
২৯ মে, ২০২৫ ১৬:৫৩
বরিশাল মহানগর যুবলীগ নেতা মারুফ আহমেদ জিয়া একজন সরকারি কর্মকর্তাকে পিটিয়ে বীরদর্পে সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে বেরিয়ে যাওয়ার ঘটনায় সাহসিকতার নেপথ্য শক্তি নিয়ে কি ইঙ্গিত দিলেন তা নিয়ে স্থানীয় রাজনৈতিক অঙ্গন ও প্রগতিশীল ধ্যান-ধারনার মানুষের মধ্যে প্রশ্ন এবং উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে। ঘটনাটি গত ১০ আগস্ট বৃহস্পতিবার সকালের। ওই দিন জিয়া তার সহযোগীদের নিয়ে বরিশাল গণপূর্ত অধিদপ্তরের হাজির হয়ে একটি ঠিকাদারী কাজের স্টিমেট জোরপূর্বক নিয়ে যাওয়ার চেষ্টায় বাধ সাধলে দপ্তরের উপ-সহকারী প্রকৌশলী ওবায়দুল হককে বেদম প্রহার করেন। এই ঘটনা অনেকটা নীরবে ঘটলেও শুক্রবার রাতে লাঞ্ছিত ওবায়দুল এ সংক্রান্ত থানায় অভিযোগ জানিয়ে মামলা করার পরপরই ঘটনার আদ্যপান্ত প্রকাশ পায় এবং বিষয়টি স্যোসাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে যায়। ফলশ্রুতিতে ফের মিডিয়ার শিরোনাম হন মারুফ আহমেদ জিয়া। বরিশালে পারিবারিক ও রাজনৈতিক কারণে এই যুবক বেশ আলোচিত-সমালোচিত মুখ। এক সময় নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ’র অনুসারী হিসেবে দাপট দেখিয়ে চলা মারুফ হঠাৎ করে রাজনৈতিক শিবির পরিবর্তন করে নয়া মেয়র খোকন সেরনিয়াবাতের পক্ষ নেন। এবং সদ্য অনুষ্ঠিত সিটি নির্বাচনে তার পক্ষাবলম্বন করে প্রচারণা এবং নিজেও কাউন্সিলর প্রার্থী হন। অবশ্য নেতা খোকন সেরনিয়াবাত নির্বাচিত হলেও তিনি প্রতিদ্বন্দ্বী সাদেকপন্থী মজিবর রহমানের কাছে শোচনীয় পরাজিত হন। একই ব্যক্তির সাথে দুইবার প্রতিদ্বন্দ্বীতা করে রাজনৈতিক সর্বশক্তি প্রয়োগের পরেও পরাজয়ের কারণে বেশ কিছুদিন ধরে মারুফ আহমেদ জিয়া আলোচনায় ছিলেন। এবং পরাজিত হলেও তার দাপট আরও একগুণ বেড়ে যায় বলে স্থানীদের অভিমত। প্রশ্ন সেখানেই হঠাৎ করে একজন প্রকৌশলীকে প্রহার করার পিছনে রাজনৈতিক শক্তি ও সমর্থন তাকে এই সাহসের দ্বারপ্রান্তে নিয়েছে বলে এমনটি বরিশালের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষপট সে কথাই মনে করিয়ে দেয় কি? কারণ ক্ষমতার তারতম্য বিবেচনায় ভাতিজা সাদিক আব্দুল্লাহ অপেক্ষা চাচা খোকন সেরনিয়াবাতের আধিপত্য সৃষ্টি হওয়ায় কেউ কেউ এলাকাভিত্তিক নেতৃত্ব দেওয়ার আড়ালে সন্ত্রাসী জগতের ডন হিসেবে উত্থ্যানের অভিযোগ উঠেছে, যা কিনা সিভিল প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী অবগত।
রাজনৈতিক বোদ্ধা ও সমাজ বিশ্লেষকদের ধারনা, জিয়ার পরিবার বরাবরই সব সরকারের আমলে দাপটের সাথেই আছেন বলে নানান ঘটনায় প্রতীয়মাণ হয়েছে। বিশেষ করে আওয়ামী লীগের গত ১৫ বছর একটানা শাসনামলে জিয়ার দাপট ছিলো সমান্তরাল। আওয়ামী লীগের ক্ষমতার প্রথমভাগে তার বোন সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর আয়েশা তৌহিদ লুনা প্রয়াত সিটি মেয়র শওকত হোসেন হিরনের সমর্থনপুষ্ট হওয়ায় তৎসময় জিয়া যুবলীগ নেতা হিসেবে বাংলা বাজার টু আলেকান্দা এলাকায় নিজের শক্তিকে সমীহের জায়গায় নিয়ে যায়।
সূত্র জানায়, বিএনপি আমলেও জিয়া ছিলেন অদম্য। একদিকে নগর বিএনপি’র সাবেক সভাপতি ও সিটি মেয়র মজিবর রহমান সরোয়ারের সাথে কাউন্সিলর লুনার দহরম-মহরম এবং বড় ভাই জাতীয় পার্টির একাংশের আহ্বায়ক বশির আহমেদ ঝুনুর অতীত প্রভাবকে ব্যবহার করে জিয়ার শক্তির উত্থ্যান ঘটে। যদিও জিয়া আওয়ামী লীগ রাজনীতির সাথে আগে থেকে জড়িত।
অভিযোগের সুরে জানা গেলে, সময়ের আবর্তে রাজনীতির চাকা ঘুরে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলে জিয়া রাজনীতিতে আড়মোড়া দিয়ে ওঠে। এ সময় কাউন্সিলর লুনাও নিজের ক্ষমতা ধরে রাখতে ভোল পাল্টে প্রথমে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা এবং স্থানীয়ভাবে দলের জেলার কর্ণধর আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ’র প্রয়াতপত্নী বেগম সাহানারা আব্দুল্লাহ’র হাতে ফুল দিয়ে ক্ষমতাসীন দলের আশ্রয় নেন। পরবর্তীতে আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহর ক্ষমতা খর্ব এবং প্রয়াত নেতা শওকত হোসেন হিরন মেয়র হিসেবে বরিশালে দাপটশীল বলয় তৈরী করলে কাউন্সিলর লুনা হয়ে যান এই নেতার প্রিয়ভাজন। পক্ষান্তরে জিয়া হাসনাত সমর্থিত যুবলীগ নেতা হওয়া সত্বেও বোন লুনার বদৌলতে হিরনের নেক নজরে থেকে টেন্ডারবাজি থেকে শুরু করে এলাকায় আধিপত্য বিস্তার করে চলতেন। আকস্মিক সদর আসনের সংসদ সদস্য থাকাবস্থায় শওকত হোসেনের মৃত্যু ঘটলে এই ভাই-বোন ক্ষমতার রাজনীতি থেকে কিছুটা চুপসে যান। তাছাড়া পটুয়াখালীর পৌর কাউন্সিলর লুনার স্বামী তৌহিদুল ইসলাম তৌহিদ মৃত্যুবরণ করলে আরও ঘরমুখো হয়ে পড়েন বোন লুনা। কিন্তু সময় বেশি দিন লাগেনি, অল্প কয়েক দিনের ব্যবধানেই আবারও জিয়া কাকতালীয়ভাবে দাপটের রাজনীতির স্বাদ পেয়েছেন বলে কোন কোন মহল দাবি করছে।
বেশ কয়েকটি সূত্রের দাবি, সেরনিয়াবাত সাদেক আব্দুল্লাহ বরিশাল রাজনীতিতে পদার্পন এবং ২০১৮ সালে অনুুষ্ঠিত সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দলীয় মেয়র নির্বাচিত হলে নয়া এই রাজনীতিবিদের সাথে বয়সের মিল থাকায় দু’জনার ভিতর ভিষণ ঘনিষ্ট সম্পর্ক গড়ে ওঠে। হয়ে যান সাদিকপন্থী শক্তিধর যুবলীগ নেতা। পেয়ে যান নগর যুবলীগের সদস্য পদ। বরাবরই ক্ষমতার বলয়ের মধ্যে থাকা জিয়া অনুধাবন করেন সাদেক আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন বঞ্চিত এবং তার চাচা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ইচ্ছায় বরিশালের দলীয় মেয়র প্রার্থী হওয়ায় হাসনাত পরিবারের ক্ষমতা হ্রাস পেয়েছে।
আবার কেউ বলছে, মজিবর রহমানের ছোট ভাই আরেক যুবলীগ নেতা নামও অভিন্ন জিয়াউর রহমান জিয়া রাজনৈতিক কৌশলের দরজা দিয়ে মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ’র খুব কাছাকাছি চলে যাওয়ায় মারুফ অহমেদ জিয়া বিষয়টি ভালো চোখে নেয়নি, কমিয়ে দেয় মেয়রের কালীবাড়ির বাসভবনে যাতায়াত। হাল সময়ে হঠাৎ করে তিনিও ভোল পাল্টে হয়ে যান খোকন সেরনিয়াবাত ঘরানার রাজনীতিবিদ। সেই সাথে তার বোন লুনাও যুক্ত হয় একই শিবিরে।
অনুসন্ধানে আভাস মেলে যে, অবশ্য এ ক্ষেত্রে মূল টার্গেট ছিলো অথবা ভেবেছিলো খোকন সেরনিয়াবাদের ক্ষমতার প্রভাব অথবা সমর্থন নিয়ে হাসনাত-সাদিক সমর্থিত মজিবর রহমানকে পরাজিত করা এবার হয়তো সহজতর হবে। রাজনীতিতে একই ঘরনার লোক হলেও ১১ নম্বর ওয়ার্ড কেন্দ্রিক আধিপত্য নিয়ে মজিবর রহমানের সাথে মারুফ আহমেদ জিয়ার পরিবারের শীতল বিরোধ চলে আসছিলো। শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে তাদের মধ্যে লড়াই চলছে।
এর আগে ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত সিটি নির্বাচনে মজিবর রহমানের সাথে লড়াই করে পরাজয় অর্থাৎ কাউন্সিলর হওয়ার ব্যর্থতার পিছনে সাদিকের অতটা সমর্থন পায়নি বিধায় মান-অভিমানের পাল্লাটা সেখান থেকে ভারী হতে থাকে এবং সুযোগের অপেক্ষায় ছিলেন বিকল্প শক্তিধর নেতার আবির্ভাবে, যেখানে আশ্রয়-সমর্থন পাওয়া যায়।
তার ঘনিষ্ট একটি সূত্রের দাবি, মারুফ আহমেদ জিয়া একাবার মনস্থিরও করেছিলেন বরিশাল সদর আসনের সাংসদ ও পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক শামীমের স্রোতধারায় নিজেকে সামিল করবেন। এ ক্ষেত্রে কৌশল হচ্ছে, মন্ত্রীর সমর্থন নিয়ে কাউন্সিলর মজিবর রহমানের সাথে ক্ষমতার টক্কর জমিয়ে তোলা। কিন্তু মাঠের রাজনীতিতে পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী অপেক্ষা মেয়র সাদিক অনেক দুর্বল এবং কোন টেন্ডারবাজি বা ক্যাডারভিত্তিক রাজনীতি মনস্ক না হওয়ায় জাহিদ ফারুক শামীমের দরজায় যাই যাই করে আর যাওয়া হয়নি। খোকন সেরনিয়াবাত সিটি নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার পর জাহিদ ফারুক শামীমের সাথে একট্টা হয়ে মাঠে নামনে জিয়া কৌশলে এই প্রতিমন্ত্রীর নজরে নিজেকে নিয়ে আসে এবং খোকন সেরনিয়াবাতের সমর্থনে নতুন করে রাজনৈতিক মাঠ গরমের সুযোগ নিয়ে নিজের শক্তিমাত্রা প্রদর্শনের সুযোগ খুঁজছিলেন। কিন্তু তার বয়স অপেক্ষা যুবলীগ নেতা ওয়াসিম দেওয়ান, ছাত্রলীগ নেতা জসিম উদ্দিন ও বিএম কলেজের সাবেক ভিপি মঈন তুষার নয়া মেয়র খোকন সেরনিয়াবাতের ঘনিষ্টতর হওয়ার কারণে প্রাধান্য দেওয়ায় জিয়া নিজেকে এই শিবিরে নিজেকে সেভাবে উপস্থাপন করতে পারছিলেন না। যতটা না পেরেছিলেন সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহর ক্ষেত্রে। খোকন সেরনিয়াবাত দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার পর বরিশাল আওয়ামী লীগ দ্বি-খন্ডিত হয়ে সাদেক আব্দুল্লাহকে চেপে ধরতে তার নিয়ন্ত্রণে থাকা লঞ্চঘাট, বাস টার্মিনালসহ বিভিন্ন স্থাপনা দখল এবং প্রশাসনের মধ্যে প্রভাব সৃষ্টি হওয়ায় জিয়ার হয়তো ধারনা ছিলো গণপূর্ত অধিদপ্তরে অঘটন ঘটিয়ে ফায়দা লোটার পাশাপাশি নিজের শক্তি-সমর্থ জানান দিতে।
গত ১০ আগস্ট সকালে গণপূর্ত অধিদপ্তরের ঘটনায় প্রকাশ পায় তিনি এই দপ্তরে দীর্ঘদিন যাবৎ টেন্ডারবাজি করে আসছিলেন। ওই দপ্তরে ঘুরে এ ধরনের বেশ কয়েকটি অভিযোগ জানাও গেল। তবে প্রত্যক্ষদর্শী দুইজন ব্যক্তির বর্ণনায় জিয়া দাপ্তরিক কাজ বাগিয়ে নিতে আগের যতনা পেশি শক্তি প্রয়োগ করতেন তার চেয়ে বেশি মেয়র সাদিক আব্দুল্লাহ’র অনুসারী হিসেবে নিজের প্রভাব উপস্থাপন করতেন। বরিশালের বর্তমান হালচাল বলে দেয় যে, খোকন সেরনিয়াবাতের বিজয় নয়, প্রার্থী হওয়ার খবর ছড়িয়ে পরার পর থেকেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী থেকে শুরু করে প্রশাসন ও বে-সরকারি সকল দপ্তরে মেয়র সাদিক আব্দুল্লাহ’র যতটুকু প্রভাব ছিলো তাও যেন শেষ হয়ে নয়া মেয়রের সমর্থনে রাবনের গীত গাইছে। সেই সুযোগই নিতে চেয়েছিলেন যুবলীগ নেতা জিয়া। নচেৎ শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজের একটি টেন্ডারের স্টিমেটের কাগজ দ্বিতীয় দফা আনতে গিয়ে রাজনৈতিক বল প্রয়োগ করার প্রক্রিয়ায় উপ-সহকারী প্রকৌশলী ওবায়দুল হকের সাথে বাকবিতণ্ডা থেকে একপর্যায় দুর্দান্ত সাহস দেখাতে গিয়ে দুই সহযোগী নিয়ে তাকে প্রহার করে।
নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র জানায়, গণপূর্ত অধিদপ্তরের এই ঘটনায় প্রশাসনের এই উন্নয়নমূলক এই সেক্টরের বরিশাল টু ঢাকার কর্মকর্তারা ক্ষুব্ধ হন। এবং তাদের ভিতর উত্তেজনার পারদ ক্রমেই বাড়ছিল। এমন খবর নয়া মেয়র খোকন সেরনিয়াবাত ও পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক শামীম যে কোনো মাধ্যমে অবগত হন। ঘটনাটি যেদিন ঘটে সেদিন উভয় নেতা বরিশালেই ছিলেন এবং গণপূর্ত অধিদপ্তরের ঘটনা পর্যবেক্ষণ করছিলেন। কিন্তু দুই নেতার কেউই জিয়াকে তলব করে সতর্কবার্তা বা সংযত হওয়ার আদেশ বা নির্দেশ কোনটাই দেয়নি। কারণ তারা চায়নি এই ঘটনার সাথে সম্পৃক্ত হয়ে মেয়র সাদিক আব্দুল্লাহর ন্যায় প্রসাশনের সাথে দূরত্ব তৈরী হোক। ফলশ্রুতিতে তাদের নীরবতায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীও আঁচ করে নেয় জিয়া যুবলীগ নেতা হলেও বর্তমান বরিশালের নিয়ন্ত্রক মন্ত্রী বা মেয়র কেউই জিয়ার কর্মকাণ্ডের পক্ষে নেই। অথবা তার দ্বায়ভার নিতে নারাজ।
গণপূর্ত অধিদপ্তরের একটি সূত্র বলছে, তারাও দুই নেতার মনভাব আমলে এনে এই যুবলীগ নেতার বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নেন। এবং মিডিয়ার কাছে তারা শক্ত স্টেটমেন্ট বা মন্তব্য রাখেন। যার প্রমাণ এ ঘটনায় গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী কামরুল হাসান সাংবাদিকদের জানান, বিষয়টি নিয়ে তারা অফিসিয়ালি আলোচনা করেছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতিক্রমে এই ঘটনায় মামলা করা উদ্যোগ নিয়েছে। বিষয়টি আইনীভাবে মোকাবিলা করবে বলে স্পষ্ট ইঙ্গিত দেন। শেষাংশে এসে ঘটলও সেটাই। লাঞ্ছিত ওই প্রকৌশলী পরদিন গত শুক্রবার রাতে মারুফ আহমেদ জিয়াকে প্রধান ও অপর দুই সহযোগী তিতাস ও আজদকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেন।
আবার অপর একটি সূত্রের দাবি, এই মামলা দায়েরের ক্ষেত্রে নয়া মেয়র ও পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রীর প্রথমে পরোক্ষ ইঙ্গিত থাকলেও এখন আসামীদের যেন না ধরা হয়, সে বিষয়ে কোতয়ালি মডেল থানা পুলিশকে দিক নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ওই সূত্রের অভিযোগ এই নাটের ঘুড়ি উড়িয়েছেন বোন সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর আয়েশা তৌহিদ লুনা। এই নারী নেত্রী ফের নতুন করে রাজনীতিতে সক্রিয় হয়েছেন এবং দুই নেতার আশির্বাদে পুনরায় কাউন্সিলর নির্বাচিত হতে সহায়ক হন। লুনার সাথে নয়া মেয়র খোকন সেরনিয়াবাতপত্নী লুনা আব্দুল্লাহর নামের মিল থাকায় ইতিমধ্যে উভয়ের ভিতর বিশেষ ঘনিষ্টতা গড়ে উঠায় সেখান থেকেই ভাই জিয়ার অনুকূলে সুপারিশ রেখে এ যাত্রা রক্ষার তাগিদ রাখেন। সূত্রের দেয়া এ তথ্য কতখানি সত্য তার বাস্তবিক প্রমাণ পাওয়া যায়নি। যদিও দায়িত্বশীল দুই নেতা অদ্যবধি দলীয় নেতা জিয়াকে নিয়ে কোন আনুষ্ঠনিক মন্তব্য প্রকাশ করেননি। এদিকে থানা পুলিশ ঘটনার চার দিন অতিবাহিত হলেও মারুফ আহমেদ জিয়ার টুটি ছুতে পারেনি, আটক হয়নি অপর দুইজন।
মডেল কোতয়ালি থানার ওসি আনোয়ার হোসেনের দাবি, আসামিদের আটকে জোরতর চেষ্টা চলছে। কিন্তু পুলিশের সার্বিক ভূমিকা সন্দেহজনক হওয়ায় ওই সূত্রের দাবি বা অভিযোগ একেবারে যে অমূলক নয়, তা নিয়ে নগরীতে কম-বেশি নানা মহলে আলোচনা শোনা যায়। যদি বাস্তবিক অর্থে রাজনীতির অন্দরমহলে সেটি যদি ঘটে থাকে তাহলে তা শুভ ইঙ্গিত বহন করেনা বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তারা অতিত উদাহরণকে সামনে টেনে এনে বলেন, প্রয়াত নেতা শওকত হোসেন হিরন সিটি কর্পোরেশনের মেয়র থাকাবস্থার শেষাংশে এসে তার অনুসারীদের সামাল দিতে পারেননি। যে কারণে বিএম কলেজের নতুন অধ্যক্ষ শংকর চন্দ্রকে দায়িত্ব গ্রহণে তার অনুসারীরা বাঁধা দিতে প্রকাশ্য লাঞ্ছিত করায় মেয়র হিরন তুমুল বিতর্কের মাঝে পড়েছিলেন। বিভিন্ন দপ্তরে তার অনুসারীদের দাপট বিপুল জনপ্রিয় এই নেতার প্রতি নগর উন্নয়নমূলক কাজের জন্য মানুষের বিশেষ দুর্বলতা থাকলেও চাপা ক্ষোভ ছিলো। যার বহিঃপ্রকাশ ঘটে ২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত সিটি মেয়র নির্বাচনে বিএনপির দুর্বল প্রার্থী প্রয়াত নেতা আহসান হাবিব কামালের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করে বিষয়ীভূত পরাজয়।
আবার সাদেক আব্দুল্লাহ রাজনীতির শুরুতে জনপ্রিয়তা অর্জন করলেও মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি তার ইমেজ ধরে রাখতে পারেননি। কয়েকজন খলিফা দ্বারা বেষ্টিত তরুণ এই নেতার কাছে নগরবাসী যে আশার আলো দেখছিলো, তা ক্রমেই নিভে যায় তার অনুসারীদের এলাকাভিত্তিক দাপট ও একনায়কতন্ত্র সৃষ্টির কারণে। এক্ষেত্রে তার অনভিজ্ঞ রাজনীতিকে দায়ী বলে মনে করে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষদের অভিমত হচ্ছে, মেয়র হিসেবে সাদেক আব্দুল্লাহ সাধারণ মানুষের কাছ থেকে যেমন দূরে সরে গেছে, তেমনি প্রশাসনের ভিতরেও তার ইমেজ দ্বন্দ্ব-সংঘাতে ভাটা পড়ে। এ কারণেই কপাল খুলে যায় খোকন সেরনিয়াবাতের। প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা নিজেই সম্পর্কে ফুপাতো ভাই খোকন সেরনিয়াবাতকে বরিশালের রাজনীতির নেতৃত্বে অগ্রভাগে নিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে সিটি নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন দিয়ে মেয়র নির্বাচিত করে স্থানীয় রাজনীতির পটপরিবর্তনের একটি ইঙ্গিত দিয়েছেন বলে মনে করা হচ্ছে। দলীয় বা সামাজিক অনুষ্ঠানে খোকন সেরনিয়াবাতের বক্তব্য ও কথাবার্তায় আঁচ করা যায় তিনি অতীতের নেতৃত্বের ন্যায় নিজেকে বিলীন করে দিতে নারাজ। বরং নতুন কিছু দিতে চায় বঞ্চিত বরিশালবাসীকে। সেই স্বপ্ন ফিকে হয়ে যেতে পারে যদি কিনা মারুফ আহমেদ জিয়াদের ন্যায় ডনরূপি রাজনীতিবিদদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়ে এলাকাভিত্তিক সন্ত্রাস-দুর্নীতির বটবৃক্ষ রোপন করার সুযোগ দেন। এমন শঙ্কার পাশাপাশি চাচা-ভাতিজার লড়াই কোথায় গিয়ে পৌঁছায় তা অনুধাবনে আনতে নেতা-কর্মীদের বিশাল একটি অংশ অনেকে হঠাৎ করে নীরব অবস্থান নেওয়ায় বরিশালের ক্ষমতাসীন রাজনীতিতে স্থবিরতা বিরাজ করছে।
এমন বিবেচনা জিয়ার ভেতর না থাকায় তিনি যে কাণ্ড ঘটালেন তাতে নাম ফুটেছে ঠিকই কিন্তু তার দিকে নগরবাসীর নজর পড়েছে আগামীর আলামত অনুধাবনে। ফলে বরিশালের ক্ষমতাসীন দলের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট কোন দিকে ধাবিত হচ্ছে, সেই প্রশ্নে জিয়া এখন প্রতীকী উদাহরণ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছেন।’
বরিশাল মহানগর যুবলীগ নেতা মারুফ আহমেদ জিয়া একজন সরকারি কর্মকর্তাকে পিটিয়ে বীরদর্পে সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে বেরিয়ে যাওয়ার ঘটনায় সাহসিকতার নেপথ্য শক্তি নিয়ে কি ইঙ্গিত দিলেন তা নিয়ে স্থানীয় রাজনৈতিক অঙ্গন ও প্রগতিশীল ধ্যান-ধারনার মানুষের মধ্যে প্রশ্ন এবং উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে। ঘটনাটি গত ১০ আগস্ট বৃহস্পতিবার সকালের। ওই দিন জিয়া তার সহযোগীদের নিয়ে বরিশাল গণপূর্ত অধিদপ্তরের হাজির হয়ে একটি ঠিকাদারী কাজের স্টিমেট জোরপূর্বক নিয়ে যাওয়ার চেষ্টায় বাধ সাধলে দপ্তরের উপ-সহকারী প্রকৌশলী ওবায়দুল হককে বেদম প্রহার করেন। এই ঘটনা অনেকটা নীরবে ঘটলেও শুক্রবার রাতে লাঞ্ছিত ওবায়দুল এ সংক্রান্ত থানায় অভিযোগ জানিয়ে মামলা করার পরপরই ঘটনার আদ্যপান্ত প্রকাশ পায় এবং বিষয়টি স্যোসাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে যায়। ফলশ্রুতিতে ফের মিডিয়ার শিরোনাম হন মারুফ আহমেদ জিয়া। বরিশালে পারিবারিক ও রাজনৈতিক কারণে এই যুবক বেশ আলোচিত-সমালোচিত মুখ। এক সময় নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ’র অনুসারী হিসেবে দাপট দেখিয়ে চলা মারুফ হঠাৎ করে রাজনৈতিক শিবির পরিবর্তন করে নয়া মেয়র খোকন সেরনিয়াবাতের পক্ষ নেন। এবং সদ্য অনুষ্ঠিত সিটি নির্বাচনে তার পক্ষাবলম্বন করে প্রচারণা এবং নিজেও কাউন্সিলর প্রার্থী হন। অবশ্য নেতা খোকন সেরনিয়াবাত নির্বাচিত হলেও তিনি প্রতিদ্বন্দ্বী সাদেকপন্থী মজিবর রহমানের কাছে শোচনীয় পরাজিত হন। একই ব্যক্তির সাথে দুইবার প্রতিদ্বন্দ্বীতা করে রাজনৈতিক সর্বশক্তি প্রয়োগের পরেও পরাজয়ের কারণে বেশ কিছুদিন ধরে মারুফ আহমেদ জিয়া আলোচনায় ছিলেন। এবং পরাজিত হলেও তার দাপট আরও একগুণ বেড়ে যায় বলে স্থানীদের অভিমত। প্রশ্ন সেখানেই হঠাৎ করে একজন প্রকৌশলীকে প্রহার করার পিছনে রাজনৈতিক শক্তি ও সমর্থন তাকে এই সাহসের দ্বারপ্রান্তে নিয়েছে বলে এমনটি বরিশালের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষপট সে কথাই মনে করিয়ে দেয় কি? কারণ ক্ষমতার তারতম্য বিবেচনায় ভাতিজা সাদিক আব্দুল্লাহ অপেক্ষা চাচা খোকন সেরনিয়াবাতের আধিপত্য সৃষ্টি হওয়ায় কেউ কেউ এলাকাভিত্তিক নেতৃত্ব দেওয়ার আড়ালে সন্ত্রাসী জগতের ডন হিসেবে উত্থ্যানের অভিযোগ উঠেছে, যা কিনা সিভিল প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী অবগত।
রাজনৈতিক বোদ্ধা ও সমাজ বিশ্লেষকদের ধারনা, জিয়ার পরিবার বরাবরই সব সরকারের আমলে দাপটের সাথেই আছেন বলে নানান ঘটনায় প্রতীয়মাণ হয়েছে। বিশেষ করে আওয়ামী লীগের গত ১৫ বছর একটানা শাসনামলে জিয়ার দাপট ছিলো সমান্তরাল। আওয়ামী লীগের ক্ষমতার প্রথমভাগে তার বোন সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর আয়েশা তৌহিদ লুনা প্রয়াত সিটি মেয়র শওকত হোসেন হিরনের সমর্থনপুষ্ট হওয়ায় তৎসময় জিয়া যুবলীগ নেতা হিসেবে বাংলা বাজার টু আলেকান্দা এলাকায় নিজের শক্তিকে সমীহের জায়গায় নিয়ে যায়।
সূত্র জানায়, বিএনপি আমলেও জিয়া ছিলেন অদম্য। একদিকে নগর বিএনপি’র সাবেক সভাপতি ও সিটি মেয়র মজিবর রহমান সরোয়ারের সাথে কাউন্সিলর লুনার দহরম-মহরম এবং বড় ভাই জাতীয় পার্টির একাংশের আহ্বায়ক বশির আহমেদ ঝুনুর অতীত প্রভাবকে ব্যবহার করে জিয়ার শক্তির উত্থ্যান ঘটে। যদিও জিয়া আওয়ামী লীগ রাজনীতির সাথে আগে থেকে জড়িত।
অভিযোগের সুরে জানা গেলে, সময়ের আবর্তে রাজনীতির চাকা ঘুরে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলে জিয়া রাজনীতিতে আড়মোড়া দিয়ে ওঠে। এ সময় কাউন্সিলর লুনাও নিজের ক্ষমতা ধরে রাখতে ভোল পাল্টে প্রথমে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা এবং স্থানীয়ভাবে দলের জেলার কর্ণধর আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ’র প্রয়াতপত্নী বেগম সাহানারা আব্দুল্লাহ’র হাতে ফুল দিয়ে ক্ষমতাসীন দলের আশ্রয় নেন। পরবর্তীতে আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহর ক্ষমতা খর্ব এবং প্রয়াত নেতা শওকত হোসেন হিরন মেয়র হিসেবে বরিশালে দাপটশীল বলয় তৈরী করলে কাউন্সিলর লুনা হয়ে যান এই নেতার প্রিয়ভাজন। পক্ষান্তরে জিয়া হাসনাত সমর্থিত যুবলীগ নেতা হওয়া সত্বেও বোন লুনার বদৌলতে হিরনের নেক নজরে থেকে টেন্ডারবাজি থেকে শুরু করে এলাকায় আধিপত্য বিস্তার করে চলতেন। আকস্মিক সদর আসনের সংসদ সদস্য থাকাবস্থায় শওকত হোসেনের মৃত্যু ঘটলে এই ভাই-বোন ক্ষমতার রাজনীতি থেকে কিছুটা চুপসে যান। তাছাড়া পটুয়াখালীর পৌর কাউন্সিলর লুনার স্বামী তৌহিদুল ইসলাম তৌহিদ মৃত্যুবরণ করলে আরও ঘরমুখো হয়ে পড়েন বোন লুনা। কিন্তু সময় বেশি দিন লাগেনি, অল্প কয়েক দিনের ব্যবধানেই আবারও জিয়া কাকতালীয়ভাবে দাপটের রাজনীতির স্বাদ পেয়েছেন বলে কোন কোন মহল দাবি করছে।
বেশ কয়েকটি সূত্রের দাবি, সেরনিয়াবাত সাদেক আব্দুল্লাহ বরিশাল রাজনীতিতে পদার্পন এবং ২০১৮ সালে অনুুষ্ঠিত সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দলীয় মেয়র নির্বাচিত হলে নয়া এই রাজনীতিবিদের সাথে বয়সের মিল থাকায় দু’জনার ভিতর ভিষণ ঘনিষ্ট সম্পর্ক গড়ে ওঠে। হয়ে যান সাদিকপন্থী শক্তিধর যুবলীগ নেতা। পেয়ে যান নগর যুবলীগের সদস্য পদ। বরাবরই ক্ষমতার বলয়ের মধ্যে থাকা জিয়া অনুধাবন করেন সাদেক আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন বঞ্চিত এবং তার চাচা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ইচ্ছায় বরিশালের দলীয় মেয়র প্রার্থী হওয়ায় হাসনাত পরিবারের ক্ষমতা হ্রাস পেয়েছে।
আবার কেউ বলছে, মজিবর রহমানের ছোট ভাই আরেক যুবলীগ নেতা নামও অভিন্ন জিয়াউর রহমান জিয়া রাজনৈতিক কৌশলের দরজা দিয়ে মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ’র খুব কাছাকাছি চলে যাওয়ায় মারুফ অহমেদ জিয়া বিষয়টি ভালো চোখে নেয়নি, কমিয়ে দেয় মেয়রের কালীবাড়ির বাসভবনে যাতায়াত। হাল সময়ে হঠাৎ করে তিনিও ভোল পাল্টে হয়ে যান খোকন সেরনিয়াবাত ঘরানার রাজনীতিবিদ। সেই সাথে তার বোন লুনাও যুক্ত হয় একই শিবিরে।
অনুসন্ধানে আভাস মেলে যে, অবশ্য এ ক্ষেত্রে মূল টার্গেট ছিলো অথবা ভেবেছিলো খোকন সেরনিয়াবাদের ক্ষমতার প্রভাব অথবা সমর্থন নিয়ে হাসনাত-সাদিক সমর্থিত মজিবর রহমানকে পরাজিত করা এবার হয়তো সহজতর হবে। রাজনীতিতে একই ঘরনার লোক হলেও ১১ নম্বর ওয়ার্ড কেন্দ্রিক আধিপত্য নিয়ে মজিবর রহমানের সাথে মারুফ আহমেদ জিয়ার পরিবারের শীতল বিরোধ চলে আসছিলো। শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে তাদের মধ্যে লড়াই চলছে।
এর আগে ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত সিটি নির্বাচনে মজিবর রহমানের সাথে লড়াই করে পরাজয় অর্থাৎ কাউন্সিলর হওয়ার ব্যর্থতার পিছনে সাদিকের অতটা সমর্থন পায়নি বিধায় মান-অভিমানের পাল্লাটা সেখান থেকে ভারী হতে থাকে এবং সুযোগের অপেক্ষায় ছিলেন বিকল্প শক্তিধর নেতার আবির্ভাবে, যেখানে আশ্রয়-সমর্থন পাওয়া যায়।
তার ঘনিষ্ট একটি সূত্রের দাবি, মারুফ আহমেদ জিয়া একাবার মনস্থিরও করেছিলেন বরিশাল সদর আসনের সাংসদ ও পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক শামীমের স্রোতধারায় নিজেকে সামিল করবেন। এ ক্ষেত্রে কৌশল হচ্ছে, মন্ত্রীর সমর্থন নিয়ে কাউন্সিলর মজিবর রহমানের সাথে ক্ষমতার টক্কর জমিয়ে তোলা। কিন্তু মাঠের রাজনীতিতে পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী অপেক্ষা মেয়র সাদিক অনেক দুর্বল এবং কোন টেন্ডারবাজি বা ক্যাডারভিত্তিক রাজনীতি মনস্ক না হওয়ায় জাহিদ ফারুক শামীমের দরজায় যাই যাই করে আর যাওয়া হয়নি। খোকন সেরনিয়াবাত সিটি নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার পর জাহিদ ফারুক শামীমের সাথে একট্টা হয়ে মাঠে নামনে জিয়া কৌশলে এই প্রতিমন্ত্রীর নজরে নিজেকে নিয়ে আসে এবং খোকন সেরনিয়াবাতের সমর্থনে নতুন করে রাজনৈতিক মাঠ গরমের সুযোগ নিয়ে নিজের শক্তিমাত্রা প্রদর্শনের সুযোগ খুঁজছিলেন। কিন্তু তার বয়স অপেক্ষা যুবলীগ নেতা ওয়াসিম দেওয়ান, ছাত্রলীগ নেতা জসিম উদ্দিন ও বিএম কলেজের সাবেক ভিপি মঈন তুষার নয়া মেয়র খোকন সেরনিয়াবাতের ঘনিষ্টতর হওয়ার কারণে প্রাধান্য দেওয়ায় জিয়া নিজেকে এই শিবিরে নিজেকে সেভাবে উপস্থাপন করতে পারছিলেন না। যতটা না পেরেছিলেন সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহর ক্ষেত্রে। খোকন সেরনিয়াবাত দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার পর বরিশাল আওয়ামী লীগ দ্বি-খন্ডিত হয়ে সাদেক আব্দুল্লাহকে চেপে ধরতে তার নিয়ন্ত্রণে থাকা লঞ্চঘাট, বাস টার্মিনালসহ বিভিন্ন স্থাপনা দখল এবং প্রশাসনের মধ্যে প্রভাব সৃষ্টি হওয়ায় জিয়ার হয়তো ধারনা ছিলো গণপূর্ত অধিদপ্তরে অঘটন ঘটিয়ে ফায়দা লোটার পাশাপাশি নিজের শক্তি-সমর্থ জানান দিতে।
গত ১০ আগস্ট সকালে গণপূর্ত অধিদপ্তরের ঘটনায় প্রকাশ পায় তিনি এই দপ্তরে দীর্ঘদিন যাবৎ টেন্ডারবাজি করে আসছিলেন। ওই দপ্তরে ঘুরে এ ধরনের বেশ কয়েকটি অভিযোগ জানাও গেল। তবে প্রত্যক্ষদর্শী দুইজন ব্যক্তির বর্ণনায় জিয়া দাপ্তরিক কাজ বাগিয়ে নিতে আগের যতনা পেশি শক্তি প্রয়োগ করতেন তার চেয়ে বেশি মেয়র সাদিক আব্দুল্লাহ’র অনুসারী হিসেবে নিজের প্রভাব উপস্থাপন করতেন। বরিশালের বর্তমান হালচাল বলে দেয় যে, খোকন সেরনিয়াবাতের বিজয় নয়, প্রার্থী হওয়ার খবর ছড়িয়ে পরার পর থেকেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী থেকে শুরু করে প্রশাসন ও বে-সরকারি সকল দপ্তরে মেয়র সাদিক আব্দুল্লাহ’র যতটুকু প্রভাব ছিলো তাও যেন শেষ হয়ে নয়া মেয়রের সমর্থনে রাবনের গীত গাইছে। সেই সুযোগই নিতে চেয়েছিলেন যুবলীগ নেতা জিয়া। নচেৎ শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজের একটি টেন্ডারের স্টিমেটের কাগজ দ্বিতীয় দফা আনতে গিয়ে রাজনৈতিক বল প্রয়োগ করার প্রক্রিয়ায় উপ-সহকারী প্রকৌশলী ওবায়দুল হকের সাথে বাকবিতণ্ডা থেকে একপর্যায় দুর্দান্ত সাহস দেখাতে গিয়ে দুই সহযোগী নিয়ে তাকে প্রহার করে।
নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র জানায়, গণপূর্ত অধিদপ্তরের এই ঘটনায় প্রশাসনের এই উন্নয়নমূলক এই সেক্টরের বরিশাল টু ঢাকার কর্মকর্তারা ক্ষুব্ধ হন। এবং তাদের ভিতর উত্তেজনার পারদ ক্রমেই বাড়ছিল। এমন খবর নয়া মেয়র খোকন সেরনিয়াবাত ও পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক শামীম যে কোনো মাধ্যমে অবগত হন। ঘটনাটি যেদিন ঘটে সেদিন উভয় নেতা বরিশালেই ছিলেন এবং গণপূর্ত অধিদপ্তরের ঘটনা পর্যবেক্ষণ করছিলেন। কিন্তু দুই নেতার কেউই জিয়াকে তলব করে সতর্কবার্তা বা সংযত হওয়ার আদেশ বা নির্দেশ কোনটাই দেয়নি। কারণ তারা চায়নি এই ঘটনার সাথে সম্পৃক্ত হয়ে মেয়র সাদিক আব্দুল্লাহর ন্যায় প্রসাশনের সাথে দূরত্ব তৈরী হোক। ফলশ্রুতিতে তাদের নীরবতায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীও আঁচ করে নেয় জিয়া যুবলীগ নেতা হলেও বর্তমান বরিশালের নিয়ন্ত্রক মন্ত্রী বা মেয়র কেউই জিয়ার কর্মকাণ্ডের পক্ষে নেই। অথবা তার দ্বায়ভার নিতে নারাজ।
গণপূর্ত অধিদপ্তরের একটি সূত্র বলছে, তারাও দুই নেতার মনভাব আমলে এনে এই যুবলীগ নেতার বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নেন। এবং মিডিয়ার কাছে তারা শক্ত স্টেটমেন্ট বা মন্তব্য রাখেন। যার প্রমাণ এ ঘটনায় গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী কামরুল হাসান সাংবাদিকদের জানান, বিষয়টি নিয়ে তারা অফিসিয়ালি আলোচনা করেছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতিক্রমে এই ঘটনায় মামলা করা উদ্যোগ নিয়েছে। বিষয়টি আইনীভাবে মোকাবিলা করবে বলে স্পষ্ট ইঙ্গিত দেন। শেষাংশে এসে ঘটলও সেটাই। লাঞ্ছিত ওই প্রকৌশলী পরদিন গত শুক্রবার রাতে মারুফ আহমেদ জিয়াকে প্রধান ও অপর দুই সহযোগী তিতাস ও আজদকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেন।
আবার অপর একটি সূত্রের দাবি, এই মামলা দায়েরের ক্ষেত্রে নয়া মেয়র ও পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রীর প্রথমে পরোক্ষ ইঙ্গিত থাকলেও এখন আসামীদের যেন না ধরা হয়, সে বিষয়ে কোতয়ালি মডেল থানা পুলিশকে দিক নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ওই সূত্রের অভিযোগ এই নাটের ঘুড়ি উড়িয়েছেন বোন সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর আয়েশা তৌহিদ লুনা। এই নারী নেত্রী ফের নতুন করে রাজনীতিতে সক্রিয় হয়েছেন এবং দুই নেতার আশির্বাদে পুনরায় কাউন্সিলর নির্বাচিত হতে সহায়ক হন। লুনার সাথে নয়া মেয়র খোকন সেরনিয়াবাতপত্নী লুনা আব্দুল্লাহর নামের মিল থাকায় ইতিমধ্যে উভয়ের ভিতর বিশেষ ঘনিষ্টতা গড়ে উঠায় সেখান থেকেই ভাই জিয়ার অনুকূলে সুপারিশ রেখে এ যাত্রা রক্ষার তাগিদ রাখেন। সূত্রের দেয়া এ তথ্য কতখানি সত্য তার বাস্তবিক প্রমাণ পাওয়া যায়নি। যদিও দায়িত্বশীল দুই নেতা অদ্যবধি দলীয় নেতা জিয়াকে নিয়ে কোন আনুষ্ঠনিক মন্তব্য প্রকাশ করেননি। এদিকে থানা পুলিশ ঘটনার চার দিন অতিবাহিত হলেও মারুফ আহমেদ জিয়ার টুটি ছুতে পারেনি, আটক হয়নি অপর দুইজন।
মডেল কোতয়ালি থানার ওসি আনোয়ার হোসেনের দাবি, আসামিদের আটকে জোরতর চেষ্টা চলছে। কিন্তু পুলিশের সার্বিক ভূমিকা সন্দেহজনক হওয়ায় ওই সূত্রের দাবি বা অভিযোগ একেবারে যে অমূলক নয়, তা নিয়ে নগরীতে কম-বেশি নানা মহলে আলোচনা শোনা যায়। যদি বাস্তবিক অর্থে রাজনীতির অন্দরমহলে সেটি যদি ঘটে থাকে তাহলে তা শুভ ইঙ্গিত বহন করেনা বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তারা অতিত উদাহরণকে সামনে টেনে এনে বলেন, প্রয়াত নেতা শওকত হোসেন হিরন সিটি কর্পোরেশনের মেয়র থাকাবস্থার শেষাংশে এসে তার অনুসারীদের সামাল দিতে পারেননি। যে কারণে বিএম কলেজের নতুন অধ্যক্ষ শংকর চন্দ্রকে দায়িত্ব গ্রহণে তার অনুসারীরা বাঁধা দিতে প্রকাশ্য লাঞ্ছিত করায় মেয়র হিরন তুমুল বিতর্কের মাঝে পড়েছিলেন। বিভিন্ন দপ্তরে তার অনুসারীদের দাপট বিপুল জনপ্রিয় এই নেতার প্রতি নগর উন্নয়নমূলক কাজের জন্য মানুষের বিশেষ দুর্বলতা থাকলেও চাপা ক্ষোভ ছিলো। যার বহিঃপ্রকাশ ঘটে ২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত সিটি মেয়র নির্বাচনে বিএনপির দুর্বল প্রার্থী প্রয়াত নেতা আহসান হাবিব কামালের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করে বিষয়ীভূত পরাজয়।
আবার সাদেক আব্দুল্লাহ রাজনীতির শুরুতে জনপ্রিয়তা অর্জন করলেও মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি তার ইমেজ ধরে রাখতে পারেননি। কয়েকজন খলিফা দ্বারা বেষ্টিত তরুণ এই নেতার কাছে নগরবাসী যে আশার আলো দেখছিলো, তা ক্রমেই নিভে যায় তার অনুসারীদের এলাকাভিত্তিক দাপট ও একনায়কতন্ত্র সৃষ্টির কারণে। এক্ষেত্রে তার অনভিজ্ঞ রাজনীতিকে দায়ী বলে মনে করে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষদের অভিমত হচ্ছে, মেয়র হিসেবে সাদেক আব্দুল্লাহ সাধারণ মানুষের কাছ থেকে যেমন দূরে সরে গেছে, তেমনি প্রশাসনের ভিতরেও তার ইমেজ দ্বন্দ্ব-সংঘাতে ভাটা পড়ে। এ কারণেই কপাল খুলে যায় খোকন সেরনিয়াবাতের। প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা নিজেই সম্পর্কে ফুপাতো ভাই খোকন সেরনিয়াবাতকে বরিশালের রাজনীতির নেতৃত্বে অগ্রভাগে নিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে সিটি নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন দিয়ে মেয়র নির্বাচিত করে স্থানীয় রাজনীতির পটপরিবর্তনের একটি ইঙ্গিত দিয়েছেন বলে মনে করা হচ্ছে। দলীয় বা সামাজিক অনুষ্ঠানে খোকন সেরনিয়াবাতের বক্তব্য ও কথাবার্তায় আঁচ করা যায় তিনি অতীতের নেতৃত্বের ন্যায় নিজেকে বিলীন করে দিতে নারাজ। বরং নতুন কিছু দিতে চায় বঞ্চিত বরিশালবাসীকে। সেই স্বপ্ন ফিকে হয়ে যেতে পারে যদি কিনা মারুফ আহমেদ জিয়াদের ন্যায় ডনরূপি রাজনীতিবিদদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়ে এলাকাভিত্তিক সন্ত্রাস-দুর্নীতির বটবৃক্ষ রোপন করার সুযোগ দেন। এমন শঙ্কার পাশাপাশি চাচা-ভাতিজার লড়াই কোথায় গিয়ে পৌঁছায় তা অনুধাবনে আনতে নেতা-কর্মীদের বিশাল একটি অংশ অনেকে হঠাৎ করে নীরব অবস্থান নেওয়ায় বরিশালের ক্ষমতাসীন রাজনীতিতে স্থবিরতা বিরাজ করছে।
এমন বিবেচনা জিয়ার ভেতর না থাকায় তিনি যে কাণ্ড ঘটালেন তাতে নাম ফুটেছে ঠিকই কিন্তু তার দিকে নগরবাসীর নজর পড়েছে আগামীর আলামত অনুধাবনে। ফলে বরিশালের ক্ষমতাসীন দলের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট কোন দিকে ধাবিত হচ্ছে, সেই প্রশ্নে জিয়া এখন প্রতীকী উদাহরণ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছেন।’

০৫ নভেম্বর, ২০২৫ ২২:১৬
ঢাকার বাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম ১০০ টাকা ছাড়িয়েছে উল্লেখ করে বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির (বাংলাদেশ ন্যাপ) চেয়ারম্যান জেবেল রহমান গানি ও মহাসচিব এম. গোলাম মোস্তফা ভুইয়া বলেছেন, চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কমে যাওয়ায় বাজারে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে যা খুবই উদ্বেগজনক।
গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তারা পেঁয়াজের বাজারে অস্থিরতা নিয়ন্ত্রণে জরুরি কার্যকর পদক্ষেপ নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। তারা বলেন, ‘পেঁয়াজের মূল্য হঠাৎ বৃদ্ধি পাওয়ায় ভোক্তাদের দুশ্চিন্তা কমছে না। কৃষক ও জেলা পর্যায়ের আড়ত থেকে যথেষ্ট সরবরাহ আসছে না। ফলে বাজারে প্রতিদিনের চাহিদা মেটাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। ভারত থেকে আমদানি কমে যাওয়ার পর স্থানীয় বাজারের ওপর চাপ বেড়েছে, অথচ কৃষকের ঘরে যে পরিমাণ মজুত আছে তা বাজারের চাহিদা মেটানোর মতো নয়। এই ঘাটতির কারণে পাইকারি পর্যায়ে মূল্য বৃদ্ধি পাচ্ছে, স্বাভাবিকভাবেই খুচরা বাজারেও অস্থিরতা তৈরি করছে।’
দলটির শীর্ষ এই দুই নেতা বলেন, জনগণ চায় স্থিতিশীল বাজার। কিন্তু বাজারে পণ্যই যদি পর্যাপ্ত না থাকে, তাহলে দাম কীভাবে স্থিতিশীল থাকবে? এর দায় শুধু পাইকার বা খুচরা ব্যবসায়ীদের নয়, মূল সমস্যা সরবরাহে।
তারা বলেন, ‘সরবরাহ কম থাকার সুযোগ নিয়ে বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে আমদানির পাঁয়তারা করছে বাজার সিন্ডিকেট। আড়তদার, কমিশন এজেন্ট ও দাদন ব্যবসায়ীদের কারসাজিতেই মূল্য বৃদ্ধি করা হচ্ছে। সরকার যদি বাজার নিয়ন্ত্রণে না নামে, সাধারণ মানুষের কষ্ট আরও বৃদ্ধি পাবে।’
ঢাকার বাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম ১০০ টাকা ছাড়িয়েছে উল্লেখ করে বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির (বাংলাদেশ ন্যাপ) চেয়ারম্যান জেবেল রহমান গানি ও মহাসচিব এম. গোলাম মোস্তফা ভুইয়া বলেছেন, চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কমে যাওয়ায় বাজারে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে যা খুবই উদ্বেগজনক।
গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তারা পেঁয়াজের বাজারে অস্থিরতা নিয়ন্ত্রণে জরুরি কার্যকর পদক্ষেপ নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। তারা বলেন, ‘পেঁয়াজের মূল্য হঠাৎ বৃদ্ধি পাওয়ায় ভোক্তাদের দুশ্চিন্তা কমছে না। কৃষক ও জেলা পর্যায়ের আড়ত থেকে যথেষ্ট সরবরাহ আসছে না। ফলে বাজারে প্রতিদিনের চাহিদা মেটাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। ভারত থেকে আমদানি কমে যাওয়ার পর স্থানীয় বাজারের ওপর চাপ বেড়েছে, অথচ কৃষকের ঘরে যে পরিমাণ মজুত আছে তা বাজারের চাহিদা মেটানোর মতো নয়। এই ঘাটতির কারণে পাইকারি পর্যায়ে মূল্য বৃদ্ধি পাচ্ছে, স্বাভাবিকভাবেই খুচরা বাজারেও অস্থিরতা তৈরি করছে।’
দলটির শীর্ষ এই দুই নেতা বলেন, জনগণ চায় স্থিতিশীল বাজার। কিন্তু বাজারে পণ্যই যদি পর্যাপ্ত না থাকে, তাহলে দাম কীভাবে স্থিতিশীল থাকবে? এর দায় শুধু পাইকার বা খুচরা ব্যবসায়ীদের নয়, মূল সমস্যা সরবরাহে।
তারা বলেন, ‘সরবরাহ কম থাকার সুযোগ নিয়ে বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে আমদানির পাঁয়তারা করছে বাজার সিন্ডিকেট। আড়তদার, কমিশন এজেন্ট ও দাদন ব্যবসায়ীদের কারসাজিতেই মূল্য বৃদ্ধি করা হচ্ছে। সরকার যদি বাজার নিয়ন্ত্রণে না নামে, সাধারণ মানুষের কষ্ট আরও বৃদ্ধি পাবে।’

০১ নভেম্বর, ২০২৫ ১৭:১২
ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশের শ্রীকাকুলামে নবনির্মিত একটি মন্দিরে পদদলিত হয় ১২ জন নিহত হয়েছেন। এদের বেশিরভাগ নারী ও শিশু। শনিবার (১ নভেম্বর) সকালে এ মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটে।
হিন্দু সম্প্রদায়ের পবিত্র দিন একাদশী উপলক্ষ্যে কাশিবুগ্গার শ্রী ভেঙ্কটেশ্বর স্বামী মন্দিরে গিয়েছিলেন সাধারণ মানুষ। অতিরিক্ত ভিড়ে সেখানে পদদলনের ঘটনা ঘটে। খবর এনডিটিভির।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এ ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করে জানিয়েছেন, প্রত্যেক নিহতের পরিবারকে দুই লাখ রুপি সহায়তা দেওয়া হবে। এছাড়া আহতরা চিকিৎসার জন্য ৫০ হাজার রুপি পাবেন।
সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশিত ভিডিওতে দেখা গেছে, হাজার হাজার মানুষে ভিড়ে মন্দিরটিতে দম বন্ধ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। তখন নিজেদের বাঁচানোর চেষ্টা করেন নারীরা। এ সময় তাদের হাতে পূজার ঝুড়ি ছিল।
পরবর্তীতে ভিড় কমার পর দেখা যায় অনেকের মরদেহ পড়ে আছে। এ ঘটনায় অনেক মানুষ আহত হয়েছেন। তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।
পরিস্থিতি এতটাই খারাপ ছিল যে কেউ কাউকে উদ্ধার করতে পারছিলেন না। পরবর্তীতে সেখানে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
‘মিনি ত্রিরুপাতি’ নামে পরিচিত এ মন্দিরটি সরকারি ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত হয় না বলে জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি।
একাদশী উপলক্ষ্যে হাজার হাজার মানুষের সমাগম হবে জানা সত্ত্বেও মন্দির কর্তৃপক্ষ প্রশাসনকে কিছু জানায়নি। যেখানে দুর্ঘটনা ঘটেছে সেখানে নির্মাণ কাজ চলছিল।
অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রবাবু নাইড়ু আহতদের যথাযথ চিকিৎসা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। উপমুখ্যমন্ত্রী পবন কল্যাণ জানিয়েছেন, এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করা হবে।
ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশের শ্রীকাকুলামে নবনির্মিত একটি মন্দিরে পদদলিত হয় ১২ জন নিহত হয়েছেন। এদের বেশিরভাগ নারী ও শিশু। শনিবার (১ নভেম্বর) সকালে এ মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটে।
হিন্দু সম্প্রদায়ের পবিত্র দিন একাদশী উপলক্ষ্যে কাশিবুগ্গার শ্রী ভেঙ্কটেশ্বর স্বামী মন্দিরে গিয়েছিলেন সাধারণ মানুষ। অতিরিক্ত ভিড়ে সেখানে পদদলনের ঘটনা ঘটে। খবর এনডিটিভির।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এ ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করে জানিয়েছেন, প্রত্যেক নিহতের পরিবারকে দুই লাখ রুপি সহায়তা দেওয়া হবে। এছাড়া আহতরা চিকিৎসার জন্য ৫০ হাজার রুপি পাবেন।
সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশিত ভিডিওতে দেখা গেছে, হাজার হাজার মানুষে ভিড়ে মন্দিরটিতে দম বন্ধ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। তখন নিজেদের বাঁচানোর চেষ্টা করেন নারীরা। এ সময় তাদের হাতে পূজার ঝুড়ি ছিল।
পরবর্তীতে ভিড় কমার পর দেখা যায় অনেকের মরদেহ পড়ে আছে। এ ঘটনায় অনেক মানুষ আহত হয়েছেন। তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।
পরিস্থিতি এতটাই খারাপ ছিল যে কেউ কাউকে উদ্ধার করতে পারছিলেন না। পরবর্তীতে সেখানে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
‘মিনি ত্রিরুপাতি’ নামে পরিচিত এ মন্দিরটি সরকারি ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত হয় না বলে জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি।
একাদশী উপলক্ষ্যে হাজার হাজার মানুষের সমাগম হবে জানা সত্ত্বেও মন্দির কর্তৃপক্ষ প্রশাসনকে কিছু জানায়নি। যেখানে দুর্ঘটনা ঘটেছে সেখানে নির্মাণ কাজ চলছিল।
অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রবাবু নাইড়ু আহতদের যথাযথ চিকিৎসা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। উপমুখ্যমন্ত্রী পবন কল্যাণ জানিয়েছেন, এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করা হবে।

৩১ অক্টোবর, ২০২৫ ১৭:২৮
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত ফ্যাসিস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দপ্তরের সাবেক পিয়ন জাহাঙ্গীর আলম ওরফে পানি জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে ১০০ কোটি টাকার অর্থপাচারের অভিযোগে মামলা করেছে সিআইডি। শুক্রবার সিআইডি থেকে এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সিআইডির ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিটের প্রাথমিক অনুসন্ধানে উল্লেখযোগ্য প্রমাণাদি পাওয়ায় মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ (সংশোধনী ২০১৫)-এর ধারা ৪(২)(৪) অনুযায়ী নোয়াখালীর চাটখিল থানায় মামলাটি দায়ের করা হয়।
অনুসন্ধানে জানা যায়, নোয়াখালীর চাটখিল উপজেলার এক নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান জাহাঙ্গীর আলম জাতীয় সংসদ সচিবালয়ে দৈনিক মজুরিভিত্তিক কর্মচারী হিসেবে কাজ করতেন। পরে ২০০৯ সালে আওয়ামী সরকার গঠনের পর তিনি অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে স্বল্প সময়ের জন্য ‘ব্যক্তিগত সহকারী’ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এই দায়িত্বই তাকে আর্থিকভাবে লাভবান করেছে মর্মে প্রাথমিক অনুসন্ধানে উঠে এসেছে।
২০১০ সালে তিনি ‘স্কাই রি অ্যারেঞ্জ লিমিটেড’ নামে একটি কোম্পানি গঠন করে বিকাশের ডিস্ট্রিবিউশন ব্যবসা নেন। কিন্তু এর আড়ালে তিনি অসংখ্য সন্দেহজনক ব্যাংকিং কার্যক্রম করেন। কোম্পানির নামে একাধিক ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অস্বাভাবিক অঙ্কের টাকা জমা হয়, যার বৈধ উৎস পাওয়া যায়নি ও ব্যবসার সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানটির অ্যাকাউন্টগুলোতে ২০১০ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে বিভিন্ন ব্যাংকে মোট ৫৬৫ কোটিরও বেশি টাকা লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য অংশ নগদে জমা হয়েছে দেশের নানা স্থান থেকে। এসব অর্থের উৎস অজানা এবং হুন্ডি ও মানিলন্ডারিং কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত বলে প্রাথমিক প্রমাণ মেলে।
অনুসন্ধানে আরও উঠে আসে, জাহাঙ্গীর আলম তার স্ত্রী কামরুন নাহার ও ভাই মনির হোসেনের সহায়তায় দীর্ঘদিন ধরে অবৈধ অর্থ লেনদেন করতেন। জাহাঙ্গীর আলম ও তার স্ত্রী ২০২৪ সালের জুন মাসে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান এবং বর্তমানে ভার্জিনিয়ায় অবস্থান করছেন। বিদেশে তাদের বিনিয়োগ বা সম্পদ ক্রয়ের কোনো সরকারি অনুমোদন না পাওয়া গেলেও তারা যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমিয়েছেন বলে প্রাথমিক অনুসন্ধানে প্রমাণ মেলে।
অনুসন্ধানে প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে- জাহাঙ্গীর আলম, তার স্ত্রী কামরুন নাহার, ভাই মনির হোসেন এবং প্রতিষ্ঠান স্কাই রি অ্যারেঞ্জ লিমিটেড যৌথভাবে ২০১০ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে প্রায় ১০০ কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছেন।
অপরাধের পূর্ণাঙ্গ তথ্য উদঘাটন, অপরাপর সদস্যদের শনাক্ত ও গ্রেফতার করার স্বার্থে সিআইডির তদন্ত ও অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে জানানো হয় বিজ্ঞপ্তিতে।’
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত ফ্যাসিস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দপ্তরের সাবেক পিয়ন জাহাঙ্গীর আলম ওরফে পানি জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে ১০০ কোটি টাকার অর্থপাচারের অভিযোগে মামলা করেছে সিআইডি। শুক্রবার সিআইডি থেকে এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সিআইডির ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিটের প্রাথমিক অনুসন্ধানে উল্লেখযোগ্য প্রমাণাদি পাওয়ায় মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ (সংশোধনী ২০১৫)-এর ধারা ৪(২)(৪) অনুযায়ী নোয়াখালীর চাটখিল থানায় মামলাটি দায়ের করা হয়।
অনুসন্ধানে জানা যায়, নোয়াখালীর চাটখিল উপজেলার এক নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান জাহাঙ্গীর আলম জাতীয় সংসদ সচিবালয়ে দৈনিক মজুরিভিত্তিক কর্মচারী হিসেবে কাজ করতেন। পরে ২০০৯ সালে আওয়ামী সরকার গঠনের পর তিনি অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে স্বল্প সময়ের জন্য ‘ব্যক্তিগত সহকারী’ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এই দায়িত্বই তাকে আর্থিকভাবে লাভবান করেছে মর্মে প্রাথমিক অনুসন্ধানে উঠে এসেছে।
২০১০ সালে তিনি ‘স্কাই রি অ্যারেঞ্জ লিমিটেড’ নামে একটি কোম্পানি গঠন করে বিকাশের ডিস্ট্রিবিউশন ব্যবসা নেন। কিন্তু এর আড়ালে তিনি অসংখ্য সন্দেহজনক ব্যাংকিং কার্যক্রম করেন। কোম্পানির নামে একাধিক ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অস্বাভাবিক অঙ্কের টাকা জমা হয়, যার বৈধ উৎস পাওয়া যায়নি ও ব্যবসার সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানটির অ্যাকাউন্টগুলোতে ২০১০ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে বিভিন্ন ব্যাংকে মোট ৫৬৫ কোটিরও বেশি টাকা লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য অংশ নগদে জমা হয়েছে দেশের নানা স্থান থেকে। এসব অর্থের উৎস অজানা এবং হুন্ডি ও মানিলন্ডারিং কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত বলে প্রাথমিক প্রমাণ মেলে।
অনুসন্ধানে আরও উঠে আসে, জাহাঙ্গীর আলম তার স্ত্রী কামরুন নাহার ও ভাই মনির হোসেনের সহায়তায় দীর্ঘদিন ধরে অবৈধ অর্থ লেনদেন করতেন। জাহাঙ্গীর আলম ও তার স্ত্রী ২০২৪ সালের জুন মাসে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান এবং বর্তমানে ভার্জিনিয়ায় অবস্থান করছেন। বিদেশে তাদের বিনিয়োগ বা সম্পদ ক্রয়ের কোনো সরকারি অনুমোদন না পাওয়া গেলেও তারা যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমিয়েছেন বলে প্রাথমিক অনুসন্ধানে প্রমাণ মেলে।
অনুসন্ধানে প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে- জাহাঙ্গীর আলম, তার স্ত্রী কামরুন নাহার, ভাই মনির হোসেন এবং প্রতিষ্ঠান স্কাই রি অ্যারেঞ্জ লিমিটেড যৌথভাবে ২০১০ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে প্রায় ১০০ কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছেন।
অপরাধের পূর্ণাঙ্গ তথ্য উদঘাটন, অপরাপর সদস্যদের শনাক্ত ও গ্রেফতার করার স্বার্থে সিআইডির তদন্ত ও অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে জানানো হয় বিজ্ঞপ্তিতে।’

Google AdSense
This is a demo ad. Your live ads will be displayed here once AdSense is properly configured.
Google AdSense
This is a demo ad. Your live ads will be displayed here once AdSense is properly configured.