Bkash

জাতীয়

যাত্রা শুরু করল “নাগরিক সেবা বাংলাদেশ”

বরিশালটাইমস রিপোর্ট

বরিশালটাইমস রিপোর্ট

২৭ মে, ২০২৫ ১৬:৩০

প্রিন্ট এন্ড সেভ

যাত্রা শুরু করল “নাগরিক সেবা বাংলাদেশ”

সরকারি বিভিন্ন সেবাকে জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্যে অনলাইনে ‘এক ঠিকানায় সকল নাগরিক সেবা’ স্লোগানে যাত্রা শুরু করেছে নাগরিক সেবা বাংলাদেশ।

সোমবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় এই কার্যক্রমের পাইলট প্রকল্প শুভ উদ্বোধন করেছেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস।

প্রশিক্ষিত নাগরিক সেবা উদ‍্যোক্তগণ এই সেবাগুলো নাগরিক সেবা কেন্দ্র থেকে সাধারণ নাগরিকদের প্রদান করবেন।

পাইলট প্রকল্পের আওতায় রাজধানীর গুলশান, উত্তরা ও নীলক্ষেত এলাকায় নাগরিক সেবা কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। এরমধ্যে গুলশান ও উত্তরার কেন্দ্র ইতোমধ্যে কার্যক্রম শুরু করেছে এবং স্বল্প সময়ের মধ‍্যে নীলক্ষেত কেন্দ্রও কার্যক্রম শুরু করবে।

প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের উদ্যোগে এবং সরকারের আইসিটি বিভাগের তত্ত্বাবধানে তৈরি এই সেবার উদ্বোধন করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “দালাল চক্রের দৌরাত্ম্য কমাতে, নানাবিধ হয়রানি রোধে ও ভোগান্তিমুক্ত নাগরিক সেবা নিশ্চিত করতে এই উদ্যোগটি যুগান্তকারী ভূমিকা পালন করবে।”

একইভাবে সেবার সহজ প্রাপ‍্যতা নিশ্চিত করতে এক ঠিকানায় প্রয়োজনীয় সকল সেবা পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্যে প্রবাসী সেবা কেন্দ্র তৈরির বিষয়ে উদ্যোগ নিতেও আইসিটি বিভাগকে নির্দেশনা দেন তিনি।

এই সেবার আওতায় সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে সরকারের সবগুলো মন্ত্রণালয়ের মধ্যে ইতিবাচক প্রতিযোগিতা সৃষ্টির জন্য নিয়মিতভাবে সেবার আপডেট ও সমন্বয়ের বিষয়ে জোর দেন তিনি।

তিনি বলেন, “সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে মন্ত্রণালয়গুলোর মধ্যে ইতিবাচক প্রতিযোগিতা তৈরি করা আমাদের লক্ষ্য। আমাদের চেষ্টা হচ্ছে প্রতিটি মন্ত্রণালয় থেকে যতগুলে সেবা এর আওতায় আনা যায় সবগুলোকে দ্রুত নিয়ে আসা।”

এসময় বিভিন্ন নাগরিক সেবার প্রসঙ্গ টেনে প্রফেসর ইউনূস বলেন, “এমন ব‍্যবস্থা আমাদেরকে অবশ্যই দাঁড় করাতে হবে যাতে জন্ম গ্রহণ করা মাত্রই শিশুরা জন্ম নিবন্ধন সনদ পেয়ে যায়। এটাই যেন হয় তার নাগরিক স্বীকৃতি।”

নাগরিক সেবা কেন্দ্রের পরিচালনা ও মালিকানা সম্পর্কে তিনি বলেন, উদ্যোক্তারা জায়গার মালিকদের সাথে চুক্তি করে ভাড়া পরিশোধ করবেন। প্রাথমিক পর্যায়ে ভাড়া হ্রাসকৃত হারে নির্ধারিত হবে। উদ্যোক্তারা নিরাপত্তা, রক্ষণাবেক্ষণ ও ইউটিলিটির দায়িত্ব নিবেন। সেবা মান বজায় না রাখলে লাইসেন্স বাতিল হতে পারে।

তিনি বলেন, "নাগরিক সেবা বাংলাদেশ শুধুমাত্র একটি সেবা প্রদানের প্ল্যাটফর্ম নয়, এটি সরকার ও জনগণের মধ্যে সেতুবন্ধন গড়ে তোলার একটি আন্দোলন—যার ভিত্তি প্রযুক্তি এবং চালিকা শক্তি স্থানীয় উদ্যোক্তাবৃন্দ। অন্তর্ভুক্তিমূলক, টেকসই ও সম্প্রসারণশীল এই উদ্যোগ সারাদেশে নাগরিক সেবার আকর্ষণীয় রূপান্তর ঘটাতে সক্ষম হবে।”

আইসিটি বিভাগের পক্ষে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, শূণ্য বাজেটে এই প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে এটা প্রমাণিত হয়েছে যে দেশের বিদ্যমান সম্পদ ব‍ব্যাবহার করেই সামনে এগিয়ে চলা সম্ভব।

তিনি বলেন, নাগরিক সেবা বাংলাদেশ" শীর্ষক এই উদ্যোগের মাধ্যমে পোস্ট অফিসসহ অব্যবহৃত সরকারি স্থাপনাগুলোকে রূপান্তর করে আধুনিক কো-ওয়ার্কিং স্পেসে পরিণত করা হবে এবং সেগুলো স্থানীয় উদ্যোক্তা দ্বারা পরিচালিত হবে।

তিনি জানান, নাগরিকদের জন্য হাঁটা-দূরত্বের মধ্যে অবস্থিত এই নাগরিক সেবা কেন্দ্রগুলোতে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত স্থানীয় উদ্যোক্তারা জাতীয় পরিচয়পত্র, পাসপোর্ট, কর ফাইলিংসহ বিভিন্ন সরকারি ডিজিটাল সেবা প্রদান করবেন।

এই মডেলটি যেমন সরকারি সেবা নাগরিকদের জন্য সহজলভ্য করবে, তেমনি দেশের যুবসমাজ ও নারীদের জন্য অর্থনৈতিকভাবে স্বনির্ভর হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি করবে জানিয়ে ফয়েজ ত‍ৈয়‍্যব বলেন, “সামাজিক ব্যবসার নীতিমালায় অনুপ্রাণিত ও সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে চালিত এই উদ্যোগ হবে অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন এবং নাগরিক ক্ষমতায়নের প্রতিচ্ছবি।”

তিনি বলেন, এই সেবার লক্ষ্য হচ্ছে একটি জাতীয় নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা যা নাগরিকদের জন্য কার্যকর এবং সহজলভ্য ডিজিটাল সেবা নিশ্চিত করবে এবং একই সাথে স্থানীয় উদ্যোক্তাদের ক্ষমতায়নের মাধ্যমে সামাজিক ও অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে ভূমিকা রাখবে।

তিনি জানান, নাগরিক সেবা কেন্দ্রের উদ‍্যোক্তা হবার জন‍্য প্রথম ধাপে আবেদনকারীদের মধ্য কঠোর বাছাই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ২০০ জন নারী ও পুরুষ অংশগ্রহণকারী নির্বাচন করা হয়। তাদের ডিজিটাল লিটারেসি, গ্রাহক সেবা ও ডিজিটাল সেবা প্রদানে নিবিড় প্রশিক্ষণ শেষে ১০০ জন উদ্যোক্তাকে (৫০ জন নারী ও ৫০ জন পুরুষ) সার্টিফিকেট প্রদান করা হয়।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন নির্বাচন কমিশনের সচিব আখতার আহমেদ, ভূমি মন্ত্রণালয়ের সচিব এ এস এম সালেহ আহমেদ, তথ‍্য যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সচিব শীষ হায়দার চৌধুরী, স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব মো: রেজাউল মাকছুদ জাহেদী, পুলিশের মহাপরিদর্শক বাহারুল আলম, ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোঃ নূরুল আনোয়ার এবং জাতীয় পরিচয়পত্র অনুবিভাগের মহাপরিচালক এ এস এম হুমায়ুন কবীর।

আরও পড়ুন:

নিজের নয়, জনগণের ইচ্ছায় সরকারপ্রধানের দায়িত্ব নিয়েছি: প্রধান উপদেষ্টা

বরিশালটাইমস রিপোর্ট

বরিশালটাইমস রিপোর্ট

১৭ আগস্ট, ২০২৫ ১৪:০১

প্রিন্ট এন্ড সেভ

নিজের নয়, জনগণের ইচ্ছায় সরকারপ্রধানের দায়িত্ব নিয়েছি: প্রধান উপদেষ্টা

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস জানিয়েছেন, নিজের ইচ্ছায় নয়, বরং জনগণের চাহিদায় তিনি সরকারপ্রধানের দায়িত্ব নিয়েছেন। সম্প্রতি মালয়েশিয়া সফরকালে দেশটির রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা বারনামাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা বলেন।

ড. ইউনূস বলেন, “এটা আমার নয়, এটা সেইসব মানুষের চাওয়া, যারা পরিবর্তন চেয়েছেন। আমি শুধু তাদের সহায়তা করছি।” প্রধান উপদেষ্টা জানান, দায়িত্ব পালনে অসুবিধা রয়েছে এবং অনেক পক্ষ তা ব্যাহত করার চেষ্টা করছে। তাঁর ভাষায়, “বাংলাদেশ থেকে বিতাড়িত রাজনৈতিক উপাদানগুলো পুরো ব্যবস্থাকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে।”

ভোটের অপেক্ষায় থাকা তরুণ প্রজন্মের প্রসঙ্গ টেনে ড. ইউনূস বলেন, “গত দেড় দশকে অনেক তরুণ ভোটার হয়েছেন। কিন্তু কেউ ১০ বছর ধরে, কেউবা ১৫ বছর ধরে অপেক্ষা করছেন ভোট দেওয়ার জন্য। এবার তাঁরা প্রথমবারের মতো ভোট দিতে পারবেন।”

সাক্ষাৎকারে ড. ইউনূস রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলায় মালয়েশিয়ার প্রভাব কাজে লাগানোর আহ্বান জানান। তিনি বলেন, আসিয়ানের সভাপতি হিসেবে দেশটির নেতৃত্ব এ সমস্যা সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

প্রধান উপদেষ্টা জানান, গত ১৮ মাসে নতুন করে দেড় লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। এর সঙ্গে আগেই থাকা ১২ লাখ শরণার্থী যুক্ত হওয়ায় সংকট আরও জটিল হয়েছে। তিনি জানান, যুক্তরাষ্ট্র তহবিল বন্ধ করে দেওয়ায় পরিস্থিতি আরও কঠিন হয়ে উঠেছে।

ড. ইউনূস আরও বলেন, এ সংকটের স্থায়ী সমাধানের জন্য আগামী কয়েক মাসে তিনটি আন্তর্জাতিক সম্মেলন হবে—আগস্টে কক্সবাজারে, সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনের ফাঁকে এবং বছরের শেষে কাতারের দোহায়।

মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমের আমন্ত্রণে ১১ আগস্ট সফরে যান ড. ইউনূস। লালগালিচা সংবর্ধনা, গার্ড অব অনার ও গান স্যালুটের মাধ্যমে তাঁকে স্বাগত জানানো হয়।

তিন দিনের সফরে তিনি দ্বিপাক্ষিক বৈঠকসহ একাধিক আলোচনায় অংশ নেন। এ সময় বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার মধ্যে প্রতিরক্ষা, জ্বালানি, ব্যবসা-বাণিজ্য ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান নিয়ে পাঁচটি সমঝোতা স্মারক ও তিনটি নোট বিনিময় হয়। সফরের দ্বিতীয় দিনে মালয়েশিয়ার ন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি পান ড. ইউনূস। ১৪ আগস্ট রাতে তিনি দেশে ফেরেন।

জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ও আইনি ভিত্তির কৌশল খুঁজছে কমিশন

বরিশালটাইমস রিপোর্ট

বরিশালটাইমস রিপোর্ট

১৭ আগস্ট, ২০২৫ ১১:৪৮

প্রিন্ট এন্ড সেভ

জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ও আইনি ভিত্তির কৌশল খুঁজছে কমিশন

বহুল আলোচিত ও প্রত্যাশিত জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন পদ্ধতি ও আইনি ভিত্তির কৌশল খুঁজছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। এ বিষয়ে সংলাপে অংশগ্রহণকারী অধিকাংশ দলের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বিশেষজ্ঞদের মতামত নিচ্ছে কমিশন। এরই মধ্যে একটি বিশেষজ্ঞ দলসহ অনানুষ্ঠানিকভাবে অভিজ্ঞজনের মতামত নেওয়া হয়েছে। এ সপ্তাহে আরও কয়েকজন বিশেষজ্ঞের সঙ্গে বসে বিস্তারিত আলোচনা করে তাদের মতামত নেবে কমিশন।

এদিকে গতকাল শনিবার রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে জুলাই সনদের একটি সমন্বিত চূড়ান্ত খসড়া পাঠিয়েছে ঐকমত্য কমিশন। সনদে মোট ৮৪টি বিষয়ে ঐকমত্যের কথা জানানো হয়েছে। পাশাপাশি ৮ দফা অঙ্গীকারনামায় প্রথমেই বলা হয়েছে, ‘দীর্ঘ ধারাবাহিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে প্রণীত ও ঐকমত্যের ভিত্তিতে গৃহীত ‘নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত’-এর দলিল হিসেবে ‘জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫’-এর পরিপূর্ণ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করব। সনদ সংক্রান্ত যে কোনো প্রশ্নের চূড়ান্ত মীমাংসার এখতিয়ার বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের ওপর ন্যস্ত থাকবে।’

অঙ্গীকারনামার শেষ দফায় বলা হয়েছে, ‘জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫-এর যেসব প্রস্তাব/সুপারিশ অবিলম্বে বাস্তবায়নযোগ্য বলে বিবেচিত হবে সেগুলো কোনো প্রকার কালক্ষেপণ না করেই পরবর্তী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে সরকার ও অন্যান্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সম্পূর্ণরূপে বাস্তবায়ন করবে।’

এ বিষয়ে আগামী বুধবারের মধ্যে দলগুলোকে মতামত পাঠাতে বলা হয়েছে। সেইসঙ্গে চলতি সপ্তাহের শেষে বা আগামী সপ্তাহে ঐকমত্য কমিশন রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে তৃতীয় দফায় বৈঠকে বসতে পারে। তার পরই জুলাই সনদ চূড়ান্ত রূপ পাবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

জানা যায়, সনদের ভাষ্যের কোনো শব্দ, বাক্য গঠন বা এতদসংশ্লিষ্ট বিষয়ে কোনো মন্তব্য থাকলে তা আগামী বুধবার (২০ আগস্ট) বিকেল ৪টার মধ্যে কমিশনের কার্যালয়ে পাঠাতে অনুরোধ করা হয়েছে। অবশ্য জুলাই সনদের এই সমন্বিত পূর্ণাঙ্গ খসড়া তৈরির আগে কমিশনের অগ্রগতির বিষয়ে অবহিত করে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসেরও মতামত নেওয়া হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টার মতামতের ভিত্তিতে কিছু শব্দ ও ভাষাগত সংযোজন-বিয়োজন করে সনদের খসড়া চূড়ান্ত করা হয়েছে। এরপর তা রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে পাঠানো হয়।

সনদের পটভূমিতে বলা হয়েছে, স্বৈরাচারী শাসক পালিয়ে যাওয়ার পর ‘জনগণের মননে রাষ্ট্র-কাঠামো পুনর্গঠনের এক প্রবল অভিপ্রায় সৃষ্টি হয়েছে। রাষ্ট্র সংস্কার, বিশেষ করে সংবিধানের মৌলিক সংস্কার, ধসে পড়া নির্বাচনি ব্যবস্থার পুনর্গঠন, গণতান্ত্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আইন ও বিধি-বিধানের সংস্কার, স্বাধীন বিচার বিভাগ প্রতিষ্ঠা এবং সুশাসিত জবাবদিহিমূলক ও দুর্নীতিমুক্ত সরকার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার যে ঐতিহাসিক সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে, তার সদ্ব্যবহার করা আমাদের সকলের নৈতিক দায়িত্ব।

অবশ্য জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি ও বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া এবং নোট অব ডিসেন্টের মতো বিষয়গুলো নিয়ে যে সমন্বিত খসড়া চূড়ান্ত করা হয়েছে, তাতে দলগুলোর পক্ষ থেকে কী ধরনের মতামত আসে, সেটিই এখন দেখার অপেক্ষা। বিশেষ করে বিএনপি এসব বিষয়ে কী অবস্থান নেবে, সেদিকেই নজর বেশি। যদিও বৃহত্তর স্বার্থে বিএনপিকে জুলাই সনদের আরও ছাড় দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে মিত্র দলগুলো।

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্য ড. বদিউল আলম মজুমদার গতকাল বলেন, ‘আমরা আশা করি রাজনৈতিক দলগুলো জুলাই সনদের সমন্বিত পূর্ণাঙ্গ খসড়ায় সম্মত হবে। কয়েকটি দল ৯-১০টি বিষয়ে নোট অব ডিসেন্ট দিলেও বেশিরভাগ দলই একমত পোষণ করেছে। এখন নোট অব ডিসেন্ট দেওয়া দলগুলো গণতন্ত্র এবং জাতির বৃহত্তর স্বার্থে জুলাই সনদের সমন্বিত পূর্ণাঙ্গ খসড়া মেনে নেবে বলে বিশ্বাস করি।’

সনদ কবে নাগাদ ঘোষণা হবে- এমন প্রশ্নের উত্তরে ড. মজুমদার বলেন, ‘আমরা তো এক পায়ে দাঁড়িয়ে আছি। দলগুলো যত দ্রুত সাড়া দেবে তত দ্রুত আমরা এগোতে পারব।’ তিনি বলেন, ‘আমরা জুলাই সনদের সমন্বিত পূর্ণাঙ্গ খসড়া বাস্তবায়ন ও আইনি ভিত্তির কৌশল খুঁজছি। এ লক্ষ্যে বিশিষ্ট ও বিশেষজ্ঞদের মতামত নেওয়া হচ্ছে। তা ছাড়া রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা ও মতামতের ভিত্তিতে দ্রুত সময়ের মধ্যে জুলাই জাতীয় সনদ-২০২৫ ঘোষণা করা হবে।’

জানা গেছে, সংস্কার প্রশ্নে রাজনৈতিক দলগুলোর সংলাপে নেওয়া সিদ্ধান্ত যাতে পরবর্তী সরকারের সময়ও বাস্তবায়ন করা হয়, তা নিশ্চিত করতে আইনি সুরক্ষার ব্যবস্থা রেখে জুলাই জাতীয় সনদের ‘সমন্বিত চূড়ান্ত খসড়া’ প্রস্তুত করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, এই সনদ নিয়ে আদালতে প্রশ্ন তোলা যাবে না। সনদের কোনো শব্দ, বাক্য ও নীতিমালা সংবিধান বা অন্য কোনো আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হলে এই সনদের প্রাধান্য থাকবে। এই সনদের যেসব সুপারিশ অবিলম্বে বাস্তবায়নযোগ্য, দেরি না করে সেগুলো পরবর্তী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই বাস্তবায়নের পদক্ষেপ নেবে সরকার।

জুলাই সনদের সমন্বিত পূর্ণাঙ্গ খসড়ায় আরও বলা হয়েছে, চলতি বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে ছয়টি কমিশনের প্রতিবেদনের ছাপানো অনুলিপি সব রাজনৈতিক দলের কাছে প্রেরণ করা হয়। এরপর ৫ মার্চ পুলিশ সংস্কার কমিশন ছাড়া অন্য পাঁচটি কমিশনের প্রতিবেদনের গুরুত্বপূর্ণ ১৬৬টি সুপারিশ স্প্রেডশিট আকারে ৩৮টি রাজনৈতিক দল ও জোটের কাছে মতামতের জন্য পাঠানো হয়। এর মধ্যে সংবিধান সংস্কারবিষয়ক ৭০টি, নির্বাচন সংস্কারবিষয়ক ২৭টি, বিচার বিভাগ সংক্রান্ত ২৩টি, জনপ্রশাসন সংক্রান্ত ২৬টি ও দুর্নীতি দমনবিষয়ক ২৭টি সুপারিশ ছিল। পুলিশ সংস্কার কমিশনের সুপারিশগুলো সরাসরি প্রশাসনিক সিদ্ধান্তে বাস্তবায়নযোগ্য হওয়ায় সেগুলো স্প্রেডশিটে রাখা হয়নি। অন্যদিকে, সংবিধান সংস্কার কমিশন ছাড়া অন্য পাঁচটি কমিশনের দ্রুত বাস্তবায়নযোগ্য সুপারিশগুলোর তালিকা সরকারের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

এতে আরও উল্লেখ করা হয়, মোট ৩৫টি রাজনৈতিক দল ও জোট তাদের মতামত কমিশনের কাছে প্রেরণ করে। অনেকে বিস্তারিত ব্যাখ্যা বিশ্লেষণও প্রদান করে। মতামত গ্রহণের পাশাপাশি প্রথম পর্যায়ে ২০ মার্চ থেকে ১৯ মে পর্যন্ত ৩২টি দল ও জোটের সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের মোট ৪৭টি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনা ফলপ্রসূ করতে কিছু দলের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক হয়। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে প্রথম পর্যায়ের আলোচনা শেষ করে কমিশন অগ্রাধিকার ও গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনায় মোট ২০টি বিষয় নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দ্বিতীয় দফা আলোচনায় মিলিত হয়। ৩ জুন থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত ৩০টি দল ও জোটের সঙ্গে মোট ২৩টি সেশনে আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

ঐকমত্য হওয়া সংস্কার প্রস্তাবের ওপর ভিত্তি করে ‘জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫’ ঘোষণা করার কথা জানিয়েছে সরকার। গত ২৯ জুলাই দলগুলোকে জুলাই সনদের একটি খসড়া দিয়েছিল জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। খসড়া নিয়ে দলগুলো মতামতও দিয়েছিল। তার ভিত্তিতে সমন্বিত খসড়া তৈরি করা হয়েছে। প্রয়োজনে সমন্বিত খসড়া নিয়ে দলগুলোর মতামতও আমলে নেবে কমিশন।

অন্যদিকে জুলাই সনদের বাস্তবায়ন পদ্ধতি নিয়ে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে ঐকমত্য কমিশন। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা হবে। এরপর সনদ চূড়ান্ত রূপ পাবে।

জানা যায়, ঐকমত্য কমিশন দ্বিতীয় দফায় ১৯টি বিষয়ে একমত হওয়ার কথা জানালেও বেশকিছু ইস্যুতে কয়েকটি রাজনৈতিক দল নোট অব ডিসেন্ট দিয়েছে। ফলে এ নিয়ে ‘না সূচক’ মনোভাবের কথাই জানিয়েছে দলগুলো। বিশেষ করে সংসদের উচ্চকক্ষে একশ আসন পিআর পদ্ধতি বা সংখ্যানুপাতিক হারে নির্বাচন করার বিষয়ে ঘোর আপত্তি জানিয়েছে বিএনপি। নোট অব ডিসেন্ট সত্ত্বেও ১৯টি বিষয়ে একমত হওয়ার কথা জানায় ঐকমত্য কমিশন।

রাজনৈতিক দল ও ঐকমত্য কমিশন সূত্র বলছে, সংস্কারের বিষয়গুলো ‘জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫’-এ সংযুক্ত করা হবে। এরপরই সব দলগুলো চূড়ান্তভাবে স্বাক্ষর করে সেটির স্বীকৃতি দেবে। তবে তার আগেই জুলাই সনদ বাস্তবায়নে আইনি ভিত্তির দাবি তোলে বেশকিছু দল। পরবর্তী সময়ে এ বিষয়ে সরকার ও কমিশনের পক্ষে উদ্যোগ নেওয়া হয়।

জুলাই জাতীয় সনদের সমন্বিত চূড়ান্ত খসড়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু গতকাল বলেন, ‘আমরা সনদের খসড়া পেয়েছি। যেহেতু বেশ বড় সেটি পড়ে দলীয় ফোরামে আলোচনা করেই আমরা দ্রুত মতামত দেবে।’

বাংলাদেশ এলডিপির চেয়ারম্যান ও ১২ দলীয় জোটের মুখপাত্র শাহাদাত হোসেন সেলিম বলেন, ‘আমরা তো অতীতের জুলাই সনদের খসড়ায় মতামত দিয়েছি। এখন চূড়ান্ত সমন্বিত খসড়া পেয়েছি। জোটের ফোরামে আলোচনা করে এ বিষয়ে মতামত দেওয়া হবে।’

এ প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ গতকাল রাতে বলেন, ‘জুলাই সনদের সমন্বিত চূড়ান্ত খসড়ার একটি কপি সন্ধ্যায় হাতে পেয়েছি। এখন সেটি পড়ে দেখব লেখা ঠিকভাবে আছে কি না? এরপর দলীয় ফোরামে আলোচনা করে মতামত জানানো হবে।’

বাংলাদেশে সবার অধিকার সমান: সেনাপ্রধান

বরিশালটাইমস রিপোর্ট

বরিশালটাইমস রিপোর্ট

১৬ আগস্ট, ২০২৫ ১৯:৩৩

প্রিন্ট এন্ড সেভ

বাংলাদেশে সবার অধিকার সমান: সেনাপ্রধান

সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বলেছেন, বাংলাদেশে সবার অধিকার সমান। এই দেশে ধর্ম ও বর্ণের কোনো ভেদাভেদ থাকবে না। আমরা সবাই সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্য বজায় রেখে চলছি, ভবিষ্যতেও চলব। শনিবার (১৬ আগস্ট) বিকেলে ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে জন্মাষ্টমীর শোভাযাত্রা উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।

বাংলাদেশ একটি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ উল্লেখ করে সেনাপ্রধান বলেন, এই দেশে শত শত বছর ধরে হিন্দু-মুসলমান-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান, পাহাড়ি বাঙালি, উপজাতি—সবাই মিলে আমরা অত্যন্ত শান্তিতে সম্প্রীতির সঙ্গে বসবাস করে যাচ্ছি।

তিনি আরও বলেন, আজকের এই দিনে আমাদের অঙ্গীকার হবে সম্প্রীতির এই সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশ আমরা সবসময় বজায় রাখব এবং একসঙ্গে সবাই শান্তিতে সুন্দরভাবে বসবাস করব। এখানে কোনো ধর্ম-জাতি, বর্ণ-গোত্রের মধ্যে কোনো ভেদাভেদ থাকবে না। এই দেশ সবার। সবাই আমরা এই দেশের নাগরিক। প্রতিটা অধিকার আমাদের, সবার সমান অধিকার এবং সেভাবেই আমাদের সামনের সোনালি দিনগুলো দেখতে চাই।

সেনাপ্রধান বলেন, এখানে নৌবাহিনীর প্রধান ও বিমানবাহিনীর প্রধান আছেন। সারাদেশে সশস্ত্র বাহিনী মোতায়েন আছে। আমরা সবাই মিলে আপনাদের পাশে থাকব। এক হয়ে আপনাদের সঙ্গে কাজ করে যাব।

তিনি আরও বলেন, ভগবান শ্রীকৃষ্ণের আদর্শ সব জায়গায় ছড়িয়ে পড়ুক। এই আদর্শের ভিত্তিতে আমরা সুন্দরভাবে এই দেশে একসঙ্গে বসবাস করব। অনুষ্ঠানে বিমানবাহিনীর প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খান বলেন, শ্রীকৃষ্ণের শিক্ষা শুধু অসত্য ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে সাহসই জোগায় না, ন্যায়ের পথেও চলতে শেখায়।

এই বাংলাদেশ আমাদের সবার। স্বাধীনতাকে রক্ষা করা আমাদের সবার পবিত্র দায়িত্ব। সবাই মিলে কাজ করলে বিশ্বের মানচিত্রে এই বাংলাদেশকে একটি মর্যাদাশীল রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে পারব- যোগ করেন বিমানবাহিনীর প্রধান।

নৌবাহিনীপ্রধান অ্যাডমিরাল এম নাজমুল হাসান বলেন, আসুন, পারস্পরিক সহনশীলতার মাধ্যমে দেশকে আরো শক্তিশালী করি। শ্রীকৃষ্ণ যেন সমাজে ন্যায় ও আলোর সত্য প্রজ্জ্বলিত করেন।

পরে প্রদীপ প্রজ্বালনের মধ্য দিয়ে তিন বাহিনীর প্রধান জন্মাষ্টমীর শোভাযাত্রার শুভ উদ্বোধন ঘোষণা করেন। পলাশীর মোড় থেকে শুরু হয় জন্মাষ্টমীর বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা। শোভাযাত্রাটি রাজধানীর বাহাদুর শাহ পার্কে গিয়ে শেষ হবে।

custom sidebar ads

Google AdSense
This is a demo ad. Your live ads will be displayed here once AdSense is properly configured.

জনপ্রিয়

Google AdSense
This is a demo ad. Your live ads will be displayed here once AdSense is properly configured.