বিশেষ সংবাদ

বরিশালে ক্ষমতাসীন দলের প্রেক্ষাপট পরিবর্তনের আভাস, যুবলীগ নেতা জিয়ার সাহসের নেপথ্য শক্তি কি?

বরিশালটাইমস রিপোর্ট

২৯ মে, ২০২৫ ১০:৫৩

প্রিন্ট এন্ড সেভ

বরিশালে ক্ষমতাসীন দলের প্রেক্ষাপট পরিবর্তনের আভাস, যুবলীগ নেতা জিয়ার সাহসের নেপথ্য শক্তি কি?

বরিশাল মহানগর যুবলীগ নেতা মারুফ আহমেদ জিয়া একজন সরকারি কর্মকর্তাকে পিটিয়ে বীরদর্পে সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে বেরিয়ে যাওয়ার ঘটনায় সাহসিকতার নেপথ্য শক্তি নিয়ে কি ইঙ্গিত দিলেন তা নিয়ে স্থানীয় রাজনৈতিক অঙ্গন ও প্রগতিশীল ধ্যান-ধারনার মানুষের মধ্যে প্রশ্ন এবং উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে। ঘটনাটি গত ১০ আগস্ট বৃহস্পতিবার সকালের। ওই দিন জিয়া তার সহযোগীদের নিয়ে বরিশাল গণপূর্ত অধিদপ্তরের হাজির হয়ে একটি ঠিকাদারী কাজের স্টিমেট জোরপূর্বক নিয়ে যাওয়ার চেষ্টায় বাধ সাধলে দপ্তরের উপ-সহকারী প্রকৌশলী ওবায়দুল হককে বেদম প্রহার করেন। এই ঘটনা অনেকটা নীরবে ঘটলেও শুক্রবার রাতে লাঞ্ছিত ওবায়দুল এ সংক্রান্ত থানায় অভিযোগ জানিয়ে মামলা করার পরপরই ঘটনার আদ্যপান্ত প্রকাশ পায় এবং বিষয়টি স্যোসাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে যায়। ফলশ্রুতিতে ফের মিডিয়ার শিরোনাম হন মারুফ আহমেদ জিয়া। বরিশালে পারিবারিক ও রাজনৈতিক কারণে এই যুবক বেশ আলোচিত-সমালোচিত মুখ। এক সময় নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ’র অনুসারী হিসেবে দাপট দেখিয়ে চলা মারুফ হঠাৎ করে রাজনৈতিক শিবির পরিবর্তন করে নয়া মেয়র খোকন সেরনিয়াবাতের পক্ষ নেন। এবং সদ্য অনুষ্ঠিত সিটি নির্বাচনে তার পক্ষাবলম্বন করে প্রচারণা এবং নিজেও কাউন্সিলর প্রার্থী হন। অবশ্য নেতা খোকন সেরনিয়াবাত নির্বাচিত হলেও তিনি প্রতিদ্বন্দ্বী সাদেকপন্থী মজিবর রহমানের কাছে শোচনীয় পরাজিত হন। একই ব্যক্তির সাথে দুইবার প্রতিদ্বন্দ্বীতা করে রাজনৈতিক সর্বশক্তি প্রয়োগের পরেও পরাজয়ের কারণে বেশ কিছুদিন ধরে মারুফ আহমেদ জিয়া আলোচনায় ছিলেন। এবং পরাজিত হলেও তার দাপট আরও একগুণ বেড়ে যায় বলে স্থানীদের অভিমত। প্রশ্ন সেখানেই হঠাৎ করে একজন প্রকৌশলীকে প্রহার করার পিছনে রাজনৈতিক শক্তি ও সমর্থন তাকে এই সাহসের দ্বারপ্রান্তে নিয়েছে বলে এমনটি বরিশালের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষপট সে কথাই মনে করিয়ে দেয় কি? কারণ ক্ষমতার তারতম্য বিবেচনায় ভাতিজা সাদিক আব্দুল্লাহ অপেক্ষা চাচা খোকন সেরনিয়াবাতের আধিপত্য সৃষ্টি হওয়ায় কেউ কেউ এলাকাভিত্তিক নেতৃত্ব দেওয়ার আড়ালে সন্ত্রাসী জগতের ডন হিসেবে উত্থ্যানের অভিযোগ উঠেছে, যা কিনা সিভিল প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী অবগত।

রাজনৈতিক বোদ্ধা ও সমাজ বিশ্লেষকদের ধারনা, জিয়ার পরিবার বরাবরই সব সরকারের আমলে দাপটের সাথেই আছেন বলে নানান ঘটনায় প্রতীয়মাণ হয়েছে। বিশেষ করে আওয়ামী লীগের গত ১৫ বছর একটানা শাসনামলে জিয়ার দাপট ছিলো সমান্তরাল। আওয়ামী লীগের ক্ষমতার প্রথমভাগে তার বোন সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর আয়েশা তৌহিদ লুনা প্রয়াত সিটি মেয়র শওকত হোসেন হিরনের সমর্থনপুষ্ট হওয়ায় তৎসময় জিয়া যুবলীগ নেতা হিসেবে বাংলা বাজার টু আলেকান্দা এলাকায় নিজের শক্তিকে সমীহের জায়গায় নিয়ে যায়।

সূত্র জানায়, বিএনপি আমলেও জিয়া ছিলেন অদম্য। একদিকে নগর বিএনপি’র সাবেক সভাপতি ও সিটি মেয়র মজিবর রহমান সরোয়ারের সাথে কাউন্সিলর লুনার দহরম-মহরম এবং বড় ভাই জাতীয় পার্টির একাংশের আহ্বায়ক বশির আহমেদ ঝুনুর অতীত প্রভাবকে ব্যবহার করে জিয়ার শক্তির উত্থ্যান ঘটে। যদিও জিয়া আওয়ামী লীগ রাজনীতির সাথে আগে থেকে জড়িত।
অভিযোগের সুরে জানা গেলে, সময়ের আবর্তে রাজনীতির চাকা ঘুরে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলে জিয়া রাজনীতিতে আড়মোড়া দিয়ে ওঠে। এ সময় কাউন্সিলর লুনাও নিজের ক্ষমতা ধরে রাখতে ভোল পাল্টে প্রথমে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা এবং স্থানীয়ভাবে দলের জেলার কর্ণধর আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ’র প্রয়াতপত্নী বেগম সাহানারা আব্দুল্লাহ’র হাতে ফুল দিয়ে ক্ষমতাসীন দলের আশ্রয় নেন। পরবর্তীতে আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহর ক্ষমতা খর্ব এবং প্রয়াত নেতা শওকত হোসেন হিরন মেয়র হিসেবে বরিশালে দাপটশীল বলয় তৈরী করলে কাউন্সিলর লুনা হয়ে যান এই নেতার প্রিয়ভাজন। পক্ষান্তরে জিয়া হাসনাত সমর্থিত যুবলীগ নেতা হওয়া সত্বেও বোন লুনার বদৌলতে হিরনের নেক নজরে থেকে টেন্ডারবাজি থেকে শুরু করে এলাকায় আধিপত্য বিস্তার করে চলতেন। আকস্মিক সদর আসনের সংসদ সদস্য থাকাবস্থায় শওকত হোসেনের মৃত্যু ঘটলে এই ভাই-বোন ক্ষমতার রাজনীতি থেকে কিছুটা চুপসে যান। তাছাড়া পটুয়াখালীর পৌর কাউন্সিলর লুনার স্বামী তৌহিদুল ইসলাম তৌহিদ মৃত্যুবরণ করলে আরও ঘরমুখো হয়ে পড়েন বোন লুনা। কিন্তু সময় বেশি দিন লাগেনি, অল্প কয়েক দিনের ব্যবধানেই আবারও জিয়া কাকতালীয়ভাবে দাপটের রাজনীতির স্বাদ পেয়েছেন বলে কোন কোন মহল দাবি করছে।

বেশ কয়েকটি সূত্রের দাবি, সেরনিয়াবাত সাদেক আব্দুল্লাহ বরিশাল রাজনীতিতে পদার্পন এবং ২০১৮ সালে অনুুষ্ঠিত সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দলীয় মেয়র নির্বাচিত হলে নয়া এই রাজনীতিবিদের সাথে বয়সের মিল থাকায় দু’জনার ভিতর ভিষণ ঘনিষ্ট সম্পর্ক গড়ে ওঠে। হয়ে যান সাদিকপন্থী শক্তিধর যুবলীগ নেতা। পেয়ে যান নগর যুবলীগের সদস্য পদ। বরাবরই ক্ষমতার বলয়ের মধ্যে থাকা জিয়া অনুধাবন করেন সাদেক আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন বঞ্চিত এবং তার চাচা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ইচ্ছায় বরিশালের দলীয় মেয়র প্রার্থী হওয়ায় হাসনাত পরিবারের ক্ষমতা হ্রাস পেয়েছে।

আবার কেউ বলছে, মজিবর রহমানের ছোট ভাই আরেক যুবলীগ নেতা নামও অভিন্ন জিয়াউর রহমান জিয়া রাজনৈতিক কৌশলের দরজা দিয়ে মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ’র খুব কাছাকাছি চলে যাওয়ায় মারুফ অহমেদ জিয়া বিষয়টি ভালো চোখে নেয়নি, কমিয়ে দেয় মেয়রের কালীবাড়ির বাসভবনে যাতায়াত। হাল সময়ে হঠাৎ করে তিনিও ভোল পাল্টে হয়ে যান খোকন সেরনিয়াবাত ঘরানার রাজনীতিবিদ। সেই সাথে তার বোন লুনাও যুক্ত হয় একই শিবিরে।

অনুসন্ধানে আভাস মেলে যে, অবশ্য এ ক্ষেত্রে মূল টার্গেট ছিলো অথবা ভেবেছিলো খোকন সেরনিয়াবাদের ক্ষমতার প্রভাব অথবা সমর্থন নিয়ে হাসনাত-সাদিক সমর্থিত মজিবর রহমানকে পরাজিত করা এবার হয়তো সহজতর হবে। রাজনীতিতে একই ঘরনার লোক হলেও ১১ নম্বর ওয়ার্ড কেন্দ্রিক আধিপত্য নিয়ে মজিবর রহমানের সাথে মারুফ আহমেদ জিয়ার পরিবারের শীতল বিরোধ চলে আসছিলো। শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে তাদের মধ্যে লড়াই চলছে।

এর আগে ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত সিটি নির্বাচনে মজিবর রহমানের সাথে লড়াই করে পরাজয় অর্থাৎ কাউন্সিলর হওয়ার ব্যর্থতার পিছনে সাদিকের অতটা সমর্থন পায়নি বিধায় মান-অভিমানের পাল্লাটা সেখান থেকে ভারী হতে থাকে এবং সুযোগের অপেক্ষায় ছিলেন বিকল্প শক্তিধর নেতার আবির্ভাবে, যেখানে আশ্রয়-সমর্থন পাওয়া যায়।

তার ঘনিষ্ট একটি সূত্রের দাবি, মারুফ আহমেদ জিয়া একাবার মনস্থিরও করেছিলেন বরিশাল সদর আসনের সাংসদ ও পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক শামীমের স্রোতধারায় নিজেকে সামিল করবেন। এ ক্ষেত্রে কৌশল হচ্ছে, মন্ত্রীর সমর্থন নিয়ে কাউন্সিলর মজিবর রহমানের সাথে ক্ষমতার টক্কর জমিয়ে তোলা। কিন্তু মাঠের রাজনীতিতে পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী অপেক্ষা মেয়র সাদিক অনেক দুর্বল এবং কোন টেন্ডারবাজি বা ক্যাডারভিত্তিক রাজনীতি মনস্ক না হওয়ায় জাহিদ ফারুক শামীমের দরজায় যাই যাই করে আর যাওয়া হয়নি। খোকন সেরনিয়াবাত সিটি নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার পর জাহিদ ফারুক শামীমের সাথে একট্টা হয়ে মাঠে নামনে জিয়া কৌশলে এই প্রতিমন্ত্রীর নজরে নিজেকে নিয়ে আসে এবং খোকন সেরনিয়াবাতের সমর্থনে নতুন করে রাজনৈতিক মাঠ গরমের সুযোগ নিয়ে নিজের শক্তিমাত্রা প্রদর্শনের সুযোগ খুঁজছিলেন। কিন্তু তার বয়স অপেক্ষা যুবলীগ নেতা ওয়াসিম দেওয়ান, ছাত্রলীগ নেতা জসিম উদ্দিন ও বিএম কলেজের সাবেক ভিপি মঈন তুষার নয়া মেয়র খোকন সেরনিয়াবাতের ঘনিষ্টতর হওয়ার কারণে প্রাধান্য দেওয়ায় জিয়া নিজেকে এই শিবিরে নিজেকে সেভাবে উপস্থাপন করতে পারছিলেন না। যতটা না পেরেছিলেন সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহর ক্ষেত্রে। খোকন সেরনিয়াবাত দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার পর বরিশাল আওয়ামী লীগ দ্বি-খন্ডিত হয়ে সাদেক আব্দুল্লাহকে চেপে ধরতে তার নিয়ন্ত্রণে থাকা লঞ্চঘাট, বাস টার্মিনালসহ বিভিন্ন স্থাপনা দখল এবং প্রশাসনের মধ্যে প্রভাব সৃষ্টি হওয়ায় জিয়ার হয়তো ধারনা ছিলো গণপূর্ত অধিদপ্তরে অঘটন ঘটিয়ে ফায়দা লোটার পাশাপাশি নিজের শক্তি-সমর্থ জানান দিতে।

গত ১০ আগস্ট সকালে গণপূর্ত অধিদপ্তরের ঘটনায় প্রকাশ পায় তিনি এই দপ্তরে দীর্ঘদিন যাবৎ টেন্ডারবাজি করে আসছিলেন। ওই দপ্তরে ঘুরে এ ধরনের বেশ কয়েকটি অভিযোগ জানাও গেল। তবে প্রত্যক্ষদর্শী দুইজন ব্যক্তির বর্ণনায় জিয়া দাপ্তরিক কাজ বাগিয়ে নিতে আগের যতনা পেশি শক্তি প্রয়োগ করতেন তার চেয়ে বেশি মেয়র সাদিক আব্দুল্লাহ’র অনুসারী হিসেবে নিজের প্রভাব উপস্থাপন করতেন। বরিশালের বর্তমান হালচাল বলে দেয় যে, খোকন সেরনিয়াবাতের বিজয় নয়, প্রার্থী হওয়ার খবর ছড়িয়ে পরার পর থেকেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী থেকে শুরু করে প্রশাসন ও বে-সরকারি সকল দপ্তরে মেয়র সাদিক আব্দুল্লাহ’র যতটুকু প্রভাব ছিলো তাও যেন শেষ হয়ে নয়া মেয়রের সমর্থনে রাবনের গীত গাইছে। সেই সুযোগই নিতে চেয়েছিলেন যুবলীগ নেতা জিয়া। নচেৎ শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজের একটি টেন্ডারের স্টিমেটের কাগজ দ্বিতীয় দফা আনতে গিয়ে রাজনৈতিক বল প্রয়োগ করার প্রক্রিয়ায় উপ-সহকারী প্রকৌশলী ওবায়দুল হকের সাথে বাকবিতণ্ডা থেকে একপর্যায় দুর্দান্ত সাহস দেখাতে গিয়ে দুই সহযোগী নিয়ে তাকে প্রহার করে।

নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র জানায়, গণপূর্ত অধিদপ্তরের এই ঘটনায় প্রশাসনের এই উন্নয়নমূলক এই সেক্টরের বরিশাল টু ঢাকার কর্মকর্তারা ক্ষুব্ধ হন। এবং তাদের ভিতর উত্তেজনার পারদ ক্রমেই বাড়ছিল। এমন খবর নয়া মেয়র খোকন সেরনিয়াবাত ও পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক শামীম যে কোনো মাধ্যমে অবগত হন। ঘটনাটি যেদিন ঘটে সেদিন উভয় নেতা বরিশালেই ছিলেন এবং গণপূর্ত অধিদপ্তরের ঘটনা পর্যবেক্ষণ করছিলেন। কিন্তু দুই নেতার কেউই জিয়াকে তলব করে সতর্কবার্তা বা সংযত হওয়ার আদেশ বা নির্দেশ কোনটাই দেয়নি। কারণ তারা চায়নি এই ঘটনার সাথে সম্পৃক্ত হয়ে মেয়র সাদিক আব্দুল্লাহর ন্যায় প্রসাশনের সাথে দূরত্ব তৈরী হোক। ফলশ্রুতিতে তাদের নীরবতায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীও আঁচ করে নেয় জিয়া যুবলীগ নেতা হলেও বর্তমান বরিশালের নিয়ন্ত্রক মন্ত্রী বা মেয়র কেউই জিয়ার কর্মকাণ্ডের পক্ষে নেই। অথবা তার দ্বায়ভার নিতে নারাজ।

গণপূর্ত অধিদপ্তরের একটি সূত্র বলছে, তারাও দুই নেতার মনভাব আমলে এনে এই যুবলীগ নেতার বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নেন। এবং মিডিয়ার কাছে তারা শক্ত স্টেটমেন্ট বা মন্তব্য রাখেন। যার প্রমাণ এ ঘটনায় গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী কামরুল হাসান সাংবাদিকদের জানান, বিষয়টি নিয়ে তারা অফিসিয়ালি আলোচনা করেছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতিক্রমে এই ঘটনায় মামলা করা উদ্যোগ নিয়েছে। বিষয়টি আইনীভাবে মোকাবিলা করবে বলে স্পষ্ট ইঙ্গিত দেন। শেষাংশে এসে ঘটলও সেটাই। লাঞ্ছিত ওই প্রকৌশলী পরদিন গত শুক্রবার রাতে মারুফ আহমেদ জিয়াকে প্রধান ও অপর দুই সহযোগী তিতাস ও আজদকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেন।

আবার অপর একটি সূত্রের দাবি, এই মামলা দায়েরের ক্ষেত্রে নয়া মেয়র ও পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রীর প্রথমে পরোক্ষ ইঙ্গিত থাকলেও এখন আসামীদের যেন না ধরা হয়, সে বিষয়ে কোতয়ালি মডেল থানা পুলিশকে দিক নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ওই সূত্রের অভিযোগ এই নাটের ঘুড়ি উড়িয়েছেন বোন সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর আয়েশা তৌহিদ লুনা। এই নারী নেত্রী ফের নতুন করে রাজনীতিতে সক্রিয় হয়েছেন এবং দুই নেতার আশির্বাদে পুনরায় কাউন্সিলর নির্বাচিত হতে সহায়ক হন। লুনার সাথে নয়া মেয়র খোকন সেরনিয়াবাতপত্নী লুনা আব্দুল্লাহর নামের মিল থাকায় ইতিমধ্যে উভয়ের ভিতর বিশেষ ঘনিষ্টতা গড়ে উঠায় সেখান থেকেই ভাই জিয়ার অনুকূলে সুপারিশ রেখে এ যাত্রা রক্ষার তাগিদ রাখেন। সূত্রের দেয়া এ তথ্য কতখানি সত্য তার বাস্তবিক প্রমাণ পাওয়া যায়নি। যদিও দায়িত্বশীল দুই নেতা অদ্যবধি দলীয় নেতা জিয়াকে নিয়ে কোন আনুষ্ঠনিক মন্তব্য প্রকাশ করেননি। এদিকে থানা পুলিশ ঘটনার চার দিন অতিবাহিত হলেও মারুফ আহমেদ জিয়ার টুটি ছুতে পারেনি, আটক হয়নি অপর দুইজন।

মডেল কোতয়ালি থানার ওসি আনোয়ার হোসেনের দাবি, আসামিদের আটকে জোরতর চেষ্টা চলছে। কিন্তু পুলিশের সার্বিক ভূমিকা সন্দেহজনক হওয়ায় ওই সূত্রের দাবি বা অভিযোগ একেবারে যে অমূলক নয়, তা নিয়ে নগরীতে কম-বেশি নানা মহলে আলোচনা শোনা যায়। যদি বাস্তবিক অর্থে রাজনীতির অন্দরমহলে সেটি যদি ঘটে থাকে তাহলে তা শুভ ইঙ্গিত বহন করেনা বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তারা অতিত উদাহরণকে সামনে টেনে এনে বলেন, প্রয়াত নেতা শওকত হোসেন হিরন সিটি কর্পোরেশনের মেয়র থাকাবস্থার শেষাংশে এসে তার অনুসারীদের সামাল দিতে পারেননি। যে কারণে বিএম কলেজের নতুন অধ্যক্ষ শংকর চন্দ্রকে দায়িত্ব গ্রহণে তার অনুসারীরা বাঁধা দিতে প্রকাশ্য লাঞ্ছিত করায় মেয়র হিরন তুমুল বিতর্কের মাঝে পড়েছিলেন। বিভিন্ন দপ্তরে তার অনুসারীদের দাপট বিপুল জনপ্রিয় এই নেতার প্রতি নগর উন্নয়নমূলক কাজের জন্য মানুষের বিশেষ দুর্বলতা থাকলেও চাপা ক্ষোভ ছিলো। যার বহিঃপ্রকাশ ঘটে ২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত সিটি মেয়র নির্বাচনে বিএনপির দুর্বল প্রার্থী প্রয়াত নেতা আহসান হাবিব কামালের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করে বিষয়ীভূত পরাজয়।

আবার সাদেক আব্দুল্লাহ রাজনীতির শুরুতে জনপ্রিয়তা অর্জন করলেও মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি তার ইমেজ ধরে রাখতে পারেননি। কয়েকজন খলিফা দ্বারা বেষ্টিত তরুণ এই নেতার কাছে নগরবাসী যে আশার আলো দেখছিলো, তা ক্রমেই নিভে যায় তার অনুসারীদের এলাকাভিত্তিক দাপট ও একনায়কতন্ত্র সৃষ্টির কারণে। এক্ষেত্রে তার অনভিজ্ঞ রাজনীতিকে দায়ী বলে মনে করে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষদের অভিমত হচ্ছে, মেয়র হিসেবে সাদেক আব্দুল্লাহ সাধারণ মানুষের কাছ থেকে যেমন দূরে সরে গেছে, তেমনি প্রশাসনের ভিতরেও তার ইমেজ দ্বন্দ্ব-সংঘাতে ভাটা পড়ে। এ কারণেই কপাল খুলে যায় খোকন সেরনিয়াবাতের। প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা নিজেই সম্পর্কে ফুপাতো ভাই খোকন সেরনিয়াবাতকে বরিশালের রাজনীতির নেতৃত্বে অগ্রভাগে নিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে সিটি নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন দিয়ে মেয়র নির্বাচিত করে স্থানীয় রাজনীতির পটপরিবর্তনের একটি ইঙ্গিত দিয়েছেন বলে মনে করা হচ্ছে। দলীয় বা সামাজিক অনুষ্ঠানে খোকন সেরনিয়াবাতের বক্তব্য ও কথাবার্তায় আঁচ করা যায় তিনি অতীতের নেতৃত্বের ন্যায় নিজেকে বিলীন করে দিতে নারাজ। বরং নতুন কিছু দিতে চায় বঞ্চিত বরিশালবাসীকে। সেই স্বপ্ন ফিকে হয়ে যেতে পারে যদি কিনা মারুফ আহমেদ জিয়াদের ন্যায় ডনরূপি রাজনীতিবিদদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়ে এলাকাভিত্তিক সন্ত্রাস-দুর্নীতির বটবৃক্ষ রোপন করার সুযোগ দেন। এমন শঙ্কার পাশাপাশি চাচা-ভাতিজার লড়াই কোথায় গিয়ে পৌঁছায় তা অনুধাবনে আনতে নেতা-কর্মীদের বিশাল একটি অংশ অনেকে হঠাৎ করে নীরব অবস্থান নেওয়ায় বরিশালের ক্ষমতাসীন রাজনীতিতে স্থবিরতা বিরাজ করছে।

এমন বিবেচনা জিয়ার ভেতর না থাকায় তিনি যে কাণ্ড ঘটালেন তাতে নাম ফুটেছে ঠিকই কিন্তু তার দিকে নগরবাসীর নজর পড়েছে আগামীর আলামত অনুধাবনে। ফলে বরিশালের ক্ষমতাসীন দলের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট কোন দিকে ধাবিত হচ্ছে, সেই প্রশ্নে জিয়া এখন প্রতীকী উদাহরণ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছেন।’

পুলিশ ম্যানেজ করে বরিশাল থেকে বছরে শত কোটি টাকার জাটকা পাচার (!)

বরিশালটাইমস রিপোর্ট

২৯ মে, ২০২৫ ১৭:০০

প্রিন্ট এন্ড সেভ

পুলিশ ম্যানেজ করে বরিশাল থেকে বছরে শত কোটি টাকার জাটকা পাচার (!)

বাহিনীপ্রধান টুটুল ৫ আগস্টের পরে পালিয়ে গেলেও বাণিজ্য ধরে রাখতে মরিয়া তার অনুসারীরা। অর্থের বিনিময়ে আওয়ামী লীগ সন্ত্রাসীদের শেল্টার দিচ্ছে ওয়ার্ডপর্যায়ের দুই বিএনপি নেতা।

বরিশালের তালতলী বাজারের আধিপত্য ধরে রাখতে আওয়ামী সন্ত্রাসী টুটুল বাহিনী ফের বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। প্রতিবছরের ন্যায় এবারও এই বাহিনী সদর উপজেলার চরবাড়িয়া ইউনিয়নের বাজার থেকে মৎস্য সম্পদ রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে পাচারের তোড়জোড় চালিয়ে যাচ্ছে। ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর আত্মরক্ষর্থে বাহিনীপ্রধান নিরব হোসেন টুটুল পালিয়ে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে আশ্রয় নিলেও তার লালিত সন্ত্রাসী মোশারেফ সিকদার, মিরাজ সিকদার, কালু সিকদার, সাকিন সিকদার, সেলিম এবং সবুজরা এখন উত্তর আমানগঞ্জ টু শায়েস্তবাদ পর্যন্ত দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন। আলোচিত টুটুল পলাতক থাকায় তার এই বাহিনীকে অর্থের বিনিময়ে শেল্টার দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে বরিশাল মহানগরের ওয়ার্ডপর্যায়ের দুই বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, বরিশালের তালতলী বাজার থেকে প্রতি বছর শত কোটি টাকার জাটকাসহ মাছ পাচার করে আসছিল বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক নিরব হোসেন টুটুলের বাহিনী। তৎসময়ে সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ সিটির মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হওয়ায় নাজিরের পোলের টুটুল এক ধরনের এক ধরনের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন। মূলত তার কাঁদে ভর করে আওয়ামী লীগের শাসনামলে প্রতিবছর শত কোটি টাকার জাটকা, রেণুপোনাসহ অবৈধ মাছ পাচার করে আসছে সাকিন-কালু-মিরাজেরা।

পুলিশসহ বিভিন্ন সূত্র নিশ্চিত করেছে, অবৈধভাবে মাছ পাচারের সাথে সম্পৃক্ত এবং জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে হামলা চালানোর অভিযোগে বাহিনীপ্রধান টুটুলসহ বেশ কয়েকজনের বিরুদ্ধে মামলাও হয়েছে। তাদের মধ্যে টুটুল ভারতে এবং মিরাজ সিকদার দেশে কোথায় আত্মগোপনে থাকলেও বাকিরা ভোল পাল্টে নিজেদের মস্তবড় বিএনপি নেতাকর্মী দাবি করছেন। এবং টুটুলের অবর্তমানে তারা অবৈধ ব্যবসার শেল্টারদাতা হিসেবে বরিশাল নগরীর ৪ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা, এমন দুজন বিএনপি নেতার সাথে সন্ধিচুক্তিও করে নিয়েছে। মাসান্তর তাদের মোটা অংকের উৎকোচ দেওয়াসহ পূর্বের ন্যায় কাউনিয়া থানা পুলিশকে ম্যানেজ করে অবৈধ মাছ তালতলী বাজার থেকে পাচারের ফন্দি আঁটছে।

আওয়ামী লীগ সন্ত্রাসীদের মৎস্য সম্পদ পাচারের এই পূর্বপরিকল্পনা আগেভাগেই আঁচ করতে পেরে মৎস্য অধিদপ্তরও নড়েচড়ে বসেছে। দপ্তরের শীর্ষ কর্মকর্তা রিপন কান্তি এবং মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তা জামাল হোসেন জানিয়েছেন, যে কোনো মূল্যে এবার অবৈধ বাণিজ্য রুখে দেওয়া হবে। যেমন কথা তেমন কাজ, যার প্রমাণ মেলে শনিবার গভীর রাতে। মাঠ কর্মকর্তা জামালের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সন্ত্রাসীদের অবৈধ একটি মাছের চালান শনিবার রাতে আটকে দেওয়া হয়। তিনটি অটোরিকশাভর্তি জাটকা (শিকার নিষিদ্ধ) তালতলী বাজার থেকে এই কর্মকর্তার নেতৃত্বে জব্দ করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

সূত্রে জানা গেছে, আওয়ামী লীগের শাসনামলের পুরো সময় ধরে মৎস্য বিভাগের মাঠ কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন বিমল চন্দ্র দাস, তার বিরুদ্ধে টুটুল বাহিনীর কাছ থেকে উৎকোচগ্রহণ করাসহ বহুমুখী দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। সবশেষ বিতর্কিত ওই কর্মকর্তাকে নওগাঁ জেলায় শাস্তিমূলক বদলি করেছে সরকার।

মৎস্য অফিস সূত্র জানিয়েছে, সদর উপজেলার তালতলীতে একটি পাচারকারী সিন্ডিকেট রয়েছে, বিমল বাবুর বদলির পরে তারা ওয়ার্ড বিএনপির এক নেতার সুপারিশ নিয়ে আসতে চেয়েছিলেন সন্ধিচুক্তি করতে। কিন্তু জেলা মৎস্য কর্মকর্তা রিপন কান্তি এবং সদর উপজেলার কর্মকর্তা জামাল হোসেন সাফ জানিয়ে দিয়েছেন মৎস্য সম্পদ ধ্বংসকারীদের সাথে কোনো আপস নয়, বরং তাদের ঠিকানা হবে জেল!

মৎস্য অধিদপ্তরের এমন হুঁশিয়ারির পরেও থেমে নেই আওয়ামী সন্ত্রাসী টুটুল বাহিনী। তারা প্রশাসনকে চ্যালেঞ্জ করে অবৈধভাবে মাছ শিকার এবং পাচারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে, কিন্তু তা কোনো দিনও হতে দেওয়া হবে না মন্তব্য করেন মৎস্য কর্মকর্তা।

তালতালীর একাধিক সূত্র জানিয়েছে, সিটির ওয়ার্ড বিএনপির দুই নেতার সদর উপজেলার অবৈধ বাণিজ্যে শেল্টার দেওয়ার বিষয়টি ইতিবাচক হিসেবে গ্রহণ করেনি স্থানীয় বিএনপি এবং অঙ্গ-সংগঠনের নেতাকর্মীরা। তাদের অভিযোগ, টুটুল বাহিনী গত ১৫ বছর তালতলী বাজার থেকে শত কোটি টাকা কামিয়ে নিয়েছে এবং সেই টাকা দিয়ে সাকিন, কালু, সবজুরা একাধিক বিয়ে করাসহ গড়ে তুলেছেন আলিশান বাড়িও। জানা গেছে, অবৈধ পন্থায় আয় করা টাকা দিয়ে টুটুলের খাস চামচা সাকিন একটি ট্রাকও কিনিয়েছেন, মূলত সেই ট্রাক ব্যবহার করেই রাতে জাটকা পাচার করে।

ইউনিয়ন বিএনপি নেতাকর্মীদের অভিযোগ, আওয়ামী লীগের শাসনামলে কাউনিয়া থানা পুলিশসহ টুটুলকে মাসিক মোটা অংকের অর্থ দিয়ে মাছ পাচার করে মোশারেফ, সাকিন, কালু এবং নিজাম-সবুজেরা। স্বৈরাচার হাসিনার পতনের পরে টুটুল পালিয়ে ভারতে গেলে তার সাগরেদ মিরাজ সিকদারও মামলার আসামি হয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। তবে মামলার আসামি হয়েও বিএনপি নেতাদের শেল্টারে এলাকায় প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছেন নিজাম সিকদারসহ বাহিনীর একাধিক সন্ত্রাসী। তবে আগামীতে তাদের কোনো প্রকার সন্ত্রাসী কার্যকলাপ বা অবৈধভাবে মাছ পাচার করতে দেওয়া হবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন স্থানীয় সুশীল মহলসহ তরুণসমাজ।

তালতলী বাজারের সাধারণ ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেছেন, আওয়ামী লীগ সন্ত্রাসীরা শুধু মৎস্য সম্পদ ধ্বংসই করছে না, পাচারের মাধ্যমে বছরে কোটি কোটি টাকাও হাতিয়ে নিচ্ছে। অতীতে নির্বিকার পুলিশকে দেখা গেছে, বান্ডিল গুণে গুণে টাকা নিতে। বিশেষ করে এই গুরুতর অভিযোগ রয়েছে, কাউনিয়া থানা পুলিশের সাবেক ওসি মো. আসাদুজ্জামান এবং মোস্তাফিজুর রহমানের বিরুদ্ধে। সূত্র নিশ্চিত করেছে, এই দুই পুলিশ কর্মকর্তা কাউনিয়া থানায় দায়িত্ব পালনকালে অন্তত ২ কোটি টাকার বেশি নিয়ে গেছেন আওয়ামী লীগ সন্ত্রাসীদের সহযোগিতা করে।

এমনও অভিযোগ আছে, ভোর রাত বা সকালে ওসি আসাদুজ্জামান পুলিশের একটি টিম তালতলী বাজারে পাঠিয়ে দিলে তাদের উপস্থিতিতেই জাটকা ট্রাকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়, যা নিয়ে তৎকালীন সময়ে সংবাদপত্রে ব্যাপক লেখালেখি হয়েছিল। কিন্তু খোদ পুলিশই যখন ব্যবসায় জড়িত, তখন ব্যবস্থা আর নেয় কে? এমন প্রশ্নে বরিশালের রাজনৈতিক অঙ্গন তখন সরগরম হয়ে উঠেছিল।

আওয়ামী লীগের সেই সন্ত্রাসী আমল বা নীতি বিবর্জিত পুলিশ কর্মকর্তা এখন আর থানাগুলোর দায়িত্ব না থাকলেও টুটুল বাহিনীর আধিপত্য মোটেও কমেনি। জানা গেছে, টুটুল বাহিনীর এই অবৈধ বাণিজ্যের প্রতিবাদ করতে গিয়ে গত বছর তরিকুল ইসলাম নামের এক সংবাদকর্মীকে কুপিয়ে জখম করে সন্ত্রাসী মিরাজ, সবুজ এবং সাকিনেরা, ওই ঘটনায় আ’লীগের আমলে একটি মামলাও হয়েছিল।

সূত্রের খবর হচ্ছে, সন্ত্রাসী হামলা চালানোর পর টুটুল তার বাহিনীর সদস্যদের রক্ষায় তৎসময়ে আপসরফার প্রস্তাব দেওয়াসহ থানা পুলিশকে মামলা নিতে বারণও করেছিলেন। কিন্তু মূর্তিমাণ সেই সন্ত্রাসের খবর স্থানীয় সংবাদমাধ্যমসহ জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় ফলাও করে প্রকাশ পেলে চাপে পড়ে যায় থানা পুলিশ। এবং উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে অনিচ্ছা সত্ত্বেও মামলা গ্রহণেও বাধ্য হয়।

৫ আগস্ট আওয়ামী দুশাসনের অবসান ঘটলে বাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা হলে তারা কিছুদিন আত্মগোপনে ছিল। তবে ফাল্গুন মাস শুরু হতেই তারা এখন বিএনপি নেতাদের শেল্টার নিয়ে অবৈধ বাণিজ্য চালিয়ে যাওয়ার সাহস দেখাচ্ছে, যা দেখে ইউনিয়ন বিএনপি নেতাকর্মীরাও হতবাক-বাকরুদ্ধ।

রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকেরা বলছেন, মৎস্য সম্পদ ধ্বংসের এই বাণিজ্য যে কোনো মূল্যে রুখে দিতে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তারা যেমন হুমকি-হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, কাউনিয়া থানা পুলিশকেও সেই পদাঙ্ক অবলম্বলন করা জরুরি। অবশ্য কাউনিয়া থানা পুলিশের ওসি নাজমুল নিশাতও সত্যের সঙ্গে থেকে তালতলী থেকে অবৈধভাবে মাছ পাচার বন্ধ করার ঘোষণা দিয়েছেন।

পুলিশ জানিয়েছে, অতীতের ন্যায় অবৈধ বাণিজ্য কিংবা অপরাধকে কাউনিয়া থানা পুলিশ আর প্রশ্রয় দেবে না। এক্ষেত্রে জনস্বার্থে মামলা করার সুযোগ রয়েছে। সমাজে প্রতিষ্ঠিত এমন ব্যক্তি যদি মাছ পাচারকারীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দেয়, তদন্ত করে ব্যবস্থাগ্রহণ করা হবে। সেক্ষেত্রে অপরাধারীর পরিচয় যা-ই হোক না কেনো তা দেখার সুযোগ থাকবে না।

আওয়ামী লীগের দোসরদের নিয়ে বরিশালের তালতলীতে দুই বিএনপি নেতার অবৈধ বাণিজ্যের খবর মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মনিজরুজ্জামান ফারুকও অবগত হয়েছেন। তিনি জানান, টুটুল বাহিনীর লোকদের সাথে দুই কর্মীর একজোট হওয়ার বিষয়টি আগেই জানতে পেরেছেন এবং তিনি তাদের ডেকে নিয়ে সাবধান করে দিয়েছেন। এরপরেও যদি তারা অনৈতিক কাজে জড়িত থাকে সাংগঠনিকভাবে ব্যবস্থাগ্রহণ করা হবে এবং তাদের অবৈধ মাছ পুলিশ-প্রশাসনকে ধরতে আহ্বান রাখেন শীর্ষস্থানীয় বিএনপি নেতা।’

পুলিশ ম্যানেজ করে বরিশাল থেকে বছরে শত কোটি টাকার জাটকা পাচার (!)

বরিশালটাইমস রিপোর্ট

২৯ মে, ২০২৫ ১৬:৫৭

প্রিন্ট এন্ড সেভ

বিএনপি নেতা মিরাজ বাহিনীর সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে সাদিক আব্দুল্লাহ’র বদনাম! হ্রাস পাচ্ছে জনপ্রিয়তাও

উত্তর আমানতগঞ্জের বিএনপি নেতা মিরাজ, সেলিম এবং নয়ন-সবুজসহ গুটিকয়েক সন্ত্রাসে তটস্থ এলাকাবাসী ঘুরে বসতে শুরু করেছে। বরিশালের সিনিয়র সাংবাদিক হাসিবুল ইসলামের ভাইদের ওপর হামলাসহ কুপিয়ে হত্যাচেষ্টা পরে এলাকাবাসী এখন আর আগের মতো মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ এবং তার সেকেন্ড ইন কামান্ড নিরব হোসেন টুটুলের ওপর আস্থা বা ভরসা রাখতে পারছে না। ফলে অনেকেই সাদিক-টুটুল বলয় ছেড়ে বর্তমান মেয়র আবুল খায়ের ওরফে খোকন সেরনিয়াবাতের রাজনীতিতে সক্রিয় হয়েছেন, হচ্ছেন। বিশেষ করে সাংবাদিক স্বজন তারেকের ওপর হামলার প্রেক্ষাপটে মামলা এবং টুটুলের কাছের লোক হিসেবে পরিচিত মিরাজসহ সকলে গ্রেপ্তার এড়াতে আত্মগোপনে যাওয়ার পরে এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। জানা গেছে, উত্তর আমানতগঞ্জে সরাসরি রাজনীতিতে সম্পৃক্ত নেই এমন মানুষের সংখ্যা অধিকা, এই অংশ এতদিন নিবর হোসেন টুটুলের সাথে থাকলেও মিরাজ বাহিনীর নিপীড়িন এবং সন্ত্রাসের চিত্র দেখে তাদের রাজনৈতিক আশ্রয়-প্রশ্রয়দাতাদের দোষারপ করছেন। ফলশ্রুতিতে বলাই যায়, মিরাজসহ এই কয়েকজন ব্যক্তির কারণে সাবেক সিটি মেয়র সাদিক আব্দুল্লাহ এবং নিরব হোসেন টুটুলের বদনাম হয়েছে, হচ্ছে, সেক্ষেত্রে তাদের জনপ্রিয়তাও হ্রাস পাচ্ছে।

স্থানীয় সূত্র জানায়, মহানগর আওয়ামী লীগ শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক নিরব হোসেন টুটুলের আশ্রয়-প্রশ্রয় মিরাজ এবং সেলিমসহ ৯/১০ জনের একটি বাহিনী সাদিক আব্দুল্লাহ মেয়র থাকাকালীন উত্তর আমানতগঞ্জে দেদার ত্রাস চালিয়েছে। সদর উপজেলার তালতলী বন্দর থেকে জাটকা, চাপিলা এবং রেণুপোনার মতো জাতীয় সম্পদ পাচার করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়েছে। পাশাপাশি বেলতলা টু শায়েস্তবাদ পর্যন্ত সমান্তরাল চালিয়ে ভূমিদস্যু, চাঁদাবাজিসহ সশস্ত্র ত্রাস। সর্বশেষ যার শিকার হয়েলে সাংবাদিক স্বজন তারিকুল ইসলাম, চল্লিশোর্ধ্ব এই যুবকও সংবাদকর্মী হিসেবে কাজ করেন।

ঈদের দুদিন আগে এই বাহিনীর অনুরুপ হামলার শিকার হয়েছেন ওই এলাকার বাসিন্দা সাংবাদিক মাহাবুব সিকদার। জানা গেছে, তাকেসহ তার বাবা ভাইদের মারধরের পর ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। পরে কাউনিয়া পুলিশ গিয়ে দোকানটি খুলে দেয়। সেই ঘটনার সপ্তাহখানেকের মাথায় সাংবাদিক স্বজন তারেক এবং তার ভাইদের ওপর সশস্ত্র হামলা চালিয়ে কুপিয়ে হত্যাচেষ্টা করেছে মিরাজ বাহিনী।

স্থানীয় বাসিন্দা নাছির, কবির, সোহেল অভিযোগ করেন, গোটা উত্তর আমানতগঞ্জবাসী সাদিক আব্দুল্লাহ এবং নিরব হোসেন টুটুলের বন্দনা করতো। কিন্তু বিএনপি নেতা মিরাজ, সেলিম, নয়ন, সবুজসহ ৯/১০ জনের বাহিনী যাকে তাকে মারধর করে ক্রমাগত সন্ত্রাস সৃষ্টি করায় মহানগরের শীর্ষ নেতা সাদিকের বদনাম করেছে। এমনকি টুটুলকে বিষয়টি এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে বারংবার অভিযোগ করা হলেও কোনো ব্যবস্থাগ্রহণ করা হয়নি, যার প্রভাব পড়েছে সাদিক আব্দুল্লাহ’র রাজনীতিতে। দেখা গেছে, টুটুলের এই বাহিনী মিছিল মিটিংয়ে যে কজন লোক সমাবেত করছে, তাদের অপেক্ষা বিরোধী অংশটি অর্থাৎ স্থানীয় ৪ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর সৈয়দ সামসুদ্দোহা আবিদ এবং মৎস্যজীবী লীগ নেতা খান হাবিব জনসমর্থনে এগিয়ে যাচ্ছেন পর্যায়ক্রমে।

এলাকাবাসী জানিয়েছে, মিরাজসহ কয়েকজন বিএনপি নেতা সাদিক আব্দুল্লাহ এবং নিরব হোসেন টুটুলের নাম ভাঙিয়ে দীর্ঘদিন ধরে এই ধরনের ত্রাস চালিয়ে আসায় তাদের ওপর স্থানীয়রা সংক্ষুব্ধ, অনেকেই বিকল্প রাজনৈতিক হিসেবে আবিদ ও খান হাবিবকে বেশি মাত্রায় গুরুত্ব দিতে শুরু করেছেন। সেক্ষেত্রে নিরব হোসেন টুটুলের জনপ্রিয়তা হ্রাস পাওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়, মন্তব্য পাওয়া গেছে।

তবে মিরাজসহ তার বাহিনীর সন্ত্রাসের কারণে এলাকাবাসী কাউনিয়া থানা পুলিশের ওসি মো. আসাদুজ্জামানকেও দুষছেন। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ তিনি, মিরাজ, কালু এবং নিজামসহ এই বাহিনীর সদস্যদের চোরাকারবারি করার সুযোগ করে দিয়ে মাসোহারা গ্রহণ করে থাকেন। সাংবাদিক তারিকুল ইসলাম যে বিষয়টি গত শনিবার শেবাচিমে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় উর্ধ্বতন পুলিশ কর্তাদের সামনেই প্রকাশ করে দিয়েছেন। এছাড়া সন্ত্রাসী বাহিনীটির সাথে যে ওসি আসাদের গভীর সংখ্যতা রয়েছে, তা থানা পুলিশের আচারণেও প্রকাশ পেয়েছে, পাচ্ছে।

থানা পুলিশের একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, এই বাহিনীর সদস্যদের অনেকেই প্রতিদিন ওসির রুমে যাতায়াত করেন। এমনকি তাদের একজন বিএনপি নেতা নিজাম সিকদারকে ওসি রুমে বসে সিগারেট খেতেও দেখা যায়। এবং এগুলো তারা দম্ভোক্তির সুরে এলাকার ঘুরে মানুষের কাছে বলে বেড়ায়। ফলে কাউনিয়া থানা পুলিশের ওপরও উত্তর আমানতগঞ্জবাসী ভরসা না রাখতে পেরে প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক শামীম, সিটি মেয়র খোকন সেরনিয়াবাত এবং পুলিশ কমিশনার মো. জিহাদুল কবির ও র‌্যাবপ্রধানের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

মেয়রের চেয়ার হারানোর পরে রাজনৈদিকভাবে দুর্বল থাকা সাদিক আব্দুল্লাহ’র এই দুসময়ে তার নাম ভাঙিয়ে বিএনপি নেতা মিরাজরা যে ত্রাস অব্যাহত রেখেছে, তাতে স্থানীয়ভাবে আরও সমর্থন হ্রাস পাওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। বিপরিতে তার ঘোর শক্র আপন চাচা খোকন সেরনিয়াবাত এবং সদর আসনের এমপি পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুকের বলয়-বৃদ্ধি ঘটাবে স্থানীয় জনতা।

এই বিষয়ে সাদিক আব্দুল্লাহ’র বক্তব্য না পাওয়া গেলেও নিরব হোসেন টুটুলের ভাষ্য হচ্ছে, তার নাম ভাঙিয়ে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড করলে কোনো ছাড় নয়। উত্তর আমানতগঞ্জে যা হয়েছে, হচ্ছে তার জন্য তিনি দায়ী নন জানিয়ে বলেন, মামলা হয়েছে, পুলিশ ব্যবস্থাগ্রহণ করবে। আর এই মামলায় যারা অভিযুক্ত তারা আওয়ামী লীগের কেউ না, দলীয়ভাবে তাদের কোনো পদপদবিও নেই।

জানা গেছে, গত শনিবার স্থানীয় বাসিন্দা তারেকের ওপর হামলার ঘটনায় মামলাটি থানায় যাতে নথিভুক্ত না হয়, বিএনপি নেতা মিরাজ বিভিন্ন মহল থেকে সুপারিশ রেখেছিল। কিন্তু কোনো কাজে আসেনি, কারণ যাকে রক্তাক্ত করা হয়েছে, সেই তারেক বরিশালের সিনিয়র সাংবাদিক ও সংগঠক হাসিবুল ইসলামের ভাই। এই কারণে বিষয়টি অধিক গুরুত্ব দিয়ে দেখেছে মেট্রোপলিটন পুলিশ প্রশাসন।

এই সন্ত্রাস দমন করা এখন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জন্য গুরুদায়িত্ব বলে মনে করছে এলাকাবাসী। পাশাপাশি যাদের নাম ভাঙিয়ে ত্রাস চালাচ্ছে, তাদেরও বিষয়টি সম্পর্কে সতর্ক থাকা জরুরি। নতুবা কিছুদিন পরে উত্তর আমানতগঞ্জে সাদিক সমর্থক খুঁজে পাওয়া যাবে না, বরং রাজনৈতিক গুরু পরিবর্তন করে মেয়র খোকন সেরনিয়বাতের অনুকূলে যাবে।

নিজের রাজনৈতিক স্বার্থে হলেও সাদিক আব্দুল্লাহ এবং নিরব হোসেন টুটুলকে বিএনপি নেতা মিরাজসহ ৯/১০ জনকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দেওয়া বন্ধ করা উচিৎ। এর ব্যত্তয় ঘটলে উত্তর আমানতগঞ্জে আগামীতে সাদিক সমর্থক খুঁজে পাওয়া দুস্কর হবে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বোদ্ধরা।’

নিরব হোসেন টুটুলে বদনাম সাদিকের! পুড়তে পারে কপাল

বরিশালটাইমস রিপোর্ট

২৯ মে, ২০২৫ ১১:৪৫

প্রিন্ট এন্ড সেভ

নিরব হোসেন টুটুলে বদনাম সাদিকের! পুড়তে পারে কপাল

চলতি বছরের শেষদিকে দেশের সাত সিটি করপোরেশন নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করেছে আওয়ামী লীগ। সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থী মনোনয়নের কাজও এগিয়ে নিয়েছে দলটি।

বরিশাল সিটিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থীও প্রায় চূড়ান্ত হয়ে গেছে। হাইকমান্ডের পছন্দের তালিকায় শীর্ষে রয়েছেন ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে নিহত তার ভগ্নিপতি আব্দুর রব সেরনিয়াবাতের ছোট ছেলে এবং আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ’র ছোট ভাই আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ ওরফে খোকন সেরনিয়াবাত। বিশেষ করে খোকন সেরনিয়াবাতের ওপরে সুনজর রয়েছে প্রধানমন্ত্রী আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার। তবে একই পরিবারের সদস্য আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ’র বড় ছেলে সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহকেও মাথায় রাখছেন তারা।

বঙ্গবন্ধুর পরিবারের এই দুই সদস্যের কে পাবেন দলীয় মনোনয়ন, তা নির্ভর করবে নির্বাচনের আগ মুহূর্তের পরিবেশ এবং পরিবারের অন্যদের মতামতের ভিত্তিতে। শেষ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তের ওপরও নির্ভর করতে হতে পারে।

পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, এতোদিন চট্টগ্রামেই বেশি থেকেছেন হঠাৎ আলোচনায় আসা খোকন সেরনিয়াবাত। বরিশালে গেলে থাকেন তার শ্বশুরের বাসা নগরীর ব্রাউন কম্পাউন্ডে। ঢাকায় বসবাস করেন ধানমণ্ডিতে।

বরিশালের নেতারা জানান, পঁচাত্তরের নির্মম হত্যাকাণ্ডের পর থেকে নিভৃতচারী পরিচ্ছন্ন ব্যক্তিত্বের অধিকারী খোকন সেরনিয়াবাতের দলে কোনো পদ-পদবি নেই। সাবেক সংসদ সদস্য ও সিটি মেয়র শওকত হোসেন হিরণের মৃত্যুর পরে প্রথম মহানগর আওয়ামী লীগের শোকসভা ও দোয়া-মোনাজাতে অংশ নেন তিনি। এখন মাঝে-মধ্যেই এসে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের জন্য ভোজসভার আয়োজন করে থাকেন ভোজনরসিক খোকন।

পারিবারিকভাবে অনেক আগে থেকেই সম্পর্কে ভাতিজা সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ’র সঙ্গে খোকন সেরনিয়াবাতের চাপা দ্বন্দ্ব রয়েছে। রাজনৈতিকভাবে এখন মনোনয়ন নিয়ে তা বাড়ছে বলেও জানান আওয়ামী লীগের নেতারা।

খোকন সেরনিয়াবাত সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি বিষয়টি অনানুষ্ঠানিকভাবেই শুনেছি। এটি সম্পূর্ণ দল ও নেত্রীর বিষয়। বরিশালের মানুষের চাওয়া-না চাওয়ার বিষয়ও থাকতে পারে। নেত্রী ও বরিশালের মানুষ যদি আমাকে মেয়র হিসেবে দেখতে চান, তখনতো চিন্তা করতেই হবে’।

বড় ভাইয়ের ছেলে সাদিক আব্দুল্লাহ’র সম্ভাব্য প্রার্থীতা সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘ইচ্ছার স্বাধীনতা সবারই আছে। তিনি যদি প্রার্থী হন এবং দল যদি তাকে মনোনয়ন দেয়, তাতে কোনো সমস্যা দেখি না। তার সঙ্গে আমার কোনো বিরোধ নেই, দ্বন্দ্বও নেই’।

অন্যদিকে ২০১৪ সালে শওকত হোসেন হিরণের মৃত্যুর পর বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে উত্থান ঘটে আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ’র বড় ছেলে কেন্দ্রীয় যুবলীগের সদস্য সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ’র। মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাদিক বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনেরও নেতৃত্বে আছেন।

বর্তমানে বরিশাল মহানগর ও সদর উপজেলার আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগসহ অঙ্গসংগঠনের বেশিরভাগ নেতাকর্মীদের নেতৃত্বে অঘোষিতভাবেই রয়েছেন তিনি। বঙ্গবন্ধুর পরিবারের সদস্য হওয়ায় প্রভাব আর নেতৃত্বগুণে তৃণমূলের বেশিরভাগ নেতাকর্মী তার সঙ্গেই থাকেন।

অবশ্য বদনামও রয়েছে তার। হিরণের সঙ্গে হাসানাত পরিবারের পুরনো দ্বন্দ্ব গড়িয়েছে হিরণপতœী বরিশাল সদর আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য জেবুন্নেছা আফরোজের সঙ্গেও। আর সাদিকের বিরুদ্ধে অভিযোগ, বর্তমানে জেবুন্নেছাপন্থীদেরকে দলে অনেকটাই কোনঠাসা করে রেখেছেন তিনি।

আরও অভিযোগ রয়েছে, বরিশালের সকল সরকারি দপ্তরেই রয়েছে তার একক আধিপত্য। ২০১৫ সালের ৩০ জানুয়ারি মহানগর আওয়ামী লীগের বর্তমান শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক নিরব হোসেন টুটুল সাদিক আব্দুল্লাহ’র সঙ্গে বেড়াতে গিয়ে কুয়াকাটার হোটেলরুমে গুলিবিদ্ধ হন। ওই গুলি সাদিকের আগ্নেয়াস্ত্র থেকেই বের হয়েছিল বলে প্রথমে অভিযোগ উঠলেও অজ্ঞাত কারণে তা আর সামনে আসেনি। যদিও পরে একান্ত ঘনিষ্টজন টুটুলের চিকিৎসা ও কৃত্রিম পা বসানোর কাজ সাদিকের চেষ্টায়ই সফল হয়।

চেষ্টা করেও সাদিক আব্দুল্লাহ’র সঙ্গে এসব বিষয়ে কথা বলা সম্ভব হয়নি।’’

custom sidebar ads

Google AdSense
This is a demo ad. Your live ads will be displayed here once AdSense is properly configured.

জনপ্রিয়

Google AdSense
This is a demo ad. Your live ads will be displayed here once AdSense is properly configured.