
১১ জুন, ২০২৫ ১৬:৩৮
নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল: সাগরে মাছ আহরণে ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষ হচ্ছে আজ বুধবার রাত ১২টায়। গভীর সাগরে যাত্রার প্রস্তুতি শেষ করছেন বরগুনার জেলেরা। কেউ ট্রলার মেরামত করছেন, কেউ জাল সেলাই করছেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্যান্য সরঞ্জাম প্রস্তুত করছেন।
মৎস্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ২০১৫ সাল থেকে সাগরে মাছ ধরায় ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হয়ে আসছে। তবে জেলেদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে এবার ভারতের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ১৫ এপ্রিল থেকে ১১ জুন পর্যন্ত ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হয়।
এই নিষেধাজ্ঞায় অনেক জেলে পরিবারে নেমে আসে সংকট। অনেকে ধারদেনায় জর্জরিত হয়ে পড়েছেন। তার পরও আশাবাদী জেলেরা—এবার সাগরে নামলেই মিলবে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ।
বরগুনা সদর উপজেলার বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী বলেন, ‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’
এদিকে সাগরে নিষেধাজ্ঞা চলাকালেও কিছু অসাধু জেলে মাছ শিকার করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। ফলে পাথরঘাটা মৎস্যঘাটে গত কিছুদিন ধরে মাছের সরবরাহ ছিল। ঈদুল আজহাকে কেন্দ্র করে প্রশাসনের নজরদারি কমে যাওয়ায় ৩ জুন থেকে কিছু ট্রলার সাগরে যাওয়া শুরু করে। এদের মধ্যে জেলে হাবিবুর রহমান সোমবার মাছ নিয়ে ঘাটে ফেরেন।
তিনি বলেন, ‘মোট ৬ লাখ টাকার মাছ বিক্রি করেছি। কিন্তু বরফ ও অন্যান্য খরচ মিটিয়ে প্রায় দেড় লাখ টাকা লোকসান হয়েছে। বরফকলের মালিকেরা ক্যানপ্রতি বরফের দাম ১৩০ টাকার জায়গায় ২০০ টাকা নিচ্ছেন। আর প্রশাসনের একটি চক্র ট্রলারপ্রতি ১৫-২০ হাজার টাকা চাঁদা নিয়েছে।’
তবে পাথরঘাটা বরফকল মালিক সমিতির কোষাধ্যক্ষ মেহের কান্তি অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘লোডশেডিংসহ বিভিন্ন কারণে বরফ উৎপাদনের খরচ বেড়েছে। সে কারণে দাম কিছুটা বাড়ানো হয়েছে।’
জেলে ইউসুফ মাঝির অভিযোগ, ‘নিষেধাজ্ঞা কার্যকরের নামে আসলে লোক দেখানো অভিযান হয়েছে। প্রশাসনের একাংশ ‘ম্যানেজ’ করে বহু ট্রলার সাগরে গিয়ে মাছ ধরেছে।’
এ বিষয়ে বরগুনা জেলা ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘আমি ঈদের ছুটিতেও পাথরঘাটায় অবস্থান করে কয়েকটি অভিযান পরিচালনা করেছি। তার পরও বিশাল সাগর এলাকায় কিছু অসাধু জেলে সুযোগ নিয়েছেন। আমরা বরফের অতিরিক্ত উৎপাদন করায় কয়েকজন বরফকল মালিককে জরিমানাও করেছি।’
নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল: সাগরে মাছ আহরণে ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষ হচ্ছে আজ বুধবার রাত ১২টায়। গভীর সাগরে যাত্রার প্রস্তুতি শেষ করছেন বরগুনার জেলেরা। কেউ ট্রলার মেরামত করছেন, কেউ জাল সেলাই করছেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্যান্য সরঞ্জাম প্রস্তুত করছেন।
মৎস্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ২০১৫ সাল থেকে সাগরে মাছ ধরায় ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হয়ে আসছে। তবে জেলেদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে এবার ভারতের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ১৫ এপ্রিল থেকে ১১ জুন পর্যন্ত ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হয়।
এই নিষেধাজ্ঞায় অনেক জেলে পরিবারে নেমে আসে সংকট। অনেকে ধারদেনায় জর্জরিত হয়ে পড়েছেন। তার পরও আশাবাদী জেলেরা—এবার সাগরে নামলেই মিলবে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ।
বরগুনা সদর উপজেলার বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী বলেন, ‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’
এদিকে সাগরে নিষেধাজ্ঞা চলাকালেও কিছু অসাধু জেলে মাছ শিকার করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। ফলে পাথরঘাটা মৎস্যঘাটে গত কিছুদিন ধরে মাছের সরবরাহ ছিল। ঈদুল আজহাকে কেন্দ্র করে প্রশাসনের নজরদারি কমে যাওয়ায় ৩ জুন থেকে কিছু ট্রলার সাগরে যাওয়া শুরু করে। এদের মধ্যে জেলে হাবিবুর রহমান সোমবার মাছ নিয়ে ঘাটে ফেরেন।
তিনি বলেন, ‘মোট ৬ লাখ টাকার মাছ বিক্রি করেছি। কিন্তু বরফ ও অন্যান্য খরচ মিটিয়ে প্রায় দেড় লাখ টাকা লোকসান হয়েছে। বরফকলের মালিকেরা ক্যানপ্রতি বরফের দাম ১৩০ টাকার জায়গায় ২০০ টাকা নিচ্ছেন। আর প্রশাসনের একটি চক্র ট্রলারপ্রতি ১৫-২০ হাজার টাকা চাঁদা নিয়েছে।’
তবে পাথরঘাটা বরফকল মালিক সমিতির কোষাধ্যক্ষ মেহের কান্তি অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘লোডশেডিংসহ বিভিন্ন কারণে বরফ উৎপাদনের খরচ বেড়েছে। সে কারণে দাম কিছুটা বাড়ানো হয়েছে।’
জেলে ইউসুফ মাঝির অভিযোগ, ‘নিষেধাজ্ঞা কার্যকরের নামে আসলে লোক দেখানো অভিযান হয়েছে। প্রশাসনের একাংশ ‘ম্যানেজ’ করে বহু ট্রলার সাগরে গিয়ে মাছ ধরেছে।’
এ বিষয়ে বরগুনা জেলা ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘আমি ঈদের ছুটিতেও পাথরঘাটায় অবস্থান করে কয়েকটি অভিযান পরিচালনা করেছি। তার পরও বিশাল সাগর এলাকায় কিছু অসাধু জেলে সুযোগ নিয়েছেন। আমরা বরফের অতিরিক্ত উৎপাদন করায় কয়েকজন বরফকল মালিককে জরিমানাও করেছি।’

১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১৯:৫১
বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলায় বাংলাদেশ কোস্টগার্ডের বিশেষ অভিযানে ১০২ কেজি হরিণের মাংসসহ এক শিকারিকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
রবিবার (১৪ ডিসেম্বর) ভোর রাত ৩টার দিকে পাথরঘাটা উপজেলার কাঠালতলী ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের কাঠালতলী গ্রাম থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতারকৃত ব্যক্তির নাম মো. লিটন (৪৯)। তিনি মো. রুস্তম আলীর পুত্র এবং পাথরঘাটা উপজেলার কাঠালতলী এলাকার বাসিন্দা।
বাংলাদেশ কোস্টগার্ড দক্ষিণ জোন সূত্রে জানা যায়, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে আজ রাত আনুমানিক তিনটার দিকে বিসিজি স্টেশন পাথরঘাটা একটি বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে। অভিযানে উক্ত এলাকা থেকে অবৈধভাবে শিকার করা হরিণের ১০২ কেজি মাংস উদ্ধার করা হয়, যার আনুমানিক বাজারমূল্য এক লাখ দুই হাজার টাকা।
অভিযানে হরিণ শিকারের সঙ্গে জড়িত মো. লিটনকে হাতেনাতে গ্রেফতার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তিনি অবৈধভাবে হরিণ শিকারের সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন বলে জানা গেছে।
বাংলাদেশ কোস্টগার্ড কর্তৃপক্ষ জানান, উপকূলীয় ও সংরক্ষিত বনাঞ্চলে অবৈধ শিকার ও পরিবেশবিরোধী কর্মকাণ্ডরোধে তাদের নিয়মিত অভিযান অব্যাহত থাকবে।
বন ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইনে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া জন্য উদ্ধারকৃত হরিণের মাংসসহ গ্রেফতারকৃত ব্যক্তিকে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।
বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলায় বাংলাদেশ কোস্টগার্ডের বিশেষ অভিযানে ১০২ কেজি হরিণের মাংসসহ এক শিকারিকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
রবিবার (১৪ ডিসেম্বর) ভোর রাত ৩টার দিকে পাথরঘাটা উপজেলার কাঠালতলী ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের কাঠালতলী গ্রাম থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতারকৃত ব্যক্তির নাম মো. লিটন (৪৯)। তিনি মো. রুস্তম আলীর পুত্র এবং পাথরঘাটা উপজেলার কাঠালতলী এলাকার বাসিন্দা।
বাংলাদেশ কোস্টগার্ড দক্ষিণ জোন সূত্রে জানা যায়, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে আজ রাত আনুমানিক তিনটার দিকে বিসিজি স্টেশন পাথরঘাটা একটি বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে। অভিযানে উক্ত এলাকা থেকে অবৈধভাবে শিকার করা হরিণের ১০২ কেজি মাংস উদ্ধার করা হয়, যার আনুমানিক বাজারমূল্য এক লাখ দুই হাজার টাকা।
অভিযানে হরিণ শিকারের সঙ্গে জড়িত মো. লিটনকে হাতেনাতে গ্রেফতার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তিনি অবৈধভাবে হরিণ শিকারের সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন বলে জানা গেছে।
বাংলাদেশ কোস্টগার্ড কর্তৃপক্ষ জানান, উপকূলীয় ও সংরক্ষিত বনাঞ্চলে অবৈধ শিকার ও পরিবেশবিরোধী কর্মকাণ্ডরোধে তাদের নিয়মিত অভিযান অব্যাহত থাকবে।
বন ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইনে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া জন্য উদ্ধারকৃত হরিণের মাংসসহ গ্রেফতারকৃত ব্যক্তিকে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।

২৯ নভেম্বর, ২০২৫ ১৩:৪৪
রাত তখন প্রায় দেড়টা। বরগুনার তালতলী উপজেলার সাগরঘেঁষা তেঁতুলবাড়িয়া মাছঘাট থেকে ঢাকার উদ্দেশে বের হয়েছিল মাছবোঝাই একটি বাস। গভীর রাতে নথুল্লাবাদের কাছাকাছি পৌঁছাতেই থামিয়ে দেওয়া হয় যাত্রীবাহী পরিবহনটিকে।
এদিকে, গোপন তথ্যের সূত্র ধরে জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা (এনএসআই) অভিযান চালায় সেখানে। কাশিপুরের নিস্তব্ধতা ভেঙে তখন আলো ও মানুষের কোলাহল। বাসের বক্স খুলতেই মেলে জাটকার গন্ধ ভরা কয়েক ঝুড়ি। জব্দ করা হয় সবকিছু।
কিন্তু জাটকার সঙ্গে আরো অন্তত ১০০ কেজির মতো পোয়া আর সাগরের ফ্যাসা মাছ ছিল। এই মাছগুলো বৈধ। তবু সেগুলোও জব্দের তালিকায় চলে যায়। পরদিন সকালে বরিশালের সমাজসেবা অধিদপ্তরের আটটি শিশু পরিবারে মাছ বিতরণ হতে দেখা যায়। তাদের মধ্যে মাত্র আট থেকে ১০ কেজি পোয়া মাছ বিতরণ করা হয়।
এছাড়া প্রতিটি প্রতিষ্ঠান আনুমানিক গড়ে ৩০০টি জাটকা পেয়েছেন। এসব তথ্য শিশু পারিবার ঘুরে নিশ্চিত হয়েছেন প্রতিবেদক।
জেলে সেলিম মাতুব্বরের গল্প এখানেই ঘুরে যায় অন্যদিকে। তেঁতুলবাড়িয়ার ঘাটের সেই পরিচিত মানুষটি বহু বছর ধরে ঢাকার বাড্ডার বাজারে মাছ পাঠান। ভোরের অন্ধকারে যখন জালের পানি এখনও দুই হাত ভিজিয়ে রাখে, তখনই তাঁর দিন শুরু হয়।
সেদিনও অন্য দিনের মতো বরফের ঠাণ্ডায় হাতে কাঁপুনি ধরে। সেই হাতে তিন ধরনের মাছ পলি ব্যাগে আলাদা করে সাজিয়েছিলেন তিনি।
প্রথমেই তুলে নেন ছোট-বড় আকারের পোয়া, যেগুলো পৃথক ১৭টি প্যাকেট করে রাখা ছিল। সেগুলোর ওজন দাঁড়ায় ৬৮ কেজি ৬০০ গ্রাম। এরপর আসে সাগর ফ্যাসা, যার ওজন মোটামুটি আট কেজি ৭০০ গ্রাম। সবশেষে মাথা-লেজ মিলে ১০ ইঞ্চি আকারের ইলিশ। সেগুলোর ওজন সামান্য হলেও ঢাকায় সাধারণ ক্রেতাদের চাহিদা রয়েছে বলে সুন্দরভাবে বরফে মুড়িয়ে ড্রামে রাখেন তিনি।
সব মিলিয়ে মাছগুলো সাজানো হয়েছিল একদম নিয়ম মেনে, যেমনটি তিনি বছরের পর বছর করে আসছেন। কিন্তু সেই পরিচ্ছন্ন প্রস্তুতি শেষ পর্যন্ত তাঁকে রক্ষা করতে পারেনি রাতের অভিযানের হাত থেকে। সব মিলিয়ে বরফজাত করে তুলে দিয়েছিলেন ইসলাম পরিবহনের বাসে। নথুল্লাবাদে পৌঁছাতেই ফোন আসে, এনএসআই ড্রামসহ পুরো মালামাল ‘ঝাটকা’ উল্লেখ করে জব্দ করেছে।
এরপর শুরু হয় ফেরত চাওয়ার দীর্ঘ চেষ্টা। সেলিম তাঁর এক আত্মীয়কে কাশিপুরে পাঠান বৈধ পোয়া আর ফ্যাসা ফেরত আনার জন্য। কিন্তু এনএসআই সদস্যরা জানিয়ে দেন, মাছ ফেরত দেওয়া সম্ভব নয়। পরদিন শিশু পরিবারে গেলে সেখানেও একই সুর। সমাজসেবার কর্মকর্তারা বলেন, মাছ তারা ইতোমধ্যেই এনএসআই ও মৎস্য বিভাগের কাছ থেকে বুঝে নিয়েছেন। ফেরতের প্রশ্নই আসে না।
অভিযোগ, এরপর ওই আত্মীয়ের কাছ থেকে নেওয়া হয় একটি সাদা কাগজে ‘স্বেচ্ছায় মাছ বিতরণের’ মুচলেকা। যেন মাছ তিনি স্বেচ্ছায় দান করেছেন, এমন স্বীকারোক্তির কাগজে সই করিয়ে তবেই বিদায় দেওয়া হয়। এত কিছু ঘটনার পরও সরকারি দপ্তরের বক্তব্যে কিন্তু মিল নেই।
বরিশাল সদর উপজেলা মৎস্য বিভাগের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জামাল হোসেন বলেন, ‘অভিযানে শুধু জাটকা জব্দ করা হয়েছে, বৈধ কোনো মাছ ছিল না। সমাজসেবার আটটি প্রতিষ্ঠানের প্রত্যেকটিকে গড়ে ৩০০টি করে জাকটা বিতরণ করা হয়েছে। বিতরণের সময় আমি ঘটনাস্থলে ছিলাম।’
কিন্তু বরিশাল সরকারি শিশু পরিবার (বালক)-এর তত্ত্বাবধায়ক মো. আসিফ চৌধুরী সরাসরি স্বীকার করছেন, জাটকার সঙ্গে আনুমানিক ১০ কেজি পোয়া আর ফ্যাসা ছিল। মালিক তা চাইতে এসেছিলেন। কিন্তু যেহেতু আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মাছ বুঝিয়ে দিয়েছে, তাই ফেরত দেওয়া যায়নি। জাটকা বিতরণের আগে তার শিশু পরিবারটিতে ভাগ করা হয়েছিল। তিনি শিশু পরিবারে আনুমানিক ৩০০টি জাটকা পেয়েছেন।
এনএসআইয়ের অংশগ্রহণ নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। সাধারণত জাটকা রক্ষার অভিযানে তাঁরা থাকেন না। এই প্রথম এমন অভিযান পরিচালনা করলেন গোয়েন্দা সংস্থাটির সদস্যরা।
বাংলাদেশ মৎস্য শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসেন বলেন, ‘জাটকা রক্ষা রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব, প্রয়োজনে যে কোনো বাহিনী অভিযান চালাতে পারে।’ তবে এনএসআইয়ের নেতৃত্বে জাটকা জব্দের ঘটনাকে তিনি ‘নজিরবিহীন’ বলেই উল্লেখ করেন।
রাত তখন প্রায় দেড়টা। বরগুনার তালতলী উপজেলার সাগরঘেঁষা তেঁতুলবাড়িয়া মাছঘাট থেকে ঢাকার উদ্দেশে বের হয়েছিল মাছবোঝাই একটি বাস। গভীর রাতে নথুল্লাবাদের কাছাকাছি পৌঁছাতেই থামিয়ে দেওয়া হয় যাত্রীবাহী পরিবহনটিকে।
এদিকে, গোপন তথ্যের সূত্র ধরে জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা (এনএসআই) অভিযান চালায় সেখানে। কাশিপুরের নিস্তব্ধতা ভেঙে তখন আলো ও মানুষের কোলাহল। বাসের বক্স খুলতেই মেলে জাটকার গন্ধ ভরা কয়েক ঝুড়ি। জব্দ করা হয় সবকিছু।
কিন্তু জাটকার সঙ্গে আরো অন্তত ১০০ কেজির মতো পোয়া আর সাগরের ফ্যাসা মাছ ছিল। এই মাছগুলো বৈধ। তবু সেগুলোও জব্দের তালিকায় চলে যায়। পরদিন সকালে বরিশালের সমাজসেবা অধিদপ্তরের আটটি শিশু পরিবারে মাছ বিতরণ হতে দেখা যায়। তাদের মধ্যে মাত্র আট থেকে ১০ কেজি পোয়া মাছ বিতরণ করা হয়।
এছাড়া প্রতিটি প্রতিষ্ঠান আনুমানিক গড়ে ৩০০টি জাটকা পেয়েছেন। এসব তথ্য শিশু পারিবার ঘুরে নিশ্চিত হয়েছেন প্রতিবেদক।
জেলে সেলিম মাতুব্বরের গল্প এখানেই ঘুরে যায় অন্যদিকে। তেঁতুলবাড়িয়ার ঘাটের সেই পরিচিত মানুষটি বহু বছর ধরে ঢাকার বাড্ডার বাজারে মাছ পাঠান। ভোরের অন্ধকারে যখন জালের পানি এখনও দুই হাত ভিজিয়ে রাখে, তখনই তাঁর দিন শুরু হয়।
সেদিনও অন্য দিনের মতো বরফের ঠাণ্ডায় হাতে কাঁপুনি ধরে। সেই হাতে তিন ধরনের মাছ পলি ব্যাগে আলাদা করে সাজিয়েছিলেন তিনি।
প্রথমেই তুলে নেন ছোট-বড় আকারের পোয়া, যেগুলো পৃথক ১৭টি প্যাকেট করে রাখা ছিল। সেগুলোর ওজন দাঁড়ায় ৬৮ কেজি ৬০০ গ্রাম। এরপর আসে সাগর ফ্যাসা, যার ওজন মোটামুটি আট কেজি ৭০০ গ্রাম। সবশেষে মাথা-লেজ মিলে ১০ ইঞ্চি আকারের ইলিশ। সেগুলোর ওজন সামান্য হলেও ঢাকায় সাধারণ ক্রেতাদের চাহিদা রয়েছে বলে সুন্দরভাবে বরফে মুড়িয়ে ড্রামে রাখেন তিনি।
সব মিলিয়ে মাছগুলো সাজানো হয়েছিল একদম নিয়ম মেনে, যেমনটি তিনি বছরের পর বছর করে আসছেন। কিন্তু সেই পরিচ্ছন্ন প্রস্তুতি শেষ পর্যন্ত তাঁকে রক্ষা করতে পারেনি রাতের অভিযানের হাত থেকে। সব মিলিয়ে বরফজাত করে তুলে দিয়েছিলেন ইসলাম পরিবহনের বাসে। নথুল্লাবাদে পৌঁছাতেই ফোন আসে, এনএসআই ড্রামসহ পুরো মালামাল ‘ঝাটকা’ উল্লেখ করে জব্দ করেছে।
এরপর শুরু হয় ফেরত চাওয়ার দীর্ঘ চেষ্টা। সেলিম তাঁর এক আত্মীয়কে কাশিপুরে পাঠান বৈধ পোয়া আর ফ্যাসা ফেরত আনার জন্য। কিন্তু এনএসআই সদস্যরা জানিয়ে দেন, মাছ ফেরত দেওয়া সম্ভব নয়। পরদিন শিশু পরিবারে গেলে সেখানেও একই সুর। সমাজসেবার কর্মকর্তারা বলেন, মাছ তারা ইতোমধ্যেই এনএসআই ও মৎস্য বিভাগের কাছ থেকে বুঝে নিয়েছেন। ফেরতের প্রশ্নই আসে না।
অভিযোগ, এরপর ওই আত্মীয়ের কাছ থেকে নেওয়া হয় একটি সাদা কাগজে ‘স্বেচ্ছায় মাছ বিতরণের’ মুচলেকা। যেন মাছ তিনি স্বেচ্ছায় দান করেছেন, এমন স্বীকারোক্তির কাগজে সই করিয়ে তবেই বিদায় দেওয়া হয়। এত কিছু ঘটনার পরও সরকারি দপ্তরের বক্তব্যে কিন্তু মিল নেই।
বরিশাল সদর উপজেলা মৎস্য বিভাগের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জামাল হোসেন বলেন, ‘অভিযানে শুধু জাটকা জব্দ করা হয়েছে, বৈধ কোনো মাছ ছিল না। সমাজসেবার আটটি প্রতিষ্ঠানের প্রত্যেকটিকে গড়ে ৩০০টি করে জাকটা বিতরণ করা হয়েছে। বিতরণের সময় আমি ঘটনাস্থলে ছিলাম।’
কিন্তু বরিশাল সরকারি শিশু পরিবার (বালক)-এর তত্ত্বাবধায়ক মো. আসিফ চৌধুরী সরাসরি স্বীকার করছেন, জাটকার সঙ্গে আনুমানিক ১০ কেজি পোয়া আর ফ্যাসা ছিল। মালিক তা চাইতে এসেছিলেন। কিন্তু যেহেতু আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মাছ বুঝিয়ে দিয়েছে, তাই ফেরত দেওয়া যায়নি। জাটকা বিতরণের আগে তার শিশু পরিবারটিতে ভাগ করা হয়েছিল। তিনি শিশু পরিবারে আনুমানিক ৩০০টি জাটকা পেয়েছেন।
এনএসআইয়ের অংশগ্রহণ নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। সাধারণত জাটকা রক্ষার অভিযানে তাঁরা থাকেন না। এই প্রথম এমন অভিযান পরিচালনা করলেন গোয়েন্দা সংস্থাটির সদস্যরা।
বাংলাদেশ মৎস্য শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসেন বলেন, ‘জাটকা রক্ষা রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব, প্রয়োজনে যে কোনো বাহিনী অভিযান চালাতে পারে।’ তবে এনএসআইয়ের নেতৃত্বে জাটকা জব্দের ঘটনাকে তিনি ‘নজিরবিহীন’ বলেই উল্লেখ করেন।

২৮ নভেম্বর, ২০২৫ ১৮:৩৫
একসময় শীতকাল এলেই বাংলাদেশের উপকূলীয় বরগুনার বামনা উপজেলার গ্রামগঞ্জে যে উৎসবের আমেজ বইত, তার প্রধান আকর্ষণ ছিল সুস্বাদু খেজুরের রস ও গুড়। হেমন্তের মাঝামাঝি থেকে শীতের ভরা মৌসুম পর্যন্ত পুরো জনপদে চলত নবান্নের উৎসব।
কিন্তু কালের বিবর্তন এবং প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট তিন কারণে সেই চিরচেনা দৃশ্য এখন আর চোখে পড়ে না। ঐতিহ্যের প্রতীক খেজুর গাছ আশঙ্কাজনক হারে হ্রাস পেয়েছে। উপজেলার গ্রামে-গ্রামে শীতের সকালে মিষ্টি রোদের তাপ নিতে নিতে মাটির ভাঁড়ে খেজুরের সুস্বাদু রস পান করার স্মৃতি আজও অমলিন। শুধু পানীয় হিসাবে নয়, এই রস দিয়ে তৈরি হতো নানান ধরনের পিঠা, পায়েস, ক্ষীর এবং লোভনীয় পাটালি ও নালি গুড়। এটি ছিল বরগুনাসহ দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের নবান্নের সেরা উপহার ও আবহমান বাংলার সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ। খেজুর গুড় ছাড়া এই অঞ্চলের শীতকালীন উৎসব ভাবাই যেত না। খেজুরের রস ছিল গ্রামীণ জীবনের শীতের উৎসবের মূল সূচনা।
এখন চোখে পড়ে না রস আহরণে গাছিদের সেই ব্যস্ততা। কোমরে দড়ির সঙ্গে ঝুড়ি বেঁধে ধারালো দা দিয়ে গাছ চাঁচাছোলা ও নলি বসানোর কাজ। এখন শুধু ক্যালেন্ডার ও ছবিতেই সেই দৃশ্য দেখা যায়। সাতসকালে খেজুরের রস নিয়ে গাছিরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে হাঁকডাক দিতেন, সেই দৃশ্যও এখন বিরল। ঐতিহ্যবাহী খেজুরের রস ও গুড় দুষ্প্রাপ্য হয়ে ওঠায় হতাশ এ অঞ্চলের গাছিরা। যদি এখনই কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়া হয়, তবে অচিরেই এই ঐতিহ্য চিরতরে হারিয়ে যাবে। তবে অল্পকিছু নিবেদিতপ্রাণ গাছি এখনো সংগ্রাম করে যাচ্ছেন।
বামনা উপজেলায় প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেমন সিডর, আইলার আঘাত এবং জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে খেজুর গাছ কমে গেছে। গত ৯-১০ বছর ধরে এই প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে দক্ষিণাঞ্চলে খেজুর গাছের সংখ্যা কমতে শুরু করেছে। একসময় শীতকালে এই অঞ্চলের সর্বত্র শীত উদ্যাপনের আয়োজন শুরু হয়ে যেত এবং অতিথিদের রসের তৈরি পায়েস দিয়ে আপ্যায়ন করার প্রচলন ছিল। এখন রস না পাওয়ায় নবান্নের সেই আনন্দ থেকে মানুষ বঞ্চিত হচ্ছেন।
বামনা উপজেলার রামনা ইউনিয়নের বলইবুনিয়া গ্রামের গাছি মো. ফিরোজ মিয়া জানান, আগে তাদের দারুণ কদর ছিল। মৌসুম শুরুর আগে থেকেই কথাবার্তা পাকা হতো কার কটি খেজুর গাছ কাটতে হবে। কিন্তু এখন আর আগের মতো গাছও নেই, আর গ্রামের লোকরাও তেমন খেজুর রস সংগ্রহ করতে চান না। তারা অল্পকিছু গাছ কেটে নিজেদের চাহিদা মেটান।
উপজেলার বুকাবুনিয়া ইউনিয়নের লক্ষ্মীপুরা গ্রামের গাছি আব্দুল খালেক দফাদার এখনো রস সংগ্রহ করছেন। প্রতিদিন ভোরে গাছিদের কাছে খেজুরের রস খাওয়ার জন্য সাধারণ মানুষের ভিড় দেখা যায়। রস সংগ্রহের জন্য তিনি বাদুড়ের সংস্পর্শ এড়াতে বাঁশের বেড়া দিয়ে প্রতিরক্ষার ব্যবস্থা করেছেন। গাছি খালেক দফাদার বলেন, শীত মৌসুমে কাঙ্ক্ষিত রসের সন্ধান পাচ্ছি না। গ্রামে দিনদিন কমে যাচ্ছে খেজুর গাছের সংখ্যা। গাছ কম থাকায় এখন শুধু রস বিক্রি করা হয়। প্রতি গ্লাস রসের দাম ২০ টাকা এবং প্রতি লিটার ৮০ টাকা। তিনি বলেন, অনেক গাছ কেটে ফেলেছে। এজন্য রসের দাম বেশি।
বামনা উপজেলাজুড়ে খেজুর গাছ কমে যাওয়ার পেছনে প্রধানত তিনটি কারণ দায়ী। এর মধ্যে রয়েছে-ইটভাটার জ্বালানি হিসাবে খেজুর গাছের ব্যবহার, জলবায়ু পরিবর্তন ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ, গাছিদের অভাব ও পেশার অনিশ্চয়তা।
পরিবেশ রক্ষা এবং রসের ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনার জন্য সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে রাস্তার পাশে খেজুর গাছ লাগানোর দাবি উঠেছে। বামনার বাসিন্দারা বলছেন, এই ঐতিহ্য সংরক্ষণ করা শুধু অর্থনৈতিক নয়, সাংস্কৃতিক ও পরিবেশগত দিক থেকেও জরুরি। এখনই যদি খেজুর গাছ লাগানো ও রক্ষার বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া না হয় তবে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম শুধু স্মৃতিতেই খুঁজে পাবে এই ঐতিহ্যকে।
একসময় শীতকাল এলেই বাংলাদেশের উপকূলীয় বরগুনার বামনা উপজেলার গ্রামগঞ্জে যে উৎসবের আমেজ বইত, তার প্রধান আকর্ষণ ছিল সুস্বাদু খেজুরের রস ও গুড়। হেমন্তের মাঝামাঝি থেকে শীতের ভরা মৌসুম পর্যন্ত পুরো জনপদে চলত নবান্নের উৎসব।
কিন্তু কালের বিবর্তন এবং প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট তিন কারণে সেই চিরচেনা দৃশ্য এখন আর চোখে পড়ে না। ঐতিহ্যের প্রতীক খেজুর গাছ আশঙ্কাজনক হারে হ্রাস পেয়েছে। উপজেলার গ্রামে-গ্রামে শীতের সকালে মিষ্টি রোদের তাপ নিতে নিতে মাটির ভাঁড়ে খেজুরের সুস্বাদু রস পান করার স্মৃতি আজও অমলিন। শুধু পানীয় হিসাবে নয়, এই রস দিয়ে তৈরি হতো নানান ধরনের পিঠা, পায়েস, ক্ষীর এবং লোভনীয় পাটালি ও নালি গুড়। এটি ছিল বরগুনাসহ দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের নবান্নের সেরা উপহার ও আবহমান বাংলার সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ। খেজুর গুড় ছাড়া এই অঞ্চলের শীতকালীন উৎসব ভাবাই যেত না। খেজুরের রস ছিল গ্রামীণ জীবনের শীতের উৎসবের মূল সূচনা।
এখন চোখে পড়ে না রস আহরণে গাছিদের সেই ব্যস্ততা। কোমরে দড়ির সঙ্গে ঝুড়ি বেঁধে ধারালো দা দিয়ে গাছ চাঁচাছোলা ও নলি বসানোর কাজ। এখন শুধু ক্যালেন্ডার ও ছবিতেই সেই দৃশ্য দেখা যায়। সাতসকালে খেজুরের রস নিয়ে গাছিরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে হাঁকডাক দিতেন, সেই দৃশ্যও এখন বিরল। ঐতিহ্যবাহী খেজুরের রস ও গুড় দুষ্প্রাপ্য হয়ে ওঠায় হতাশ এ অঞ্চলের গাছিরা। যদি এখনই কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়া হয়, তবে অচিরেই এই ঐতিহ্য চিরতরে হারিয়ে যাবে। তবে অল্পকিছু নিবেদিতপ্রাণ গাছি এখনো সংগ্রাম করে যাচ্ছেন।
বামনা উপজেলায় প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেমন সিডর, আইলার আঘাত এবং জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে খেজুর গাছ কমে গেছে। গত ৯-১০ বছর ধরে এই প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে দক্ষিণাঞ্চলে খেজুর গাছের সংখ্যা কমতে শুরু করেছে। একসময় শীতকালে এই অঞ্চলের সর্বত্র শীত উদ্যাপনের আয়োজন শুরু হয়ে যেত এবং অতিথিদের রসের তৈরি পায়েস দিয়ে আপ্যায়ন করার প্রচলন ছিল। এখন রস না পাওয়ায় নবান্নের সেই আনন্দ থেকে মানুষ বঞ্চিত হচ্ছেন।
বামনা উপজেলার রামনা ইউনিয়নের বলইবুনিয়া গ্রামের গাছি মো. ফিরোজ মিয়া জানান, আগে তাদের দারুণ কদর ছিল। মৌসুম শুরুর আগে থেকেই কথাবার্তা পাকা হতো কার কটি খেজুর গাছ কাটতে হবে। কিন্তু এখন আর আগের মতো গাছও নেই, আর গ্রামের লোকরাও তেমন খেজুর রস সংগ্রহ করতে চান না। তারা অল্পকিছু গাছ কেটে নিজেদের চাহিদা মেটান।
উপজেলার বুকাবুনিয়া ইউনিয়নের লক্ষ্মীপুরা গ্রামের গাছি আব্দুল খালেক দফাদার এখনো রস সংগ্রহ করছেন। প্রতিদিন ভোরে গাছিদের কাছে খেজুরের রস খাওয়ার জন্য সাধারণ মানুষের ভিড় দেখা যায়। রস সংগ্রহের জন্য তিনি বাদুড়ের সংস্পর্শ এড়াতে বাঁশের বেড়া দিয়ে প্রতিরক্ষার ব্যবস্থা করেছেন। গাছি খালেক দফাদার বলেন, শীত মৌসুমে কাঙ্ক্ষিত রসের সন্ধান পাচ্ছি না। গ্রামে দিনদিন কমে যাচ্ছে খেজুর গাছের সংখ্যা। গাছ কম থাকায় এখন শুধু রস বিক্রি করা হয়। প্রতি গ্লাস রসের দাম ২০ টাকা এবং প্রতি লিটার ৮০ টাকা। তিনি বলেন, অনেক গাছ কেটে ফেলেছে। এজন্য রসের দাম বেশি।
বামনা উপজেলাজুড়ে খেজুর গাছ কমে যাওয়ার পেছনে প্রধানত তিনটি কারণ দায়ী। এর মধ্যে রয়েছে-ইটভাটার জ্বালানি হিসাবে খেজুর গাছের ব্যবহার, জলবায়ু পরিবর্তন ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ, গাছিদের অভাব ও পেশার অনিশ্চয়তা।
পরিবেশ রক্ষা এবং রসের ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনার জন্য সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে রাস্তার পাশে খেজুর গাছ লাগানোর দাবি উঠেছে। বামনার বাসিন্দারা বলছেন, এই ঐতিহ্য সংরক্ষণ করা শুধু অর্থনৈতিক নয়, সাংস্কৃতিক ও পরিবেশগত দিক থেকেও জরুরি। এখনই যদি খেজুর গাছ লাগানো ও রক্ষার বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া না হয় তবে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম শুধু স্মৃতিতেই খুঁজে পাবে এই ঐতিহ্যকে।

Google AdSense
This is a demo ad. Your live ads will be displayed here once AdSense is properly configured.
Google AdSense
This is a demo ad. Your live ads will be displayed here once AdSense is properly configured.