
১৩ জুন, ২০২৫ ১৫:৫৫

Google AdSense
This is a demo ad. Your live ads will be displayed here once AdSense is properly configured.
Google AdSense
This is a demo ad. Your live ads will be displayed here once AdSense is properly configured.
বরগুনায় মহামারী আকার ধারণ করতে শুরু করেছে ডেঙ্গু। প্রতিদিনই হাসপাতালে বাড়ছে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। সারাদেশে ডেঙ্গু রোগীর প্রায় এক চতুর্থাংশই বরগুনায়।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৫ জনের মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে এ জেলায়। এ অবস্থায় ভর্তি হওয়া আক্রান্ত রোগীদের বিদ্যমান চিকিৎসা সেবা হাসপাতালের সক্ষমতার বাইরে চলে গেছে বলে জানিয়েছেন তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. রেজওয়ানুর আলাম।
বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে বরগুনার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ৬৭ জন। বর্তমানে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগী ভর্তি রয়েছে ১৯৩ জন। এবছর এখন পর্যন্ত হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন ১ হাজার ৬৩১ জন আক্রান্ত রোগী। এর মধ্যে বরগুনা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয়েছে আক্রান্ত ৫ জনের।
বর্তমানে চিকিৎসা সেবা হাসপাতালের সক্ষমতার বাইরে
গতবছর জেলায় মোট ২ হাজার ৪৩৪ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগী হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। এর মধ্যে ওই বছর বারগুনা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন ৪ জন। তবে এ বছর মাঝামাঝি সময়েই ব্যাপক হারে বেড়েছে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী।
যা সারাদেশে আক্রান্ত রোগীর শতকরা হিসেবে ২৬ দশমিক ৫১ ভাগই বরগুনায়। অপরদিকে একই সময়ে বরিশাল বিভাগে আক্রান্তের সংখ্যা ২ হাজার ২৭৫ জন। সে হিসেবে শুধু বরগুনায় আক্রান্তের সংখ্যা শতকরা প্রায় ৬২ ভাগ।
জেলার প্রায় ১২ লাখ মানুষের জন্য বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে দীর্ঘ বছর ধরেই রয়েছে চিকিৎসক সঙ্কট। এছাড়া নার্স, বিভিন্ন জনবলসহ রয়েছে শয্যা সঙ্কটও। হাসপাতালের তথ্য অনুযায়ী, ৫৫ জন চিকিৎসকের পদ থাকলেও বর্তমানে কর্মরত আছেন ১৯ জন চিকিৎসক।
অপরদিকে দেড় শতাধিক নার্স থাকার কথা থাকলেও কর্মরত নার্সের সংখ্যা মাত্র ৬৬ জন। ফলে হঠাৎ করে ডেঙ্গু রোগীদের জন্য নির্ধারিত ৫৫টি বেডের বিপরীতে প্রতিদিন প্রায় ১৫০-২০০ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হচ্ছেন হাসপাতালে।
এছাড়া ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালটিতে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত মিলিয়ে বর্তমানে প্রতিদিন প্রায় ৫ শতাধিক রোগী ভর্তি থাকেন। এরপর আউটডোরেও প্রায় প্রতিদিন ৫ শতাধিক রোগীকে চিকিৎসা দিতে হচ্ছে চিকিৎসকদের। ফলে চিকিৎসক ও নার্স সঙ্কটে হাসপাতালে আসা ভর্তি রোগীদের চিকিৎসা সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে দায়িত্বর চিকিৎসক ও নার্সদের।
বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স ইশরাত জাহান বলেন, বর্তমানে আমাদের জনবল অনেক কম। প্রতিদিন যে হারে আক্রান্ত রোগী ভর্তি হচ্ছে তা সামাল দেয়া আমাদের পক্ষে খুবই কঠিন হয়ে পড়েছে। আমরা এবার কোরবানির ঈদেও ছুটি পাইনি।
পরিবার রেখে আমরা রোগীদের সেবায় নিয়োজিত রয়েছি। একজন রোগীর কাছে গিয়ে আরেক জনের রোগীর কাছে যেতে দেরি হলে অনেক সময় শুনতে হয় নার্সদের ব্যবহার ভালো না। বরগুনায় ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল হলেও ১০০ শয্যার নার্স দিয়ে চলছে হাসপাতালে কার্যক্রম। এতে প্রায় প্রতিদিন পাঁচ শতাধিকেরও বেশি ভর্তি রোগীদের সামাল দিতে হিমশিম খেতে হয় আমাদের।
চিকিৎসা নিতে এসে ভোগান্তিতে পড়ছেন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীরা
সরেজমিনে বরগুনা জেনারেল হাসপাতাল ঘুরে দেখা যায়, জ্বরে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিতে আসা বিভিন্ন এলাকার রোগীদের পরীক্ষায় ডেঙ্গু শনাক্ত হলেই ভর্তি করা হচ্ছে হাসপাতালে। তবে এসব ভর্তি রোগীদের অভিযোগ, হাসপাতালে ভর্তির পর প্রতিদিন দেখা মিলছে না চিকিৎসকের।
এছাড়াও ভর্তি রোগী বেড়ে যাওয়ায় বেড সঙ্কট তৈরি হয়েছে। এতে রোগীদের যায়গা হয়েছে হাসপাতালের বারান্দার ফ্লোর এবং লিফটের দরজার সামনে। ভর্তি রোগীদের আরও অভিযোগ বাইরের ক্লিনিকে করতে হয় প্রয়োজনীয় পরীক্ষা এমনকি ওষুধও কিনতে হয় বাইরে থেকে।
হাসপাতালে ভর্তি শিল্পী নামে এক ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী বলেন, আমি এক সপ্তাহ ধরে ভর্তি আছি। হাসপাতালে কোনো পরীক্ষা হয় না। বাইরে থেকে পরীক্ষা করাতে হয়। প্রয়োজনীয় ওষুধও কিনতে হচ্ছে বাইরের দোকান থেকে।
মো. সাইদুল নামে ভর্তি রোগীর এক স্বজন বলেন, আমার খালা ডেঙ্গু পজিটিভ হওয়ায় তাকে নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছি। তবে এই মুহূর্তে হাসপাতালে অনেক বেশি রোগী ভর্তি থাকায় কোনো বেড পাইনি। বাধ্য হয়ে ফ্লোরেই বিছানা করে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে।
তিনি বলেন, হাসপাতালে আসার পর প্রায় চার ঘন্টা অতিবাহিত হয়ে গেছে কোনো চিকিৎসক আমাদের কাছে আসেনি। বরগুনায় যে হারে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী বৃদ্ধি পাচ্ছে তাতে চিকিৎসক বাড়ানোর পাশাপাশি প্রশাসনিকভাবে এখন নজরদারি বাড়ানো প্রয়োজন।
হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. তাসকিয়া সিদ্দিকাহ বলেন, গত বছর জুন মাসের তুলনায় এবছর রোগীর সংখ্যা অনেক বেশি। তবে রোগী ভর্তি হলে তাদেরকে আমাদের চিকিৎসা দিতে হবে। নিয়ন্ত্রণের বাইরে থাকলেও ম্যানেজ করতে হবে।
ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সকলে সচেতন থাকলে এবং যার যার বাসা বাড়ির চারপাশ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখলে এত বেশি মানুষ আক্রান্ত হতো বলে মনে হয় না। সামাজিকভাবে সবার দায়িত্ব রয়েছে ডেঙ্গু প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম পরিচালনা করা।
পরিস্থিতি সামাল দিতে স্থানীয় স্বাস্থ্য বিভাগ ও জেলা প্রশাসনের উদ্যোগ
বরগুনায় হঠাৎ করে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সাংবাদিক, পৌরসভা কতৃপক্ষসহ, বিভিন্ন গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের সঙ্গে একাধিক সভা করেছেন জেলা প্রশাসন।
এছাড়া চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে হাসপাতাল পরিদর্শন করেছেন বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক শ্যামল কৃষ্ণ মন্ডল। পরিস্থিতি বিবেচনায় হাসপাতালে ইতিমধ্যে দুজন চিকিৎসক এবং দশজন সিনিয়র নার্স পদায়ন করা হয়েছে। জেলার চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে দ্রুত সময়ের মধ্যে আরও কয়েকজন চিকিৎসককে পদায়নের বিষয়ে আশ্বাস দিয়েছেন বিভাগীয় পরিচালক শ্যামল কৃষ্ণ মন্ডল।
এ বিষয়ে বরগুনায় একটি মতবিনিময় সভা শেষে বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক শ্যামল কৃষ্ণ মন্ডল বলেন, শুধু ডেঙ্গু নয় যেকোনো স্বাস্থ্যের যদি বিপর্যয় হয় স্বাস্থ্য বিভাগ মানুষের জন্য সবসময় পাশে থাকবে। তবে বরগুনার বিষয়টি সম্পূর্ণ আলাদা।
কারণ বিভাগের ৫ টি জেলায় ডেঙ্গুতে যা আক্রান্ত হয় তার থেকে বেশি আক্রান্ত হয় বরগুনায়। যেহেতু ডেঙ্গু রোগ মশার কারণে ছড়ায় সেক্ষেত্রে মশা নিধনের বিষয়ে স্বাস্থ্য বিভাগ উপদেশ-পরামর্শ দিতে পারে।
সরকারিভাবে মশা নিধনের কাজে যে সমস্ত দপ্তর নিয়োজিত রয়েছেন, আশা করি তারা স্থানীয় প্রশাসন,স্বাস্থ্য বিভাগসহ সকলের সঙ্গে সমন্বয় করে বরগুনায় ডেঙ্গু প্রতিরোধে মশা নিধনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
বরগুনায় ডেঙ্গু হটস্পট
বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের সবশেষ ১ হাজার ৬৩১ জন আক্রান্ত রোগীর এলাকা ভিত্তিক একটি পরিসংখ্যানের তথ্য অনুযায়ী ৪১৪ জন রোগী সদর উপজেলার গৌরীচন্না ইউনিয়নের বাসিন্দা। এর মধ্যে ওই ইউনিয়নের দক্ষিণ মনসাতলী নামক একটি এলাকায় আক্রান্ত হয়েছেন ১২০ জন।
ওই এলাকার বাসিন্দা গাজী গোলাম মোস্তফা বলেন, আমাদের এ এলাকাটি বরগুনা পৌরসভার একদম কাছাকাছি হওয়ায় ঘনবসতির সৃষ্টি হয়েছে। এলাকাটি ইউনিয়নের আওতায় থাকায় পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার কোনো কর্মী নেই। এছাড়াও প্রয়োজনীয় ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় বৃষ্টি হলেই এলাকার বিভিন্ন জায়গার ডোবা নালা ও নিচু জমিতে পানি জমে থাকে।
বর্তমানে ডেঙ্গু পরিস্থিতির বিষয়ে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. রেজওয়ানুর আলম বলেন, বরগুনাতে ডেঙ্গুর পিক সিজন চলছে। ৫৫ বেডের অনুকূলে ভর্তির রোগীর সংখ্যা অনেক বেশি। সেক্ষেত্রে আমাদের চিকিৎসকসহ নার্স সংখ্যাও কম।
হাসপাতালে রোগীদের চিকিৎসাসেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। আমার মনে হচ্ছে প্রতি ঘরেই ডেঙ্গু রোগী আছে। দিনকে দিন এটি মহামারী আকার ধারণ করতে শুরু করেছে। আমরা বর্তমানে মহা বিপর্যয়ের সম্মুখীন, চিকিৎসা সেবা আমাদের সক্ষমতার বাইরে চলে গেছে।
ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগী বেড়ে যাওয়ার বিষয় জানতে চাইলে বরগুনার সিভিল সার্জন মোহাম্মদ আবুল ফাত্তাহ্ বলেন, বরগুনায় হঠাৎ করে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী বেড়ে যাওয়ার বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কারণ বলা কঠিন। মূলত সরকারের রোগতত্ত, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনষ্টিটিউট (আইইডিসিআর) ডেঙ্গু বা এ ধরনের রোগের গবেষণামূলক কাজ করেন। এ বিষয়ে তারাই হয়তো সুনির্দিষ্ট কারণ বলতে পারবেন।
বরগুনা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শফিউল আলম বলেন, গত দুই মাস ধরেই বরগুনায় ডেঙ্গু রোগে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। বেশ কয়েকজনের মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে আমরা কয়েকটি সভা করেছি। মশক নিধনে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম পৌরসভা কর্তৃপক্ষ অব্যাহত রেখেছেন।
হাসপাতালের সঙ্গে আমাদের সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রয়েছে। বিশেষ করে হাসপাতালে চিকিৎসক এবং নার্স সঙ্কটের বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। আশা করি খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে ডেঙ্গু পরিস্থিতি বিবেচনায় তারা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
বরগুনায় মহামারী আকার ধারণ করতে শুরু করেছে ডেঙ্গু। প্রতিদিনই হাসপাতালে বাড়ছে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। সারাদেশে ডেঙ্গু রোগীর প্রায় এক চতুর্থাংশই বরগুনায়।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৫ জনের মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে এ জেলায়। এ অবস্থায় ভর্তি হওয়া আক্রান্ত রোগীদের বিদ্যমান চিকিৎসা সেবা হাসপাতালের সক্ষমতার বাইরে চলে গেছে বলে জানিয়েছেন তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. রেজওয়ানুর আলাম।
বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে বরগুনার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ৬৭ জন। বর্তমানে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগী ভর্তি রয়েছে ১৯৩ জন। এবছর এখন পর্যন্ত হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন ১ হাজার ৬৩১ জন আক্রান্ত রোগী। এর মধ্যে বরগুনা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয়েছে আক্রান্ত ৫ জনের।
বর্তমানে চিকিৎসা সেবা হাসপাতালের সক্ষমতার বাইরে
গতবছর জেলায় মোট ২ হাজার ৪৩৪ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগী হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। এর মধ্যে ওই বছর বারগুনা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন ৪ জন। তবে এ বছর মাঝামাঝি সময়েই ব্যাপক হারে বেড়েছে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী।
যা সারাদেশে আক্রান্ত রোগীর শতকরা হিসেবে ২৬ দশমিক ৫১ ভাগই বরগুনায়। অপরদিকে একই সময়ে বরিশাল বিভাগে আক্রান্তের সংখ্যা ২ হাজার ২৭৫ জন। সে হিসেবে শুধু বরগুনায় আক্রান্তের সংখ্যা শতকরা প্রায় ৬২ ভাগ।
জেলার প্রায় ১২ লাখ মানুষের জন্য বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে দীর্ঘ বছর ধরেই রয়েছে চিকিৎসক সঙ্কট। এছাড়া নার্স, বিভিন্ন জনবলসহ রয়েছে শয্যা সঙ্কটও। হাসপাতালের তথ্য অনুযায়ী, ৫৫ জন চিকিৎসকের পদ থাকলেও বর্তমানে কর্মরত আছেন ১৯ জন চিকিৎসক।
অপরদিকে দেড় শতাধিক নার্স থাকার কথা থাকলেও কর্মরত নার্সের সংখ্যা মাত্র ৬৬ জন। ফলে হঠাৎ করে ডেঙ্গু রোগীদের জন্য নির্ধারিত ৫৫টি বেডের বিপরীতে প্রতিদিন প্রায় ১৫০-২০০ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হচ্ছেন হাসপাতালে।
এছাড়া ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালটিতে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত মিলিয়ে বর্তমানে প্রতিদিন প্রায় ৫ শতাধিক রোগী ভর্তি থাকেন। এরপর আউটডোরেও প্রায় প্রতিদিন ৫ শতাধিক রোগীকে চিকিৎসা দিতে হচ্ছে চিকিৎসকদের। ফলে চিকিৎসক ও নার্স সঙ্কটে হাসপাতালে আসা ভর্তি রোগীদের চিকিৎসা সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে দায়িত্বর চিকিৎসক ও নার্সদের।
বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স ইশরাত জাহান বলেন, বর্তমানে আমাদের জনবল অনেক কম। প্রতিদিন যে হারে আক্রান্ত রোগী ভর্তি হচ্ছে তা সামাল দেয়া আমাদের পক্ষে খুবই কঠিন হয়ে পড়েছে। আমরা এবার কোরবানির ঈদেও ছুটি পাইনি।
পরিবার রেখে আমরা রোগীদের সেবায় নিয়োজিত রয়েছি। একজন রোগীর কাছে গিয়ে আরেক জনের রোগীর কাছে যেতে দেরি হলে অনেক সময় শুনতে হয় নার্সদের ব্যবহার ভালো না। বরগুনায় ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল হলেও ১০০ শয্যার নার্স দিয়ে চলছে হাসপাতালে কার্যক্রম। এতে প্রায় প্রতিদিন পাঁচ শতাধিকেরও বেশি ভর্তি রোগীদের সামাল দিতে হিমশিম খেতে হয় আমাদের।
চিকিৎসা নিতে এসে ভোগান্তিতে পড়ছেন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীরা
সরেজমিনে বরগুনা জেনারেল হাসপাতাল ঘুরে দেখা যায়, জ্বরে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিতে আসা বিভিন্ন এলাকার রোগীদের পরীক্ষায় ডেঙ্গু শনাক্ত হলেই ভর্তি করা হচ্ছে হাসপাতালে। তবে এসব ভর্তি রোগীদের অভিযোগ, হাসপাতালে ভর্তির পর প্রতিদিন দেখা মিলছে না চিকিৎসকের।
এছাড়াও ভর্তি রোগী বেড়ে যাওয়ায় বেড সঙ্কট তৈরি হয়েছে। এতে রোগীদের যায়গা হয়েছে হাসপাতালের বারান্দার ফ্লোর এবং লিফটের দরজার সামনে। ভর্তি রোগীদের আরও অভিযোগ বাইরের ক্লিনিকে করতে হয় প্রয়োজনীয় পরীক্ষা এমনকি ওষুধও কিনতে হয় বাইরে থেকে।
হাসপাতালে ভর্তি শিল্পী নামে এক ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী বলেন, আমি এক সপ্তাহ ধরে ভর্তি আছি। হাসপাতালে কোনো পরীক্ষা হয় না। বাইরে থেকে পরীক্ষা করাতে হয়। প্রয়োজনীয় ওষুধও কিনতে হচ্ছে বাইরের দোকান থেকে।
মো. সাইদুল নামে ভর্তি রোগীর এক স্বজন বলেন, আমার খালা ডেঙ্গু পজিটিভ হওয়ায় তাকে নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছি। তবে এই মুহূর্তে হাসপাতালে অনেক বেশি রোগী ভর্তি থাকায় কোনো বেড পাইনি। বাধ্য হয়ে ফ্লোরেই বিছানা করে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে।
তিনি বলেন, হাসপাতালে আসার পর প্রায় চার ঘন্টা অতিবাহিত হয়ে গেছে কোনো চিকিৎসক আমাদের কাছে আসেনি। বরগুনায় যে হারে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী বৃদ্ধি পাচ্ছে তাতে চিকিৎসক বাড়ানোর পাশাপাশি প্রশাসনিকভাবে এখন নজরদারি বাড়ানো প্রয়োজন।
হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. তাসকিয়া সিদ্দিকাহ বলেন, গত বছর জুন মাসের তুলনায় এবছর রোগীর সংখ্যা অনেক বেশি। তবে রোগী ভর্তি হলে তাদেরকে আমাদের চিকিৎসা দিতে হবে। নিয়ন্ত্রণের বাইরে থাকলেও ম্যানেজ করতে হবে।
ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সকলে সচেতন থাকলে এবং যার যার বাসা বাড়ির চারপাশ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখলে এত বেশি মানুষ আক্রান্ত হতো বলে মনে হয় না। সামাজিকভাবে সবার দায়িত্ব রয়েছে ডেঙ্গু প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম পরিচালনা করা।
পরিস্থিতি সামাল দিতে স্থানীয় স্বাস্থ্য বিভাগ ও জেলা প্রশাসনের উদ্যোগ
বরগুনায় হঠাৎ করে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সাংবাদিক, পৌরসভা কতৃপক্ষসহ, বিভিন্ন গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের সঙ্গে একাধিক সভা করেছেন জেলা প্রশাসন।
এছাড়া চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে হাসপাতাল পরিদর্শন করেছেন বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক শ্যামল কৃষ্ণ মন্ডল। পরিস্থিতি বিবেচনায় হাসপাতালে ইতিমধ্যে দুজন চিকিৎসক এবং দশজন সিনিয়র নার্স পদায়ন করা হয়েছে। জেলার চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে দ্রুত সময়ের মধ্যে আরও কয়েকজন চিকিৎসককে পদায়নের বিষয়ে আশ্বাস দিয়েছেন বিভাগীয় পরিচালক শ্যামল কৃষ্ণ মন্ডল।
এ বিষয়ে বরগুনায় একটি মতবিনিময় সভা শেষে বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক শ্যামল কৃষ্ণ মন্ডল বলেন, শুধু ডেঙ্গু নয় যেকোনো স্বাস্থ্যের যদি বিপর্যয় হয় স্বাস্থ্য বিভাগ মানুষের জন্য সবসময় পাশে থাকবে। তবে বরগুনার বিষয়টি সম্পূর্ণ আলাদা।
কারণ বিভাগের ৫ টি জেলায় ডেঙ্গুতে যা আক্রান্ত হয় তার থেকে বেশি আক্রান্ত হয় বরগুনায়। যেহেতু ডেঙ্গু রোগ মশার কারণে ছড়ায় সেক্ষেত্রে মশা নিধনের বিষয়ে স্বাস্থ্য বিভাগ উপদেশ-পরামর্শ দিতে পারে।
সরকারিভাবে মশা নিধনের কাজে যে সমস্ত দপ্তর নিয়োজিত রয়েছেন, আশা করি তারা স্থানীয় প্রশাসন,স্বাস্থ্য বিভাগসহ সকলের সঙ্গে সমন্বয় করে বরগুনায় ডেঙ্গু প্রতিরোধে মশা নিধনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
বরগুনায় ডেঙ্গু হটস্পট
বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের সবশেষ ১ হাজার ৬৩১ জন আক্রান্ত রোগীর এলাকা ভিত্তিক একটি পরিসংখ্যানের তথ্য অনুযায়ী ৪১৪ জন রোগী সদর উপজেলার গৌরীচন্না ইউনিয়নের বাসিন্দা। এর মধ্যে ওই ইউনিয়নের দক্ষিণ মনসাতলী নামক একটি এলাকায় আক্রান্ত হয়েছেন ১২০ জন।
ওই এলাকার বাসিন্দা গাজী গোলাম মোস্তফা বলেন, আমাদের এ এলাকাটি বরগুনা পৌরসভার একদম কাছাকাছি হওয়ায় ঘনবসতির সৃষ্টি হয়েছে। এলাকাটি ইউনিয়নের আওতায় থাকায় পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার কোনো কর্মী নেই। এছাড়াও প্রয়োজনীয় ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় বৃষ্টি হলেই এলাকার বিভিন্ন জায়গার ডোবা নালা ও নিচু জমিতে পানি জমে থাকে।
বর্তমানে ডেঙ্গু পরিস্থিতির বিষয়ে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. রেজওয়ানুর আলম বলেন, বরগুনাতে ডেঙ্গুর পিক সিজন চলছে। ৫৫ বেডের অনুকূলে ভর্তির রোগীর সংখ্যা অনেক বেশি। সেক্ষেত্রে আমাদের চিকিৎসকসহ নার্স সংখ্যাও কম।
হাসপাতালে রোগীদের চিকিৎসাসেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। আমার মনে হচ্ছে প্রতি ঘরেই ডেঙ্গু রোগী আছে। দিনকে দিন এটি মহামারী আকার ধারণ করতে শুরু করেছে। আমরা বর্তমানে মহা বিপর্যয়ের সম্মুখীন, চিকিৎসা সেবা আমাদের সক্ষমতার বাইরে চলে গেছে।
ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগী বেড়ে যাওয়ার বিষয় জানতে চাইলে বরগুনার সিভিল সার্জন মোহাম্মদ আবুল ফাত্তাহ্ বলেন, বরগুনায় হঠাৎ করে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী বেড়ে যাওয়ার বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কারণ বলা কঠিন। মূলত সরকারের রোগতত্ত, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনষ্টিটিউট (আইইডিসিআর) ডেঙ্গু বা এ ধরনের রোগের গবেষণামূলক কাজ করেন। এ বিষয়ে তারাই হয়তো সুনির্দিষ্ট কারণ বলতে পারবেন।
বরগুনা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শফিউল আলম বলেন, গত দুই মাস ধরেই বরগুনায় ডেঙ্গু রোগে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। বেশ কয়েকজনের মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে আমরা কয়েকটি সভা করেছি। মশক নিধনে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম পৌরসভা কর্তৃপক্ষ অব্যাহত রেখেছেন।
হাসপাতালের সঙ্গে আমাদের সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রয়েছে। বিশেষ করে হাসপাতালে চিকিৎসক এবং নার্স সঙ্কটের বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। আশা করি খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে ডেঙ্গু পরিস্থিতি বিবেচনায় তারা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১৯:৫১
বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলায় বাংলাদেশ কোস্টগার্ডের বিশেষ অভিযানে ১০২ কেজি হরিণের মাংসসহ এক শিকারিকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
রবিবার (১৪ ডিসেম্বর) ভোর রাত ৩টার দিকে পাথরঘাটা উপজেলার কাঠালতলী ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের কাঠালতলী গ্রাম থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতারকৃত ব্যক্তির নাম মো. লিটন (৪৯)। তিনি মো. রুস্তম আলীর পুত্র এবং পাথরঘাটা উপজেলার কাঠালতলী এলাকার বাসিন্দা।
বাংলাদেশ কোস্টগার্ড দক্ষিণ জোন সূত্রে জানা যায়, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে আজ রাত আনুমানিক তিনটার দিকে বিসিজি স্টেশন পাথরঘাটা একটি বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে। অভিযানে উক্ত এলাকা থেকে অবৈধভাবে শিকার করা হরিণের ১০২ কেজি মাংস উদ্ধার করা হয়, যার আনুমানিক বাজারমূল্য এক লাখ দুই হাজার টাকা।
অভিযানে হরিণ শিকারের সঙ্গে জড়িত মো. লিটনকে হাতেনাতে গ্রেফতার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তিনি অবৈধভাবে হরিণ শিকারের সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন বলে জানা গেছে।
বাংলাদেশ কোস্টগার্ড কর্তৃপক্ষ জানান, উপকূলীয় ও সংরক্ষিত বনাঞ্চলে অবৈধ শিকার ও পরিবেশবিরোধী কর্মকাণ্ডরোধে তাদের নিয়মিত অভিযান অব্যাহত থাকবে।
বন ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইনে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া জন্য উদ্ধারকৃত হরিণের মাংসসহ গ্রেফতারকৃত ব্যক্তিকে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।
বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলায় বাংলাদেশ কোস্টগার্ডের বিশেষ অভিযানে ১০২ কেজি হরিণের মাংসসহ এক শিকারিকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
রবিবার (১৪ ডিসেম্বর) ভোর রাত ৩টার দিকে পাথরঘাটা উপজেলার কাঠালতলী ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের কাঠালতলী গ্রাম থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতারকৃত ব্যক্তির নাম মো. লিটন (৪৯)। তিনি মো. রুস্তম আলীর পুত্র এবং পাথরঘাটা উপজেলার কাঠালতলী এলাকার বাসিন্দা।
বাংলাদেশ কোস্টগার্ড দক্ষিণ জোন সূত্রে জানা যায়, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে আজ রাত আনুমানিক তিনটার দিকে বিসিজি স্টেশন পাথরঘাটা একটি বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে। অভিযানে উক্ত এলাকা থেকে অবৈধভাবে শিকার করা হরিণের ১০২ কেজি মাংস উদ্ধার করা হয়, যার আনুমানিক বাজারমূল্য এক লাখ দুই হাজার টাকা।
অভিযানে হরিণ শিকারের সঙ্গে জড়িত মো. লিটনকে হাতেনাতে গ্রেফতার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তিনি অবৈধভাবে হরিণ শিকারের সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন বলে জানা গেছে।
বাংলাদেশ কোস্টগার্ড কর্তৃপক্ষ জানান, উপকূলীয় ও সংরক্ষিত বনাঞ্চলে অবৈধ শিকার ও পরিবেশবিরোধী কর্মকাণ্ডরোধে তাদের নিয়মিত অভিযান অব্যাহত থাকবে।
বন ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইনে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া জন্য উদ্ধারকৃত হরিণের মাংসসহ গ্রেফতারকৃত ব্যক্তিকে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।

২৯ নভেম্বর, ২০২৫ ১৩:৪৪
রাত তখন প্রায় দেড়টা। বরগুনার তালতলী উপজেলার সাগরঘেঁষা তেঁতুলবাড়িয়া মাছঘাট থেকে ঢাকার উদ্দেশে বের হয়েছিল মাছবোঝাই একটি বাস। গভীর রাতে নথুল্লাবাদের কাছাকাছি পৌঁছাতেই থামিয়ে দেওয়া হয় যাত্রীবাহী পরিবহনটিকে।
এদিকে, গোপন তথ্যের সূত্র ধরে জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা (এনএসআই) অভিযান চালায় সেখানে। কাশিপুরের নিস্তব্ধতা ভেঙে তখন আলো ও মানুষের কোলাহল। বাসের বক্স খুলতেই মেলে জাটকার গন্ধ ভরা কয়েক ঝুড়ি। জব্দ করা হয় সবকিছু।
কিন্তু জাটকার সঙ্গে আরো অন্তত ১০০ কেজির মতো পোয়া আর সাগরের ফ্যাসা মাছ ছিল। এই মাছগুলো বৈধ। তবু সেগুলোও জব্দের তালিকায় চলে যায়। পরদিন সকালে বরিশালের সমাজসেবা অধিদপ্তরের আটটি শিশু পরিবারে মাছ বিতরণ হতে দেখা যায়। তাদের মধ্যে মাত্র আট থেকে ১০ কেজি পোয়া মাছ বিতরণ করা হয়।
এছাড়া প্রতিটি প্রতিষ্ঠান আনুমানিক গড়ে ৩০০টি জাটকা পেয়েছেন। এসব তথ্য শিশু পারিবার ঘুরে নিশ্চিত হয়েছেন প্রতিবেদক।
জেলে সেলিম মাতুব্বরের গল্প এখানেই ঘুরে যায় অন্যদিকে। তেঁতুলবাড়িয়ার ঘাটের সেই পরিচিত মানুষটি বহু বছর ধরে ঢাকার বাড্ডার বাজারে মাছ পাঠান। ভোরের অন্ধকারে যখন জালের পানি এখনও দুই হাত ভিজিয়ে রাখে, তখনই তাঁর দিন শুরু হয়।
সেদিনও অন্য দিনের মতো বরফের ঠাণ্ডায় হাতে কাঁপুনি ধরে। সেই হাতে তিন ধরনের মাছ পলি ব্যাগে আলাদা করে সাজিয়েছিলেন তিনি।
প্রথমেই তুলে নেন ছোট-বড় আকারের পোয়া, যেগুলো পৃথক ১৭টি প্যাকেট করে রাখা ছিল। সেগুলোর ওজন দাঁড়ায় ৬৮ কেজি ৬০০ গ্রাম। এরপর আসে সাগর ফ্যাসা, যার ওজন মোটামুটি আট কেজি ৭০০ গ্রাম। সবশেষে মাথা-লেজ মিলে ১০ ইঞ্চি আকারের ইলিশ। সেগুলোর ওজন সামান্য হলেও ঢাকায় সাধারণ ক্রেতাদের চাহিদা রয়েছে বলে সুন্দরভাবে বরফে মুড়িয়ে ড্রামে রাখেন তিনি।
সব মিলিয়ে মাছগুলো সাজানো হয়েছিল একদম নিয়ম মেনে, যেমনটি তিনি বছরের পর বছর করে আসছেন। কিন্তু সেই পরিচ্ছন্ন প্রস্তুতি শেষ পর্যন্ত তাঁকে রক্ষা করতে পারেনি রাতের অভিযানের হাত থেকে। সব মিলিয়ে বরফজাত করে তুলে দিয়েছিলেন ইসলাম পরিবহনের বাসে। নথুল্লাবাদে পৌঁছাতেই ফোন আসে, এনএসআই ড্রামসহ পুরো মালামাল ‘ঝাটকা’ উল্লেখ করে জব্দ করেছে।
এরপর শুরু হয় ফেরত চাওয়ার দীর্ঘ চেষ্টা। সেলিম তাঁর এক আত্মীয়কে কাশিপুরে পাঠান বৈধ পোয়া আর ফ্যাসা ফেরত আনার জন্য। কিন্তু এনএসআই সদস্যরা জানিয়ে দেন, মাছ ফেরত দেওয়া সম্ভব নয়। পরদিন শিশু পরিবারে গেলে সেখানেও একই সুর। সমাজসেবার কর্মকর্তারা বলেন, মাছ তারা ইতোমধ্যেই এনএসআই ও মৎস্য বিভাগের কাছ থেকে বুঝে নিয়েছেন। ফেরতের প্রশ্নই আসে না।
অভিযোগ, এরপর ওই আত্মীয়ের কাছ থেকে নেওয়া হয় একটি সাদা কাগজে ‘স্বেচ্ছায় মাছ বিতরণের’ মুচলেকা। যেন মাছ তিনি স্বেচ্ছায় দান করেছেন, এমন স্বীকারোক্তির কাগজে সই করিয়ে তবেই বিদায় দেওয়া হয়। এত কিছু ঘটনার পরও সরকারি দপ্তরের বক্তব্যে কিন্তু মিল নেই।
বরিশাল সদর উপজেলা মৎস্য বিভাগের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জামাল হোসেন বলেন, ‘অভিযানে শুধু জাটকা জব্দ করা হয়েছে, বৈধ কোনো মাছ ছিল না। সমাজসেবার আটটি প্রতিষ্ঠানের প্রত্যেকটিকে গড়ে ৩০০টি করে জাকটা বিতরণ করা হয়েছে। বিতরণের সময় আমি ঘটনাস্থলে ছিলাম।’
কিন্তু বরিশাল সরকারি শিশু পরিবার (বালক)-এর তত্ত্বাবধায়ক মো. আসিফ চৌধুরী সরাসরি স্বীকার করছেন, জাটকার সঙ্গে আনুমানিক ১০ কেজি পোয়া আর ফ্যাসা ছিল। মালিক তা চাইতে এসেছিলেন। কিন্তু যেহেতু আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মাছ বুঝিয়ে দিয়েছে, তাই ফেরত দেওয়া যায়নি। জাটকা বিতরণের আগে তার শিশু পরিবারটিতে ভাগ করা হয়েছিল। তিনি শিশু পরিবারে আনুমানিক ৩০০টি জাটকা পেয়েছেন।
এনএসআইয়ের অংশগ্রহণ নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। সাধারণত জাটকা রক্ষার অভিযানে তাঁরা থাকেন না। এই প্রথম এমন অভিযান পরিচালনা করলেন গোয়েন্দা সংস্থাটির সদস্যরা।
বাংলাদেশ মৎস্য শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসেন বলেন, ‘জাটকা রক্ষা রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব, প্রয়োজনে যে কোনো বাহিনী অভিযান চালাতে পারে।’ তবে এনএসআইয়ের নেতৃত্বে জাটকা জব্দের ঘটনাকে তিনি ‘নজিরবিহীন’ বলেই উল্লেখ করেন।
রাত তখন প্রায় দেড়টা। বরগুনার তালতলী উপজেলার সাগরঘেঁষা তেঁতুলবাড়িয়া মাছঘাট থেকে ঢাকার উদ্দেশে বের হয়েছিল মাছবোঝাই একটি বাস। গভীর রাতে নথুল্লাবাদের কাছাকাছি পৌঁছাতেই থামিয়ে দেওয়া হয় যাত্রীবাহী পরিবহনটিকে।
এদিকে, গোপন তথ্যের সূত্র ধরে জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা (এনএসআই) অভিযান চালায় সেখানে। কাশিপুরের নিস্তব্ধতা ভেঙে তখন আলো ও মানুষের কোলাহল। বাসের বক্স খুলতেই মেলে জাটকার গন্ধ ভরা কয়েক ঝুড়ি। জব্দ করা হয় সবকিছু।
কিন্তু জাটকার সঙ্গে আরো অন্তত ১০০ কেজির মতো পোয়া আর সাগরের ফ্যাসা মাছ ছিল। এই মাছগুলো বৈধ। তবু সেগুলোও জব্দের তালিকায় চলে যায়। পরদিন সকালে বরিশালের সমাজসেবা অধিদপ্তরের আটটি শিশু পরিবারে মাছ বিতরণ হতে দেখা যায়। তাদের মধ্যে মাত্র আট থেকে ১০ কেজি পোয়া মাছ বিতরণ করা হয়।
এছাড়া প্রতিটি প্রতিষ্ঠান আনুমানিক গড়ে ৩০০টি জাটকা পেয়েছেন। এসব তথ্য শিশু পারিবার ঘুরে নিশ্চিত হয়েছেন প্রতিবেদক।
জেলে সেলিম মাতুব্বরের গল্প এখানেই ঘুরে যায় অন্যদিকে। তেঁতুলবাড়িয়ার ঘাটের সেই পরিচিত মানুষটি বহু বছর ধরে ঢাকার বাড্ডার বাজারে মাছ পাঠান। ভোরের অন্ধকারে যখন জালের পানি এখনও দুই হাত ভিজিয়ে রাখে, তখনই তাঁর দিন শুরু হয়।
সেদিনও অন্য দিনের মতো বরফের ঠাণ্ডায় হাতে কাঁপুনি ধরে। সেই হাতে তিন ধরনের মাছ পলি ব্যাগে আলাদা করে সাজিয়েছিলেন তিনি।
প্রথমেই তুলে নেন ছোট-বড় আকারের পোয়া, যেগুলো পৃথক ১৭টি প্যাকেট করে রাখা ছিল। সেগুলোর ওজন দাঁড়ায় ৬৮ কেজি ৬০০ গ্রাম। এরপর আসে সাগর ফ্যাসা, যার ওজন মোটামুটি আট কেজি ৭০০ গ্রাম। সবশেষে মাথা-লেজ মিলে ১০ ইঞ্চি আকারের ইলিশ। সেগুলোর ওজন সামান্য হলেও ঢাকায় সাধারণ ক্রেতাদের চাহিদা রয়েছে বলে সুন্দরভাবে বরফে মুড়িয়ে ড্রামে রাখেন তিনি।
সব মিলিয়ে মাছগুলো সাজানো হয়েছিল একদম নিয়ম মেনে, যেমনটি তিনি বছরের পর বছর করে আসছেন। কিন্তু সেই পরিচ্ছন্ন প্রস্তুতি শেষ পর্যন্ত তাঁকে রক্ষা করতে পারেনি রাতের অভিযানের হাত থেকে। সব মিলিয়ে বরফজাত করে তুলে দিয়েছিলেন ইসলাম পরিবহনের বাসে। নথুল্লাবাদে পৌঁছাতেই ফোন আসে, এনএসআই ড্রামসহ পুরো মালামাল ‘ঝাটকা’ উল্লেখ করে জব্দ করেছে।
এরপর শুরু হয় ফেরত চাওয়ার দীর্ঘ চেষ্টা। সেলিম তাঁর এক আত্মীয়কে কাশিপুরে পাঠান বৈধ পোয়া আর ফ্যাসা ফেরত আনার জন্য। কিন্তু এনএসআই সদস্যরা জানিয়ে দেন, মাছ ফেরত দেওয়া সম্ভব নয়। পরদিন শিশু পরিবারে গেলে সেখানেও একই সুর। সমাজসেবার কর্মকর্তারা বলেন, মাছ তারা ইতোমধ্যেই এনএসআই ও মৎস্য বিভাগের কাছ থেকে বুঝে নিয়েছেন। ফেরতের প্রশ্নই আসে না।
অভিযোগ, এরপর ওই আত্মীয়ের কাছ থেকে নেওয়া হয় একটি সাদা কাগজে ‘স্বেচ্ছায় মাছ বিতরণের’ মুচলেকা। যেন মাছ তিনি স্বেচ্ছায় দান করেছেন, এমন স্বীকারোক্তির কাগজে সই করিয়ে তবেই বিদায় দেওয়া হয়। এত কিছু ঘটনার পরও সরকারি দপ্তরের বক্তব্যে কিন্তু মিল নেই।
বরিশাল সদর উপজেলা মৎস্য বিভাগের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জামাল হোসেন বলেন, ‘অভিযানে শুধু জাটকা জব্দ করা হয়েছে, বৈধ কোনো মাছ ছিল না। সমাজসেবার আটটি প্রতিষ্ঠানের প্রত্যেকটিকে গড়ে ৩০০টি করে জাকটা বিতরণ করা হয়েছে। বিতরণের সময় আমি ঘটনাস্থলে ছিলাম।’
কিন্তু বরিশাল সরকারি শিশু পরিবার (বালক)-এর তত্ত্বাবধায়ক মো. আসিফ চৌধুরী সরাসরি স্বীকার করছেন, জাটকার সঙ্গে আনুমানিক ১০ কেজি পোয়া আর ফ্যাসা ছিল। মালিক তা চাইতে এসেছিলেন। কিন্তু যেহেতু আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মাছ বুঝিয়ে দিয়েছে, তাই ফেরত দেওয়া যায়নি। জাটকা বিতরণের আগে তার শিশু পরিবারটিতে ভাগ করা হয়েছিল। তিনি শিশু পরিবারে আনুমানিক ৩০০টি জাটকা পেয়েছেন।
এনএসআইয়ের অংশগ্রহণ নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। সাধারণত জাটকা রক্ষার অভিযানে তাঁরা থাকেন না। এই প্রথম এমন অভিযান পরিচালনা করলেন গোয়েন্দা সংস্থাটির সদস্যরা।
বাংলাদেশ মৎস্য শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসেন বলেন, ‘জাটকা রক্ষা রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব, প্রয়োজনে যে কোনো বাহিনী অভিযান চালাতে পারে।’ তবে এনএসআইয়ের নেতৃত্বে জাটকা জব্দের ঘটনাকে তিনি ‘নজিরবিহীন’ বলেই উল্লেখ করেন।

২৮ নভেম্বর, ২০২৫ ১৮:৩৫
একসময় শীতকাল এলেই বাংলাদেশের উপকূলীয় বরগুনার বামনা উপজেলার গ্রামগঞ্জে যে উৎসবের আমেজ বইত, তার প্রধান আকর্ষণ ছিল সুস্বাদু খেজুরের রস ও গুড়। হেমন্তের মাঝামাঝি থেকে শীতের ভরা মৌসুম পর্যন্ত পুরো জনপদে চলত নবান্নের উৎসব।
কিন্তু কালের বিবর্তন এবং প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট তিন কারণে সেই চিরচেনা দৃশ্য এখন আর চোখে পড়ে না। ঐতিহ্যের প্রতীক খেজুর গাছ আশঙ্কাজনক হারে হ্রাস পেয়েছে। উপজেলার গ্রামে-গ্রামে শীতের সকালে মিষ্টি রোদের তাপ নিতে নিতে মাটির ভাঁড়ে খেজুরের সুস্বাদু রস পান করার স্মৃতি আজও অমলিন। শুধু পানীয় হিসাবে নয়, এই রস দিয়ে তৈরি হতো নানান ধরনের পিঠা, পায়েস, ক্ষীর এবং লোভনীয় পাটালি ও নালি গুড়। এটি ছিল বরগুনাসহ দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের নবান্নের সেরা উপহার ও আবহমান বাংলার সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ। খেজুর গুড় ছাড়া এই অঞ্চলের শীতকালীন উৎসব ভাবাই যেত না। খেজুরের রস ছিল গ্রামীণ জীবনের শীতের উৎসবের মূল সূচনা।
এখন চোখে পড়ে না রস আহরণে গাছিদের সেই ব্যস্ততা। কোমরে দড়ির সঙ্গে ঝুড়ি বেঁধে ধারালো দা দিয়ে গাছ চাঁচাছোলা ও নলি বসানোর কাজ। এখন শুধু ক্যালেন্ডার ও ছবিতেই সেই দৃশ্য দেখা যায়। সাতসকালে খেজুরের রস নিয়ে গাছিরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে হাঁকডাক দিতেন, সেই দৃশ্যও এখন বিরল। ঐতিহ্যবাহী খেজুরের রস ও গুড় দুষ্প্রাপ্য হয়ে ওঠায় হতাশ এ অঞ্চলের গাছিরা। যদি এখনই কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়া হয়, তবে অচিরেই এই ঐতিহ্য চিরতরে হারিয়ে যাবে। তবে অল্পকিছু নিবেদিতপ্রাণ গাছি এখনো সংগ্রাম করে যাচ্ছেন।
বামনা উপজেলায় প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেমন সিডর, আইলার আঘাত এবং জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে খেজুর গাছ কমে গেছে। গত ৯-১০ বছর ধরে এই প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে দক্ষিণাঞ্চলে খেজুর গাছের সংখ্যা কমতে শুরু করেছে। একসময় শীতকালে এই অঞ্চলের সর্বত্র শীত উদ্যাপনের আয়োজন শুরু হয়ে যেত এবং অতিথিদের রসের তৈরি পায়েস দিয়ে আপ্যায়ন করার প্রচলন ছিল। এখন রস না পাওয়ায় নবান্নের সেই আনন্দ থেকে মানুষ বঞ্চিত হচ্ছেন।
বামনা উপজেলার রামনা ইউনিয়নের বলইবুনিয়া গ্রামের গাছি মো. ফিরোজ মিয়া জানান, আগে তাদের দারুণ কদর ছিল। মৌসুম শুরুর আগে থেকেই কথাবার্তা পাকা হতো কার কটি খেজুর গাছ কাটতে হবে। কিন্তু এখন আর আগের মতো গাছও নেই, আর গ্রামের লোকরাও তেমন খেজুর রস সংগ্রহ করতে চান না। তারা অল্পকিছু গাছ কেটে নিজেদের চাহিদা মেটান।
উপজেলার বুকাবুনিয়া ইউনিয়নের লক্ষ্মীপুরা গ্রামের গাছি আব্দুল খালেক দফাদার এখনো রস সংগ্রহ করছেন। প্রতিদিন ভোরে গাছিদের কাছে খেজুরের রস খাওয়ার জন্য সাধারণ মানুষের ভিড় দেখা যায়। রস সংগ্রহের জন্য তিনি বাদুড়ের সংস্পর্শ এড়াতে বাঁশের বেড়া দিয়ে প্রতিরক্ষার ব্যবস্থা করেছেন। গাছি খালেক দফাদার বলেন, শীত মৌসুমে কাঙ্ক্ষিত রসের সন্ধান পাচ্ছি না। গ্রামে দিনদিন কমে যাচ্ছে খেজুর গাছের সংখ্যা। গাছ কম থাকায় এখন শুধু রস বিক্রি করা হয়। প্রতি গ্লাস রসের দাম ২০ টাকা এবং প্রতি লিটার ৮০ টাকা। তিনি বলেন, অনেক গাছ কেটে ফেলেছে। এজন্য রসের দাম বেশি।
বামনা উপজেলাজুড়ে খেজুর গাছ কমে যাওয়ার পেছনে প্রধানত তিনটি কারণ দায়ী। এর মধ্যে রয়েছে-ইটভাটার জ্বালানি হিসাবে খেজুর গাছের ব্যবহার, জলবায়ু পরিবর্তন ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ, গাছিদের অভাব ও পেশার অনিশ্চয়তা।
পরিবেশ রক্ষা এবং রসের ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনার জন্য সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে রাস্তার পাশে খেজুর গাছ লাগানোর দাবি উঠেছে। বামনার বাসিন্দারা বলছেন, এই ঐতিহ্য সংরক্ষণ করা শুধু অর্থনৈতিক নয়, সাংস্কৃতিক ও পরিবেশগত দিক থেকেও জরুরি। এখনই যদি খেজুর গাছ লাগানো ও রক্ষার বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া না হয় তবে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম শুধু স্মৃতিতেই খুঁজে পাবে এই ঐতিহ্যকে।
একসময় শীতকাল এলেই বাংলাদেশের উপকূলীয় বরগুনার বামনা উপজেলার গ্রামগঞ্জে যে উৎসবের আমেজ বইত, তার প্রধান আকর্ষণ ছিল সুস্বাদু খেজুরের রস ও গুড়। হেমন্তের মাঝামাঝি থেকে শীতের ভরা মৌসুম পর্যন্ত পুরো জনপদে চলত নবান্নের উৎসব।
কিন্তু কালের বিবর্তন এবং প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট তিন কারণে সেই চিরচেনা দৃশ্য এখন আর চোখে পড়ে না। ঐতিহ্যের প্রতীক খেজুর গাছ আশঙ্কাজনক হারে হ্রাস পেয়েছে। উপজেলার গ্রামে-গ্রামে শীতের সকালে মিষ্টি রোদের তাপ নিতে নিতে মাটির ভাঁড়ে খেজুরের সুস্বাদু রস পান করার স্মৃতি আজও অমলিন। শুধু পানীয় হিসাবে নয়, এই রস দিয়ে তৈরি হতো নানান ধরনের পিঠা, পায়েস, ক্ষীর এবং লোভনীয় পাটালি ও নালি গুড়। এটি ছিল বরগুনাসহ দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের নবান্নের সেরা উপহার ও আবহমান বাংলার সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ। খেজুর গুড় ছাড়া এই অঞ্চলের শীতকালীন উৎসব ভাবাই যেত না। খেজুরের রস ছিল গ্রামীণ জীবনের শীতের উৎসবের মূল সূচনা।
এখন চোখে পড়ে না রস আহরণে গাছিদের সেই ব্যস্ততা। কোমরে দড়ির সঙ্গে ঝুড়ি বেঁধে ধারালো দা দিয়ে গাছ চাঁচাছোলা ও নলি বসানোর কাজ। এখন শুধু ক্যালেন্ডার ও ছবিতেই সেই দৃশ্য দেখা যায়। সাতসকালে খেজুরের রস নিয়ে গাছিরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে হাঁকডাক দিতেন, সেই দৃশ্যও এখন বিরল। ঐতিহ্যবাহী খেজুরের রস ও গুড় দুষ্প্রাপ্য হয়ে ওঠায় হতাশ এ অঞ্চলের গাছিরা। যদি এখনই কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়া হয়, তবে অচিরেই এই ঐতিহ্য চিরতরে হারিয়ে যাবে। তবে অল্পকিছু নিবেদিতপ্রাণ গাছি এখনো সংগ্রাম করে যাচ্ছেন।
বামনা উপজেলায় প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেমন সিডর, আইলার আঘাত এবং জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে খেজুর গাছ কমে গেছে। গত ৯-১০ বছর ধরে এই প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে দক্ষিণাঞ্চলে খেজুর গাছের সংখ্যা কমতে শুরু করেছে। একসময় শীতকালে এই অঞ্চলের সর্বত্র শীত উদ্যাপনের আয়োজন শুরু হয়ে যেত এবং অতিথিদের রসের তৈরি পায়েস দিয়ে আপ্যায়ন করার প্রচলন ছিল। এখন রস না পাওয়ায় নবান্নের সেই আনন্দ থেকে মানুষ বঞ্চিত হচ্ছেন।
বামনা উপজেলার রামনা ইউনিয়নের বলইবুনিয়া গ্রামের গাছি মো. ফিরোজ মিয়া জানান, আগে তাদের দারুণ কদর ছিল। মৌসুম শুরুর আগে থেকেই কথাবার্তা পাকা হতো কার কটি খেজুর গাছ কাটতে হবে। কিন্তু এখন আর আগের মতো গাছও নেই, আর গ্রামের লোকরাও তেমন খেজুর রস সংগ্রহ করতে চান না। তারা অল্পকিছু গাছ কেটে নিজেদের চাহিদা মেটান।
উপজেলার বুকাবুনিয়া ইউনিয়নের লক্ষ্মীপুরা গ্রামের গাছি আব্দুল খালেক দফাদার এখনো রস সংগ্রহ করছেন। প্রতিদিন ভোরে গাছিদের কাছে খেজুরের রস খাওয়ার জন্য সাধারণ মানুষের ভিড় দেখা যায়। রস সংগ্রহের জন্য তিনি বাদুড়ের সংস্পর্শ এড়াতে বাঁশের বেড়া দিয়ে প্রতিরক্ষার ব্যবস্থা করেছেন। গাছি খালেক দফাদার বলেন, শীত মৌসুমে কাঙ্ক্ষিত রসের সন্ধান পাচ্ছি না। গ্রামে দিনদিন কমে যাচ্ছে খেজুর গাছের সংখ্যা। গাছ কম থাকায় এখন শুধু রস বিক্রি করা হয়। প্রতি গ্লাস রসের দাম ২০ টাকা এবং প্রতি লিটার ৮০ টাকা। তিনি বলেন, অনেক গাছ কেটে ফেলেছে। এজন্য রসের দাম বেশি।
বামনা উপজেলাজুড়ে খেজুর গাছ কমে যাওয়ার পেছনে প্রধানত তিনটি কারণ দায়ী। এর মধ্যে রয়েছে-ইটভাটার জ্বালানি হিসাবে খেজুর গাছের ব্যবহার, জলবায়ু পরিবর্তন ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ, গাছিদের অভাব ও পেশার অনিশ্চয়তা।
পরিবেশ রক্ষা এবং রসের ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনার জন্য সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে রাস্তার পাশে খেজুর গাছ লাগানোর দাবি উঠেছে। বামনার বাসিন্দারা বলছেন, এই ঐতিহ্য সংরক্ষণ করা শুধু অর্থনৈতিক নয়, সাংস্কৃতিক ও পরিবেশগত দিক থেকেও জরুরি। এখনই যদি খেজুর গাছ লাগানো ও রক্ষার বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া না হয় তবে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম শুধু স্মৃতিতেই খুঁজে পাবে এই ঐতিহ্যকে।