
২৪ অক্টোবর, ২০২৫ ২২:২৯
কবি কাজী নজরুল ইসলামের ডাক নাম ছিল দুখু মিয়া। জাতীয় কবি দুখু মিয়ার শৈশবের দুঃখকষ্টের গল্পটা সবার কমবেশি জানা। তবে বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার আরেক দুখু মিয়ার গল্পটা তেমন কেউ জানে না। উপজেলার মানিককাঠী গ্রামের এই দুখু মিয়ার হৃদয়বিদারক করুণ কাহিনী যেন সিনেমার গল্পকেও হার মানায়। দুঃখ আর দুর্ভাগ্য নিয়ে জন্ম হয়েছিল বলেই নানা তার নাম রেখেছিলেন দুখু মিয়া। মায়ের গর্ভে থাকতেই দুখু মিয়াকে অস্বীকার করে তার বাবা। ধর্ষণের ফলে জন্ম নেওয়া দুখু মিয়াকে মায়ের গর্ভেই হত্যা করতে বসেছিল গ্রাম্য সালিশ। তবে গ্রাম থেকে পালিয়ে এসে দুখু মিয়াকে প্রাণে বাঁচান মা। পিতৃপরিচয়হীন, ঠিকানাহীন অবস্থায় জন্ম নেওয়া দুখু মিয়ার পিতৃত্ব নির্ধারণে আদালতে চলে দীর্ঘ আইনি লড়াই। ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে পিতৃত্ব নিশ্চিত করে দুখু মিয়ার জন্মদাতা পিতাকে আদালত যাবজ্জীবন সাজা দিলেও দুখু মিয়া পায়নি সন্তানের অধিকার কিংবা সমাজের স্বীকৃতি। আদালতে জয়ী হলেও সমাজের লাঞ্ছনা আর দারিদ্র্যের কষাঘাতে চিরতরে গ্রামছাড়া হতে হয় দুখু মিয়া এবং তার জনমদুখিনী মাকে। একপর্যায়ে মা-ছেলের কারণে পুরো পরিবারকেই হতে হয় গ্রামছাড়া। নদীর কচুরিপানার মতো ভাসমান জীবন বরণ করতে হয় ৯ সদস্যের একটি পরিবারকে।
সমাজের প্রতি পদে পদে লাঞ্ছনা-গঞ্জনা নিয়ে দারিদ্র্যের সাথে প্রতি মুহূর্তে লড়াই করা দুখু মিয়া এবং তার যোদ্ধা মা সালমা আক্তারকে স্থায়ী ঠিকানা দিতে অবশেষে উদ্যোগ নেন বরিশাল জেলা প্রশাসক। তিনি বাবুগঞ্জের ইউএনওকে সাথে নিয়ে দুখু মিয়ার জন্য যৌথভাবে কেনেন একখন্ড জমি। অতঃপর সমাজসেবা অধিদপ্তরের অনুদানে সেখানে নির্মাণ করা হয় একটি বসতঘর। সেই বসতঘরের নাম রাখা হয় শান্তির নীড়। বৃহস্পতিবার (২৩ অক্টোবর) বিকেলে উপজেলার রহমতপুর ইউনিয়নের বরিশাল বিমানবন্দর মোড় এলাকায় সালমা ও তার দুখু মিয়ার স্বপ্নের ঠিকানা সেই শান্তির নীড়ের চাবি আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর করেন বরিশাল জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন। একইসাথে সালমাকে দেওয়া হয় দুখু মিয়ার ভরনপোষণে সরকারি ১৬ লাখ টাকা অনুদানের শেষ কিস্তির ১ লাখ ৮২ হাজার টাকার চেক। এসময় সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক এ.কে.এম আক্তারুজ্জামান তালুকদার, সহকারী পরিচালক সাজ্জাদ পারভেজ, সেইন্ট বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক কাজী জাহাঙ্গীর কবির, বাবুগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) ফারুক আহমেদ, উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মোঃ মিজানুর রহমান, মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা শামীমা ইয়াসমিন ডলি, প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা সোহেল হোসেন, বিমানবন্দর প্রেসক্লাব সভাপতি ও সুজন সম্পাদক আরিফ আহমেদ মুন্না প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, বিগত ২০০৩ সালের ৯ আগস্ট মানিককাঠী গ্রামের সালাম সরদারের ছেলে গিয়াস উদ্দিন প্রতিবেশি চাচার বাড়িতে গিয়ে চাচাতো বোন চতুর্দশী সালমা আক্তারকে একা পেয়ে জোরপূর্বক ধর্ষণ করেন। এরপরে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে একাধিকবার শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করেন তিনি। এতে গর্ভবতী হয়ে পড়েন সালমা। ঘটনা জানাজানি হলে সরাসরি অস্বীকার করেন অভিযুক্ত গিয়াস উদ্দিন। বিষয়টি পারিবারিক হওয়ায় স্থানীয়ভাবে মীমাংসার চেষ্টা করেন তৎকালীন রহমতপুর ইউপি চেয়ারম্যান মোস্তফা কামাল সিকদার। তিনি গর্ভবতী সালমাকে মেনে নিয়ে গিয়াসকে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার রায় দিয়ে সালিশ রোয়েদাদ দেন। এদিকে ওই সালিশ অগ্রাহ্য এবং সন্তানের পিতৃত্ব অস্বীকার করে সালমাকে গর্ভপাতের জন্য চাপ সৃষ্টি করেন গিয়াস উদ্দিন ও তার পরিবার। সালমাকে দুশ্চরিত্রা আখ্যা দিয়ে স্থানীয় সমাজপতিদের নির্দেশে গর্ভপাত করানোর জন্য সালমা ও তার মাকে বেধড়ক মারপিট করা হয়। একপর্যায়ে সালমা আক্তার এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন। এসব ঘটনা নিয়ে পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হলে নড়েচড়ে ওঠে প্রশাসন। পরে প্রশাসনের সহায়তায় আদালতের মাধ্যমে বাবুগঞ্জ থানায় একটি নারী নির্যাতনের মামলা দায়ের করেন সালমা আক্তার।
মামলা দায়েরের পরে পুলিশ গ্রেপ্তার করে অভিযুক্ত গিয়াস উদ্দিনকে। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে গিয়াসের প্রভাবশালী মামারা মারপিট করে ৭ ভাইবোনসহ সালমার পরিবারকেও মানিককাঠী গ্রাম থেকে বিতাড়িত করেন। পরে গর্ভবতী সালমাকে নিয়ে তার ৯ সদস্যের পরিবার এসে আশ্রয় নেয় উত্তর রহমতপুর গ্রামের আলী হোসেনের ইটভাটায়। সেখানে মাটি কাটার কাজ নেন সালমা ও তার মা রেনু রেগম। ইটভাটা মালিক আলী হোসেনের দয়াকরে থাকতে দেওয়া একটি খুপরি ঘরে মানবেতর জীবনযাপন করে সালমার পরিবার। এমন পরিস্থিতিতে ২০০৪ সালের ৯ জুন ভাগ্যবিড়ম্বিত সালমার কোলে জন্ম নেয় ফুটফুটে শিশু দুখু মিয়া। জন্মই যার আজন্ম পাপ; সেই হতভাগ্য নিষ্পাপ শিশুটির নাম রাখা হয় দুখু মিয়া। এক সাগর দুঃখ বুকে নিয়ে নাতির নাম দুখু মিয়া রাখেন সালমার বাবা কালাম সরদার। এদিকে দুখু মিয়া জন্মের ৪ মাস পরে ২০০৪ সালের ৭ অক্টোবর জামিনে ছাড়া পান অভিযুক্ত জন্মদাতা গিয়াস উদ্দিন। জামিনে এসে নিজের ঔরসজাত সন্তানকে অন্যের জারজ সন্তান আখ্যা দিয়ে হত্যার চেষ্টা চালান তিনি। পরে সালমা ও দুখু মিয়ার নিরাপত্তার বিবেচনায় তাদের সেইভ হোমে পাঠানোর নির্দেশ দেন আদালত।
এদিকে মামলার একমাত্র অভিযুক্ত গিয়াস উদ্দিন তার সন্তানের পিতৃত্ব নিয়ে চ্যালেঞ্জ করলে আদালতের নির্দেশে সালমার সন্তান দুখু মিয়া এবং গিয়াস উদ্দিনের রক্ত এবং মুখের লালার নমুনা সংগ্রহ করে ডিএনএ পরীক্ষার জন্য ঢাকার ফরেনসিক ল্যাবে পাঠান মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বাবুগঞ্জ থানার এসআই আলতাফ হোসেন। পরবর্তীতে ডিএনএ পরীক্ষার রিপোর্টে গিয়াস এবং দুখু মিয়ার ডিএনএ প্রোফাইল ম্যাচ করায় গিয়াস উদ্দিনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন তদন্ত কর্মকর্তা। এরপরে অভিযুক্ত গিয়াসের বিরুদ্ধে চার্জ গঠনের পরে বিচারের জন্য ২০০৮ সালে আলোচিত এই মামলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করা হয়। এদিকে প্রায় ২ বছর সেইভ হোমের সরকারি নিরাপত্তা হেফাজতে থাকার পরে রহমতপুর বিমানবন্দর মোড়ে দুলাল সরদারের বাড়ির একটি পরিত্যক্ত ঘরে দুখু মিয়াকে নিয়ে আশ্রয় পান সালমা আক্তার।
এদিকে সালমার ট্রলি চালক দরিদ্র পিতা কালাম সরদার স্ট্রোকজনিত কারণে পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে বিছানায় পড়লে অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটতে থাকে তাদের পরিবারের। নিরুপায় হয়ে আড়াই বছরের দুখু মিয়াকে সালমা তার মায়ের কাছে রেখে ২০০৬ সালে কাজের সন্ধানে পাড়ি জমান ঢাকায়। সেখানে রানা প্লাজার পাশের একটি গার্মেন্টসে মাসিক ২ হাজার টাকা বেতনে চাকরি নেন সালমা। দুই শিফট ডিউটি আর দিনরাত ওভারটাইম করে ৬ হাজার টাকা বেতন পেয়ে ৫ হাজার টাকাই পাঠিয়ে দিতেন মায়ের কাছে। ওই সামান্য টাকা দিয়েই সালমার ছোট ৬ ভাইবোন আর দুখু মিয়ার খরচ চলতো। সংসার চালাতে হিমশিম খেয়ে বিভিন্ন বাড়িতে বুয়ার কাজ নেন সালমার মা রেনু বেগম। এদিকে পক্ষাঘাতগ্রস্ত সালমার বাবার মৃত্যু হলে দুখু মিয়াসহ ৯ সদস্যের পরিবার নিয়ে অথৈ সাগরে পড়েন রেনু বেগম। তবুও দুই মা-মেয়ে মিলে বেঁচে থাকার যুদ্ধে হার না মানা যোদ্ধা হয়ে লড়াই চালিয়ে যেতে থাকেন।
সালমার দায়ের করা মামলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তরের পরে রাষ্ট্রপক্ষের ১৩ জন সাক্ষীর মধ্যে ১২ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে ২০১১ সালের ২৪ মার্চ রায় ঘোষণা করেন দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক আনিছুর রহমান খান। রায়ে মামলার একমাত্র আসামি গিয়াস উদ্দিনের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে ধর্ষণ এবং ধর্ষণের কারণেই সন্তান জন্মদানের অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রদান করেন বিচারক। একইসঙ্গে দুখু মিয়ার বয়স ২১ বছর পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত তার ভরনপোষণের যাবতীয় ব্যয় রাষ্ট্রকে বহন করার আদেশ জারি করেন। আদালতের ওই রায়ের পরে মহিলা ও শিশু বিষয়ক অধিদপ্তর থেকে দুখু মিয়ার ভরনপোষণের জন্য প্রতিবছর গড়ে প্রায় ১ লাখ টাকা করে এ পর্যন্ত ১৬ লাখ টাকা দেওয়া হয়। এই টাকা দিয়েই দুখু মিয়াকে লেখাপড়া করান তার মা সালমা আক্তার। বর্তমানে দুখু মিয়া সরকারি আবুল কালাম কলেজের দ্বাদশ শ্রেণিতে অধ্যয়নরত।
এদিকে সালমার ৫ ভাইয়ের মধ্যে ৩ ভাই বিয়ে করে বাড়িতে বউ আনলে সালমার সাথে তাদের মতবিরোধ তৈরি হয়। ভাইয়ের বউরা সালমার জন্য সমাজে মুখ দেখাতে পারে না, ইত্যাদি নানান অজুহাতে তাকে বাড়িছাড়া করার পায়তারা শুরু করে। ভাইদের সাথে একই সংসারে থাকার কারণে দুখু মিয়ার ভরনপোষণের জন্য সরকার থেকে দেওয়া অনুদানের টাকাও ভোগ করতে পারছিলেন না হতভাগিনী সালমা আক্তার। অনুদানের শেষ কিস্তির টাকার চেক আনতে গেলে কথা প্রসঙ্গে এসব হৃদয়বিদারক ঘটনা জানতে পারেন বরিশাল জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন। সালমার কাছে তার জীবনের গত ২২ বছরের বিভীষিকাময় ঘটনার আদ্যোপান্ত শুনে তিনি বিস্মিত এবং বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েন।
এরপরেই সালমা ও তার দুখু মিয়ার জন্য একটি স্থায়ী ঠিকানা নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করেন জেলা প্রশাসক। সালমার বর্তমান ঠিকানার আশেপাশে একখণ্ড জমি খুঁজে বের করার নির্দেশ দেন বাবুগঞ্জের ইউএনওকে। পরে বরিশাল বিমানবন্দর মোড় এলাকার রহমতপুর মৌজায় ২ শতক খাসজমির সাথে স্থানীয় দীপক মজুমদারের কাছ থেকে ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকায় ১ শতক জমি কেনা হয়। জেলা প্রশাসকের সাথে জমি কেনায় যৌথভাবে অংশগ্রহণ করেন বাবুগঞ্জের ইউএনও ফারুক আহমেদ। এছাড়াও এনজিওর পক্ষ থেকে ১ লাখ টাকা অনুদান দেন সেইন্ট বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক কাজী জাহাঙ্গীর কবির। পরবর্তীতে সালমার নামে দলিল করা প্রায় ৩ শতাংশ জমির ওপরে বসতঘর নির্মাণের জন্য সমাজসেবা অধিদপ্তর থেকে ৩ লাখ টাকা বরাদ্দ আনেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন।
নদীভাঙনে ভিটামাটিহীন/ক্ষতিগ্রস্ত এবং বস্তিবাসীদের জন্য গৃহনির্মাণ প্রকল্পের আওতায় ওই ৩ লাখ টাকার সাথে বসতঘরের জমিতে ইউএনওর সৌজন্যে বালু ভরাটসহ প্রায় ৫ লাখ টাকা ব্যয়ে সালমা এবং তার দুখু মিয়ার জন্য নির্মিত হয় স্বপ্নের ঠিকানা শান্তির নীড়। বৃহস্পতিবার বিকেলে শান্তির নীড়ের চাবি আনুষ্ঠানিকভাবে সালমার হাতে হস্তান্তর করেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন। এসময় তিনি সালমার হাতে দুখু মিয়ার ভরনপোষণে সরকারি অনুদানের শেষ কিস্তির ১ লাখ ৮২ হাজার টাকার চেক তুলে দেন। ফিতা কাটার মাধ্যমে বসতঘরের উদ্বোধন ও চাবি হস্তান্তরকালে সেখানে দোয়া-মোনাজাত এবং মিষ্টি বিতরণ করা হয়। দোয়া-মোনাজাত পরিচালনা করেন উপজেলা পরিষদ জামে মসজিদের ইমাম ও খানপুরা আলীম মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা আ.জ.ম সামসুল আলম।
প্রায় ২০ লাখ টাকা মূল্যের ৩ শতাংশ জমিসহ বসতঘর পেয়ে আনন্দে কেঁদে ফেলেন সালমা আক্তার। নিজের প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে তিনি বলেন, 'আমি ধর্ষিতা হয়ে বিচার চাইতে গিয়ে সমাজচ্যুত হয়েছি। গ্রামছাড়া হয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরেছি। আমাকে চরিত্রহীনা অপবাদ দিয়ে আত্মীয়-স্বজনসহ সবাই দূর দূর করে তাড়িয়ে দিয়েছে। মামলা চালাতে গিয়ে নিঃস্ব হয়েছি। না খেয়ে মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে কাজ করেছি। দুমুঠো ভাতের জন্য যখন যে কাজ পেয়েছি তাই করেছি। দুখু মিয়াকে সাথে নিয়ে গত ২২টি বছর জীবনের অবর্ণনীয় কষ্ট দুর্ভোগ সহ্য করেছি। অবশেষে আল্লাহ আমাদের দিকে মুখ তুলে তাকিয়েছেন। ডিসি এবং ইউএনও স্যারের মাধ্যমে আজ আমি একটা স্থায়ী ঠিকানা পেলাম। আমার দুখু মিয়াকে নিয়ে মাথা গোঁজার একটা ঠাঁই পেলাম। এই ঘর আমার কাছে স্বপ্নের ঠিকানা বলে ডুকরে কেঁদে ওঠেন সালমা আক্তার।'
বাবুগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) ফারুক আহমেদ বলেন, 'নির্যাতিতা সালমাকে একটি স্থায়ী ঠিকানা গড়ে দেওয়ার মহতী কাজে সম্পৃক্ত হতে পেরে আনন্দ লাগছে। জেলা প্রশাসক মহোদয় এই কাজে আমাকে সম্পৃক্ত করেছেন এবং কিছু অবদান রাখার সুযোগ করে দিয়েছেন এজন্য তার প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। সালমা আক্তার এবং তার দুখু মিয়া সমাজে মাথা উঁচু করে বাঁচবে। তাদের সহযোগিতা করার জন্য বাবুগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন সবসময় পাশে থাকবে।'
বরিশাল জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন বলেন, 'ভাগ্যবিড়ম্বিত অসহায় সালমা আক্তার আজ মাথা গোঁজার একটা ঠাঁই পেয়েছে। তার সন্তান দুখু মিয়ার লেখাপড়ার দায়িত্ব নিয়েছে একটা এনজিও। মহিলা ও শিশু বিষয়ক অধিদপ্তর থেকে এ পর্যন্ত দুখু মিয়ার ভরনপোষণে ১৬ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে। ভবিষ্যতে তার চাকরির বিষয়টা আমাদের সবার বিবেচনায় থাকবে। আমাদের সমাজে পিছিয়ে পড়া দুঃস্থ-অসহায় নির্যাতিত মানুষদের এগিয়ে যেতে সাহায্য করা আমাদের সকলের নৈতিক এবং সামাজিক দায়িত্ব। এই কাজটি যখন সম্মিলিতভাবে করা হয় তখন সমাজে একটা ভালো উদাহরণ তৈরি হয়। আমরা যদি দায়িত্ব নিয়ে সবাই কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে অসহায় মানুষের জন্য কাজ করতে পারি তাহলে ভবিষ্যতে আমরা একটা সুন্দর সমাজ বিনির্মাণ করতে পারবো।' #
বাবুগঞ্জে নির্যাতিতা সালমা আক্তার ও তার সন্তান দুখু মিয়ার জন্য নির্মিত বসতঘরের শুভ উদ্বোধন ও চাবি হস্তান্তর করেন বরিশাল জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন।
কবি কাজী নজরুল ইসলামের ডাক নাম ছিল দুখু মিয়া। জাতীয় কবি দুখু মিয়ার শৈশবের দুঃখকষ্টের গল্পটা সবার কমবেশি জানা। তবে বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার আরেক দুখু মিয়ার গল্পটা তেমন কেউ জানে না। উপজেলার মানিককাঠী গ্রামের এই দুখু মিয়ার হৃদয়বিদারক করুণ কাহিনী যেন সিনেমার গল্পকেও হার মানায়। দুঃখ আর দুর্ভাগ্য নিয়ে জন্ম হয়েছিল বলেই নানা তার নাম রেখেছিলেন দুখু মিয়া। মায়ের গর্ভে থাকতেই দুখু মিয়াকে অস্বীকার করে তার বাবা। ধর্ষণের ফলে জন্ম নেওয়া দুখু মিয়াকে মায়ের গর্ভেই হত্যা করতে বসেছিল গ্রাম্য সালিশ। তবে গ্রাম থেকে পালিয়ে এসে দুখু মিয়াকে প্রাণে বাঁচান মা। পিতৃপরিচয়হীন, ঠিকানাহীন অবস্থায় জন্ম নেওয়া দুখু মিয়ার পিতৃত্ব নির্ধারণে আদালতে চলে দীর্ঘ আইনি লড়াই। ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে পিতৃত্ব নিশ্চিত করে দুখু মিয়ার জন্মদাতা পিতাকে আদালত যাবজ্জীবন সাজা দিলেও দুখু মিয়া পায়নি সন্তানের অধিকার কিংবা সমাজের স্বীকৃতি। আদালতে জয়ী হলেও সমাজের লাঞ্ছনা আর দারিদ্র্যের কষাঘাতে চিরতরে গ্রামছাড়া হতে হয় দুখু মিয়া এবং তার জনমদুখিনী মাকে। একপর্যায়ে মা-ছেলের কারণে পুরো পরিবারকেই হতে হয় গ্রামছাড়া। নদীর কচুরিপানার মতো ভাসমান জীবন বরণ করতে হয় ৯ সদস্যের একটি পরিবারকে।
সমাজের প্রতি পদে পদে লাঞ্ছনা-গঞ্জনা নিয়ে দারিদ্র্যের সাথে প্রতি মুহূর্তে লড়াই করা দুখু মিয়া এবং তার যোদ্ধা মা সালমা আক্তারকে স্থায়ী ঠিকানা দিতে অবশেষে উদ্যোগ নেন বরিশাল জেলা প্রশাসক। তিনি বাবুগঞ্জের ইউএনওকে সাথে নিয়ে দুখু মিয়ার জন্য যৌথভাবে কেনেন একখন্ড জমি। অতঃপর সমাজসেবা অধিদপ্তরের অনুদানে সেখানে নির্মাণ করা হয় একটি বসতঘর। সেই বসতঘরের নাম রাখা হয় শান্তির নীড়। বৃহস্পতিবার (২৩ অক্টোবর) বিকেলে উপজেলার রহমতপুর ইউনিয়নের বরিশাল বিমানবন্দর মোড় এলাকায় সালমা ও তার দুখু মিয়ার স্বপ্নের ঠিকানা সেই শান্তির নীড়ের চাবি আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর করেন বরিশাল জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন। একইসাথে সালমাকে দেওয়া হয় দুখু মিয়ার ভরনপোষণে সরকারি ১৬ লাখ টাকা অনুদানের শেষ কিস্তির ১ লাখ ৮২ হাজার টাকার চেক। এসময় সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক এ.কে.এম আক্তারুজ্জামান তালুকদার, সহকারী পরিচালক সাজ্জাদ পারভেজ, সেইন্ট বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক কাজী জাহাঙ্গীর কবির, বাবুগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) ফারুক আহমেদ, উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মোঃ মিজানুর রহমান, মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা শামীমা ইয়াসমিন ডলি, প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা সোহেল হোসেন, বিমানবন্দর প্রেসক্লাব সভাপতি ও সুজন সম্পাদক আরিফ আহমেদ মুন্না প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, বিগত ২০০৩ সালের ৯ আগস্ট মানিককাঠী গ্রামের সালাম সরদারের ছেলে গিয়াস উদ্দিন প্রতিবেশি চাচার বাড়িতে গিয়ে চাচাতো বোন চতুর্দশী সালমা আক্তারকে একা পেয়ে জোরপূর্বক ধর্ষণ করেন। এরপরে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে একাধিকবার শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করেন তিনি। এতে গর্ভবতী হয়ে পড়েন সালমা। ঘটনা জানাজানি হলে সরাসরি অস্বীকার করেন অভিযুক্ত গিয়াস উদ্দিন। বিষয়টি পারিবারিক হওয়ায় স্থানীয়ভাবে মীমাংসার চেষ্টা করেন তৎকালীন রহমতপুর ইউপি চেয়ারম্যান মোস্তফা কামাল সিকদার। তিনি গর্ভবতী সালমাকে মেনে নিয়ে গিয়াসকে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার রায় দিয়ে সালিশ রোয়েদাদ দেন। এদিকে ওই সালিশ অগ্রাহ্য এবং সন্তানের পিতৃত্ব অস্বীকার করে সালমাকে গর্ভপাতের জন্য চাপ সৃষ্টি করেন গিয়াস উদ্দিন ও তার পরিবার। সালমাকে দুশ্চরিত্রা আখ্যা দিয়ে স্থানীয় সমাজপতিদের নির্দেশে গর্ভপাত করানোর জন্য সালমা ও তার মাকে বেধড়ক মারপিট করা হয়। একপর্যায়ে সালমা আক্তার এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন। এসব ঘটনা নিয়ে পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হলে নড়েচড়ে ওঠে প্রশাসন। পরে প্রশাসনের সহায়তায় আদালতের মাধ্যমে বাবুগঞ্জ থানায় একটি নারী নির্যাতনের মামলা দায়ের করেন সালমা আক্তার।
মামলা দায়েরের পরে পুলিশ গ্রেপ্তার করে অভিযুক্ত গিয়াস উদ্দিনকে। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে গিয়াসের প্রভাবশালী মামারা মারপিট করে ৭ ভাইবোনসহ সালমার পরিবারকেও মানিককাঠী গ্রাম থেকে বিতাড়িত করেন। পরে গর্ভবতী সালমাকে নিয়ে তার ৯ সদস্যের পরিবার এসে আশ্রয় নেয় উত্তর রহমতপুর গ্রামের আলী হোসেনের ইটভাটায়। সেখানে মাটি কাটার কাজ নেন সালমা ও তার মা রেনু রেগম। ইটভাটা মালিক আলী হোসেনের দয়াকরে থাকতে দেওয়া একটি খুপরি ঘরে মানবেতর জীবনযাপন করে সালমার পরিবার। এমন পরিস্থিতিতে ২০০৪ সালের ৯ জুন ভাগ্যবিড়ম্বিত সালমার কোলে জন্ম নেয় ফুটফুটে শিশু দুখু মিয়া। জন্মই যার আজন্ম পাপ; সেই হতভাগ্য নিষ্পাপ শিশুটির নাম রাখা হয় দুখু মিয়া। এক সাগর দুঃখ বুকে নিয়ে নাতির নাম দুখু মিয়া রাখেন সালমার বাবা কালাম সরদার। এদিকে দুখু মিয়া জন্মের ৪ মাস পরে ২০০৪ সালের ৭ অক্টোবর জামিনে ছাড়া পান অভিযুক্ত জন্মদাতা গিয়াস উদ্দিন। জামিনে এসে নিজের ঔরসজাত সন্তানকে অন্যের জারজ সন্তান আখ্যা দিয়ে হত্যার চেষ্টা চালান তিনি। পরে সালমা ও দুখু মিয়ার নিরাপত্তার বিবেচনায় তাদের সেইভ হোমে পাঠানোর নির্দেশ দেন আদালত।
এদিকে মামলার একমাত্র অভিযুক্ত গিয়াস উদ্দিন তার সন্তানের পিতৃত্ব নিয়ে চ্যালেঞ্জ করলে আদালতের নির্দেশে সালমার সন্তান দুখু মিয়া এবং গিয়াস উদ্দিনের রক্ত এবং মুখের লালার নমুনা সংগ্রহ করে ডিএনএ পরীক্ষার জন্য ঢাকার ফরেনসিক ল্যাবে পাঠান মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বাবুগঞ্জ থানার এসআই আলতাফ হোসেন। পরবর্তীতে ডিএনএ পরীক্ষার রিপোর্টে গিয়াস এবং দুখু মিয়ার ডিএনএ প্রোফাইল ম্যাচ করায় গিয়াস উদ্দিনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন তদন্ত কর্মকর্তা। এরপরে অভিযুক্ত গিয়াসের বিরুদ্ধে চার্জ গঠনের পরে বিচারের জন্য ২০০৮ সালে আলোচিত এই মামলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করা হয়। এদিকে প্রায় ২ বছর সেইভ হোমের সরকারি নিরাপত্তা হেফাজতে থাকার পরে রহমতপুর বিমানবন্দর মোড়ে দুলাল সরদারের বাড়ির একটি পরিত্যক্ত ঘরে দুখু মিয়াকে নিয়ে আশ্রয় পান সালমা আক্তার।
এদিকে সালমার ট্রলি চালক দরিদ্র পিতা কালাম সরদার স্ট্রোকজনিত কারণে পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে বিছানায় পড়লে অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটতে থাকে তাদের পরিবারের। নিরুপায় হয়ে আড়াই বছরের দুখু মিয়াকে সালমা তার মায়ের কাছে রেখে ২০০৬ সালে কাজের সন্ধানে পাড়ি জমান ঢাকায়। সেখানে রানা প্লাজার পাশের একটি গার্মেন্টসে মাসিক ২ হাজার টাকা বেতনে চাকরি নেন সালমা। দুই শিফট ডিউটি আর দিনরাত ওভারটাইম করে ৬ হাজার টাকা বেতন পেয়ে ৫ হাজার টাকাই পাঠিয়ে দিতেন মায়ের কাছে। ওই সামান্য টাকা দিয়েই সালমার ছোট ৬ ভাইবোন আর দুখু মিয়ার খরচ চলতো। সংসার চালাতে হিমশিম খেয়ে বিভিন্ন বাড়িতে বুয়ার কাজ নেন সালমার মা রেনু বেগম। এদিকে পক্ষাঘাতগ্রস্ত সালমার বাবার মৃত্যু হলে দুখু মিয়াসহ ৯ সদস্যের পরিবার নিয়ে অথৈ সাগরে পড়েন রেনু বেগম। তবুও দুই মা-মেয়ে মিলে বেঁচে থাকার যুদ্ধে হার না মানা যোদ্ধা হয়ে লড়াই চালিয়ে যেতে থাকেন।
সালমার দায়ের করা মামলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তরের পরে রাষ্ট্রপক্ষের ১৩ জন সাক্ষীর মধ্যে ১২ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে ২০১১ সালের ২৪ মার্চ রায় ঘোষণা করেন দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক আনিছুর রহমান খান। রায়ে মামলার একমাত্র আসামি গিয়াস উদ্দিনের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে ধর্ষণ এবং ধর্ষণের কারণেই সন্তান জন্মদানের অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রদান করেন বিচারক। একইসঙ্গে দুখু মিয়ার বয়স ২১ বছর পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত তার ভরনপোষণের যাবতীয় ব্যয় রাষ্ট্রকে বহন করার আদেশ জারি করেন। আদালতের ওই রায়ের পরে মহিলা ও শিশু বিষয়ক অধিদপ্তর থেকে দুখু মিয়ার ভরনপোষণের জন্য প্রতিবছর গড়ে প্রায় ১ লাখ টাকা করে এ পর্যন্ত ১৬ লাখ টাকা দেওয়া হয়। এই টাকা দিয়েই দুখু মিয়াকে লেখাপড়া করান তার মা সালমা আক্তার। বর্তমানে দুখু মিয়া সরকারি আবুল কালাম কলেজের দ্বাদশ শ্রেণিতে অধ্যয়নরত।
এদিকে সালমার ৫ ভাইয়ের মধ্যে ৩ ভাই বিয়ে করে বাড়িতে বউ আনলে সালমার সাথে তাদের মতবিরোধ তৈরি হয়। ভাইয়ের বউরা সালমার জন্য সমাজে মুখ দেখাতে পারে না, ইত্যাদি নানান অজুহাতে তাকে বাড়িছাড়া করার পায়তারা শুরু করে। ভাইদের সাথে একই সংসারে থাকার কারণে দুখু মিয়ার ভরনপোষণের জন্য সরকার থেকে দেওয়া অনুদানের টাকাও ভোগ করতে পারছিলেন না হতভাগিনী সালমা আক্তার। অনুদানের শেষ কিস্তির টাকার চেক আনতে গেলে কথা প্রসঙ্গে এসব হৃদয়বিদারক ঘটনা জানতে পারেন বরিশাল জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন। সালমার কাছে তার জীবনের গত ২২ বছরের বিভীষিকাময় ঘটনার আদ্যোপান্ত শুনে তিনি বিস্মিত এবং বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েন।
এরপরেই সালমা ও তার দুখু মিয়ার জন্য একটি স্থায়ী ঠিকানা নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করেন জেলা প্রশাসক। সালমার বর্তমান ঠিকানার আশেপাশে একখণ্ড জমি খুঁজে বের করার নির্দেশ দেন বাবুগঞ্জের ইউএনওকে। পরে বরিশাল বিমানবন্দর মোড় এলাকার রহমতপুর মৌজায় ২ শতক খাসজমির সাথে স্থানীয় দীপক মজুমদারের কাছ থেকে ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকায় ১ শতক জমি কেনা হয়। জেলা প্রশাসকের সাথে জমি কেনায় যৌথভাবে অংশগ্রহণ করেন বাবুগঞ্জের ইউএনও ফারুক আহমেদ। এছাড়াও এনজিওর পক্ষ থেকে ১ লাখ টাকা অনুদান দেন সেইন্ট বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক কাজী জাহাঙ্গীর কবির। পরবর্তীতে সালমার নামে দলিল করা প্রায় ৩ শতাংশ জমির ওপরে বসতঘর নির্মাণের জন্য সমাজসেবা অধিদপ্তর থেকে ৩ লাখ টাকা বরাদ্দ আনেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন।
নদীভাঙনে ভিটামাটিহীন/ক্ষতিগ্রস্ত এবং বস্তিবাসীদের জন্য গৃহনির্মাণ প্রকল্পের আওতায় ওই ৩ লাখ টাকার সাথে বসতঘরের জমিতে ইউএনওর সৌজন্যে বালু ভরাটসহ প্রায় ৫ লাখ টাকা ব্যয়ে সালমা এবং তার দুখু মিয়ার জন্য নির্মিত হয় স্বপ্নের ঠিকানা শান্তির নীড়। বৃহস্পতিবার বিকেলে শান্তির নীড়ের চাবি আনুষ্ঠানিকভাবে সালমার হাতে হস্তান্তর করেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন। এসময় তিনি সালমার হাতে দুখু মিয়ার ভরনপোষণে সরকারি অনুদানের শেষ কিস্তির ১ লাখ ৮২ হাজার টাকার চেক তুলে দেন। ফিতা কাটার মাধ্যমে বসতঘরের উদ্বোধন ও চাবি হস্তান্তরকালে সেখানে দোয়া-মোনাজাত এবং মিষ্টি বিতরণ করা হয়। দোয়া-মোনাজাত পরিচালনা করেন উপজেলা পরিষদ জামে মসজিদের ইমাম ও খানপুরা আলীম মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা আ.জ.ম সামসুল আলম।
প্রায় ২০ লাখ টাকা মূল্যের ৩ শতাংশ জমিসহ বসতঘর পেয়ে আনন্দে কেঁদে ফেলেন সালমা আক্তার। নিজের প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে তিনি বলেন, 'আমি ধর্ষিতা হয়ে বিচার চাইতে গিয়ে সমাজচ্যুত হয়েছি। গ্রামছাড়া হয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরেছি। আমাকে চরিত্রহীনা অপবাদ দিয়ে আত্মীয়-স্বজনসহ সবাই দূর দূর করে তাড়িয়ে দিয়েছে। মামলা চালাতে গিয়ে নিঃস্ব হয়েছি। না খেয়ে মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে কাজ করেছি। দুমুঠো ভাতের জন্য যখন যে কাজ পেয়েছি তাই করেছি। দুখু মিয়াকে সাথে নিয়ে গত ২২টি বছর জীবনের অবর্ণনীয় কষ্ট দুর্ভোগ সহ্য করেছি। অবশেষে আল্লাহ আমাদের দিকে মুখ তুলে তাকিয়েছেন। ডিসি এবং ইউএনও স্যারের মাধ্যমে আজ আমি একটা স্থায়ী ঠিকানা পেলাম। আমার দুখু মিয়াকে নিয়ে মাথা গোঁজার একটা ঠাঁই পেলাম। এই ঘর আমার কাছে স্বপ্নের ঠিকানা বলে ডুকরে কেঁদে ওঠেন সালমা আক্তার।'
বাবুগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) ফারুক আহমেদ বলেন, 'নির্যাতিতা সালমাকে একটি স্থায়ী ঠিকানা গড়ে দেওয়ার মহতী কাজে সম্পৃক্ত হতে পেরে আনন্দ লাগছে। জেলা প্রশাসক মহোদয় এই কাজে আমাকে সম্পৃক্ত করেছেন এবং কিছু অবদান রাখার সুযোগ করে দিয়েছেন এজন্য তার প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। সালমা আক্তার এবং তার দুখু মিয়া সমাজে মাথা উঁচু করে বাঁচবে। তাদের সহযোগিতা করার জন্য বাবুগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন সবসময় পাশে থাকবে।'
বরিশাল জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন বলেন, 'ভাগ্যবিড়ম্বিত অসহায় সালমা আক্তার আজ মাথা গোঁজার একটা ঠাঁই পেয়েছে। তার সন্তান দুখু মিয়ার লেখাপড়ার দায়িত্ব নিয়েছে একটা এনজিও। মহিলা ও শিশু বিষয়ক অধিদপ্তর থেকে এ পর্যন্ত দুখু মিয়ার ভরনপোষণে ১৬ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে। ভবিষ্যতে তার চাকরির বিষয়টা আমাদের সবার বিবেচনায় থাকবে। আমাদের সমাজে পিছিয়ে পড়া দুঃস্থ-অসহায় নির্যাতিত মানুষদের এগিয়ে যেতে সাহায্য করা আমাদের সকলের নৈতিক এবং সামাজিক দায়িত্ব। এই কাজটি যখন সম্মিলিতভাবে করা হয় তখন সমাজে একটা ভালো উদাহরণ তৈরি হয়। আমরা যদি দায়িত্ব নিয়ে সবাই কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে অসহায় মানুষের জন্য কাজ করতে পারি তাহলে ভবিষ্যতে আমরা একটা সুন্দর সমাজ বিনির্মাণ করতে পারবো।' #
২৭ নভেম্বর, ২০২৫ ২৩:৫৭
২৭ নভেম্বর, ২০২৫ ২৩:২৪
২৭ নভেম্বর, ২০২৫ ২৩:০৯
২৭ নভেম্বর, ২০২৫ ২২:১৮

২১ নভেম্বর, ২০২৫ ১৬:০৮
বাংলাদেশকে ঘিরে বড় ধরনের ভূমিকম্পের আশঙ্কা নতুন করে উদ্বেগ তৈরি করেছে। ভূকম্পবিদরা জানিয়েছেন, দেশটি তিনটি টেকটোনিক প্লেটের সংযোগস্থলে থাকায় এখানে যে কোনো সময় ৯.০ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হানতে পারে। তাদের মতে, এই ধরনের ধ্বংসাত্মক কম্পন ঘটলে রাজধানী ঢাকার অর্ধেক ভবন পর্যন্ত মাটিতে মিশে যেতে পারে, আর এতে বিপদে পড়বে লক্ষাধিক মানুষের জীবন।
বিশেষজ্ঞরা দীর্ঘদিন ধরেই সম্ভাব্য ঝুঁকির বিষয়ে সতর্ক করে আসছেন। কিন্তু দেশে দুর্যোগ মোকাবিলার প্রস্তুতি এখনো খুব সীমিত। বড় ভূমিকম্প সামলাতে সক্ষমতা বর্তমানে ২০ শতাংশেরও কম—যা পরিস্থিতিকে আরও নাজুক করে তুলছে।
এদিকে সরকার এবং সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো সম্ভাব্য ক্ষতি কমাতে উদ্ধার ও প্রতিক্রিয়া ব্যবস্থার উন্নয়নে কাজ করছে বলে জানানো হয়েছে। তবে ভূতাত্ত্বিকদের সতর্কবার্তা আরও স্পষ্ট—উত্তর-পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব অঞ্চল, বিশেষ করে সিলেট, চট্টগ্রাম এবং ঢাকার ঝুঁকি দ্রুত বাড়ছে।
তাদের মতে, এখনই সারা দেশে ভবনগুলোর নিরাপত্তা যাচাই, সঠিক নির্মাণবিধি প্রয়োগ এবং নিয়মিত ভূমিকম্প মহড়া চালু না করলে ভবিষ্যৎ ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে ভয়াবহ। ফলে জনসচেতনতা বৃদ্ধি ও নিরাপদ নির্মাণ নিশ্চিত করাকে সময়ের দাবি হিসেবে দেখছেন বিশেষজ্ঞরা।
বাংলাদেশকে ঘিরে বড় ধরনের ভূমিকম্পের আশঙ্কা নতুন করে উদ্বেগ তৈরি করেছে। ভূকম্পবিদরা জানিয়েছেন, দেশটি তিনটি টেকটোনিক প্লেটের সংযোগস্থলে থাকায় এখানে যে কোনো সময় ৯.০ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হানতে পারে। তাদের মতে, এই ধরনের ধ্বংসাত্মক কম্পন ঘটলে রাজধানী ঢাকার অর্ধেক ভবন পর্যন্ত মাটিতে মিশে যেতে পারে, আর এতে বিপদে পড়বে লক্ষাধিক মানুষের জীবন।
বিশেষজ্ঞরা দীর্ঘদিন ধরেই সম্ভাব্য ঝুঁকির বিষয়ে সতর্ক করে আসছেন। কিন্তু দেশে দুর্যোগ মোকাবিলার প্রস্তুতি এখনো খুব সীমিত। বড় ভূমিকম্প সামলাতে সক্ষমতা বর্তমানে ২০ শতাংশেরও কম—যা পরিস্থিতিকে আরও নাজুক করে তুলছে।
এদিকে সরকার এবং সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো সম্ভাব্য ক্ষতি কমাতে উদ্ধার ও প্রতিক্রিয়া ব্যবস্থার উন্নয়নে কাজ করছে বলে জানানো হয়েছে। তবে ভূতাত্ত্বিকদের সতর্কবার্তা আরও স্পষ্ট—উত্তর-পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব অঞ্চল, বিশেষ করে সিলেট, চট্টগ্রাম এবং ঢাকার ঝুঁকি দ্রুত বাড়ছে।
তাদের মতে, এখনই সারা দেশে ভবনগুলোর নিরাপত্তা যাচাই, সঠিক নির্মাণবিধি প্রয়োগ এবং নিয়মিত ভূমিকম্প মহড়া চালু না করলে ভবিষ্যৎ ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে ভয়াবহ। ফলে জনসচেতনতা বৃদ্ধি ও নিরাপদ নির্মাণ নিশ্চিত করাকে সময়ের দাবি হিসেবে দেখছেন বিশেষজ্ঞরা।

২১ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:১৬
শুক্রবার অন্যতম পবিত্র দিবস। প্রতি মাসে চার-পাঁচবার এবং বছরে প্রায় বায়ান্নবার পবিত্র এ দিবসটির আগমন হয়। মহান রবের ঘোষিত অনুপম মর্যাদার শ্রেষ্ঠ দিন-রাতগুলোতে ইবাদত করার প্রত্যয় প্রকৃত মুমিন মুসলিমগণকে তিনশ চৌষট্টি দিনের প্রহর গুনতে হলেও সপ্তাহের পালাক্রমে চলমান শুক্রবার তথা জুমাবারের জন্য মাত্র ছয়টি দিন অপেক্ষা করতে হয়। মহান রাব্বুল আলামিন মাত্র ছয় দিনে নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডল সৃষ্টি করেন, যা পরিপূর্ণতায় বিকশিত হয় সপ্তাহের শেষ দিন শুক্রবারে। এই মর্মে পবিত্র কুরআনে কয়েকটি আয়াতে মহান রাব্বুল আলামিনের ঘোষণা রয়েছে। প্রখ্যাত তাফসিরবিশারদ আল্লামা ইবনে কাসির (রহ.)-এর সহিহ বর্ণনায় জানা যায়, ছয় দিনে জগৎ সৃষ্টি হয়েছে তা রোববার থেকে শুরু করে শুক্রবারে শেষ হয়। আবার পৃথিবী ধ্বংস তথা কেয়ামত সংঘটিত হবে ঠিক শুক্রবারে। এই দিনে হজরত আদম (আ.)-কে সৃষ্টি করা হয়েছিল। এই দিনে হজরত আদম (আ.) ও মাতা হাওয়া (আ.)-কে জান্নাতে প্রবেশ করানো হয়েছিল এবং এই দিনেই তাদের দুজনকে পৃথিবীর দুটি অঞ্চলে প্রেরণ করা হয়েছিল। হজরত আদম (আ.)-কে শাস্তি স্বরূপ রাখা হয়েছিল শ্রীলঙ্কায় এবং মাতা হাওয়া (আ.)-কে রাখা হয়েছিল সৌদি আরবের জেদ্দা শহরে। আবার এই দিনেই তাদের দুজনকে মহান রাব্বুল আলামিন ক্ষমা করে দিয়ে একত্র করে দিয়েছিলেন। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেন, সূর্য উদিত হওয়ার দিনগুলোর মধ্যে জুমার দিন সর্বোত্তম। এ দিন আদম (আ.)-কে সৃষ্টি করা হয়েছে, এ দিন তাঁকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হয়েছে এবং এ দিন সেখান থেকে তাঁকে বের করে দেওয়া হয়েছে, জুমার দিনই কেয়ামত সংঘটিত হবে। (মুসলিম : ১৮৬২)
একজন মানুষের জীবদ্দশায় যতবার সূর্যোদয় হবে এবং যতগুলো সকাল ভাগ্যে জুটবে তার ভেতরে সবচেয়ে মহিমাপূর্ণ দিনটি সে পাবে শুক্রবার তথা জুমার দিন। একটি দিন বলতে সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত সময়কে বোঝায়। এর অর্থ, সব প্রকার ফরজ, ওয়াজিব, সুন্নত, নফল ইবাদতের জন্য এই দিনটি সর্বোৎকৃষ্ট এবং মঙ্গলজনক। আরবি জুমা শব্দের আভিধানিক অর্থ হলো একত্রিত করা। আগের যুগে এই দিনকে ‘উরুবা’ বলা হতো। জুমার দিনে চার ওয়াক্ত ফরজ নামাজের পাশাপাশি জোহরের পরিবর্তে দুই রাকাত সালাত আদায় করা ফরজ এবং খুতবা পাঠ ও শোনা ওয়াজিব হিসেবে নির্ধারিত করা হয়েছে। জুমার সালাত ফরজ হয় প্রথম হিজরিতে। রাসুলুল্লাহ (সা.) হিজরতকালে কুবাতে অবস্থান শেষে শুক্রবার মদিনা পৌঁছেন এবং বনি সালেম গোত্রের উপত্যকায় পৌঁছে জোহরের ওয়াক্ত হলে সেখানেই তিনি জুমার সালাত আদায় করেন। এটাই ইতিহাসের প্রথম জুমার সালাত। জুমার নামাজের বিষয়ে পবিত্র কুরআনে সুরা জুমার ১০ নং আয়াতে বলা হয়েছে, ‘হে মুমিনগণ! জুমার দিনে যখন নামাজের আজান দেওয়া হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণে দ্রুত গমন করো এবং কেনাবেচা বন্ধ করো। এটা তোমাদের জন্যে উত্তম যদি তোমরা বোঝ। অতঃপর নামাজ শেষ হলে তোমরা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ো এবং আল্লাহর অনুগ্রহ তালাশ করো ও আল্লাহকে অধিক স্মরণ করো, যাতে তোমরা সফলকাম হও।’ (সুরা জুমা, আয়াত : ৯-১০)
আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে ১১৪টি সুরার মধ্যে পৃথক ও স্বাতন্ত্র্য একটি সুরা নাজিল করেছেন, যা নামকরণ করা হয়েছে ‘সুরা জুমা’ নামে। যেমন মহান আল্লাহ মুমিনদের উদ্দেশ্য করে শুক্রবারে আজান হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কেনাবেচা বন্ধসহ দুনিয়াবি সব কাজ পরিত্যাগ করে নামাজের জন্য ছুটতে আদেশ করেছেন এবং এও বলেছেন, নামাজ শেষে আবার তোমরা কর্মে ছড়িয়ে পড়ে দিনটিতে আল্লাহকে বেশি বেশি স্মরণ করো। তবে দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে, মুসলিম সমাজে শয়তানের প্ররোচনায় কিছু মানুষ শুক্রবার দিনটিকে এমনভাবে বিমুখীকরণ করে রেখেছে, যার অন্ত নেই। লক্ষ করলে দেখা যাবে, সপ্তাহের ছুটির দিন হলো শুক্রবার, আর যে কারণে এই দিনে বেচাকেনা সবচেয়ে বেশি জমজমাট থাকে। এই উপমহাদেশে পশ্চিমা বণিকরা বেচাকেনার উদ্দেশ্যে এসে শাসনের গোড়াপত্তন করেই শেষ হয়নি, বরং কয়েকশ বছর শাসনের নামে শোষণ করে অমুসলিম কালচারের বীজ বপন করে যায়। সাড়ে চৌদ্দশ বছর আগে কুরআনে যে ব্যাপারে স্পষ্ট হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করা হয়েছে, আজকের মুসলিম সমাজ শুক্রবারের জুমার আজান হওয়ার পরেও সেই হাট-বাজারে ব্যস্ত হয়ে থাকে।
এই দিনটি মুসলমানের জন্য বিশেষ মহিমাপূর্ণ, যা মহান আল্লাহ খুশি হয়ে মুসলমানদের দান করেছেন। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহ আমাদের পূর্ববর্তীদের জুমার দিন সম্পর্কে সঠিক পথের সন্ধান দেননি বিরোধে লিপ্ত হওয়ার কারণে। তাই ইহুদিদের জন্য শনিবার এবং খ্রিস্টানদের জন্য রোববার এবং মুসলিমদের জন্য জুমার দিন নির্ধারণ করলেন। তিনি জুমার দিন, শনিবার ও রোববার এভাবে বিন্যাস করলেন যে, ওইসব জাতি কেয়ামাতের দিন আমাদের পশ্চাৎবর্তী হবে। আমরা পৃথিবীবাসীর মধ্যে শেষে আগমনকারী উম্মত এবং কেয়ামতের দিন হব সর্বপ্রথম। যাদের সমগ্র সৃষ্টির সর্বপ্রথম বিচার অনুষ্ঠিত হবে’ (মুসলিম : ১৮৬৭)। ইহুদি ও খ্রিস্টানদের জন্য জুমার দিন বরাদ্দ করলেও তারা বেছে নিয়েছে শনিবার ও রোববার। এই জন্য মহান আল্লাহ স্পষ্টভাবে তাদের জন্য লানত নির্ধারণ করলেন। অতএব যারা মুসলিম হয়েও ইহুদি-খ্রিস্টানদের মতো শুক্রবারের মর্যাদা রক্ষায় গাফিলতি করবে কিংবা ইহুদি-খ্রিস্টানের মতো এই দিনটিকে পরিত্যাগ করবে তারাও তাদের অন্তর্ভুক্ত বলে গণ্য হবে।
জুমার দিন ভাগ্যবান মুসলমানদের জন্য ইবাদত-বন্দেগি ও দোয়া-দরুদের সুবর্ণ সুযোগ। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি জুমার দিন গোসল করে উত্তম পোশাক পরিধান করবে এবং সুগন্ধি ব্যবহার করবে, যদি তার কাছে থাকে। তারপর জুমার নামাজে আসে এবং অন্য মুসল্লিদের গায়ের ওপর দিয়ে টপকে সামনের দিকে না যায়। নামাজ আদায় করে। তারপর ইমাম খুতবার জন্য বের হওয়ার পর থেকে সালাম পর্যন্ত চুপ করে থাকে। তা হলে তার এই আমল পূর্ববর্তী জুমার দিন থেকে পরের জুমা পর্যন্ত সব সগিরা গুনাহর জন্য কাফফারা হবে’ (আবু দাউদ : ৩৪৩)। আবু হুরায়রা (রা.) আরও বলেন, রাসুল (সা.) আমাদের সঙ্গে একদিন শুক্রবারের ফজিলত ও বৈশিষ্ট্য নিয়ে আলোচনা করছিলেন। তখন তিনি বলেছিলেন, জুমার দিনে এমন একটি সময় আছে, সেই সময়টায় যদি কোনো মুসলিম নামাজ আদায়রত অবস্থায় থাকে এবং আল্লাহর কাছে কিছু চায়, আল্লাহ অবশ্যই তার সে চাহিদা বা দোয়া কবুল করবেন। এরপর রাসুল (সা.) তাঁর হাত দিয়ে ইশারা করে সময়টির সংক্ষিপ্ততার ইঙ্গিত দেন (বুখারি)। ফিকহ শাস্ত্রবিদগণ জুমার দিনে দোয়া কবুলের সময়টা আসরের নামাজের পর থেকে মাগরিবের নামাজ পর্যন্ত বলে ব্যাখ্যা করেছেন। সুতরাং এ দিনে যত পারি ইবাদত করি, বেশি বেশি সালাত আদায় করি, জিকির করি, দোয়া-দরুদ পাঠ করি, মহান রবের খুশিতে অন্তরে পরকালের ভয় এনে ইসলাম পরিপন্থী কাজগুলো প্রত্যাখ্যান করি। মহান আল্লাহ সবাইকে তওফিক দিন।
শুক্রবার অন্যতম পবিত্র দিবস। প্রতি মাসে চার-পাঁচবার এবং বছরে প্রায় বায়ান্নবার পবিত্র এ দিবসটির আগমন হয়। মহান রবের ঘোষিত অনুপম মর্যাদার শ্রেষ্ঠ দিন-রাতগুলোতে ইবাদত করার প্রত্যয় প্রকৃত মুমিন মুসলিমগণকে তিনশ চৌষট্টি দিনের প্রহর গুনতে হলেও সপ্তাহের পালাক্রমে চলমান শুক্রবার তথা জুমাবারের জন্য মাত্র ছয়টি দিন অপেক্ষা করতে হয়। মহান রাব্বুল আলামিন মাত্র ছয় দিনে নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডল সৃষ্টি করেন, যা পরিপূর্ণতায় বিকশিত হয় সপ্তাহের শেষ দিন শুক্রবারে। এই মর্মে পবিত্র কুরআনে কয়েকটি আয়াতে মহান রাব্বুল আলামিনের ঘোষণা রয়েছে। প্রখ্যাত তাফসিরবিশারদ আল্লামা ইবনে কাসির (রহ.)-এর সহিহ বর্ণনায় জানা যায়, ছয় দিনে জগৎ সৃষ্টি হয়েছে তা রোববার থেকে শুরু করে শুক্রবারে শেষ হয়। আবার পৃথিবী ধ্বংস তথা কেয়ামত সংঘটিত হবে ঠিক শুক্রবারে। এই দিনে হজরত আদম (আ.)-কে সৃষ্টি করা হয়েছিল। এই দিনে হজরত আদম (আ.) ও মাতা হাওয়া (আ.)-কে জান্নাতে প্রবেশ করানো হয়েছিল এবং এই দিনেই তাদের দুজনকে পৃথিবীর দুটি অঞ্চলে প্রেরণ করা হয়েছিল। হজরত আদম (আ.)-কে শাস্তি স্বরূপ রাখা হয়েছিল শ্রীলঙ্কায় এবং মাতা হাওয়া (আ.)-কে রাখা হয়েছিল সৌদি আরবের জেদ্দা শহরে। আবার এই দিনেই তাদের দুজনকে মহান রাব্বুল আলামিন ক্ষমা করে দিয়ে একত্র করে দিয়েছিলেন। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেন, সূর্য উদিত হওয়ার দিনগুলোর মধ্যে জুমার দিন সর্বোত্তম। এ দিন আদম (আ.)-কে সৃষ্টি করা হয়েছে, এ দিন তাঁকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হয়েছে এবং এ দিন সেখান থেকে তাঁকে বের করে দেওয়া হয়েছে, জুমার দিনই কেয়ামত সংঘটিত হবে। (মুসলিম : ১৮৬২)
একজন মানুষের জীবদ্দশায় যতবার সূর্যোদয় হবে এবং যতগুলো সকাল ভাগ্যে জুটবে তার ভেতরে সবচেয়ে মহিমাপূর্ণ দিনটি সে পাবে শুক্রবার তথা জুমার দিন। একটি দিন বলতে সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত সময়কে বোঝায়। এর অর্থ, সব প্রকার ফরজ, ওয়াজিব, সুন্নত, নফল ইবাদতের জন্য এই দিনটি সর্বোৎকৃষ্ট এবং মঙ্গলজনক। আরবি জুমা শব্দের আভিধানিক অর্থ হলো একত্রিত করা। আগের যুগে এই দিনকে ‘উরুবা’ বলা হতো। জুমার দিনে চার ওয়াক্ত ফরজ নামাজের পাশাপাশি জোহরের পরিবর্তে দুই রাকাত সালাত আদায় করা ফরজ এবং খুতবা পাঠ ও শোনা ওয়াজিব হিসেবে নির্ধারিত করা হয়েছে। জুমার সালাত ফরজ হয় প্রথম হিজরিতে। রাসুলুল্লাহ (সা.) হিজরতকালে কুবাতে অবস্থান শেষে শুক্রবার মদিনা পৌঁছেন এবং বনি সালেম গোত্রের উপত্যকায় পৌঁছে জোহরের ওয়াক্ত হলে সেখানেই তিনি জুমার সালাত আদায় করেন। এটাই ইতিহাসের প্রথম জুমার সালাত। জুমার নামাজের বিষয়ে পবিত্র কুরআনে সুরা জুমার ১০ নং আয়াতে বলা হয়েছে, ‘হে মুমিনগণ! জুমার দিনে যখন নামাজের আজান দেওয়া হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণে দ্রুত গমন করো এবং কেনাবেচা বন্ধ করো। এটা তোমাদের জন্যে উত্তম যদি তোমরা বোঝ। অতঃপর নামাজ শেষ হলে তোমরা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ো এবং আল্লাহর অনুগ্রহ তালাশ করো ও আল্লাহকে অধিক স্মরণ করো, যাতে তোমরা সফলকাম হও।’ (সুরা জুমা, আয়াত : ৯-১০)
আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে ১১৪টি সুরার মধ্যে পৃথক ও স্বাতন্ত্র্য একটি সুরা নাজিল করেছেন, যা নামকরণ করা হয়েছে ‘সুরা জুমা’ নামে। যেমন মহান আল্লাহ মুমিনদের উদ্দেশ্য করে শুক্রবারে আজান হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কেনাবেচা বন্ধসহ দুনিয়াবি সব কাজ পরিত্যাগ করে নামাজের জন্য ছুটতে আদেশ করেছেন এবং এও বলেছেন, নামাজ শেষে আবার তোমরা কর্মে ছড়িয়ে পড়ে দিনটিতে আল্লাহকে বেশি বেশি স্মরণ করো। তবে দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে, মুসলিম সমাজে শয়তানের প্ররোচনায় কিছু মানুষ শুক্রবার দিনটিকে এমনভাবে বিমুখীকরণ করে রেখেছে, যার অন্ত নেই। লক্ষ করলে দেখা যাবে, সপ্তাহের ছুটির দিন হলো শুক্রবার, আর যে কারণে এই দিনে বেচাকেনা সবচেয়ে বেশি জমজমাট থাকে। এই উপমহাদেশে পশ্চিমা বণিকরা বেচাকেনার উদ্দেশ্যে এসে শাসনের গোড়াপত্তন করেই শেষ হয়নি, বরং কয়েকশ বছর শাসনের নামে শোষণ করে অমুসলিম কালচারের বীজ বপন করে যায়। সাড়ে চৌদ্দশ বছর আগে কুরআনে যে ব্যাপারে স্পষ্ট হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করা হয়েছে, আজকের মুসলিম সমাজ শুক্রবারের জুমার আজান হওয়ার পরেও সেই হাট-বাজারে ব্যস্ত হয়ে থাকে।
এই দিনটি মুসলমানের জন্য বিশেষ মহিমাপূর্ণ, যা মহান আল্লাহ খুশি হয়ে মুসলমানদের দান করেছেন। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহ আমাদের পূর্ববর্তীদের জুমার দিন সম্পর্কে সঠিক পথের সন্ধান দেননি বিরোধে লিপ্ত হওয়ার কারণে। তাই ইহুদিদের জন্য শনিবার এবং খ্রিস্টানদের জন্য রোববার এবং মুসলিমদের জন্য জুমার দিন নির্ধারণ করলেন। তিনি জুমার দিন, শনিবার ও রোববার এভাবে বিন্যাস করলেন যে, ওইসব জাতি কেয়ামাতের দিন আমাদের পশ্চাৎবর্তী হবে। আমরা পৃথিবীবাসীর মধ্যে শেষে আগমনকারী উম্মত এবং কেয়ামতের দিন হব সর্বপ্রথম। যাদের সমগ্র সৃষ্টির সর্বপ্রথম বিচার অনুষ্ঠিত হবে’ (মুসলিম : ১৮৬৭)। ইহুদি ও খ্রিস্টানদের জন্য জুমার দিন বরাদ্দ করলেও তারা বেছে নিয়েছে শনিবার ও রোববার। এই জন্য মহান আল্লাহ স্পষ্টভাবে তাদের জন্য লানত নির্ধারণ করলেন। অতএব যারা মুসলিম হয়েও ইহুদি-খ্রিস্টানদের মতো শুক্রবারের মর্যাদা রক্ষায় গাফিলতি করবে কিংবা ইহুদি-খ্রিস্টানের মতো এই দিনটিকে পরিত্যাগ করবে তারাও তাদের অন্তর্ভুক্ত বলে গণ্য হবে।
জুমার দিন ভাগ্যবান মুসলমানদের জন্য ইবাদত-বন্দেগি ও দোয়া-দরুদের সুবর্ণ সুযোগ। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি জুমার দিন গোসল করে উত্তম পোশাক পরিধান করবে এবং সুগন্ধি ব্যবহার করবে, যদি তার কাছে থাকে। তারপর জুমার নামাজে আসে এবং অন্য মুসল্লিদের গায়ের ওপর দিয়ে টপকে সামনের দিকে না যায়। নামাজ আদায় করে। তারপর ইমাম খুতবার জন্য বের হওয়ার পর থেকে সালাম পর্যন্ত চুপ করে থাকে। তা হলে তার এই আমল পূর্ববর্তী জুমার দিন থেকে পরের জুমা পর্যন্ত সব সগিরা গুনাহর জন্য কাফফারা হবে’ (আবু দাউদ : ৩৪৩)। আবু হুরায়রা (রা.) আরও বলেন, রাসুল (সা.) আমাদের সঙ্গে একদিন শুক্রবারের ফজিলত ও বৈশিষ্ট্য নিয়ে আলোচনা করছিলেন। তখন তিনি বলেছিলেন, জুমার দিনে এমন একটি সময় আছে, সেই সময়টায় যদি কোনো মুসলিম নামাজ আদায়রত অবস্থায় থাকে এবং আল্লাহর কাছে কিছু চায়, আল্লাহ অবশ্যই তার সে চাহিদা বা দোয়া কবুল করবেন। এরপর রাসুল (সা.) তাঁর হাত দিয়ে ইশারা করে সময়টির সংক্ষিপ্ততার ইঙ্গিত দেন (বুখারি)। ফিকহ শাস্ত্রবিদগণ জুমার দিনে দোয়া কবুলের সময়টা আসরের নামাজের পর থেকে মাগরিবের নামাজ পর্যন্ত বলে ব্যাখ্যা করেছেন। সুতরাং এ দিনে যত পারি ইবাদত করি, বেশি বেশি সালাত আদায় করি, জিকির করি, দোয়া-দরুদ পাঠ করি, মহান রবের খুশিতে অন্তরে পরকালের ভয় এনে ইসলাম পরিপন্থী কাজগুলো প্রত্যাখ্যান করি। মহান আল্লাহ সবাইকে তওফিক দিন।

২০ নভেম্বর, ২০২৫ ১০:৫৬
সংবিধানে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা ফিরিয়ে দিয়ে রায় দিয়েছেন আপিল বিভাগ। আজ বৃহস্পতিবার (২০ নভেম্বর) প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন সাত বিচারপতির পূর্ণাঙ্গ আপিল বেঞ্চ- এই রায় দেন। এর ফলে ১৪ বছর আগে বাতিল ঘোষণা করা নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা ফিরল আবারও। যা কার্যকর হবে চতুর্দশ নির্বাচন থেকে।
পরে ব্রিফিংয়ে আইনজীবীরা বলেন, গত ১১ নভেম্বর শুনানি শেষ হলে আজ রায় ঘোষণার জন্য দিন নির্ধারণ করেছিলেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন সাত বিচারপতির পূর্ণাঙ্গ আপিল বেঞ্চ। বহুল আলোচিত এই আপিলে বিএনপির পক্ষে শুনানি করেন সিনিয়র আইনজীবী জয়নুল আবেদীন ও ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল।
জামায়াতের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির। পাঁচ বিশিষ্ট নাগরিকের পক্ষে আপিল শুনানি করেন সিনিয়র আইনজীবী শরীফ ভূইয়া। আর রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান। টানা ১০ কর্মদিবস শুনানি হয়।
আপিলকারী ও রাষ্ট্রপক্ষ শুনানিতে বলেন, দেশের গণতন্ত্রের জন্য আবারও তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফেরা উচিত। এই সরকার ব্যবস্থা বাতিলের পরই দেশে রাজনৈতিক সংকট তৈরি হয়।
বিএনপির আইনজীবী জয়নুল আবেদীন বলেন, এই রায়ের মাধ্যমে দেশের মানুষ নিজের ভোট নিজে দিতে পারবেন, গণতন্ত্র রক্ষা হবে। আজ আমরা সংঘাতের রাজনীতি থেকে মুক্ত হলাম।
সংবিধানে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা ফিরিয়ে দিয়ে রায় দিয়েছেন আপিল বিভাগ। আজ বৃহস্পতিবার (২০ নভেম্বর) প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন সাত বিচারপতির পূর্ণাঙ্গ আপিল বেঞ্চ- এই রায় দেন। এর ফলে ১৪ বছর আগে বাতিল ঘোষণা করা নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা ফিরল আবারও। যা কার্যকর হবে চতুর্দশ নির্বাচন থেকে।
পরে ব্রিফিংয়ে আইনজীবীরা বলেন, গত ১১ নভেম্বর শুনানি শেষ হলে আজ রায় ঘোষণার জন্য দিন নির্ধারণ করেছিলেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন সাত বিচারপতির পূর্ণাঙ্গ আপিল বেঞ্চ। বহুল আলোচিত এই আপিলে বিএনপির পক্ষে শুনানি করেন সিনিয়র আইনজীবী জয়নুল আবেদীন ও ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল।
জামায়াতের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির। পাঁচ বিশিষ্ট নাগরিকের পক্ষে আপিল শুনানি করেন সিনিয়র আইনজীবী শরীফ ভূইয়া। আর রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান। টানা ১০ কর্মদিবস শুনানি হয়।
আপিলকারী ও রাষ্ট্রপক্ষ শুনানিতে বলেন, দেশের গণতন্ত্রের জন্য আবারও তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফেরা উচিত। এই সরকার ব্যবস্থা বাতিলের পরই দেশে রাজনৈতিক সংকট তৈরি হয়।
বিএনপির আইনজীবী জয়নুল আবেদীন বলেন, এই রায়ের মাধ্যমে দেশের মানুষ নিজের ভোট নিজে দিতে পারবেন, গণতন্ত্র রক্ষা হবে। আজ আমরা সংঘাতের রাজনীতি থেকে মুক্ত হলাম।

Google AdSense
This is a demo ad. Your live ads will be displayed here once AdSense is properly configured.
Google AdSense
This is a demo ad. Your live ads will be displayed here once AdSense is properly configured.