত। বিশেষ করে খোকন সেরনিয়াবাতের ওপরে সুনজর রয়েছে প্রধানমন্ত্রী আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার। তবে একই পরিবারের সদস্য আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ’র বড় ছেলে সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহকেও মাথায় রাখছেন তারা।

বঙ্গবন্ধুর পরিবারের এই দুই সদস্যের কে পাবেন দলীয় মনোনয়ন, তা নির্ভর করবে নির্বাচনের আগ মুহূর্তের পরিবেশ এবং পরিবারের অন্যদের মতামতের ভিত্তিতে। শেষ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তের ওপরও নির্ভর করতে হতে পারে।

পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, এতোদিন চট্টগ্রামেই বেশি থেকেছেন হঠাৎ আলোচনায় আসা খোকন সেরনিয়াবাত। বরিশালে গেলে থাকেন তার শ্বশুরের বাসা নগরীর ব্রাউন কম্পাউন্ডে। ঢাকায় বসবাস করেন ধানমণ্ডিতে।

বরিশালের নেতারা জানান, পঁচাত্তরের নির্মম হত্যাকাণ্ডের পর থেকে নিভৃতচারী পরিচ্ছন্ন ব্যক্তিত্বের অধিকারী খোকন সেরনিয়াবাতের দলে কোনো পদ-পদবি নেই। সাবেক সংসদ সদস্য ও সিটি মেয়র শওকত হোসেন হিরণের মৃত্যুর পরে প্রথম মহানগর আওয়ামী লীগের শোকসভা ও দোয়া-মোনাজাতে অংশ নেন তিনি। এখন মাঝে-মধ্যেই এসে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের জন্য ভোজসভার আয়োজন করে থাকেন ভোজনরসিক খোকন।

পারিবারিকভাবে অনেক আগে থেকেই সম্পর্কে ভাতিজা সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ’র সঙ্গে খোকন সেরনিয়াবাতের চাপা দ্বন্দ্ব রয়েছে। রাজনৈতিকভাবে এখন মনোনয়ন নিয়ে তা বাড়ছে বলেও জানান আওয়ামী লীগের নেতারা।

খোকন সেরনিয়াবাত সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি বিষয়টি অনানুষ্ঠানিকভাবেই শুনেছি। এটি সম্পূর্ণ দল ও নেত্রীর বিষয়। বরিশালের মানুষের চাওয়া-না চাওয়ার বিষয়ও থাকতে পারে। নেত্রী ও বরিশালের মানুষ যদি আমাকে মেয়র হিসেবে দেখতে চান, তখনতো চিন্তা করতেই হবে’।

বড় ভাইয়ের ছেলে সাদিক আব্দুল্লাহ’র সম্ভাব্য প্রার্থীতা সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘ইচ্ছার স্বাধীনতা সবারই আছে। তিনি যদি প্রার্থী হন এবং দল যদি তাকে মনোনয়ন দেয়, তাতে কোনো সমস্যা দেখি না। তার সঙ্গে আমার কোনো বিরোধ নেই, দ্বন্দ্বও নেই’।

অন্যদিকে ২০১৪ সালে শওকত হোসেন হিরণের মৃত্যুর পর বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে উত্থান ঘটে আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ’র বড় ছেলে কেন্দ্রীয় যুবলীগের সদস্য সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ’র। মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাদিক বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনেরও নেতৃত্বে আছেন।

বর্তমানে বরিশাল মহানগর ও সদর উপজেলার আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগসহ অঙ্গসংগঠনের বেশিরভাগ নেতাকর্মীদের নেতৃত্বে অঘোষিতভাবেই রয়েছেন তিনি। বঙ্গবন্ধুর পরিবারের সদস্য হওয়ায় প্রভাব আর নেতৃত্বগুণে তৃণমূলের বেশিরভাগ নেতাকর্মী তার সঙ্গেই থাকেন।

অবশ্য বদনামও রয়েছে তার। হিরণের সঙ্গে হাসানাত পরিবারের পুরনো দ্বন্দ্ব গড়িয়েছে হিরণপতœী বরিশাল সদর আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য জেবুন্নেছা আফরোজের সঙ্গেও। আর সাদিকের বিরুদ্ধে অভিযোগ, বর্তমানে জেবুন্নেছাপন্থীদেরকে দলে অনেকটাই কোনঠাসা করে রেখেছেন তিনি।

আরও অভিযোগ রয়েছে, বরিশালের সকল সরকারি দপ্তরেই রয়েছে তার একক আধিপত্য। ২০১৫ সালের ৩০ জানুয়ারি মহানগর আওয়ামী লীগের বর্তমান শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক নিরব হোসেন টুটুল সাদিক আব্দুল্লাহ’র সঙ্গে বেড়াতে গিয়ে কুয়াকাটার হোটেলরুমে গুলিবিদ্ধ হন। ওই গুলি সাদিকের আগ্নেয়াস্ত্র থেকেই বের হয়েছিল বলে প্রথমে অভিযোগ উঠলেও অজ্ঞাত কারণে তা আর সামনে আসেনি। যদিও পরে একান্ত ঘনিষ্টজন টুটুলের চিকিৎসা ও কৃত্রিম পা বসানোর কাজ সাদিকের চেষ্টায়ই সফল হয়।

চেষ্টা করেও সাদিক আব্দুল্লাহ’র সঙ্গে এসব বিষয়ে কথা বলা সম্ভব হয়নি।’’

custom sidebar ads

Google AdSense
This is a demo ad. Your live ads will be displayed here once AdSense is properly configured.

জনপ্রিয়

Google AdSense
This is a demo ad. Your live ads will be displayed here once AdSense is properly configured.