https://jamunabankbd.com/

বরিশাল

ভুয়া বিল করে শিল্পকলার অর্থ আত্মসাৎ, কর্মকর্তার গোমর ফাঁস করলেন ফুলঘর মালিক

বরিশালটাইমস রিপোর্ট

বরিশালটাইমস রিপোর্ট

২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ ১৬:৪৬

প্রিন্ট এন্ড সেভ

ভুয়া বিল করে শিল্পকলার অর্থ আত্মসাৎ, কর্মকর্তার গোমর ফাঁস করলেন ফুলঘর মালিক

বরিশাল জেলা শিল্পকলা একাডেমির কালচারাল অফিসার অসিত বরণ দাশগুপ্তের বিরুদ্ধে ভুয়া বিল-ভাউচারের মাধ্যমে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ পাওয়া গেছে। কদিন আগে জেলা শিল্পকলা একাডেমি অনুমোদিত একটি বিলের ভাউচার নিয়ে বরিশাল নগরের সদর রোডের একটি ফুলের দোকানে গিয়ে দেখিয়ে জানতে চাওয়া হয়, এই বিল তারা করেছেন কিনা। ফুল দোকানের মালিক মো. ইভান সঙ্গে সঙ্গে উত্তর দেন, ‘না না। আমরা এই বিল করিনি।’

এই বিলের ভাউচারে একটি ফুলের তোড়া বাবদ পাঁচ হাজার টাকা দেখানো হয়েছে। ইভান বলেন, ‘জেলা শিল্পকলা একাডেমি প্রায়ই আমার দোকান থেকে ফুলের তোড়া নেয়। যার বিল সর্বোচ্চ ৫০০ টাকা। তবে ফুলের তোড়া নেওয়ার সময় শিল্পকলা একাডেমি বিলের খালি পাতা নেয়। আমার ধারণা, খালি পাতায় পাঁচ হাজার টাকা বসিয়ে দিয়েছেন শিল্পকলার কর্মকর্তারা। ফুলের তোড়ার বিল আমরা ৫০০ টাকাই করি।’

তাহলে কেন বিলের খালি পাতা দিচ্ছেন এমন প্রশ্নের জবাবে ইভান বলেন, ‘ক্রেতা ধরে রাখতে এইটুকু সুযোগ দিতে হয়। না হয় পরে তারা আর ফুল কিনতে আসবে না।’

একইভাবে এক হাজার ৮০০ টাকার আরেকটি বিল ভাউচারে ১৮ হাজার টাকা দেখানো হয়েছে। এভাবে ভুয়া বিল-ভাউচারের মাধ্যমে অসিত বরণ দাশগুপ্ত অর্থ আত্মসাৎ করছেন বলে জানা গেছে। জেলা শিল্পকলা একাডেমির কালচারাল অফিসার হিসেবে অসিত বরণ দাশগুপ্ত গত ১২ জানুয়ারি যোগ দেন। এরপর থেকে একের পর এক দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। যা নিয়ে বরিশালের সাংস্কৃতিক অঙ্গনের নেতৃবৃন্দও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

সর্বশেষ রবীন্দ্র সংগীত সম্মেলনে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। এক হাজার ৮০০ টাকা করে ২৬টি সংগঠনে ৪৬ হাজার ৮০০ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। কিন্তু কালচারাল কর্মকর্তা সেখানে ১৮ হাজার টাকা করে চার লাখ ৬৮ হাজার টাকার বিল করেন বলে নাম প্রকাশ না করা শর্তে একাধিক সংগঠক জানিয়েছেন। এ ছাড়া বিভিন্ন অনুষ্ঠানের খাবার বাবদ অতিরিক্ত বিল করে টাকা আত্মসাৎ করছেন অভিযোগ রয়েছে।

গত ৩০ জুন জেলা কালচারাল কর্মকর্তা স্বাক্ষরিত নোটিশে সাংস্কৃতিক প্রশিক্ষণ বন্ধের ঘোষণা দেওয়া হয়। নোটিশে উল্লেখ করা হয় সাময়িক সময়ের জন্য এ কার্যক্রম বন্ধ থাকবে। তবে কবে নাগাদ চালু হবে, সে বিষয়ে কোনও তথ্য দেওয়া হয়নি। এতে শিল্পকলা একাডেমিতে দায়িত্বরত প্রশিক্ষকরা ক্ষুব্ধ হন। তাদের দাবি, প্রতিষ্ঠানটির সাবেক কালচারাল কর্মকর্তা হাসানুর রশীদ শিল্পকলায় নিযুক্ত ১২ জন প্রশিক্ষকের ২০২৪-২৫ সালের চুক্তিনামা নবায়ন করে যেতে পারেননি। তবে প্রশিক্ষকরা তাদের কার্যক্রম চালিয়ে গেছেন। নবায়নের জন্য কয়েক দফায় সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কাছে গেছেন তারা। কিন্তু এখন পর্যন্ত তা সুরাহা হয়নি। তাদের অভিযোগ, অসিত বরণ দাশগুপ্ত প্রশিক্ষক নিয়োগ নিয়েও দুর্নীতি করছেন।

ইতিমধ্যেই অসিত বরণ দাশগুপ্তের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, অনিয়মের তথ্য সংগ্রহ করে লিখিত অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে। গত ১ জুলাই বরিশালের গণমাধ্যমকর্মী মুহম্মদ ইমন খন্দকার হৃদয় অভিযোগপত্রটি বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক ওয়ারেছ হোসেন, বরিশালের জেলা প্রশাসক ও শিল্পকলা একাডেমির সভাপতি মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন এবং দুদকের বরিশাল আঞ্চলিক কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. এইচএম আক্তারুজ্জামানের বরাবর দাখিল করেন।

অভিযোগপত্রে মুহম্মদ ইমন খন্দকার উল্লেখ করেন, অসিত বরণ দাশগুপ্ত ২০১৩ সালে কালচারাল অফিসার হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার পর থেকে সিলেট, হবিগঞ্জ ও বর্তমানে বরিশালে দায়িত্ব পালনকালে নানা অনিয়ম-দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন। ২০১৬ সালে সিলেটে নারী কেলেঙ্কারির ঘটনায় তার বিরুদ্ধে মামলা হয় এবং স্থানীয় সাংস্কৃতিক কর্মীরা স্মারকলিপি দেন। ২০২৪ সালে সিলেটে তার অপসারণের দাবিতে বিক্ষোভ করা হয়। ২০২৫ সালে তাকে বরিশালে বদলি করা হয়। বরিশালে যোগদানের পর থেকেই সরকারি রেস্ট হাউজে পরিবারসহ মাসের পর মাস অবৈধভাবে বসবাস করে প্রায় পাঁচ লাখ টাকার রাজস্ব ফাঁকি দিয়েছেন। একইসঙ্গে হলরুম ভাড়ার টাকা গোপন রেখে তা ব্যক্তিগতভাবে এবং স্থানীয় ও সাধারণ ফান্ডের ২৯ লাখ টাকার একটি বড় অংশ তুলে আত্মসাৎ করেন। এ ছাড়া জনসাধারণের প্রবেশে বাধা সৃষ্টি করে পুরো প্রতিষ্ঠানটি নিয়ন্ত্রণে রেখেছেন।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে অভিযোগকারী মুহম্মদ ইমন খন্দকার বলেন, ‘বরিশাল একটি সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যবাহী অঞ্চল। এখানে কোনও দুর্নীতিবাজের ঠাঁই হতে পারে না। অসিত বরণ বরিশালের সাংস্কৃতিক অঙ্গনকে কলুষিত করছেন। তার কর্মকাণ্ড জুলাই-আগস্ট চেতনার পরিপন্থি। এজন্য তার বিরুদ্ধে সব দুর্নীতির অভিযোগে বিভিন্ন দফতরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। তদন্ত সাপেক্ষে তার শাস্তি দাবি করছি।’

বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক জোটের আহ্বায়ক সাব্বির নেওয়াজ সাগর বলেন, ‘জুলাই পরবর্তী বরিশাল শিল্পকলা একাডেমি ফ্যাসিবাদের দোসর ছাড়া সবার জন্য একটি প্রতিষ্ঠান হবে এটাই আশা করেছিলাম। কিন্তু আমরা আশাহত হয়েছি। অসিত বরণ সিলেট ও হবিগঞ্জে কালচারাল অফিসার থাকাকালীন তার বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও আমরা সুযোগ দিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তার কর্মকাণ্ড আগের মতো। বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক জোটের পক্ষ থেকে আমরাও তদন্ত কমিটি গঠন করে দ্রুত শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাচ্ছি। এ নিয়ে শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালকের কাছে লিখিত অভিযোগ করবো।’

লেখক গবেষক সাইফুল আহসান বুলবুল, নাট্যমের সংগঠক বাসুদেব ঘোষ, রিপন গুহ এবং শব্দাবলী গ্রুপ থিয়েটারের অনিমেষ লিটুসহ একাধিক সাংস্কৃতিক কর্মী জানিয়েছেন, অসিত বরণ দাশগুপ্তের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, স্বেচ্ছাচারিতা ও প্রশাসনিক অনিয়মের অভিযোগের শেষ নেই। তিনি যোগদানের পর থেকেই নানা অনিয়ম-দুর্নীতি করছেন। বিষয়টি জেলা প্রশাসনও জানে। তারা বলছে তদন্ত করছে। তবে কতদূর এগিয়েছে তা জানা নেই। আমাদের পক্ষ থেকে দাবি, দ্রুত সময়ের মধ্যে তদন্ত করে অসিত বরণের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক। যাতে পরবর্তী কর্মকর্তা এ ধরনের দুর্নীতি করার আগে শতবার চিন্তা করেন।

অভিযুক্ত জেলা শিল্পকলা একাডেমির কালচারাল কর্মকর্তা অসিত বরণ দাশগুপ্ত বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও ভিত্তিহীন অভিযোগ আনা হয়েছে। আমি নিয়ম মেনেই দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছি।’

এক হাজার ৮০০ টাকার বিল ১৮ হাজার টাকা এবং ৫০০ টাকার ফুলের বিল পাঁচ হাজার টাকা কীভাবে দেখানো হলো জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটি কারা করেছে, তা আমার জানা নেই।’

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক ও শিল্পকলা একাডেমির সভাপতি মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘কালচারাল কর্মকর্তা অসিত বরণের বিরুদ্ধে তদন্ত চলমান রয়েছে। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) উপমা ফারিসাকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। ৮ আগস্ট থেকে তারা কাজ শুরু করেছেন। প্রতিবেদন পাওয়ার পর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

তদন্তকারী কর্মকর্তা অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক উপমা ফারিসা বলেন, ‘লিখিত অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সাক্ষ্য-প্রমাণ সংগ্রহের কাজ চলছে। তদন্ত শেষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি রেজাউদ্দিন স্টালিন বলেন, ‘আমি এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে কিছুই জানি না। নতুন যোগ দিয়েছি। তবে আজ থেকে বরিশাল জেলা শিল্পকলা একাডেমির কালচারাল কর্মকর্তার অভিযোগের বিষয় নিয়ে কাজ করবো।’

আরও পড়ুন:

খালেদা ওহাবের মৃত্যুতে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, সুজন ও হাঙ্গার প্রজেক্টের শোকবার্তা

আরিফ আহমেদ মুন্না

আরিফ আহমেদ মুন্না

২৭ নভেম্বর, ২০২৫ ২৩:৫৭

প্রিন্ট এন্ড সেভ

খালেদা ওহাবের মৃত্যুতে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, সুজন ও হাঙ্গার প্রজেক্টের শোকবার্তা

বাবুগঞ্জের প্রথম উপজেলা চেয়ারম্যান ও যুদ্ধকালীন বেইজ কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ আব্দুল ওহাব খানের সহধর্মিণী বাংলাদেশ প্রথম নারী উপজেলা চেয়ারম্যান খালেদা ওহাবের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করে শোকবার্তা দিয়েছেন বাবুগঞ্জ উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) বাবুগঞ্জ উপজেলা শাখা এবং দি হাঙ্গার প্রজেক্ট বাংলাদেশের বরিশাল আঞ্চলিক কার্যালয়। এসব সংগঠন ও সংস্থার পক্ষ থেকে প্রেরিত পৃথক শোকবার্তায় তারা খালেদা ওহাবের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা এবং তাঁর শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা প্রকাশ করেছেন।

শোকবার্তায় বাবুগঞ্জ উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের পক্ষ থেকে সাবেক ডেপুটি কমান্ডার আব্দুল করিম হাওলাদার বলেন, 'খালেদা ওহাব দলমত নির্বিশেষে সকল মানুষের কাছে একজন জনপ্রিয় নেত্রী ছিলেন। তিনি ছিলেন মুক্তিযোদ্ধাদের অতি আপনজন। তাঁর স্বামী শহীদ আব্দুল ওহাব খান ছিলেন একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং যুদ্ধকালীন বেইজ কমান্ডার। ১৯৮৯ সালে আততায়ীর গুলিতে আব্দুল ওহাব খান নিহত হওয়ার পরে খালেদা ওহাব একজন গৃহবধূ থেকে নিজের মেধা যোগ্যতা ও পরিশ্রমের মাধ্যমে জনপ্রতিনিধি থেকে জনগণের নেত্রী হয়ে ওঠেন। জীবদ্দশায় তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যাণে বিভিন্ন কাজ করে গেছেন এবং মুক্তিযোদ্ধাদের অধিকার রক্ষায় সর্বদা সোচ্চার ছিলেন। তাঁর মৃত্যুতে বাবুগঞ্জ উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ তাদের একজন স্বজন হারিয়েছে।'

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) বাবুগঞ্জ উপজেলা কমিটির পক্ষ থেকে দেওয়া শোকবার্তায় সম্পাদক আরিফ আহমেদ মুন্না বলেন, 'খালেদা ওহাব শুধু একজন জনপ্রতিনিধি কিংবা রাজনীতিবিদ ছিলেন না, তিনি ছিলেন নিবেদিতপ্রাণ একজন মানবাধিকার কর্মী। তিনি আমৃত্যু গণতন্ত্র ও সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য লড়াই করে গেছেন। ১৯৮৯ সালে স্বামী শহীদ আব্দুল ওহাব খানের মৃত্যুর পরে তিনি তাঁর স্বামীর অসমাপ্ত কাজের দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নেন। পুরো একটা জীবন তিনি অবলীলায় খরচ করেছেন মানুষ ও মানবতার কল্যাণে। তিনি ছিলেন নারীদের জন্য এক অনুপ্রেরণার বাতিঘর। তিনি শিখিয়ে গেছেন কীভাবে একজন সাধারণ গৃহবধূ নারীকে সমাজের সকল প্রতিকূলতা অতিক্রম করে জীবনযুদ্ধে জয়ী এবং সফল হতে হয়। তিনি অদম্য ও জীবন সংগ্রামী নারীদের কাছে একজন আলোকবর্তিকা হয়ে থাকবেন।'

দি হাঙ্গার প্রজেক্ট বাংলাদেশের বরিশাল আঞ্চলিক কার্যালয়ের পক্ষ থেকে বিভাগীয় সমন্বয়কারী মেহের আফরোজ মিতা বলেন, 'বাবুগঞ্জে নারীর অগ্রযাত্রা এবং নারীর ক্ষমতায়নের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত ছিলেন খালেদা ওহাব। জীবদ্দশায় তিনি বাল্যবিবাহ, নারী নির্যাতন, নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধ এবং সর্বোপরি নারীদের জীবনমান উন্নয়নে কাজ করে গেছেন। তিনি আমৃত্যু বিকশিত নারী নেটওয়ার্কের সভানেত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন। তাঁর সাংগঠনিক দক্ষতা ছিল অসাধারণ। বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন, রান্নাবান্না এবং অতিথি আপ্যায়নে ক্ষেত্রেও তিনি ছিলেন অনন্য। তাঁর শূন্যতা কখনো পূরণ হওয়ার নয়। একজন কীর্তিমতী নারী হিসেবে তিনি ইতিহাসের পাতায় অমর হয়ে থাকবেন।'

উল্লেখ্য, বর্ণাঢ্য জীবনের অধিকারিণী খালেদা ওহাব ১৯৮৯ সালের উপ-নির্বাচনে বাবুগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয় পরবর্তী এরশাদ সরকারের উপজেলা পদ্ধতি প্রবর্তনের পরে তিনিই বাংলাদেশের প্রথম নারী উপজেলা চেয়ারম্যান হওয়ার গৌরব অর্জন করেন। ১৯৮৯ সালের ১৫ আগস্ট তাঁর স্বামী বাবুগঞ্জ উপজেলা পরিষদের নির্বাচিত প্রথম চেয়ারম্যান আব্দুল ওহাব খান আততায়ীর গুলিতে নিহত হলে ওই বছরই অনুষ্ঠিত উপ-নির্বাচনে বিপুল ভোটে বিজয়ী হন তিনি। যে সময়ে নারীরা ঠিকভাবে ঘর থেকেই বের হতে পারতেন না সেই সময়ে একজন নারী উপজেলা চেয়ারম্যান ছিল অকল্পনীয় একটা ঘটনা। দেশের প্রথম নারী উপজেলা চেয়ারম্যান ছাড়াও তিনি একাধিকবার বিআরডিবি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন। রাজনৈতিক জীবনে তিনি প্রথমে জাতীয় পার্টির বাবুগঞ্জ উপজেলা শাখার আহবায়ক ছিলেন। পরবর্তীতে আওয়ামী লীগে যোগদান করে তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সদস্য নির্বাচিত হন।

রাজনীতির পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠনের সাথেও আমৃত্যু যুক্ত ছিলেন খালেদা ওহাব। তিনি সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) কমিটির বাবুগঞ্জ উপজেলা সভাপতি ছাড়াও পিস ফ্যাসিলিটেটর গ্রুপের (পিএফজি) কো-অর্ডিনেটর এবং দি হাঙ্গার প্রজেক্ট পরিচালিত বিকশিত নারী নেটওয়ার্কের সভাপতি এবং জাতীয় মহিলা সংস্থার বাবুগঞ্জ উপজেলা সভানেত্রী হিসেবে দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করেন। তাঁর বাড়ি বাবুগঞ্জ উপজেলার চাঁদপাশা ইউনিয়নের দরিয়াবাদ গ্রামে।

গত মঙ্গলবার খালেদা ওহাব পিস ফ্যাসিলিটেটর গ্রুপের (পিএফজি) কো-অর্ডিনেটর হিসেবে বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে শান্তি সহায়ক সম্মেলনে যোগ দিতে বরিশাল থেকে ঢাকায় যান। সম্মেলন শেষে তিনি রামপুরা এলাকায় তার ছোটবোনের বাসায় বেড়াতে গেলে বুধবার রাতে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন। এসময় তাকে নিকটস্থ ফরাজি জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হলে রাত ৪টার দিকে সেখানেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। চিকিৎসকরা জানান, খালেদা ওহাব স্ট্রোকজনিত কারণে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণে মারা যান। তিনি উচ্চ রক্তচাপ এবং ডায়াবেটিস রোগে ভুগছিলেন। বৃহস্পতিবার বাদ জোহর বাবুগঞ্জ ডিগ্রি কলেজ মাঠে প্রথম নামাজে জানাজা এবং বাদ আছর চাঁদপাশা হাইস্কুল ও কলেজ মাঠে তাঁর দ্বিতীয় জানাজা শেষে বাবার বাড়ির পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। #

আমরা ৫৩ বছর ধোঁকা খেয়েছি আর নয় - চরমোনাই পীর

বরিশালটাইমস রিপোর্ট

বরিশালটাইমস রিপোর্ট

২৭ নভেম্বর, ২০২৫ ২১:৩১

প্রিন্ট এন্ড সেভ

আমরা ৫৩ বছর ধোঁকা খেয়েছি আর নয় - চরমোনাই পীর

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির ও চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম বলেছেন, ‘আমরা বুঝে ফেলেছি, পুরোনো বউকে নতুন শাড়ি দিয়ে ঘোমটা দিয়ে ধোঁকা দেওয়া যাবে না। এ ধোঁকায় বাংলাদেশের মানুষ আর পড়বে না। আমরা ৫৩ বছর ধোঁকা খেয়েছি, আর নয়। দেশকে মুক্ত করতে হবে।’

চরমোনাইয়ের ঐতিহাসিক অগ্রহায়ণের মাহফিলের দ্বিতীয় দিন বৃহস্পতিবার (২৭ নভেম্বর) দুপুরে অনুষ্ঠিত উলামা-মাশায়েখ ও দ্বীনদার বুদ্ধিজীবী সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন সৈয়দ রেজাউল করীম।

সম্মেলনে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন অন্তর্বর্তী সরকারের ধর্মবিষয়ক উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন। মাহফিলে দেশের বিভিন্ন পর্যায়ের আলেম-ওলমারা উপস্থিত ছিলেন। সম্মেলনে জাতীয় উলামা-মাশায়েখ আইম্মা পরিষদের নতুন সভাপতি হিসেবে দেশের শীর্ষ আলেম মুফতি মিজানুর রহমান সাঈদের নাম ঘোষণা করেন চরমোনাই পীর।

আগামীর নির্বাচনে পরিবর্তন আসতেই হবে জানিয়ে মুফতি রেজাউল করিম বলেন, ‘৫৩ বছর দেশ যারা পরিচালনা করেছে, যেই নীতি-আদর্শের মাধ্যমে চলছে। এ নীতি-আদর্শে চোরের দিক থেকে আমরা চ্যাম্পিয়ান হয়েছি। হাজার হাজার মা সন্তান হারা হয়েছে। এখন নতুনভাবে দেশ পরিচালনার জন্য তারা পাগলের মতো হয়ে গেছে। কখন ক্ষমতায় যাবে, আবার সেই চরিত্র বাস্তবায়ন করবে।’

এ সময় চরমোনাই পীর বলেন, ‘আমি কিন্তু কোথাও প্রার্থী হইনি। কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তে হবও না। সারা দেশে আমার সফর করতে হবে।’ তিনি বলেন, দিন-রাত নিজের পকটের টাকা খরচ করে পাগলের মতো ঘুরছি। এর পেছনে একটি লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য আছে। সেটা হলো—আমরা এ দেশকে ভালোবাসি। আমরা ইসলামকে ভালোবাসি, মানুষকে ভালোবাসি।’

আট দফা দাবি আদায়ে বরিশালে নার্স বিক্ষোভ

বরিশালটাইমস রিপোর্ট

বরিশালটাইমস রিপোর্ট

২৭ নভেম্বর, ২০২৫ ১৯:০৬

প্রিন্ট এন্ড সেভ

আট দফা দাবি আদায়ে বরিশালে নার্স বিক্ষোভ

ভিন্ন অধিদপ্তরের অধীনে স্বতন্ত্র নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তর অন্তর্ভুক্ত করার প্রতিবাদ এবং জাতীয় নার্সিং কমিশন গঠনসহ আট দফা দাবিতে বরিশালে কালো ব্যাজ ধারণ করে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন নার্সরা।

বাংলাদেশ নার্সেস অ্যাসোসিয়েশন (বিএনএ) বরিশাল জেলা শাখার উদ্যোগে বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রশাসনিক ভবনের সামনে এ কর্মসূচি পালিত হয়।

কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া নার্স ও মিডওয়াইফরা ব্যানার, ফেস্টুন ও বিভিন্ন স্লোগানে হাসপাতাল ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিলও করেন।

অবস্থান কর্মসূচিতে বক্তারা বলেন, নার্সিং ও মিডওয়াইফারি খাত দেশের স্বাস্থ্যসেবার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ। অথচ দীর্ঘদিন ধরে এই খাত চরম অবহেলায় রয়েছে। স্বতন্ত্র নার্সিং অধিদপ্তর বাতিলের সিদ্ধান্ত পেশাগত মর্যাদা, দক্ষতা উন্নয়ন ও কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতির পথে বড় অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ সিদ্ধান্ত কোনোভাবেই মেনে নেওয়া হবে না।

কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন- বিএনএ বরিশাল জেলা শাখার সভাপতি আলী আজগর, সহ-সভাপতি মো. শাহআলম, সাধারণ সম্পাদক নূরে আলম তালুকদার, কোষাধ্যক্ষ শামীমা ইয়াসমিন, আনোয়ারা খানম, হাফিজা আক্তার প্রমুখ।

বরিশাল নার্সিং কলেজ ও শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কর্মরত নার্স ও মিডওয়াইফরা এতে উপস্থিত ছিলেন।

custom sidebar ads

Google AdSense
This is a demo ad. Your live ads will be displayed here once AdSense is properly configured.

জনপ্রিয়

Google AdSense
This is a demo ad. Your live ads will be displayed here once AdSense is properly configured.